আকারে ছোট অর্থনীতি ও তুলনামূলকভাবে প্রভাবহীন দেশগুলোর একটা সমস্যা হলো এদের সবসময় প্রতিবেশী দেশ ও বিশ্বরাজনীতির মোড়লদের কথা হাসিমুখে শুনতে হয় হয়। বাংলাদেশও এরকম একটা একটা দেশ। আমরা বহুকিছুর জন্য বাইরের শক্তির কাছে নির্ভরশীল। বাংলাদেশে প্রভাব রাখে এরকম প্রতিবেশি দেশ হলো ভারত। ভারত পার হয়ে পাকিস্তান বীর্যসূত্রে দেশি কিছু দালালের ওপর প্রভাব রাখে। পাকিস্তানের ভাইবেরাদর মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েত সৌদি আরব বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভূমিকা রাখে। এদের বাইরে আছে স্যামকাগু অর্থাৎ বিশ্বমোড়ল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
বাংলাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক টানাপোড়েনের সময় এই বাইরের শক্তিগুলোর প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য প্রভাব রয়েছে। এই প্রভাব বিভিন্ন দরকষাকষিতে সুযোগ করে দেয়ার লোভ দেখিয়ে বা সরাসরি টাকাপয়সা দিয়ে হয়তো আদায় হয়। পাঠকদের মনে থাকার কথা ২০০৭ সালের জুন মাসে টিএফআই সেলে জিজ্ঞাসাবাদে চারদলীয় জোট সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর পাকিস্তানের কাছ থেকে বিএনপির ১০০ কোটি টাকা নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। বাবর স্বীকার করেছিলেন, বিএনপি নির্বাচনী তহবিলের জন্য পাকিস্তান, কুয়েত ও সৌদি আরবের কাছ থেকে ১০০ কোটি করে মোট ৩০০ কোটি টাকা নেয়। এই সময় পাকিস্তানের প্রাক্তন বিমানবাহিনী প্রধানের বরাতে আরো খবর বের হয় ১৯৯১ সালের নির্বাচনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই খালেদা জিয়াকে ৫কোটি রূপী দিয়েছিলো।
এই মুহুর্তে বাংলাদেশে নির্বাচন সামনে রেখে বেশ কিছুদিন ধরেই এইসব মুরুব্বী দেশগুলো ও তাদের দেশিয় তাবেদারকে হুঙ্কার ম্যাৎকার শোনা যাচ্ছে। এই কার্যক্রমে সবচেয়ে এগিয়ে বিশ্বমোড়ল মার্কিন দেশ। কদিন পরপরই বিভিন্ন রাজনীতিবিদ, বুদ্ধিজীবিদের সাথে মিটিং ভোজ ইত্যাদিতে এদের দেখা যায়। নিজের দেশের নড়বড়ে পরিস্থিতি থাকলেও এদেশে রাজনীতিবিদেরা কীভাবে কী করবে সেবিষয়ে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা নিয়মিত বিরতিতে বিবৃতি দেন। সম্প্রতি রাজধানী ঢাকা ছেড়ে তার এই তৎপরতা দিল্লী গিয়ে পৌঁছেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের সম্পর্ক কীরকম হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করতে তিনি দিল্লী পর্যন্ত ঘুরে এসেছেন। এই সফরের আগে তিনি ঢাকায় ভারতের রাষ্ট্রদূত পঙ্কজ শরণের সাথে বৈঠক করেছেন। বৈঠকের বিষয়বস্তু বাংলাদেশ ভারত সম্পর্ক! (১) একটা তৃতীয় দেশ কেন অন্য দুটো দেশের মধ্যকার সম্পর্ক নিয়ে উৎসাহি হবে সেটা সহজে বোধগম্য না। তৃতীয় দেশটা যেহেতু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেহেতু ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে এই আগ্রহ কৌতুহলোদ্দীপক। এই আলাপের পরপর মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা ভারত সফর করেন। খবরে প্রকাশ এই সফর কোন আমন্ত্রন থেকে নয়, বরঞ্চ নিজ উদ্যোগেই মজিনা ভারত সফর করেন। এখানে স্মরণ রাখা ভালো