পারিবারিক বিপর্যয় হেতু প্রায় তিনমাস অচল ছিলাম । হাত থমকে গিয়েছিলো । লেখা বেরুচ্ছিলোনা কেন যেন । আজকে অনেকটা জোর করেই আবারো সচল হলাম । দীর্ঘ অনুপস্থিতিতে অনেক ব্লগার আমার তত্ত্ব তালাশ করেছেন । তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা ।
এ লেখাটি দেবার পরিকল্পনা ছিলো সপ্তাহ তিনেক আগে । একটু দেরিতে দিলাম । আশা করি অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়নি এখনো ।
পুনশ্চঃ লেখাটিতে কোন ধরনের ক্রম অনুসরণ করা হয়নি ।
১. ১৯৭১
বাঙ্গালি মাত্রেরই এই সংখ্যাটা চোখে পড়লে সে দেশকে মনে করবে । বাঙ্গালি নিজের পায়ের মাটি খুঁজে পায় এ বছরটিতে ।সেই সাথে পায় একটা পতাকার স্বীকৃতি ।বিদেশের মাটিতে এই পতাকা দেখলেই বাঙ্গালি এক মুহুর্তে ফিরে যায় দেশের মাটিতে ।
বার্লিনে বাংলাদেশ এ্যাম্বেসির সামনের পতাকা ।
২. ভাষা আন্দোলন, শহীদ মিনার
ভাষাভিত্তিক জাতিরাষ্ট্র বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার তাগিদটা প্রথম এসেছিলো ভাষার জন্য সংগ্রাম করতে গিয়েই। একারনে ভাষার প্রতি টানটা বাঙ্গালির মজ্জ্বাগত । বিদেশে কোনরকমে একটু বাংলা অক্ষর দেখতে পেলেই তাই সেটা বারবার পড়ি । সেটা যেখানে আছে সেটা বারবার দেখতে যাই ।
ছবি - সুইৎজারল্যান্ডের শাফহাউযেনে বাংলা লেখাসহ সৌখিন সামগ্রি
ছবি - বার্লিনের ভিক্টরি কলামে কোন এক বঙ্গ সন্তানের লেখা
৩. গণআন্দোলন - দুনিয়ার মজদুর, এক হও, লড়াই করো
স্মরণে আসা অতীতের পুরোটাই বাঙ্গালি আন্দোলন সংগ্রাম করতে করতেই কাটিয়েছে । বিদেশে তাই আন্দোলন মিছিল মিটিঙের ছবি তাই এক পলকের জন্য হলেও দেশকে মনে করায় ।
কার্ল মার্ক্সের কবর (দুনিয়ার মজদুর এক হও লড়াই করো)। বাংলাদেশের মাঠে ঘাটে রাস্তায় এক পরিচিত স্লোগান ।বাংলাদেশে এটাই বোধহয় একমাত্র শ্লোগান যেটা বিদেশের মাটিতেও শোনা যায় ।
ছবি -
প্যারিসের গণআন্দোলন
৪. মেইড ইন বাংলাদেশ
পুরাকালে নাকি বাংগালি ভালো ব্যবসায়ী ছিলো ।এরকম চাইনিজরাও বিদ্যাচর্চায় ইওরোপ থেকে এগিয়ে ছিলো । চাইনিজদের অধঃপতনের কারন জানা গেলেও বাঙ্গালিরা কেন বাণিজ্য ছেড়ে গেরস্হ পেশায় মন দিলো সেটার কারন জানা যায় না । গেরস্থ পেশার ব্যাপক প্রচলন হলেও বাংগালির ব্যবসার বেড়ের নাগাল মাঝে মাঝে বিদেশে বসেও পাওয়া যায় । ইন্ডিয়ান দোকানে পাওয়া যায় মাছ, মসলা, মুড়ি, চানাচুর, সেমাই । চেইনশপ এইচএন্ডএম,নাইকিতে পাওয়া যায় বাংলাদেশী কাপড় চোপড় যেখানে মেইউ ইন বাংলাদেশ লেখা থাকে স্পষ্টক্ষারে ।মুদি, কাপড়ের বাইরে পৃথিবীবিখ্যাত সাউন্ড সিস্টেম নির্মাতা বোস কোম্পানির মালিকও জন্মসূত্রে বাঙ্গালী ।বোস কোম্পানির সাউন্ড সিস্টেম কিনতে না পারলেও সিটি সেন্টারে শোরুশগুলোতে চোখ বুলিয়ে আসতে হয় বারবার ।
