বিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে আক্রান্ত দেশ। এই বিশ্বকাপ জ্বর এমনই ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে যে দেশের অ-, নিম- ও জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয় কোনটাই হালে পানি পাচ্ছে না। ছবির হাঁট থেকে শুরু করে সর্বাধিক জনপ্রিয় ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানের শাস্তি সবগুলোই এক দুদিনের ফেইসবুক এ্যাক্টিভিজম (সাথে একটা দুটো মানববন্ধন) হালে পানি পাচ্ছে না। দুই একদিন পরই এরকম ইস্যুগুলো স্মৃতির অতলে হারাচ্ছে।
সকালে পত্রিকা পড়তে বসে গুরুত্বপূর্ণ একটা খবর দেখলাম। প্রবলভাবে রাজনৈতিক সচেতন আমার ফেইসবুক ফিড এই বিষয়ে বিষয় এখন টের পায়নি। বা পেলেও বিশ্বকাপ জ্বরে এগুলো দাগ ফেলেনি কারো মনে।
নিউজটা পেলাম প্রথম আলোতে। (ইমেজ ব্যাকআপ) সেখান থেকে জানছি রোহিঙ্গাদের সাথে বাংলাদেশিদের বিয়ে নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
হেডিং পড়ে ভাবলাম নিশ্চয়ই কোন পাতি আমলার কাজ এটা। কিন্তু না! এই সিদ্ধান্ত এসেছে সরকারের উচ্চ পর্যায় থেকে! আইনমন্ত্রী আনিসুল হক নিজে জানিয়েছেন এই সিদ্ধান্তের কথা। তিনি জানিয়েছেন,
রোহিঙ্গাদের বিবাহের বিষয়ে আজই আইন মন্ত্রণালয় থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হয়েছে। এই অনুযায়ী এখন থেকে যদি কোনো কাজি রোহিঙ্গাদের বিবাহ নিবন্ধন করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অর্থাৎ এ দেশে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বাংলাদেশিদের বিবাহ নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তাই নিবন্ধন হলেও সেটি অবৈধ হবে।
নিজেদের বর্ণবাদ আমাদের কখনো চোখে পড়ে না। আমরা ভিন্ন ধর্মের লোক ঘৃনা করি, আমরা অপেক্ষাকৃত গরীব লোকেদের ঘৃণা করি, আমরা পাশের জেলার লোকেদের ঘৃণা করি, চেহারা যাদের কালো তাদের সাথে প্রেম/বিয়ে করতে চাই না। রোহিঙ্গাদের বিয়ের ওপর নিষেধাজ্ঞা এরকই একটা ভিন্ন জাতির ওপর ঘৃণার বহিঃপ্রকাশ। রোহিঙ্গাদের দোষ কী? এরা বিতাড়িত জনগোষ্ঠি। এদের মধ্যে সুযোগসন্ধানী কয়েকজন বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়েছে। নিয়ে এই পরিচয় ব্যবহার করে কিছু অপরাধ করেছে। রোহিঙ্গারা এই সুযোগটা পায় আইন শৃংখলা বাহিনী এবং সরকারি আমলাদের ব্যর্থতার জন্য। এদেশে এখনও পর্যন্ত একটা দুর্নীতিমুক্ত পাসপোর্ট ইত্যাদি সিস্টেম গড়ে তুলতে না পারার দায়িত্বটা তাদের নিতে হবে।
দুই জনগোষ্ঠির দুইজন মানুষ নিজেদের সম্মতি ও বোঝাপড়ায় বিয়ে করতে পারবে এটাই সভ্য দেশের আইন হওয়া উচিত। এখানে কোন জনগোষ্ঠির লোকেরা কোন জাতির, কোন দেশের এসব প্রসঙ্গ সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক। বাংলাদেশের নাগরিকেরা যেমন পশ্চিমা (মিডলইস্টও পশ্চিম, সেখানকার কথা বলছি না) দেশে গিয়ে বিয়ে করার সুযোগ পান, সেরকম ভিনদেশের কোন নাগরিক, সেটা যে দেশেরই হোক বাংলাদেশে এসে বাংলাদেশিদের বিয়ে করতে পারার অধিকার রাখবে এটাই আশা করা যায়।
বাংলাদেশের আইন বর্বরতামুক্ত হোক।
মন্তব্য
বাংলাদেশের আইন বর্বরতামুক্ত হোক।
btw: মিডল-ইস্টে কি বাংলাদেশীরা বিয়ে করার সুযোগ পায় না?
