'স্কুল অফ দ্যা আমেরিকাস’ মার্কিন সেনাবাহিনীর একটি সামরিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেখানে দক্ষিন আমেরিকার রাষ্ট্রসমুহের নিরাপত্তাবাহিনীর সদস্যদের মানসিক ও সামরিক প্রশিক্ষন দেয়া হয়, শুরু থেকেই প্রশিক্ষনের মুল উদ্দেশ্য মার্কিন স্বার্থ বিরোধী সবধরনের সমাজতান্ত্রিক ও গনতান্ত্রিক উত্থানকে নিষ্ঠুরভাবে নির্মুল করা। ১৯৪৬ থেকে ২০০১ সালের মধ্যে দক্ষিন আমেরিকার ৬১,০০০ সামরিক ও আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য প্রশিক্ষন প্রাপ্ত হয় এই স্কুল থেকে যাদের মধ্যে অনেকেই পরবর্তীতে মানবাধিকারের চরম লংঘনের দায় অভিযুক্ত হয়।
আর্জেন্টিনার জেনারেল লিওপোল্ড গাল্টেয়ার, গুয়াতেমালার জেনারেল হোসে রিও, পানামার জেনারেল নরিয়েগা, বলিভিয়ার হোগু বেঞ্জারের মতো যেসকল স্বৈরশাসকরা ল্যাটিন রাষ্ট্রসমুহে জোরপূর্বক ক্ষমতা দখল, মানবাধিকারের চরম লংঘন, হত্যা-নির্যাতন ও মাদকের বিভীষিকা ছড়িয়ে দেয়ার দায়ে অভিযুক্ত তাদের প্রত্যেকেই স্কুল অফ আমেরিকার গ্র্যাজুয়েটস!
আভ্যন্তরীন শান্তি-শৃংখলা রক্ষা, নাশকতামুলক কর্মকান্ড প্রতিরোধ করা এসব বিষয়ে প্রশিক্ষনের কথা প্রকাশ্যে বলা হলেও প্রশিক্ষনপ্রাপ্তরা ব্যবহৃত হয়েছে বিচারবহির্ভুত হত্যাকান্ড, বিরোধী রাজনৈতিক কর্মীদের দমন-নিপীড়ন ও সরকারের প্রতিহিংসামুলক কর্মকান্ডে।
নোয়াম চমস্কীর ‘ল্যাটিন আমেরিকাঃ ফ্রম কলোনিয়ালাইজেশন টু গ্লোবালাইজেশন’ গ্রন্থে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত এল সালভেদরের একজন সৈনিকের ভাষ্য উদ্ধৃত হয়েছে এভাবেঃ
‘ আমাদেরকে তৈরী করা হয়েছে এসব কাজের জন্য এবং আমরা এসকল কাজই করেছি। ট্রেড ইউনিয়ন ভেঙ্গে দেয়া, যে কোন মুল্যে শ্রমিক আন্দোলন দমন করা আমাদের কাজ ছিলো। হ্যাঁ, যে কোন মুল্যে! আমেরিকানরা আমাদের এরকম প্রশিক্ষনই দিয়েছে’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আভ্যন্তরীন রাজনীতিতে ও একসময় ‘স্কুল অফ দ্যা আমেরিকাস’ আলোচনার বিষয় হয়ে উঠে। কেউ কেউ এটিকে কেবল মাদক চোরাচালান নিয়ন্ত্রনের প্রশিক্ষন কেন্দ্র হিসেবে চালু রাখার দাবী জানান আর অনেকেই দাবী তোলেন এটি পুরোপুরি বন্ধ করে দেয়ার জন্য।
স্কুল অফ আমেরিকা ওয়াচ নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন কাজ শুরু করে কেবল এটিকে বন্ধ করে দেয়ার কর্মসুচী ঘোষনা করে। প্রতি বছর একটি নির্দিষ্ট দিনে মানবাধিকার কর্মীরা এই স্কুল ঘেরাও করে তাদের প্রতিবাদ জানান। ১৯৯৯ সালে প্রায় ১২,০০০ কর্মী ঘেরাও কর্মসূচীতে অংশ নেন।
‘স্কুল অফ আমেরিকা ওয়াচ’ এবং অন্যান্য মানবাধিকার সংগঠনের আন্দোলনের মুখে মার্কিন জনপ্রতিনিধিরা এই কুখ্যাত স্কুলের অর্থায়ন বন্ধের পক্ষে তাদের মতামত ব্যক্ত করেন, জুলাই ১৯৯৯।
