অনেকদিন আরাম করে বসে কোন বই পড়া হয় নাই। উচ্চশিক্ষালাভের ধ্যানমগ্নতার ভান ধরে কতদিন যে গল্পের বই পড়ি না।খটোমট পেপার পড়েই দিন কাবার হইতেছিল। উচ্চশিক্ষার খেতা পুড়ি বলে ইস্তফা দিয়ে ভাবলাম এইবার আরাম করে অনেক গল্পের বই পড়তে পারব। দেশ থেকে বইও নিয়ে এসেছি অনেক গুলা। শুরু করলাম সঞ্জীবের লোটাকম্বল। এক পাতা পড়ে ঘুম আসে, পরেরদিন ভুলে যাই কতটুকু পড়ছিলাম। আবার আগের পাতা থেকে শুরু করি। আগের দিনের চে এক প্যারাগ্রাফ আগায় আবার ঘুম আসে। এমন করে করে ৩ মাসে ১০ পাতা আগাতে পেরেছি।
ভাবলাম সমস্যা বুঝি বই পড়ার পরিবেশে। আগে কি ভাবে বই পড়তাম? বিছনায় শুয়ে? চেয়ার টেবিলে বসে? দাঁড়িয়ে? উপলব্ধি হইল সবখানে সব ভাবেই বই পড়তাম। কত আজব জায়গায় আজব ভঙ্গিতে বই পড়েছি ভেবে হাসি পেল। উদাহারন দেই
প্রথম তিন গোয়েন্দা পড়েছি কার্ডবোর্ডের বক্সের মধ্যে বসে। কোন কারনে টিভি বা এরকম কিছুর মোটামুটি সাইজের একটা বাক্স বারান্দার এক কোনে পড়ে ছিল। তার মধ্যে ঢুকে পড়েছিলাম তিন গোয়েন্দার মৃত্যুখনি আর ছায়াশ্বাপদ। ঐ বাক্সের মধেই যে কল্পনায় জঞ্জালের তলায় তিন গোয়েন্দার হেড কোয়ার্টারের মত আমারও একটা হেড কোয়ার্টার তৈরি হয়েছিল বলাই বাহুল্য। বাক্স ফেলে দেয়ার পর আস্তানা গেড়েছিলাম দাদার ঘরে দেয়াল আলমিরা আর ছাতের মাঝে যে টুকু ফাঁক থাকে সেখানে তুলে রাখা লেপ-কোলবালিশের মাঝে। সেটা খুবি আরামদায়ক জায়গা ছিল বটে। ড্রয়ারের হাতলগুলোকে মই বানিয়ে উঠে যেতাম, সারাদিন কেউ খুঁজেও পেত না, জ্বালাতনও করত না। মনীষীদের ছেলেবেলা, বাংলাদেশের নির্বাচিত হাসির গল্প, বনফুল, শরৎচন্দ্রের বৈঠকি গল্পের সংগ্রহ, ঠাকুরমার ঝুলি, সাথে সত্যজিৎ রায়, একবার না কতবার যে পড়েছি ঐ চালায় বসে। আমার পড়ার সীমানা বড় না, যেটা ভাল লাগে সেই বই বার বার পড়ি।
কত বই পড়েছি স্রেফ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে। হয়ত শেলফ থেকে হাতে নিয়েছি পুরনো বইএর পাতা উল্টাবো বলে, কখন যে আরেকবার পড়া হয়ে গেছে খেয়াল হয়নি। প্রচুর বই পড়েছি স্কুলের লাইব্রেরিতে বসে। ক্লাস এইট পর্যন্ত নিয়ম ছিল সপ্তাহে একটা বই নিতে পারব। রাশান রুপকথার বই এর জন্য আমাদের সিরিয়াল ছিল, তুই ফেরত দিলে আমি নিব, তারপরে ও, তারপরে ও। অর্থাৎ বই ফেরত দেয়া মাত্র পরেরজনকে ছোঁ মেরে সেটা বগলদাবা করে নিজ নামে ইস্যু করতে হবে। এই লাইব্রেরিতে খুঁজে পেলাম Nancy Drew সিরিজ। ইংরেজি বইগুলা কত পুরনো ছিল? ৭০ দশকের প্রিন্ট তো বটেই। এগুলাও পড়তে হলে টিকটিকির মত চোখ রাখতে হত। কেউ ফেরত দেয়া মাত্র বগলদাবা করতে হবে। একবারে এক জন শুধু একটা বই নিতে পারত। কাজেই পছন্দের বই নেয়ার জন্য অনেক রকম ট্যাক্টিকস চিন্তা করতে হত। যখন নাইনে উঠলাম তখন তো মেলা বড় হয়ে গেছি। নিয়ম কানুনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখানোর মত সাহস হয়েছে একটু। আরেক বই পাগল বান্ধবীর সঙ্গে মিলে ঠিক করলাম লাইব্রেরীর সব বই পড়ে ফেলব। ডে শিফটে পড়তাম, কিন্তু স্কুলে, বলা ভাল লাইব্রেরিতে গিয়ে হাজির হতাম ১১টার দিকে। গিয়েই কোন একটা বই এর শেলফের মাঝে লুকিয়ে যেতাম। তাক থেকে নিয়ে ওখানেই মাটিতে বসে পড়েছি অনেক বই। