।। একটি সংস্কারবাদী গল্প ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: বিষ্যুদ, ২৯/১১/২০০৭ - ৬:১৯অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ডিউক ও তার ছোট্ট মেয়ে লালা ।
লালার বয়স মাত্র ৪ বছর এবং লালা ডিউকের একমাত্র সন্তান । যদি ও ডিউকের পণ ছিলো সে নিঃসন্তান থাকবে কেননা সে জানতো যে,সে খুন হবে তার সন্তানের হাতেই । তবু লালাকে সে ভালোবাসে,লালাকে সে স্নেহ করে । চার বছরের ছোট্ট লালা বুঝে ফেলে ডিউক যা ভাবে,ডিউক যা বলে,ডিউক যা বলতে চায় ।

ডিউক ও তার ছোট্ট মেয়ে লালা এসেছিলো সুপারমার্কেটে । তারা কথা বলছিলো,তারা ক্রমাগতঃ কথা বলে যাচ্ছিলো ।তারা অনেক কিছুই নিয়েই কথা বলছিলো । লালা অনেক কিছুই জানে,আর সে যা জানে তার সবকিছু নিয়েই ডিউকের সাথে কথা বলছিলো । যদি ও ডিউক লালার মতো এতো কিছু জানেনা তবু সেও কথা বলছিলো । তারা বেশ খোশমেজাজেই ছিলো ।
'এটা কি?'-লালা জিজ্ঞেস করেছিলো ।
'এটা নারকেল'
'ভেতরে কি?'
'পানি ও শাঁস'
'হুম । কিন্তু তারা এর ভেতরে কেনো?'
'কারন তারা এর ভেতরে ভালো আছে । তারা মনে করে এর ভেতরেই তাদের জন্য ভালো'
'কিন্তু তারা এর ভেতরে কেনো ভালো মনে করে?'
'যে কেউ তাই মনে করতে পারে'
'না তুমি এর ভেতরে ভালো থাকতে পারোনা । এর ভেতরে থেকে তুমি গাড়ী চালাতে পারবেনা,আমাকে দেখতে পারবেনা ।এমনকি তুমি বেকন ও ডিমসেদ্ধ খেতে পারবেনা'
'বেকন ও ডিমসেদ্ধই সবকিছু নয় '
'কি তাহলে -সবকিছু?'
'আমি ঠিক জানিনা । হতে পারে সুর্য,সুর্যের ভেতরের শীতল বরফ'
'সুর্যের ভেতরের শীতল বরফ?'
'হ্যাঁ'
'কিন্তু সুর্যের ভেতর বরফ থাকে কি করে?'
'হতে পারে সুর্য একটা অগ্নিপিন্ড । হতে পারে বিজ্ঞানীরা আমাকে পাগল বলবে । তবে আমি তাই মনে করি । ঐ জ্বলন্ত অগ্নিপিন্ডের ভেতরটা শীতল বরফ'

পাশের র‌্যাক থেকে ডিউক একটা এভোকাডো তুলে নিয়েছিলো ।
'মনে করো এই ফলটা একটা সুর্য । আমি সুর্য কামড়ে খাই । ভেতরে উষ্ণতা নিয়ে হেঁটে যাই'
'তাহলে তুমি যে বিয়ার খাও সেটা ও সুর্য?'
'হ্যাঁ,সেটাও '
'আমার ভেতরে ও তাহলে সুর্য আছে?'
'আমার চেনাজানা যে কারো চেয়ে বেশী'
'হুম । আমার মনে হয় তোমার ভেতরে ওএকটা বিশাল সুর্য আছে '
'ধন্যবাদ ছোট্ট রাজকুমারী'

ডিউক তেমন কিছুই কিনেনি । লালা তার ঝুড়ি ভরেছিলো অনেক কিছু দিয়ে-অনেক কিছু যা খাদ্য নয় আসলে । রংগীন বেলুন,খেলনা গাড়ী,রেশমী চুলের পুতুল ।ক্যাশ মেশিনে বসে থাকা মধ্যবয়স্ক মহিলাকে ডাইনীর মতো দেখাচ্ছিলো । আর সে মেশিনের মতো খসখসে গলায় টাকা চাইছিলো ।
তারা কোন কথা না বলে টাকা দিয়ে বের হয়ে এসেছিলো সুপারমার্কেট থেকে ।
'তারা আমাদের টাকা নিয়ে গেলো' লালা বলছিলো ।
'হ্যাঁ'
'আর তোমাকে আরো টাকার জন্য রাতে কাজে যেতে হবে । আমার ভাল্লাগেনা । আমার ইচ্ছে করে রাতের বেলা আমরা খেলবো । আমি মা হবো,তুমি আমার ছেলে'
'এটা আমরা এখনই খেলতে পারি । এখনই তুমি মা আর আমি তোমার ছেলে'
'ওক্কে সোনা, তুমি গাড়ী চালাতে জানো?'
'আমি চেষ্টা করতে পারি,মা'