ভারত ও বাংলাদেশের বর্তমান সরকার এই মুহুর্তে সাম্প্রতিককালের সর্বাপেক্ষা সুসম্পর্কের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশে ভারতের জন্য কোন ঝামেলা না তৈরি হওয়া, পারস্পরিক সম্পর্ক বিভিন্ন চুক্তির মধ্য দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া ইত্যাদির জন্য বর্তমান আওয়ামী সরকার ভারতের গুডবুকে আছে এটা বলাইবাহুল্য। এহেন অবস্থায় মজিনা কী আলোচনা করতে ভারত সফর করলেন সেটা জানার আগ্রহ তৈরি হওয়াটা স্বাভাবিক। বৈঠকের পরে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়েছে দুই দেশই বাংলাদেশে একটি শান্তিপূর্ণ অবস্থা দেখতে চায়। তো সেখানে যেটা বলা হয়নি সেটা হলো কী কী বিষয়ে ড্যান মজিনার সাথে ভারত সরকার একমত হয়নি।
দুই পক্ষের এই দ্বিমত সম্পর্কে আভাস পাওয়া যায় বিডিনিউজে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন। (২) সেখানে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্ননালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তাদের বরাতে বলা হয় মজিনা ও ভারতীয় পক্ষের বৈঠক বিষয়ে প্রতিবেদনগুলোতে "এসব প্রতিবেদনে সঠিক তথ্য আসেনি।” বিডিনিউজ জানাচ্ছে,
বাংলাদেশের চলমান রাজনৈতিক সংকটের ব্যাপারে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান ‘এক নয়’ বলে জানিয়েছেন প্রতিবেশী দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
প্রশ্ন হলো ঠিক কোন বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত একমত নয়। বিডিনিউজের প্রতিবেদনে এই বিষয়টি নির্দিষ্ট করা হয়নি। তবে প্রতিবেদনটা আরেকটু ভালো করে পড়ে বিচ্ছিন্ন বক্তব্যগুলো একত্র করলে কিছু ক্লু পাওয়া যায়। বিডিনিউজের সোর্স যা বলেছেন সেটা একটু গুছিয়ে একত্র করলে চলমান রাজনীতি বিষয়ে তিনটি স্টেটমেন্ট পাওয়া যায়।
১. আমরা বাংলাদেশে যে কোনো ধরনের বিদেশি হস্তক্ষেপের বিপক্ষে। আমরা চাই, সব পক্ষের অংশগ্রহণে একটি শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মানুষ নিজেদের ভবিষ্যৎ নিজেরাই ঠিক করুক। বাংলাদেশের আসন্ন সংসদ নির্বাচন কীভাবে হবে- বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোই সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
২. “ঢাকায় যারাই ক্ষমতায় আসুক না কেন, প্রতিবেশী হিসেবে ভবিষ্যতেও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অব্যাহত রাখবে বলেই আমরা আশা করি।”
৩. যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিষয়ে কী ভূমিকা নেবে তা একান্তই তাদের ব্যাপার। তবে ভারতও একই পথে আছে- এমন বলাটা হবে ‘অন্যায্য’। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) যদি কারো পক্ষ নিতে বা কাউকে সমর্থন করতে চায়- সেটা তাদের ব্যাপার। তবে কেউ যদি বলে যে, আমরাও তাদের সঙ্গে আছি, তা হবে দুঃখজনক।
