সুধী, একটু লজ্জিত হতে শিখুন দয়া করে

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: শনি, ১৪/০৮/২০১০ - ৩:০৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আগামী বছর দেড়শততম রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী ভারতের সাথে একসাথে পালন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। দুই দেশের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে মহতি। এ নিয়ে পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হতে শুরু করার সাথে একটা ভয় ছিলো বিষয়টা কতোটুকু আমলাতান্ত্রিক হয়ে পড়তে পারে সেটা নিয়ে। যথারীতি, অর্থাৎ আশংকা সত্যি হবার রীতিকে অতিক্রম না করে, বিষয়টা পুরোটাই মুর্খ আমলাদের হাতে পড়েছে। সরকারের আমলাবাহিনী ১৫৬ জনের বিশালাকার এক কমিটি গঠন করেছেন এ উপলক্ষ্যে।

১৫৬জন মিলে কমিটিতে কী করবে এটা বোধগম্য না। এতো বড়ো কমিটির মিটিং করতেও বিশাল অডিটরিয়াম ভাড়া করতে হবার কথা। অধিক সন্যাসিতে গাঁজন নষ্ট হবার সম্ভাবনাই সেখানে বেশি। বিডিনিউজ জানাচ্ছে এই বিশাল টিম "নীতি নির্ধারণী ও জন্মবার্ষিকী পালন সংক্রান্ত নির্দেশনা ও সময়সূচি সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান" করবে। রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকিতে কী নীতি নির্ধারণ করার দরকার পড়ে? উত্তরটা কঠিন। এর থেকে নজর বোলানো যাক সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয় থেকে বের হওয়া প্রেস রিলিজের দিকে। দুই পৃষ্ঠাব্যাপি নামের তালিকা দেয়া হয়েছে। ওখানে প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, রবীন্দ্রসংগীত গবেষক, শিল্পী, কবি, সাংবাদিক, দাগি পত্রিকা মালিক সবাই মিলেঝুলে আছেন। নির্বোধ আমলার দল যত্ন করে সেখানে বেশীরভাগ নারী সদস্যের নামের আগে "বেগম" জুড়ে দিয়েছেন। পরিস্কার স্বজনপ্রীতির জোরে কমিটিতে স্থান পাওয়া শেখ রেহানার নামের আগে তারা অবশ্য "বেগম" বসাননি। কমিটির আরেক নারী সদস্য খালেদা জিয়াকে তারা আবার ভাসুর হিসেবে কাউন্ট করেছেন। ভাসুরের নামের মতো তারা খুব খেয়াল করে খালেদা জিয়ার নাম না নিয়ে "বিরোধীদলীয় নেতা" লিখেছেন। 

তবে টুকটাক এসক গাধামোকে ছাড়িয়ে গেছে কমিটির প্রথম সদস্যের অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত। কমিটির প্রথম সদস্য আর কেউ নন, তিনি দেশের বিশ্ব বেহায়া স্বৈরাচারী লেজেহোমো এরশাদ। বিশ্ববেহায়া, স্বৈরাচারী, উদ্ভট উট এসব উপাধি মুছে প্রেস নোটে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও এমপি লেখা হয়েছে।

তো অবস্থাদৃষ্টে দেখা যাচ্ছে এই বেহায়া বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে উদযাপিত হতে যাওয়া রবীন্দ্র জন্মবার্ষিকীর নীতি নির্ধারণ ও জন্মবার্ষিকী পালন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেবেন! এবং এই কর্মযজ্ঞে সাথী হবেন ড. সনজীদা খাতুন, সৈয়দ শামসুল হক, মুস্তাফা মনোয়ার, অধ্যাপক আনিসুজ্জামান, অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরির মতো ব্যক্তিত্বরা! আশ্চর্যবোধক চিহ্নের আগে লেখা নামের এই তালিকাটা আরোও বড় করা যেত। ১৫৬ জনের অধিকাংশই সমাজে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি। লেজেহোমোর নামের পাশে একই কমিটিতে নাম দেখতে এতোটুকু লজ্জাও কারো করলো না! ধিক এই নমস্যদের।

লিংকঃ তথ্য মন্ত্রনালয়ের প্রেস রিলিজ। সূত্রঃ বিডিনিউজ২৪।

ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত [লিংক]।


মন্তব্য

আরিফ জেবতিক এর ছবি

সবগুলোই তো উট, আলাদা আর কোথায়?

হাসিব এর ছবি

বিষয়টা আমি যেরকম ভাবলাম সেটা হলো সবগুলোই বাহন। এর মধ্যে একটা উট।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এমন করেন ক্যান? এরশাদও একজন কবি, রবীন্দ্রনাথও একজন কবি চোখ টিপি

এই কমিটি বানানোর জন্য নিশ্চয়ই একটা কমিটি করা হইছিলো। সেই বিজ্ঞ আমলাদের নাম স্বর্ণাক্ষরে লিখে রাখা দরকার।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসিব এর ছবি

"আমলা" লিখলেই যথেষ্ট। এদের নাম ভিন্ন হলেও চিন্তাভাবনা সবার এক।

মানিক চন্দ্র দাস এর ছবি

হাস্যকর কর্মকান্ড ! হাঃ হাঃ হাঃ এইবার দুই বাংলার গিট্টূতে পড়ছে রবিবাবু।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

তবে আমার কেন যেন মনে হইতেছে এই কমিটিতে যাদের নাম আছে, তাদের নাম অনুমতি ছাড়াই এখানে রাখা হইছে। অথবা কমিটিতে আর কে কে আছে সেটা অন্যরা জানে না। এমনটা হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

হাসিব এর ছবি

খুবই সম্ভব। তবে এই অবস্থায় যারা চাননা তাদের নাম লেজেহোমোর সাথে একই কমিটিতে থাকুক তারা নিশ্চয়ই প্রতিবাদ করবেন। দেখা যাক কতজন প্রতিবাদ করেন।

অতিথি লেখক এর ছবি

উৎসবে হুমো নিশ্চয়ই রবীন্দ্রনাথের কোনো কবিতা পাঠ করে শোনাবেন !

জাহামজেদ

হাসিব এর ছবি

পুরা সিরাম ব্যাপার হবে। তবে এইটা উত্তরাধুনিক মতে ঠিকাছে। কারণ উত্তরাধুনিক দুনিয়ায় সব কবিতাই কবিতা। কবিতার কোন ভালোমন্দ বিচার করা যাবে না।

বাবুবাংলা এর ছবি

হাসিনা, খালেদা- এরা কেঊ তো আর কবি না।
এরশাদ হলেন কবি এবং বাংলার অলংকার।
কবিকে বাদ দিয়ে বিশ্বকবির জন্মদিন যেমন হয় না, অলংকার ছাড়া তেমনি কমিটিও অলংকৃত হয় না।

জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী

অতিথি লেখক এর ছবি

মনিষীরা যদি যদি প্রতিবাদ জানিয়ে তাদের নাম কমিটি থেকে প্রত্যাহার করতে বলেন তবে তো লেজেহোমোর জন্যে দুঃসংবাদ। হায়রে, আজ যদি প্রফেসর আবুবকর সিদ্দিকী লেজেহোমোর শ্বশুর থাকতেন! এই মনিষীরা প্রায় সকলেই তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, তিনি নিশ্চয়ই ম্যানেজ করতে পারতেন।

রাতস্মরণীয়

হাসিব এর ছবি

আমি অপেক্ষায় আছে দেখতে যে উনারা কী করেন এই বিষয়ে।

ধুসর গোধূলি এর ছবি

বানানটা হবে লেজেহুমু, হোমো না। বানানের ব্যাপারে খিয়াল রাখিবেন জনাব।

আমার মাথায় একটা বুদ্ধি আসছে, ১৫৬ জনরে ফিল্টার করা নিয়ে। এই ১৫৬ জনের হাতে সঞ্চয়িতা ধরায়ে দিয়ে বলা হবে এখান থেকে রবি বুড়ার একটা কোবতে শুদ্ধভাবে পড়িয়া, বলিয়া ও বুঝিয়া শোনাইতে। যিনি পারবেন না, তাঁহাকে সসম্মানে দর্শক সারিতে আসন গ্রহণ করতে বলা হবে।

উক্ত অনুষ্ঠানে স্বরচিত কোবতে পাঠের আয়োজন করা যেতো উক্ত ১৫৬ জনের মধ্যে। কিন্তু তাতে লেজেহুমু একক সংখ্যাগরিষ্ঠ হিসেবে মনোনিত হয়ে যাবার চান্স আছে।



বিএসএফ—
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড

হাসিব এর ছবি

নাহ ঐখানে আরো কবি আছে। তবে ওদের সবার কবিতা পড়ি নাই।

অতিথি লেখক এর ছবি

কমিটির প্রথম সদস্য আর কেউ নন, তিনি দেশের বিশ্ব বেহায়া স্বৈরাচারী লেজেহোমো এরশাদ।

কন কি! হ্যারে বাদ দিবো ক্যাম্নে!!
বিশ্বের খবর জানি না তয় বাংলা ভাষার এক্মাত্র কবি প্রেসিডেন্ট বইলা কথা! খাইছে

কাজী মামুন

পুতুল এর ছবি

বস, লজ্জা পাওয়ার মতো বোধ থাকলে তো কোন কথাই ছিল না। বিশ্ব বেহায়ার হাত থেকে দেশ এখনো মুক্ত হয় নি। সে জন্য আমি লজ্জিত।
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!

তারাপ কোয়াস [অতিথি] এর ছবি

১৫৬ জনের কমিটির খরচের জন্য কত টাকার বাজেট ধার্য করা হয়েছে জানতে বড় মঞ্চায়!


হাসিব এর ছবি

আপনি বিবাহিত হয়ে থাকলে হিসেবটা সহজে করতে পারবেন। এরকম একটা হিসাব করেন। ১৫০ জনের এ্যাকোমোডেশন হবে এরকম কমিউনিটি সেন্টার। কমিউনিটি সেন্টার লাগবে একারনে যে আমার জানামতে সচিবালয়ে এরকম কোন মিটিং রুম নেই যেটা ১৫৬জনের মিটিং এ্যাকোমোডেট করতে পারবে। এ্যাকোমোডেশনের অতিরিক্ত আছে একবেলা খাবার। টোটাল কতো লাগে?