পরবর্তীতে এটি বন্ধ করে দেয়ার প্রস্তাব ও জয়লাভ করে ১০ ভোটে, যদিও সামরিক লবির চাপে বিকল্প পন্থা হিসেবে এর নাম বদলে দেয়ার সিদ্ধান্তটিই গৃহীত হয় শেষপর্যন্ত।
জানুয়ারী ১৭,২০০১ সালে এর নতুন নামকরন হয় ‘ওয়েষ্টার্ণ হেমিস্পেয়ার ইনস্টিটিউট ফর সিকিউরিটি কো-অপারেশন’ । একই বছরের সেপ্টেম্বর এগারো পরবর্তী ভূ-রাজনৈতিক ও সামরিক নতুন হিসেব-নিকেশ পরবর্তী সময়ে দেখা যাচ্ছে এই স্কুলের নতুন নামকরনটি কেবলই লোক দেখানো মাত্র, বৈশিষ্টগত ভাবে এর কোন পরিবর্তন আসেনি।
যদিও সংশ্লিষ্টরা দাবী করছেন, প্রশিক্ষনসূচীতে এখন মানবাধিকার শিক্ষা ও যুক্ত করা হয়েছে এবং প্রশিক্ষনার্থীদের অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে মানবাধিকার বিষয়ে সচেতন করা হচ্ছে যেনো দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কোনভাবেই তারা মৌলিক মানবাধিকার লংঘন না করেন।
কিন্তু হিউমেন রাইটস ওয়াচের মতো মানবাধিকার সংগঠন গুলো দাবী করছে কারিকুলামে মানবাধিকার শিক্ষা সংযুক্ত হওয়াই কেবল মানবাধিকার লঙ্ঘন বন্ধ হওয়ার নিশ্চয়তা প্রদান করেনা, যেখানে মুল প্রশিক্ষন কার্যক্রমই এটিকে উৎসাহিত করছে। সন্দেহভাজন ব্যক্তির কাছ থেকে তথ্য আদায়ের জন্য যে স্কল কৌশলের কথা প্রশিক্ষন ম্যানুয়েলে বলে দেয়া হয়েছে সেগুলো অত্যন্ত গুরুতরভাবে মানবাধিকার লংঘন করে যেমনঃ- শারীরিক নির্যাতন, ব্ল্যাকমেইল, পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার ও নির্যাতন ইত্যাদি।
কার্যকর পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে না আসলেও, পরিবর্তন আসছে দক্ষিন আমেরিকার রাষ্ট্রসমুহের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে। বিগত দশকগুলোতে দক্ষিন আমেরিকা মুক্ত হয়েছে মার্কিন মনোনীত স্বৈরশাসকদের নিপীড়নের হাত থেকে, অনেকগুলো দেশেই ক্ষমতাসীন হয়েছে সরাসরি বাম অথবা বামঘেষা গনতান্ত্রিক সরকার যারা মার্কিন স্বার্থ নয়, নিজ নিজ রাষ্ট্রের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
২০০৪ এ ভেনেজুয়েলা সরকার স্কুল অফ আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষনপ্রাপ্তদের চাকরীচ্যুত করেছে তাদের সেনাবাহিনী থেকে, ২০০৬ এ আর্জেন্টিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই স্কুলে তাদের সৈনিক আর না পাঠানোর। উরুগুয়ে আগে কখনো পাঠায়নি এবং ভবিষ্যতে ও না পাঠানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত তারা বলবৎ রেখেছে। বলিভিয়া ও নিশ্চিত করেছে তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আর মার্কিন প্রশিক্ষনের জন্য পাঠানো হবেনা।
