বাংলা বর্ণমালা শিক্ষা - বড়বেলা

হাসিব এর ছবি
লিখেছেন হাসিব (তারিখ: মঙ্গল, ২৩/১০/২০০৭ - ২:১৯পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমার নানী ছোটবেলায় আমারে বর্ণমালা শিখিয়েছেন । প্রথম বইটা ছিলো ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের আদর্শলিপি । তখনকার দিনে ঐ বইতে বর্ণমালার ভিতরে '৯' নামে একটা বস্তু ছিলো । পড়তে পড়তে ঐখানে আসলেই নানী বলতেন “ঐটা কিছু না, ঐটা বাদ দিয়া পড়ো” । একটু বড় হয়ে স্কুলে গিয়ে জানলাম ওটা আগেকার দিনে লোকজনেরা লিখতো । এখন আর লেখে না ।

তো, এই পোস্টের উদ্দেশ্য ছোটবেলায় কি শিখছি সেইটা না । বরং বড়বেলায় বাংলা বর্ণমালার নতুন জিনিস কি শিখলাম সেইটা ।

ঘটনা ১
ইউনিভার্সিটি সেকেন্ড বা থার্ড ইয়ার থাকাকালে আমি প্রথম বাংলা টাইপ করা শিখি । বিজয় দিয়ে । ম্যাক ইউজ করতে হতো একটা অফিসে । আমার কাজ টাইপ করা না হলেও জরুরী দরকারে যাতে আমি নিজেই বানান ঠিক করতে পারি সেইজন্যই বাংলা টাইপ শেখা শুরু করলাম । একবার কি কারনে গোটা একটা প্যারাগ্রাফ আমাকে লিখতে হয় । ব্যাপক কষ্ট স্বীকার করে টাইপ শেষ করার পর প্রুফ শিটটা দেখে আঁতকে উঠলাম ।

ekar

প্রুফ রিডার গোটা প্যারায় প্রত্যেক লাইনে দুই তিনটা ভুল ধরেছেন । দেখলাম সমস্ত এ-কার কেটে তিনি আবারো এ-কার লিখেছেন পাশে । প্রুফ রিডারের চতুর্দশ পুরুষের তত্ত্ব তালাশ করতে করতে বসের কাছে গিয়ে যা শুনলাম তাতে কম্পিউটারের ভাষায় পুরা হ্যাঙ হয়ে গেলাম । বসের কাছে শিখলাম শব্দের ভেতরে এ-কার এবং শব্দের প্রথমে এ-কার দুইটা দুই জিনিস ! উনি আমাকে অফিসে থাকা গোটা দশেক পত্রিকা, হুমায়ূনের একটা পুরনো উপন্যাস খুলে আমাকে বুঝিয়ে দিলেন আসলেই ঘটনা তাই !

ঘটনা ২
দ্বিতীয় ঘটনা মাস ছয়েক আগের । এক ব্লগে একজনকে প্রায়ই দেখতাম তিনি বাংলা বর্গীয় 'জ' অক্ষরটা লেখেন একটু ভিন্নভাবে । ভদ্রলোকের জ'য়ের নিচে একটা ছোট্ট করে ফুটকি দেখা যায় । ঠিক যেমনটা আমরা র অথবা য়'য়ের নিচে দেই ।

ja

একদিন কি মনে এ অক্ষরটা নিয়ে গুগল সার্চ দিলাম । সার্চে যা বের হলো সেটা দেখে বুঝলাম বাংলাটা আমার আসলে শেখা হয়নি কোনকালেই । আমি জানতে পারলাম এটা নাকি বাংলা ভাষায় একটা নতুন বর্ণ । এখানে জানলাম এ অক্ষরটি নাকি বুদ্ধদেব বসু আবিস্কৃত ও এটা নাকি পশ্চিমবাংলায় গত অর্ধদশক ধরে প্রচলিত । সেখানে সোমদেব নামে একজন সভ্য জানাচ্ছেন আনন্দ পাবলিশার্স এ অক্ষরটি এখন সবজায়গায় ব্যবহার করছে । সেটা দেখলামও । আমার যদ্দুর মনে পড়ে কবিসভায় সাজ্জাদ শরীফের একটি ভ্রমন কাহিনীর লিংক থেকে আমি প্রথম এ অক্ষর দেখি । (লিংক খুজে পেলাম না । কারো কাছে থাকলে শেয়ার করবেন । সাজ্জাদ শরীফ লিখিত ভ্রমন কাহিনী ।) যাই হোক, অমিক্রনল্যাবের ঐ থ্রেডে জানা যাচ্ছে ইংরেজী উচ্চারন garage এর শেষ Z এর মতো উচ্চারন লিখতে এই অক্ষরের আমদানি । হিন্দিতেও নাকি এরকম একটা অক্ষর আছে এরকম ।

