§
খবরে পড়লাম “বিশ্বকবির স্মৃতি ধ্বংস করে দিলো ‘রবীন্দ্রনাথ বিদ্যালয়’ কর্তৃপক্ষ!”। খবরটা যে করেছে সে ভালো রিপোর্ট করেছে। অনেকের বক্তব্য আছে সেখানে, সবগুলো সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে তুলে রাখি। বাঙ্গালি কোনকিছুই সংরক্ষণ করতে পারে না। পত্রিকার পাতার নিউজ বা বিশ্বকবির স্মৃতি কোনটাই বাঙ্গালির হাতে বেশীদিন টেকে না।
নওগাঁর রানীনগর উপজেলার রাতোয়াল গ্রামে ‘রবীন্দ্রনাথ উচ্চ বিদ্যালয়টির’ চারটি মাটির কক্ষ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই ভেঙে ফেলেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। জমিদারি দেখাশোনার জন্য ১৮৮৫ সালে কবিগুরু যখন এ এলাকায় এসেছিলেন তখন তার পৃষ্ঠপোষকতায় এই শ্রেণি কক্ষগুলো তৈরি হয়েছিল।এছাড়া কক্ষের টিনসহ অন্যান্য সরঞ্জাম বিক্রি করে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে স্কুলের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে। এখানে কবিগুরুর ব্যবহৃত ও স্মৃতি বিজড়িত অনেক আসবাবপত্র বর্তমানে অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য ইসরাফিল আলম ঐতিহ্যবাহী এই কক্ষগুলো সংস্কারের জন্য গত বছর টিআর প্রকল্পের দুই টন চাল অনুদান দেন। তারপরও তা সংস্কার না করে ভেঙে ফেলা হয়েছে।
ছবি বাংলাট্রিবিউনবর্তমান ব্যবস্থাপনা কমিটি ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে শিক্ষকদের বেতনভাতা বাবদ প্রায় দুই লাখ টাকা প্রদান ও শ্রেণিকক্ষে ২৪টি সিলিং ফ্যান লাগানোসহ অন্যান্য উন্নয়ন কাজের বিবরণ লিখে এলাকায় লিফলেট বিতরণ করছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এলাকার অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষক লিফলেটে এইসব ভুয়া কাজের কথা লিখে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত করেছেন।
জানা গেছে, ১৮৮৫ সালের শুরুর দিকে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া কালীগ্রাম পরগনার জমিদারি দেখাশুনার জন্য রাতোয়াল গ্রামে আসতেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, প্রজাদের জীবন-যাত্রার মান উন্নয়নে শিক্ষার প্রয়োজন। এই উপলব্ধি থেকেই সেই সময় কয়েকজন পণ্ডিতের সহায়তায় তার নামে আদর্শ এই বিদ্যাপীঠের পথচলা শুরু। সেই সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ম্যানেজার শ্যামানন্দ গুহ কালিগ্রাম পরগনার মূল জমিদারি (পতিসর স্টেট) দেখাশুনা করতেন এবং তার ছেলে নিত্যানন্দ গুহ (নিতাই বাবু) দেখাশুনা করতেন (সাবস্টেট) এই এলাকা। তাদের সার্বিক সহযোগিতায় রাতোয়াল গ্রামের আক্কাছ আলী পণ্ডিত, শমসের আলী আকন্দ, কফিল আলী আকন্দ এবং এরফান আলী আকন্দকে নিয়ে এই ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টির পথচলা শুরু হয়।