শুধু নিজ দেশে প্রতিষ্ঠান স্থাপন করে দক্ষিন আমেরিকার সশস্ত্রবাহিনীগুলোকে প্রশিক্ষন দানেই সীমাবদ্ধ থাকেনি মার্কিন প্রশাসন নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষনের প্রয়োজনে পৃথিবীর আরো নানা দেশের সেনাবাহিনীকে ও প্রশিক্ষন দিয়েছে যাদের বিরুদ্ধে পরবর্তীতে গনহত্যার অভিযোগ উঠেছে। উদাহরন হিসেবে ইন্দোনেশিয়ার সেনাবাহিনীর উল্লেখ করা যেতে পারে। ১৯৯৮ সালের শেষদিকে যখন পূর্ব তিমুরের স্বাধীনতা আন্দোলন তুঙ্গে, ঠিক তখনই ক্লিনটন প্রশাসন শুরু করে ইন্দোনেশীয় সেনাবাহিনীকে প্রশিক্ষন সহযোগীতা। মার্কিন প্রশিক্ষিত এই সেনাবাহিনীই ১৯৯৯ এর তিমুর গনহত্যার জন্য অভিযুক্ত হয়। উল্লেখ করা জরুরী এই প্রশিক্ষন কর্মসূচী মিলিয়ন পাউন্ডের অর্থ সহযোগীতা করেছিলো যুক্তরাজ্য।
যুক্তরাজ্য প্রসঙ্গে মনে করা যেতে পারে- হীরার খনি অধ্যুষিত সিয়েরা লিওনের গৃহযুদ্ধে যুক্তরাজ্যের অবৈধভাবে ভাড়া করা সৈন্য ব্যবহার।
বাংলাদেশের এলিটফোর্স র্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ন(র্যাব), বিচার বহির্ভুত হত্যাকান্ডের জন্য হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সহ মানবাধিকার সংগঠন সমুহ যাকে ডেথ স্কোয়াড বলে আখ্যায়িত করে আসছে, তার প্রশিক্ষন ও সম্পন্ন হয়েছে যুক্তরাজ্যের উদ্যোগে- উইকিলিকসের সৌজন্যে এই তথ্য এখন প্রকাশিত।
এই প্রশিক্ষনের উদ্দেশ্য আর ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, দূরপ্রাচ্যের দেশ সমুহের সশস্ত্রবাহিনীকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের প্রশিক্ষনের উদ্দেশ্য এক নাকি ভিন্ন সেই কৌতুহলও হয়তো নিবৃত হতে পারে আগামীর কোন পরিক্রমায়।
মন্তব্য
গুরুত্ত্বপূর্ন পোষ্ট হাসান ভাই। তবে এই পোষ্টে যুক্তরাজ্যের যে প্রতিষ্ঠান র্যাবকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে তাদের সম্পর্কেও কিছু তথ্য আশা করেছিলাম। ভবিষ্যতে কোন তথ্য পেলে আশা করি একটি হালনাগাদ পোষ্ট দেবেন।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
ধন্যবাদ জাহিদ। র্যাব প্রসংগ মুল লেখার একটি ইশারা মাত্র
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
চমৎকার, অপেক্ষায় থাকলাম।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
অস্ত্রধারী খুনিদের কি ধরনের মানবাধিকার পাঠ দেয়া হয় আমার দেখার খুউব শখ। যে কয়টি রাষ্ট্র রাজনৈতিকভাবে মানবাধিকারের ব্যাপারে চিন্তা ভাবনার শুরু করেছিল, তাদের মধ্যে আমেরিকা ছিল অগ্রণী (শ খানেক বছর আগে চলে যেতে হবে)। কিন্তু অন্য দেশের মানুষের ব্যাপারে তাদের যে সামরিক মানস, এবং নিজের দেশেও ধীরে ধীরে মানুষের অধিকারের যে সংকোচন, এর ফলাফল ভয়াবহ। পৃথিবীতে রাজনীতির মোড় ঘুরে যাচ্ছে এতে। রক্ষণশীলরাই এতে ধীরে ধীরে মানবাধিকারের "কাণ্ডারী" হয়ে উঠছে। আর আমাদের মত মুক্তিকামী মানুষদের স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলবার কোনো জায়গা আর থাকছে না।
ফ্রী-ফ্রী শান্তির নিঃশ্বাস ফেলার দিন শেষ হতে চলেছে...
