মেহেরজান বিষয়ে পানি অনেকদুর গড়িয়েছে। মেহেরজানের পরিবেশক আশির্বাদ চলচ্চিত্র প্রেক্ষাগৃহগুলো থেকে ছবিটি প্রত্যাহার করেছে [১]। এর মধ্য দিয়ে মেহেরজান বিতর্ক দ্বিতীয় পর্যায়ে গিয়ে পড়লো। পর্যায় উত্তরণের সাথে সাথে মেহেরজান সমর্থকদের বিতর্কের বিষয়বস্তু ছবির বিষয়বস্তু ছেড়ে জাতীয়তাবাদ, ফ্যাসিবাদ ও নানারকম ইংরেজী শব্দমালাকেন্দ্রিক হয়ে পড়ছে বলে ধারনা হয়। এই রীতিতে আজকে প্রথম আলো পত্রিকায় ফাহমিদুল হকের একটা লেখা [২] ছাপা হয়েছে। অনর্থক ইংরেজী শব্দাক্রান্ত সেই লেখার ব্যবচ্ছেদই হবে এখানে। সাথে উপরি হিসেবে থাকবে বিডিনিউজ২৪.কমে প্রকাশিত ব্লগার আসিফ সালেহ-এর লেখার ব্যবচ্ছেদ।
ফাহমিদুল হকের লেখার শিরোনাম বিনির্মাণের বিপত্তি ও জাতীয়বাদী আবেগ। শিরোনাম ভালো হয়েছে বলতে হয়। অন্তত মূল অংশে যা লেখা হয়েছে সেটাকে শিরোনাম প্রতিনিধিত্ব করে এই অর্থে।
যাঁরা যুদ্ধে অংশ নিয়েছেন বা মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্ম, তাঁদের আবেগের পরিমাপে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী প্রজন্ম সৃজনশীল অভিপ্রকাশে আক্রান্ত হবে না। বরং মুক্তিযুদ্ধের মতো বিশাল ঐতিহাসিক ঘটনাকে নানা দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখতে চাইবে নতুন প্রজন্ম। আর এই দেখার ক্ষেত্রে তারা সমসাময়িক জাতীয় ও বৈশ্বিক জীবনদর্শন ও রাজনীতি, বৈশ্বিক মানবতাবাদ ইত্যাদি বহিঃস্থ ঘটনাক্রম-আদর্শ দ্বারা অবলীলায় তাড়িত হবে। এটা শৈল্পিক দায় ও উপায়।
প্রথমে বিনির্মাণ প্রসঙ্গ। বিনির্মাণ [৩] প্রসঙ্গে ফাহমিদুলের মূল বক্তব্য এরকম যে বাংলাদেশে ৭১ ভিত্তিক আলোচনা সব এক ধরণের গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ (মোটা দাগে চলা বক্তব্য)-এ আগায়। তো এই মোটা দাগে চলা বক্তব্যের ধাঁচ থেকে বাইরে বেরিয়ে নতুন প্রজন্ম পূর্বসূরিদের আবেগের পরিমাপে ... সৃজনশীল অভিপ্রকাশে আক্রান্ত হবে না।" এই আবেগ বিবর্জিত পন্থাকে ফাহমিদুল বলছেন শৈল্পিক দায় ও উপায়। নতুন প্রজন্ম এই দায় মেটাতে তাই মুক্তিযুদ্ধের বিভিন্ন বিভিন্ন দিক বিভিন্নভাবে বয়ান নির্মানের উপায় করবে। পূর্বসুরিদের অতিরিক্ত হিসেবে নতুন প্রজন্ম সমসাময়িক জাতীয় ও বৈশ্বিক জীবনদর্শন ও রাজনীতি, বৈশ্বিক মানবতাবাদ ইত্যাদি বহিঃস্থ ঘটনাক্রম-আদর্শ দ্বারা অবলীলায় তাড়িত হয়ে তাদের কাজ করবে। ধারণা করা যায় রুবাইয়াত হোসেনের মেহেরজানকে ফাহমিদুল এরকম একটা দায় মেটানোর উপায় হিসেবে দেখছেন। আগ্রহউদ্দীপক পর্যবেক্ষন বটে।
সাদা চোখে এই নির্দোষ কথামালায় কোন দোষ বের করা শক্ত। বাজারে মোটা দাগ আঁকার পেন্সিলের বাইরে চিকন আঁকার পেন্সিলও থাকা চাই। তো লেখায় সমস্যাটা শুরু হয় সিনেমায় রাজাকার শ্রেনীর উপস্থাপন নিয়ে বিশ্লেষণে গিয়ে। সেখানে ফা.হ. সঠিকভাবে শনাক্ত করেছেন রাজাকারের চরিত্রায়নে এক ধরনের স্টেরিওটাইপিং রয়েছে এবং সেটার পেছনে কারণও রয়েছে। কারণটুকু চিহ্নিত করে ফা.হ. এই স্টেরিওটাইপিঙের নির্মাতাদের চিহ্নিত করতে চেষ্টা করেছেন। এ প্রসঙ্গে তিনি বলছেন,
এসব নির্মাতা-স্রষ্টারা মূলত চিন্তাভাবনায় আধুনিক ও বামঘেঁষা হলেও ষাটের দশকের বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার মধ্য দিয়েই পশ্চিমা আধুনিকতা ও বাম ভাবনার স্থানিকীকরণ ঘটে। ফলে বাঙালি মুসলমানের বাঙালিত্বের অংশটুকুই তারা একমাত্র আত্মপরিচয় বলে ভাবতে চায়। এ জন্য মুসলমানিত্বের অংশটুকুকে তারা বাতিল করতে চায়। ইসলামের অনুসারীরা তাদের কাছে ‘অপর’। ফলে চলচ্চিত্রে তাদের অপরায়ণের শিকার হয় বাঙালি-মুসলমান জাতিসত্তার ভেতরকার মুসলমানিত্ব অংশটি।
সমস্যাটার শুরু ঠিক এই জায়গাটায়। শিরোনামের জাতীয়তাবাদ প্রসঙ্গটাও এখানে আসে। বাঙ্গালির জাতীয়তাবাদের চেহারাটা কী হবে সেটা অনেক পুরনো তর্কের বিষয়। ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত বাংলা ভাষা, সঙ্গীত, সাহিত্যের মুসলমানিকরণের চেষ্টা অনেক হয়েছে। প্রচার মাধ্যমে রবীন্দ্রনাথ নিষিদ্ধকরণ, ভাষার অক্ষর বদলে আরবি হরফ আরোপের চেষ্টা, বাংলাকে যথেষ্ট মুসলমানি ভাষা না মনে করা - এসবই আসলে পাকিস্তানিদের বাঙ্গালি সংস্কৃতির ওপর মুসলামানি প্রলেপ জড়ানোর অপচেষ্টা হিসেবেই দেখা দিয়েছিলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংগ্রাম হুট করে '৭১ সালে নাজিল হয়নি। '৪৮ থেকে '৭১ - এই পুরোটা সময়ের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক নিপীড়নের প্রতিবাদ হিসেবেই এর আবির্ভাব হয়। বাংলাদেশের এই আবির্ভাব এক অর্থে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে একটা নির্দিষ্ট ধর্মের মোড়কে সংস্কৃতিকে আকার দেওয়ার জবরদস্তি চেষ্টার অস্বীকার। সুতরাং বাঙালি ‘প্রথমত বাঙালি না মুসলমান’ এই প্রশ্নের ফয়সালা বাংলাদেশ স্বাধীন হবার মুহুর্ত থেকেই হয়ে গেছে। এগুলো খুব সহজ ও বহুবার আওড়ানো কথা। তবুও এই সহজ কথাগুলোই বারবার আওড়াতে হয়। কারণ, এই ধর্ম বিযুক্ত জাতীয়তাবাদের ধারণা সবার হজম হয় না। হজম হয় না বলে তাদের মুখে বাঙালি মুসলমান, বাঙালি হিন্দু ইত্যাদি ধর্মীয় বিভাজনমূলক শব্দ বারবার শোনা যায়। সেইসাতে এক চিমটে লবনের মতো আমেরিকা, নাইন ইলেভেন, তালেবান ইত্যাদির মিশ্রন। শুধু বাঙালি শব্দটা এদের কারো মুখে রোচে না। '৭১-এর যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যে বাঙালি শুধু বাঙালিই হতে চেয়েছে এই ধারণাকে ফা.হ.এর মনে হয় 'মুসলমানিত্বের বাতিলীকরণ'। জাতীয়তাবাদ নতুন করে নির্দিষ্ট করার চেষ্টাকারিদের সহবাদক হয়ে ফাহমিদুল হক আশা করি নিজের অবস্থানটা আরো একটু পরিস্কার করবেন অচিরেই। আমরা সবাইকেই চিনতে চাই ভালো করে।
