শাহ মোহাম্মদ হান্নান নামের জামাতী মকার সম্প্রতি ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধকে 'গৃহযুদ্ধ' বলে মন্তব্য করেছে যা সারা দেশে সচেতন সকলের মধ্যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে ।
এই মন্তব্য আসলে আমাদের সবচেয়ে বড় যে অর্জন মুক্তিযুদ্ধ-তাকে প্রশ্নবিদ্ধ,মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে সংশয় তৈরী করার পুরনো খেলার একটি অংশ মাত্র ।
সংশয় তৈরী করা বেশ সহজ যেহেতু আমাদের আবেগ যতো তীব্র,রাজনৈতিক শিক্ষা ততো পোক্ত নয় । যেমন আমরা যারা হান্নানের ইতরামো মন্তব্যের প্রতিবাদ করছি তারাও সংশয়বিদ্ধ হতে পারি যদি নতুন প্রশ্ন উত্থাপন করা হয়-
৭১ এর যুদ্ধ আমাদের 'মুক্তি যুদ্ধ' নাকি 'স্বাধীনতা যুদ্ধ'?
আপাতঃ বিবেচনায় প্রথমেই তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেয়া যায় এই প্রশ্ন । এই প্রশ্নের আসলে কোন ভিত্তিই নেই-শুধু প্রশ্ন করার জন্য প্রশ্ন- এরকম মনে হতে পারে । মনে হতে পারে- মুক্তি যুদ্ধ আর স্বাধীনতা যুদ্ধ তো একই অর্থ বহন করে । শেখ মুজিব তার ৭ মার্চের ভাষনে তো দুটোই বলেছিলেনঃ 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম,এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম'
তার উক্ত 'স্বাধীনতা' অথবা 'মুক্তি' র জন্য যুদ্ধ করলো যে বাহিনী তার নাম ' মুক্তিবাহিনী', সম্প্রচার কেন্দ্রের নাম 'স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র' । সাংঘর্ষিক তো নয় বরং মনে হয় যেনো পরিপুরক পরস্পর শব্দদ্বয় ।
দুখিত পাঠক,সরলভাবনায় যতোটা সরল সত্য যে তার চেয়ে অনেক বেশী জটিল ।
১৯৭৭ সালের এপ্রিলে সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল জিয়াউর রহমান এক অধ্যাদেশ বদলে সংবিধানে বেশ কিছু মারাত্নক পরিবর্তন আনলেন । সচেতন পাঠক মাত্র অবগত এইসব বিষয়ে ।
জাতীয় পরিচয় 'বাংগালী' বদলে 'বাংলাদেশী' করা হলো । রাষ্ট্রীয় মুলনীতি হিসেবে 'ধর্ম নিরপেক্ষতা' বদলে 'আল্লাহর উপর পুর্ন বিশ্বাস' যোগ করা হলো । সংবিধানের শুরুতে 'বিসমিল্লাহ' যুক্ত হলো ।
এইসব পরিবর্তনের সময় আরেকটি পরিবর্তন ও হলো । সম্ভবতঃ এই পরিবর্তনকে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের সচেতন নাগরিকেরা খুব একটা আমলে আনেননি যতোটা এনেছেন বাংগালী/বাংলাদেশী কিংবা ধর্মনিরপেরক্ষতা/বিসমিল্লাহ কে ।
৭২ এ যে সংবিধান রচিত হয়েছিলো সেখানে ৭১ এর যুদ্ধকে বলা হয়েছে 'মুক্তি সংগ্রাম' । জিয়াউর রহমান এটাকে বদলে লিখলেন ' স্বাধীনতা যুদ্ধ' । আরো সুনির্দিষ্টভাবে বললে- 'Historic struggle for national liberation' প্রতিস্থাপন করে লিখা হলো ' Historic war for national independence'
নতুন এই সংযোজন কি ধারনা তৈরী করে? ৭১ কেবলই একটা সামরিক সংঘর্ষ,কেবলই যুদ্ধ-রাষ্ট্রের ভৌগোলিক স্বাধীনতার জন্য?
