সম্প্রতি বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে তথ্যসচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন অনলাইন গণমাধ্যমগুলোর জন্য একটি নীতিমালা প্রনয়নের কথা জানিয়েছেন। নীতিমালার ড্রাফট কয়েকটি গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের হাতে দিয়ে জানানো হয়েছে তাদের মত নিয়ে এই নীতিমালা আগামী অক্টোবর থেকে কার্যকর হবে। [সূত্র ১]
এখনো পর্যন্ত প্রস্তাবিত এই নীতিমালাকে “অনলাইন গণমাধ্যম পরিচলালনা নীতিমালা ২০১২” নামে অভিহিত করা হয়েছে। আপাতদৃষ্টিতে ক্ষেত্র হিসেবে অনলাইনভিত্তিক সংবাদপত্র, টেলিভিশন ও বেতারকে এই নীতিমালার আওতায় আনা হয়েছে। এই নীতিমালা কমিউনিটি রেডিওর নীতিমালাকে ভিত্তি ধরে প্রস্তুত করা হয়েছে বলে জানানো হয়েছে। এই লেখাটি প্রস্তাবিত নীতিমালাটির একটি পর্যালোচনা হিসেবে ধরে নেয়া যেতে পারে।
নীতিমালাটিতে প্রথমত যে সমস্যার সম্মুখিন হতে হয় সেটা হলো “অনলাইন গণমাধ্যম” বলতে কী বোঝানো হয়েছে সেই ব্যাখ্যার অভাব। দেশে ২০০টির মতো অনলাইন সংবাদপত্র রয়েছে একথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এই ২০০টির মধ্যে কাগুজে পত্রিকাগুলোর অনলাইন সংস্করণ নেই এটাও পরিস্কার করা হয়েছে।
নীতিমালা অনুসারে সংক্ষেপে বলতে গেলে নতুন একটি গণমাধ্যম চালু করতে গেলে –
১. মালিক/উদ্যোক্তার কোন খেলাপি বা অপরাধমূলক কার্যক্রমের ইতিহাস থাকতে পারবে না, শিক্ষাগত যোগ্যতা, সাংবাদিকতায় অভিজ্ঞতা ইত্যাদি থাকতে হবে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রনালয়ের নিরাপত্তা ছাড়পত্র নিতে হবে। সরকার কর্তৃক লাইসেন্স ইস্যু হবার পর বিটিআরসি কর্তৃক ছাড়পত্র নিতে হবে।
২. এই লাইসেন্স নিতে আবেদনকারিকে এককালীন ৫ লক্ষ টাকা তথ্য মন্ত্রনালয়কে দিতে হবে। এই লাইসেন্স প্রতিবছর ৫০ হাজার টাকা দিয়ে নবায়ন করতে হবে। এছাড়া লাইসেন্স নেবার জন্য ২লক্ষ টাকা অতিরিক্ত জামানত হিসেবে জমা রাখতে হবে। এছাড়া পরিচালনাকারির ন্যূনতম ৫ লক্ষ টাকা এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে ২ লক্ষ টাকার ব্যাংক ব্যালেন্স থাকতে হবে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে শুধুমাত্র কাজ শুরু করার জন্যই সরকারকে উদ্যোক্তাকে(দের) প্রথম ৫ বছরের জন্য ১৬ লক্ষ (যোগ বিজ্ঞাপণের ২শতাংশ অর্থ) টাকা অবিনিয়োগযোগ্য অর্থ নিয়ে মাঠে নামতে হবে হবে। বাংলাদেশে এখনো পর্যন্ত অনলাইন গণমাধ্যম লাভজনক করে তোলার কোন কার্যকর মডেল নেই। এমতাবস্থায় এরকম বিপুল বিনিয়োগের চাহিদা গণমাধ্যমের প্রসারে বিঘ্ন সৃষ্টি করবে এটা বলাইবাহুল্য। মিডিয়াকে বড় পুঁজির মালিকদের হাতে রেখে দেয়াই এটার ফল হিসেবে দেখা দেবে।