ফা.হ. অভিযোগের আঙ্গুল তুলে বলেছেন ইসলামের অনুসারিরা তাদের কাছে অপর। এই বাক্যটা পড়ে মনে হয় ফা.হ. নির্মাতা-স্রষ্টারা বাঙালি আর ইসলামের অনুসারিদের প্রতিপক্ষ হিসেবে জ্ঞান করছেন এমনটা মনে করেন। নির্মাতা স্রষ্টারা পাকিস্তানিদের ধর্মীয় সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বর্ননা (লেখকের ভাষায় ন্যারেটিভ) আর কীভাবে দিতে পারতো সেই প্রশ্নটা আমি ফা.হ.-কে করতে চাই।
আগের ডিকনস্ট্রাকশনগুলোয় কিন্তু আজকের মতো ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি।
ফা.হ.-এর ভাষায় মেহেরজান সিনেমায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের বিনির্মাণ হয়েছে। তার সাথে এই বিষয়ে একমত হওয়া চলে যে এই বিনির্মাণ আগেও হয়েছে এবং মেহেরজানের মতো ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া সেগুলোতে দেখা যায়নি। এখানে ফা.হ. আরো একটু তুলনামূলক বিশ্লেষণ করে দেখাতে পারতেন বিষয়টা। বিহারির সাহায্য করার ঘটনা আর সিনেমায় প্রেমিক পাকিসেনার মধ্যকার উপস্থাপনগত পার্থক্য রয়েছে। বিনির্মাণ প্রচেষ্টা ঠিক এই জায়গাতে গিয়ে ঠেকলো কেন সেই প্রশ্ন আসতে পারে স্বাভাবিকভাবেই। বীরাঙ্গনাদের গল্প (লেখকের ভাষায় ন্যারেটিভ) বলতে গিয়ে আনুপাতিকহারে অত্যন্ত উচ্চহারে হিন্দু নারীদের ধর্ষিত হবার গল্পটা আসে না কেন? নাকি এই ন্যারেটিভ দেখাতে গেলে বাঙালির বৈশ্বিক মানবতাবাদি মুসলমানি চিত্ত আঘাতপ্রাপ্ত হয়? বৈশ্বিক মানবতাবোধে উজ্জীবিত হয়ে পাকিপ্রেমের ফ্যান্টাসি দিয়ে আসলে কিসের দায় মেটে? যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবি, ফরহাদ মজহার গ্রুপের জামাতি কানেকশন ব্যাকড্রপে নিয়ে এর রাজনৈতিক ব্যাখ্যাটা কী হয়?
ডিকনস্ট্রাকশন? ছবি: কিশোর পায়েখ
ইতিহাস বিনির্মান প্রচেষ্টা অন্য দেশগুলো থেকে আমাদের দেশে একটু আলাদা দৃষ্টিতে দেখা যেতে পারে। ৪০বছরে এতোবার নতুন করে ইতিহাস লেখার চেষ্টা মনে হয় ফা.হ. অভিজ্ঞতার বাইরের ব্যাপার নয়। এদেশে একটা পক্ষ থেকে সবসময় চেষ্টা জারি আছে কীভাবে তারা তাদের কৃতকর্ম অস্বীকার বা নিদেনপক্ষে হালকা করতে পারে। মেহেরজানের স্ক্রৃপ্টরাইটার, নামকরণ এগুলো বিষয়ে খোঁজ করলে ঐ রিভিশনিস্টদের সাথে তাদের সম্পর্ক বের করা খুব সহজেই সম্ভব। এইসব আসলে শেষমেষ একটা বহুদিন ধরে চলতে থাকা অপরাজনীতির অংশ হিসেবে আকার পায়। এই প্রচেষ্টার কথা মাথায় নিয়ে যখন মেহেরজানে পাকিমাহাত্ম্য দেখতে হয় তখন ভাবা দরকার পড়ে পরিচালক, স্ক্রৃপ্ট রাইটার আসলে ডিকনস্ট্রাকশন করতে চেয়েছেন নাকি রিকনস্ট্রাকশন করতে চেয়েছেন।
রিকনস্ট্রাকশন/আদার ন্যারেটিভ/কাউন্টার ন্যারেটিভ। ছবি - বিডিনিউজ২৪.কম স্কৃনশট
এই রিকনস্ট্রাকশন করতে পারলে একটা পক্ষের রাজনৈতিক সুবিধে হয় খুব। বাঙালি জাতীয়তাবাদ অপেক্ষা বাঙালি মুসলমান জাতীয়তাবাদ হয়তো তাদের জন্য আরোও একটুখানি বৈশ্বিক। বাঙালি জাতিসত্তার ওপর এই চক্রের আঘাত নতুন কিছু না। তাদের হয়ে কিছু সাঙ্গোপাঙ্গো এইটা সেইটা রচনা করেন, সিনেমা নাটক বানান। এরপর ফাহমিদুল হকের মতো বুদ্ধিজীবিরা আসেন "শিল্পের দায় ও উপায়"-এর দোহাইয়ে নেমে পড়েন। প্রতিক্রিয়ার আঁচ টের পেয়ে তিনি বলেন,
অথচ মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি এখনো পুরোনো প্রজন্মের কাছে তরতাজা। ফলে এই ধরনের ডিকনস্ট্রাকশন মেহেরজান-এর জন্য খানিক আগাম হয়ে গেল।
তো আমার প্রশ্ন, কবে বা কত বছর বিগত হলে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ঝাপসা হয়ে মেহেরজানের মতো ডিকনস্ট্রাকশন হালাল হয়ে দেখা দেবে? নতুন প্রজন্মের স্মৃতি বিস্মৃতির বিষয়ে উনি এতোটা আত্মবিশ্বাসী কী করে?
ফাহমিদুল হকের লেখাটার মতো আরো একটা লেখা পাই আজকে বিডিনিউজ২৪ এর ইংরেজি ওপিনিয়ন সেকশনে [৪]। লেখাটি লিখেছেন দৃষ্টিপাত ব্লগের আসিফ সালেহ [৫]। আসিফ সালেহ মেহেরজান বিষয়ে প্রথম মন্তব্য করেন আনহার্ড ভয়েস ব্লগে নাইম মোহাইমেনের ব্লগে [৬]। নাইম মোহাইমেনের ঐ লেখাটি ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারেও [৭] ছাপা হয়েছে। নাইম মোহাইমেনের সাথে সুস্থ আলাপচারিতা চালানো মুশকিল। এই লোক মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ [৮] বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলেন। মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ বলা যায় তখনি যখন কেউ স্বাধীনতার ঘোষণাকে অগ্রাহ্য/অস্বীকার করে। [আরো একটা রিকনস্ট্রাকশন প্রচেষ্টা?] এই জাতীয় লোকেরা যখন কিছু নিয়ে লেখে তখন দেখতে হয় আসলে সে যেসব নিয়ে লিখছে সেটার পিছনে মোটিভ কী। মেহেরজান বিষয়ে আমার আগ্রহ এই কারণে প্রথম জাগ্রত হয়।
আসিফ সালেহ লেখার উপসংহার টেনেছেন মেহেরজান সিনেমার ব্যান (অানুষ্ঠানিক অথবা অনানুষ্ঠানিক) বিষয়ে প্রতিবাদ তুলে ধরার আহবান জানিয়ে। তবে এর আগে তিনি মেহেরজানের পক্ষ বিপক্ষ সম্পর্কে কিছু মন্তব্য করেছেন যেগুলো আসলে ভ্রান্তিমূলক ও পরস্পরবিরোধী।
লেখার শুরুতে আসিফ মেহেরজান চলচ্চিত্রের হিংসাত্মক/ক্রুর সমালোচনা দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন। তিনি জানাচ্ছেন মাস ৬ আগে তিনি যখন প্রথম এই চলচ্চিত্রটি দেখার সুযোগ পান তখন তিনি এর কাহিনীতে সমস্যা দেখলেও মনে করেছেন এটা -
..... the beginning of a healthy exchange. I thought it was the beginning of the clash of storytelling between two generations — one that was too emotionally close to the War to accept any other narrative of the story and the one for whom the research of the War was done through interviews and books.
মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে সমস্যাপূর্ন কাহিনী কীভাবে স্বাস্থ্যকর বিনিময়ের সূচনা করে এটা আমার বোঝার বাইরের জিনিস। অস্বাস্থ্যকর কিছু বিনিময় ঘটলেই মনে হয় বিষয়টা স্বাভাবিক হতে পারতো। আর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিষয়ে সংঘাত এক জেনারেশন থেকে আরেক জেনারেশনের সংঘাত নয়। দুই জেনারেশনেই দু'টো সুস্পষ্ট পক্ষ রয়েছে যারা নিজেদের প্রতিপক্ষ বাছাই করতে জেনারেশনে আটকে থাকেন না। আসিফ সালেহর এই বর্তমান জেনারেশনের চিত্রায়ন তাই একটা চাপান উতর ছাড়া কিছুই নয়। আসিফ সালেহ বাংলা পড়তে জানলে আহবান জানাবো বাংলা ব্লগগুলোতে একটু নজর বুলিয়ে নতুন জেনারেশন সম্পর্কে একটা ধারণা নিতে।
বাংলা ব্লগে যেরকম কিছু ম্যাৎকার শোনা যায় সবাইকেই কথা বলতে দিতে হবে ইত্যাদি, আসিফ সালেহও সেরকমই একটা কিছু বলেন তার লেখাতে। তিনি অভিযোগ করেন বাংলাদেশে বিতর্কগুলো খুব দ্রুত ব্যক্তিগত চৌহদ্দিতে গিয়ে পড়ে। তিনি প্রশ্ন তোলেন,
Why? Why such personalisation and vilification when there is plenty to criticise on the substance of the film?
জনাব সালেহ, সবকিছুই গোটা একটা রাজনীতির অংশ। একটা বাদ দিয়ে আরেকটা করতে হবে এমন নয়। সবকিছু খুড়ে দেখেই এখন পরিস্কার মেহেরজান ছবিটার সমস্যাপূর্ন কাহিনীটার সূত্র এবং সেই সূত্রের রাজনৈতিক অবস্থানের সাথে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কীভাবে সাংঘর্ষিক। লেখার শুরুতে যে "big picture"-এর কথা বললেন সেটার থেকে এগুলো বাইরে থাকবে কেন? মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত যাবতীয় বর্ননা (narrative) আপনি চেখে দেখতে প্রস্তুত হলেও সমালোচকদের রাস্তাটা "without questioning each others’ agenda" একে দিতে আপনি এতো আগ্রহী কেন? অবস্থানটা একটু পরস্পরবিরোধী হয়ে গেল না? এ্যাজেন্ডা ঢাকা দিতে আপনার এই অতি আগ্রহ কেন জনাব?
[মেহেরজান স্ক্রিপ্টরাইটার এবাদুর রহমানের বইয়ের একটি অংশ। ছবি কৃতজ্ঞতা -
নজরুল ইসলাম ]
আসিফ সালেহ এক জায়গায় বলেন বিকল্প বর্ণনার জায়গা দিতে হবে। অন্যদিকে বলেন মত প্রকাশের দায়িত্বশীল সীমার কথা। এই সীমাটা মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলাপে ঠিক কোথায় নির্ধারণ করতে হবে সেটা বিষয়ে কোন ধারণা উনার লেখায় পাওয়া যায় না। জনগণকেই নাকি সবকিছু বেছে নেবার সুযোগ দিতে হবে। গত কয়েকদিনের বাংলা ব্লগগুলোতে চোখ বোলালে উনি জনগণ মেহেরজানকে কীভাবে নিয়েছে সেটার ধারণা পাবার কথা।
The tragedy is not that film’s life was cut short. Real tragedy is that the intense reaction and subsequent exchanges could have provoked the younger generation to search for the real history of the War and its relevance. Now it’s a missed opportunity
.
পুরোই হাস্যকর হাহুতাশের কথা। নতুন প্রজন্মকে বাঙালিকে মুসলমান তকমায় জড়ানোর চেষ্টা কারিদের "শিল্প" থেকে ইতিহাসের "আসল ইতিহাস" শিখতে হবে! এবং মেহেরজান নিষিদ্ধ হওয়াতে সেই জিনিস আওয়ামদের হাতছাড়া হলো!
একাধিকবার আসিফ সালেহ জনগণকে নিজের পছন্দ বাছাই করতে দিতে বলছেন। আবার সেইসাথে বলছেন মেহেরজান নিষিদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে নেমে পড়তে। প্রশ্ন হলো জনগণ যদি মেহেরজান প্রত্যাখ্যান করে তাহলে কি তিনি এই ছবি ব্যান করতে রাস্তায় নামবেন?
১. ‘মেহেরজান’ ছবির প্রদর্শনী বন্ধ! - প্রথম আলো, ৩০শে জানুয়ারি, ২০১১। [
লিংক]
২. বিনির্মানের বিপত্তি ও জাতীয়বাদী আবেগ - ফাহমিদুল হক, প্রথম আলো, ৩০শে জানুয়ারি, ২০১১ [লিংক]
৩. Deconstruction উইকিপিডিয়াভুক্তি [লিংক]
৪. Losing the plot with Meherjaan - Asif Saleh, January 30, 2011, bdnews24.com [লিংক]
৫. Asif Saleh - ব্লগ [লিংক]
৬. Meherjaan’s Women on the Verge - Naeem Mohaimeen - January 23rd, 2011 [লিংক]
৭. Meherjaan’s Women on the Verge - Naeem Mohaiemen - January 23rd, 2011 [লিংক]
৮. Accelerated Media and the 1971 Civil War in Bangladesh - Naeem Mohaiemen, January 26, 2008 Economic & Political Weekly, 36-40. [লিংক]
১. সম্পর্কিত আরো একটা লেখার
লিংক
শেষ রজনী সিনেপ্লেক্সে- ১ - শুভাশীষ দাশ
২. পোস্টটি একই সাথে ব্যক্তিগত ব্লগে প্রকাশিত [
লিংক]
আপডেট [২রা ফ্রেব্রুয়ারি, ২০১০। সময় ২০১৫ জিএমটি]
নাইম মোহাইমেন "সিভিল ওয়ার" শব্দযুগলের ব্যাখ্যা করেছেন তার ফেইসবুকের একটি নোটে [লিংক]
মন্তব্য
চমৎকার লিখেছেন।
ধন্যবাদ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
আসিফ সালেহ বাংলা পড়তে পারেন কি না জানি না, তবে ওনার ইংরেজি কোদালে কোপানো পোস্টগুলো পড়লে সবসময়ই দেখি এই পিচ্ছিল চরিত্রগুলোকে জায়গা ছেড়ে দেয়ার বা জায়গা করে দেয়ার একটা আহ্বান থাকে। এই চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকলে একদিন পাবলিক ওনার সফেদ কাপড় ময়লা করে দিতে পারে।
বাংলাদেশের পত্রিকায় মুক্তিযুদ্ধকে সিভিল ওয়ার লেখাও কি গ্র্যান্ড নেরেটিভের বাইরে কাউন্টার নেরেটিভ? এগুলো যারা লেখে, তাদের মাদারচোদ বলাও নিশ্চয়ই তাহলে এই নেরেটিভের ব্যাকরণে সিদ্ধ? কী বলেন নাইম মোহাইমেন?