এরপর তারা গাড়ীতে চড়ে বসেছিলো । ডিউক যখন তার গাড়ী বামে চালানো শুরু করেছিলো আরো বেশী দামী কিছু গাড়ী তার গাড়ীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চাইছিলো ।
'সোনা, কেনো অন্যরা আমাদের ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিতে চায়?'
'কারন তারা অসুখী । যারা অসুখী তারাই অন্যকে আঘাত করে নিজের অসুখ ঢেকে রাখতে চায়।'
'তাহলে কি সবাই অসুখী?'
'কেউ কেউ ভান করে যে সে সুখী'
'কেনো?
'কারন তারা স্বীকার করতে ভয় পায় ।'
'তুমি ও কি ভয় পাও?'
'হ্যাঁ মা আমি ও ভয় পাই । আমার মনে হয় আমি মারা যেতে পারি এখুনি'
'তুমি কি তোমার দুধের বোতল মুখে নেবে সোনা?'
'হ্যাঁ, মা । কিন্তু বাড়ী যাওয়া পর্যন্ত আমাকে অপেক্ষা করতে হবে ।'

ডিউক এবার ডানপাশে গাড়ি চালাচ্ছিলো । ডানপাশ সব সময় নিরাপদ । ডানপাশে গাড়ি চালালে আর কোন দামী গাড়ী এসে ধাক্কা দিতে চায়না ।
'আজ রাতে তুমি কাজে যাচ্ছো?'
'হ্যাঁ'
'কেনো তুমি রাতে কাজ করো?'
'কারন রাত মানেই অন্ধকার । অন্ধকার মানে কেউ আমাকে দেখতে পাবেনা'
'কেনো তুমি নিজেকে দেখাতে চাওনা?'
'কারন দেখতে পেলেই লোকজন আমাকে ধরবে এবং জেলে পুরবে'
'জেল কি সোনা?'
'সবকিছুই জেল'
'আমি জেল না '
'এখনো না'

এরপর তারা গাড়ী থামিয়ে বাড়ির ভেতর চলে গিয়েছিলো । সুপারমার্কেট থেকে কেনা গাড়ি,পুতুল,রংগীন বেলুন রয়ে গিয়েছিলো গাড়ির ভেতর ।

***চার্লস বুকস্কি'র A.45 to Pay the Rentগল্পের ছায়া অবলম্বনে ।।


মন্তব্য

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

পড়তে ভালই লাগলো, কিন্তু বুঝলামনা খাইছে

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

নজমুল আলবাব এর ছবি

ভাললাগেনাই। কেন লাগেনাই বলতে পারবনা। পইড়া আরাম না পাওয়াটা একটা কারন হতে পারে। না বুঝন আরেকটা।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল

হাসান মোরশেদ এর ছবি

এই বেটার গদ্য এরকমই ক্ষ্যাপাটে ।
যদি ও তার কবিতা রেডওয়ানের মতো ।চুমুকে চুমুকে ভালো লাগা । কিন্তু গদ্য যেন ডার্ক রম । প্রথম পেগেই উলটো কিক । বের হয়ে আসতে চায়,ভাল্লাগেনা । তবে হজম করে ফেলতে পারলে তারপর দে দৌড় ।
ভাবছি এটা নিয়ে আলাদা পোষ্ট দেবো ।
-----------------------------------------
মৃত্যুতে ও থামেনা উৎসব
জীবন এমনই প্রকান্ড প্রচুর ।।

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরশাদ রহমান এর ছবি

আমারতো ভালোই লাগলো। কথপোকথন গুলো !

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

আমি,আমার ভেতর থেকে নামি। নেমে যারে খুঁজি দেখা নাই তার।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।