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
সেটা আমাদের দোষেই, আমাদের শান্তি আমাদেরকেই আদায় করে নিতে হবে। সংবেদনশীলতা একটা চর্চা, সেটা আমরা বাংলার প্রগতিশীল সমাজ আর করি না (বা যারা করে তাদের সুশীল বলে গালি দেই), কিন্তু যখন আমরা আহত হই তখন দোষ দেই। সকল প্রকার হিংস্র আচরণের বিপক্ষেই সরব হতে হবে।
আজকে কেন ডানপন্থীরা হঠাত গণতন্ত্রের, মুক্তিকামীতার, কর্তৃত্ব-বিরোধিতার সরব কন্ঠ হয়ে উঠছে? ওরা কর্তৃত্ব পেলে কি ওগুলোর মর্যাদা আদৌ টিকবে? টিকবে না। ওগুলো তাদের কামনা নয়, ব্যবহারের শব্দ। কিন্তু এসবের কন্ঠ ওদের কাছে চলে যাচ্ছে কারণ প্রগতিশীল সমাজ সেই কন্ঠ ধরে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রগতিশীল সমাজ ক্রমাগত তার পছন্দের দলের হিংস্র আচরণে নিশ্চুপ থেকেছে, এমনকি কখনো হাততালি দিয়েছে। প্রতিবাদের কন্ঠ যথেষ্ট সরব কখনই হয় নি। প্রগতিশীল সমাজ তার কন্ঠকে ধীরে ধীরে কর্তৃত্ব-পরায়ণ করেছে। সেকারণে আজকে বাংলায় ফ্যাসিবাদ, মত-প্রকাশের স্বাধীনতা এসব শব্দের ব্যবহার দেখা যায় কেবল মগবাজারী মাথাগুলোর পত্রিকাতে। এগুলোর দখল এতটাই তাদের হাতে, আর এগুলোর ব্যবহার এতটাই স্বল্প প্রগতিশীল সমাজের মুখে যে এসব শব্দ ব্যবহার করে কিছু বলতেই আজকাল লজ্জা লাগে।
প্রগতিশীল দল যখন ক্ষমতায় থাকে, তখন সেটা আমাদের জন্য অশেষ ভাগ্যের বিষয়। ভাগ্যের বিষয় যে রাজাকারের দলকে মন্ত্রী পদে দেখতে হয় না। প্রগতিশীলতা, সংবেদনশীলতা এগুলো চর্চার বিষয়, এগুলো মানুষের স্বকীয় স্বভাব না। ফলে দলগুলোরও এটা চর্চার প্রয়োজন আছে। তারা যখন অন্যায় আচরণ করে, তখন যদি প্রগতিশীল সমাজই সরব হয়ে প্রতিবাদ করে, তখনই দলগুলো এটা চর্চার সুযোগটা পায়। এটা করার বদলে যখন আমরা আমাদের শত্রুর প্রতি অন্যায় করাটাকে ন্যায়ের নতুন সংজ্ঞা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করি, তখন সেই চর্চা থেকে প্রগতিশীল সমাজ আর তাদের দল, দুটোই দূরে সরে যায়, যাচ্ছে।
আর এর ফলেই হঠাত একদিন মনে হয়, শান্তির দিন তো আমাদের ফ্রি ফ্রি পাবার কথা ছিল, শেষ হয়ে যাচ্ছে কেন তবে? সংবেদনশীলতার চর্চার প্রয়োজন যেন আমাদের ছিল না!