একারের সমস্যাটা কোন জটিল সমস্যা না । অভ্রতে এখন এবিষয়টা অটোকারেক্ট হয়ে যায় । আমাদের এ-কার শব্দের আগে নাকি পরে সেটা নিয়ে ভাবতে হয় না । কিন্তু কিছু লোকের গোটা একটা অক্ষর আমদানীর বিষয়টা আমার চিন্তাভাবনায় এখনো খাপ খাওয়াতে পার‌ছি না । ভাষা জিনিসটা কোরান হাদিস না যে এটা পরিবর্তন করা যাবে না । তবে এই পরিবর্তন করার মতো আনন্দবাজার বা বুদ্ধদেব বসু প্রপার অথরিটি কিনা সেটাই ভাববার বিষয় ।


মন্তব্য

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

পড়লাম। ব্যাকরণ নিয়ে আমিও কিছুটা শুদ্ধবাদী মানুষ। যত্রতত্র পরিবর্তন সমর্থন করি না আমিও। তবে কালের সাথে কিছুটা মিলিয়ে চলায় দোষের কিছু নেই। কতটুকু গ্রহনযোগ্য, সেটাই কথা।

হাসিব এর ছবি

কালের সাথে মিলিয়ে চলায় দোষ নেই মানলাম । কিন্তু বিদেশী ভাষা উচ্চারনের স্বার্থে নতুন অক্ষর আবিস্কার করার কোন যুক্তি আমি দেখি না ।
একটা উদাহরন দেই । মধ্যবিত্ত শহুরে নাগরিক ভাষায় যেভাবে 'ছ' অক্ষরটা উচ্চারন হয় (ফারুকীর নাটক স্মর্তব্য) সেটার সঠিক উচ্চারণ লিখতে আমরা কোন বর্ন ব্যবহার করবো ? যদি কিছু পারফেক্টলি না পাই তাহলে কি আমরা নতুন বর্ন প্রস্তাব করবো ?

নিঘাত তিথি এর ছবি

এইখানে আমার একটা কথা আছে। "স"-এর উচ্চারণটা নিয়ে ঠিক কোন নিয়ম নেই। যখন আমরা বলি, "আসি","হাসি","সে" ইত্যাদি তখন এর উচ্চারণ হয়, তালব্য শ-এর মত বা ইংরেজী "Sh"-এর মত। আবার কোন ইংরেজী শব্দের বাংলা উচ্চারণ করতে গেলে এবং আরো বেশ কিছু ক্ষেত্রেও "স"-এর উচ্চারণ হয় ইংরেজী "S"এর মত,যেমন "স্মার্ট", "সিজন", "সেন্স" ইত্যাদি। এই নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয় মনে মাঝে মাঝেই। "ছ"-এর উচ্চারণ আসলে শুদ্ধভাবে কখনই "স"-এর মত নয়,ওটা করতে হয় জিহবাকে ওপরের তালুতে লাগিয়ে।

আমার মতে, "শ"-এর উচ্চারন সব সময়ই "Sh"এর মত, এবং "স"-এর উচ্চারণ "S"-এর মত হওয়া উচিত। আর "ছ" তার নিজের মত শুদ্ধু থাকুক।

সৌজন্যেঃ মামাবাড়ির আবদার প্রাঃ লিঃ।
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

হিমু এর ছবি

রুশ, ফরাসীতে একটা বিশেষ উচ্চারণ আছে "জ", "ঝ" আর "শ" মিশিয়ে। যেমন JOURNAL এর J, CHANTAGE এর G. আবার বাংলা ভাষায় উচ্ছ্বসিত Zানতি পার না-র Z এর জন্য কোন বর্ণ নেই, জ এর উচ্চারণ জাহাজ, য এর উচ্চারণ ইয় ঘেঁষা। এই দুইটার জন্য ফুটকি ব্যবহার করা যায়। ফুটকিটা জ এর নিচে (একটা খারাপ কথা বলে ফেলেছিলাম পরে কেটে দিয়েছি) দিলে ফরাসী শ্ঝুর্নাল, শন্তাশ্ঝ, আবার ওপরে দিলে Zানতি পার না-র Z ।

