যাপনচাতুর্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি
লিখেছেন হাসান মোরশেদ (তারিখ: সোম, ৩১/০৩/২০০৮ - ৮:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

.




আমার ছোট্ট ফ্লাটের বারান্দায় দাঁড়িয়ে সকালটা দেখতে বেশ ভালোই লাগছিলো । এই ফ্লাটে উঠেছি মাসছয়েক । কেনা নয় অবশ্য,ভাড়া ।পছন্দ-অপছন্দে আমি ততোটা চৌকস নয়-তা সে বৌ কিংবা ফ্লাটই হোক ।রিনি’র ভালো লেগেছে-এটাই যথেষ্ট ।

ছুটিরদিনের সকালবেলা ঘুম না ভাংগলে ও চলে কিন্তু ছুটিরদিনেই আমার ঘুম ভেংগে যায় সকালবেলা,বরং রিনি বেশ বেলা করে জাগে । আমি ওকে ঘুমোতে দেই,ঘুমোক বেচারী । এককাপ চা করে প্রায়ই এসে দাঁড়াই এই বারান্দায় ।
প্রথম প্রথম অনেকদূর পর্যন্ত দেখতে পেতাম ।রাস্তার উলটো দিকে একটা নারকেল গাছে ঘেরা টিনের বাড়ী । এক মধ্যবয়স্ক পুরুষ সকালবেলা তার ছেলেকে পড়াতে বসেন বারান্দায়, আমার দেখতে ভালো লাগে । এখন বাড়ীটার সামনে বহুতল এপার্টমেন্ট উঠছে,আমার দৃষ্টিসীমানা সংকুচিত হয়ে আসছে । এখনো সেই নারকেল গাছ ঘেরা টিনের বাড়ি,মধ্যবয়স্ক পুরুষের ঘর গেরস্থালী,সন্তানকে শিক্ষাদান দৃষ্টগোচর হয়, এপার্টমেন্ট পুরো হয়ে গেলে আর হয়তো দেখা হবেনা ।

মাসতিনেক আগে স্বাতী যখন ফ্লোরিডা থেকে এলো দেশে,আমাদের এই দু রুমের ফ্লাটে থেকেছিলো দুতিনদিন । রিনিই একরকম জোর করে ওকে নিয়ে এসেছিল । রিনি আর স্বাতী খুব ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলো নিঃসন্দেহে ।
স্বাতী একটা চমৎকার দুরবীন এনেছিল আমার জন্য । আমার জন্য? না,স্বাতী আসলে আমার জন্য কিছু আনেনি ।আমি আর রিনি বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিলাম , ও লাগেজ থেকে দুরবীনের বাক্সটা বের করে এন বলেছিল-‘তোদের ছেলে হবে নিশ্চয়ই, ওর জন্য এটা’
আমরা খুব হেসেছিলাম । বিয়ের প্রায় পাঁচবছর,আমরা কোন সন্তান নেইনি এখনো ।

স্বাতীর দেয়া দূরবীনটা চোখে ধরলেই সেই নারিকেল গাছে ঘেরা বাড়ীটা আরো কাছে চলে আসে । মধ্যবয়স্ক লোকটা কাঠের চেয়ারে বসে,তার শিশুপুত্র বসে বেতের মোড়ায়,কোন কোন দিন দেখি ঘোমটা দেয়া এক মহিলা চা-মুড়ি এনে রাখে ওদের সামনে । শিশুটা শুকনো মুড়ি চিবোয়,লোকটা চায়ে ঢালে ।

দুরবীণ উলটো করে ধরলে আরো মজা হয়-কাছের রাস্তা,রিক্সা,এপার্টমেন্ট,মানুষজন অনেক দূরে সরে যায়,দূরে যেতে যেতে অনেক অনেক দুরে চলে যায় সবকিছু,অনেক পিছনে । অতো পেছনে গিয়ে আমি একটা চাবাগান ঘেরা টিলার উপর এসে দাঁড়াই,দাঁড়িয়ে আরো বহুদূর দেখার চেষ্টা করি ।
স্বাতী আমাকে জিজ্ঞেস করে- কি দেখতে চাও অতোদূরে?
-আমি এখানে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখতে চাই ।
-পাগল,এখানে সমুদ্র কোথায়?
-নেই হয়তো । কিন্তু আমার ইচ্ছে একটা জাহাজে চড়ে আমি গভীর সমুদ্রে যাবো , আমার হাতে একটা দূরবীন থাকবে । জাহাজের ডেকে দাঁড়িয়ে দুরবীন দিয়ে দেখবো আরো দুর দুর নীল সমুদ্র