উপরের মন্তব্যগুলোর দ্বিতীয় পয়েন্টটিতে আন্দাজ করা যায় ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র দুই পক্ষই একমত। কিন্তু ১ম ও ৩য় পয়েন্টটিতে বাংলাদেশে বিদেশী হস্তক্ষেপ ও বাংলাদেশের কোন দলকে সমর্থনের প্রসঙ্গ এসেছে। ১ম পয়েন্টটি মূলত গড়পড়তা কূটনৈতিক কথা যেটা সবাই বলে থাকে। ভারত বা যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের প্রয়োজনে বাংলাদেশে প্রভাব রাখার চেষ্টা করবে এটা বলাবাহুল্য এগুলো কখনোই তারা স্বীকার করবে না। বাকি থাকে তৃতীয় পয়েন্ট। এই তৃতীয় পয়েন্টে ভারত সুস্পষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্র যাদের সমর্থন করবে ভারত তাদেরই সমর্থন করবে এই অনুমিতির বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট অবস্থান জানিয়েছে। এখন কথা হলো ঠিক কোন অবস্থায় এরকম অবস্থান জানানোর দরকার পড়ে? দরকার পড়ে তখনই যখন এক পক্ষ আরেকপক্ষের অবস্থান বিষয়ে ভিন্নমত পোষণ করে ও সেই অবস্থানটা জানানোর দরকার মনে করে। এই হিসেবে ভারতকে আওয়ামী লীগ সরকারের সমর্থক হিসেবে ধরলে এই ক্ষেত্রে তাহলে ধরে নেয়া যায় যুক্তরাষ্ট্র বিএনপি জামাত জোটের সমর্থক এবং ভারত সরকার এই সমর্থন প্রশ্নে যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাদের অবস্থান আলাদা এটা প্রকাশ করলো।
এদিকে কালের কণ্ঠ বলছে (৩) মার্কিনদূত ড্যান মজিনার দিল্লী থেকে বেইজিং যাবার পরিকল্পনা ছিলো। তবে এই পরিকল্পনা পরে বাতিল হয়। বাংলাদেশের রাজনৈতিক বিষয়ে সাধারণত বেইজিং মন্তব্য করে না। তবে সম্প্রতি এই ঐতিহ্য ভেঙ্গে তারা একটি বিবৃতি দিয়েছিলো। চীনা রাষ্ট্রদূত লি জুন আবার গত সপ্তাহে জরুরী তলবে দেশে গেছেন। এথেকে আন্দাজ করা যায় সম্ভবত চীন এখন থেকে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আবারো প্রত্যক্ষ ভূমিকা রাখতে শুরু করবে।
আমেরিকা বিএনপি জামাতের ধামা ধরবে এটা নতুন কিছু নয়। বাংলাদেশে সবসময় হাঁটু, মোল্লা ও ঞলিবারেলরা একত্রে হেঁটেছে। ভারত তাদের নিজেদের স্বার্থে এই মুহুর্তে এদের সাথে কাজ করতে চাইবে না। এখন ভারতের শত্রুপক্ষ চীন যদি মার্কিনিদের বিপক্ষে মত দিতে শুরু করে তাহলে অদুর ভবিষ্যতে বাংলাদেশ এক ত্রিমুখি রাজনৈতিক চাপের মধ্যে দিন কাটাতে শুরু করবে। এই চাপ সামাল দিতে পারবে যারা তারাই রাজনীতির মাঠে এগিয়ে থাকবে।
সূত্র
১. দিল্লি গেলেন মজিনা
ইমেজ লিংক
লিংক
২. বাংলাদেশ ঘিরে বাড়ছে ভারত-যুক্তরাষ্ট্র দূরত্ব
ইমেজ লিংক
লিংক
ইংরেজি ভার্সন লিংক
ইমেজ লিংক
৩. মজিনা এবার চীন সফরে যেতে পারেন
ইমেজ লিংক
লিংক
সংযোজন
১। ভারত যে ড্যান মজিনাকে দাওয়াত করেনি এই তথ্যের সূত্র সেখানকার দ্য ইকোনমিক টাইমস পত্রিকা। লিংক দেখতে এখানে ক্লিক করুন (ইমেইজ লিংক)। বিডিনিউজের এই খবরটাতে এটা নিশ্চিত করা হয়েছে। (ইমেজ লিংক)
২। বিডিনিউজ জানাচ্ছে চীন যাবার বদলে ড্যান মজিনা নিজ দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন। (ইমেজ লিংক)
৩। প্রথম আলোয় প্রকাশিত খবর (ইমেজ লিংক)
৪। 'বিদেশি কূটনীতিকদের বেশির ভাগই কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চললেও কেউ কেউ তা লঙ্ঘন করছেন।' পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ সময় মজীনার প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, 'বিদেশি এক কূটনীতিক সম্প্রতি ভারত সফর করেছেন। বাংলাদেশ নিয়ে উদ্বেগ থাকলে আমাদের সঙ্গে কথা বলাই প্রচলিত শিষ্টাচার। আমাদের দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও নির্বাচন নিয়ে বাইরে গিয়ে কথা বলাটা কূটনৈতিক শিষ্টাচারের লঙ্ঘন।'