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকার উপকথা সংগ্রহ নিয়ে বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত কিছু চমৎকার বই আছে। প্রায় ১৭টা খন্ড। এভাবেই ধুলোমাখা মেঝেতে বসে বা দাঁড়িয়ে পড়েছি। ১টায় ক্লাস শুরু হবার আগে একটা করে বই ইস্যু করতাম। ক্লাসে পড়ার বই এর মাঝে লুকিয়ে ৫ পিরিয়ডের মাঝে সেটা শেষ করবার তাড়া ছিল। হুড়োহুড়ি করে পড়েছি বলেই এখন হয়ত আর বইগুলার নাম/ কাহিনী মনে করতে পারি না। ৫টায় ঘন্টা পড়লে বই খাতা ফেলে আগে ছুট দিতাম লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে। লাইব্রেরিয়ান তালা মেরে চলে যাবার আগেই হাতের বইটা ফেরত দিয়ে আরেকটা নিয়ে আসা চাই। লাইব্রেরিয়ান মিস এত মিষ্টি মহিলা ছিলেন, আমাদের মত দুটা পাগলের জন্য উনি অপেক্ষা করে থাকতেন। ও! এর মাঝে বন্ধুদের থেকেও ১/২টা বই ধার করা হয়ে গেছে। সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে এক হালি ডাসা পেয়ারা হাতে নিয়ে শেষ হত একটা বই...উমমম মনে হয় ড্রইং রুমের সোফায় বসে টেবিলে পা তুলে দিয়ে... ততোক্ষণে রাতের খাওয়ার ডাক পড়েছে। খাওয়ার পর পড়ার টেবিলে বসে পড়াশোনার মুড আনার জন্য আরেকটা বই ধরতাম, এইটা সাধারনত হত সেবার অনুবাদ। শেষ করার পর খানিক্ষন তব্দা মেরে থেকে ভাবতাম, থাক! কালকের ক্লাস টেস্টের জন্য সকালে উঠে পড়লেই চলবে।
অসুখ বিসুখ হলে বিছানায় আধ শোয়া হয়ে টিন টিন পড়ার কোন তুলনা নাই। সাথে ফেলুদাও অসুইখ্যা বিছানায় সঙ্গী হিসেবে ভাল। বিছানায় উপুড় হয়ে বই পড়া মনে হয় সবচে পাঠকপ্রিয় ভঙ্গি। আমার অবশ্য কিছুক্ষণ পরেই হাড্ডি টনটনায় এইভাবে পড়লে। তখন বইটা মাটিতে ফেলে, খাটের কিনার থেকে কচ্ছপের মত গলাটা+ মাথাটা বের করে দিয়ে পড়ি। বহুবার এমন হয়েছে যে বিছানায় শুয়ে বই পড়া অবস্থায় নিম্নচাপ হওয়ায় বাথরুমের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে পথিমধ্যে দু পায়ের উপর ভার বদল করতে করতেই বই শেষ হয়েছে। নির্ভার মনে ছোটঘরে গিয়ে ভারমুক্ত হয়েছি। অনেকে শুনেছি ভারমুক্ত হওয়ার সঙ্গী হিসেবে বই ছোটঘর নিয়ে যান। সেটা ইসবগুলের ভুষি না টয়লেট পেপারের বিকল্প হিসাবে সেখানেই প্রশ্ন। Angela's Ashes বইতে পড়েছিলাম বিকল্প টয়লেট পেপার ব্যাবহারের ফলে ইয়ে-পোড়া বানরের মত মসি-বর্ণের পশ্চাতদেশ নিয়ে ঘুরে বেড়ানোর কথা।
দূরযাত্রায় অনেকের প্রিয় সঙ্গী বই। কিন্তু বাস যাত্রায় আমি সব সময় পেটের ভিতর থেকে উদ্গীরন করতেই ব্যাস্ত থাকি, বই গলাধঃকরন করব কখন? মনে আছে ছোটবেলায় একবার ট্রেন জার্নির শুরুতে হকারের থেকে ২-৪টাকা দিয়ে ভূতের গল্পের ২ টা চটি বই কিনে দিয়েছিল। ট্রেনের দুলুনিতে বসে সেই যে মামদো ভূত, কন্ধকাটা ভূত আর পেত্নীর সাথে পরিচয় হলো, সেই ভীতি বুড়ো বয়সেও মাঝে মাঝে বড় লজ্জায় ফেলে দেয়। মামদো ভূতের সাথে পেত্নীর বিয়ে হবে। পেত্নী গেল বিউটি পারলারে সাজতে, আর মামদো গেল নাপিতের দোকানে। সেখান থেকে কেমন করে নাপিতানী আর নাপিত ভূত দুটোকে ধরে ফেলল, বেশ একটা ডাবল ডেট টাইপের গল্প ছিল। ভূতের গল্প কেবল রাত বিরাতে পড়তে হবে, কে বলেছে? আত্মা ছোট হলে আর লেখক তেমন হলে ভর দুপুরেও হাতে ধরা বইটার ফাঁকে আঙ্গুল ঢুকিয়ে রেখে আস্তে করে খাটের নিচে বা দরজার চিপাটা একটু উঁকি দিয়ে দেখে নেয়া লাগে। তবে শীতের দুপুরে বারান্দায় যখন কড়া মিষ্টি চায়ের মত ওম ওম রোদটা এসে পরে তাতে পিঠ মেলে দিয়ে ভেজা চুল শুকাতে শুকাতে শরৎচন্দ্রের নেকা নেকা প্রেমকাহিনী, আহা বেশ বেশ! রোদটা যখন আরেকটু সরে আসে, তখন পায়ের পাতায় চিড়বিড়ে রোদের তাপ উপভোগ করতে রবিদাদুর গল্পগুচ্ছ ধরলে মনে হয় বুড়োর প্রেমে পড়ে যাই।