আমার সমুদ্রযাত্রা হয়নি । স্বাতী আটলান্টিক পাড়ি দিয়ে ফ্লোরিডায় চলে গিয়েছিল ছয় বছর আগে ।

জোবায়ের গিয়েছিলো লন্ডনে,বিয়ে করে । স্বাতী আটলান্টিক পাড়ি না দিলে কিংবা জোবায়ের বিয়ে করে লন্ডন চলে না গেলে-বোধহয় আমার আর রিনির বিয়ে করা হতোনা ।
বোধ হয় কেনো? নিশ্চিতভাবেই হতোনা । এরকম কিছু হওয়ার কথা কিংবা ইংগিত ছিলোনা ।

অথচ আমি তখন উদ্ভ্রান্ত,রিনি ও ডানাভাংগা । আমাদের অপ্রাপ্তি,আমাদের দুজনের ভিন্ন ভিন্ন স্বপ্নের লাশই শেষ পর্যন্ত আমদেরকে কাছে নিয়ে এসেছিল । আমার ও তখন আর কেউ নেই, রিনি ও নিঃসংগ । দুজন পরাজিত মানুষ পরস্পরকে আঁকড়ে ধরেছিলাম ।
এখন কেবল ছুটিরদিনের সকালবেলা এইসব ভাবার অবসর পাই আমি,যখন রিনি ঘুমিয়ে থাকে । যতোক্ষন রিনি জেগে থাকে ততোক্ষন ও আমাকে সব ভুলিয়ে রাখে শরীর ও স্নেহ দিয়ে, আমি ও ওকে সব ভুলিয়ে রাখি সবকিছু মেনে নিয়ে । আমি ও রিনি ভালো থাকি,ভালোবাসি পরস্পরকে-মৃতপ্রায় মানুষ যেমন তার ক্ষয়ে যাওয়া জীবনকে । ও কখনো স্বাতীর প্রসংগ তোলেনা,আমি ও জোবায়েরকে মনে করিনা ।

স্বাতী আটলান্টিক পাড়ি দেয়ার পরের দিনগুলো আমার বিভীষিকার মতো কেটেছিলো, ওর জন্য আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসতো,আমার অনুভূতি আমাকে তীব্র আহত করতো । রিনি বদলে দিয়েছে সব,স্বাতীর জন্য আমার অনুভূতি ও বদলে গেছে এখন । এখন মাঝে মাঝে রিনির নগ্ন শরীরে আমি স্বাতীর মুখ বসিয়ে দিতে পারি,রিনির ভেতরে যখন প্রবেশ করি, মাঝে মাঝেই নির্দ্বিধায় চোখ বন্ধ করে শরীরের নিচে আমি স্বাতীকে আঁকড়ে ধরতে পারি । কষ্ট-টষ্ট কিছু নেই আর, আমার প্রবৃত্তি দিয়ে স্বাতীকে ছুঁয়ে ফেলতে পারি এখ্ আর গোপনে আমার বড় আনন্দ ও জাগে । আমার শরীরের নিচে শুয়ে নিরাভরন রিনি জোবায়ের পিঠেই তার নখ বসিয়ে দেয় কিনা,সে অবশ্য আমি কোনদিন জানতে চাইনি ।

স্বাতী বেড়াতে এলে আমরা খুব মজা করেছিলাম, স্বাতীর মেয়ের জন্য রিনি অনেকগুলো ড্রেস কিনেছিলো । বিশ্ববিদ্যালয়ের দিনগুলোর মতো আমরা তিনজন ঘুরে বেড়িয়েছি, আমরা জোবায়েরকে ও মিস করেছি । ও ব্যাটা এলে সেই পুরনো দিনের মতোই আবার আমরা চারজন ।

আজ রিনি ঘুম থেকে উঠলে আমরা এয়ারপোর্টে যাবো । কি এক জরুরী কাজে জোবায়ের ওর বৌ-ছেলেকে রেখে একাই আসছে লন্ডন থেকে,আমাদের ফ্লাটে উঠবে প্রথমে,তারপর ওর বাড়ি যাবে ।

আমার আর রিনির না জন্মানো ছেলের জন্য স্বাতী দুরবীন এনেছিল । আমার খুব আগ্রহ হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত মেয়ের জন্য জোবায়ের কি উপহার আনে?

আমাদের বিয়ের প্রায় পাঁচবছর হয়ে গেলো । ডাক্তার বলে দিয়েছে,আমাদের কোনদিন সন্তান হবেনা ।


মন্তব্য

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কী আশ্চর্য!
এখন এই মুহুর্তে 'হাসানের গল্প' ব্লগস্পট সামনে খোলা। ২১টা সোনেরিলের হাতছানি পাচ্ছি আর মুগ্ধ হচ্ছি বারবার। ভাবছিলাম, এই সুযোগ - অনেকদিন 'হাসানের গল্প' শুনি না। অণুগল্প সংকলনের জন্য একটা নতুন গল্প নাজিলের ফরিয়াদ জানাই---। ভেবে ভেবে সচলে আসতেই 'যাপনচাতুর্য'!

অসাধারণ, দূর্দান্ত'র বাইরে কী বলা যায় ভাবছি।

জোবায়ের গিয়েছিলো লন্ডনে,বিয়ে করে । স্বাতী আটলান্টিক পাড়ি না দিলে কিংবা জোবায়ের বিয়ে করে লন্ডন চলে না গেলে-বোধহয় আমার আর রিনির বিয়ে করা হতোনা ।

কষ্ট-টষ্ট কিছু নেই আর, আমার প্রবৃত্তি দিয়ে স্বাতীকে ছুঁয়ে ফেলতে পারি এখ্ আর গোপনে আমার বড় আনন্দ ও জাগে । আমার শরীরের নিচে শুয়ে নিরাভরন রিনি জোবায়ের পিঠেই তার নখ বসিয়ে দেয় কিনা,সে অবশ্য আমি কোনদিন জানতে চাইনি ।

আমার আর রিনির না জন্মানো ছেলের জন্য স্বাতী দুরবীন এনেছিল । আমার খুব আগ্রহ হচ্ছে আমাদের ভবিষ্যত মেয়ের জন্য জোবায়ের কি উপহার আনে?

এভাবেই হয়তো কিছু কষ্ট শৃঙ্খলিত হয় নীল নীল স্বপ্নে। দূরবীনে দূর অতীতকে কাছে আনা অথবা খুব নিকটকে অহেতূক দূর করে দেখার চাতুর্য্যে আমরা বাস করি। এরকম তীক্ষ্ন গল্প-তীর শুধু মোরশেদ ভাইয়ের হাত থেকেই আসতে পারে!

স্বপ্নাহত এর ছবি

মুগ্ধ পাঠক হয়ে পড়ে গেলাম এক নিঃশ্বাসে।
অসাধারণ লাগলো।

একটা কথাঃ বাস্তবেও ব্যাপারগুলো কি আসলে এমনি অনুভূতিতে আচ্ছন্ন হয়ে থাকে সারা জীবন?আপনার কি মনে হয়?

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

রায়হান আবীর এর ছবি

আহ্‌। দারুন!!
---------------------------------
এভাবেই কেটে যাক কিছু সময়, যাক না!

অতিথি লেখক এর ছবি

মন ভরে যায় এরকম গল্প পড়ে।
আপনার গল্প নিয়মিত চাই।

নায়েফ

নজমুল আলবাব এর ছবি
আরিফ জেবতিক এর ছবি

যাক , বহুদিন পর হাসান সাহেবকে ইদানিং কিছু লেখালেখি করতে দেখা যাচ্ছে ।

তারেক এর ছবি

খুব ভালো লাগলো পড়ে। দারুন!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- আবারো মুগ্ধ।
অন্য কোথাও বলা শিমুলের কথার সাথে মতৈক্য জানাই। বই আকারে চাই। হাতের কাছে থাকবে, যখন তখন উলটে পালটে, নতুন করে চেখে দেখা যাবে!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

Barkat Ullah Maruf এর ছবি

কী অবলীলায় সব কথা বলে দেয়া যায়! আশ্চর্য!
একটা সামান্য সকাল দিয়ে এঁকে দেয়া যায় সমস্ত জীবন। ভাল আঁকিয়ে ভাই আপনি । আষ্টেপৃষ্ঠে বাঁধা গল্পের মানবজমিন।
আরও লিখুন।

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

ভীষন ভীষন ভালো লাগলো।
বেশীরভাগ মানুষ কি আসলে এভাবেই তাদের জীবনটাকে যাপন করে?
কে জানে...

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

শেখ জলিল এর ছবি

জটিল!
দারুণ!!

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

মুশফিকা মুমু এর ছবি

খুব ভাল লিখেছেন। ভাল লাগল। মায়া লাগছে ....

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

স্নিগ্ধা এর ছবি

হাসান মোর্শেদের কবিতা বা গদ্য নিয়ে আমার নতুন কিছু বলার নেই - যে কজন সচলের লেখা আমি পড়বই পড়ব তাদের মধ্যে ইনি অন্যতম। গল্পটা যে চমৎকার শুধু তাই না আমার নামকরণটাও অসাধারান লাগলো - 'যাপনচাতুর্য' - কি যথাযথ একটা নাম !!!

কানন এর ছবি

অন্যসকলে যখন ভূয়সীপ্রশংসায় মাতলেন,আমি তখন সমালোচনা করব বলেই পড়লাম । নাহ ভাই,আপনি ভালোই লিখেছেন ,একেবারে ঠাস বুনোট । সমালোচনা করার জায়গা রেখেছেন কম । তাই সমালোচনা নয়,দুটো কথা বলতে চাইঃ

ক। এই গল্প পড়তে গিয়ে আপনার আরো কয়েকটি গল্প ও পড়ে ফেললাম । সবগুলোতে একটা বিষয় দেখলাম-একজন উত্তম পুরুষে গল্প বলে যাচ্ছে ফলে বাকী চরিত্রগুলো আর গুরুত্ব পাচ্ছেনা অথবা একটা চরিত্রের সাথে আরেকটা চরিত্রের আন্তঃ যোগাযোগ ও হচ্ছেনা । সংলাপ থাকছেনা অথবা থাকলে ও খুব কম । এইভাবে কেনো লেখেন?

খ। আপনি কি রাশিদা সুলতানার গল্প গুলো পড়েছেন? রাশিদা সুলতানা আগে পড়ে ফেলেছেন এমন কোন পাঠক যদি আপনার গল্প পড়ে বলেন-আপনি ওকে অনুসরন করেছেন,তাহলে?

আপনার আরো নিয়িমিত গল্প পড়তে চাই ।

স্নিগ্ধা এর ছবি

কানন,

আমি রাশিদা সুলতানার অল্প কিছু গল্প পড়েছি, কিন্তু হাসান মোর্শেদের সাথে উত্তম পুরুষে বয়ান ছাড়া আর কোন মিল তো পাই নি ? আপনি ঠিক কি ধরনের (অনুসরণ কথাটা একটু বেশিই হয়ে যায়, অতএব ওটা ব্যবহার করছি না) মিল এর কথা বলছেন? রাশিদার গল্পের ধরন আমার কাছে লাগে - সোজাসুজি বলে যাওয়া, ছোট গল্পের 'চমক' বা টুইষ্ট বলতে যেটা বোঝায় সেটা থাকে ঘটনা অথবা ঘটনার সাথে প্রধান চরিত্রের সম্পৃক্ততায়। আর হাসানের গল্প বলার ধরন কিছুটা কাব্যিক আর কিছুটা শ্লেষাত্মক, ঘটনার চাইতে আমার কাছে অন্তত মনে হয় বর্ণনাটা প্রাধান্য পায় বেশী।

আপনি ঠিক কি বুঝাতে চেয়েছেন একটু বলবেন?

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

এই গল্পে দূরবীণের অসাধারণ ইঙ্গিতময় ব্যবহারটা চমৎকার।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

কাননের মন্তব্যে (খ) পড়লাম।
যদিও প্রশ্নটা লেখককে করা - তবুও দীর্ঘদিন যাবত হাসান মোরশেদের লেখা পড়ার পরে রাশিদা সুলতানাকে অনুসরণ করার ইংগিত আসলে আমি পাঠক হিসাবে অবাক হবো, এবং হয়েছি।

রাশিদা সুলতানার লেখা যা পড়েছি তাতে উত্তম পুরুষে গল্প বলা ঠিক আছে। এমনটি দেখা যায় মশিউল আলমের গল্প-উপন্যাসেও। কিন্তু রাশিদার মূল ফোকাস বোধ করি নারী জীবনের ভেতরে যাওয়া। রাশিদা সুলতানার লেখায় দীর্ঘ বর্ণনা থাকে, যেখানে সামাজিক সংকটগুলো প্রাধান্য পায় - এবং তা নারীবাদী ভাবনার বাইরে যেতে পেরেছে বলে মনে হয়নি।
বিপরীতে হাসান মোরশেদের লেখায় এসব কই?

