খাবার জিনিসের মধ্যে বিরিয়ানি জিনিসটা আমি ভালো রান্না করি বৈলাই আমার ধারনা । মাঝে মাঝে খুব কমপ্লিকেটেড কিছু রেসিপি ওয়েবে বা কিছু বই পুস্তকে দেখি । যেইগুলা কামের না সাধারনত । বিদেশে জায়ত্রি জায়ফল কিনাটা সহজ ব্যাপার না । নিজেও চিনেন না দোকানদারও চিনে না । তারওপর ডয়েশ টাইপ কোন ভাষার দেশ হইলে তো কথাই নাই । তারচে আমার এই রেসিপি ফলো করেন । কামিয়াব হৈতে পারবেন ।
উপকরণ :
১. বড় একটা হাড়ি । ননস্টিকি আবশ্যক । মাংস নিশ্চিন্তে সেদ্ধ দিতে ননস্টিকি দিয়াই রান্না করা উচিত । অভাবে স্টিকি স্টিলের হাড়ি দিয়াও কাজ চলবো । তয় সাবধান । একবার মাংস পুড়লে বিরিয়ানি রান্নার ঐখানে সমাপ্তি দিয়া দিতে হইবো ।
২. রাইস কুকার । বড়গুলা । এক কেজী চাল যেকানে নিশ্চিন্তে রান্না করা যায় ।
৩. বাসমতি চাল । কমদামিগুলার মইধ্যে লায়লাটা ভালো । বেশী দামি অনেক আছে । যেইটা ইচ্ছা আপনার ।
৪. বিরিয়ানি মশলা, শানের মসলা সবচেয়ে ভালো । রাধুনিরটা সবচেয়ে খারাপ । শানের নরমাল বিরিয়ানি মশলাই চলে । বম্বেরটা মাঝামাঝি । তবে বেস্ট আউটপুটের জন্য সিন্ধি বিরিয়ানির মসলা দেয়া উচিত । বিরিয়ানির মসলা লাগবে দেড় প্যাকেট । তিনপ্যাকেট একবারে কিনবেন । বাকীটা পরের বার ব্যবহার্য ।
৫. গরুর মাংস । সবচেয়ে কমদামিটা না কিনা একটু ভালো কোয়ালিটির চর্বি ছাড়া মাংস ১.৫ কেজি । মাংস আমি ভালো কৈরা টুকরা করি । পারলে এক কিউবিক সেন্টিমিটার সাইজ । এতে মশলা ভালো ঢোকে । তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয় মাংস ।
৬. তেল, রসুন, আদা, টমোটো, পিয়াজ, লবন - রসুন আদা দিবেন নরমাল গরুর মাংসে যেকরম দেয় সেরকম । টমোটো দুইটা ।
৭. ঘি আর কেওড়া জল - আবশ্যিক । মাখন দিয়া ফাকিবাজির রান্নার চিন্তা থাকলে বিরিয়ানি খাবার চিন্তাই বাদ দেয়া উচিত ।
৮. অল্প কিছু গরম মসলা ।
এইসব যোগাড়যন্ত্র কৈরা রান্নায় বসেন । রান্নার তিনটা অংশ । প্রথমটা মাংস । দ্বিতীয়টা ভাত তৃতীয়টা ভাত ও মাংসের মিক্স ।
প্রথম অংশ
মাংস রান্না করতে চুলা গরম দিয়া হাড়ি চড়ায় দেন । ব্লেন্ডার মেশিনে পেয়াজ রসুন আদা গুড়া কৈরা পেস্ট কৈরা ফালান । মেশিন না থাকলে আদা রসুন কুচি দিতারেন । হাড়িতে তেল ঢাইলা ঠান্ডা তেলেই পেস্ট ছাইড়া দেন । অল্প লবন দিতারেন পিয়াজ গইলা পানি বাইরানোর লাইগা । তয় বেশী দিয়েন না । শান মসলাতে লবন দেয়াই থাকে । বেশী লবন দিলে পরে খাইতে অসুবিধা । সাথে গরম মশলা অপশনাল । দিলেও হয় না দিলেও হয় । গরম মশলা শানের মসলার সাথেই থাকে ।
বইগুলাতে দেখবেন লেখা থাকে পেয়াজ পুইড়া বাদামী হৈলে তারপর নেক্সট স্টেপে যাইতে । দরকার দেখি না কোন । পেস্ট গরম হৈয়া একটু পানি বের হইলেই শানের পুরা এক প্যাকেট মশলা ঢাইলা দেন ।