আরেকটু বড় হয়ে ( যখন থেকে মা খাওয়া নিয়ে ঘেনানো বাদ দিয়ে শরীর স্বাস্থ্যের দায়িত্ব আমার হাতে ছেড়ে দিল) আবিষ্কার করলাম আমার খাওয়া দাওয়া করতে ভাল্লাগে না । এতদিন আম্মা হু-তু-তু-তু করে খাইয়েছে, এখন নিজেকে নিজে কিভাবে ভুলায় ভালায় খাওয়ানো যায়? নিজেকে ঘুষ দিলাম, বই। একটা বই নিয়ে খেতে বসি। বই পড়তে পড়তে নানা রকম অখাদ্য পেটে চালান করে দিই, কোন সমস্যা হয় না। এমনিতে খেতে বসে পাতে ভাত খুঁটতে থাকি ঘন্টার পর ঘন্টা। বই থাকলে কখন খাওয়া হয়ে যায়, খেয়ালই হয় না! বই শেষ করার খাতিরে আরেকটু খাই। এই ক'বছর পারি নাই। ওজন কমেছে ১৫ পাউন্ড। গত দু'সপ্তাহ থেকে আবার বইসমেত খাওয়া দাওয়া চলছে, ওজন দেখি বাড়ন্ত! এইভাবে পড়লাম হুমায়ূন আহমেদের কতগুলা দামের সমান পৃষ্ঠাসংখ্যার কিছু বই। সময় প্রকাশন থেকে বের হওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধার ডায়রী সংকলন কয়েক খন্ড।
এত কিছুর পরেও এখন কেন বই পড়ে জুত পাচ্ছি না সেটা হয়ত কিছুটা ব্লগের দোষ। ছোট লেখা পড়ে পড়ে মনোযোগের দৈর্ঘ্য কমে গেছে। কাগজের বদলে স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকতে অভ্যস্ত হয়ে গেছি বলেই কি? তাহলে পিডিএফ পড়ে আরাম পাই না কেন? কারন জানি না, কিন্তু পাঠক সত্ত্বাটা হারিয়ে নিদারুন অসহায় আর বিমর্ষ বোধ করছি, তাই ইনিয়ে বিনিয়ে এই লেখা।
বই পাঠের আরও কতরকম আয়োজন, সেগুলোর কথা ইচ্ছে করেই বললাম না। সব আমি বললে পাঠক বলবে কী?
মন্তব্য
ভালো লেগেছে তবে "শরৎচন্দ্রের নেকা নেকা প্রেমকাহিনী" এই বিশেষণের প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আরো লিখুন বই নিয়ে। আগ্রহ করে পড়ব।
ইয়ে @ব্যাঙের ছাতা: একসময় গোগ্রাসে গিলেছি ঠিকই, কিন্তু শরৎ আর বঙ্কিমচন্দ্র দুটোই এখন বোরিং লাগে।
একাধিক বিশাল কমেন্ট করব, হাতের কাজ গুছিয়ে নেই।
আমি অবশ্য ধরেই নিয়েছিলাম, একটা বইয়ের নাম থাকবেই। অনেক আগে আমার এক পোস্টে খুব প্রিয় বই হিসেবে নাম উল্লেখ করেছিলেন কিনা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ইস আমার শরৎ আর বঙ্কিম সমগ্রকে মনে করিয়ে দিলা @তিথীডোর। মানুষ অনেক দিন না খেয়ে থাকলে যেভাবে খায়, বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র থেকে বইগুলা পাওয়ার পর সেভাবে দিনরাত এই বইগুলা গিলছিলাম।বঙ্কিমকে একটু কাঠখোট্টা মনে হলে ও শরৎ সমগ্রকে বেশ ভালু পেয়েছিলাম।
কোনটা? সব বই এর কথা কি এক পোস্টে ধরানো যায়? কমেন্টের অপেক্ষায় রইলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
যখন পড়েছি তখন বেশ লেগেছে, এখন আবার দূর থেকে বিশ্লেষণ করতে গেলে নেকা নেকাই মনে হয়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
লেখা
আজকাল ব্লগ পড়ে পড়ে আসলেও বই কম পড়া হয়।
সহমত।
আমার প্রিয় প্রেম কাহিনী "শবনম"। তার কাছে বাকি সবই ন্যাকা।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমারো তাই।
এই বইটার কথাই বিশেষ করে বলতে চেয়েছিলাম।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
সৈয়দ মুজতবা আলীর "শবনম"তো। আমরও বিশেষ প্রিয় একটা বই। বহুকাল আগে পড়া। বয়সের কারনেও অনেক লেখার আবেদনে হেরফের হয়।
শিশিরকণা, আপনার লেখাটি পড়ে স্মৃতিমেদুরতায় আক্রান্ত হলাম। ভাল লাগলো।
ছিতি বড় বেদানা!