মুক্তিযুদ্ধকে গৃহযুদ্ধ বলা সংবিধান ও রাষ্ট্রবিরোধী বিবেচনায় রাষ্ট্রেদ্রোহিতামুলক অপরাধ । মাদারচোদ শুয়রের বাচ্চাদের কাউন্টার নেরেটিভরে..........
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
উপরের কাউন্টার ন্যারেটিভ ছবিটার কাউন্টার ন্যারেটিভের একটা উদাহরণ হতে পারে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ইদানিং মেহেরজান ইস্যুতে ছাগুশিরোমনি হবার জন্য মার্কেটে তুমুল প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। লিস্টে নতুন নাম যোগ হচ্ছে প্রতিদিন। কিপিটাপ, গাইজ্।
সমসাময়িক জাতীয় ও বৈশ্বিক জীবনদর্শন ও রাজনীতি, বৈশ্বিক মানবতাবাদ ইত্যাদি বহিঃস্থ ঘটনাক্রম-আদর্শ দ্বারা অবলীলায় তাড়িত হয়ে শিল্পের দায় ও উপায় মেটাতে আসুন দলে দলে জনাব ফাকমিদুলকে ছাগুস্টটল উপাধিতে ভূষিত করি।
লিস্টে প্রতিদিন নাম যোগ হলেও সব রসুনের কোয়া এক জায়গায় মেলে। মেহেরজানের পক্ষে প্রধান বাকোয়াজদের সবাই কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্টের গ্যাড়াকলে আটকা। এই সংখ্যাটা খুব বেশী না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কী যন্ত্রণা!
একটা ছাগল চাপা পড়ে
লক্ষ ছাগল দাড়ি নাড়ে!!!
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ হাসিব ভাই। আপনি না লিখলে বোধহয় চোখ এড়িয়ে যেত অনেকের।
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
ছড়া ভালো পাইলাম
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এইসব বালের তিন-চারতলা ন্যারেটিভ বয়ান আর নানান ডিসকোর্সের গ্যাড়াকলে পড়ে মাথামুথা আউলাইয়া যাওয়ার দশা! এইত্তা ডিকন্সট্রাকশন আর রিকন্সট্রানকশনের নানান আন্ডারকন্সট্রাকশন চিপায় পড়ে আম-বাঙালির হালুয়া টাইট। আর আম-বাঙালির এই হালুয়া টাইট অবস্থানের সুযোগ নিয়ে দ্দীণূ ও তার দোসরেরা যাখুশিতাই গেলানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে অবিরত। যার সাম্প্রতিক চেষ্টাটা ফাহমিদুল হকের নুনচুনআমেরকষ মেশানো বিনির্মানের আপত্তি আর বালছাল।
আমার আগ্রহের বিন্দুটা অন্য জায়গায়, এই লোক কি সোজা করে কথা কৈতে পারে না? পোলাপানরে শেখায় কী তাইলে?
আরে ভাই। ঠাস করে কয়া ফালান যা কৈতে চান। আসল কথা মতিঝিলে রাইখা ভুদাই পাবলিকরে টঙ্গির আশেপাশে নিয়া ঘুরানোর দরকারটা কী আপনের?
আর ঐ আংরেজী বলদরে নিয়া কী কমু? অরে কেউ আদর্শলিপি উপহার দেন জন্মদিনে। আগে বাংলা শিখুক। তারপর অন্য কথা তার লগে।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হুট করে যদি সবাই সহজ কথাটা বলে ফেলে তাহলে সে আর বুদ্ধিজীবি কীভাবে? ঘুরিয়ে পেচিয়ে একশা করে এমনভাবে লিখতে হবে যাতে গায়ের বোটকা গন্ধটা চাপা থাকে কিন্তু কাজও উদ্ধার হয়। কিন্তু হে মুমিনগণ, তোমরা স্মরণ রাখিও কাশি দিয়ে বাতকর্মের গন্ধ লুকোনো যায় না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
______________________
নিজের ভেতর কোথায় সে তীব্র মানুষ!
অক্ষর যাপন
আমি মুখ্যু-সুখ্যু মানুষ, এত্ত কঠিন কঠিন ইংরেজি শব্দ বুঝিনা...তয় উনারা যদি মনে করেন, ফ্রিডম অফ স্পীচ মানে কেউ আমাদের মুখের উপর পেশাব করে দিবেন...আমাদের গর্ব-আবেগ-প্রিয়জন হারানোর বেদনা-আমাদের সত্যিকার পরিচয় নিয়ে ইতরামি করবেন...আর আমাদের তা চেয়ে চেয়ে দেখতে হবে, তাইলে ত উনারে পাকি বারভাতারীর জারজ পুলা কইতে আমার বাঁধবো কেন?
ফ্যাসিবাদী-নাৎসী যাই কন, মুক্তিযুদ্ধ আমার কাছে ধর্মের চেয়েও পবিত্র...উনারা অন্য যাই করেন এইটা নিয়া ইতরামি করলে খুব বেশি লোক সহ্য করবে না! নিজেরে পাকিস্তানী পরিচয় দিতে হত এইটা ভাবলেই ত আত্মহত্যা করতে ইচ্ছা করে...
মেহেরজানে কী মধু পাইছেন ? পাকি হওয়ার এত্ত খায়েশ যখন তখন এইদেশে আছেন কেন, আপনের বাপের দেশে গিয়া ফ্রিডম অফ স্পিচ চর্চা করেন...ফোট...
-------------------------------------------------------------
জীবন অর্থহীন, শোন হে অর্বাচীন...
আচ্ছা এভাবে কি বলা যায় যে, মুক্তিযুদ্ধই পাকিপন্থা আর পাকিগন্ধী তথাকথিত বৈশ্বিক মানবতাবোধের বিনির্মান আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনা কাউন্টার-ন্যারেটিভ ? আর বাংলাদেশ সেসব বিনির্মান আর বি-বয়ানের জীবন্ত ফসল। এই বিনির্মান আর বি-বয়ানের মাঝখানে ওনাদের এইসব ফ্যান্টাসি আসলে ঘুন-নির্মান ও ঘুন-বয়ান। নাপাকি গ্র্যান্ড-ন্যারেটিভের ট্রোজানস্ট্রাকশন ও ট্রোজান-ন্যারেটিভ ?
মনমাঝি
আমার বুঝ সেইরকমই। সত্য আর মিথ্যা। এর মাঝামাঝি অবস্থান হলো অর্থসত্য অথবা অর্ধমিথ্যা। ডাইকোটোমি ইত্যাদি ইংরেজি শব্দ ব্যবহার করে এই অর্থসত্য অথবা অর্ধমিথ্যা জাতে তোলা যাবে না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
রুবাইয়াত আপা যদি "নেটওয়ার্ক সিকিউরিটি জান" নামে একটা সিনেমা বানাতেন, তাহলে বাংলা-ইংরেজি ব্লগের ম্যাৎকারগুলো টুকে দিয়েই আমার পিএইচডি থিসিস-টা হয়ে যেত। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এমন ক্লিয়ার-কাট অবমাননাকে যে পাবলিক কত প্যাঁচাইতে পারে...