বিদ্যালয়টি তৎকালীন আজিজুল্লাহ আকন্দের বৈঠকখানায় শুরু হলেও পরবর্তীতে রবীন্দ্র স্টেটের নিজস্ব সম্পত্তির ওপর মাটির কয়েকটি ঘর তৈরি করে প্রাথমিকভাবে শিক্ষাদান শুরু হয়। তখন হেডপণ্ডিত হিসেবে রাতোয়াল গ্রামের আক্কাছ আলী পণ্ডিতের ওপর বিদ্যালয়টির দায়িত্ব দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আরও অনেকেই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বিদ্যালয়টি ১৯১৩ সালে একাডেমিক স্বীকৃতি লাভ করে। বিভিন্ন সময়ে বিদ্যালয়টি পরিদর্শন করেছেন ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং শান্তি নিকেতনের প্রতিনিধিরা। এছাড়াও দেশের মন্ত্রী, এমপি, সরকারি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রবীন্দ্র গবেষক, কবি, সাহিত্যিক ও প্রাবন্ধিকসহ নানা গুণীজনের বিভিন্ন সময়ে পা পড়েছে এ বিদ্যালয়ে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি কেসি মহিদুল আলম (নিলু চৌধুরী) অর্থ আত্মসাতের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, দীর্ঘদিনের পুরনো ও ঝুঁকিপূর্ণ পরিত্যক্ত মাটির কক্ষগুলো প্রতি বছর সংস্কার করা ব্যয়বহুল যা বিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে জোগান দেওয়া অসম্ভব। এই কক্ষগুলো সংস্কারের জন্য সরকারিভাবে কোনও অনুদান পাওয়া যায় না। তাই রেজুলেশনের মাধ্যমে ব্যবস্থাপনা কমিটি ও প্রধান শিক্ষকের সিদ্ধান্তক্রমে কক্ষগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে এবং এর এক অংশ প্রাচীর হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শুকবর আলী বলেন, এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তি ও ব্যবস্থাপনা কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে এই পরিত্যক্ত ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরাকীর্তি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এখানে বিশ্বকবির নামে মিলনায়তন তৈরি করা হবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা দুলাল আলম বলেন, বিশ্বকবির স্মৃতি বিজড়িত এই পুরাকীর্তি ভেঙে ফেলার বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না। তাকে কেউ কিছু জানাননি। তিনি বলেন, বিদ্যালয়ের ভবন ভেঙে ফেলা হবে কিনা সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগ। তিনি বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ‘তারা এই পুরাকীর্তি সংরক্ষণ করার অধিকার রাখেন কিন্তু ভেঙে ফেলার কোনও অধিকার রাখেন না। বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সভ্য জাতি কী বস্তু এই প্রশ্নের সমাধান না করেই জাতি হিসেবে আমরা এখনো পুরোপুরি সভ্য হতে পারিনি এটা জোর দিয়ে বলা সম্ভব। এর অনেকগুলো প্রমানের একটা হলো পুরনো কিছু সংরক্ষণ যে জরুরী সেটা বুঝতে না পারা। কয়েকদিন আগে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গন মাদ্রাসা ছাত্রদের কীর্তিতে ধ্বংস হয়েছে। এতোকিছু থাকতে সঙ্গীতাঙ্গন কেন মাদ্রাসা ছাত্রদের আক্রমনের শিকার হয় সেটা বুঝতে আইনস্টাইন হবার দরকার নেই। সঙ্গীতাঙ্গন ধ্বংসের ধর্মীয় কারণ পরিস্কার হলেও সাদা চোখে এই রবীন্দ্রস্মৃতি ধ্বংসযজ্ঞের ধর্মীয় কারণ এখনো পর্যন্ত জানা যায়নি। কিন্তু আসলেই কি এর পেছনে ধর্মীয় কোন কারণ নেই?
ছবিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় শান্তি বিলানো কতিপয় মর্দে মুজাহিদ, ইত্তেফাক।
অনেক আগে একটা বইতে পড়েছিলাম যশোর রোডের এপাশে বৃহদাকায় শতবর্ষী গাছগুলো নেই, কিন্তু সীমান্ত পার হলেই সেগুলোর দেখা মেলে। স্মৃতি সংরক্ষণে পশ্চিমবাংলার বাঙ্গালিরা আমার কাছে মনে হয় এপারের বাঙ্গালি থেকে আরেকটু ভালো পারফর্মেন্স দেখায়। এখন কথা হলো বাঙ্গালি জাতি সীমান্ত পার হলেই অন্য রকম আচরণ করবে কেন? ভাষাগত পার্থক্য মানা যায়, খাদ্যাভ্যাসের কথাও মানা যায়। কিন্তু পুরাকীর্তি সংরক্ষণের ধ্যানধারণায় পার্থক্য কেন হবে? অন্য একটা ইস্যুতে এই নিয়ে আলাপ করছিলাম এক অগ্রজের সাথে। তার মতে এটাতে একধরণের প্রচ্ছন্ন ধর্মীয় প্রভাব রয়েছে। এই ধর্মীয় প্রভাবটা সালাফিস্ট/ওয়াহাবি ডক্টরিনের। সালাফিস্টরা কখনো স্মৃতিবিজড়িত জিনিস সংরক্ষণ করে না। এ কারণে তারা খুব মিনিমালিস্ট কবর তৈরি করা, পুরনো কবর দর্শনার্থীদের আকর্ষণ তৈরি করলে সেটা ভেঙ্গে ফেলে। পুরনো মসজিদের আর্কিটেকচার রাখতেই হবে এরকম কোন মতে তারা বিশ্বাসী না। এখন কথা হলো সালাফিস্ট ডক্টরিন বাংলাদেশে তুলনামূলকভাবে নতুন।
ছবিঃ কিছুদিন আগে প্রয়াত সৌদি বাহশাহের মিনিমালিস্টিক নামফলকবিহীন কবর (এএফপি)
ফার্সি/সুফি প্রভাবিত বাঙ্গালির মুসলিম সমাজ পুরনো কবর যেগুলোর নমুনা সিলেট, চিটাগাঙ, খুলনাসহ দেশের বিভিন্নজায়গাতে আছে সেগুলো সংরক্ষণ করে এসেছে। এ সত্ত্বেও বাংলাদেশের বাঙ্গালিদের মধ্যে এই পুরাকীর্তি সংরক্ষণের স্বভাব গড়ে উঠলো না কেন? দ্বিতীয়ত, হিন্দুরা (সীমানার ওপারে যে সম্প্রদায়ের লোকেরা সংখ্যাগরিষ্ঠ) কী ধর্মীয় কারণে পুরনো জিনিস সংরক্ষণ করে? তারা তো পঞ্চভুতে লিন হয়ে যাবার ব্যাপারে বিশ্বাসী। এ সত্ত্বেও তাদের অধ্যুষিত অঞ্চলে পুরনো জিনিস বেশী কেন?
§
অধ্যাপক কায়কোবাদ বলেছেন “যারা গণিতে ভালো, তারা সবকিছুতেই ভালো”। আমার অভিজ্ঞতা অন্যরকম। আমি গণিতও পড়েছি, সমাজবিজ্ঞানও পড়েছি। গণিতজ্ঞরা সমাজবিজ্ঞানেও ভালো এরকম শক্ত কোন নজির নেই। গণিতজ্ঞরাও সমাজবিজ্ঞানের কিছু শাখায় কাজ করেন। সাধারণ মেথডলজি সম্পর্কিত জার্নালগুলোতে তাদের দেখা মেলে। গণিত সেখানে সিদ্ধান্ত গ্রহণে, অর্থাৎ কোন সত্য সেটা নির্ধারণে বা ঘুরিয়ে বললে জ্ঞান প্রতিষ্ঠায় মূল ভিত্তি। এই ধরণের চিন্তাভাবনা পজিটিভিস্ট বা ঞপজিটিভিস্টদের। পজিটিভিস্ট বা তার ডেরিভেটিভ চিন্তাভাবনাগুলো সমাজবিজ্ঞানে ছোট একটা অংশের কাছে গ্রহণীয়। সিংহভাগের কাছে গণিত কন্টকিত নয় এরকম মেথডলজি গ্রহণযোগ্য। সেসব জায়গাতে গিয়েও গণিতজ্ঞরা ভালো কিছু করে দেখিয়েছেন এরকম কনসিডারেবল এভিডেন্স আমার জানা নেই।
§
বাংলা ট্রিবিউন একটা খবর ছাপিয়েছে লক্ষাধিক আলেমের খুতবা বিষয়ে ফতোয়ায় আনসারুল্লাহ ক্ষুদ্ধ হয়েছে এরকম একটা ইস্যু নিয়ে। বাংলা ট্রিবিউন এমন কিছু তথ্য দিয়েছে যেখান থেকে কেউ গুগল করলে আনসারুল্লাহ বক্তব্য পেয়ে যাবে। বাংলা ট্রিবিউন খবরের মধ্যে এই তথ্যগুলো যোগ করে প্রকারান্তরে জঙ্গীদের বক্তব্য যাতে প্রচারিত হয় সেই ব্যবস্থাই করলো। এই চর্চা বন্ধ হোক। সাংবাদিকদের সুবুদ্ধি আসুক।
