জেনারেল জিয়াউর রহমান'ইসলামিক রিপাবলিক' থেকে বাংলাদেশকে আবার 'পিপলস রিপাবলিক' এ ফিরিয়ে আনলেন এবং কলম্বো কনফারেন্সে ঘোষনা করলেন :- ' ভারত বাংলাদেশের আদি অকৃত্রিম পরীক্ষিত বন্ধু । অতীতের মতোই ভারত বর্তমান সরকারের ও পাশে আছে'
ভারতকে খুশী করার এ চাল দেয়ার সাথে সাথে তিনি পাকিস্তানকে খুশী করার জন্য দিলেন পরবর্তী চাল । মুক্তিযুদ্ধকালীন গঠিত বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান একে খন্দকারকে সরিয়ে দিয়ে তার জায়গায় ডেকে এনে বসানো হলো এম জি তাওয়াবকে ।
এম জি তাওয়াব ছিলো 'সিতার-ই-জুরাত' খেতাব প্রাপ্ত এয়ারফোর্স কমান্ডার যে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত অত্যন্ত বিশ্বস্ততার সাথে পাকিস্তান এয়ার ফোর্সে তার দায়িত্ব পালন করে গেছে । ৭২ এ ফিরে এলে ও বাংলাদেশ বিমানবাহিনীতে সে টিকতে পারেনি । '৭৩ এ পশ্চিম জার্মানীতে চলে যায় এবং প্রশিক্ষক হিসেবে ন্যাটোতে যোগ দেয় ।
জিয়াঊর রহমান ন্যাটো থেকে ডেকে এনে তাকে এয়ার ভাইস মার্শাল পদে পদোন্নতি দেন,বিমান বাহিনী প্রধান বানান এবং ডেপুটি চীফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে নিয়োগ দান করেন । ধারনা করা হয় এই নিয়োগের পেছনে জিয়াউর রহমানের উপর পাকিস্তানের চাপ ছিলো ।
এমজি তাওয়াব বিমান বাহিনী প্রধান ও ডেপুটি চীফ মার্শাল ল এডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে তার সবটুকু ক্ষমতা প্রয়োগ করেন তাকে দেয়া পাকিস্তানের এজেন্ডা বাস্তবায়নে । উল্লেখ্য যে বাহাত্তুরে জামাতে ইসলামী সহ ধর্মজীবি রাজনৈতিক দলগুলোর উপর যে নিষেধাজ্ঞা জারী করা হয়েছিলো তখনো তা বলবৎ ছিলো । জামাত সহ ইসলামীক দলগুলোর প্রথম সারির নেতাকর্মীরা পাকিস্তানে পালিয়ে গেছে,কিছু জেলে বন্দী,বাকীরা বিচার ও গনরোষের ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে ।
এমজি তাওয়াব এদের সংগঠিত করার কাজ শুরু করে।
১৯৭৬ এর ৭ মার্চ । স্থান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ।
(সচেতন পাঠক তারিখ ও স্থান খেয়াল করতে পারেন পুর্নবার- ৭ই মার্চ,সোহরাওয়ার্দী উদ্যান । সময়ের ব্যাবধান মাত্র ৫ বছর)
জরুরী অবস্থার আওতায় সামরিক অধ্যাদেশের বলে সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ তখন । সকল ধরনের মিছিল মিটিং সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষনা করা আছে । কিন্তু এরই মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়জন করা হয়েছে 'ইসলামী জলছা' র । এই জলছার মুল উদ্যোক্তা জামাতে ইসলাম । জলছায় পুনর্মিলনী ঘটে কয়েক হাজার ফেরারী যুদ্ধাপরাধীর ।
সেই জলছার প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলো জিয়াউর রহমানের ডেপুটি- এম জি তোয়াব এবং তার কাছে জলছায় সমাগত মুসলিম জনতা(!)র পক্ষ থেকে ছয়দফা দাবী নামা পেশ করা হয় ।
কি ছিল সেই ছয় দফা দাবীতে?
সেই দিনগুলোতে তোয়াব ক্রমশঃ আরো শক্তিশালী হয়ে উঠে জিয়াউর রহমানের জন্য হুমকী হয়ে উঠেন । পাকিস্তানের সরাসরি আশীর্বাদপুষ্ঠ হয়ে এবং জরুরী অবস্থার সুযোগে পুনঃ সংগঠিত মৌলবাদী রাজনৈতিক দলগুলো ও সামরিক বাহিনীর একাংশের সহযোগীতায় তোয়াব জেনারেল জিয়াকে হঠিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের ও চেষ্টা করেন ।
কিন্তু জিয়াউর রহমান সেই চক্রান্ত নস্যাৎ করেন এবং এম জি তোয়াবকে পশ্চিম জার্মানীতে ফেরত যেতে বাধ্য করেন ।
উল্লেখ্য ঠিক পাশাপাশি সময়ে,ক্ষমতাশীল হয়ে উঠা আরেকজন -কর্নেল তাহের কে ও জিয়াউর রহমান ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দিতে সক্ষম হন । যদি ও কর্নেল তাহের মাত্র কয় মাস আগেই তার জীবন রক্ষা করেছিলেন খালেদ মোশাররফের হাত থেকে ।
সচেতন পাঠক, ৭৬ এর সেই ছয়দফা ভালো করে খেয়াল করতে পারেন । এজেন্ডা বাস্তবায়ন চলছে এখনো । তোয়াব ব্যর্থ হবার পর- ৭৮ এ পাকিস্তান থেকে গোলাম আজমকে পাঠানো হয় মিশন প্রধান হিসেবে ।
মিশন প্রধান হিসেবে গোলাম আজম যে এম জি তোয়াবের চেয়ে অনেক সফল-তার প্রত্যক্ষ প্রমান তো আজকের বাংলাদেশ!