প্যাঁচাইলে লাভ নাই। সেইটার আসল মানে কী সেইটা উন্মুক্ত হবেই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এগুলো পড়লে মেজাজ খ্রাপ হয়ে যায়।
অফটপিক: ছবিটা আমার প্রিয় আলোকচিত্রীর - কিশোর পারেখের।
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ধন্যবাদ। ছবির নিচে ক্রেডিট যোগ করে দিলাম। অনলাইনে এরকম অনেক আইকোনিক ছবি আছে। এরকম কি সম্ভব যে এসব ছবি ফটোগ্রাফারদের নামসহ কোন পোস্টে তুলে রাখা যাতে দরকার মতো আমরা রেফারেন্সসহ ছবি দিতে পারি?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
খুবই সম্ভব। মুশকিল হল আমার সাথে প্রয়োজনীয় বইপত্র নেই। নেট ঘেঁটে করা একটু কষ্ট হবে। স্মৃতি বড় দুর্বল
------------------------
[ওয়েবসাইট] [ফেইসবুক] [ফ্লিকার ]
ভাল প্রস্তাব ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
'৭১-এর যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে যে বাঙালি শুধু বাঙালিই হতে চেয়েছে এই ধারণাকে ফা.হ.এর মনে হয় 'মুসলমানিত্বের বাতিলীকরণ'। জাতীয়তাবাদ নতুন করে নির্দিষ্ট করার চেষ্টাকারিদের সহবাদক হয়ে ফাহমিদুল হক আশা করি নিজের অবস্থানটা আরো একটু পরিস্কার করবেন অচিরেই। আমরা সবাইকেই চিনতে চাই ভালো করে।'
ধন্যবাদ। লেখা পড়ে ভাল লাগল।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নকলবাজি থেকে আমরা কেউই আসলে বেরোতে পারিনা। বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সিনেমায় আমরা শত্রুদেশের সেনার সাথে শত্রুদেশের তরুণীর প্রেম দেখিতো। তাই অনেকেই ভাবে এরকম একটা সাবজেক্ট কপি মেরে দিলে পাবলিক সেটা ভাল খাবে। ভেতরে আসলে অনেক............... ঠিক বোঝা যাচ্ছেনা.....................অনেকের অবস্থান.................... যারা সুশীল সমাজ.........................কোথায় যেন গণ্ডগোল.......................... যাক আমিই বোধহয় ভুল।
গন্ডগোল পরিস্কার। দুইটা পক্ষ মেহেরজানের পক্ষে কাজ করে। একটা পক্ষ হলো ফরহাদ মজহার, এবাদুর গ্রুপ। এদের জামাতি এ্যাজেন্ডার কাহিনী এই সিনেমাটা। আরেকটা গ্রুপ হলো আসিফ সালেহ, নাইম মোহাইমেন গ্রুপ। এরা হলো শ্রেনী চেতনার বশবর্তী হয়ে এই পক্ষে। খোঁজ নিয়ে দেখবেন এই দুই পক্ষের বাকোয়াজকারিদের সবাইই ব্যক্তিগত জীবনে একসাথে ওঠাবসা করে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
একটা প্রশ্ন। মেহেরজানের পরিবেশক যে ছবিটি প্রত্যাহার করেছে প্রেক্ষাগৃহ থেকে সেটার কারণ কি? সরকারের উপর মহলের চাপ? জনরোষ (যেমন লোকজন মিছিল টিছিল শুরু করে দিয়েছিলো নাকি)? নাকি ব্যবসামন্দা?
বাঙালী না মুসলমান? -- এই প্রশ্নটা কি ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন ক্রুশিয়াল প্রশ্ন ছিলো যে মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সেটার সমাধান হয়ে যাবে? আমার তো মনে হয় মুক্তিযুদ্ধের ইস্যুটা পশ্চিমা (পাঞ্জাবী বলা হতো ওদেরকে মোটাদাগে) আর বাঙালীতে। এলিটবাদী (মুসলিম লীগার) আর জামাতী টাইপ ধর্মীয় উগ্রবাদীরা বাই ডিফল্ট শক্তের আস্তিন খামচাইয়াই সুবিধা নেবার ধান্দায় থাকে, তাই ৭১ এর প্রেক্ষাপটে ওরা ঐ ক্ষমতাশালী পাঞ্জাবীদের গোত্রেই গণ্য হবে।
বঙ্গবন্ধু বা আওয়ামীলীগের সেই দশকের রাজনীতিতেও "বাঙালী নাকি মুসলমান" এই প্রশ্ন কখনও ইস্যু হয়নাই। এই প্রশ্নটা প্রত্যক্ষভাবে স্বাধীনতার পরে তৈরী হইছে বলেই আমি মনে করি। মিডিয়ার রিপ্রেজেন্টেশনে রাজাকার আর টুপি-দাড়িওয়ালা যে সমার্থক করে ফেলা হইছে, এবং সেখান থেকে যে ৭১ এর পটভূমিতে একটা কৃত্রিম "বাঙালী নাকি মুসলমান?" প্রশ্নের জন্ম দেয়া হইছে (যেইটা ইনফ্যাক্ট ছাগুকূলও সময়মতো ব্যবহার করে নিজেগোর মুসলমানিত্বের ফেরি করার সময়), এইটা কিন্তু অস্বীকার করা যায়না।
ফাহমিদুল হকের লেখাটা আপনি ওভাররিড করে ফেলছেন বলে মনে হলো।
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
- সম্ভবত আনঅফিসিয়াল চাপ। নিশ্চিত না।
- বাঙালিরা ভালো মুসলমান না এই বক্তব্যটা স্বাধীনতার আগের। পাকিস্তান ও মিডলইস্টের লোকজন এখনও সেরকমই ভাবে। হিন্দুয়ানি প্রভাব আমাদের কাজকর্মে আছে সেইটা ওরা প্রকাশ্যেই বলতো। এইকারণে জিনিসপাতি মুসলমানিকরণের (ভাষায় আরবি ফার্সির ব্যবহার বৃদ্ধি, বিধর্মী কবিদের রচিত গান বয়কট, বিপরীতে মুসলমান কবিদের গান প্রমোট করা, হিন্দুয়ানী হরফ বদলে সহিহ হরফে বাংলা লেখা) চেষ্টা ছিলো রাষ্ট্রিয়ভাবে। এই বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ প্রতিবাদও ছিলো। আমরা আজকে যেই ফর্মে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করি সেটার শুরু এধরনের একটা প্রতিবাদ থেকে। এই প্রতিবাদগুলোর শুরু সেই ৪৮সাল থেকে যেটা ৭১এ এসে পরিণত হয়। এই জিনিসটা মাথায় নিলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে রাজনৈতিক অধিকার, অর্থনৈতিক মুক্তির অধিকারের পাশাপাশি সাংস্কৃতিক আগ্রাসনও প্রতিরোধও প্রেরণা হিসেবে ছিলো। বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর এই অর্থে বাঙালি মুসলমান নাকি বাঙালি শুধুই বাঙালি এই প্রশ্নে সমাধান হয়। দুঃখজনক হলো স্বাধীনতার পরও সেই মুসলমানিকরণ চালু আছে। জয় বাংলা পছন্দ না করার অন্যতম কারণ এটা শুনতে "হিন্দুয়ানী"। এর বদলে কারো কারো কানে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ভালো শোনায়। তারা বাংলাদেশের অস্তিত্ব অস্বীকার করলেও বাংলাদেশ স্বাধীন দেশ হিসেবে বলবত থাকে। এবং তারা বাঙালিরে মুসলান বানাইতে চাইলেও বাঙালি বাঙালিই থাকে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ফরহাদ মজহারের বাণীটা দেখেন--
'একাত্তরের ইসলাম পরাজিত হয়'।
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
এইসব প্রোপাগান্ডা নতুন কিছু না। গত শতাব্দির প্রথম থেকেই মানুষজনের চিন্তাভাবনা ডাইলিউট করে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে হয়েছে এবং এখনো পুরোদমে হচ্ছে। এই নিয়ে একটা পোস্ট তৈরী করবো ভাবছি।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বুদ্ধিজিগোলো হিসেবে তাকে আরো কিছুদিন ঊরু প্রদর্শন করে যেতে হবে। সামুর বউ আর পল্লব মোহাইমেন অ্যান্ড কোঙের বগলতলায় থেকে সুবিধা করতে পারছে না মনে হয়, এজন্যই ডিকনস্ট্রাকশনের টেন্ডারবাক্সের সামনে ঘুরঘুর করছে।
বাণীটা কোথায় দিছিলো সে? স্ক্যানড কপি বের করতে পারেন কিনা দেখেন।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ধন্যবাদ, ধূগোদা। মনের কথাটা কয়া দিসেন ... ... ...
