১) তিনি ভেঙেই পড়লেন আজ।
এই পরিবারের জন্যে তিনি করেছেন অনেক, কিন্তু, মনে রেখেছে কেউ?
তিনি এখানে যুগিয়েছেন সাহস, এনেছেন সুবিধে, দিয়েছেন স্বস্তি আর আনন্দ-সবার জন্যেই।
আর আজ? নিজেই তিনি অকর্মণ্য হয়ে পড়েছেন।
শিশুদের জন্যে আরাম যোগাতে হবে? তিনিই ভরসা। ঘরের কাজ করা যাচ্ছে না? তিনিই সহায়। পড়াশুনো করতে অসুবিধে? তিনিই ত্রাতা। ঘরোয়া বিনোদনের ব্যাপারেও তাঁর অবদান কেউ ভুলতে পারবে? এমনকি সোফা বা টেবিলের নিচে একটা কাগজ বা কলম পড়লেও যেন তিনি ছাড়া চলবেই না।
কিন্তু, হায়, তাঁর কেমন লাগছে, কী লাগছে বা লাগতে পারে, কখনই বা লাগবে, কেউ তেমন খবর নিয়েই দেখে নি। আসলেই, মানুষ কেমন স্বার্থপর! ভাবতেই ঘেন্না। ভাবতেই ঘেন্না।
তাঁকে কাজে লাগানো হয় নি কখন? শীত গ্রীষ্ম বর্ষা-কখন না? দিনে, দুপুরে, বিকেলে, সন্ধ্যেয়, রাতে-কোন সময় না? তাঁর ওপর কাজের ভার চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে যখন তখন। যখন দরকার নেই, তখনো খাটানো হয়েছে তাঁকে। তাকে ফেলে সবাই চলে গেছে বেড়াতে, অবশ্য তখন আর ততটা কাজও দেওয়া হয় নি তাঁকে। এতটুকু দয়াই তাঁর প্রাপ্য ছিলো এই নিরন্তর সেবার বিনিময়ে! স্রেফ কর্তব্যবোধ আর পরিবারের জন্যে ভালোবাসাই তাঁকে আটকে রেখেছে তাঁর কর্মময় জীবনে, বিনিময়ের হিসেবনিকেশ না করেই।
তেমন একটা খাবারও তাঁর প্রয়োজন ছিলো না কখনোই। কিন্তু, সেটুকুও দিতে যেন তাদের অনীহা। আরে, যে এতো এতো কাজ করে দিচ্ছে, তাকে একটু যত্ন আত্তি তো করবি। তার খাওয়াটা তো একটু খেয়াল করবি। কী যে কপাল!
ঘরের একজন হিসেবে তাঁকে কখনোই গণ্য করা হয় নি। অথচ, তিনি তো সবার সাথেই মিলেমিশে থাকতে চেয়েছেন সবসময়। কেউ বলতে পারবে তিনি কারোর পথে কখনো কোন বাধা সৃষ্টি করেছেন? কেউ বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে কাউকে তিনি চরম অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন? কেউ জোর গলায় বাদ দিক, মুখ ফুটে একটিবারও জানাতে পারবে কারোর ব্যক্তিগত জীবনে তিনি একবারও হস্তক্ষেপ করেছেন? হায়, এখন ফিরে যেতে পারবেন না তাঁর আগের ঘরে, আপন হতে পারলেন এই ঘরেও। তাঁর মূল্য শুধুই কাজের ওপর?
শুধুই সেবা দিয়ে যাওয়া, শুধুই নীরবে ছোট একটা জায়গা নিয়ে অন্যদের সুবিধে তৈরি করে দেওয়া, শুধুই সবার জন্যে একটা সুখী গৃহকোণ বানিয়ে দেওয়া-এর চাইতে বেশি কিছু চান নি তিনি কখনোই।
দুঃখ, আজ থেকে আর সেটাও তিনি করতে পারছেন না...যতক্ষণ না, যতক্ষণ না....
সাব্বিরের বাবা সাব্বিরকে জোরগলায় ডাক দেন, বলেন, "কি রে, আইপিএসের ব্যাটারিটা আজকেও লাগানোর ব্যবস্থা করবি না? এই গরমে তো মারাই যাবো রে!"
২)
ফিরে এসেছি আবার।
ভুলেই গিয়েছিলাম অনেককে।
আমায়ও ভুলে ছিলো অনেকে।
ভুলেই যাচ্ছিলো অনেকে বা চাইছিলো ভুলে থাকতে।
কিন্তু, তাহলে কী চলে?
আমারও তো আছে বাঁচার অধিকার!
আমিও তো অন্যদের মতো সবার মাঝেই নিজের অস্তিত্ব খুঁজে বেরিয়েছি।
আমিও তো চাই অন্যদের মুখে আমার নাম উচ্চারিত হোক বারবার।
মানুষ কি বাঁচতে আর বাড়তে চায় না?
তবে, কিছু মানুষ কেন আমার ওপর এতো খড়্গহস্ত?
কেন তারা পৃথিবী থেকে আমার অস্তিত্ব মুছে ফেলতে চায়?
মানছি যে আমার কারণেই মারা গেছে অনেকে।
কিন্তু, সে কি শুধু আমারই জন্যে?
তাদের কি আমি মেরেছি, না অন্য মানুষেরা?