§
জাপানে নাকি সুদের হার নেগেটিভ করা হয়েছে। এই নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে নিউজ করেছে (অনুবাদ বলা উচিৎ) এনটিভি। সুদের হার ঋণাত্মক মানে হলো দিন যাবার সাথে সাথে ব্যাংকে জমা টাকার পরিমান কমবে। ব্যাংকে টাকা রাখলে সাধারণ ক্ষেত্রে টাকা বাড়ে বিষয়টা সেরকমও না। যেমন বাংলাদেশে যদি সেভিংস একাউন্টে বেসরকারি ব্যাংকগুলো ৪%এর মতো ইন্টারেস্ট দেয়। দেশে মুদ্রাস্ফিতী ৬%। এখন আপনি যদি মুদ্রাস্ফিতী বিবেচনায় না নিয়ে হিসেবে করেন তাহলে তাহলে ১০০টাকা ৫ বছর ব্যাংকে রাখলে সেটা হবে ১২২ টাকা। আর মুদ্রাস্ফিতী বিবেচনায় নিয়ে হিসেব করলে ৫ বছর পরে সুদসহ ১০০ টাকার ক্রয়মূল্য হবে ৮৯টাকা। এর মানে হলো দেশে বেসরকারি ব্যাংকগুলোতে সঞ্চয়ী হিসেবে টাকা জমা করলে সেটার মূল্য দিন দিন কমতে থাকে। অতএব বাংলাদেশে ব্যাংকে টাকা ফেলে রাখলে দুই একটা সরকারি স্কিমবাদে সবজায়গাতেই লস।
§
ছবিঃ ফ্লেভারওয়্যার
একটা ইন্টারেস্টিং নিউজ দেখলাম। নিউজটি একটি জরীপ নিয়ে। জরীপ করা হয়েছে ১৫২৪ রিভিউয়ার কর্মকর্তা ও ৭ টা মেজর পাবলিশিং হাউজকে নিয়ে। জরীপ অনুসারে প্রায় ৮০% লেখক শ্বেতাঙ্গ। যার মধ্যে ৭৮% নারী। এটা পশ্চিমা লেখকরা যারা (সম্ভবত) ইংরেজিতে লেখেন তাদের নিয়ে জরীপ। বাকী পৃথিবী এই জরীপের সাথে যোগ করলে কি একই রকম অবস্থা থাকবে? থাকবে না। তবে দীর্ঘমেয়াদে নারী লেখকদের সংখ্যা পুরুষ লেখকদের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় কিনা এই বিষয়টা নিয়ে আগ্রহ জারি থাকলো।
§
মানবাধিকারবারি প্রতিষ্ঠান এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল আবারো মুক্তিযোদ্ধাদের বিচারের দাবি করেছে। তাদের বক্তব্য,
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জোরালোভাবে বিশ্বাস করে, শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তানের মতো বাংলাদেশেও সংঘাতের সময় উভয় পক্ষেরই চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন ও আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় অপরাধ সংঘটনের জোরালো প্রমাণ রয়েছে। আমরা উভয় পক্ষকেই বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানাই।’
এমনেস্টির এই অবস্থান নতুন না। ছাগবহুল এই প্রতিষ্ঠান যেদিন টাকা সেদিকে ঢোকা নীতিতে চলে। এই আন্তর্জাতিক ক্রিমিনালেরা একা চলে না। এদের দেশীয় সহযোগীরা রয়েছে। রয়েছে এইসব সহযোগীদের সহযোগীরা। সবাইকেই চিনে রাখা দরকার।
§
ড. আরটুরো কাসাডেভাল একটা ইন্টারেস্টিং আর্টিকেল লিখেছেন। আর্টিকেলের শিরোনাম Put the “Ph” back in PhD”। আমি সুপ্রাচীন কালে বিজনেসের স্টুডেন্ট ছিলাম। বিজনেসের স্টুডেন্ট হিসেবে আমার সবসময় একটা অতৃপ্তি কাজ করতো। আমি এখন বুঝি ঐ অতৃপ্তিটা আসলে আমি যেটা পড়ি সেটার এপিসটেমোলজিকাল অবস্থান বিষয়ে আমার অসম্মতি। ড. আরটুরো কাসাডেভাল তিনটা পয়েন্টকে তার ফোকাস এরিয়া হিসেবে দেখছেন। পয়েন্ট তিনটি হলো ১. জ্ঞানতত্ত্ব (epistemology) ২. কোয়ানটিটেটিভ স্কিল ৩. এথিকস। আদর্শিকভাবে এই তিনটার মিশ্রনে PhDর Ph ফিরে আসতে পারে বলে মনে হয়। এর মধ্যে মাঝখানেরটা অবশ্যম্ভাবি না। কোয়ালিটেটিভ গবেষণা যথেষ্টই হয় এবং সেসব গবেষকেরা অংক না কষেই অনেক কিছু প্রতিষ্ঠা করতে পারন। কোয়ালিটেটিভ অংশটা ঐ তিনটা পয়েন্টে জুড়ে অন্তত কিছুটা রিকভার করা যাবে এরকমটা ধারণা করা যায়। জ্ঞানতাত্ত্বিক অবস্থানে মৌলবাদি নন এরকম পিএইচডি স্টুডেন্ট, পিএইচডি করতে ইচ্ছুক এবং পিএইচডি করে ফেলেছেন এরকম সবার জন্য আর্টিকেলটি রেকমেন্ড করছি। লিংক লেখার শেষে পাবেন।
§
দাবিক ম্যাগাজিন এখন থেকে বাংলায়ও প্রকাশিত হচ্ছে। আনসারুল্লাহ যেমন আল কায়েদার সাথে একত্রে মিডিয়া রিলিজগুলো করে সেরকমভাবে আইসিস এখনো তাদের মিডিয়া উইং সংগঠিত করতে পারেনি। এই কারণে সন্দেহ হয় যে দাবিকের ম্যাগাজিন বাংলায় যারা প্রকাশ করছে তারা আসলেই আইসিসের কেন্দ্রের সাথে যোগাযোগ রাখে নাকি তাদের আদর্শে বলিয়ান কেউ এসব প্রকাশ করে।
দাবিকের বাংলা ভার্সনের পিডিএফের কোয়ালিটি দেখে সেরকম মনে হলো কোরেল ড্র বা ইলাস্ট্রেটরের মূল ফাইলের উপর কাজ করে ইংরেজি টেক্সটের বদলে বাংলা টেক্সট বসানো হয়েছে। মূলের সাথে যোগাযোগ না থাকলে মূল ফাইল পাওয়া যেত না। এটা একটা প্রমান যে মূল আইসিসের সাথে দেশি আইসিসের (জেএমবি) যোগাযোগ রয়েছে।
§
স্টান্ডার্ড ব্যাংকে প্রশ্ন ফাঁসের গুজবে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। স্কুল কলেজ সমাপনী পরীক্ষাগুলোর পরীক্ষা ফাঁসের সমালোচনা করতে গিয়ে অনেকে এগুলোকে সরকারের ব্যর্থতা বলেন। আমি তাদের সাথে একমত। কোন সন্দেহ নেই যে সরকার আরও একটু সচেতন হলে এগুলো এড়ানো হয়তো যেত। তবে সেই সাথে আমি এটাকে সামাজিক ব্যর্থতা হিসেবেও দেখি। প্রশ্ন ফাঁসের সাথে প্রেসের কর্মচারী বা কোচিং সেন্টারই শুধু জড়িত এই কথা বললে আলোচনার একটা দিক পুরো হয় মাত্র। এই পুরো প্রক্রিয়ার সাথে অভিভাবক, স্কুলের শিক্ষক, নাবালক ছাত্র সবাইই জড়িত। এরা এই কাজকে নীতিগতভাবে কোন সমস্যা মনে করে না। এই সমস্যা মনে না করার কারণেই স্কুল কলেজ ডিঙ্গিয়ে ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস দেখতে হয়। অতএব, প্রশ্ন ফাঁস একটা সরকারের ব্যর্থতার সাথে একটা সামাজিক সমস্যারও নাম।
§
হোসনি দালান এলাকায় হামলার ঘটনায় দুইজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবাববন্দি দিয়েছে। রাজীব হায়দার হত্যা মামলায় গ্রেফতারকৃতরাও স্বীকারোক্তি দিয়েছিলো। আমার ধারণা ছিলো অপরাধী নিজে যেহেতু অপরাধ স্বীকার করেছে সেহেতু সর্বোচ্চ শাস্তি হবেই। পরে রায়ে দেখলাম বেশীরভাগ খুনিকে নামমাত্র শাস্তি দেয়া হয়েছে। প্রভাবশালী আত্মীয়টি ইতিমধ্যে হয়তো ছাড়াও পেয়ে গেছে। আইনজ্ঞ কিছু বন্ধুবান্ধবের কাছে পরে জানলাম স্বীকারোক্তি আদালতে শক্ত কোন প্রমান নয়। তাদের কথা ঠিক হলে হোসনি দালানের ঘটনায় স্বীকারোক্তিও উল্লেখযোগ্য কোন ঘটনা নয়। কেইসে হয়তো এসব কিছুই যোগ করবে না।
§
জঙ্গিনেত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তিযুদ্ধের শহীদের সংখ্যা নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন কয়েকদিন আগে। এই বিতর্কের রেশ ধরে জামাত-বিএনপির গয়েশ্বর, রিজভী কনসার্টেড এফোর্ট চালিয়ে যাচ্ছে। আমি সবসময় বলি যে বাংলাদেশে হওয়া ঘটনা-অঘটনগুলোর পেছনে তাত্ত্বিক ভিত্তি থাকে। এটা ৭১এ ছিলো, ৭৫এ ছিলো, ২০১৩তেও ছিলো। শাহবাগে ফ্যাসিবাদের পদধ্বনি হেডিংটা আকাশ থেকে মাহমুদুর রহমানের ঝামা ইট ভর্তি মাথায় পয়দা হয়নি। এর পেছনে তাত্ত্বিক ভিত্তি দাঁড় করিয়েছে ফরহাদ মযহার আর পিশাচ করিম। পিশাচ করিমের পঞ্চত্ব পাবার পর হাল ধরেছে পিশাচগিন্নী আমেনা মহসীন। এই আমেনা মহসীনই গয়েশ্বরের তালিকা কই দাবির কথা প্রথম তুলেছে।
স্বাধীনতার ইতিহাস বিকৃতি করার এই চক্রের আরে মাথা হলো বাংলাদেশের জ্ঞানীসমাজের নিকটজন কামাল উকিলেমের মেয়ে জামাই ডেভিড বার্গম্যান। ডেভিড বার্গম্যানের দেখভাল করতে আছে ৫০নসুর এক শক্ত দল। এর সাথে ওপারে আছেন শর্মিলা বসু। আজকে এমনেস্টি বা এইচআরডাব্লিউ যা বলে তার ম্যাটেরিয়াল এইসব লোকেদের হাত থেকেই আসে।
চলমান এই ঘটনা নিয়ে প্রফেসর জাফর ইকবাল একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। সেখানে তিনি এই ৫০ (মাইনাস ১) নসুর প্রসঙ্গ এনেছেন। সেখানে তিনি বলেছেন,
আমরা হঠাৎ আবিষ্কার করেছিলাম, এ দেশের কয়েক প্রজন্মকে আবার নতুন করে পাকিস্তানি মিলিটারি আর তাদের এদেশীয় অনুচরদের গণহত্যা, ধর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের কথা এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্ব আর অর্জনের ইতিহাস আবার নতুন করে বলতে হচ্ছে। এ ব্যাপারে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখার কথা; কিন্তু আমাদের খুবই দুর্ভাগ্য, এ দেশের সব বুদ্ধিজীবী সেই দায়িত্ব পালন করতে রাজি নন। 'নিরপেক্ষতা', 'বাক-স্বাধীনতা'_ এ রকম বড় বড় শব্দ ব্যবহার করে তারা মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত সত্যগুলোর মূল ধরে টানাটানি শুরু করেছেন।
ঠিক কী কারণ - জানা নেই সাদা চামড়ার প্রতি আমাদের দেশের অনেক বুদ্ধিজীবীর এক ধরনের দাসসুলভ আনুগত্য আছে। বছরখানেক আগে মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মানুষের সংখ্যা নিয়ে এক সাংবাদিকের উক্তির জন্য তাকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত শাস্তি দিয়েছিলেন, এ দেশে এ রকম কিংবা এর কাছাকাছি ঘটনা অনেকবার ঘটেছে; কিন্তু কখনোই আমাদের বুদ্ধিজীবীরা সেটা নিয়ে ব্যস্ত হননি। কিন্তু সম্ভবত এবারের মানুষটি সাদা চামড়া হওয়ার কারণে একজন নয়, দু'জন নয়; ৫০ জন বাংলাদেশি বুদ্ধিজীবী তার পেছনে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে গেলেন। তাদের অত্যন্ত সুলিখিত বক্তব্যের চাঁছাছোলা বাংলা অনুবাদ হচ্ছে - মুক্তিযুদ্ধে শহীদ মানুষের সংখ্যা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে একটা বিতর্ক তৈরি করার অধিকার দিতে হবে! এ বিষয়গুলো আমাকে আহত করে কিন্তু বাংলাদেশের স্বনামধন্য এত বুদ্ধিজীবীর বিবৃতিকে অস্বীকার করার সাধ্যি কার আছে?
এর পরের ঘটনাটি অবশ্য রীতিমতো কৌতুকের মতো। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল যখন এই বুদ্ধিজীবীদের তাদের বিবৃতিকে ব্যাখ্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন তখন হঠাৎ প্রায় সব বুদ্ধিজীবীর আদর্শ এবং অধিকারের জন্য বুক ফুলিয়ে সংগ্রাম করার সাহস উবে গেল এবং তারা বিনাশর্তে ক্ষমা প্রার্থনার জন্য রীতিমতো হুড়োহুড়ি শুরু করে দিলেন। এ দেশের যে বুদ্ধিজীবীরা এ রকম একটি বিষয়ে এমন কঠিন বিবৃতি দিয়ে চোখের পলকে নিজেদের পিঠ বাঁচানোর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা শুরু করে দেন, তাদের জন্য নিজের ভেতরে সম্মানবোধ বজায় রাখা খুব কঠিন।
এই লেখার জবাবে ৩৪তম নসু মুক্তাশ্রী চাকমা সাথী আবেগঘন ফন্টে ফেইসবুকে নিজেকে ডিফেন্ড করেছেন। টিপিকাল ছাগু এপোলজিস্টদের বক্তব্যের সাথে তার বক্তব্যের কোন পার্থক্য নেই। এতোদিনে তারা নতুন ক্রিয়েটিভ কিছু বের করতে পারলো এটা একটা আশ্চর্য বিষয়। কাঠাল পাতায় পুষ্টিগুন কম এই গুজব মনে হয় সত্য। এই জাতীয় এপলোজেটিক কথাবার্তায় ছাগুরা সবসময় তাদের বাবামাচাচাফুপুখালাখালুশশুরশাশুড়ি কত্তো কত্তো মুক্তিযুদ্ধ করেছেন সেটার বর্ণনা থাকে। সাথে থাকে উনি নিজে কোন পুকুরে বাঘ আর ছাগলকে একসাথে পানি খাইয়েছেন। আর শেষে থাকে আমি তার অমুক তমুক সমর্থন করি না কিন্তু তার এইটার সমর্থনে আমি দাঁড়াবো। পুরনো টেমপ্লেট। যথেষ্ট চেষ্টা পেছনে থাকলেও পাবলিক খাবে না।
সূত্র ও নোটঃ
১. ঢাকা ট্রিবিউন
২. প্রথম আলো
৩. লিংক দেয়া থেকে বিরত থাকা হলো।
৪. এনটিভি
৫. ফ্লেভারওয়্যার
৬. Put the Ph back in PhD
৭. স্টান্ডার্ড ব্যাংকের প্রশ্ন ফাঁস
৮. হোসনি দালান স্বীকারোক্তি
মন্তব্য
ভাল লেগেছে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
মুক্তাশ্রীর বক্তব্য পড়ে আবেগে কাইন্দা দিলাম। টু দ্য পয়েন্ট উত্তর দিতারলে আর এতো আবেগঘন পোস্টে ইতিহাস লেখার দরকার পড়ে না।
নতুন মন্তব্য করুন