==========================================================
ফ্লিকার । ফেসবুক । 500 PX ।
হে হে হে ! আপনি যেটা কষ্ট করে বললেন, এটা কি ফাহমিদুল হক জানেন না মনে করেন?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম আর বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে স্বাধীনতার চেতনা নিয়া বেসিক কোনো পার্থক্য আছে বলে মনে হয় না। সামরিক ও জামায়াতিবাদী সরকারগুলোর সময়ে শিক্ষাব্যবস্থায় দুষণ ঢুকিয়ে মেধাহীন ছাগুপ্রজন্ম তৈরির চেষ্টা কম হয় নাই। কিন্তু এর ফলে যে ডিজ্যুস প্রোডাক্ট তৈরি হয়েছে, তা নিতান্তই সংঘ্যালঘু। আমার ধারণা ছাগুদের সংখ্যালঘিষ্ঠতা নিয়ে জামায়াত-সামরিকদের কোনো প্রস্তুতি ছিলো না। বিনপি-জামায়াত আর এরপরের তত্ত্ব সরকারের সময় তাদের আত্মবিশ্বাস এতো চরমে ছিলো যে, প্রকাশ্যেই ছাগুনেতারা মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে বাজে মন্তব্য করা শুরু করে। তাদের ক্যালকুলেশন ভুল ছিলো। এ কারণেই আওয়ামী লীগ দেশের উন্নয়নে কোনো ভূমিকা না রেখেও বিপুল ভোটে ক্ষমতায় এসেছে।
এখন যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় এদের পিঠ একদম দেয়ালে ঠেকে গেছে। আওয়ামী লীগের নিজের অস্তিত্বের জন্যই যুদ্ধাপরাধীর বিচার ফরজ। এই বিচারটা সুষ্ঠুভাবে হলে ছাগুদের মেরুদন্ড ভেঙ্গে পড়বে। তাদের রাজনীতি নিষিদ্ধ হবে এবং সে অবস্থা থেকে ব্যাক করা অন্তত নিকট ভবিষ্যতে সম্ভব হবে না। উপায় একটাই নতুন প্রজন্মকে পুরাতন প্রজন্ম থেকে আলাদা করা, এরপর ৩০ মিনিটের কাঁপাকাপি, ১৮০ ডিগ্রি অ্যাঙ্গেলে ইতিহাসের শিক্ষা এগুলো খুবই দরকার। নতুন প্রজন্মকে বিভ্রান্ত করার বাজেট এখন নিশ্চিতভাবেই বেশি হবে। রুবাইয়াৎরা টাকা পাবে, উত্তরাধুনিকদের পেমেন্ট বাড়বে এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
সিরাতুল মুস্তাকিমই সবকিছুর সমাধান। যখনই সহজ জিনিসকে কঠিন করে ফেলার চেষ্টা করা হবে, তখনই গদাম।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
আমার একটা প্রশ্ন আছে। মেহেরজানকে নিয়ে ছিঃনেমা হচ্ছে, তার যোগাড়যন্ত্র হচ্ছে। বাংলাদেশ থেকে খায়রুল আলম সবুজরা অভিনয়ে আছেন, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণীর সঙ্গে পরিচালকের যোগাযোগ হচ্ছে, তিনি তার ভাষ্কর্য ব্যবহার করতে দিচ্ছেন, কোলকাতা থেকে কুশলী আনা হচ্ছ...ে, বোম্বে থেকে জয়া ভাদুড়ীকে আনা হচ্ছে--এরকম একটি কাণ্ডকারখানাতো লুকিয়ে চুরিয়ে হয় নাই। ভেতরের খবর জানার মতো লোকজনও তাদের সঙ্গে ছিল। কিন্তু কি করে ছবিটা হল, সেন্সরবোর্ডে গেল--পাস পেয়ে হলে ঝুলল, পত্রিকায় কভারেজ পেল--আম জনতা হলে যাওয়ার আগে টেরই পেল না। এটা কি করে সম্ভব হল?
খায়রুল আলম সবুজ, ফেরদৌসী ভাষিণীরা কি কোনো খোজখবর না নিযেই মুক্তি যুদ্ধের আওয়াজ শুনে নীরবে নিভৃতে তাদের কাজ করে গেলেন--কোনো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিলেন না--ঘটনাটি কি?
আর পরিচালিকার বাপে আবুল হোসেনের এ ব্যাপারে বক্তব্য কি? নাকি উনিও জামাতি এজেন্ডা নিয়ে আওয়ামী লীগে আছেন? তার বিষয়ে আওয়ামী লীগের অবস্থানইবা কি?
...............................................................................................
'এই পথ হ্রস্ব মনে হয় যদিও সুদূর'
প্রথম পক্ষ আমার ধারনা সম্পুর্ন ধারনা না নিয়েই কাজগুলো করছে। ফেরদৌসি প্রিয়ভাষিনি পরে নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছেন। খায়রুল আলম সবুজের কথা জানিনা। আর আবুলরে জিগায় এইরকম ঘাড়ে গর্দানে সাংবাদিক বাংলাদেশে জন্মায় নাই। সবারই ঘাড়ে একটা মাথা।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এই সিনেমার বিরোধীতার সাথে ইসলাম বিরোধীতার সম্পর্ক যে উনারা কী করে খুঁজে পাচ্ছেন, এটা একটা রহস্য
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
ফাকমিদুলের লেখায় দেখবেন, সিনেমার অন্যতম দুইটা দুর্বলতা (মুক্তিযুদ্ধের আবহনির্মাণে ব্যর্থতা আর মুক্তিযোদ্ধাতে নেতিবাচক ও পাকিসেনাকে ইতিবাচক ভূমিকায় চিত্রায়ন) নিয়ে সে কিছুই বলে নাই। যেহেতু এই সিনেমার প্রতিরোধে যারা নেমেছে, তাদের রাজনৈতিকায়ন করে কোণঠাসা করতে পারলে কিছু সুবিধা হয়, অতএব ব্যাপারটাকে "বাঙালি বনাম মুসলমান", "এই জেনারেশন বনাম সেই জেনারেশন" ইত্যাদি ডাইকোটমির মধ্যে ফেলার একটা চান্স নিলো।
বেড়াল হাগে এক চিমটি, তার ওপর দশ খাবলা বালু ফেলে। ফাকমিদুলের লেখার দশ খাবলা অপ্রাসঙ্গিক বালু কিন্তু তার এক চিমটি গুকে চাপা দিতে পারেনি।
শুধু ফাহমিদুলের লেখায় না। সব লেখারই কম বেশি একই অবস্থা। ফারুক ওয়াসিফ, আসিফ সালেহ সবাই প্রেম আর প্রেম আর ধর্মের মাঝেই কচ্ছপের কামড় দিয়ে বসে রইলেন। মুক্তিযোদ্ধাকে এরকম অকর্মন্য বিয়ে পাগল যুবক বানিয়ে দেবার বিরুদ্ধে শক্ত কোন কথা বললেন না। আজব জিনিস একেকজন।
ফারুক ওয়াসিফ নিজেকে একজন নির্যাতিত বিপ্লবী ঘোষনা দিয়ে দিয়েছেন এই সুযোগে। সুমন রহমান সমানে নির্যাতনে ডরে না বীর জাতীয় স্বান্তনা দিয়ে যাচ্ছেন। রুবাইয়াত তাদের বন্ধুত্বকে আরো দীর্ঘায়িত করার প্রেরনা দিয়েছেন। বিপ্লব শব্দটাকে যে আর কত নীচে এরা নামাবে
-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস
বাংলার চে গুয়েবাড়া ফারুক ওয়াসিফ সারাজীবন ফরহাদ মগবাজারকে গালাগালি করে এসে এখন তার বউ কর্তৃক সহকারীপরিচালিত সিনেমার গুণগানমার্কা নোটে গিয়ে ফরহাদ মগবাজারকে ট্যাগ করে।
আমরা অপেক্ষায় আছি বাংলার গুয়েবাড়া ফারুক ওয়াসিফ, কবে আপনি ধর্ষণশতকী মানিকের সাথে আপনার ধর্ষিতা বোনদের রিকনসিলিয়েশনের জন্য জাহাঙ্গীরনগরে টেবিল পেতে বসবেন। বুদ্ধিজিগোলো দ্দীণূ আশা করি সেদিনও ডিকনস্ট্রাকশনের ফাটা পাখা দিয়ে আপনার ডিসকোর্সে বাতাস করবে। কার্ল মার্ক্সের লুঙ্গির নিচ থেকে এইভাবে মতিমার্কা ম্যাও হয়ে বের হলেন, আপনার ওপর ওয়াইল্ড লাইফ ডকুমেন্টারি বানানো উচিত।