সহমত।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আশার কথা, দক্ষিণ আমেরিকার দেশসমূহ আমেরিকার প্রভাববলয় থেকে অনেকটা বেরিয়ে আসতে পেরেছে। আমরা তা পারছি না! আমাদের রাজনৈতিক নেতৃত্ব খাইতে বসতে তাদের তপস্যা করে।
বাংলাদেশে জঙ্গী তৎপরতা ঠেকানোর ব্যাপারে সরকার যখন উদ্যোগী হয়ে ওঠে তখন থেকে আজ পর্যন্ত কখনো কারা, কোথায়, কীভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে; কারা, কীভাবে অর্থ যোগান দিচ্ছে; এইসব তৎপরতার “আল্টিমেট গোল” সেটা জানার চেষ্টা করা হয়েছে খুব কম। ফলে আগাছার ডাল কাটা হয়েছে, শিকড় থেকে গেছে। এই রকম আধা-খেঁচড়া কাজ করাটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা সেটা ভাবার বিষয়।
তেষট্টিটি জেলায় এক সাথে বিস্ফোরণ ঘটানোর জন্য শক্তিশালী সংগঠন, উচ্চতর প্রশিক্ষণ, অভিজ্ঞ নেতৃত্ব ও বিপুল অর্থের যোগান দরকার। বাংলা ভাই আর শায়খ আব্দুর রহমানদের সেই লেভেলের সামর্থ্য ও যোগ্যতা থাকার কথা না। এই ঘটনায় রাষ্ট্রযন্ত্রের কারো কারো সহযোগিতা করাটাও সম্ভব। দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় সরকারের রাঘব-বোয়ালদের সংশ্লিষ্টতা স্মর্তব্য। সেখানে এদেরকে তড়িঘড়ি করে ফাঁসি দেয়ায় এদের গডফাদার ও অর্থের যোগানদাতাদের পরিচয় উদ্ধার দুরূহ হয়ে গেল।
পনের-ষোল কোটি মানুষের দেশে একটা ঝামেলা লাগাতে পারলে সেটা দীর্ঘস্থায়ী করা সহজ, হাজারোটা ফ্যাকশন দাঁড় করানোও সহজ (ethnic homogeneity থাকলেও); যুদ্ধ ব্যবসা আর যুদ্ধাস্ত্র ব্যবসার জন্য এটা একটা ভালো বাজার হবে। আরেকটা পাকিস্তান, আরেকটা জায়ারে, আরেকটা .....
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
এটা একটা সমীকরন। তবে সমীকরন সরল নয়, দ্বিঘাত-বহুঘাত ও হতে পারে।
ক'দিন আগে পারিবারিক আড্ডায় নৌ-বাহিনীর এক তরুন অফিসার জানাচ্ছিলেন-বাংলাদেশ নৌবাহিনী কিভাবে টপ টু বটম ট্রেনিং এবং অবজার্ভেশন পাচ্ছে মার্কিন নৌ-বাহিনীর কাছ থেকে।
অদূর ভবিষ্যতে ভারত মহাসাগর হবে চীন বনাম ভারত-মার্কিন অক্ষের ওয়ার ফিল্ড। ইরাক আফগান যুদ্ধের আহ্বান নানা অজুহাতে ঠেকানো গেলে ও আসল সময়ে কিন্তু কাজে লাগতে হবে।
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
আমাদের বাহিনীগুলো তাহলে বহু আগে থেকেই করতলগত হয়ে গেছে দেবদূতগণের।