গাড়িতে দুর্ঘটনা ঘটে, বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মানুষ মারা যায়, মানুষের কারণে মানুষ মরে।
তাতে কি বন্ধ হয়েছে গাড়ি-চড়া, বিদ্যুৎকেন্দ্র বা মানুষের জন্ম?
কেন শুধু আমার নামেই এতো বদনাম!
সংবিধানে তো সবার মৌলিক অধিকার রক্ষার জন্যে, সবার ভাত-কাপড়ের ব্যবস্থা করার জন্যে রাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তাহলে আমার থাকায়, বেড়ে ওঠায় কেনো এত বাধা?
যাক, আমি তার কাছে, তাদের কাছে কৃতজ্ঞ যারা এই দেশে আমায় আবার ফিরে আসার সুযোগ করে দিলো।
লোকেরা রাগ করুক, আর যাই করুক, সম্ভবত আগামী দিনগুলোতেও আমি থাকছি।
শুভেচ্ছা জানাবেন না আমায়, আমার পুনরাগমন উপলক্ষে?
খবর: আগামী ২৭ জুন বিএনপি সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছে, সাড়ে তিন বছর পর আবার হরতাল।
৩)
ধুরো যা, এইগুলাই কি যথেষ্ট না?
আর একটা খবরে সলম্ফ, সহর্ষ চিৎকার করার অপেক্ষায়।
পাঁচটা মন্ত্রণালয়ে ইউনিকোডে বাংলা লেখা হবে। পুরো খবরটা এখানে
পেলাম।
শুধু এটুকু দেখার অপেক্ষা ওখানেও বিজয় কোন কারসাজি করে কি না।
তারপরেই শেষ লাফটা দেবো।
অবশ্যই একটা বিজাতীয় অর্থহীন ভাষায় চেঁচিয়ে।
ভাষা উন্মুক্ত হবেই।
মন্তব্য
বেশ ভাল লাগল।আসলেই হরতাল ছাড়া কেন যেন জীবনটা বেশ পানসে লাগছিল।
তার্কিক
১) শুরু থেকেই আঁচ করেছিলাম এমন কিছুই হবে। কিন্তু আইপিএস পর্যন্ত কল্পনা করতে পারি নি।
২) এবার তো নিশ্চিত এটাও অমন দিকেই মোড় নেবে। কিন্তু হরতাল মাথায় আসে নি মোটেই।
৩) ভাষা উন্মুক্ত হবেই।
অফটপিক:
যুগিয়েছেন, যোগাতে শব্দগুলো যোগাড় থেকে এসেছে না?
বানানটা কি যোগাড় না জোগাড়? সংসদ বলছে যোগাড়, জোগাড় দুই-ই ঠিক। বাংলা একাডেমীর বানান-অভিধানে "যোগাড়" পাচ্ছি না। যদিও অতীতে "যোগাড়" দেখেছি ও লিখেছি।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
এই সমস্ত শব্দগুলো এসেছে 'যোগ' থেকে। যোগ এর সাথে বিভিন্ন উপসর্গ, অনুসর্গ, অব্যয়, হেনতেন মিলিয়ে নানাবিধ শব্দ এসেছে। যেমন: যোগাড় শব্দটির মূল হলো: যোগ + আড়। এরূপ ভাবে যোগ + আন = যোগান। যুগিয়েছেন কর্তা ও কারক সম্পর্কিত। যোগাড় ও জোগাড় উভয় সঠিক। ব্যক্তিগতভাবে আমি যোগাড়ই লিখি।
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
আলোকবাজি
==============================
হা-তে এ-ক প্র-স্থ জো-ছ-না পা-ড়ে-র ঘ্রা-ণ
খোমাখাতা
অভিধানে "যোগাড়" পাচ্ছি না কেন তাহলে? এর ব্যাখ্যাও পাচ্ছি না। সেটাই জানতে চাচ্ছিলাম।
_____________________
আমরা মানুষ, তোমরা মানুষ
তফাত শুধু শিরদাঁড়ায়।
আপনার পাংখা হইতেছি দিনদিন!
শিমুল ভাইয়ের সাথে সহমত!
হে হে হে, একদম শেষের আগ পর্যন্ত বুঝতেই পারি নাই
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
সবাইকে ধন্যবাচন।
আসলে সকালে লেখাটা দিয়ে অনেকক্ষণ বসে থাকার পরও যখন নীড়পাতায় লেখাটা আসছে না, তখন মনের দুঃখে ঠিক করলাম আর সচলে লেখাই দেবো না।
যাক, আজ সকালে এসে আবার ভালো লাগছে।
@ বুনোহাঁস: যদি দেশে থাকেন অতি অবশ্যই একটা বাংলা একাডেমীর গাব্দুস সাইজের 'বাংলা একাডেমী ব্যবহারিক বাংলা অভিধান'টা কিনবেন। বেশ ভালো কাজে আসবে।
সবাইকে শুভেচ্ছা আবারো।
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
_______________________________
খাঁ খাঁ দুপুরে, গোধূলিতে আর রাতে বুড়ি পৃথিবী
কেবলই বলছে : খা, খা, হারামজাদা, ছাই খা!
(ছাই: মণীন্দ্র গুপ্ত)
নতুন মন্তব্য করুন