এই নিয়ন্ত্রনের অতিরিক্ত আরোও একটি ধারায় বলা হয়েছে সকল অনলাইন গণমাধ্যম বাংলাদেশে স্থাপিত সার্ভারে হোস্টিং করতে হবে। এর অর্থ হলো কারিগরিক দিক থেকে গণমাধ্যমকে একটি সীমাবদ্ধতার মধ্যে নিয়ে আসা। উন্নত বিশ্বের অনেক সার্ভিস দেশিয় আইএসপিগুলো বা হোস্ট ম্যানেজারেরা দিতে পারেন না। গতি ও ইত্যাদি অনেক ইস্যুর কারণে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সাইটগুলো সাধারণত বিদেশে সেটাপ করা হয়। দেশের সার্ভার বাধ্যতামূলক করা হলে সেটা অনলাইন গণমাধ্যমকে ক্ষতিগ্রস্তই করবে। এছাড়া ভিডিও কন্টেন্টসহ সাইটগুলোকে পরিপূর্ণ ব্যান্ডউইডথ বাংলাদেশের আইএসপিগুলো সরবরাহ করতে পারবে কিনা এটা একটা প্রশ্ন।
কারিগরি দিকে সীমাবদ্ধতা থাকার পর কন্টেন্ট পাবলিশ করা বিষয়ে বেশ কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। পরিপূর্ণ তালিকা পড়তে আগ্রহী পাঠক এখানে চোখ বোলাতে পারেন। [সূত্র ২]
১. কোন অবস্থাতেই বিদেশী অনলাইন গণমাধ্যম সংবাদ, সংবাদ পর্যালোচনা, টক-শো; আলোচনা, সম্পাদকীয় এবং সমসাময়িক ঘটনাবলি নিয়ে অনুষ্ঠান ও মন্তব্য সরাসরি সম্প্রচার বা ধারণকৃত বা যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না। এমনকি অনলাইন গণমাধ্যমে অন্য কোন দেশি বা বিদেশী গণমাধ্যম লিংক করা যাবে না।
২. দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা, সার্বভোমত্ব বিরোধী প্রচার, হিংসাত্মক, সন্ত্রাস বিদ্বেষ ও অপরাধ সম্বলিত সংবাদ বা অনুষ্ঠান। দেশের কোন সম্প্রদায়, ধর্ম জাতী গোষ্ঠী সম্পর্কে মানহানিকর মন্তব্য প্রচার, নারী পুরুষ বৈষম্যকরণ ও শারীরিক অক্ষমতার ভিত্তিতে ঘৃণা বা মানহানি ঘটাতে পারে এরকম প্রচার। অশালীন বা আক্রমনাত্মক কোন রসিকতা প্রচার যা জনগণের নৈতিকতাকে কলুষিত, দুর্নীতিগ্রস্ত বা আহত করতে পারে।
৩. আদালত অবমাননা, বিচার বিভাগ, বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী বা বেসামরিক প্রশাসনের বিরুদ্ধে কুৎসা।
৪. মৌলিক সাংস্কৃতিক মূল্যবোধ ও সদাচরণ পরিপন্থী উপাদান রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান; বন্ধুপ্রতিম দেশসমূহের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়ে ক্ষতিকর কিছু রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান।
৫. পরিবার ও বৈবাহিক সম্প্রীতির পবিত্রতার বিরুদ্ধে কোনো কিছু রয়েছে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান। শিশুদের পিতা-মাতা বা মুরব্বীদের প্রতি অশ্রদ্ধাজনক কিছু রয়েছে এমন সংবাদ/অনুষ্ঠান।
৬. অনলাইন গণমাধ্যমে বাংলাভাষার, বিকৃতি ও শিক্ষা সংস্কৃতির পরিপন্থী অনুষ্ঠান প্রচার করা যাবে না।
উপরের বিপদ্জনক ধারাগুলোর অতিরিক্ত আরোও কয়েকটি ধোয়াটে ধারা রয়েছে যেগুলো এই নীতিমালার আওতা নীতিমালায় বর্ণিত ধারাগুলো ছাড়িয়ে অনেকদুর পর্যন্ত নিয়ে যেতে পারে।
