হিসেবটা নতুন নয় মোটেও ।
বাংলাদেশে আমার যতো আত্নীয়স্বজন কুটুম্ব-গত, বিগত, বিদ্যমান বন্ধু বান্ধব আছেন-সংখ্যার পরিমাপে এই বিলেতে তার চেয়ে বেশী না হলেও কম নয় । নিজের বাড়ীর বড় অংশ,শ্বশুর বাড়ির প্রায় পুরোটা এবং শ খানেক বন্ধু বান্ধব মিলে তুলকালাম কান্ড । আমি নিশ্চিত শহর সিলেটে এখন আমার যতো বন্ধু রয়ে গেছে, এক ব্রীকলেনের গলিতে এসে ঢুকে গেছে তার চেয়ে বেশী ।
তবু স্বভাবদোষে(হায়,আমার রক্তে কি প্রব্লেম!) আমি প্রায় নিঃসংগ থাকি । আমি আমার শত্রুর কাছে ও বোধকরি মুখচোরা,গুটিয়ে থাকা মানুষ নই । আত্নীয় স্বজনদের,বন্ধুদের আর্দ্রতা আমাকে তুমুল ভাবে সিক্ত করে । আমার মায়ের যে সকল খালা,ফুফু,মামীরা গোত্রবদ্ধ হয়ে আছেন ব্রীকলেন,মেনরপার্ক,বেডফোর্ড,হাইড,লুটন,লিডস,মেনচেষ্টার,রিডিংয়ে- আমি জানি তাদের স্নেহ কতোটুকু অনবদ্য । এইসব প্রায় ফুরিয়ে যাওয়া মানুষেরা যখন ফুরিয়ে যাবেন পুরোপুরি,তাদের সাথে সাথে নিঃস্বার্থ অপত্য স্নেহ ও বিদায় নেবে প্লানেট আর্থ থেকে ।
আমার বন্ধুরা যাদের সাথে একসাথে বেড়ে উঠেছি মফস্বল শহর ছাতকে, গড়ে উঠেছি জেলা শহর সিলেটে- তাদের বেশীর ভাগ এই দেশে এসেছে বিয়েবাবদ । দু একজন এখনো রেষ্টুরেন্টে কাজ করে;কয়েকজন রেষ্টুরেন্টের মালিক(গাভনার) হয়েছে; কেউ কেউ লন্ডন,মানচেস্টার এ ক্যাবিং করে; কেউ কেউ সুপারস্টোরে কাজ করে,দু চারজন ব্যাংকে কেরানী গিরী;কম্যুনিটি টিভি চ্যানেল নামের ক্যারিকেচারে দু একজন, পত্রিকায় একজন ,একজন ভার্জিন ট্রেনের ক্রু,একজন ইজিজেট এয়ারলাইন্সের বিমান চালায় ।
আমার মতো সরল ভাগ্যের যা দু চারজন বিয়েবাবদ পাচার হতে পারেনি,তারা ও এসেছে গতকয়েক বছরে ছাত্র নাম নিয়ে । কেউ কেউ ওয়ার্ক পারমিট, কেউ কেউ মামা চাচা ভাই বোন,দুলাভাই ভাবীর দেয়া স্পন্সরে বেড়ানোর নামে এসে সেঁধিয়ে গেছে ।
এইসব নিয়ে সমালোচনা করেন,করতে পারেন যে কেউ নিরাপদ দুরত্বে থেকে । যেহেতু আমার জানা হয়ে গেছে,প্রতিটি মানুষের ম্যানেজমেন্ট ও একাউন্টিং একেবারেই আলাদা-তাই প্ল্যানিং ও এক্সিকিউশন ও আলাদা আলাদা ।
এইসব আলাদা আলাদা মানুষেরা, রেষ্টুরেন্টের কাম্লা-গাভনার, ব্যাংকের কেরানী,ট্যাক্সির ড্রাইভার এরা আমার বন্ধু । বিগত জীবনের এবং আজকের ও । পে এজ ইউ গো অথবা কন্ট্রাক্ট ফোনের মিনিট খরচে প্রায় হররোজ এরা আমার খবর নেয়, দাওয়াত দেয় । ভার্জিন ট্রেনের খুব দামী টিকিট কেটে দেয়ার ভরসা দেয় ।
আমি প্রায়ই এড়িয়ে যায় । আমি নিঃসংগ সাধু অথবা শয়তান নই । আমি সংসার ত্যাগী সাধক নই । আমি এইসব তেল ঝোল নুনের ভেতর জন্ম নেয়া, বড় হয়ে উঠা,সংসার করা মানুষ । আরো অনেক হিসাবের মতো,এই হিসাবে ও সাবধানে স্বার্থপর । আমি স্নেহ ও ভালোবাসার সবটুকু পেতে চাই, না পেলে আহত হই অথচ তেলে ঝোলে মিশে যেতে আমার আপত্তি হয় । আমি নিজেকে কিছুটা নিরাপদ,কিছুটা দুর্লভ রেখে দেই অথবা দিতে চাই সজ্ঞানে কিংবা স্বভাবজাতে ।
আমি আহবান ভালোবাসি,তারচেয়ে ভালোবাসি আহবান থেকে দূরে সরে থাকতে ।