লুঙ্গি বিপ্লবী ফরহাদ মজহার আর তার মুরিদদের টেক্সট পাঠ করেন আরো বেশি করে। দেখবেন সব পয়েন্ট একটার সাথে আরেকটা কানেক্টেড। অবশ্য সিনেমার মধ্যে মুখ না গুজে আশপাশ এভাবে দেখতে চেষ্টা করলে আসিফ সালেহ মাইন্ডাতে পারেন।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ডি/রিকনস্ট্রাকশনকে অস্বীকার করবেন না... এখন বদলে যাওয়ার যুগ সবকিছু বদলে দিতে হবে... মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকেও
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
মেহেরজান ইস্যুতে এবার কার্টুন যোগ হলো (গুড়) প্রথমে মনে হলো এইটা কি ব্যক্তিগত আক্রমন হলো? পরে এই প্রসঙ্গে একটা কথা মনে হলো যে আমরা রাষ্ট্রপ্রধান বা নামকরা লোকজনের কার্টুন আকি সেগুলো কি ব্যক্তিগত আক্রমনের পর্যায়ে ফেলা যায়? তারা আমাদের ব্লগ ফেইসবুকে এসে সেগুলোর বিরুদ্ধে এসে বিলা শুরু করলে তাদেরকে কী আদার ন্যারেটিভের কথা বলে চুপ করিয়ে দেয়া হবে নাকি কার্টুনশুদ্ধ লোপাট করে দিতে হবে সব?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
গত কিছুদিন ধরেই পত্রপত্রিকায় আর তার প্রতিক্রিয়ায় বিভিন্ন ব্লগে শব্দগুলো ঘনঘন পেতে পেতে কান ঝালাপালা। এগুলো ব্যবহার না করলে নাকি আবার উত্তরাধুনিক হওয়া যায় না। আমার মত গড় পাঠক, যারা উত্তরাধুনিক হওয়া তো দূরের কথা, আধুনিকের সংজ্ঞাতেই পড়ে না, তাদের কাছে এসবের অর্থ বোধগম্য তো নয়ই, উপরন্তু ভীতিকর। রুবাইয়াত হোসেন (নাকি সুমন রহমান?)-ফাহমিদুল হক-ফারুক ওয়াসিফ-নাইম মোহাইমিন প্রমুখের লেখায় এসব শব্দের পৌনঃপুনিক ব্যবহার দেখে ভাবার্থ করলাম এরকম (অ্যাম্ব্রোজ বিয়ার্স এই উত্তরাধুনিক যুগে জন্মালে ভাল হত, ডেভিল'স ডিকশনারি থেকে সরাসরি মেরে দিতাম):
গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ: দশজনের দেখা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা, যাকে সমাজের মন থেকে সরাতে না পারলে ভবিষ্যতের প্রজন্মকে ইতিহাসের সত্য থেকে টলানো যাবে না।
কাউন্টার ন্যারেটিভ: ডাহা মিথ্যে কথা, ক্রমাগত বলে গেলে যেটা অদূর ভবিষ্যতে একদিন সত্য বলে মনে হবে। ইতিহাসের নামে এই মল আগামী প্রজন্মকে গেলানো হবে।
ডিকনস্ট্রাকশন: ঘুরিয়ে পেঁচিয়ে সত্যকে মিথ্যে আর মিথ্যেকে সত্য বানানো।
ডিসকোর্স: ফালতু আলাপ, যার আড়ালে আসল কথাটা চাপা দিতে হবে।
রিকনসিলিয়েশন: খুন-ধর্ষণ আর আগুনে সর্বস্ব হারানো বাঙালিকে পাকিদের কাছে নিয়ে গিয়ে বলা, 'কিস্যু মনে কোরো না, উনি একাত্তরে দুষ্টুমি করে তোমার মাকে দিনে দশজন মিলে চুদতেন, তোমার মা যাতে আত্মহত্যার মত নাপাক পথে যেতে না পারে, সেজন্য সবসময় তাকে উলঙ্গ করে রাখতেন, চুল ছেঁটে দিতেন, এমন উপকারের জন্য এখন সবকিছু ভুলে বাপ ডেকে গ্যলে মে লাগ্ যাও।'
অপরায়ন: পাকিরা সবসময় ভাল, তারা ধর্ষণের সময়ও বিসমিল্লাহ বলে নেয়, বাঙালির ভালর জন্য গ্রামকে গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়, নিরীহ-নিরস্ত্র মানুষকে লাইনে দাঁড় করিয়ে গুলি করে মারে। আর বাঙালি খুব খারাপ, তারা বেহুদাই পাকিদের গাল দেয়, নেকবান ধর্ষক-খুনীদের যুদ্ধাপরাধী নাম দিয়ে প্রহসনের বিচার করতে চায়। বাঙালি পুরুষরা ভীতু ও কাপুরুষ, আর বাঙালি মেয়েরা পাকিদের ঠাপ খাওয়ার জন্য পাগল।
ইতিহাসের দায়: দশজনে জানে বাপ বাঙালি, কিন্তু আসলে তো অন্য এক খাস পাকিস্তানি। বাঙালিদের একাত্তর ভুলিয়ে দেওয়ার জন্য সম্ভাব্য সবকিছু করা পিতৃকর্তব্য ও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। তাছাড়া রাজাকারদের কাছ থেকেও পয়সা নেওয়া আছে যে, তাদের কাজ করে দিতে হবে না? সেই দায়ও তো মেটাতে হবে।
নিতান্তই গেরস্ত মানুষ, চারপাশে কেবল
শস্যের ঘ্রাণ পাই।
সতসাহসের অভাবে এরা এমনভাবে জিনিসপাতি উপস্থাপন করে যে পাবলিক শুরুতেই তব্ধা খেয়ে কিছু না বলতে পারে। হাতে ছাই মেখে এগুলোরে ধরা দরকার।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব রহমান এর লেখায় ECONOMIC & POLITICAL WEEKLY (ইপিডব্লিউ-ভারত)-এ প্রকাশিত আমার একটি আর্টিকল এর কথা এসেছে। এ ব্যাপারে কিছু জিনিস স্পষ্ট করতে চাই।
১.
আমার লেখার মূল শিরোনামে "civil war" বা গৃহযুদ্ধ কথাটি ছিল না। আমার অনুমতি ছাড়া ইপিডব্লিউ-এর সম্পাদক এটি জুড়ে দিয়েছিলেন। লেখা ছাপাবার পরই আমি এটার প্রতিবাদ করে একটি চিঠি পাঠাই যেটি তারা ছাপায় ইপিডব্লিউ-এর ফেব্রুয়ারি ০৯-১৫, ২০০৮ সংখ্যায় (ভলিউম ৪৩, সংখ্যা ০৬)।
এছাড়াও আমার প্রতিবাদ চিঠি ছাপাবার পর ইপিডব্লিউ তাদের সাইটে মূল লেখার শিরোনাম বদলে "1971 Genocide" লিখেছে | আপনি যেই পিডিএফ-এর লিঙ্ক দিয়েছেন, সেটি পুরনো সংস্করণ। ইপিডব্লিউ-র সাইটে নতুন সংস্করণটি আছে সঠিক শিরনামসহ। এখানে দেখুন- http://epw.in/epw/user/loginArticleError.jsp?hid_artid=11475
সেই চিঠিও http://epw.in এ আছে এবং তা নিচে প্রকাশ করলাম।
২.
যদিও লেখাটির শিরোনামে আমি "গৃহযুদ্ধ" কথাটি ব্যবহার করিনি, লেখার ভেতরে ব্যবহার করেছি (একই সাথে “একাত্তরের গণহত্যা”, “বাংলাদেশ গণহত্যা”, “স্বাধীনতা যুদ্ধ” ব্যবহার করেছি)।
লেখার ভেতরে "গৃহযুদ্ধ" কথাটি এই অর্থে ব্যবহার হয়েছিল যে ১৯৬৭-৭০ সময়টি যদি দেখেন তাহলে পাকিস্তান এর ভেতর অবস্থা ছিল গৃহযুদ্ধের মতই-- পূর্ব পাকিস্তান বনাম পশ্চিম পাকিস্তান, বাঙালি বনাম পাঞ্জাবি ক্ষমতা, বাঙালি বনাম উর্দু ভাষী মোহাজির, সিভিলিয়ান বনাম সেনাবাহিনী। পরবর্তিতে আমাদের ন্যায্য ১৯৭০ নির্বাচন ফল যখন ভুট্টো মেনে নিল না, তখন গৃহযুদ্ধ হয়ে গেল স্বাধীনতা যুদ্ধ। গৃহযুদ্ধ থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধে রুপান্তরের কথা বললে মুক্তিযুদ্ধকে খাটো করা হয় না।
৩.