আমরা কিন্তু নিজেরা একটা ভিন্ন চেহারার বর্ণও আঁকতে পারি। সুজঞ্চৌ এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখতে পারেন।

জার্মান W বা স্প্যানিশ V এর উচ্চারণের জন্যও বাংলায় বর্ণ নেই। দেশ-এ দেখি হ্বিটগেনস্টাইন লেখে, বিরক্ত লাগে দেখলে। ওপরের দাঁত নিচের ঠোঁটে লাগিয়ে বাইরের দিক ঠেলে দিলে ঐ বর্ণটা উচ্চারিত হয়, লেখার সময় আমি ভ দিয়ে ঠ্যাকার কাজ চালাই, কিন্তু ঐটার উচ্চারণ কখনও হ্ব শুনিনি। আনন্দবাজার গান্ধীকে গাঁধী লেখে, ভিটগেনস্টাইনকে হ্বিটগেনস্টাইন লেখে, যা খুশি তাই লেখে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হাসিব এর ছবি

সবই বু্ঝলাম । কিন্তু স্টান্ডার্ডাইজড কিছু একটা তো থাকা লাগে, নাকি ? পিচ্চি পোলাপাইনের সামনে তো একটা লিস্টি দিয়া কৈতে হইবো এইটা হইলো বর্নমালা । আমরা সবাই নিজেরা একেকটা বর্নমালা বানায় নিলে তো মনে হয় একটা ধুন্দুমার ক্যাচালে পইড়া যাইবো পুলাপাইন ।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

অভ্রতে এখন এবিষয়টা অটোকারেক্ট হয়ে যায় ।

কথাটা বিরাট ভুল। অটোকারেক্ট হয় ইউনিকোড রেন্ডারিং ইঞ্জিনের কারনে। অভ্রর কারনে এটা হয় না।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হাসিব এর ছবি

কারেকশনের জন্য ধন্যবাদ ।

হিমু এর ছবি

সমস্যা কী? পেটেন্ট করে নিবো!

আমি ভাবছি চ অক্ষরটা পেটেন্ট করবো। আর ব। আর আর গ। ম-ও। কিংবা প।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হাসিব এর ছবি

আমি হ, স, ব, ম, হ, দ, আ-কার, হ্রস্য-ইকার, হ্রস্য-উকার বুকিঙ দিলাম । প্যাটেন্ট হয়া গেলে বুঝবা ঠ্যালা । হিমু লিখতে গেলে পয়সা দিতে হইবো আমারে । না দিলে ক্রসফায়ার ।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

সসংকোচোই বলি, বাংলা বর্ণমালায় প্রচুর বর্ণ থাকলেও অতি প্রয়োজনীয় কিছু ধ্বনির জন্য যথাযথ বর্ণ নেই। আমাদের ভাষায় হরদম ব্যবহৃত কিছু ধ্বনির সঠিক প্রতিবর্ণের সঙ্কট আমাদের বর্ণমালায়। ইংরেজির F বাংলায় ফ নয়, কারণ ফ হলো PH, তেমনি V-এর প্রতিবর্ণ হিসেবে ভ লিখে আমরা কাজ চালাই বটে, কিন্তু ভ তো আসলে BH। S-এর প্রতিবর্ণ হিসেবে ছ বা স কোনওটাই উপযুক্ত নয়। আর পরশুরাম তো সাধেই লেখেননি Zানতি পারো না!

অনেকেই বলতে পারেন, বিশুদ্ধ বাংলা শব্দাবলিতে F,V, S বা Z জাতীয় ধ্বনি ব্যবহৃত হয় না। আসলেই কি তা-ই? স্পন্দন কি বাংলা শব্দ নয়?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সৌরভ এর ছবি

জ এর ব্যাপারটা তো জানতাম না।
চিন্তার ব্যাপার।


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

অমিত আহমেদ এর ছবি

নতুন বর্ণ আসতেই পারে।
আমি স্বাগত জানাবো আসলে।
কিন্তু নতুন বর্ণ পুরানো বানান রীতি যেন ভজঘট না পাকায় সেটাই খেয়াল রাখতে হবে।

বাংলা বানান-ব্যাকরণে আমি বাংলা একাডেমির অনুসারী।


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

আগে বাংলায় যুবা বা যুবক বা যুবরাজ লেখতে কোনো সমস্যা হইতোনা... কিন্তু হিন্দীর বদৌলতে এখন তা ইউবা বা য়ূবরাজ হইতেছে। মাধুরী দিক্ষীত হইতেছে দিক্সীত।
৯ এর মতো বর্ণটা আমরাও পড়ছি ছোটবেলায়... উচ্চারণ বোধহয় লী টাইপ কিছু একটা ছিলো।