ছবি, এইচএন্ডএমে মেইড ইন বাংলাদেশ স্যুয়েটার
৫. ব্রিকলেন, কারি, চিকেন টিক্কা মাসালা
পশ্চিমবাংলা-বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বড় বাঙ্গালিবসতি বোধকরি লন্ডনে ।মাল্টিকালচারাল লন্ডন এদেরকে নিজেদের সংস্কৃতির অংশ হিসেবেই টেনে নিয়েছে । এখানে দোকানের সাইনবোর্ড বাংলায়, থানা পুলিশের নোটিশও বাংলা,বাংলা পড়া যায় এমন স্কুল আছে,সিটি অফিসে বাংলায় কাগজপত্র তৈরী করে, এমনকি বেশ কিছু রাস্তার নামও এখানে ইংরেজীর পাশাপাশি বাংলায় লেখা আছে । বাঙ্গালিপাড়া ইস্ট লন্ডনে ঢুকলে তাই মনে হয় বাংলাদেশেই আছি ।
এখানকার বাংগালিরা রেস্টুরেন্ট ব্যবসার জন্য খ্যাত । আগে নিজেদের রান্নাকে ইন্ডিয়ান রান্না বলে পরিচয় দিলেও এখন তারা বাংলাদেশী রান্না বলেই নিজেদের রান্নাকে পরিচয় করান ।রেস্টুরেন্টের ঘেরাটোপ ডিঙিয়ে এই বাঙ্গালি শেফদের আবিস্কৃত রান্না চিকেন টিক্কা মাসালা এখন বৃটিশদের রান্নাঘরেও ঢুকে পড়েছে ।
ছবি – ব্রুকলিনে বাংলা রাস্তার নাম
৬. কনসেনট্রেশন ক্যাম্প
জার্মানিতে সবার জন্য একটা অবশ্য দর্শনীয় হচ্ছে কনসেনট্রেশন ক্যাম্প । জাতিগত গণহত্যার অনন্য নজীর স্থাপন করে নাৎসিরা ইউরোপের ৬৭% ইহুদিকে হত্যা করেছিলো । একারনে গণহত্যার একটি রূপক হিসেবে পৃথিবীতে এগুলো পরিচিত । ৭১এ পাকিস্তানি হানাদারেরা এরকমই সারা বাংলাদেশে জল্লাদ খানা বানিয়েছিলো ।প্রথমবার মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘরে গিয়ে যেরকম একটা অনুভুতি নিয়ে ফিরে এসেছিলাম ঠিক সেরকম অনুভূতি নিয়েই মিউনিখের ডাখাউ, ব্যর্লিনের হলোকাস্ট মেমোরিয়াল থেকে বের হতে হয় ।
৭. বৃষ্টি
পৃথিবীর আর কোন ভাষায় বৃষ্টি নিয়ে এতো রোমান্টিক সাহিত্য লেখা হয়েছে ? বা আর কোন দেশে বৃষ্টি যাপিত জীবনের সাথে এতো কাছাকাছি মিশে থাকে ? ইওরোপে বৃষ্টি মানেই বিরক্তি । প্যাচপ্যাচে রাস্তাঘাট না থাকলেও বরফ শীতল পানিতে ভিজতে কাউকে পছন্দ করতে দেখিনি ।সারাজীবন বৃষ্টিকে পছন্দ করা বাঙ্গালি কনকনে ঠান্ডা থাকলেও বৃষ্টিকে খুব অপছন্দ করতে পারে না । একারনে তাই কাজ থেকে বাসায় ফিরে একা বাঙ্গালির বাসায় খিচুড়ীর আয়োজন চলে । মুরগীর ঝোলের সাথে খিচুড়ী খেতে খেতে সে সরষে ইলিশের জন্য আক্ষেপ করে । মনে মনে ভাবে পরেরবার নিশ্চয়ই ..
৮. নদী
জার্মানিতে প্রথম নদী দেখার অভিজ্ঞতা খুব করুন ।খুঁজতে বেরিয়েছি দানিউব ।বেরনোর আগেই ডিকশনারিতে দেখে নিয়েছি নদীর ডয়েশ কি । পাশের রুমের প্রতিবেশী আমাকে জানালো সিটি সেন্টারে নেমে লোকজনকে জিজ্ঞেস করলেই দেখিয়ে দেবে নদী কোথায় । তো সেই অনুযায়ী সিটি সেন্টারে নদীর তালাশ করতে করতে হঠাৎ নদীর দেখা । দেখে প্রচন্ড হতাশ । ঢাকা শহরের নালাগুলোও সেটা থেকে চওড়া । পরে জেনেছিলাম সে নদীটার নাম ব্লাউ । দানিউব নয় ।এই দানিউবের পাড়ে বসে দেশের কথা মনে পড়ে । নদীভিত্তিক জীবন এখানে নেই ।দেশের মতো নদীতে এখানে নৌকা ভাসে না ।তবুও কল্পনার নৌকা বেয়ে দেশের কথা ভাবতে তো কেউ বাঁধা দেয় না ।
ছবি – দানিউবের তীরে উলম ।
৯. ভাত
আ এক বন্ধু ছিলো রনি নাম করে । কলেজ শেষে সে যখন আমেরিকা পাড়ি জমায় তখন আমরা প্রায়ই ভাবতাম সে রান্না করবে কি করে ! আর খাবেই বা কি ! রান্না তো জানে না । এসব চিন্তার কথা শুনে সে হেসেই উড়িয়ে দিতো সব ।আমরা তার কাছ থেকে জানলাম কাপড় চোপড় নাকি মেশিনে ধোয়া যায় ।মেশিনে কাপড় ধোয়ার ব্যাপারটা তখন আমরা ভাসা ভাসা জানি । কখনো চোখে দেখিনি । পাছে বন্ধু বান্ধবের সামনে ক্ষ্যাত হতে হয়, সেকারনে আমরা বেশ বুঝদারের মতো মাথা নেড়ে খাবারের প্রসঙ্গে যেতাম ।আর আমেরিকাতে রান্না ফান্নার ব্যাপার নাকি নেই ।ক্ষিদে পেলে সেখানে নাকি সবাই বার্গার খেয়ে নেয় !ঐ বন্ধুর সাথে আর যোগাযোগ হয়নি । হলে জিজ্ঞেস করতাম সে বার্গার খেয়ে কয়দিন কাটাতে পেরেছিলো । আমি একদিনও পারবো না এটা । হাজার রকমের রান্না থাকলেও দিন শেষে ঐ ভাতের জন্যই মনটা আইটাই করবে এটা নিশ্চিত ।
১০.বিশ্ব ইজতেমা
ঢাকার বাকি সব জমায়েতে গেলেও কেন যেন এই এজতেমার জমায়েতে কখনো যাওয়া হয়নি । একবার চেষ্টা করেও উত্তরা ৩ নামার থেকে ফেরত আসতে হয়েছে । ধার্মিক না হলেও ভবিষ্যতে যাবার ইচ্ছা রাখি সেখানে । প্রার্থনার জন্য নয় । এজতেমা থেকে ফেরার পথে প্রতিবছর যারা ট্রেনের ছাদে চড়ে গর্ব ও আনন্দের সাথে পতাকা উড়িয়ে বাড়ি ফেরে তাদের কারো পাশে বসে বাসায় ফেরার ইচ্ছা আমার ।
ছবি - ই্জতেমা ফেরতা ট্রেইন
১১. গান
পৃথিবীর আর কোন ভাষায় রবীন্দ্র নজরুল গীতির মতো নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তির নামে গানের চল আছে ? আমি পাইনি এখনও । বিদেশী বন্ধুরা যখন জিজ্ঞেস করে কোন ধরনের গান পছন্দ তখন রীতিমতো সমস্যায় পড়ি । তারা কোনভাবেই বুঝতে পারে না একটা জনগোষ্ঠির বিশাল অংশ কি করে ৬০/৭০ বছর তার তারো পুরোনো গান আকড়ে ধরে এখনও টিকে থাকে ! তারা গায়িকা বলতে ব্রিটনী স্পিয়ার্সটাইপ কাউকে ধারনায় আনতে পারে । ফেরদৌসি রহমান, ফিরোজ বেগমের মতো বৃদ্ধা যে কোথাও জনপ্রিয় গায়িকা হতে পারেন সেটা ওদের বোঝাই কিকরে ? দেশ থেকে সিডিতে করে বাংলা গানগুলো সব নিয়ে এসেছিলাম । সেগুলোই এখনও অবলম্বন । সামারে বৃষ্টি হলে তখন ওখান থেকেই বাজাই এই ঝরো ঝরো বাদল ..
|
১২. নৌকা ছোটবেলা থেকেই নৌকায় চড়ে কোথাও যাওয়াটা খুবই পছন্দ আমার ।নৌকায় উঠলেই আমি ছৈয়ের (এটার প্রমিত বাংলা কি হবে ?)মধ্যে উকি মেরে দেখতাম সেখানে কি আছে । আমাদের ওদিকে মাঝিরা নৌকায়ই থাকতো অনেকে । তাদের খাওয়া দাওয়া রান্না বান্না সবই নৌকাতেই হতো ।এদের থেকে আরেকটু এক্সট্রিমে ছিলো বেদেরা । বেদে পরিবারের বউ বাচ্চা সবই থাকতো এইসব নৌকায় ।দানিউবেও নৌকা দেখি । কিন্তু সেগুলোকে কেন্দ্র করে জীবনের আবর্তন অনুপস্থিত । এখানে নৌকাগুলো আসলে বিনোদন খেলাধুলার কাজেই ব্যবহার হয় ।তবুও মাঝে মাঝে সামারের দুপুরে দুর থেকে পাল দেখা গেলে মাথাটা একটু উচু করে দেখার চেষ্টা করি সেটা কি নৌকা ।
১৩. ঝড় জলোচ্ছাস বন্যা
পশ্চিমে বাংলাদেশকে তেমন একটা কেউ চেনে না । জার্মানিতে ইন্ডিয়েন (ইন্ডিয়া) দেশের নাগরিক হিসেবে আমার ফোন কন্ট্রাক্ট, সোশাল ইনস্যুরেন্স কার্ড ।যতকিঞ্চিত যারা চেনে তাদের বেশীরভাগই ঝড় জলোচ্ছাস বন্যার দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে চেনে । ঝড় জলোচ্ছাস বন্যার কথা এরা পত্রিকায় পড়লেও সেটা ঠিক কি ধরনের ব্যাপক আকার নিতে পারে সেটা সম্বন্ধে এদের বেশীরভাগেরই ধারনা সেই । একারনে এরা যখন এদের আবহাওয়া নিয়ে বিরক্তি প্রকাশ করে তখন মনে মনে ভাবি তোরা যদি শুধু দেখতি, শুধু তোরা যদি দেখতি ..