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বই নিয়ে সবারই মনে হয় নানান বিচিত্র অভিজ্ঞতা আছে। অন্যেরটা পড়তে মজাই লাগে, নিজের সাথে মিলিয়ে দেখতেও ভালো লাগে। আপনার লেখা ভালো লাগল।
_________________
[খোমাখাতা]
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বই পাঠে আমার আসনের অভাব হয় না কখনো। পৃথিবীর সবরকম আসনে বই পড়তে পারি। এবং তাই করি...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
শবাসন উত্তম পাঠাসন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
রণদা কীভাবে বই পড়ে সেটা কল্পনার চোখে দেখতে গিয়ে আতঙ্কে হাতপা ... রুহ কেঁপে উঠলো য়্যাকদম!
কীভাবে?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হতে পারে বনফুলের "পাঠকের মৃত্যু" গল্পের মত আপনার পাঠক সত্বার পরিবর্তন হয়েছে। আমি প্রথম "মাসুদ রানা" সিরিজ পড়েছিলাম ক্লাস ফোরে থাকতে। "রত্নদ্বীপ"। তখন যে থ্রিল পেয়েছিলাম বা ক্লাস নাইন টেনে থাকতে রানা, তিন গোয়েন্দা, ওয়েষ্টার্ন সিরিজ থেকে সেই থ্রিল এখন পাইনা, কিন্তু বইগুলোতো চমৎকার। বঙ্কিম প্রথম পড়েছিলাম ক্লাস সেভেনে থাকতে। দুর্গেশ নন্দিনী পড়েই ক্ষান্ত দিয়েছিলাম কঠিন কঠিন শব্দের জন্য কিন্তু পরে ঠিকই পড়েছি কলেজে উঠে। দেবদাস, বিপ্রদাস, অরক্ষণীয়া, বিন্দুর ছেলে এগুলো প্রথম পড়ে কেদঁছিলাম, এখন পড়লে কান্না পায়না, কিন্তু কখনোই দেবদাস, স্বামী, অরক্ষণীয়া এগুলোর আবেদন ফুরায়নি। সেই তুলনায় 'সেবা রোমান্টিক' সিরিজটা আবেদন তৈরি করতে পারেনি। এখন না হয় ড্যান ব্রাউন পড়া শুরু করেছি, কিন্তু সাহিত্যের প্রতি আঘ বলেন আর ভালোবাসা বলেন সে কিন্তু তৈরী করে দিয়েছিলেন শ্রী শরৎচন্দ্র ।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ। পাঠক সত্বার মৃত্যুটাই তো ইনিয়ে বিনিয়ে বলার চেষ্টা করছি।
শরৎচন্দ্র এর শ্রীকান্ত ১ম পর্ব একসময় মুখস্ত করেছিলাম। কিন্তু এখন পিছন ফিরে কাহিনী গুলা মনে করলে মনে হয়, নারীদেরকে অবলা, দুর্বল, ভাগ্যের কাছে সমর্পিতা হিসেবে দেখানো হয় কেন? এর থেকে বঙ্কিমের নারী চরিত্র তুলনামূলক শক্তিশালী।
নাহ! আবার গিয়ে এগুলা রিভিশান দেয়া লাগবে, এই বয়সে পড়ে কেমন লাগে, সেটা দেখা দরকার। পুরনো স্মৃতি আর নতুন বিশ্লেষণের উপরভর করে লিখেছি।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
নস্টালজিক করে দিলেন। আগে কত জায়গায় কত ভাবে যে বই পড়েছি, মিস করি সেই সব দিন। কিন্তু শুয়ে শুয়ে বই পড়ার সেই মজা এখন পিডিএফ-এ পাই না। ধন্যবাদ।
এখন মনে হয় পিডিএফ পড়াটাই গতরে সয়ে গেছে, কিন্তু মনে সয়নি। শেষ পর্যন্ত পিডিএফ টাই পড়া হয় সময় সুযোগ সব মিলিয়ে কিন্তু মনটা খচে থাকে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
একটা সময় আক্ষরিক অর্থেই নাওয়া খাওয়া ছেড়ে বই পড়তাম আর এখন একদম আপনার মতই রাজ্যের আলসি লাগে। ভাবছিলাম বোধ হয় খালি আমারি এমন হয়, হয়না যে, সেটা জেনে স্বস্তি হল। লেখা ভীষণ ভালো লাগলো।
----------------
স্বপ্ন হোক শক্তি
১। নিশ্চই কমোডের চাইতে উত্তম ও আরামদায়ক কোন পাঠাসন নাই।
২। কুইজঃ 'জাগো' স্কুলের পোলাপান ফেলুদা পড়বে নাকি ন্য়ান্সি ড্রয়ু?
জাগোর পোলাপান পড়বে গোয়েন্দা ঝাকানাকা। যুগ পাল্টাইছে না?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বঙ্কিমের 'কপালকুন্ডলা' পড়ে কেঁদেকেটে, চোখ ফুলিয়ে কী অবস্থা! আমি বঙ্কিম পড়তাম বিচিত্র এক ভঙ্গিতে শুয়ে-বসে। আমার ছোটবোন বলত ওটা নাকি 'নৌকা-আসন'
কোথ্থেকে জানি একটা চিকনা, পটকা টর্চলাইট যোগাড় করেছিলাম। নিশিরাতে কম্বলের মধ্যে ঐটা জ্বালিয়ে 'ড্রাকুলা' পড়তাম আর ভয়ে শিহরিত হতাম।
ড্যান ব্রাউনের সবকয়টা বই পড়েছি বিকেলের রোদে, বাড়ির পাশের পার্কে খোলা আকাশের নিচে চীতপটাং হয়ে শুয়ে শুয়ে
তিথীর লেখা বরাবরের মতই 'নাইস' হয়েছে
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
আই হাই...শিশিরকণার নাম নিতে গিয়ে আরেকজনের নাম নিয়ে ফেলছি। আমার কেন যে বার বার ভুল করে মিসটেক হয়
“Peace comes from within. Do not seek it without.” - Gautama Buddha
'হ'! একটা পরিবেশ লাগে না?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বুঝছি কোন ভঙ্গির কথা বলছেন, এইটার যোগ নাম সম্ভবত অর্ধ-মৎস্যেন্দ্রাসন। মাজার ব্যাথায় বড় উপকারী।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বিছানার কিনারা থেকে গলা বাড়িয়ে মাটিতে রেখে বই পড়া, এই আসনটা আমার নিজস্ব ভেবেছিলাম !
কচ্ছপাসন নামে পেটেন্ট করে ফেলেন। নাইলে আমি আপনার আগে লাইনে দাড়ায় যাব। ঐভাবে পড়লে আমাকে টাকা দিয়ে তারপর পড়া লাগবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আচ্ছা, আমি কোথা থেকে কমেন্ট করা শুরু করবো?! তোমার এই পোস্ট পড়ে তো দুনিয়ার সব বই আর তাদের পড়বার কাহিনি মনে পড়ে গেল! ছোটবেলায় বাবা-মা চীনে ছবির বইগুলো থেকে পড়ে শোনাতো, আমি এতই মনোযোগী 'পাঠক' ছিলাম, যে ঠিকমতন নিজে নিজে পড়তে না জেনেও নানাকে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলাম আঙুল দিয়ে ঠিক ঠিক জায়গা ঠিক ঠিক 'পড়ে' ( ) শুনিয়ে! আমি আবার লিডার ছিলাম কিনা ছোট ভাই-বোনদের, তাদেরকে পড়ে-টড়ে শোনানোর দায়িত্ব স্বেচ্ছায় ঘাড়ে নিয়ে নিতাম!
সত্যিকারের সম্পূর্ণ একাএকা বইপড়া শুরু হয়েছিলো ক্লাস ওয়ানে ওঠার আগে দিয়ে। সে সময়ে বিটিভিতে অনেক রাতে একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান হতো 'রংবেরং' নামে। আমাকে অত রাতেও জেগে থাকতে দেয়া যাবে না এই মর্মে বাবা-মা ঘোষণা দিলো যে টিভিতে এই প্রোগ্রাম আজকে নাই। আমি পেপার খুলে বিটিভির টিভি অনুষ্ঠানসূচী থেকে পড়ে শুনিয়ে দিলাম রাত অতটা - 'রং-বেরেং'! পরদিন আব্বা আমাকে দুইটা ইয়া মোটা মোটা রূপকথা আর ছোটদের গল্পের বই কিনে এনে দিলো, আর বলে দিলো এগুলো আমাকে নিজেকেই পড়তে হবে, এখন থেকে কেউ আর আমাকে কোন কিছু পড়ে শোনাবে না। আমি প্রথমে এই বইগুলান পড়ে শোনানোর জন্যে একটু ক্যাচাল করেছিলাম, কিন্তু লাভ হলো না। শেষে নিজে নিজেই শেষ করে ফেললাম।
'তিন গোয়েন্দা'ও আব্বাই কিনে দিয়েছিলো, নিজের জন্যে মাসুদ রানা কিনে আনার সময়ে আমার জন্যে নিয়ে আসছিলো। আমার প্রথম পড়া তিন গোয়েন্দা হলো 'ইন্দ্রজাল' আর এর পরে 'ঘড়ির গোলমাল'। আমার ক্লাসের মেয়ে বন্ধুরা তিন গোয়েন্দা পড়া শুরু করেছে ক্লাস সিক্সে! (আর ছেলেরা ক্লাস নাইন হবে)! মনে আছে 'মমি' পড়ার সময়ে আমি দুপুর বেলায় বসার ঘরের সোফার মধ্যে গুটি মেরে শুয়ে ছিলাম, আর দিনে দুপুরেও ভয় লাগছিলো! কিন্তু তুমি মিয়া যেই চিপায় ঢুকে বই পড়তা! চাচীকে নিশ্চয়ই অনেক জ্বালিয়েছ!
বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন অ্যাঙ্গেলে বসে-শুয়ে-দাঁড়ায়ে আমারো অনেক অভিজ্ঞতা বই পড়ার। চুরি করে বই অড়ার অভিজ্ঞতা আরও জটিইইইইল! এর মধ্যে বেশিরভাগই মাসুদ রানা, শরৎচন্দ্র আর রবীন্দ্রনাথ। আমি তুলনামূলক অনেক পিচ্চিকালে বেশিরভাগই শেষ করে ফেলেছিলাম! পরে শরৎচন্দ্র মন দিয়ে পড়বার সময়ে 'নেকা নেকা প্রেমকাহিনী' নিয়ে আমার মাথাতেও কিছু চিন্তাভাবনা এসেছে, যেগুলো সম্প্রতি ঝালাই করেছিলাম, কিন্তু পাবলিকলি বললে মাইরধোরের চান্স আছে, আর এখন ঠিক অফেন্সিভ মুডে নাই তাই বলতেছি না।
আমার বিভিন্ন বয়সে পড়ার বিষয় নিয়ে আম্মা বিধিনিষেধ আরোপের করতে চেষ্টা করলেও আব্বা কখনো এইটা নিয়ে কোন বকাঝকা দেয় নাই। আব্বা আর আমি আর আব্বা, আমরা দুইজনেই প্রায় সবকিছু পড়ি। দুইজনে শেয়ার করে বই পড়ার অভ্যাস এখনো আছে। আমাদের স্কুলের লাইব্রেরীটা একটা দারুণ খনি ছিলো! কিছু আমেরিকান ছবি-গল্প-ছড়া মিশেল বই ছিলো কোথাও থেকে স্কুলের পাওয়া উপহার হিসেবে, সেগুলো নিয়ে আমি পুরা টিফিন পিরিয়ড পার করে দিতাম অনেক বড় হয়েও। ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষার আগের রাতে পড়তাম অ্যাসটেরিক্স কমিকস।
আমার একটা অভ্যাস হলো একটা বই শুরু করলে সেটা শেষ না করে ছেড়ে দেই না। বইটা ভালো না লাগলেও আমি নিজে শেষ পর্যন্ত পড়ে দেখি। তবে যেটা ভালো লাগে না সেটা আসলে পরে আর সেভাবে মনে থাকে না। মজার ব্যাপার হলো প্রতিদিন আবিষ্কার করছি আমার বাংলা ভাষাতেই বিভূতিভূষণ থেকে রশীদ করীম, কত বইই এখনো আমার পড়া হয় নাই! ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকে বই পড়ার সুযোগটা কমে আসছে, দিন দিন আরও। ছোটবেলায় বইয়ের দোকান থেকে যখন নিজের জমানো টাকা দিয়ে বই কিনতাম তখন খালি ভাবতাম আমি বড় হলে যখন চাকরি করবো আমার যেই বই ইচ্ছা করবে সাথে সাথে সেটা কিনে ফেলবো। এখন আমি এইটা করতে পারি, আমার এই ইচ্ছা পূরণ হয়েছে। কিন্তু এখন আমি যত বই কিনি, অত বই আর পড়বার সময় পাইনা। এখন মনে হয় ছোটবেলায় বই পড়বার ফ্রি টাইম চেয়েও দোয়া করতে হতো!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আমার প্রথম পড়া যে বইটার কথা মনে পড়ে, সেটা হলো "ভালুক দিদিমা গল্প শোনায়" আর টোনাটুনির রুপকথার বই গুলা, সাথে ক্যাসেট থাকতো, গল্পগুলো অভিনয় করে শুনাত। এগুলা এখন আর পাওয়া যায়? কী চমৎকার একটা উদ্যোগ ছিল।
এরপর পাঁচ কি ছয় বছর বয়সে স্কুল শুরু করার আগেই বানান করে পড়ে ফেলেছিলাম "নিশিথিনী" আর "ফেরা"।
স্কুল থেকে উপহার দিত নানা রকম রুপকথার বই। আর আব্বুর সাথে চুক্তি ছিল মাসের শেষে বেতন পেলে একদিন নিউমার্কেট বই এর দোকানে নিয়ে যাবে। ১০০টাকার বই কিনতে পারবো। অনেক ফিনান্সিয়াল রেস্পন্সিবিলিটি তৈরি হয়েছে তখন, কারন টিনটিন কিনব না ফেলুদা কিনব নাকি তিন গোয়েন্দা, কয়টা কেনা যাবে অনেক কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হত।