জানিনা ঠিক... ইয়াবা ট্যাবলেটের সাতে কি যুবার কোনো সংমিশ্রন আছে ?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

এই হল (লী)। ইউনিকোডে এই বর্ণটি আছে। গুরুচন্ডাঌ তে এটা ব্যবহার করা হয়। ৯ এর সাথে আকারে খানিক পার্থক্য আছে। একইরকম আরো দুটি বর্ণ হল: এবং । পুরো লিস্ট পাবেন এখানে: http://www.alanwood.net/unicode/bengali.html

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

৯ ঌ ৵ ৶

পরপর দেখলে মজা লাগে। মনে হয় কে যেন নয়ের পীঠটাকে টেনে সোজা করার চেষ্টা করেই যাচ্ছে। হো হো হো

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হাসিব এর ছবি

এগুলো কি টাকাপয়সার সিম্বল হিসেবে ব্যবহার হতো ?

হাসিব এর ছবি

যারা নতুন বর্নমালা আনতে চাইতেছেন তাগো স্বাগত জানাইতে পারতেছিনা । সবাইরে এই স্বাধীনতা দেয়া হইলে কোন লেখকের বই পড়তে গেলে তার প্রবর্তিত বর্নমালার চার্ট নিয়ে বসতে হবে । একটা ভাষার যে সার্বজনীননতা সেইটা ক্ষুন্ন হবে । ভাষা সৃষ্টির মূল যে উদ্দেশ্য কমিউনিকেট করা সেইটাই তাতে ব্যাহত হবে ।

হাসিব এর ছবি

আর বিদেশী বর্ণের সঠিক উচ্চারণের জন্য বাংলা বর্ণমালায় সঠিক বর্ণটি নেই ------ বিষয়টি আমারে ভাবায় না। অনেক বিদেশী ভাষারও বর্ণ নেই বাংলা ভাষার বর্ণগুলো উচ্চারণের জন্য।
ঠিক

অয়ন এর ছবি

জ় লেখাটা অনেক কষ্ট।
দুই বাংলায় ব্যবহৃত বাংলার মধ্যে দিনে দিনে যে পার্থক্য তৈরী হচ্ছে তা সমন্বয় সাধনের কোন উদ্যোগ কি কোন পক্ষে আছে?

হাসিব এর ছবি

নাই, আমি যদ্দুর জানি ।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

পোস্ট এবং আলোচনা ভালো লাগছে। অনেক কিছু জানলাম!

তারেক এর ছবি

নতুন বর্নের কি কাম? আমরা বিদেশী শব্দগুলো ঠিকঠাক উচ্চারণ করতে পারলেই তো হইল। জ় আবিষ্কার করলাম মাত্র কয়দিন আগে অভ্র-তে। দেখে বেশ অবাক হইছিলাম অবশ্য। কিন্তু ঘুণাক্ষরেও ভাবিনাই এইটা একটা নতুন অক্ষর খাইছে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

আরিফ জেবতিক এর ছবি

অনেক কিছু জানলাম ।

ইতি

আঋফ জেবতিক

হাসিব এর ছবি

আমি ঠিক্করছি ট্রাডিশনাল বর্ন না ইউজ কইরা নিজের নাম লিখতে সিম্বোলিজমের দিকে যামু । একটা ইকড়ি মিকড়ি কিছু আইকা কমু এইটাই বর্নমালা আর এইগুলান এইভাবে পড়তে হবে । না পারলে অরা যেমুন নোকতা ধার করছে আমি সেরম জের যবর পেশ লাগায়া লমুনে কুনখানে ।

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

নক্তা দিলে পোক্ত হয়

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

দুর্বাশা তাপস এর ছবি

কবি যা বলেন সত্য। কাজেই বুদ্ধদেবের কথা মাইনা লইলাম। আনন্দবাজার মরুক গিয়।

==============================
আমিও যদি মরে যেতে পারতাম
তাহলে আমাকে প্রতি মুহূর্তে মরে যেতে হত না।

অমিত আহমেদ এর ছবি

সঠিক বানান তো জানতাম "বর্ণমালা", মুর্ধন্য দিয়ে?