অথচ ৭১ এর একটা দীর্ঘ প্রস্তুতি ছিলো,সেই প্রস্তুতি যতোটা সামরিক তারচেয়ে অনেক বেশী রাজনৈতিক, সেই রাজনীতির আরো অনেক বিস্তৃত লক্ষ্য ছিলো যা কেবল রাষ্ট্রীয় স্বাধীনতা নয়,রাজনৈতিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক,অর্থনৈতিক মুক্তি ।
মুক্তির দীর্ঘ সংগ্রামকে তাই কেটেছেটে বনসাই বানিয়ে একটা গতানুগতিক যুদ্ধ বলে চালিয়ে দেয়া হলো ।
তাইতো ঘাতকদালালের ছানাপোনারা গলাবাজী করে-'মুক্তিযুদ্ধের কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্য ছিলোনা। ধর্মনিরপেক্ষতার জন্য মানুষ যুদ্ধ করেনি'
এ প্রসংগে আরেকটা ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে ।
ডঃ আনিসুজ্জামানের জীবনী ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছিলো প্রথম আলো'তে । সেখানেই পড়া ।
৭৭ এর কোন এক সময় জেনারেল প্রেসিডেন্ট গিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করতে । ডঃ আনিসুজ্জামান প্রেসিডেন্টের কাছে দাবী জানিয়েছিলেন- 'মুক্তিযুদ্ধে' শহীদ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রশিক্ষকদের সম্মানে স্মৃতিসৌধ নির্মানের । জেনারেল প্রেসিডেন্ট তাঁর জলপাই কপাল কুঁচকে বলেছিলেন- আমরা তো 'স্বাধীনতা যুদ্ধ ' বলি,আপনি 'মুক্তিযুদ্ধ' বলছেন কেনো?
কমরেডস প্রস্তুত হোন । হয়তো আপনাকে ও এমোন রাজকীয় কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করা হবে- আমরা তো 'গৃহযুদ্ধ' বলি,আপনি স্বাধীনতাযুদ্ধ' বলছেন কেনো?
মন্তব্য
আমরা প্রস্তুত কমরেড।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
শংকা
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
প্রস্তুতি না নিয়েও প্রস্তুত হতে হয়েছে এমন প্রশ্নের মুখোমুখি হতে। জবাবটাই এখন আরো শানিয়ে নিয়ে দিতে হবে।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
আমার আঙুলের ফাক দিয়ে অত বড়ো একটা বিষয় অতদিন পড়েছিল আমি খেয়ালই করিনি
মোরশেদকে ধন্যবাদ এরকম একটা বিষয় তুলে নিয়ে আসার জন্য
বাংলাদেশের রাজনীতি আর সংবিধান অনেকভাবে ঘাঁটাঘাটি করলেও
স্বাধীনতা যুদ্ধ আর মুক্তিযুদ্ধ শব্দদুটো মাঝখানের রাজনীতি কোনোদিন আমার চোখে পেড়েনি
আমি যখন ব্যবহার করি তখন দুটো শব্দকেই পরিপুরক হসিবে ব্যবহার করি (কোনো ভাবনা ছাড়াই। কারণ এখানে বিতর্ক থাকতে পারে আজকের আগে ভাবিওনি আমি)
কিন্তু এখন মনে হচ্ছে স্বতস্ফুর্তভাবে নিজের স্বাধীনতাকে ডাকা কিংবা উদযাপনের আগেও এখন থেকে খেয়াল রাখতে হবে
ব্যবহৃত হয়ে যাচ্ছি কি না
আমাদের সরল উচ্চারণ আর বিশ্বাসগুলো কতভাবে যে ব্যবহৃত হয় কে জানে
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কাল কাগজে দেখলাম, বীরবিক্রম আমাদের এক সাবেক মন্ত্রী নাকি মনে করতে পারেন না বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী আছে কি না! তিনি যে যুদ্ধ করেছিলেন, তা তাঁর মনে আছে তো? ক'দিন পর হয়তো প্রশ্ন উঠবে কোন যুদ্ধের অপরাধী - মুত্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতাযুদ্ধ নাকি গৃহযুদ্ধ?
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
-
- এরকম রাজকীয় কপাল কুঁচকে প্রশ্নকারী যে প্রশ্নের উত্তরটার চায়না সেটা বুঝি। সে চায় দ্বিধান্বিত করতে। তাকে কোন উত্তর দেবার জন্য আমি বাধ্য নই। সে কপাল কুঁচকালে, আমাদের নাক কুঞ্চিত করে বলা উচিত হবে, 'পুছলাম না'!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আর কিছু বলার নাই।
====
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"
একটি সময়োচিত লেখার জন্যে অভিনন্দন ।
..হৃদি ভেসে যায় অলকানন্দার জলে...
জানা ছিলো না। বিশ্লেষণটা ভাবিয়ে তুললো।
যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!