একটু নাড়া চড়া দিয়া এক কাপের মতো পানি ঢাইলা আদা রসুন পেয়াজের পেস্ট আর মশলা ভালো কৈরা মিক্স করেন । থকথকে একটা ঝোল হৈলে মাংস ঢাইলা দেন । ভালো করে ঘুটা দিয়ে সব মাংসে মশলাটা মিশায় হাড়ি ঢাইকা দেন ।
মিনিট পনের পরে টমেটো টুকরা টুকরা কৈরা দিয়া দেন মাংসে ।
মাংস সিদ্ধ হইলে ঢাকনিটা উঠায়া ভালো কৈরা নাড়ানাড়ি দিয়া ঝোল কমায় ফেলবেন । ঝোল ততখানিই রাখবেন যতটুকুতে আপনার মনে হয় ১ কেজি চালের ভাত মাখানো যাবে । একটু বেশি রাখলে ভালোই । খাবার সময় পিরিচে কৈরা সামনে দিবেন । কিছু পাবলিক অতিরিক্ত ঝোল ঝোল পছন্দ করে ।
আরেকটা কথা, বিরিয়ানি মশলার একটি অসুবিধা হৈলো যতই মাংস জ্বাল হবে ততোই এর গন্ধ কমতে থাকবে । সেইজন্য ঝোল কমানোর আগে বাকি আধা প্যাকেট মশলা ঢাইলা তারপর নাড়ানাড়ি শুরু করবেন । দেখবেন গন্ধে পুরা সেইরম একটা মৌ মৌ আবহ তৈরী হবে ।
দ্বিতীয় অংশ
ভাত রান্নার জন্য রাইস কুকারে ঘি দেন । তারপর একটা কাগজের টুকরা রাইস কুকারের বাটনের ওপরে গুইজা দেন যাতে করে সে ওয়ার্ম মোডে না চইলা যায় । ঘি গরম হৈলে তার ওপর গরম মশলা দেন অল্প পরিমানে । অল্প কিছু আদা রসুনের পেস্টও দিতারেন । (আমি দেইনা ) ঘি গরম হওনের সময় জলদি কৈরা চাইল ধুইয়া ফালান । পানি ঝরায় ফেলেন সাথে সাথে । এইখানে চাইল ধুয়ার টাইমিং খিয়াল কৈরা । বাসমতি চাইল একটু বেশিক্ষন ভিজা থাকলে চাইল ভাইঙ্গা যাবার সম্ভাবনা । না ভাঙলেও পানি খায়া চাইল ফুইলা যাইবো । এতে পরে পানির হিসাবে গাঞ্জামের সমূহ সম্ভাবনা । অতএব ঘি গরম দিয়াই তারপর চাইল ধুইবেন । নো হাঙ্কি পাঙ্কি । ঘি আর গরম মশলা গরম হৈয়া যখন একটা মিক্সড গন্ধ নাকে পাইবেন তখন চাইল ঢাইলা একটু নাড়াচড়া দিবেন যাতে কৈরা ঘি পুরা চাইলের সাথে লাগে । এরপর যেই কয়কাপ চাইল দিছেন (এক কেজিতে সাধারনত ৮ কাপ হয়) সেই কয়কাপ পানি দিবেন । এতে চাইলটা একটু শক্ত শক্ত থাকবে । আপনে ল্যাটকা খিচুড়ি বানাইতেছেন না যার লাইগ্গা চাইল নরম হৈতে হবে । খিয়াল কৈরা ।
ভাত হৈয়া গেলে রাইস কুকারের ঢাকনিটা একটু চাগা দিয়া যথেষ্ট পরিমান কেওড়া জল ঢাইলা দিবেন । তারপর ঢাকনি আবার চাইপা কিছুক্ষণ রাখবেন ।
তৃতীয় অংশ
আপনার ভাত মসলা দুইটাই যখন হয়া যাইবো তখন একটা বড় গামলায় ভাত মাংস দুইটাই মিশাবেন । তারপর গামলার ওপরটা প্লাস্টিক মাইরা টেপ দিয়া সিল কৈরা দিবেন । এইভাবে সিল করা অবস্থায় ঘন্টাখানেক রাইখা দিবেন । ভুলেও মুখ খুলবেন না । রান্না করার সময় আশে পাশে অলওয়েজ কিছু টেস্টার পুলাপান পাওয়া যায় । তাগো থিকা সাবধান । ভুলেও ঐদিকে নজর যাতে না দেয় সেইটা নিশ্চিত করবেন ।
ঘন্টাখানেক রাখনের পর গামলার মুখ খুইলা পরিবেশন করবেন । সাথে বোরহানি, সালাদ দিতারেন ।
আর রান্নার পরিমানটা এমনভাবে করবেন যাতে পরদিন সকালের জন্য কিছু থাকে । বাসি বিরিয়ানির মাজেজাই আলাদা ।
গুটেন আপেটিট ।
মন্তব্য
এই উইকেন্ডেই.....