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমি জানি না আবার সেখানে এটা বাঁধামুক্তভাবে করা যায় সেই বিষয়েও আমি আস্থা রাখি না। এই কারণে পশ্চিম থেকে তাদের বাদ রাখলাম।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
চার স্তর বিশিষ্ট সামাজিক শ্রেণীবিন্যাসের কথা মনে আছে? ঐ যে,
১। King and male members of royal family
২। Clergymen
৩। Soldiers and Freemen
৪। Salves, Women and Children
মধ্যপ্রাচ্য চলে হচ্ছে এই বিন্যাস অনুযায়ী। জিনিসটা ইউনানী মুশরিকদের আবিষ্কার হলেও আরবরা তাদের পূর্বতন প্রভুদের এই ব্যবস্থাটাকে খুবই পছন্দ করে (শরিয়ত কী কইছে তা জাহান্নামে যাউক)। এই ব্যবস্থা অনুযায়ী বাংলাদেশী আদমরা হচ্ছে 'Salve'। তাদের সাথে দাসসুলভ ব্যবহারটাই করা হয়। তো দাসদের আবার বিয়েশাদী কী?
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
সৌদিতে কী হয় সেটা এখানে পাওয়া যাবে
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
অনেক দেশেই আইন আছে যে বিয়ে করলেও আপনি পাসপোর্ট পাবেন না, সেরকম আইন করলেও তো চলত। একেবারে বিয়েটাই আইন করে বন্ধ করে দেওয়াটা পুরোপুরি বর্বরতা ছাড়া আর কিছুই না।
মফিজ
বিয়ে করলে পাসপোর্ট পাওয়া উচিত এইটা আমার মত। আরেকটা জিনিস খেয়াল রাখা দরকার। আইন করলে সেটা করা দরকার সবার জন্য সমান। একটা নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠির বিরুদ্ধে আইন করাটা ন্যায্য না।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এই ধরনের একটা ব্যবস্থা কিন্তু মালয়েশিয়াতে আছে। সেখানে কোন বাংলাদেশী কোন মালয়ানকে বিয়ে করলে সাথে সাথে তাকে মালয়েশিয়া থেকে বহিষ্কার করা হবে। কিন্তু সেখানে বিয়ে অবৈধ হবে সেটা বলা হয়নি।
তৃতীয় ব্যক্তির মধ্যস্থতায় পড়ানো দুই জন প্রাপ্তবয়ষ্ক মুসলিম নারী-পুরুষের বিবাহ রেজিস্ট্রেশন হোক বা না হোক সেটা শরিয়তসম্মত। সরকার সেটাকে অবৈধ বললে তা শরিয়তের সাথে কন্ট্রাডিক্ট করবে। বিয়ে রেজিস্ট্রেশন না হলে তালাক, খোরপোষ ইত্যাদি ব্যাপারে সমস্যা হয়। কিন্তু কোন দম্পতিকে ঐ পর্যায়ে যেতে না হলে অথবা ভিসা সংক্রান্ত কোন ব্যাপার না থাকলে বিয়ের রেজিস্ট্রেশন তাদের গোটা জীবনে কোন কাজে লাগেনা।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
"বাংলাদেশের আইন বর্বরতামুক্ত হোক।"
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
বুঝলাম না, এটার আবার কি দরকার ছিল। কতজন রোহিঙ্গা, বাংলাদেশিকে বিয়ে করেছেন এরকম কোন তথ্য উপাত্ত কি আমাদের হাতে আছে?