১৪. কবিতা
ছোটবেলায় দেশে একটা কথা প্রায়ই শুনতাম । বাংলাদেশে কাক আর কবির সংখ্যা নাকি এক । আমি এখন বলি কাকের সংখ্যাটা একটু কমই । ব্যক্তিগত ধারনা বলে এদেশে গড়পড়তা প্রতিটা মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তানই জীবনে একসময় কবিতা লিখতে চেষ্টা করে বা কবিতা লেখার স্বপ্ন দেখে । (আমিও দেখতাম, পারিনা বলে লেখা হয়ে ওঠেনি। ) হুমায়ুন আজাদকে এদেশে চাপাতির কোপ খেতে হয়, তসলিমা, দাউদ হায়দারকে দেশ ছাড়তে হয় । এসত্ত্বেও এদেশে কবির যে সম্মান সেটা খুব কম দেশেই আছে বলে মনে হয় । এখানে দেখেছি ইউনিভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা জীবিত ৫টা কবির নাম বলতে পারে না । এই অবস্থায় জার্মানির কবিরা বাংলার কবিদের দেখলে নিশ্চয়ই হিংসা করতেন ।
১৫. অক্ষর
ইতিহাস বলে লিখিত বাংলা ভাষার অক্ষরগুলো এসেছে দেবনাগরি অক্ষর থেকে । কন্টিনেন্টাল ইওরোপে বসে বাংলা অক্ষর দেখার আশা প্রায় দুরাশা পর্যায়ের । মাঝে মাঝে কামলা দেবার জায়গায় বাংলা অক্ষরের মতো দেখতে অন্য ভাষার অক্ষরগুলো তাই চোখ দিয়ে গিলে খাবার চেষ্টা করা হয় । হিন্দি অক্ষরগুলো, এমনকি ভিয়েতনামিজদের কিছু অক্ষর একদম বাংলা ভাষার সাথে মেলে ।বাংলা ভাষার এই অক্ষরগুলো কতদিন টিকবে জানি না । বিশ্বায়ন অনেক ভাষাকেই শুষে নেবে শেষমেষ । বিশ্বায়িত সমাজে এই ভাষার অক্ষরগুলো আমার জীবতকালে টিকে থাকলেই হয় । সেটুকু আশা আমি করতেই পারি মনে হয় । এই আশার কারনটা একটু বিচিত্র । ৯৫/৯৬তে আমি যখন প্রথম বাংলা টাইপ শিখি তখন প্রায়ই একটা চিন্তা গ্রাস করতো যে এই কঠিন বাংলা টাইপিং কে শিখবে ভবিষ্যতি । নিশ্চিত ভাবে ধরেই নিয়েছিলাম যে এই কঠিন ভাষাটি টাইপ করার হ্যাপার কারনে ভবিষ্যত কম্পিউটার নির্ভর যুগে টিকবে না । আমার ধারনাকে ভুল প্রমান করে এখন অসংখ্য লোক বাংলায় টাইপ করে । ব্লগ লেখে । নিজের লেখা লেখা । বাংলা ফোনেটিক কিবোর্ড একটি বিপ্লবই এনে দিয়েছে বলা যায় । কৃতজ্ঞ চিত্তে এর উদ্ভাবকদের স্মরণ করি ।
১৬. মাইক্রোক্রেডিট
পছন্দ করি আর না করি বাংলাদেশকে অনেকে আজ চিনছে মাইক্রোক্রেডিটের জন্মস্থান হিসেবে । ধনী মাঝারি গরীব সব দেশেই এই মাইক্রোক্রেডিট পুঁজির বিকাশ ঘটাবে অদুর ভবিষ্যতে একথা জোর দিয়েই বলা যায় ।