পররাষ্ট্রমন্ত্রী অস্বস্তির কথা তুলে ধরে বলেন, 'ওই রাষ্ট্রদূতের (মজীনা) কাছে আমি জানতে চেয়েছিলাম, তিনি বেইজিং সফরে গিয়ে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জল্পনা-কল্পনার কথা শুনেছি। জবাবে তিনি আমাদের বলেছেন, তিনি বেইজিং সফরে যাচ্ছেন বলে যে খবর বেরিয়েছে, তা সত্য নয়। ভারত সফরে গিয়েছিলেন। কারণ, ভারত মহাসাগরের দেশগুলোর সঙ্গে তার দেশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে, অংশীদারি রয়েছে।' মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিয়ে কোনো উদ্বেগ থাকলে সেটা বাইরে গিয়ে বলাটা শিষ্টাচারের লঙ্ঘন।
সূত্রঃ সমকাল , ইমেজ লিংক
মন্তব্য
[ভারতের একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক] বলেন, “আমরা কোনো দলের মুখপাত্র নই, আবার কারো সঙ্গে আমাদের দূরত্বও নেই, যেমনটা অনেক দেশের থাকে। ১৯৭১ সালে কারা কোনো পক্ষে ছিল তা আমাদের সবার জানা।” -- এটাও ইন্টারেস্টিং
যদিও বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে হাস্যকর ভুল করছে তারা। ইংলিশটায় পাইলাম এমন --
“We are neither being the spokesperson for any party nor do we have luxury of distance as some countries do. We all know who was on which side in 1971.”
লিঙ্ক পোস্টে যোগ করে নিতে পারেন।
রাষ্ট্রায়াত্ত শিল্পের পূর্ণ বিকাশ ঘটুক
১৯৭১ প্রসঙ্গ আনা আরেকটা ইংগিত যে ইন্ডিয়া জামাত এ্যান্ড কোং-এর সাথে নেই। অন্যথা হলে তারা খালেদার মতো সবকিছু ভুলে সামনে আউগায়া যাবার কথা বলতো।
লিংক যোগ করে দিলাম।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
১। আমি ঠিক জানিনা এই লজ্জা আরো কতোকাল বইতে আমাদেরকে, অন্য দেশের কুটনীতিকরা এসে আমাদের রাজনীতির গতিপথ ঠিক করে দিবে আর কতকাল? যাদের কাজ দুই দেশের মাঝে কুটনৈতিক তৎপরতা বাড়ানো তারা এসে আমাদের রাজনৈতিক বিষয়ে নাক গলায়। দোষটা ওদের না, আমাদেরি। আমাদের রাষ্টদূতরা কি অন্যদেশের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে নাক গলাতে পারে কোনদিন? আকারে ছোট আর অর্থনৈতিক ভাবে দুর্বল বলেই বিদেশিরা আমাদের উপর নাক গলায় আমার এমনটা মনে হয় না। আমরাই তাদের কাছে ধণ্যা দেই, নালিশ করি, মাথা নথ করি, চাটুকারের মত পা চাটি। আমাদের মধ্যে যদি বিন্দুমাত্র রাজনৈতিক একতা থাকতো তাহলে ওরা সেই সুযোগ পেত না।
২। আমেরিকার এই রুপ নতুন নয়, ওরাই পৃথিবীতে ধর্মীয় উগ্রগোষ্ঠিদের প্রধাণ পৃষ্ঠপোষক। তাই বিএনপি জামাতের পক্ষে তারা কাজ করবে এটা বিস্ময়কর কিছু নয়। আর ভারত তাদের স্বার্থের ষোল আনা ওসুলের জন্যে আওয়ামিলীগকে সাপোর্ট দিবে পুরোনো নিয়মে। মাঝখানে আমরা এই নাটক-মহানাটক দেখে যাবো প্রতি ৫বছর পর পর। এভাবেইতো চলছে, আমি জানি এভাবেই চলবে আরো বহুকাল।
মাসুদ সজীব
১। হিসেব সহজ। যদ্দিন না পর্যন্ত বাইরের প্রভাব ঠেকানোর মতো অর্থনৈতিক শক্তি অর্জিত হচ্ছে ততোদিন এই জিনিস চলতে থাকবে।
২। এখানে যেটা করা যায় সেটা হলো ভারতের সাথে দরকষাকষি ঠিকমতো করা। হেজেমোনিক শক্তির চাইতে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক কাম্য।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
