আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কন্যা, বিধবা পিসি, দাসী একুনে আমরা আটজনা।
লাট সায়েবের তিন ঠ্যাঙা কুত্তাটার পিছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচা হয়। এইবার দেখি, কি রকম আঁক শিখেছিস। বলতো দেখি, যদি একটা কুকুরের পেছনে মাসে পঁচাত্তর টাকা খরচ হয়, আর সে কুকুরের তিনটে ঠ্যাং হয় তবে ফি ঠ্যাঙের জন্য কত খরচ হয়?’
আমি ভয় করছিলুম পণ্ডিতমশাই একটা মারাত্মক রকমের আঁক কষতে দেবেন। আরাম বোধ করে তাড়াতাড়ি বললুম, 'আজ্ঞে, পঁচিশ টাকা।' পণ্ডিতমশাই বললেন, 'সাধু, সাধু!'
তারপর বললেন, ‘উত্তম প্রস্তাব। অপিচ আমি, ব্রাহ্মণী, বৃদ্ধা মাতা, তিন কন্যা, বিধবা পিসি, দাসী একুনে আটজন। আমাদের সকলের জীবন ধারণের জন্য আমি মাসে পাই পঁচিশ টাকা। এখন বল তো দেখি, তবে বুঝি তোর পেটে কত বিদ্যে, এই ব্রাহ্মণ পরিবার লাট সায়েবের কুকুরের ক'টা ঠ্যাঙের সমান?'
- পাদটীকা, সৈয়দ মুজতবা আলী
অনেক দিন আগের কথা। কয়েকজন লোক বাচ্চারাও খায় এরকম ঔষুধে ভেজাল মেশালেন। সেই ঔষুধ খেয়ে মারা গেল ৭৬ জন শিশু। কুড়ি বছরেরও বেশি আগে এই ৭৬ জনের বাইরে আরো কতোজন শিশু শারিরীক ক্ষতির স্বীকার হয়েছিলো সেটা জানা যায় না। ভেজাল মেশানোদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিলো তখন। সেই মামলা ২১ বছর পরে রায় পেয়েছে। সেখানে অপরাধী তিনজনকে ১০ বছর করে সাজা দেয়া হয়েছে।
পাদটীকা গল্পটির পন্ডিত মশায়ের মতো কিছু আঁক কষতে ইচ্ছে হলো। বাংলাদেশের কারাগারে নয় মাসে বছর হয়। অর্থাৎ নয় মাসে বছর হিসেবে ৭৬টি শিশু হত্যার আসামীরা পেয়েছেন ৯০ মাস বা ২৭০০ দিনের কারাদন্ড। মোট মারা গেছে ৭৬ জন শিশু। অতএব প্রতিটি শিশু হত্যার জন্য কারাদন্ড হয়েছে,
হন্তারক তিনজন গ্রেফতার হয়েছে কবে সেটা জানা যায়নি পত্রিকার খবর পড়ে। গণনার সুবিধার জন্য গ্রেফতারের সময় জানুয়ারি ১৯৯৪ ধরলে তারা জেলে এর মধ্যেই অনেক বেশি সাজা খেটে ফেলেছেন। তারা আগেই জামিনে বের হয়ে থাকলে ভিন্ন কথা।
বাংলাদেশের আইনে সাজা থেকে বেশি জেল খাটলে কী হয় সেটা জানা নেই। জানা থাকলে আরেকটি আঁক কষা যেত। তবে বেশি সাজা খাটলে আরোও বেশি সাজা হবে এরকম নিয়ম সম্ভবত নেই। অতএব এখন ৭৬ শিশুর খুনির জন্য আমাদের পুরস্কারের ডালা সাজাতেই বসতে হবে।
আপডেটঃ
যে খবরটি পড়ে ব্লগটি লেখা সেখানে ৭২ সংখ্যাটির উল্লেখ ছিলো। ভুল সংশোধন করে ৭৬ লেখা হলো।
মন্তব্য
এতো আগের খবর, কোন রেফারেন্স মনে পড়ছে না।
ভালো থাকুন হাসিব।
আপনার জন্য শুভকামনা।
-------------------------
কামরুজ্জামান পলাশ
এতো আগের কথা মনে না থাকলেও রিড ফার্মার কথা হয়তো করতে পারবেন। ১৯৯৯ সালে ২৫জন শিশুর মৃত্যু হয়েছিলো এদের ঔষুধ খেয়ে।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
যেটুকু বুঝা গেল, সমস্যাটা আসলে মামলা করা নিয়ে। ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন 'ঔষুধে ভেজাল মেশানোর' বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, যেটার সর্বোচ্চ শাস্তি ১০ বছরের কারাভোগ। একই সাথে এটা একটা মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধ (হত্যা)। কেউ সেই ধারায় মামলা করেনি। না পুলিশ, না ড্রাগ অ্যাডমিনিষ্ট্রেশন কিংবা তথাকথিত মানবাধিকার সংস্থা..., অথবা অন্য কেউ।