ভাল লাগল। তবে আরেকটা প্রেক্ষিত থেকে দেখলে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র বাহবা পাওয়ার যোগ্য। দেখুন নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য পুরো একটা মহাদেশকে কিভাবে নিজেদের বশংবদ করে গড়ে তুলেছিল/তুলছে; নামটাও তাৎপর্যপূর্ণ - 'স্কুল অফ দ্যা আমেরিকাস’। আপনি বলেছেন, ‘কার্যকর পরিবর্তন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নীতিনির্ধারকদের কাছ থেকে না আসলেও, পরিবর্তন আসছে দক্ষিন আমেরিকার রাষ্ট্রসমুহের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে’ সেটাই গুরুত্বপূর্ণ।
এত গেল হার্ড-লাইনের কথা। ‘সফট পাওয়ারে’ যুক্তরাষ্ট্র কিন্তু সর্বগ্রাসী। ৮/৯ বছর আগে একটা চমৎকার লেখা পড়েছিলাম যুক্তরাষ্ট্রের ম্যানেজমেন্ট প্রেকটিস কীভাবে ধীরে ধীরে ট্রেড-ইউনিয়নের দিন শেষ করে দিয়েছে তাদের দেশে। (হার্ভার্ডের সেই লেখকের ভাষায়...কর্মকর্তা/কর্মচারীরা ব্যাপকভাবে ‘স্টক-অপশন’ পাওয়ার ফলে ‘মালিক-শ্রমিক’ নামক সেই ‘প্রাচীন’ ধরণাটা শেষ হয়ে গেছে – এবং সেই পাওয়ারফুল ‘ম্যানেজারিয়্যাল-ব্রিডের’ উদ্ভব হয়েছে (সেই সিইও-শ্রেণী))। অথবা চেয়ে দেখুন আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার দিকে – কীভাবে ইউকে ভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইউএস ভিত্তিক হয়ে গেছে (একটা আমি পজিটিভলি দেখি অবশ্য)। অথবা এইযে ‘রাজনীতি-অসচেতন’ একটা ছাত্র সমাজ গড়ে উঠছে...। ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে যাচ্ছে...।
তবে RAB কে যুক্তরাষ্ট্র প্রশিক্ষণ দিতে অস্বীকার করা এবং যুক্তরাজ্যের প্রশিক্ষণ দেয়াটা ইন্টারেস্টিং মনে হয়েছে। আপনার ...প্রশিক্ষনের উদ্দেশ্য আর ল্যাটিন আমেরিকা, আফ্রিকা, দূরপ্রাচ্যের দেশ সমুহের সশস্ত্রবাহিনীকে দেয়া যুক্তরাষ্ট্র-যুক্তরাজ্যের প্রশিক্ষনের উদ্দেশ্য এক নাকি ভিন্ন সেই কৌতুহলও হয়তো নিবৃত হতে পারে আগামীর কোন পরিক্রমায়...র অপেক্ষায় থাকলাম।
@ ধ্রুব বর্ণন -
ইতিহাসের বিচারে আমেরিকা এখনো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের ব্যাপারে অগ্রণী (যৌন নির্ণয়তা বাদে)।
তবে শক্তিশালী রাষ্ট্র দ্বারা মানুষের অধিকার সংকোচন হয়। সময়ের সাথে আমেরিকা নিজেকে শক্তিশালী করেছে। ইদানিংকার যে নিরাপত্তা সতর্কতা আমেরিকার, সেগুলোর জোরে সে মানুষের প্রাইভেসিকে সহজেই লংঘন করতে পারছে। দেখতে নগণ্য আকারের অধিকার লংঘন হলেও, এসব বৈশিষ্ট্য পূর্বে অনুপস্থিত ছিল। আমেরিকার সেই দর্শন থেকে সরে আসাটা অকাম্য। রন পল সীমিত ও দুর্বল সরকারের ব্যাপারে সরব কন্ঠদের মধ্যে অগ্রণী। তার আর্গুমেন্টগুলো ফলো করতে পারেন। রাষ্ট্র যত শক্তিশালী, জনগণের অধিকার তত সংকুচিত, এটা প্রায় ইম্প্লাইড।
চিন্তার বিষয়।
...........................