আমার এক ফুপুর বিশাল সংগ্রহ ছিল বই এর, উনি একেবারে বিদেশ চলে যাবার সময় সব বই আমাদের বাসায় দিয়ে যান। ক্লাস ফাইভ পর্যন্ত আমার সেই সংগ্রহ থেকে শরৎ, আশুতোষ, ফেলুদা, এমনকি তিন গোয়েন্দা শেষ করতে কেটেছে। অনেক কম বয়সে আমি এই বইগুলা পড়েছি বলে ওগুলোর মর্ম বুঝিনাই একমাত্র তিন গোয়েন্দা ছাড়া।
আব্বা আর আমি পড়ি সেবা অনুবাদ আর ওয়েস্টার্ন। আর সৈয়দ মুজতবা আলীর লেখা আমাদের দু'জনেরই প্রিয়। কিন্তু একটা বই আব্বা আমাকে পড়তে দেয় নাই। "শবনম"। এই বইএর নায়িকার নামানুসারে আমার নাম রেখেছে, অথচ পড়তে দিবে না, কিরকম অত্যাচার!!! শেষে বুয়েটের সেকেন্ড ইয়ারে একজনের থেকে জোগাড় করে লুকিয়ে পড়লাম। কী অসাধারণ! একদম আমার মনের মতো চরিত্র। আমি তো নিজেকে এরকমই ভাবতে চাই, হতে চাই। ছোটবেলায় পড়লে হয়ত কবিতা দেখে বিরক্ত হয়ে যেতাম। ভাগ্যিস আব্বা পড়তে দেয় নাই! আমার আসল নাম, সচল নাম সবি যে শবনমে মিলে মিশে একাকার বুঝতেই পারছ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
'শবনম' আমার পড়া হয়নি! মুজতবা সমগ্র অনেক গিয়াঞ্জাম করে পুরোটা সংগ্রহ করার পরে যত্ন করে তুলে রেখে দিয়েছি, যা যা পড়া বাকি ছিলো তা এখনো বাকিই আছে!
টোনাটুনির পুরা কালেকশন ছিলো আমার!! আবারো আব্বা! প্রতিবার ঢাকায় গেলেই নতুন একটা ক্যাসেট আর বই নিয়ে আসতো! এখন সম্ভবত সিডি/ডিভিডিতে পাওয়া যায়, আমি দুই একটা দোকানে দেখেছিলাম, তাও অনেক আগে!
সত্যজিতের সাথে আমার যে কত প্রাচীণ সম্পর্ক সেটা বলতে ভুলে গেছিলাম। ভাই-বোনদের কথায় মনে পড়লো। আমার বড় ভাই বেশি, ছোটকালে ভাইদের আদরে আদরে বাঁদর টাইপের ছিলাম আমি। তো তাদের প্রত্যেকের দুর্দান্ত রকমের বই পড়ার নেশা ছিলো। ফেলুদা, শঙ্কু, বারো করে সমগ্র, এক বড় ভাইয়ের থেকে পড়ার অভ্যাস গড়ে উঠেছিলো, ছোটবেলায় স্কুলের ছুটিতে দাদাবাসার বসার ঘরে দুই ভাইবোন পুরা নিবিষ্ট মনে পড়তাম। আর তিন গোয়েন্দার যত বই, প্রথম টু সর্বশেষ ছিলো আরেক ভাইয়ের, তার কাছে আসলে সেবার ক্লাসিক, অনুবাদ, ওয়েস্টার্নও প্রায় সব ছিলো। ভাইয়া পরে তার কালেকশন পাড়ার লাইব্রেরিকে দান করে দিয়েছিলো (এটা মনে পড়লে আমি এখনো সমপরিমাণ দুঃখ পাই! )
আহারে! সে সময়ে দিনগুলান কত ভালো ছিলো! বছর শেষে পরীক্ষাটা কোন রকমে দিতে পারলেই প্রায় দুই মাস খালি বই আর আমি, আমি আর বই!!
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
'আমি ছোটবেলা থেকেই ভীরু। সংসারের অবহেলা অনাদরের মাঝখানে এইটুকু সান্ত্বনা যে বাড়ি ফিরলে আমি সেখানে সবচেয়ে আদরের ধন। মণি ভরা, প্রবাল হার পরা অশান্তি ঐশ্বর্য আমি চাই নি। গ্রামের নদীটি পর্যন্ত আমি হতে চাই নি, হতে চেয়েছিলুম বাড়ির পিছনের ছোট পুকুরটি... যেখানে সামান্যতম তরঙ্গ উঠে আমাকে বিক্ষুব্দ্ধ করে না...'