বা স্বতপ্রনোদিত হয়ে কোন আদালতও এদিকে নজর দিয়ে দেখেনি যে কোন অবিচার হচ্ছে কিনা।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
এইসব "আঁক কষা" ক্লান্তিকর।
---------------------------------------------------------
ভাঙে কতক হারায় কতক যা আছে মোর দামী
এমনি করে একে একে সর্বস্বান্ত আমি।
আরামদন্ডের আরাম আয়েশের পরিমাণ খুনির খুনের সংখ্যার সমানুপাতিক।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
নিজের চাকরির অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি বাংলাদেশে ঔষুধে ভেজাল কিংবা শতভাগ মান রক্ষা করা হয় না বড় ছোট কোন কোম্পনিতে। বছর দুয়েক আগেও দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্যান্সারের ঔষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করে দেখেছি কি করে একটা ওষুধের পটেন্সি(কার্যকারিতা) না থাকলেও সেটা বাজারে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ঔষুধের জীবন পেরিয়ে যাওয়ার পর শুধু কাভার আর তারিখটা পরিবর্তন করে আবার সেটা মার্কেটে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। আমার ডিপার্টমেন্ট (মাইক্রোবায়োলজি) থেকে ফেল করা প্রোডাক্টও বাজারে চলে গেছে। কিছু করার নেই, উপরের হর্তাকর্তাদের যখন বললাম, উত্তর দিলো ক্যান্সারের ঔষুধ খেয়ে কতটুকু কাজ করলো আর না করলো সেটা কে যাচাই করবে? সেইসব কর্তারা আবার হাজী! নামাজ পড়তে পড়তে কপালের দাগ তুলে ফেলেছে।
একজন মৃত্যুপথ যাত্রী জমি-জামা বিক্রিকরা ১০-১৫ হাজার টাকা দিয়ে একটা ইনজেকশান নিবে কিছু দিন বেশি বাঁচার জন্যে কিংবা সুস্থ হয়ে ওঠার জন্যে অথচ সেটি কোন কাজ-ই করবে না, এরচেয়ে বড় নির্মম প্রতারণা আর কি হতে পারে? সেটার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়েই সেখানকার চাকরিটা ছেড়ে দিতে হয়েছে! কিন্তু আমি জানি এটা কোন সমাধান নয়, আমি না করলেও আরো অনেকে তো আছে বিবেকের ঘরে তালা দিয়ে সেটা পাশ করিয়ে দেওয়ার এবং দিচ্ছে ও তাই।
যাদের এইসব দেখার কথা সেই ড্রাগ কর্মকর্তারা পুলিশ-সাম্বাদিকের চেয়ে আরো বড় দুর্নিতিবাজ। এটা শুধু এই সেক্টরে যারা কাজ করে তারাই ভালো জানে।বছরে একবার আসবে, মোটা অংকের একটা টাকা নিয়ে চলে যাবে। ভিতরে কতটুকু GMP মানা হচ্ছে, আদৌ হচ্ছে কিনা সেটা তারা কখনো দেখে না। এমনও কোম্পানিকে লাইসেন্স দিয়েছে যাদের নূন্যতম কোন মান রক্ষার বলাই নেই, একি রুমের ভিতর সব প্রোডাক্ট বানিয়ে ফেলছে এবং কোন রকম পরীক্ষা ছাড়া সেগুলো মার্কেটে যাচ্ছে। তিনশটা ফার্মাসি উটিক্যালসের মাঝে ১৫টা কোম্পানিও ১০০ভাগ GMP মেনে ঔষুধ তৈরি করে না। কিন্তু বিদেশে যখন সেই কোম্পানি ঔষুধ পাঠাচ্ছে তখন আবার মান একশতে একশ। কারণ বিদেশিরা ওদের ওখানে পরীক্ষা ছাড়া কোন ঔষুধ নেয় না। অথচ আমাদের দেশে একি ঔষুধ সস্তা আর ভেজাল কাঁচামাল দিয়ে তৈরি করে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এভাবেই চলছে, বাংলাদেশের মানুষের অভিযোজন ক্ষমতা অত্যাধিক, না হলে এত ভেজাল খেয়েও এতদিন বেঁচে থাকা বিস্ময়কর । ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর শাস্তি দেওয়ার চেয়েও তাই গুরুত্বপূর্ণ এই হঠকারিতা আর অবাধ দুর্নিতি বন্ধ করা। সেটা সম্ভব না হলে এমন ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