চীন ৭১এ পাকিস্তান–মার্কিন পক্ষে ছিল, এখন সে পক্ষ থেকে সরে আসবে বলে মনে হয় না। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে চীন যদি মার্কিন বিরোধী ভূমিকা নেয়, সেটা আমাদের জন্য ভাল হতে পারে। কিন্তু কথা হল, সম্প্রতি মার্কিনীদের সাথে বাংলাদেশের সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তি হয়েছে, যার ফলাফল সুদুর প্রসারি হতে পারে-পাকিস্তানের মত ঘাঁটি/ড্রোন হামলার লাইসেন্স কি আমরা দিয়ে দিয়েছি? চীনের সাথে আমাদের সম্পর্ক/লবিং জোরদার করা উচিত। কঠিন সময় সামনে আসছে।
চীন আমার ধারণা বাংলাদেশের রাজনীতিতে আরো ভূমিকা রাখবে। এটা হলে তারা চাইবে মার্কিন বিরোধী বা মার্কিন আদেশে ওঠবস করে না এরকম কাউকে তারা সমর্থন দেবে। সেটা ভারত হলেও তাদের আপত্তি হবে না মনে হয়। মার্কিন ইউরোপিয় প্রভাব বলয় থেকে বিশ্বব্যবস্থাকে বের করে আনতে ভারতকে তাদের পাশে দরকার।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
কিন্তু কথা হল, সম্প্রতি মার্কিনীদের সাথে বাংলাদেশের সন্ত্রাস বিরোধী চুক্তি হয়েছে, যার ফলাফল সুদুর প্রসারি হতে পারে-পাকিস্তানের মত ঘাঁটি/ড্রোন হামলার লাইসেন্স কি আমরা দিয়ে দিয়েছি?
বাংলাদেশে ঘাঁটি খোলাটা তাদের জন্য লাভজনক না। আর ড্রোন অপারেট করার মতো সংঘর্ষপূর্ণ অবস্থাও এই অঞ্চলে নেই। হাতের পাঁচ হিসেবে তারা বাণিজ্যিক সুবিধা পাবার জন্য ইউনূসকে লেলিয়ে দিয়ে বন্দর বিষয়ে একটা সুরাহা করতে চাইতে পারে।
আর সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তিতে কী আছে আমার জানা নেই। সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তি নানাধরণের হতে পারে। সামরিক বিনিময় বাদ দিয়ে শুধু তথ্য আদানপ্রদানের জন্যও সন্ত্রাসবিরোধী চুক্তি হতে পারে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
হাসিব ভাইয়া, এবার একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ যে ব্যাপারটা ঘটলো সেটা হচ্ছে- এর আগে আমি কখনো কোনো রাষ্ট্রদূতকে অন্য দেশে গিয়ে বাংলাদেশের রাজনৈতিক সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে দেখি নি। স্পষ্টত এটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিকের শিষ্টাচার বহির্ভূত আচরন। যেটা ইতোমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রী দিপু মনি বলেছেন। আমার প্রশ্ন হলো, কি এমন অবস্থা হয়েছে যে, আমেরিকার রাষ্ট্রদূতকে ভারতে যেতে হলো। ইন্টারেস্টিং ব্যাপারটা হচ্ছে, ভারত বলেই দিয়েছে - মজীনাকে তারা ইনভাইট করেন নি।
ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় থেকে আরেকটি কথা বলা হয়েছে- সীমান্তে সন্ত্রাস দমনে তারা বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের উপর খুবই খুশি (যদিও তিস্তার পানি বন্টনের চুক্তি না হওয়াটা এই খুশির সাথে যায় না), যদিও বাংলাদেশের নির্বাচনে কোনরুপ হস্তক্ষেপ করতে চায় না। --- আমি মনে করি, এই কথাটা বলারই এক বিশাল ইমপ্যাক্ট আছে।
চীনের ব্যাপারটি ঠিক বুঝতে পারছি না। ভারত বলেছে, ৭১ এ কে কোন পক্ষে ছিলো সেটা সবাই জানে। সেই হিসেবে কিন্তু চীন এবং আমেরিকার একই দিকে থাকার কথা, তাই না?