ধন্যবাদ হাসান মোরশেদ। লেখা চালিয়ে যান।
আমিত্বকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে জিয়াউর রহমান এই কাজ করেছিলেন। নিজের অবস্থানকে ইতিহাসের বিশেষ জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করার প্রয়াস ছিলো তারমধ্যে স্পষ্ট। যুদ্ধের ময়দানের সেই ‘জয় বাংলা’ ধ্বনি ইতিহাসের পাতায় লিখা থাকবে। এর প্রতিস্থাপনের কোন প্রয়োজন ছিলো না বা এটা আওয়ামীলীগের কপিরাইট-ভুক্তও নয়। নতুন জাতীয়তাবাদের নামে পুরানো পোশাক ফেলে দেবার কোন যৌক্তিকতা ছিলো না। ভিন্নমত থাকতেই পারে, তবে বায়বীয় ইস্যূ দিয়ে জাতিকে দ্বিধাবিভক্ত করার কোন দরকার ছিলো না।
যুগ বদলাচ্ছে, নতুন প্রজন্মকে নিয়ে অনেকরকম অভিযোগ আছে বয়জেষ্ঠ্যদের। আমি নতুন ও পুরাতন প্রজন্মের মাঝামাঝি অবস্থান থেকে বলছি, সমসাময়িক কালে নতুনপ্রজন্ম অন্ততঃ পাবলিক মিডিয়াতে যারা আমিত্ব যারা ফলাতে চেয়েছেন, তাদের বিশেষ প্রশ্রয় দেয়নি, এবং আশারাখি যতদিন যাবে, আমিত্বের কাঙ্গালেরা প্রত্যাখাত হবে আরো শক্ত ভাবে।
স্বাধীনতা এসেছে, গণতন্ত্র আকাবাঁকা পথে শ্লথগতিতে হলেও এগুচ্ছে, সেল-ফোন এসেছে, ইন্টারনেট এসেছে, এসেছে ইউনিকোড কম্লাইয়েন্ট বাংলা ফন্ট; প্রচন্ড ব্যাস্ততা আবেগকে ব্যাহত করছে নানাভাবে। তবে এর একটা ভালোদিক হলো এই সমস্ত আমিত্বের আব্দারগুলো আগেরমতো প্রশ্রয় পাচ্ছে না আজকাল। অপ্রয়োজনীয় কথা বলা কিংবা শোনার সময় এই প্রজন্মের খুব কম।
কত অজানারে ..
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
পুরোটা জানার পর আমি নিজেও কিছুটা বিমুঢ় হয়েছিলাম । 'মুক্তি' ও 'স্বাধীনতা' শব্দ দুটোর মধ্যে আসলেই কি এতো বেশী ব্যাবধান যে রাষ্ট্রপ্রধানকে সপরিবারে হত্যা করে আরো বহু ষড়যন্ত্র ও হত্যার দামে,বন্দুকের জোরে অধ্যাদেশ জারী করে সংবিধান থেকে প্রতিস্থাপন করতে হবে?
অন্য পরিবর্তনগুলোর মর্তবা অবোধ্য নয় । বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংগালী জাতীয়তাবাদকে খন্ডিত করলে ভারত খুশী, ধর্মনিরপেক্ষতা ও সমাজতন্ত্রকে বিদায় করলে খুশী আমেরিকা,মধ্যপ্রাচ্য,পাকিস্তান- ব্যালেন্স মোহাম্মদ জিয়াউর রহমান তাই এক ঢিলে দুই পাখী শিকার করলেন । ভারত ও খুশী,আমেরিকা ও খুশী ।
কিন্তু সংবিধান থেকে 'Historic struggle for national liberation' কে বাদ দিয়ে ' Historic war for national independence' প্রতিস্থাপন কেনো? কাকে খুশী করার জন্য?
'Historic struggle for national liberation' বললে তার একটা রাজনৈতিক দর্শন,গনসম্পৃক্ততা,আন্দোলন সংগ্রামের পরম্পরা ধারনা করা যায় । এর বদলে 'war' বললে রাজনীতিকদের চেয়ে সামরিকদের ভূমিকা প্রাধান্য পায়?
রাষ্ট্রনির্মান ও পরিচালনায় রাজনীতিকদের হটিয়ে সামরিকদের মুখ্য হয়ে উঠার কলাকৌশল?
মুক্তিযুদ্ধের চেতনা,৭২ এর সংবিধান এসব নিয়ে যারা মুল ধারায় কথা বলেন-কোন এক অদ্ভূত কারনে আলোচ্য বিষয়কে তারা এড়িয়ে যান । আমার মতো সামান্য মানুষকে যে পরিবর্তন ভাবায়,তারা কেনো এ নিয়ে চুপ থাকেন?
আমার কাছে মনে হয়,বাংলাদেশ রাষ্ট্রের চরিত্রবদল,গতিপ্রকৃতি এবং তার ভবিষ্যত দশা বুঝতে হলে '৭৫ এর হত্যাকান্ডের পর পর যে সকল পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে তার প্রতিটিকে নজর দিতে হবে । সেই হত্যাকান্ড এবং পরবর্তী বদল গুলো ছিলো ৭১ এর প্রতিশোধ । রাষ্ট্রের মানচিত্র ঠিক রেখে ভেতর থেকে তার পুরোটাকে বদলে দেয়ার এক দীর্ঘমেয়াদী,কৌশলী পরিকল্পনা ।
গত ৩২ বছরে যতো রংঢং হয়েছে তার বেশীরভাগ মুলতঃ সেই মহাপরিকল্পনার এক একটা মডিউল মাত্র ।
-----------------------------------
মানুষ এখনো বালক,এখনো কেবলি সম্ভাবনা
ফুরোয়নি তার আয়ু
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আরো কিছু তথ্য-উপাত্ত জানা গেলে ভালো হতো।
নতুন মন্তব্য করুন