১। বাংলাদেশের কোন নাগরিকের সাথে মায়ানমারের কোন নাগরিকের বিয়ে হতে পারবে না, এমন কোন আইন নেই।
২। বাংলাদেশের কোন নাগরিক যদি রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত না, কিন্তু মিয়ানমারের অধিবাসী কাউকে বিয়ে করে সেক্ষেত্রে বিধান কি?
৩। তাহলে এই আইনের ভিত্তি কি? আইন মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র কার ইচ্ছেয় তৈরি হয়?
৪।একজন কাজী মেয়ের সামনে বিয়ের আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা শুনে কণের থেকে 'কবুল' কথাটি শুনে নেন, খুব বেশি কথা বার্তা হয় না। বর বা কণে যদি নাম বদল করে বিয়ে করে ফেলে, কাজী বেচারার উপায় কি?
অদ্ভুত আইন!
আমাদের নিজেদের গিঁটে গিঁটে বর্ণবাদীতা আবার অন্যের এমন আচরণে ব্যথিত হই; কী স্ববিরোধিতা!
খবরটা আগেই পড়েছিলাম সমকাল কিংবা আমাদের সময়ে এবং সেখানে বেশ কিছু মানুষের আহ্লাদিত মন্তব্যও দেখেছি।
যেখানে পৃথিবীর প্রোগ্রেসিভ দেশ গুলো গে ম্যারেজ কে পর্যন্ত স্বীকৃতি দিচ্ছে। সেখানে আমাদের দেশ বিয়ে নিষিদ্ধের তালিকা বড় করে।
নিষিদ্ধ যদি করতেই হয় আগে পাকিস্তানের সাথে বিয়ের সম্বন্ধ নিষিদ্ধ করা দরকার ছিল না?
আমি জানি না এর পেছনের কারণগুলো কি হতে পারে। সরকারের কাছে কোন ব্যাখ্যা থাকতে পারে। সম্ভাবনার কথা ধরলে বলা যায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানোর জন্য এটা করা হতে পারে। রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে বিয়ে করে নাগরিকত্ব গ্রহন করছে এরকম সংবাদ শোনা গিয়েছিল। কক্সবাজার টেকনাফ অঞ্চলে এটা প্রায় স্বাভাবিক হয়ে গেছে। অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ব্যর্থ হয়ে এই পথ বেছে নেয়া হয়েছে হয়তো।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
আমি প্রথমে বিশ্বাস করতে পারি নাই কী ব্যাপার। ভেবেছি হয়তো ভুল পড়ছি কিছু। রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঠেকানো বা তাদের মাধ্যমে জঙ্গীবাদ ছড়ানো ভিন্ন ডোমেইনের সমস্যা। ওগুলো আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাজ। কিন্তু একদম জাতি উল্লেখ করে বিয়ে রহিত করা এই যুগে অবিশ্বাস্য।
আমি প্রথমে ভাবছিলাম এটা কোন পাতি আমলার বিচ্ছিন্ন বক্তব্য। পরে চোখ কচলে দেখি আইনমন্ত্রীর বক্তব্য এটা। আইনমন্ত্রী শব্দটাও দুইবার চেক করেছি। পুরো মন্ত্রী নাকি উপ, প্রতি ইত্যাদি মন্ত্রী? পরে ক্রসচেক করে বিশ্বাস করতে হলো।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
বাংলাদেশের আইন বর্বরতামুক্ত হোক।
ব্যক্তিগত বিষয়ে নাক গলানো, তা নিয়ে মতামত দিতে যাওয়ার মত অনধিকার চর্চা যারা করে তাদের সাধারণত আমরা এড়িয়ে চলি। কিন্তু রাষ্ট্র নিজেই যদি তাই শুরু করে তাহলে রাষ্ট্রকে এড়িয়ে কোথায় যাব? কে কাকে বিয়ে করবে, ভালবাসবে- সেটাও আইন দিয়ে বেধে দেওয়া হবে? কী ভয়ংকর!
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন