বাংলাদেশ এবং মায়ানমারের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেবার আয়োজন ঠিক কীভাবে হবে সেটা নিয়ে একটা ব্যবস্থাপত্রে দুই পক্ষ এক হয়েছে। এর মধ্যেই এই চুক্তি নিয়ে রাজনৈতিক মূলধন যোগাড় করতে হাজির হয়ে গেছে অনেকে। মিডিয়ায় ব্যবস্থাপত্রে কী আছে সেটার থেকে এইসংক্রান্ত মুখরোচক বক্তব্যগুলো নিয়ে কভারেজ দিচ্ছে। পাঠকদের সুবিধার জন্য পুরো চুক্তিপত্রটি এখানে তুলে দিচ্ছি।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন ব্যবস্থাপত্র ২০১৭ - সাংবাদিক পপি ম্যাকফারসন।
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন চুক্তি ১৯৭৮ - কাজী ফয়সাল রানেল
রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তন যৌথ বিবৃতি ১৯৯২ - কাজী ফয়সাল রানেল
মন্তব্য
বাংলাদেশ ঠকছে গো স্যার
এই চুক্তিপত্রের আওতায় মাত্র কয়েক হাজার লোক হয়ত ফেরত যাবে
চুক্তিপত্র যদি এমন হতো যে বাংলাদেশ সরকার যাকে 'রোহিঙ্গা' বলবে তাকেই মায়ানমারে ফেরত পাঠানো যাবে তাহলেও কতজন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠানো যেতো? ২০১৬ সালে আসা রোহিঙ্গারাই আইডি কার্ড করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে - সে কথা খবরে এসেছিল। বোঝা যাচ্ছে, যারা এসেছে তাদের কম অংশই ফেরত যেতে আগ্রহী। ১৯৭৭-৭৮ সালে যারা এসেছিল তাদের খুব কমজন ফেরত গেছে। চুক্তি তখনও হয়েছিল। নব্বইয়ের দশকে আসা রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশে রয়ে গেছে। রোহিঙ্গাদের বড় অংশ চায় তারা দুই পাড়ের সুবিধা নেবে। এখন বাংলাদেশ যাদেরকে ফেরত পাঠাবে তাদের অনেকেই আবার বাংলাদেশে পালিয়ে আসবে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
আপনার প্রস্তাব বলেন। কীভাবে চুক্তিটা হলে ভাল হতো?
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
চুক্তির সবচেয়ে বড়ো ফাঁক 'স্বেচ্ছায়' ফিরে যেতে আগ্রহী আর দ্বিতীয় ফাঁকটা হইল 'পরিচয় যাচাই'
রোহিঙ্গাদের দাবি হইল তারা রাখাইনে তাদের নিজের গ্রামে/ঘরে ফিরতে চায়। কিন্তু মিয়ানমারের প্রস্তাব হইল এদের নিয়ে রাখাইনে সাময়িক আশ্রয় কেন্দ্রে রাখা (অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুত হিসাবে); ওদের ছেড়ে আসা গ্রামে নয়। রোহিঙ্গারা এই শর্ত মানতে রাজি না; মিয়ানমারে গিয়ে আশ্রয় শিবিরে থাকার চেয়ে তারা বাংলাদেশে আশ্রয় শিবিরে থাকা ভালো মনে করে। তাছাড়া ৯২'র দিকে মিয়ানমার ফিরে গিয়ে আশ্রয় শিবিরে থাকা লোকজনের এখনো পুনর্বাসন করেনি মিয়ানমার; সুতরাং 'স্বেচ্ছায় ফিরতে আগ্রহী" যে খুব অল্প লোকই হবে সেইটা পরিস্কার (সু চি তো কয়েকদিন আগে বলছিলই যে রোহিঙ্গারা ফিরতে চায় না)
০২
পরিচয় যাচাই করা নিয়া পুরানা ঘাপলাতো আছেই; লগে নতুন চুক্তিতে ইউএনএইচসিআর এর শরণার্থী আইডি কার্ডও মিয়ানমারের যাচাইসাপেক্ষে বইলা দেয়া হইছে
০৩
আরো দুইটা বড়ো ফাঁক হইল 'প্রক্রিয়া চলিতে থাকিবে' এবং জাতিসংঘরে অনেকটা দর্শকের আসনে সরাইয়া রাখা
"Ministry of the Office of the State Counsellor" এইটার বাংলা কি?