মন্তব্য
ইতিহাসের এই ভুলিয়ে দেওয়া অংশটুকু তুলে আনার জন্যে ধন্যবাদ।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
শেষের এই লাইনটাই সব বলে দেয়।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
পাঁচ তারা দেওয়া হইল। রেফারেন্স থাকলে ভাল হয়। লেখাটার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।
এই সিরিজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে।
লেখা চলতে থাকুক।
প্রয়োজনীয় রেফারেন্স প্রয়োজন মতো যোগ করা যাবে,একটি নির্দিষ্ঠ ফরমেটে লেখা আগালে বুঝতে পারবো কোন কোন জায়গার প্রামান্য দলিল দরকার,তখন সেগুলোকে যুক্ত করে দেয়া যাবে।
চালান...
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
যখন মাসুদ রানা পড়তাম... বিরক্ত হয়া যাইতাম পরের এপিসোড এত দেরিতে আসে কেন ?
সেই তুলনায় পর্ব ২ অনেক আগেই আসলো... তাও মনে হইলো দেরিতে। যাহোক... ধন্যবাদ। আসলেই এইটার প্রচার জরুরী... যার যা সূত্র সব কাজে লাগায়া প্রামাণ্য দলিলগুলা কালেক্ট করা যাইতে পারে... আর সিরিজ তো অবশ্যই চলা উচিত। আর সবশেষে এইটা একটা পূর্ণাঙ্গ ইবই হইতে পারে কি না ?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
দারুন দারুন। জলদি নামুক পরের পর্ব।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
তথ্যসূত্রগুলো থাকলে রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করতে সুবিধা হতো।
রেফারেন্স যোগের ব্যাপারে পাঠকরাও সহায়তা করতে পারেন।
আপাদমস্তক বিপ্লব দেয়া হলো!
হাঁটুপানির জলদস্যু
এর কি আরো পর্ব আছে?
বিপ্লব।
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
বিপ্লব
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
কৃতজ্ঞতা সকলে ।
আসলে,মোল্লাতন্ত্র ও জলপাই বুরোক্রেসীর সংযোগ সুত্রটা ভাবতে গিয়ে প্রায় বিস্মৃত ঐ লোকটাকে মনে পড়লো,৭৫ পরবর্তী সময়ে মৌলবাদী দলগুলোকে পুনঃসংগঠিত করতে যার ভুমিকা ছিলো সবচেয়ে অগ্রনী ।
তেমন তথ্যসুত্র কিছু হাতে নেই । সে সময়ের সচেতন মানুষদের স্মৃতিই এ ক্ষেত্রে ভরসা । আমি সম্ভবতঃ এ সব শুনেছিলাম আমাদের পারিবারিক পরিমন্ডলের রাজনৈতিক আলোচনায় ।
আরেকটু সংযোজন করছি, মাওলানা ভাসানী তখন মৃত্যুশয্যায় পিজি হাসপাতালে । মৌলবাদীদের এইসব দাবী দাওয়া ও তোয়াবের সংশ্লিষ্টতার কথা জেনে ঐ অবস্থা থেকে তিনি তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন এবং কঠোর আন্দোলনের হুমকী দিয়েছিলেন ।
উক্ত ইসলামী জলছা ও মৌলবাদীদের দাবিদাওয়ার বিস্তারিত প্রতিবেদন ছাপা হয়েছিল পরের দিন ৮ মার্চের দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় ।
এই মুহুর্তে আরেকটি বইয়ের কথা মনে পড়ছে
God Willings:The Politics of Islamism in Bangladesh । লেখক সম্ভবতঃ আলী রিয়াজ । এই বইয়ে এমজি তোয়াবের ভুমিকা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে ।
আরেকটা তথ্য শেয়ার করছি, ৯৯ এ জার্মানীতে সে মারা গেলে পর, পাকিস্তান বিমান বাহিনী থেকে অফিসিয়ালী শোক জ্ঞাপন করা হয়েছিল । PAF এর ওয়েব সাইটে সেটা আমি নিজে দেখেছি ।
এই পর্ব আর এগোবেনা ।
তবে এই বিষয়গুলো ঘুরে ফিরে আসবে অন্য আলোচনায় ।
সবাইকে আবারো ধন্যবাদ ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন