ভনিতাপর্ব
xxxxxxxxx
xxxxxxxxx
সহব্লগার নজমুল আলবাব তার কবিতার কাগজ 'শস্যপর্ব'এর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন প্রায় ছয়বছর বিরতি তে ।
শস্যপর্ব'র জন্য কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলাম, রাশান কবি আন্না আখমাতোভা'র ।
নজমুল তার কবিতাপত্রের পুরোটাই তুলে দিয়েছিলেন 'সামহোয়ার ইন' এ- যেখানে কিছুদি...
ভনিতাপর্ব
xxxxxxxxx
xxxxxxxxx
সহব্লগার নজমুল আলবাব তার কবিতার কাগজ 'শস্যপর্ব'এর দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশ করেছিলেন প্রায় ছয়বছর বিরতি তে ।
শস্যপর্ব'র জন্য কিছু কবিতা অনুবাদ করেছিলাম, রাশান কবি আন্না আখমাতোভা'র ।
নজমুল তার কবিতাপত্রের পুরোটাই তুলে দিয়েছিলেন 'সামহোয়ার ইন' এ- যেখানে কিছুদিন আগেও আমরা লিখতাম । অন্ততঃ তখন পর্যন্ত(ফেব্রুয়ারী '০৭) ওখানে লেখা যেতো ।
অনেকের মতোই আমি ও ওখানে লিখছিনা আর । পুরনো লেখাগুলোকে ও ঠিক নিরাপদ মনে করছিনা । তাই কিছু কিছু লেখা 'সচলায়তন' এ নিয়ে আসার কথা ভাবছি ।
সচলদের অনেকেরই এইসব লেখা আগে পড়া হয়ে গেছে । পুনরাবৃত্তির জন্য তাঁদের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী ।
xxxxxxx
xxxxxxx
আন্না পর্ব
-------------
-------------
আন্না আখমাতোভা, যার পুরো নাম ছিল আন্না আন্দ্রিভনা গোর্নিকা।
রাশান কবিতার 'সেন্ট পিটার্সবার্গ' ঘরানার প্রধান কবি হয়ে উঠেছিলেন। তাঁকে ঘিরে গড়ে উঠেছিল একটা সময়ের শিল্প ও শিল্পবোদ্ধাদের সংঘ।
আন্না'র নিজের গল্প তেমন আলাদা কিছু নয়। সকল সমাজে সকল সময়ে একজন কবি এবং একজন প্রতিভাবান মানুষের বেড়ে উঠার গল্প। হ্যাঁ, নারী হিসেবে তার গল্প আরো বেশি কিছু বেদনাময়।
কিশোরী আন্না'কে নাম বদলাতে হয়। বাবা চাননি বখে যাওয়া মেয়ের আজেবাজে লেখার সাথে তাঁর অভিজাত নাম উচ্চারিত হোক। প্রথম বিয়ে আরেকজন কবিপুরুষের সাথেই। নিকোলাই গোমিলয়েভ, যিনি কখনোই আন্না'র কবিস্বত্বাকে গুরুত্ব দেননি। একবার ভীষন ক্ষেপে গিয়েছিলেন, যখন আলেক্সান্দর ব্লক ঘোষনা করেছিলেন 'কবি হিসেবে আন্না, নিকোলাই থেকে অনেক উঁচুতে'
এরপর আরো দু'জন বিদগ্ধ জনের সাথে তার ঘরসংসার।
সবশেষে নোবেলজয়ী 'বরিস পাস্তরনেক' এর সাথে রহস্যঘেরা প্রেম, যা শেষপর্যন্ত পরিনতিহীন।
তবে আন্না আখমাতোভা'র জীবনে পরোভাবে সবথেকে গভীর দাগ ফেলেছিলেন কমিউনিষ্ট লৌহমানব জোসেফ স্ট্যালিন।
আন্না ও তাঁর সমসাময়িক কবিগন রাজনীতিকে পাশ কাটিয়ে ব্যক্তিগত নির্জনতাকে ঘিরে যে ঘরানার কবিতা লিখতেন, বলশেভিক বিপ্লবের পর সেগুলোকে প্রতিবিপ্লবী আখ্যা দেওয়া হয়। স্ট্যালিন আমলে তাঁর প্রথম স্বামী কবি গোমিলয়েভ' কে মৃতুদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁর তৃতীয় স্বামী নিকোলাই পুনিনও মারা যান শ্রমশিবিরে। পার্টিজান হওয়ার পরও পাস্তোরনাক এর সাথে পার্টির আচরণ তো ইতিহাস।
আন্নার একমাত্র ছেলে'রও পুরো তারুণ্য কেটেছে বন্দীশিবিরে। স্ট্যালিনের জন্য প্রশংসাগাঁথা রচনা করেও আন্না দীর্ঘবছর ছেলেকে দেখতে পাননি। স্ট্যালিনের রাজনৈতিক সহচর আন্দ্রে জিদানভ একবার জনসম্মুখে তাঁকে আখ্যায়িত করেছিলেন' অর্ধেক গনিকা, অর্ধেক তাপসী' বলে।
পার্টিজান ছিলেন না বলে 1925 থেকে 1952 এ দীর্ঘসময়ে তাঁর কোনো কবিতা প্রকাশিত হয়নি সোভিয়েতে। পশ্চিমে পালিয়ে যাওয়া কবিবন্ধুদের ধারণা ছিলো আন্না আর বেঁচে নেই।
বাইরের পৃথিবী আন্নাকে প্রথম জানতে পেলো যখন তিনি 1965 তে ইতালি ও ইংল্যান্ড ভ্রমণের অনুমতি পান। ইংল্যান্ডে এলে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মান সুচক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করে।
আন্না'র কবিতাগুলো আরও বেশি নন্দিত হতে থাকলো 1966 তে তাঁর মৃত্যুর পর।
সেন্ট পিটার্সবার্গ এর কাছে গড়ে তোলা হয়েছে 'আন্না আখমাতোভা স্মৃতি জাদুঘর', যেখানে জীবনের এক দীর্ঘ সময় পার করেছিলেন এই কবিতার তাপসী।
মুল রাশান থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করা আন্না'র কবিতা প্রথম পড়েছিলাম অন্ততঃ একযুগ আগে। বাংলা মাধ্যমে পড়াশুনা করা এক কিশোরের জন্য, সে পাঠ অবশ্য বেশ ভারী ছিলো। তবু অনুভূতি দিয়ে ধরতে চেয়েছিলাম। ধারনপর্বটা শেষপর্যন্ত কিছুটা বোঝা আর অনেকটা না বোঝাতেই আটকে গিয়েছিল।
একযুগ পর যখন পেশাগত কারনে ইংরেজি চর্চা চালিয়ে যেতে হচ্ছে, আর চমৎকার যোগাযোগ ঘটেছে কিছু মানুষের সাথে, সারা পৃথিবীর কবিতা যাদের পঠনে ও মননে_ ঠিক এ অবস্থায় স্মৃতিতে ফিরে এলো আন্না আখমাতোভা 'কবিতার গনিকা, কবিতার তাপসী'।
মুল রাশান থেকে ইংরেজি। সেখান থেকে বাংলা। আর এটা কোনভাবেই আক্ষরিক অনুবাদ নয়। যা করেছি তাকে আমি বলি, ভাবানুবাদ।
যেনো এক মহান শিল্পীর আঁকা ছবি দেখে এলাম। এবার চোখ বুঁজে নিজস্ব কল্পনায় তাকে আবার দেখলাম। চোখ খুললাম। এবার নিজের আঁকার পালা, সেই ছবিটাই। ছবিটা ঠিক রাখার চেষ্টা তো থাকবেই, কিন্তু জলরংয়ে আঁকা মুল ছবি যে এবার পেন্সিলে আঁকা স্কেচ হয়ে যাবেনা, এমন নিশ্চয়তা যে আমি দিতে পারি না।
-------
-------
কবিতাপর্ব
-------------
-------------
অন্যজীবন
এসব ছাড়িয়ে অন্য কোথাও জীবন আছে জানি,
অন্য রকম। সেই জীবনে একটি কিশোর সন্ধ্যেবেলা
সীমানা ছাড়ায়। এক কিশোরী, সেই কিশোরের
চুলের ফাঁকে আঙুল বোলায়। হাজার কয়েক
প্রজাপতি তাদের ঘিরে জ্যোৎস্না ঝরায়।
কিন্তু আমরা টুকরো মানুষ, ভগ্নজীবন অাঁকড়ে থাকি
মুক্ত হবার প্রবল নেশায়, চারপাশেতে দেওয়াল গড়ি।
হঠাৎ কেবল হন্যে বাতাস, ভাবনাঘরে ঝাপ্টা দিলে
মনে পড়ে অন্য জীবন।
সেই জীবনে একটি কিশোর,
জ্যোৎস্নাময়ী এক কিশোরী...
অন্য জীবন, অন্য কোথাও_
আমরা কি আর পৌঁছতে পারি?