ভালবাসি, ভালবাসি, ভালবাসি তোমায়!
ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

হাসিব এর ছবি

বস ডিকশনারী নাই । ক্যাচালে ফালায় দিলেন দেখি ।

বরফ এর ছবি

১।
এ-কার শুরতে বসলে মাত্রা না থাকার ব্যাপারটা আগে জানতাম না। কারণ লেখা শেখার সময় এটা কেউ বলেনি, আর পিসিতে লিখতে গিয়েও খেয়াল করিনি।
ব্যাপার হচ্ছে, ইউনিকোডে এ-কার একটাই। ওটা শব্দের শুরুতে হোক, আর শেষে হোক, সেইম এ-কারই ব্যবহৃত হয়। মাত্রা সহ দেখানো বা মাত্রা ছাড়া দেখানোটা যাস্ট দেখানোরই ব্যাপার। ফাইলে বাইনারিতে তারা দুজন একই মান ধারণ করে আছে।

২।
আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে, নুকতা।
য-এর নিচে নুকতা দিয়ে য় অথবা ব-এর নিচে নুকতা দিয়ে র লিখা যেতে পারে। য প্লাস নুকতা আর য়, এই দুটার মধ্যে পার্থক্য থাকবে বাইনারী মান-এ। কিন্তু দুজনকেই দেখতে একই রকম মনে হবে, এবং কোন সফটওয়্যারে এই দুটো বর্ণকে তুলনা করলে (যেমন ওয়ার্ডে সার্চ করার জন্য) দুটাই সমান দেখাবে।

কিছু ভাষায় রেফ টাইপের একটা বর্ণ আছে (ওটার নাম এক্যুট), ওটা বোধহয় ফ্রেঞ্চসহ আরো কিছু ভাষায় ব্যবহৃত হয়। ওটারে Á একটা বর্ণ হিসাবে লেখা যায়, আবার A + ´ হিসাবেও লিখা যায়। দেখতে দুটা একই দেখাবে, যদিও কম্প্যুটারে বাইনারীতে ভ্যালু দুটা সম্পূর্ণ আলাদা।

বাংলায় এই নুকতা ব্যবহার করে য় অথবা র লেখা আর ফ্রেঞ্চে একিউট ব্যবহার করে Á লেখার মধ্যে টেকনিক্যালি কোন পার্থক্য নাই, টেকনিক্যালি কোন সমস্যাও নাই। ভাষাগত সমস্যার প্রশ্নও আসবে না বলেই আমার অনুমান।

৩।
ও-কার-এর ব্যাপারে জানতে পারলাম, যে বিজয়ে নাকি ও-কার বলে কিছু নাই। সেইখানে এ-কার আর আ-কার মিলায়ে ও-কার বানানো হয়। ব্যাপাটা আমার কাছে একটু হাস্যকর মনে হয়েছে প্রথমে, কিন্তু পরে মনে হলো, এটাও ভুল না। ইউনিকোডে যদিও ও-কার আলাদা আছে এবং সেটাই ব্যবহার করা উচিৎ, তথাপি, কেউ যদি এ-কার আর আ-কার মিলিয়ে ও-কার বানায়, সেটাকে সঠিক ভাবে দেখানো উচিৎ, এবং নিম্নে এই দুইভাবে লিখিত কো-কে সমান বলে বিবেচনা করা উচিৎ (কেউ "কো" দিয়ে ওয়ার্ডে সার্চ করতে গেলে নিচের দুইটারেই খুঁজে পাওয়া উচিৎ)।

ে + ক +া = কো
ক + ো = কো
উপরের দুটোই কাজ করে, যদিও দ্বিতীয়টা পারফেক্ট, কিন্তু প্রথমটাও ভুল নয়।

৪।
মুর্শেদ ভাই (অথবা অন্য বিশেষঞ্জরা (বানান ঠিক হলো কি?)) হয়তো এখানে আরো কিছু বলতে পারেন।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

২।

কোন সফটওয়্যারে এই দুটো বর্ণকে তুলনা করলে (যেমন ওয়ার্ডে সার্চ করার জন্য) দুটাই সমান দেখাবে।

উঁহু ভুল। সার্চ 'র' সার্চ করলে 'ব+নুকতা' খুঁজে পাবে না। আমি টেস্ট করিনি যদিও কিন্তু ৮০% শিওর।

৩।

উপরের দুটোই কাজ করে, যদিও দ্বিতীয়টা পারফেক্ট, কিন্তু প্রথমটাও ভুল নয়।

ভুল নয়, আবার ঠিকও নয়। তাছাড়া আরেকটা ক্যারেক্টার আছে 'ৗ'