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
রেজাল্ট জানাইও
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বোরহানী র রেসিপি চাই সাথে
দিমুনে নেক্সট উইকে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাই, কেওরার হানির কুনো ইংলিশ নাম আছেনি? দোকানত গিয়া দোকানিরে কি জিজ্ঞাইত্তাম?
ইংলিশ নাম থাকতারে । কিন্তু আমি জানি না । ইন্ডিয়ান বাঙালি বা পাকিগো দুকানে জিগায়েন । তয় একটা কথা খিয়াল কৈরা, কেওড়ার পানি আর গোলাপ পানি দুইজিনিস । দোকানদাররা হেগো কাছে কেওড়া না থাকলে গোলাপ পানি গছায় দিবার পারে । গোলাপ পানির মতো এগো একধরনের খাবারে দেবার সুগন্ধি আছে । খুজলে পাইবেন ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাই তো চিপায় ফালায় দিলেন। এই উইকএন্ডের জন্য তো অনেক কিছু প্ল্যান করা ছিল। এখন বিরিয়ানিটা ম্যানেজ করি কেমনে ?? আবার নেক্সট উইকএন্ড পর্যন্ত "মানে না তো মোওওওন"
_________________________
suspended animation...
ব্যস্ততা থাকবোই । তয় সবার আগে দরকার পেট ঠান্ডা করা ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
খুব ভালো লিখছেন। পইড়াই বুঝা যাইতাছে, আপনে কামেল আদমী। এইরকম একটা প্রক্রিয়াতেই আমি খিবরিয়ানী (৫০% খিচুড়ী+ ৫০% বিরিয়ানী) রান্ধি।
কিন্তু সমস্যা হইলো কেওড়া জল কই পাই? এইটার কোনো ইংরেজী নাম আছে ? ভালো একটা বোরহানীর রেসিপি দেন? এক গাধী আমারে বোরহানী শেখাইছে ধইন্য পাতা দিয়া, অইটা খাইলে মনে হয় অম্বলের ঔষধ খাইতাছি।
হযু ভাই, কেওড়া জল তো ইন্ডিয়ান দোকানগুলাতে পাওয়া যায়, কেওড়া ওয়াটার লেখা থাকে।
উইকএন্ডে ফুন দিমুনে। ঢাকায় যাইতেসেন কবে নাগাদ ?
______ ____________________
suspended animation...