*****
অবকাশযাপন
দক্ষিণ সমুদ্রতীরে অন্য কেউ যাক অবকাশে
অন্য কেউ উপভোগ করুক স্বর্গভূমি,
এখানে উত্তুরে হাওয়া, এখানে আমি
আমার স্মৃতিরা মেঘদল হয়ে,ভাসে আকাশে।
পাশে কেউ নেই,আমি তো আছি আমার
সমস্ত অতীত ও সমপ্রতি
জ্বেলেছে প্রদীপ,যেনো নিয়তি,
স্নিগ্ধ শিখাটি হেমন্তবেলা সাথী উষ্ণতার।।
*****
শেষ প্রণয়ের গান
ক্রমশ:শীতল হয়ে এসেছিলো আমার সকল
তখনো অনেকটা প্রহর হেঁটে যাওয়া কেবল,
প্রাচীন গল্পের মতো আরো দীর্ঘ দীর্ঘ পথ
হায়! ক্লান্ত আমি, ফুরিয়েছে চলার শপথ।
হেমন্তের বিষাদ সন্ধ্যায় কেবল জেগেছিলো
মেপলের শীর্ন পাতা, আর তারা বলেছিলো
'ওগো বিষন্ন মেয়ে, এসো বসি ওই প্রান্তে
এসো একসাথে ঝরে পরি এ করুণ হেমন্তে'
'আমি ও বিরহপ্রিয়, আমি ও কাঙ্গাল বড়ো
হে মেপল, হে প্রিয়... আমাকে গ্রহণ করো'
আমাদের শেষবেলা শুধু এই কথা হয়েছিলো,
একটি প্রদীপ তার হলুদাভ শিখা জ্বেলেছিলো।
*****
আমার ছুটে চলা
ছুটে চলা বেশ জ্যামিতিক।
কারো বেলা এক সরলরেখা
কারো বৃত্তাকার;
যেনো বেলা শেষে বাড়ি ফিরে আসা
অথবা, প্রতীক্ষা হারানো প্রেমিকার।
সবারই ছুটে চলা বেশ জ্যামিতিক
শুধু আমারই বেলা নিয়তি বিপরীত;
স্মৃতি থেকে গন্তব্য মুছে গেছে,
মুছে গেছে নামসহ নারী
যেনো লাইন থেকে ছিটকে পড়েছে
করুণ ট্রামগাড়ি।।
*****
প্রিয় বরিস, তোমার জন্যে
ফুরিয়েছে আমাদের কথোপকথন
বিদেয় নিয়েছে বসন্ত বেলা
এসেছে স্তব্দতার প্রহর
ভেসেছে বিষন্ন ভেলা।
স্বর্গের ফুলদল প্যাকেট বন্দী
শবচারী হবে তারা,
শোকে নত বিশাল ছায়াপথ,
ক্ষুদ্র পৃথিবী কাফনে মোড়া।।
মন্তব্য
অসাধারণ কবিতাগুলি। সামহয়্যারের আপনার কবিতা, গল্প, আলোচনা সবগুলো এখানে নিয়ে আসা উচিত। আর সেটাকে যদি অনেকের বিরক্তির কারণ মনে হয় তবে প্রথম পাতায় না দিয়ে ব্লগে রাখতে পারেন। অসাধারণ লেখাগুলি সচলায়তনে দেখতে খুব ভালো লাগবে।
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
নয়া অনুবাদ নামান না কেন?
আমারও একই মত। সব নিয়ে আসুন। নিজের ব্লগে রেখে দিলেন, আর কিছু না হোক। এগুলোর কোন পাঠক আর সজ্ঞানে ওখানে যাবার কারণ নেই। গেলেও আপনার লেখা গুলো জঞ্জালের স্তূপের নিচে পড়ে থাকবে। দ্বিধা বা সংকোচের কিছু নেই এখানে।
এটা কি ইবুক হচ্ছে? খুব ভালো হবে।
-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...
হে নামহীন/হীনা অতিথিঃ
কৃতজ্ঞতা স্মরন করার জন্য ।
নতুন কিছু অনুবাদ করেছি চার্লস বুকস্কি । এই ব্লগেই আছে । যদি দেখেন কৃতার্থ হবো ।
আরিফঃ
এটা কি করে ই-বুক হিসাবে সেভ হলো, আমি ও বুঝতে পারছিনা । আমার ইচ্ছে আছে 'শস্যপর্ব' পুরোটা এখানে ই-বুক হিসাবে রাখার । দেখি সম্পাদক সাহেবের অনুমতি মেলে কিনা ?
-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
এটাকে কি ই-বুক থেকে মুক্তি দিবো?
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
শশ্যপর্ব ই-বুক করিতে চাই।
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
বই সম্পাদনা জুড়ে দিলাম আপনার একাউন্টে। কিভাবে কি করতে হবে তার জন্য সাহায্য > প্রায়শ জিজ্ঞাস্য দেখে নিন। আর কোলাবোরেটিভলী করতে হলে যার সাথে করতে চান তার সাথে আলাপ করে নিন।
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
এটাকে ইবুক থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যাপারে হাসান মোরশেদের সদয় সম্মতি আর মাহবুব মুর্শেদের সদয় একশন কামনা করছি।
তবে হাসান মোরশেদ যদি আরো কিছু অনুবাদ করে এটিকে বইতে রূপান্তরিত করতেন,তাহলে বাধিত হতাম।
"শষ্যপর্ব" নামেই আলাদা ই-বুক হওয়া উচিত।নজমুলের জন্য সেটা ঝামেলা হওয়ার কথা না যদি ম্যাটারের কম্পোজগুলো এখনও থেকে থাকে।
কবিতাগুলি আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। বিশেষ করে অন্যজীবন কবিতাটি। শেয়ার করার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
অসাধারণ লাগলো। আরিফ সাহেবের সাথে আমিও একমত, এই রচনাগুলো ই-বুক হিসেবে প্রকাশ করা জরুরী।
খুবই অসাধারণ মনে হলো কবিতা গুলো। সাখাওয়াৎ
নতুন মন্তব্য করুন