ব্যক্তিপর্যায়ে বিশ্বের দরবারে বাঙ্গালির সর্বোচ্চ অর্জন মাইক্রোক্রেডিটের জনক ড. ইউনুসের নোবেল প্রাপ্তি ।
১৭. যানজট, ময়লা, ধুলো
আমি এখানে কথায় কথায় সবকিছুকে ঢাকার সাথে তুলনা করে অভ্যস্ত ।বাকি বাঙ্গালিরাও হয়তো সেটাই করেন । ঢাকা শহরটাকে ডিফ্যাক্টো স্টান্ডার্ড ধরে তাই যানজট লাগলে বলি <পুরা ঢাকার মতো অবস্থা’ । রোমের সিটি সেন্টারের মধ্যেই মনুষ্য মূত্রে সয়লাব ফুটপাত ছেড়ে রাস্তা দিয়ে হাটতে হাটতেও বলি পুরা ঢাকার মতো অবস্থা ।
১৮.আড্ডা
বাঙ্গালির মতো আড্ডা মারতে পারে কারা কারা ? স্প্যানিশদের দেখেছি আড্ডা মারতে, চাইনিজরা আড্ডা পেটায় । কিন্তু সারাদিন এক জায়গায় বসে মামুদের কাছ থেকে চা সিগারেট খেয়ে সারাদিন আড্ডা মারতে পারে কারা কারা ? ধুম আড্ডার সাথে রাজা উজির বধ, গীবত বাঙ্গালিরা যেভাবে করতে পারে সেটা বোধহয় আর কেউ পারে না । বিদেশে এইসব আড্ডার অবধারিত বিষয়ও তাই হাসিনাখালেদাএরশাদজামাততত্ত্বাবধায়কইলেকশন । দেশি খাবার হয়তো কিছু যায়গায় রেস্টুরেন্টে বসে খাওয়া যায় । তবে খাবার পরের আড্ডাটা না হলে কোনভাবেই বাঙ্গালির চলে না মনে হয় ।আর সেই আড্ডা পিটাতে বসলেই অবধারিতভাবে সেখানে বাংলাদেশ ঘুরে ফিরে আসবেই ।
১৯.চা
বাঙ্গালিকে চা খাওয়ানো শিখিয়েছে ব্রিটিশরা । এর আগে চা ছাড়া আর কোন আটপৌরে গরম পানিয় বাঙ্গালির খাবারের লিস্টে ছিলো কিনা সন্দেহ । নানার কাছে শুনতাম সেকালে নাকি ব্রিটিশরা ফ্রি চা খাওয়াতো ।ফ্রি হলে নাকি বাঙ্গালি আলকাতরাও খেতে রাজি । তো এই ফ্রি বলেই কিনা কে জানে বাঙ্গালি চা জিনিসটা ধরে ফেলেছে শেষমেষ । বাসায় দুবেলা চা খাওয়ার নিয়ম । গণহারে চা খাওয়া শিখি ইউনিভার্সিটিতে এসে । দু‘টাকার সেই জঘন্য চা এখনও অমৃত সমান মনে হয় ।জার্মানিতে চা জিনিসটার ডেফিনিশন একটু অন্যরকম । শাকমসলা কিছু একটা গরম পানিতে মেশালেই এখানে সেটাকে চা বলে । দেশি চা এখানে কালো চা নামে ডাকা হয় । যেটা পানিতে গুলে চিনিতে মিশিয়ে খাওয়াটাই দস্তুর । সেই কালো চাও এখানে সবজায়গায় পাওয়া যায় না । দুপুরে ভরপেট খেয়ে চায়ের জন্য হাপিত্যেশ করতে করতে প্রায়ই ভাবতে হয় নাহ এবার যামু গিয়া দ্যাশে । আর কিছু না হোক খায়া তো শান্তি !
২০.টপোগ্রাফি অফ টেরর
টপোগ্রাফি অফ টেরর হলো ব্যর্লিনে আগে যেখানে গেস্টাপোর হেডকোয়ার্টার ছিলো সেখানে একটি স্থায়ী চিত্র প্রদর্শনী ।সেখানে নাৎসী আমলের সব স্থিরচিত্রগুলো সময়ের ক্রম অনুসারে সাজানো আছে । এখানে একটা ছবি বর্তমান বাংলাদেশের জন্য বিশেষ প্রাসঙ্গিক । ছবিতে দেখা যাচ্ছে কয়েকজন লোক, যাদের মধ্যে দুইজন শিক্ষক রয়েছেন, তাদের গলায় প্লাকার্ড ঝুলিয়ে রাস্তায় দাড়িয়ে রয়েছেন । শিক্ষক দুইজনের গলায় লেখা Ich habe den Schülern verboten, Heil Hitler zu sagen (অর্থাৎ, আমি ছাত্রদের স্যালুট হিটলার বলতে নিষেধ করেছি )। আমি ভাবি জার্মানির নাৎসি আমলের সেই শিক্ষক নিগ্রহের সাথে বর্তমান বাংলাদেশের শিক্ষক নিগ্রহের কোন পার্থক্য কি আদৌ আছে ? টপোগ্রাফি অফ টেরর থেকে হালকা মনে বের হবার কোন কারন নেই । ভারি মনটা নিয়ে বের হলাম সেখান থেকে । মনের মধ্যে সেই ভার দুরদেশে মৃত্যুবরণ করা মানুষদের জন্য নয় । মনটা ভারি হলো আমার নিজেরই অভাগা দেশটার জন্য ।
ছবি – প্রকাশ্যে শিক্ষক নিগ্রহ, জার্মানি ।
২১. ক্ষুধা-দারিদ্র
বাংলাদেশের অর্থনীতি কি দিয়ে বোঝানো যায় ? আমেরিকার বাজারে বাংলাদেশের মানুষের গড় ক্রয়ক্ষমতা ২৩০০ ডলার ।এটা কি ভালো একটা ইন্ডিকিকেটর ? নাকি দেশে এক কেজী সয়াবিন তেলের দাম জার্মানির এক কেজী তেলের দাম থেকে বেশী-এটা একটা ভালো নির্নায়ক ? ঠিক বুঝতে পারি না । তবে এটা খুব সহজে বোঝা যায় ঢাকা শহরে কোন নধরকান্তি রিক্সাওয়ালা নেই । সেই রোগা চাপাভাঙ্গা চেহারা সবার । গার্মেন্টসের কাজ করা মেয়েটা কত টাকা বেতন পায় ? ঢাকা শহরে থাকার খরচ দেবার পর তাদের হাতে কত টাকা থাকে ? তারা সেই অবশিষ্ট টাকা দিয়ে মাসের ৩০দিন কি বাজার করে কি খায় ? গার্মেন্টসে কাজ করা মেয়েগুলোর পাশাপাশি বস্তিতে বাস করা মানুষগুলোর পাতে কি পড়ে মাসের প্রতিটা দিন ? তাদের ছেলেমেয়েদের তারা কি স্কুলে দেবার স্বপ্ন দেখে ? প্রশ্নগুলো সহজ, তার উত্তরতো জানা ।
মন্তব্য
তিন সপ্তাহের অপেক্ষা শেষ হল অবশেষে। খুবই পছন্দ হয়েছে লেখাটা! ছবিগুলো সেই রকম দিয়েছেন। আর গানটার জন্যও অনেক ধন্যবাদ। 'আজ রবিবার' দেখছিলাম আবার। তখন মনে হচ্ছিল, হুমায়ূন আহমেদ যত বড় অপসাহিত্যিকই হয়ে থাকুন না ইদানিং, তাঁর নাটকগুলোর দরুণ অনেক ভাল গান শুনেছি টিভিতে। বিশেষ করে মনে পড়া গানগুলোর মধ্যে এটা অন্যতম।
বাড়াবাড়ি রকম সুন্দর ও সুচিন্তিত তালিকা।
ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য । হুমায়ূন আহমেদের নাটক একটা গুরুত্বপূর্ন অবজারভেশন । পশ্চিমের টিভি সিরিয়াল গুলোর সাথে পাল্লা দিয়ে আশির দশকেই বাংলা সিরিয়ালগুলো জনপ্রিয়তা পেয়েছিলো ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
প্রিয় পুস্ট ...
................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...
কৃতজ্ঞতা । নতুন বিদেশে গেলে দেশের সবকিছুই তখন ভালো লাগতে শুরু করে । তিন বছর কেটে গেলেও সেই নতুন ভাবটা এখনও কাটেনি ।
যাউগ্গা, শীত কেমন ওখানে ?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
দুর্দান্ত লেখা। বাংলাদেশকে চেনার জন্যে এইরকম একটা তালিকাই হয়তো সচলায়তন থেকে চাওয়া হয়েছিলো। পর্যবেক্ষণমূলক মন্তব্যগুলি অসাধারণ।
বৃষ্টির প্রসঙ্গে একটু যোগ করতে ইচ্ছে হলো। 'ইলশেগুঁড়ি' বৃষ্টি পৃথিবীর আর কোথাও আছে? বাঙালির আছে।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
সেটা ঠিক জানি না । জনপ্রিয় বিষয়গুলোতে আমার বেশীরভাগ পয়েন্টই অনুপস্থিত ।
ইলশে গুড়ি ইওরোপে নাই মনে হয় । এখানে ইলশে কুয়াশা টাইপ একটা ব্যাপার আছে । মাঝে মাঝে খুব কুয়াশা হলে সেটা পানির মতো গায়ে ঝরে পড়ে । এটা বিরক্তিকর । দেশি জিনিসের মতো রোমান্টিক নয় মোটেই ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ওই কুয়াশা আমেরিকাতেও দেখি। আসলেই বিরক্তিকর।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
(তারার সংখ্যা অপ্রতুল ইমোটিকন)
কঠিন প্রত্যাবর্তন। অব্যাহত থাকুক।
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
হ । দোয়া রাইক্ষেন ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
পিয়াল ভাই রাজকন্যার কি খবর ? জন্ডিস গেছে ?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অসাধারণ লেখা। হ্যাটস অফ।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
ধনেপাতা । হ্যাটস অফের কোন বাংলা ভার্সন বের করা কি সম্ভব ? বাংগালি নিশ্চয়ই টুপি খোলে না সম্মান দিতে । দাড়িয়ে সম্মান জানায় বড়জোর ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
চমৎকার পোস্ট...
এক কথায় অসাধারন...
চলুক
___________________________
"LOVE ME... IF YOU CAN"
ডাংকে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আশা করি সব ঠিকঠাক চলছে এখন।
আপনার লিস্টিটা ভালো হয়েছে - অনেক আনন্দ পেলাম। তবে দুটো ব্যাপারে কিঞ্চিত দৃষ্টিপাত দরকার।
(১) বাংলা মনে হয় ঠিক দেবনাগরী থেকে না। এটা মূলতঃ এসেছে পূর্বনাগরীও স্কৃপ্ট থেকে যা হচ্ছে দেবনাগরীর এক রকম তুতো ভাই বা বোন। আমি অবশ্য ঠিক নিশ্চিত না - কিন্তু চেক করে দেখতে পারেন।
(২) গান নিয়ে এদেশের মানুষের পছন্দের মন্তব্যটা মনে হয় একটু একপেশে হয়ে গ্যাছে। মানে ফেসবুকে বিভিন্ন ক্যাম্পাসের চার্ট দেখা দেখা যায়। আমেরিকায় অন্তত বিটেলস এখনও অনেক ক্যাম্পাসের শীর্ষে থাকে। দেখে আমিও অবাক হয়েছিলাম বটে। CSNY-এর টিকেট সেদিনও দেখলাম $১০০+এ বিক্কিরি হচ্ছে। বড় ভালো লাগলো। ডয়েশল্যান্ডে কি অনেক অন্যরকম?
চমৎকার লেখাটি অনেক দেরীতে পড়লাম।
এখানে তোমাকে পেয়ে খুব ভাল লাগল হাসিব।
অনেক শুভেচ্ছা। ভাল থেকো।
নতুন মন্তব্য করুন