Every Picture Tells a Story
আসলেই চিন্তার বিষয়, অনেক কিছু জানতে পারলাম বস, অনেক ধন্যবাদ!
মডুদাদাদের জন্যে প্রশ্নঃ রেস্ট্রিক্ট করার বাটনটা কে যেন খেয়ে ফেলেছে
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
আমেরিকার কাজ আমেরিকা করেছে। নৈষাদ যেমন বলেছেন-"তবে আরেকটা প্রেক্ষিত থেকে দেখলে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র বাহবা পাওয়ার যোগ্য। দেখুন নিজের স্বার্থ রক্ষার জন্য পুরো একটা মহাদেশকে কিভাবে নিজেদের বশংবদ করে গড়ে তুলেছিল/তুলছে" সোভিয়েত যখন ছিলো ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময় কে কত দেশকে পক্ষে রাখতে পারে এমন একটা প্রতিযোগিতা তো ছিলোই। এখনও সেই পরিস্থিতি থাকলে মানবাধিকার শিক্ষা ইত্যাদি কখনো যুক্ত হতো না
এ সমস্যার সমাধানও আপনার পোস্টে আছে।
২০০৪ এ ভেনেজুয়েলা সরকার স্কুল অফ আমেরিকা থেকে প্রশিক্ষনপ্রাপ্তদের চাকরীচ্যুত করেছে তাদের সেনাবাহিনী থেকে, ২০০৬ এ আর্জেন্টিনা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এই স্কুলে তাদের সৈনিক আর না পাঠানোর। উরুগুয়ে আগে কখনো পাঠায়নি এবং ভবিষ্যতে ও না পাঠানোর নীতিগত সিদ্ধান্ত তারা বলবৎ রেখেছে। বলিভিয়া ও নিশ্চিত করেছে তাদের সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের আর মার্কিন প্রশিক্ষনের জন্য পাঠানো হবেনা।
-এরকম মেরুদণ্ডওয়ালা সরকার আর রাজনীতিবিদ থাকলে আমেরিকা তো কোনো সমস্যাই না। মাওলার চেয়ে তাই ল্যাংবোটদের (নাকি দেবদূত?) দিকেই আঙুল তোলা উচিত।
মনে হচ্ছে আমেরিকাও ষ্ট্র্যাটেজিক রিভিউ করছে। স্কুল অব আমেরিকাস আমেরিকা থেকে প্রসারিত করে সোমালিয়া পর্যন্ত বিস্তৃত হচ্ছে "এন্টি পাইরেসি ক্যাপাসিটি বিল্ডিং ইন্সটিটিউট" নাম দিয়ে যেখানে সোমালিয়ার সেনাবাহিনীকে উচ্চতর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এই লেখাটা পড়ার পর মনে হচ্ছে এটা স্কুল অব আমেরিকাস-এর একটা ওভারসীস সংষ্করণ। শুনেছি যে এখানে পর্যায়ক্রমে আফ্রিকান ইউনিয়নভূক্ত বিভিন্ন দেশের সৈনিকদেরও আনা হবে প্রশিক্ষণের জন্যে; যেমন, ইথিওপিয়া, উগান্ডা, কেনিয়া, জিবুতি, ইরিত্রিয়া, ইত্যাদি। এরা পারেও বটে! হর্ণ অব আফ্রিকায় এরা সৃষ্টি করবে কিছু কালো নোরিয়েগা।
------------------------------------------------
প্রেমিক তুমি হবা?
(আগে) চিনতে শেখো কোনটা গাঁদা, কোনটা রক্তজবা।
(আর) ঠিক করে নাও চুম্বন না দ্রোহের কথা কবা।
তুমি প্রেমিক তবেই হবা।
বিস্তারিত লিখুন না কেনো?
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
শিরোনাম যথার্থ হয়েছে।
মোহনা'
নতুন মন্তব্য করুন