১. স্থানীয় সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে সরকারের নীতিমালার প্রতিফলন থাকবে।
২. বাংলাদেশ দণ্ডবিধির অধীনে আমলযোগ্য কোনো অপরাধে উৎসাহ প্রদান, সাহায্য বা সহায়তা করে এমন কোনো সংবাদ/অনুষ্ঠান
৩. অন্য কোন আইন দ্বারা বারিত বা অসেন্সরকৃত কোন অশ্লীল অনুষ্ঠান
উপরের তিনটি ধারা মূলত: অনলাইন গণমাধ্যমে প্রযোজ্য আইনকে দন্ডবিধি ও অন্যান্য আইনের আওতায় নিয়ে আসে। কী কী আইনের আওতায় আসতে পারে সেটার জন্য কাগুজে সংবাদমাধ্যমে প্রযোজ্য বিশের অধিক আইনের তালিকা দেখা যেতে পারে। এই আইনগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য আইনগুলো হলো বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪, জননিরাপত্তা (বিশেষ বিধান) ২০০০, আদালত অবমাননা আইন ১৯২৬ ইত্যাদি। এছাড়া দন্ডবিধির ৫০০, ৫০১ ধারাও বলবত হবে যেটার অধিনে কাগুজে পত্রিকার সম্পাদকেরা নিয়মিত হয়রানিমূলকভাবে সারাব্ছর আদালতে হাজিরা দিয়ে থাকেন।
তো দেখা যাচ্ছে অনলাইন গণমাধ্যমের উদ্যোক্তা শ্রেনী সীমাবদ্ধ করে ফেলা, প্রকাশিত উপাদানের সঙ্কোচন ও নতুন নতুন নিয়মের বেড়াজালে অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালাকে বেধে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে নতুন এই নীতিমালা দিয়ে।
তো প্রশ্ন উঠতে পারে এই জাতীয় মুখ বন্ধ করা নীতিমালার বিরুদ্ধে কী করা যেতে পারে। এই নীতিমালার পোষাকে এই আইনের সব থেকে বড় ত্রুটি হলো আইন/নীতিমালা প্রণেতাদের ইন্টারনেট কীভাবে কাজ করে সেই সম্পর্কে ধারণা না থাকা। একটু আইটি/কমিউনিকেশন টেকনোলজি নিয়ে ধারণা রাখেন এরকম যেকেউই বুঝতে পারবেন কমিউনিটি রেডিওতে বলবত নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে রচিত এই নীতিমালাটিতে রেডিও সম্প্রচার প্রযুক্তি সংক্রান্ত বিষয়গুলোর ইন্টারনেট মিডিয়া সমার্থক শব্দ ব্যবহার করতে কপিপেস্ট আমলাদের ব্যর্থতা। ১১[ঞ] ধারা অনুযায়ী “অনলাইন গণমাধ্যমে অন্য কোন দেশি বা বিদেশী গণমাধ্যম লিংক করা যাবে না।” এই একটি ধারাই যথেষ্ট নীতিমালা রচয়িতাদের কাজের মান যাচাই করার।
দ্বিতীয় মারাত্মক ত্রুটি হিসেবে বলা যেতে পারে নীতিমালার প্রয়োগযোগ্যতার বিষয়টাকে। ইন্টারনেট সম্পর্কে যথেষ্ট জ্ঞান না থাকার কারণে রচয়িতারা এটা বুঝতে ব্যর্থ হয়েছেন যে ইন্টারনেটে আইন প্রয়োগ করতে গেলে পুরো সাইটকে বাংলাদশে হোস্ট করা থাকতে হবে এটা একটা অবাস্তব দাবি। বাইরের বিশ্বে প্রচলিত আইনে সাইটের জুরিসডিকশন নির্ধারণে দুটি বিষয়কে মূলত: ধর্তব্যে আনা হয়। প্রথমটি হলো সাইট কোথায় হোস্ট করা হয়েছে এবং সেই সাইটটি কোথা থেকে পরিচালনা (অপারেট) করা হয়। বাংলাদেশের সংবিধানে স্বীকৃত বৈধ অধিকার থেকে বাংলাদেশের যেকোন নাগরিক ব্যবসায়িক/অলাভজনক যেকোন বৈধ ব্যবসায় বিদেশে খুলতে পারে এবং সেটা সেখানে থেকে পরিচালনা করতে পারে। এই অধিকারবলে অনলাইন গণমাধ্যম উদ্যোক্তারা সহজেই বিদেশে একটি সার্ভারে তাদের সাইট হোস্ট করে সেখান থেকেই সাইট পরিচালনা করতে পারেন। সেক্ষেত্রে তারা বাংলাদেশের আইনের আওতা বা জুরিসডিকশনের বাইরে চলে যাবেন। সাইটটি তখন যেখানে হোস্ট করা হয়েছে সেখানকার আইন মেনে চলবে এবং ইউরোপিয়ান বা আমেরিকান আইন আলোচ্য নীতিমালার মতো বালখিল্য বা নীপিড়নমূলক হবে না সেটা বলাইবাহুল্য। সরকারের কাছে তখন দু'টি রাস্তা খোলা থাকবে, ১. সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাথে কোন চুক্তিতে আসা ২. দেশ থেকে সাইট ব্লক করে দেয়া। প্রথমটি অসম্ভব বিষয়। কোন দেশ বাংলাদেশের সাথে এধরণের কোন চুক্তিতে আসতে রাজি হবে না। দ্বিতীয়টিও দীর্ঘমেয়াদে ফলপ্রসু হবে না। ব্লক হওয়া গণমাধ্যমে জনগণ নানা পদ্ধতিতে ঢুকতে পারবেন এবং ব্লক হওয়া সাইট ইউআরএল পরিবর্তন করেও হাজির হতে পারবেন। তবে যেকোন অবস্থাতেই সরকার বাহাদুর সাইটের সাথে জড়িত বা অজড়িত কোন ব্যক্তি অথবা জজমিয়া খুঁজে বের করতে পারবেন এবং পাঠক-জানেন-আমি-কার-কথা-বলছি বাহিনী লেলিয়ে দিতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে কোন আইনের বালাই তাদেরকে করতে হবে না।
অনলাইন গণমাধ্যমের নীতিমালার বিভিন্ন ধারা বাংলাদেশে বলবত প্রাচীন আইনগুলোর ধারণাগুলো থেকে বের হতে পারেনি। প্রচলিত আইনগুলো মূলত: ব্যবহৃত হয় নীপিড়নের হাতিয়ার হিসেবে। নীপিড়নের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের জন্য অশ্লীলতা, সদাচারণ, মূল্যবোধ, মানহানি ইত্যাদি অস্পষ্ট বা সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই বা সংজ্ঞা থাকলেও প্রতিনিয়ত তা পরিবর্তন হয় এমন শব্দমালার ওপর ভর করা হয়।
অনলাইন গণমাধ্যমকে নির্দিষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত না করলেও তথ্য সচিব হেদায়তুল্লাহ আল মামুন নিশ্চিত করেছেন এই নীতিমালার উদ্দেশ্য সোশাল মিডিয়া বা ব্যক্তিগত ব্লগ নয় [সূত্র৩]। এ সত্ত্বেও আমরা বেশ কিছুদিন ধরেই বিভিন্ন গণমাধ্যমে ব্লগে বা সোশাল মিডিয়ার জন্য সাইবার আইন আসছে এরকম খবর দেখছি। [সূত্র ৪] অতএব, এই মুহুর্তে আমরা যারা সোশাল মিডিয়া, ব্লগে বিচরণ করি তাদের স্বস্তি পাবার কোন কারণ নেই। গণমাধ্যমের পরই আমরা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোর ওপর খড়গ নেমে আসবে এটা আশা করতে পারি। এসব করে আমাদের শুধু পেছন দিকে হাঁটাই হবে। এই প্রতিক্রিয়াশীলতার বিরুদ্ধে সকল পক্ষকে এখনই প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