হয়না,মাঝে মাঝে হয়না এমন । এমনই এক তীব্র মায়া,স্নেহ ও ভালোবাসার আহবান এড়াতে না পেরে ঘুরে এলাম সম্প্রতি নিউ ক্যাসেল । আমার এক মামার বাড়িতে,আমার অতি বৃদ্ধ এক নানীর স্নেহ সান্নিধ্যে ।
মন্তব্য
আশাকরি ভালো আছেন হাসান মোরশেদ।
জীবনটাই এমন। এর মাঝেই যতটুকু ভালো থাকা যায় যত টুকু আনন্দে থাকা যায়। তবে যে চিত্র তুলে ধরেছেন তা প্রবাসে যেমন দেশেও তেমন। প্রবাসে কোন দেশের লোক দেখে মোটামুটি ধারনা করা যায় সেই জাতির মান। যদিও প্রবাসী হবার কারণ একেক জনের একেকে রকম।
ধন্যবাদ আরশাদ । ভালো আছি বেশ
----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
কৃতজ্ঞতা ইমরুল । আপনি নিজে কবি বলেই হয়তো আপনার দেখা,অনুভব ও ইন্টারেকশনের পুরোটাই সেরকম ।
আর আমাদের মতো সাধারন মানুষদের গল্পগুলো তো আসলে সেই একরকমই । কেবল পারমুটেশন কম্বিনেশন করে কিছুটা নিজস্বতা আনার হাস্যকর চেষ্টা ।
ভালো থাকুন । পড়ার জন্য আবারো কৃতজ্ঞতা ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভালই বলেছেন।
মোরশেদ ভাই এর কি মন খারাপ?
ধুর মিয়া, দিলা তো এবার মনটা খারাপ করে সত্যি সত্যিই
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
মানুষের তো কেবল একটি পাকস্থলী নেই, তার তো হৃদপিন্ড বলেও একটি জিনিস আছে। ঘরের পোষা প্রাণীকে দূরে ছেড়ে দিয়ে এলে কয়েকদিন পর ঘরে ফিরে আসে, পাখি যেমন সন্ধ্যায় নীড়ে ফিরে। ঠিক তেমনি মানুষেরও শেকড়ের কাছে ফেরা খুব প্রয়োজন, ঐ হৃদয়ের টানেই।
- কোথায় যেনো পড়েছিলাম। মনে পড়ে গেলো।
শিকড় নিজেই যদি চ্যুত হয়ে যায়?
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
হয় নাকি! আমার মনে হয় না। এই যেমন পরের পর্বে পড়লাম, নানী'মা ফিরে এলো। শুধুই কী নানী'মা! নাকি অন্য কিছুও?
মাঝেমাঝে এইসব লিখে রাখা ভালো।
নইলে কথা জমতে থাকে আর বিবমিষা তৈরি হয়।
এটা কে? আমাদের সৌরভ নাকি?
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমার ভূত মনে হয়!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
পড়লাম
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
হুই! পিচ্চি তারেক...
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আচ্ছা, যাপিত জীবনের বিবমিষার পাশাপাশি বাঙালি ডায়াসপোরা নিয়ে যতটুকু জানা যাবে সবই হবে উপরি পাওনা। অপেক্ষায় থাকলাম।
................................................................
শুশুকের ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে সাঁতরে এসেছি কুমীরে-ভরা নদী!
লেজকাটা শেয়ালের মত করে আমি ইদানিং আমার বন্ধুদের পটাই, এখানে চলে আসার জন্য। এক বন্ধুর ভাই থাকে, তাকেই ডেকে এনে বন্ধুর কথা ভাবি। আর সেই বন্ধুকে কেবলই বলি, মাস্টার্সটা করে চলে আয় দোস্ত। আরো একজনকে বলি, আরো ক'জনকে। মাঝে মাঝে আমরা ভাবি, এখানে আরেকটা কার্জন হল বানিয়ে ফেলি। ইউনিভার্সিটির নতুন, সবুজ দিনগুলোর মত ক্লাস ফাঁকি দিয়ে মাঠে বসে সারাদিন আড্ডা মারি...।
হায়, সেই প্রবাসে এত বন্ধু পেয়েছেন! এত মায়া আর স্নেহ!
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
নতুন মন্তব্য করুন