যা বুঝলাম উনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
উনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী না। সু চি নিজেই মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রী
০২
মিয়ানমারের সাংবিধানিক ঘাপলায় সুচি না হইতে পারছেন প্রেসিডেন্ট না হইতে পারছেন প্রধানমন্ত্রী। উনার লাইগা একটা পদ তৈরি হইছে স্টেট কাউন্সেলর; সেই অফিসের আবার মন্ত্রী আছেন; সেই মন্ত্রীই বাংলাদেশে আসছিলেন আবার চুক্তিতেও সই করছেন তিনি
লীলেনদার পয়েন্টের সাথে ২/১ টা পয়েন্ট যোগ করি ।
- ৬ নাম্বার পয়েন্টের প্রত্যেকটা ক্লজই তো প্রবলেমেটিক । বাংলাদেশ তো রোহিঙ্গা রিফিউজি বানায় নাই ।
- রিহ্যাবিলেটেশনের ব্যপারে কোন সরকারী সহযোগীতা দেয়া হবে কিনা তেমন কোন প্রতিশ্রুতি নাই । সর্বস্ব হারায়ে যারা এই দেশে আসছে, সরকারের পক্ষ থেকে কোন রকম সহযোগীতার আশ্বাসকে তারা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ হিসেবে ধরে নিয়ে ফিরে যাওয়ার কথা বিবেচনা করলেও করতে পারতো ? কোন রকম ইতিবাচক আশ্বাস না থাকলে এক রিফিউজি ক্যাম্প থেকে আরেক রিফিউজি ক্যাম্পে যাওয়ায় কোন স্বপ্নীল ভবিষ্যতের হাতছানি নাই ।
- স্মারকে বারবার “রেসিডেন্স প্রমান করতে হবে ” এই বিষয়ে জোর দেয়া হইছে । এইতা কতটা বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন ?
মামুনুর রশীদ [ ভবঘুরে শুয়োপোকা ]
========================
mamun babu ২০০১ at gmail.com
হাজার মানুষের ভিড়ে আমি মানুষেরেই খুজে ফিরি
যতদূর মনে হয় দৃশ্যমান এই চুক্তির গভীরে রয়ে গেছে আরও একটি অদৃশ্য সমঝোতা, এবং সেটাই আসল। হয়ত সেই সমঝোতার মূল রূপকার কিংবা পৃষ্ঠপোষক হল চীন। মিয়ানমারকে চীনের খুবই দরকার, ভারতেরও এবং আরও অনেকেরই মিয়ানমারকে দরকার। বাংলাদেশেরও দরকার মিয়ানমারকে, সব দিকে আবদ্ধ বাংলাদেশ যে পুর্ব মুখী একটা পদচারনার আকাঙ্খা পোষণ করে, মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক ছাড়া সেটা সম্ভব নয়। বস্তুতপক্ষে মিয়ানমারের সাথে বাংলাদেশের কোন কিছু নিয়েই বিরোধ নেই, নেই কোন শত্রুতার সম্পর্ক। শুধু সমস্যা আছে একটা, সেটা হল রোহিঙ্গা ইস্যু। সেটাও নেহায়েত বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রতিবেশী, এই কারনে। নইলে এ রকম নিগ্রহ প্যালেস্টাইন এবং আরও বহু জায়গায় হরদমই তো হচ্ছে, কে তার খবর রাখে।
মিয়ানমারের মূল উদ্দেশ্য ছিল এলাকা খালি করা। বাংলাদেশের সহযোগিতায় সে কাজটা শতভাগ সম্পন্ন হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে এই সহযোগীতাটা করা সম্ভব হয়েছে, কারন প্রত্যাশা মতই এ দেশের তৌহিদি জনতা মিয়ানমারের মুসলিম জনগণের জন্য কেন্দে জারে জার হয়ে গেছে। আপোষহীন (নাকি আপোষহীনা) নেত্রী বাঘিনীর ন্যায় হুঙ্কার ছেড়ে সরকারকে নির্দেশ দিয়েছে সকল রোহিঙ্গাকে যেন সসম্মানে আশ্রয় দেয়া হয়। তাই দৃশ্যত সরকার প্রথমে কিছুটা অনিচ্ছুক হলেও শেষে জনগণের ইচ্ছার কাছে নতি(?) স্বীকার করেছে।
এখন ৩টি জেলার মানুষজনকে একটা ইউনিয়নের মত আয়তনের একটা জায়গায় হয়ত ফিরিয়ে নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। জাতিসংঘ কি তাতে খুব একটা মাইন্ড করবে? মনে হয় না, সেখানে ত্রান তৎপরতা চালানোর সুযোগ তো থাকছেই। অধিকাংশই অবশ্য স্বেচ্ছায় সেখানে ফিরতে চাইবে বলে মনে হয় না। তাহলে কিসের আশায় বাংলাদেশ এরকম একটি এ্যারেঞ্জমেন্টে রাজী হল? তবে কি অদৃশ্য সেই সমঝোতায় বাংলাদেশের জন্যও লাভজনক কিছু রয়েছে? নাকি আপাতত সম্পাদিত এই সমঝোতা স্মারকটিকে ভিত্তি হিসেবে ব্যবহার করে ভবিষ্যতের জন্য কোন পরিকল্পনা কষছে? এর উত্তরের জন্য হয়ত আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
নতুন মন্তব্য করুন