Battle Of Kruger

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৩/০৯/২০০৭ - ৫:৫১পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

৮৫ ও ১৫ এর সেই চিরচেনা গল্প ।
সংখ্যায় গরিষ্ঠ নয় তবু তারাই শাসক,যখন খুশি ঘাড় মটকায়,রক্ত পান করে সংখ্যাগরিষ্ঠ ৮৫'র ।
এই ৮৫ জনের রক্তাক্ত শরীর নিয়ে ও টানা হেঁচড়া হয়, জলে কুমীর তারা ডাংগায় সিংহ ।

তবে 'নটে গাছটি মুড়ালো'- ঘোষনা দিয়ে ও গল্পের ডালপালা মাঝে মাঝে বিস্তার ঘটায় । সেই রক্তাক্ত ক্ষতবিক্ষত ৮৫ সঙ্ঘবদ্ধ হয়,ফিরে আসে প্রতিআক্রমনে,স্বজন হত্যার প্রতিশোধ নিতে ।

আর নিরাপদ দুরত্বে থেকে কেউ কেউ পুরোটাই দেখে যায়,ধারাভাষ্য দেয়,প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে ।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

৫ টা মহিষগুলোকে দিলাম।

রূপকের আশ্রয় নিলে অনেক কথা বলা যায়। আমাদের পরিপার্শ্বের খণ্ডচিত্র মেলে এই জঙ্গলে।

শিকারী প্রজাতি আমাদেরই ভূখন্ডে বিচরণ করে সদর্পে। আমরা এদের আশ্রয়দাতা, প্রশ্রয়দাতা, খাদ্যদাতা, বিনোদনদাতা। সব আমরা করি। কখনো কখনো আমরাই এদের খাদ্য। এরা সংখ্যায় কম। খুব কম। তবে এদের নখ-দাঁত খুব ধারালো। এরা স্রেফ বিশ্রামে বিরক্ত হয়ে আমাদের দিকে ধেয়ে আসে কিছুদিন পরপর। আমাদের মেরে-ধরে এরা বনের রাজা হয়। তিনকালের চিন্তা বাদ দিয়ে বসে বসে খেয়ে, আর শিকারীবিদ্যা চর্চা করে এরা মনে করে জীবনের পরিধি শুধু ওটুকুই। উপযাজক হয়ে এরা আমাদের জ্ঞান দিতে আসে, আমাদের দেখিয়ে দিতে আসে কত সহজ আমাদের কাজগুলো। এরা চিরচেনা হত্যা আর হুমকি-ধামকি শাস্ত্রে অতিপারদর্শী। জগৎ মানে এদের কাছে লোহিতলাল এক উষ্ণ, বহমান তরল।

মহিষগুলো জনগণ। আমরা অনেক বেশি দ্বিধাগ্রস্ত। দ্বিধা মানেই খারাপ কিছু না। দ্বিধা আছে বলেই আমরা যন্ত্র নই। দ্বিধা আমাদের ভাবায়, কাঁদায়, হাসায়। দ্বিধা দূর করতেই আমরা হয়তো হেঁটে বেড়াই ভয়ংকর জঙ্গলেও। কাজের বেলায় আমরা এই দ্বিধা ছাড়তে পারি না, সেটাই সমস্যা। দ্বিধাগুলো তখন কাপুরুষতা আর অবহেলায় রূপ নেয়। নিজের দেহমন নিংরে যেই অপত্যকে আনি, হানাদারগুলো ঝাপিয়ে পড়ে তাদের উপরেই। আমরা শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি। হারিয়ে যায় প্রজন্ম, ধসে পড়ে স্বপ্ন। তবু আমরা দূরে দাঁড়িয়ে দেখি। নড়লে নড়ি পেছনের দিকেই।

উন্নাসিকতার সুযোগে আমাদেরই চোখের সামনে উদ্দাম তান্ডবে মেতে উঠে ভক্ষকগুলো। কেউ শিউরে উঠি, কেউ বিব্রত হই, কেউ কিছু না দেখার ভান করি, কেউ সদম্ভে নিরপেক্ষ থাকি, কেউ আগুয়ান প্রতিবাদীদের বিরত করবার চেষ্টা করি, কেউ হামলাকারীদের পরিতোষনের চেষ্টা করি, কেউ চোখ বুজে প্রলয় কাটিয়ে দেওয়ার ধান্ধা করি।

অস্তিত্বের সংগ্রামের মধ্যেও এক টুকরো স্বপ্নের মত বেঁচে থাকে আমাদের উত্তরপ্রজন্ম। চিৎকার করে সাহায্য চায়, নিজের মত একাকী লড়ে যায় জলে-ডাঙায়। আশ্রয় চায়, সাহায্য চায়, কিন্তু এগিয়ে আসে না কেউ। এভাবেই এক সময় হাল ছেড়ে দেয় এক সময়।

নিস্তেজ হতে থাকা শাবককে দেখে টনক নড়ে কারো কারো। উৎসুক হয়ে এগিয়ে আসে। আচমকা কী যেন হয়ে যায়। জেঁকে বসা শিকারীদের বাগড়া দেয় কেউ। কারো চোখে নেতা, কারো চোখে ঝামেলাবাজ, কিন্তু নিজের চোখে বিবেকদংশনে অতিষ্ট খুব অসহায় একজন। একাই তেড়ে যায় ওদের দিকে। তার আক্রোশ আর অসন্তোষ যেন বিদ্যৎস্পৃষ্ট করে বাকিদের। এগিয়ে আসে একে একে সবাই। কাছে আসে, ঘিরে ধরে, কিন্তু তবু এগোয় না। বিধির প্রতি বিতৃষ্ণা প্রকাশ করার সাহস হলেও বিধি ভাঙার সাহস হয় না।

নেতা একাই ছুটে যায় এমাথা থেকে ওমাথা। মুক্ত হয় শাবক, পরাস্ত হয় খাদক। নিজেদের অবহেলার প্রায়শ্চিত্ত করতেই যেন সবাই মিলে তুলে নিয়ে যায় আহত শাবককে। সেবা দেয়, শুশ্রুষা দেয়। ওদিকে নেতা বুক চিতিয়ে তাড়া করে বেড়ায় শিকারীদের। ওরা চলে যায়। নেতা ফিরে আসে অনুসারীদের কাছে। সবাই খুশি। ধাক্কা সামলে সবাই অধোবদন কিন্তু সচেতন।

কিন্তু হায়, আড়ালে থেকে যায় ছোট্ট কিছু ব্যাপার। নেতার নায়কোচিত লড়াই এটাও বলে দিয়ে যায় যে সমষ্টির মুরোদ নেই বুক চিতিয়ে দাঁড়ানোর। নেতার ফিরে আসা বলে দেয় তার সাহস নেই প্রমাণিত শত্রুদের চিরতরে সীমিত করে দেওয়ার, হিম্মত নেই তাকে প্রত্যাঘাত করার। ওরা দেখে নেয় আমাদের প্রতিবাদের ভাষা, আমাদের ভাবনার অবয়ব। পরের বার ওরা আসে আরো আঁট বেঁধে।

অভাব শুধু সাহসের না, প্রজ্ঞারও। ভুলে যায় সবাই জলের কুমিরের কথা। ডাঙায় উঠবার সাহস নেই, মূলধারায় নিজের ইচ্ছা প্রকাশের প্রয়াস নেই, কিন্তু পরের ধন পেটে পুরবার খায়েস আছে ষোলর উপর আঠারো আনা। ওরা সময়-সময় এসে দাঁত বসায়, সর্বশক্তিতে টেনে নিয়ে যেতে চায়। না পারলে আবার লুকায় পানির আড়ালে। পানি প্রাণ, সেই পানির কাছে গেলে আবার এগিয়ে আসে। ধর্মে পরিত্রাণ, সেই ধর্মের কাছে গেলেই আবার হামলে আসে।

আরো ভুলে যায় সবাই, একদল সিংহকে ভাগানোর জন্য মাত্র একটি মহিষই যথেষ্ট ছিল। প্রশিক্ষিত খুনিকে হারাতে সবসময় দলীয় বা সামষ্টিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে হয় না। পৃথিবী বদলে দেবার জন্য একজনই যথেষ্ট।

যাহা ক্রুগারের যুদ্ধ, তাহাই জীবনযুদ্ধ।

অমিত আহমেদ এর ছবি

একটা লেখা লিখেছিলাম "প্রানীকূলের সন্ত্রাসে মানবসম্প্রদায়ের সাদৃশ্য" আপনার মন্তব্য পড়ে সে লেখার কথা মনে পড়ে গেল। সময় বদলাবে কিন্তু চিত্রটা একই থেকে যাবে।


একটা ঝলসে যাওয়া বিকেল বেলা, একটা লালচে সাগরের জলে
যায় ভেসে যায় স্বপ্ন বোঝাই, নৌকা আমার কাগজের...

আরিফ জেবতিক এর ছবি

দূর্দান্ত।

সৌরভ এর ছবি

ভিডিওটার সিকিভাগও তখনো দেখা হয়নি, আমি গভীর মমত্ববোধ অনুভব করতে থাকলাম বিশালকায় আক্রান্ত মোষেদের জন্যে।

আমার অনর্থক ও অনেকের বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ানো আবেগ এক ফোঁটা জলও এনে দিলো চোখে, কালো চতুস্পদের বিন্দুগুলোকে একসাথে জড়ো হয়ে মেঘ তৈরি করতে দেখে।

অর্ধেক দেখা শেষ করেছি, আমার বোধ বলতে শুরু করলো, আমি মোষেদের দলে।
অবশ্য এই একপেশে আবেগের কোন ব্যাখ্যা খুঁজে পেলাম না।
কেন আমি মোষেদের দলে? আমি তো ইচ্ছে করলেই আক্রমণকারীদের সাথে মিলে কিছু রক্তের ভাগ নিতে পারি।
নিজস্ব অনুভূতি এই পর্যন্তই।

কমরেড, আমাদের জয় হবে? আপনি বলছেন?



আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

অসাধারণ!
...........
যত বড় হোক সে ইন্দ্রধনু দূর আকাশে আঁকা
আমি ভালবাসি মোর ধরনীর প্রজাপতির পাখা

দ্রোহী এর ছবি

অসাধারণ!!!!

গুরু - অসাধারণ!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

আপন এর ছবি

আগে যতোটাই আশাবাদী ছিলাম,এখন ততোটাই নিরাশাবাদী হয়ে গেছি।
ভিডিওটা দেখা ছিলনা। নতুন একটা দৃষ্টিভঙ্গি দেখে দেখলাম...
মনে হচ্ছে সব কিছু শেষ হয়ে যায়নি।
আবারো আমরা আশাবাদী হয়ে উঠতে পারি।
মনে হচ্ছে আমরাও আবার....

নীলের সঙ্গে পথ চলা,ভুল পথে
অথবা তারপরও ভালো আছি ...

হিমু এর ছবি

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।