মাসুদ সজীব
আপনার অভিজ্ঞতা সম্বলিত মন্তব্যটা পড়ে রীতিমত শিউরে উঠলাম। এই ওষুধই গিলছি আমরা বছরের পর বছর? GMP নিয়ে সংক্ষেপে বলবেন একটু? আপনার অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বিস্তারিত পোষ্ট লেখা সম্ভব? মানুষের জানা দরকার কিভাবে ওষুধ কোম্পানীগুলো আমাদের এসব গেলাচ্ছে। মরার আগে অন্তত কারণটা জেনে মরুক।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
হা হা, মানুষ আতঁকে উঠবে সব সত্য জেনে গেলে। তারচেয়ে যে বিশ্বাস নিয়ে খাচ্ছে সেটাই খাক । হুম নিজের ক্ষুদ্র অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশে ঔষুধ উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রন সহ সার্বিক অবস্থা নিয়ে সিরিজ আকারে লেখার চিন্তা কালকে হাসিব ভাইয়ের পোষ্ট দেখে অনুভব করলাম। দেখি হয়তো লেখে ফেলবো শীঘ্রই।
মাসুদ সজীব
ভয়ানক অভিজ্ঞতার কাহিনী। বড় ধরণের তদন্তের দাবী রাখে!
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মোটামুটি, তবে ভালো দিক ও আছে। যেমন ধরেন ইনজেকটেবলে ১০০টা ব্যাচ প্রোডাক্ট করলে দেখা যাচ্ছে হয়তো একটা ব্যাচে মেজর কোন সমস্যা হচ্ছে, বেশিভাগ ক্ষেত্রে সেগুলোকে বাতিল করে দেওয়া হয় আর না হলে স্ট্রালাইজ করে ছেড়ে দিচ্ছে। অর্থাৎ ঔষুধের সবগুণাগুণ ধ্বংস করে দেওয়া হচ্ছে ফলে খেলে কোন ক্ষতিও হবে না আবার উপকার হবে না। আর এ কারনে ডাক্তারদের কে দেখা যায় কোম্পানি পরিবর্তন করে আরেকটু উপরের ডোজের ঔষুধ দিতে। আর তদন্ত সেটা কে করবে? ড্রাগ? ওরাইতো সব নষ্টের মূল। এ দেশে এসব কিছুই হবে না। এরশাদ কাগু তার প্রতিভার সাক্ষর রেখে গেছে ঔষুধ শিল্পে। নতুন কোম্পানিকে লাইসেন্স দিতে প্রধান কর্তা একজন সেনা অফিসার! যার ফার্মাসিউটিক্যালসের উপর নুন্যতম কোন অভিজ্ঞতা কিংবা পড়াশুনা থাকে না সে হয় প্রধান। এই যদি অবস্থা হয় তাহলে কাকে কি বলবেন?
মাসুদ সজীব
এ নিয়ে আলাদা করে বিস্তারিত লিখুন, প্লিজ।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
হিমু ভাই লেখবো আশা করছি
মাসুদ সজীব
আপনার লেখা পড়ার জন্য অপেক্ষায় থাকবো।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
হুমম... আইনটা আরও কঠোর হবে আশা করি।
[ তবে আমার কাছে প্রয়োগ শুরু হওয়াটাও অনেক কিছু, হাসিব ভাই
নাহলে, "আরে ধুর কিছু হয়না... ব্লা ব্লা... " বলতে বলতে কিছুই না হওয়াটাই গ্রহণযোগ্য হয়ে যায় ]
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
উপরে মাসুদ সজীবের মন্তব্য, এবং বর্তমানে খাদ্যে ইচ্ছামত ক্ষতিকর রাসায়নিক মেশানোর যে প্রকৃয়া এসবের প্রেক্ষিতে বলা যায় এই লঘুদন্ড এইধরনের অপরাধকে শুধু এনকারজেই করবে। দুঃখজনক।
নতুন মন্তব্য করুন