হিমু এর ছবি

রবীন্দ্রনাথের বয়স ১৫০, প্রত্যেক বছরের জন্যে ১ জন। আর এই ১৫০ জনকে দেখে রাখার জন্যে আরো ৫ জন। আর চামে ঢুকে পড়া লণ্ডন থেকে ওভারহলিং করে ফিরে আসা ১ স্বৈরদাদু। একুনে ১৫৬ জন।



বুকে BOOK রেখে বন্ধু চলো আজ যাবো বরাহশিকারে মোরা ধার ধার ধার দিও বল্লমে ♪♫

হাসিব এর ছবি

ক্যালকুলেশন ঠিকাছে।

অমিত এর ছবি

অধ্যাপক গুলাম আজমের নামটা রাখলেই পারত

হাসিব এর ছবি

আমাদের গু আযম ভালো কবিতা লেখে না। নাহলে দেখা যেত একদিন কোন কবিসভায় কবিতা ও ব্যক্তিজীবন আলাদা করে দেখতে হবে-এই যুক্তিতে সে স্বরচিত কোবতে পড়তে মঞ্চে উঠছে।

অতিথি লেখক এর ছবি

কবিতা লেখা হারাম নাকি হালাল এই নিয়ে একটা সংশয় আছে নইলে গু আজমের কাব্য প্রতিভা নাই নাকি ক্যামে জানেন! কত বই লেখছে জানেন!

কাজী মামুন

হাসিব এর ছবি

এইখানে একটা ব্যাপার পরিস্কার করি। নামের লিস্ট পুরোটা পড়লাম। ওখানে শিখন্ডি সচিব, রাজনীতিবিদ বাদ দিলে গুরুতর আপত্তিকর লোকজন খুব বেশি নেই। তবে দুধে একফোটা চোনাই যথেস্ট পুরো জিনিসটা বরবাদ করতে। লেজের অন্তর্ভুক্তি ঐ চোনার কাজটা করেছে এখানে।

অনিন্দ্য রহমান এর ছবি

প্রথমত রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে রবীন্দ্র জন্মোৎসব জিনিসটাই রবীন্দ্রনাথের ও তার কর্ম-ভাবনা-চেতনার সাথে সংযোগবোধসম্পন্ন মানুষদের জন্য ভীষণভাবে অপ্রাসঙ্গিক।

রবীন্দ্রনাথকে এখন ঐকিক প্রকাণ্ডতার বাইরে গিয়ে খণ্ডিতভাবে, এবং আরোপিত সামষ্টিক প্রণালীর বাইরে থেকে ব্যক্তিগতভাবে অনুধাবন করা প্রয়োজন।

রাষ্ট্রের কবল থেকে রবীন্দ্রনাথকে যেমন মুক্ত করা দরকার, তেমনি দরকার সঙ্গীত বিদ্যায়তন ও গণমাধ্যম ভেকধারী মৌসুমী রবীন্দ্রব্যবসায়ীদের কবল থেকেও।

বাহির হয়ে এসো তুমি, যে আছো অন্তরে ...
___________________________
Any day now, any day now,
I shall be released.


রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বিগত কয়েকটা ঘটনায় - যেমন, বরেণ্য ব্যক্তিবর্গের নয়াদিগন্তে লেখা, জামায়াতের আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনায় যোগদান, দিগন্ত টিভির টক শোতে অংশগ্রহণ - আমার একটা ধারণা জন্মাচ্ছে যে , যাদেরকে আমরা নিঃশর্ত শ্রদ্ধা করি, তাদের অনেকেই স্রেফ ধান্দাবাজি করে আর প্রভাবিত মিডিয়ার জোরে সেই আসনে বসেছে। এদের অনেকেরই শ্রদ্ধাটা প্রাপ্য নয়।

আচ্ছা, রইচ কবি কি লিস্টিতে আছে? অথবা তুষাড়?

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হাসিব এর ছবি

তুষাড়, ঢালি কবিয়াল বা অন্য কোন ঝাজাপ্রাপ্ত সেলিব্রেটি এই বেলা না থাকলেও অচিরাত এইসব লিস্টিতে তাদের দেখা যাবে বলে আমার দৃঢ় বিশ্বাস।

আর যেই ধান্দাবাজির কথা বললেন, সেইটাতে আরেকটু যোগ করি। সেলিব্রেটি বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের অনেকেই এ্যাটেনশন হোর নারসিস্টিক। নীতিবোধের গুল্লি মেরেও যেকোনভাবে খোমাখান তুলে ধরাই ওদের উদ্দেশ্য। খোমা তুলে ধরতে তাদের কাছে দিগন্ত টিভি, বিটিভি সব এক।

রানা মেহের এর ছবি

খুব সুন্দর।
রওশন এবং বিদিশাকে নিয়ে একটা 'চোখের বালি' হয়ে যাক।
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।