তবে ভাষার একটা রাজনৈতিক ভূমিকা আছে এবং সেই রাজনীতি সারাক্ষণ বদলে যায়। আমার লেখাটি মূলত তৈরী করেছিলাম "প্রযুক্তি ও যুদ্ধ" নামের একটা বই এর জন্য, যুক্তরাষ্ট্রে। পরে বই-এর প্রকাশকরা ফোকাস বদলে ফেলে এবং লেখাটি বাদ পরে যায়। সেই সময় লেখাটি ইপিডব্লিউ-এ পাঠানো হয়। মূল লেখা তৈরী হয় ২০০৫ সালে, কিন্তু ইপিডব্লিউ তা ছাপায় ২০০৮ সালে (এবং ছাপাবার পরে আমাকে জানায়, আগে নয়)।
ইতিমধ্যে বাংলাদেশে একটি বড় রাজনৈতিক পরিবর্তন চলে আসে-- ২০০৭ সালের শেষের দিকে জামাত বা জামাতের কাছের কিছু বক্তা টেলিভিশনএ বলা শুরু করে যে "১৯৭১ ছিল দুই ভায়ের মধ্যে গৃহযুদ্ধ"। জামাত এর ভাষার তখন গৃহযুদ্ধের একটি রাজনৈতিক এবং আইনগত অর্থ দাড়ায় (বা তারা দাড়া করাতে চায়) যা ছিল স্বাধীনতা যুদ্ধকে "গৃহযুদ্ধ" বলে যুদ্ধাপরাধের পুরো বিষয়টি ঘোলাটে করা। আমি সবসময় জামাত এর রাজনীতির বিপক্ষে এবং সেকুলার রাজনীতির পক্ষে। আমি কখনোই চাইব না যে আমার ভাষা ব্যবহার হোক জামাতের এজেন্ডার জন্য। যদি ২০০৫ সালে জানতাম যে "গৃহযুদ্ধ" কথাটি জামাত ২০০৭ সালে এভাবে ব্যবহার করার চেষ্টা করবে, তাহলে আমি শব্দচয়নের ব্যাপারে অনেক বেশি সাবধান হতাম। সেটা থেকে আমিও শিখেছি। এই অভিজ্ঞতার পর সবসময় যেকোনো লেখার ব্যাপারে চেষ্টা করি সম্পাদক আমার লেখার কোনো "সম্পাদনা" করছে কিনা জানতে-- তার পরও সবসময় সম্ভব হয় না (যেমন, প্রথম আলো আমার একটি লেখা কেটে কুটে চাপিয়েছে ২০০৮ সালে, আমার অনুমতি ছাড়া)।
৪.
ডেইলি স্টারে প্রকাশিত আমার মেহেরজান বিষয়ক লেখা তে আমি ১৯৭১ সম্মন্ধে স্পষ্ট বলেছি--এটা "a genocidal war whose ferocious modes included sexual assault and rape" এবং "Two generations of Bhuttos have passed away without acknowledging the paterfamilias’ role in the genocide"।
৫.
১৯৭১ এর বিষয়ে আমার অবস্থান জানতে এই লেখাটিও পড়তে পারেন: 1971 War Crimes Act
নাঈম মোহাইমেন
কে বললো হয় না? "গৃহযুদ্ধ" শব্দটা উচ্চারণ করেই তো '৪৭ থেকে '৭১ পর্যন্ত সবকিছু ঘোলাটে করে দেয়া হয়। তাইলে এই পুরো সময়ের পাকিস্তানের অন্যায়-অনাচারের ফলস্বরূপ যে মুক্তিযুদ্ধ, তার শ্রদ্ধাষ্পদ আবেদন কোথায় থাকে?
আমি ধরে নিচ্ছি আপনি গৃহযুদ্ধের সংজ্ঞা জানেন। তো সেই সময়কালের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ (তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান) কবে, কখন অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে? যুদ্ধ তো একটাই হয়েছে পাকিস্তানের সাথে আমাদের। সেটা '৭১ এর মার্চ থেকে। তারপরেও পাকিস্তানিরা আক্রমন করার পর। এই যুদ্ধকে কোনো "গৃহযুদ্ধ'র রূপান্তর বইলেন না, ভুল করেও। প্লিজ।
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সালের মধ্যে পূর্ব পাকিস্তানের ঠিক কোথায়, কখন "গৃহযুদ্ধ পরিস্থিতি" ছিলো বলে আপনি মনে করেন? আপনার কথা পড়ে মনে হলো, সিলেটেও এখন এই মুহূর্তে একটা গৃহযুদ্ধ চলছে, কারণ সেখানেও সিলেটি বনাম নন-সিলেটি, লণ্ডনী বনাম লোকাল, সিলেটিভাষী আর বেঙ্গলিভাষী পরিস্থিতি বিরাজমান। একটু স্পষ্ট করুন প্লিজ।
প্রথম লাইন পড়ে জানলাম-১৯৬৭ থেকে ৭০পর্যন্ত 'গৃহযুদ্ধের মতই'অবস্থা ছিল ।
পরের লাইন পড়ে জানলাম-গৃহযুদ্ধ ছিল যা হয়ে গেল স্বাধীনতা যুদ্ধ ।
১৯৬৭-৭০ সময়কালে পাকিস্তানে গৃহযুদ্ধ ঘটে এর সপক্ষে দলিল প্রমান দিন ।
ধুগো ইতিমধ্যে বলেছেন , আমি শুধু এটুকু যোগ করি । ভুল তথ্য পরিবেশনের মাধ্যমে ইতিহাস বিকৃতি /ধর্ষণ ঘটে যার দায় লেখকের ।
নুরুজ্জামান মানিক
*******************************************
বলে এক আর করে আর এক যারা
তারাই প্রচণ্ড বাঁচা বেঁচে আছে দাপটে হরষে
এই প্রতারক কালে (মুজিব মেহদী)
একাত্তরের যুদ্ধ একেক জনের কাছে একেক ভাবে পরিচিত-- আমরা যেহেতু স্বাধীনতা ঘোষণা করেছি ২৬শে মার্চ, তাই এটি স্বাধীনতা যুদ্ধ। পাকিস্তান যেহেতু তখন আমাদের স্বীকৃতি দেয়নি, তাই তাদের কাছে এটি গৃহযুদ্ধ। নিজামীরা যেহেতু তাদের নাপাকভাইদের সাথে ছিল, তাই এটি তাদের কাছে "দুই-ভাইয়ের যুদ্ধ"। পশ্চিমা বিশ্বের কাছেও দীর্ঘদিন ধরেই এটি ছিল ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ। কারো কাছে এটি "গন্ডগোলের বছর", কারো কাছে এটি মুক্তিসংগ্রাম। ভিন্ন ভিন্ন গোত্রের কাছে ভিন্ন ভিন্ন ন্যারেটিভ থাকবে, এটাই স্বাভাবিক।
কিন্তু বাঙালি হিসেবে স্বাধীনতা নিয়ে আমার ন্যারেটিভতো একটাই-- তা হলো ২৬ মার্চ আমাদের স্বাধীনতা দিবস। ২৬ মার্চ থেকে পাকিস্তান আর বাংলাদেশ এক গৃহ ছিল না। এর আগে যখন গৃহ ছিল, তখন যুদ্ধ ছিল না। তাই একাত্তর আমাদের "স্বাধীনতা যুদ্ধ, মুক্তির সংগ্রাম"।
-----------
চর্যাপদ
নতুন মন্তব্য করুন