সূত্র: ১
‘অনলাইন গণমাধ্যম নীতিমালা অক্টোবরে’
সূত্র: ২
প্রস্তাবিত অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতিমালা ২০১২
সূত্র: ৩
‘নীতিমালার উদ্দেশ্য সোশ্যাল মিডিয়া-ব্লগ নিয়ন্ত্রণ নয়’
সূত্র: ৪
সাইবার ক্রাইম ঠেকাতে নেমেছে বিটিআরসি
মন্তব্য
ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে দুর্দান্ত লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ।
এত ঝামেলা না করে সরাসরি ইন্টারনেট বন্ধ করে দিলেই তো হয়, ল্যাটা চুকে যায়! কারণ অনেক কর্তাই এখনো চামচেদের দিয়ে ইন্টারনেট ব্যবহার করায়। আমাদের ক্যাম্পাসে ৬ বছর আগে অল্প দামে ব্রড-ব্যান্ড সংযোগ দিতে চেয়েছিল একটা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক ছাত্রদের "চরিত্র-স্খলন হবে" - এই অজুহাতে সেটা হতে দেননি বি,এন,পি-জামায়াতপন্থী অধ্যক্ষ, তিনি বেশ বিখ্যাত এবং এখন ঢাকায় একটি বিখ্যাত প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ!
কিছুদিন আগে একটা উস্কানিমূলক ভিডিওর ছুতো ধরে ইউটিউব ব্যান করা হল। আফগানিস্তানের পর বাংলাদেশই এই প্রতিক্রিয়া দেখায়। এই প্রতিক্রিয়াশীল আচরণে প্রগতিশীলরা স্বভাবতই আওয়ামী লীগ সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ। কিন্তু এটাও সত্যি যে, ইউটিউব ব্যান করাতে খুশি হয়েছে, সেই সংখ্যাটাই যেন বেশি! কাজেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী কী ই বা করবেন!
;
ফেসবুক সহ বিভিন্ন সাইটে শিবির-প্রমুখ স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠনগুলো বন্ধুপ্রতীম ভারতের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত যুক্তি ছাড়াই অকথ্য গালি-গালাজ এবং কুৎসা ছড়াচ্ছে -সেসবকে ব্যান করার কোন উদ্যোগ কখনোই দেখলাম না!
বাকিগুলোকে কী করবে? ব্যান করে দেবে? বাহ!!
এই ব্যবস্থার কারণ কী? আমলাদের দুর্নীতির পর্দা যাতে বেফাঁস না হয় সেটা নিশ্চিত করা।
সবশেষে বলছি, এই সৎ ও প্রগতিশীল আন্দোলনের প্রতি থাকবে অকুণ্ঠ সমর্থন। এই প্রতিক্রিয়াশীলতা বন্ধ না হলে বাংলাদেশে গনতন্ত্র বিপন্ন হবে ইন্টারনেট নিরক্ষর কিছু আমলার কাছে।
নির্ঝর অলয়
আমার কাছে মনে হয় নীতিমালায় যা আছে তার থেকে ভয়ংকর বিষয় হলো নীতিমালায় যেই সব আইনের সাথে অনলাইন গণমাধ্যমকে জুড়ে দেয়া হলো সেইসব আইন। এসব আইন পুরো অনলাইন মাধ্যমকে আইনসম্মতভাবে নিপীড়নের জায়গা বানিয়ে দেবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এখন পর্যন্ত ৭৩টা লাইক, অথচ ১টা মাত্র কমেন্ট!!!
****************************************
প্রশ্ন হলো, এই সময়ে এই ধরনের নীতিমালা প্রণয়ন করার প্রয়োজন হলো কেন?
.............................................