ে + ক +া = কো
ক + ো = কো

এবং
ে + ক +ৗ = কৌ
ক + ৌ = কৌ

কির্বোড ইন্টারপ্রেটারগুলোর উচিত কেউ ও-কার লিখতে এ-কার+অক্ষর+আ-কার চাপলে তাকে অক্ষর+ও-কারে রিপ্লেস করে দেয়া। আমি bnwebtools.sf.net এ এই পদ্ধতিই অনুসরন করি। এতে করে ভুল ভাবে টাইপ করেও সঠিক ভাবে ডকুমেন্ট তৈরী হবে। সার্চের ক্ষেত্রে সমস্যা হবে না। কিন্তু যদি এ-কার+ও-কার ই রেখে দেয়া হয় তাহলে এই সমস্যাটা হবে। সার্চ করে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

৪। ভাই আমি বিশেষজ্ঞ নই। খানিকটা নাড়াচাড়া পর্যন্তই।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

অতিথি লেখক এর ছবি

ইউনিকোডের কিছু ডকুমেন্ট একটা নাড়াচাড়া করলাম। নিচে সবচেয়ে দরকারী একটার লিংক দিলাম।

২।
নুকতার ব্যাপারটা এখন অনেকটা বুঝতে পেরেছি।

ক্যারেক্টার চার্টের নিচে বর্ণনা আছে এরকম
09BC Bengali Sign Nukta:
For extending the alphabet to new letters

তার মানে ভবিষ্যতে নতুন বর্ণ আবিষ্কৃত হলে ওটা লেখার জন্য নুকতা ব্যবহৃত হতে পারে।

ভুল:
য এর সাথে নুকতা যোগ করলে য় তৈরি হয়। য + নুকতা = য় (এটা ভুল)

সঠিক:
য এর সাথে নুকতা যোগ করলে জিনিসটা মূলত য-ই থেকে যায়, শুধুমাত্র টারশিয়ারী একটা পার্থক্য তৈরি হয়। (টীকা দ্রষ্টব্য)

বাংলায় ক, খ, গ, জ, ড, ঢ, ফ, ব, য এই বর্ণগুলিতে নুকতা যোগ করা যেতে পারে। কিন্তু নুকতা দিলে উপরের কোন বর্ণই পরিবর্তিত হয়ে অন্য বর্ণ হয়ে যাবে না (যেমন নুকতা যোগ করলে ব থেকে র, য থেকে য়, ড থেকে ড় ইত্যাদি হবে না)।

সুতরাং:
য + ়= য় (ইহা নুকতা যুক্ত য। ইহা য় নহে)
আসল "য়" ব্যবহার করুন। নকল "য়" (নুকতা যুক্ত য) থেকে দূরে থাকুন।

৩।


ভুল নয়, আবার ঠিকও নয়। তাছাড়া আরেকটা ক্যারেক্টার আছে 'ৗ'

ে + ক + া = কো
ক + ো = কো

এবং
ে + ক +ৗ = কৌ
ক + ৌ = কৌ

না মাহবুব মুর্শেদ ভাই। এটা সঠিক। বাংলা ক্যারেক্টার চার্টের নিচে দেখুন।
09CB ো = 09C7ে 09BEা

ঔ-করের ব্যাপারেও একি নিয়ম।

৪।
বিনয় :-)।
বিশেষজ্ঞ বানানটা যেহেতু ঠিক করে দিয়েছেন, তাই শুব্দটার কিছুটা ওজনতো আপনাকে নিতেই হবে।

ধন্যবাদ।
বরফ

টীকা:
টারশিয়ারি পার্থক্য: টারশিয়ারি পার্থক্য হচ্ছে একই বর্ণের বিভিন্ন রূপের মধ্যে যে পার্থক্য। ইংরেজীতে টারশিয়ারী পার্থক্যের একটা উদাহরণ হতে পারে নিচের দুটা a।
a ⓐ
এরা একই বর্ণের পরিবর্তিত রূপ।

তথ্যসূত্র:
১। ইউনিকোড বাংলা ক্যারেক্টার চার্ট:
http://unicode.org/charts/PDF/U0980.pdf

বিপ্লব রহমান এর ছবি

লেখা ও মন্তব্যগুলো খুব ভালো লাগছে। কিপ ইট আপ!


আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ


একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...

সুমন চৌধুরী এর ছবি

নোক্তা ফোক্তা না দেওনই ভালো...



ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।