৭১ আর এখনকার পরিস্থিতি একরকম না। আমেরিকা আগের মতোই আছে। কিন্তু চীন আগের মতো নাই। এরা তখন বাংলাদেশে তাদের পোষ্য বাম দলগুলোকে দিয়ে কিছু করার চেষ্টা করতো। এখন তারা ওদের না পুছে সরাসরি প্রধান দুই দলের কাউকে বাছার চেষ্টা করবে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ঠিক্কথা
জনগণ। একমাত্র জনগণই চাপ সহ্য করতে পারে
চাপ খেতে খেতে গু বের হয়ে যাবে তবু বলবে জিন্দাবাদ
জনগণ মোটামুটি এক কিসিমের পুরো পিথিমীজুড়ে। তাদের যে ভালো বুঝ দিতে পারবে সেই টিকবে। কথা হৈলো জনগণ নিজে আসলে কিছু বোঝে না। তারে বুঝাইতে হয়।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এই বিষয়ে আমার ধারণাগুলো এরকম -
১) নিকট ভবিষ্যতে ভারত আওয়ামী পন্থী ও বি-এন-পি বিরোধী অবস্থান বজায় রাখবে। দূর ভবিষ্যতেও এর পরিবর্তনের খুব একটা সম্ভাবনা নেই।
২) নিকট ভবিষ্যতে আমেরিকা বি-এন-পি - জামাতের পক্ষে থাকবে। এইটা অবশ্য দূর ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে পারে। আমেরিকার পালটি খাবার রেকর্ড ভাল।
৩) চীনের সাথে ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখা বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে চিনের কোনো আইডিওলজিক্যাল ব্যাগেজ নেই। তারা ১৯৭১ নিয়েও চিন্তিত নয় আবার মৌলবাদ নিয়েও সমস্যায় নেই। সুতরাং বাংলাদেশে যেই ক্ষমতায় আসুক, তার সাথে চিন সুসম্পর্ক রাখবে। দূর ভবিষ্যতেও এর পরিবর্তন হবার সম্ভাবনা নেই।
৪) ইউরোপীয় ইউনিয়ন মূলত আমেরিকার দেখানো পথে চলবে।
৫) বাংলাদেশের ওপর ১,২,৩,৪ এর প্রভাব কমে আসবে। এদের মধ্যে ৩ ও ৪ এর প্রভাব ধীরে কমবে কারণ এরা বাণিজ্যে বড় অংশীদার থাকবে। ১ -এর সাথে বাণিজ্যে অংশীদারীত্ব বাড়বে কিন্তু অন্যান্য প্রভাব কমবে।
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমি পোস্টে ও উপরের কমেন্টগুলোতে এরকমই বলেছি। চীন আইডিওলোজিকাল কোন দায়দায়িত্বে যাবে না। তারা চীনপন্থী বামদেরও পুছবে না। তারা প্রধান দুই দলের কাউকে খুব টানবে তাও না। তাদের সম্পর্কের টানটা নির্ভর করবে কার আমলে তাদের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য ভালো হবে তার ওপর।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
৫) সম্পর্কে আপনার কি অভিমত? আরও কতকাল চলবে এইসব?
পথের দেবতা প্রসন্ন হাসিয়া বলেন, মূর্খ বালক, পথ তো আমার শেষ হয়নি তোমাদের গ্রামের বাঁশের বনে । পথ আমার চলে গেছে সামনে, সামনে, শুধুই সামনে...।
আমার ধারণা সুদুর ভবিষ্যতেও বিষয়টা একই রকম থাকবে। বাইরের প্রভাব ঠেকানোর একমাত্র উপায় হলো অর্থনৈতিকভাবে ভিষণরকমের শক্তিশালী হওয়া। এটা বাংলাদেশ রাতারাতি হতে পারবে না।
আর ২০/৩০ বছর পর ইউএসএ একক শক্তিশালী ব্লক হিসেবে থাকবে না। ব্রিক দেশগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী হয়ে যাবে এবং এরা মার্কিন প্রভাবে বাধা সৃষ্টি করতে চাইবে। রাশা ভারত এখনই মার্কিন কথায় শক্ত করে না বলা শুরু করে দিয়েছে। ক্ষমতা চর্চার জন্য বাংলাদেশ তাদের জন্য একটা ভালো প্লে গ্রাউন্ড হতেই পারে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নতুন মন্তব্য করুন