আজকে ভোরের আলোয় উজ্জ্বল
এই জীবনের পদ্মপাতার জল - জীবনানন্দ দাশ
কারণ এগুলো এতোদিন তাদের অগোচরে ছিলো। এখন চোখের সামনে আসছে। তাদের দুয়েকটা নিউজ কর্তাদের বিপক্ষেও হয়তো গেছে। তো এখন তারা শেকল হাতে আগাচ্ছে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এই নীতিমালা নিয়ে ফেসবুকে নানা কানাঘুষা চলছে। অনেকেই এর পেছনে বিডিনিউজ২৪ ডট কমের মালিক তৌফিক ইমরোজ খালিদী ও তার প্রতিষ্ঠানের এক সম্পাদক (যিনি সংরক্ষিত মহিলা আসনে সাংসদও বটেন) বেবী মওদুদের হাত আছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করছেন। খালিদী অতীতেও এইরকম কাপাই পরানো আইনকানুন প্রবর্তনের পক্ষে কলম ধরেছিলো।
এইটা একটা সম্ভাবনা বটে। বিশেষ করে ১৬লাখ টাকা অনুৎপাদনশীল বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠিতদের প্রতিযোগী তৈরী না হতে সাহায্য করবে। তাদের এইসব শেকলবাকলে খুশি হবারই কথা।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
মাঝে মাঝে মনে হয় ইন্টারনেট যে এমন হবে আমলাতন্ত্র আগে টের পেলে ইমেইল এও স্ট্যাম্প বসানোর চেস্টা করত!
একটা আমলাতান্ত্রিক চেইনের কথা কল্পনা করা যায় /
সেন্ডার -> সরকারি আমলা যিনি মেইল পড়ে দেখবেন মেইলের বিষয়বস্তু আইনসঙ্গত কিনা -> তিনি সেটা পাস করবেন -
> রিসিভার সেটা পড়বেন।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বিনে পয়সায় একটা স্প্যামগার্ড পাওয়া যেত
****************************************
যেই করুক না কে দায় দায়িত্ব সরকারে ঘাড়ে পড়ে। অতিউতসাহি আইএসপি দেখভালও তাদের একটা কাজ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাংলাদেশের মতো জায়গায় কর্পোরেট মিডিয়া সরকারকে ক্ষেপিয়ে কিংবা সরকারের সরাসরি সমালোচনা করে টিকে থাকবে সেটা প্রায় অসম্ভব। সেদিক থেকে এসব নীতিমালার আসল উদ্দেশ্য যে ব্লগ তা বুঝতে সমস্যা হয়না। আমি কোনভাবেই বিশ্বাস করবো না যে ব্লগ এই নীতিমালার বাইরে থাকবে। শেষপর্যন্ত ব্লগ ঠেকাতেই যে এই উদ্যোগ সেটাই প্রমাণিত হবে বলে আশংকা করি।
ওরা যখন রেডিওর নীতিমালা কপি পেস্ট করে অনলাইন গণমাধ্যমের নীতিমালা বানাতে পারে তখন গণমাধ্যমের নীতিমালা ব্লগের ওপর চাপিয়ে দিতেই পারে তারা। নীতিনির্ধারকেরা যেহেতু ব্লগ পড়ে না সেহেতু এখানে বাদ/প্রতিবাদ কী হয় সেটাও তাদের আমলে নেবার দরকার নেই।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
চমৎকার বিশ্লেষণ।
হাসিব মাহমুদ যেভাবে ব্যাখ্যা করেছেন, এই আইনে প্রচুর অসঙ্গতি আছে (যেমন 'অনলাইন গণমাধ্যম পরিচালনা নীতি' তে অনলাইন গণমাধ্যমের ব্যাখ্যার অভাব)। কিছু কিছু ধারা ড্রাকনিয়ান হয়ে উঠতে পারে। তবে, প্রকৃতিপ্রেমিক যেমনটি বললেন...
অন্ততপক্ষে প্রিন্ট মিডিয়ার ক্ষেত্রে এই কথাটা একেবারেই মানতে পারলাম না।
নতুন মন্তব্য করুন