বোরহানিতে পুদিনা পাতা লাগে । পুদিনার ইংলিশ হয়তো মিন্ট । (আমি শিওর না । )ভিয়েতনামিজ দোকানগুলোতেও পুদিনা পাওয়া যায় । আর ইন্ডিয়ান দোকানগুলোতে জাল জিরা নামে একটা মশলার মিক্স পাওয়া যায় । এই জ্বাল জিরা (Jal Jeera) মশলা, টক দৈ, পুদিনা পাতা, কাঁচা মরিচ হৈলো বোরহানির মেইন ইনগ্রেডিয়েন্ট । সময় কৈরা রেসিপি দিমুনে ।
আর ভালা কতা । খিচবিরিয়ানির রেসিপি দিয়েন । ট্রাই মাইরা দেখুম ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কেওড়া'র english নাম হইল Pandan. কিছু কিছু european supermarket বাসমতি চাল এ আল্ রেডি Pandan flavor দিয়াই মার্কেট করে। না পাইলে ত ইন্ডিয়ান দোকানের লিকুইড থাকলই। জেনুইন die hard পাবলিকেরা পাড়ার ভিয়েতনামিস বা চীনা দোকানের পিছনে জেইখানে কাঁচা মরিচ, লাউ, পেয়ারা ইত্যাদি রাখে ওইখানে খুইজা দেখতে পারেন, ফ্রেস ও পাইয়া যাইতে পারেন।
[url]http://en.wikipedia.org/wiki/Pandanus_fascicularis [/url]http://images.google.com/images?gbv=2&svnum=10&hl=en&q=pandan+leaves
মহামূল্য পোস্ট। আমিও শানের মসলা দিয়েই রান্না করতাম। মাঝে রুমমেটের মায়ের কাছে এক রকম আন্টি-বিরিয়ানিও শিখেছিলাম। বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ কিছু ব্যাপার শিখলাম। এই উইকএন্ডে এমনিতেই বিরিয়ানি রান্নার প্ল্যান ছিল। তখন দেখবো নে আপনার মত করে চেষ্টা করে। বিশেষ ধন্যবাদ কুকারে রান্নার অংশটা, গন্ধের জন্য পরে মসলা দেওয়া, আর চাল ধোয়ার টাইমিঙের জন্য। মাঝে একবার গন্ধে বেশি মেতে গিয়ে মাংসে আর ভাত মিশাই নাই, ঐটাই রুটি ভেজে খেয়ে ফেলেছিলাম। অমৃত!
আহা, বউয়ের হাতে রান্না করা চমৎকার বিরিয়ানি খেতে খেতে এই পোস্ট আর কমেন্টগুলো পড়তে কি যে ভাল লাগলো!
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
মাশাল্লাহ!
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ঠাডা পড়বো ঠাডা ...
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাই, মাংসটা মুরগি দিয়া হইবোনা?
গরু-খাসি পারতপক্ষে খাই না।
এই উইকেন্ডের মিশন এইটা, ভালো না হৈলে জার্মানি পর্যন্ত হানা দিমু।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
অবশ্যই হবে । তবে মুরগীর পরিমানটা বেশি লাগবে । এক কেজি চালে কমপক্ষে দুই কেজি মু্রগি ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাই,
শুকরিয়া...কাজে লাগবো। দুই-আড়াই মাস পরে মনে হয় মেসে উঠতাছি...
------------------------------------------
মুনাফাখোর নিপাত যাক
বাংলা কম্পিউটিং মুক্তি পাক
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
ফি আমানিল্লাহ
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাঃ, এবারে এটাই ট্রাই নিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু এখানে গরুর মাংস আনলে আমার বন্ধুবান্ধব খাবেনা, সুতরাং আমার খাসির মাংস দিয়েই কাজ সারতে হবে আরকি ...
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
ব্যাপার নাহ । আদাটা একটু বেশী দিয়েন । মুরগিও ট্রাই দিতে পারেন ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
২/৩ বার ট্রাই কইরা ফেলসি, চমৎকার বিরিয়ানি হইছে। ধন্যবাদ জানায়া গেলাম।
নেক্সটবার জেসমিন চাল দিয়া ট্রাই করব, দোয়া রাইখেন।
দুর মিয়া কচুর রেসিপি দিসেন আমি বাসায় রান্না করে সবাইকে খায়িয়ে আমি পুরা বোল্ট হইয়া গেসি, বাসায় হিরো হইতে গিয়া জিরো হইয়া গেছি ।। আপনেরে সামনে পাইলে না ইতা করতাম
হালাই কয় কি ?
এ ত বিরিয়ানির দফা রফা
দরকার পড়লে বিরানি খামুনা, তাও পাকিগো শানের মশলা কিনুম না
নতুন মন্তব্য করুন