ফিজি'র সামরিক শাসক ও অন্তর্বতীকালীন সরকার প্রধান ফ্রাঙ্ক বেইনিমারামা সেপ্টেম্বরের মাঝামঝিতে জাতিসংঘ সাধারন পরিষদের সভায় যোগ দিয়েছিলেন ।
৮ মাস বয়সী সামরিক সরকারের প্রধান হিসেবে জাতিসঙ্ঘ অধিবেশনে যোগ দেয়ার এ সুযোগ তার জন্য কুটনৈতিক সাফল্য নিঃসন্দেহে । কারন গত ডিসেম্বরে মিলিটারী ক্যুর মাধ্যমে ক্ষমতাদখলের সাথে সাথে তৎকালীন জাতিসংঘ মহাসচিব কফি আনান এই বলে সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, এই ক্যু আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে ফিজির অন্তর্ভুক্তিকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে ।
অভ্যুত্থাকারীরা জাতিসংঘের প্রতি কৃতজ্ঞা হবেন নিশ্চিত কারন কফি আনানের উত্তরসুরী মহাসচিব বেন-কি-মুন এ বিষয়ে আর কোন প্রশ্ন উত্থাপন করেননি এবং ফিজির সৈনিকেরা আগের মতোই শান্তিরক্ষী হিসেবে বিভিন্ন সমস্যাসংকুল অঞ্চলে কাজ করে যাচ্ছে ।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা একটা চমকপ্রদ ধারনা প্রদান করেন যে, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অংশ নেয়ার সুযোগ না পেলে ফিজির সেনাবাহিনী কখনোই নিজদেশের ক্ষমতা দখলের মতো শক্তিশালী হয়ে উঠতোনা ।
১৯৭০ এ যখন বৃটিশরা এই দ্বীপ রাষ্ট্রের দখলদারীত্ব ছেড়ে যায় তখন মাত্র ২০০ জনের মতো একটা নিজস্ব সামরিক দল ছিলো ফিজি'র । ১৯৮৬ সালের দিকে এ সংখ্যা বেড়ে দাড়ায় কয়েক হাজারে । সে সময়ে ফিজির সৈনিকেরা জাতিসংঘের অধীনে লেবানন ও সিনাই অঞ্চলের শান্তিরক্ষায় নিয়োজিত ছিলো । এখন পর্যন্ত ২০-২৫ হাজার সৈনিক কাজ করেছে শান্তিরক্ষা মিশনে । মাত্র ১ মিলিয়ন জনসংখ্যা অধ্যুষিত ফিজির জন্য এই সামরিক শক্তি একটি বিশাল অংক নিঃসন্দেহে ।
১৯৭০ এর স্বাধীনতার পর ফিজিতে প্রথম সামরিক অভ্যুত্থানের ঘটনা ঘটে ১৯৭৭ এ । এর পর থেকেই নিয়মতি বিরতিতে অভ্যুত্থান-পাল্টা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতার রদবদল ঘটছে ।
গত ডিসেম্বরের অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলকারীদের জাতিসঙ্ঘ নিষিদ্ধ ঘোষনা করেনি বরং সাধারন সভায় যোগদানের সুযোগ দেয়ার মাধ্যমে তাদের বৈধতা দান করেছে । যদিও কমনওয়েলথ সম্পর্ক ছিন্ন করেছে এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন করছে । মুলতঃ কমনওয়েলথ ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের চাপে সামরিক কর্তৃপক্ষ সম্ভাব্য ন্যুনতম সময়ের মধ্যে একটি অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের অংগীকার ও ব্যক্ত করেছে ।
কিন্তু এই অংগীকার এখনো প্রশ্নবিদ্ধ কারন সামরিক অধ্যাদেশ ও জরুরী অবস্থা পুরোপুরি কার্যকর রয়ে গেছে এখনো,সামরিক শাসন বিরোধীদের দমন নিপীড়ন চলছে,সামরিক কাউন্সিল বিবৃতি প্রদান করেছে যে ক্ষমতাচ্যুত রাজনৈতিক দলটিকে নির্বাচনে অংশগ্রহনের সুযোগ দেয়া হবেনা । সামরিক প্রধান সম্প্রতি তার ভাষনে বলেছেন- 'রাজনীতিবিদরা রাষ্ট্র পরিচালনার জন্য এখনো উপযুক্ত হয়ে উঠেননি' । সামরিক প্রধানের এই মন্তব্যের কারনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিশ্রত $২৫৪ মিলিয়ন সাহায্য স্থগিত হবার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে । এদিকে গত ৮ মাসে ট্যুরিষ্টদের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে আশংকাজনক হারে, মুখ থুবড়ে পড়েছে শিল্পায়ন, স্থবির হয়ে গেছে রপ্তানী বানিজ্য ।
এরকম স্থবির সময়ে ফিজির অর্থনীতির চাকাকে সচল রেখেছে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষী বাহিনীতে কর্মরত সৈনিকদের পাঠানো রেমিটেন্স ।
নিজস্ব অর্থনীতি ক্রমশঃ ধ্বংস হতে থাকার কারনে শান্তিরক্ষা মিশন থেকে অর্জিত রেমিটেন্স খুব গুরুত্বপুর্ন হয়ে উঠছে এরকম আরো দুটি দেশ হচ্ছে নেপাল ও বাংলাদেশ ।
***
***
`The Economist` এ প্রকাশিত একটি ফিচার থেকে সংকলিত ।
মন্তব্য
হুম ...
বর্তমানে ফিজির মোট সশস্ত্র বাহিনী আয়তন ৩৫০০ জন, সক্রিয় সেনা সদস্য ৩২০০ । রিজার্ভে আছে ৬০০০ এর মতো ।
এখন পর্যন্ত মানে গত তিরিশ বছরে বিশ-পঁচিশ হাজার সেনা জাতি সংঘে মিশনে অংশ নিয়েছে ।
হ্যাঁ, ফিচারে সংখ্যাটা এরকমই দেয়া আছে । টোটাল জনসংখ্যা ১ মিলিয়ন । ১ মিলিয়নের মধ্যে ২০--২৫ হাজার জাতিসংঘ মিশনে কাজ করেছে ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
নতুন মন্তব্য করুন