গত দশ বছরের আগের সময়টায় পাঠক ফোরাম-বন্ধুসভা, সাপ্তাহিক চলতিপত্র কিংবা সহবাস'এ এবং দুবছর ব্লগে আমরা যারা হাসান মোরশেদের লেখা পড়ে এসেছি, সেখানে তাঁর লেখার কাঠামোটাই তো এমন। নিজের মতো করে বলে যাওয়া, অল্প কথায় অনেক কিছু। বাড়তি প্রলেপ নেই, বাহুল্য নেই। ছোটো ছোটো বাক্যে হৃদছোঁয়া গল্প বলায় আমি অন্তত: কোনো ভাবেই রাশিদা অনুসরণ পাই না।

অতিথি লেখক এর ছবি

ভালো লাগলো৷

---
রোডায়া

হাসান মোরশেদ এর ছবি

প্রিয় আনোয়ার সাদাত শিমুল,স্বপ্নাহত,রায়হান আবীর,নায়েফ,নজমুল আলবাব,আরিফ জেবতিক,তারেক,ধুসর গোধূলী,Barkat Ullah Maruf ,শেখ জলিল,মুশফিকা মুমু, স্নিগ্ধা,কানন, মুহাম্মদ জুবায়ের( ভ্রাতা ও ভগীনিগন)---

সবিনয় কৃতজ্ঞতা সকলে । যখন কোন সুহৃদ পাঠক/সমালোচক লেখা পড়েন,আমার মনে হয় তিনি তার পাঠের সময়টুকু আমাকে দান করলেন । তাই কৃতজ্ঞতা সবিশেষ সকল সময় ।

ভালো থাকুন সক্কলে ।

-------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

হাসান মোরশেদ এর ছবি

কানন,
আপনার প্রতি আলাদা কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি সংগত কারনেই , দুটো বিষয়ে আলোকপাত করেছেন । আমি আমার ব্যখ্যাটুকু দেবো,যদি ব্যখ্যা বিশ্লেষনে আমার সীমাবদ্ধতা আছে যথেষ্ট ।

ক। এই গল্প পড়তে গিয়ে আপনার আরো কয়েকটি গল্প ও পড়ে ফেললাম । সবগুলোতে একটা বিষয় দেখলাম-একজন উত্তম পুরুষে গল্প বলে যাচ্ছে ফলে বাকী চরিত্রগুলো আর গুরুত্ব পাচ্ছেনা অথবা একটা চরিত্রের সাথে আরেকটা চরিত্রের আন্তঃ যোগাযোগ ও হচ্ছেনা । সংলাপ থাকছেনা অথবা থাকলে ও খুব কম । এইভাবে কেনো লেখেন?

এইভাবে কেন লিখি? আমি আসলে লিখিনা,আমি বলি । হ্যাঁ, আমার কিছু কথা বলার থাকে । যদি আমি চিত্রকর হতাম-আমার ছবিতে সেই কথাগুলো বলতাম,গায়ক হলে হয়তো গানে; আমি চিত্রকর কিংবা গায়ক নই ।কিভাবে যেনো কিছুটা লিখতে পারি,তাই যা বলতে চাই তা লিখেই বলি । এভাবে বলতে গিয়েই হয়তো গল্পের কাঠামো এরকম দাঁড়িয়ে যায়-হতে পারে এটাই আমার স্টাইল,হতে পারে সীমাবদ্ধতা । তবে এরকমই আমি স্বাচ্ছন্দবোধ করি,আর লিখি নিজের প্রয়োজনে তাই নিজের স্বাচ্ছন্দকেই গুরুত্ব দেই । জোর করে কিছুই বদলাবোনা । স্বতস্ফুর্তভাবে যদি বদলায়,তবে হয়তো বদলাবে কোনদিন ।

খ। আপনি কি রাশিদা সুলতানার গল্প গুলো পড়েছেন? রাশিদা সুলতানা আগে পড়ে ফেলেছেন এমন কোন পাঠক যদি আপনার গল্প পড়ে বলেন-আপনি ওকে অনুসরন করেছেন,তাহলে?

আমি রাশিদা সুলতানার দুটো গল্প পড়েছি । প্রথমটা বছর দুয়েক আগে প্রথম আলো সাময়িকীতে,দ্বিতীয়টা সচলায়তনে,সুমন রহমানের কল্যানে ।

এবার কেউ যদি অনুসরনের কথা বলেন- আমি প্রথমে বিরক্ত হব,তারপর সেই পাঠক/সমালোচকের ম্যাচুউরিটি প্রার্থনা করবো ।

রবিবাবু তার গল্প কবিতায় হাজার বার 'ভালোবাসি' শব্দটা ব্যবহার করেছেন,তাই বলে তা তার প্যাটেন্ট হয়ে যায়নি । প্রাকৃতিক নির্বাচনে যারা তার পরে এই শব্দ ব্যবহার করার সুযোগ পেয়েছেন-তারা সবাই কি তবে রবিবাবুকেই অনুসরন করছেন?
বাংলাদেশের বাজার চলতি পত্রিকার সাহিত্যপাতায় যারা লিখেন স্তাবকেরা তাদেরকেই একটা মানদন্ড বানিয়ে দেয়,তারা খবর ও রাখেনা যে ভিন্ন মিডিয়াতে আরো অনেক কাজ হচ্ছে । এই স্তাবকেরা ন্যুনতম মিল খুঁজে পেলে সেটাকে অনুসরন বানিয়ে দিতে দ্বিধা করেনা । লেখক হিসেবে এতে অবশ্য আমার কিছু যায় আসেনা ।
আমার কাছে লেখালেখি স্টারবিযের হুড়োহুড়ি প্রতিযোগীতা না বরং সময়ই বলে দেবে কার পথ কোনটা,কে কাকে অনুসরন করল,কে তার নিজস্ব পথ তৈরী করে নিলো?

আমার পরবর্তী লেখায় আপনার সদয় উপস্থিতি সানন্দে কাম্য ।
শুভকামনা ।
---------------------------------------
শমন,শেকল,ডানা

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

অমিত আহমেদ এর ছবি
কানন এর ছবি

আপনাদের এই সাইটের বড় সমস্যা হল,এক সাথে এত ভাল লেখা আসে যে পুরনো লেখা খুঁজে বের করতে সমস্যা হয় ।

হাসান মোরশেদ ভাই ও অন্যদেরকে ধন্যবাদ আমার মন্তব্যকে গুরুত্ব দিয়েছেন বলে ।
আপনার লেখার যে ধরন সেটা আপনার স্টাইলই,সীমাবদ্ধতা নয় । লেখক যেভাবে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন সেভাবেই তো লিখবেন এটা ও ঠিক ।
আর রাশিদা সুলতানা প্রসংগে আমি দুঃখিত,যে ভাবে প্রকাশিত হয়েছে আমি ঠিক সেভাবে বলতে চাইনি । শব্দটা অবশ্যই অনুসরন নয়-কোন ভাবে মিলে যাওয়া,সেটা কাকতাল ও হতে পারে । আমি কোন লেখক নেই,রাশিদা সুলতানার সাথে পরিচয় ও নেই । আপনার গল্প পড়তে গিয়ে ওর গল্প মনে পড়ে গেলো বলেই হয়তো এই মন্তব্য করা ।

তবে আপনার স্ট্রেটকাট জবাবে আমি লা জওয়াব ।
আরো লেখার অপেক্ষায় থাকলাম ।

খেকশিয়াল এর ছবি

মুগ্ধ হয়ে পড়ছিলাম গল্পটা, অসাধারন !

-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'

-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'

জারা [অতিথি] এর ছবি

আমি আমার সব ভাযা হারিয়ে ফেলেছি।

s-s এর ছবি

আমাদের বিয়ের প্রায় পাঁচবছর হয়ে গেলো । ডাক্তার বলে দিয়েছে,আমাদের কোনদিন সন্তান হবেনা ।

পুরো গল্পটা খুব ভালো লাগলো, এই জায়গাটায় এসে হোঁচট খেলাম -----
কেন?
এই লাইনটা দিয়ে শেষ করা?
প্রশ্ন রয়ে গেলো আমার মনে -----------

জীবন জীবন্ত হোক, তুচ্ছ অমরতা

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।