#শবনম: সৈয়দ মুজতবা আলী।
যাযাবরাপু, জলদি পড়ুন এটা। বিশাল মিস করে যাচ্ছেন কিন্তু!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
http://shabnamenglish.blogspot.com/2008/05/blog-post.html
শুরুটা ধরিয়ে দিলাম। এখন শেষ করার দায়িত্ব তোমার।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বই বের করে রেখেছি, হাতেরটা শেষ করেই ধরবো।
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
এইখানে যোগ করে দেই, পড়াশোনার বই কিভাবে পড়তাম। পড়াশুনা সব হইত পরীক্ষার আগের ঘন্টায় পরীক্ষা হলে যেতে যেতে। রিকশায় আম্মা আমার কোমর পেচিয়ে বসতেন। আর আমি প্রানপনে বই এর পাতা উল্টাতে উল্টাতে ফটোগ্রাফিক ফ্ল্যাশ মেমরি চেয়ে আল্লাহর কাছে কাকুতি মিনতি করতাম। মোটামুটি ঘন্টা তিনেক মনে থাকলেই কেল্লা ফতে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
ছোটবেলা পড়ার বইয়ের বাইরে গল্পের বই পড়া ছিল আমার জন্য এক ট্যাবু বিষয়। আমার দাদীর ধারণা ছিল গল্পের ব্ই পড়তে থাকলে আর পরীক্ষায় পাশ করব না। ত কি আর করা দাদীকে ফাঁকি দিতে পড়ার বইয়ের চিপায় তিন গোয়েন্দা নিয়ে টেবিলে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকতাম। দাদীও খুশি আমিও খুশি।
আচ্ছা, এটা কেন ভাবত মুরুব্বিরা বলেন তো? গল্পের বইকে আউট বই বলার কি কারণ থাকতে পারে। একদমই যদি পড়ার বই না পড়ি, তাইলে ফেইল মারার সম্ভাবনা বাতিল করে দেয়া যায় না। কিন্তু ১টা ২টা গল্পের বই পড়লে কী ক্ষতি এটা একদম আমার মাথায় ঢুকে না।
আমাকে অবশ্য কখনো এই নিয়ে কিছু শুনতে হয়নি।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
মন্তব্য করার জন্য অনেক বেশি টপিক। অতো সময় নাই তাই দুয়েকটা জিনিষ নিয়ে লিখছি। ছোটবেলায় -- কলেজ পর্যন্ত -- শরৎচন্দ্র পিনপিনা লাগতো। এখন যখন পড়ি ঠিক উল্টোটা মনে হয়। আমাদের সমাজে মেয়েরা যে কতভাবে লাঞ্ছিত এবং বঞ্চিত তার অসাধারণ বর্ণনা। আমি অবাক হয়ে যাই, জিনিশগুলো এখনো একি রকম আছে, চেহারা একটু পাল্টেছে হয়তো।
তিন গোয়েন্দা আর ফেলুদা মোড়ানো দিনগুলো নিয়ে কিছু বলবা না। কী অপুর্ব একটা সময় পার করে এসেছি।
আগ বাড়ায় একটা তত্ত্বকথা ছাড়ি, কিছু মনে করেন না। আমাদের পরবর্তি প্রজন্ম যারা বেড়ে উঠছে, যাদেরকে আমরা পড়ার অভ্যেস গড়ে দিতে যাই, তাদের প্রতি এতটুকু যেন লক্ষ্য রাখি ওরা শুধু গল্পের বই না পড়ে। ফিকশনের বাইরে আরও অনেক বই যেন আমরা ওদের হাতে তুলে দেই। ওরা যেন পড়ে কিছুক্ষণ ভাবতে শেখে। শুধু কল্পনার জগতে বিচরণ না, বিশ্লেষণ করার স্কোপ পায়।
ধন্যবাদ। আম্রিকার স্কুলে দেখি বাচ্চাদের একটা রিডিং লিস্ট ধরিয়ে দেয়। তারপর বুক রিভিউ লিখতে দেয়। বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পাঠ তালিকা বেশ ডাইভার্সিফাইড ছিল, কিন্তু তখন পড়তে ইচ্ছা করত না, জোর করা হচ্ছে বলে। যদি বলেন ফিকশনের বাইরে কিছু পড়ানোর অভ্যাস গড়া, প্রথমে ইতিহাস, বিজ্ঞানের সহজ বই গুলা দিয়ে শুরু হতে পারে। জোর করে পাঠ্যাভ্যাস গড়ে তোলা যায় না। সব রকম বইএর উপস্থিতি থাকলে বিভিন্ন রকম বই ই হাতে উঠে আসবে। কিন্তু বাংলায় বিজ্ঞানের বই তেমন নাই, ইতিহাসের বই নিয়ে তো সংশয়ে ভর্তি। বাংলা ভাষায় ফিকশন ছাড়া অন্যান্য বই এর খুব অভাব।
আর হ্যাঁ, শরৎচন্দ্র নিয়ে যা বলেছেন, তাতে একমত।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
মন্তব্য করতে ইচ্ছে ৩৩ মাইল লম্বা, তার চেয়ে একটা পোষ্ট দিয়ে দিই!কি বলেন !
facebook
দেন দেন!
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ক্লাস এইটে মিলিটারী স্কুলে পাঠ-প্রস্তুতি'র সময় নিমাই ভট্টাচার্য পড়তে গিয়ে ধরা পড়েছিলাম। অতঃপর বইয়ের বাকী অংশ মুরগাসনে (হাঁটুর নীচ দিয়ে হাত নিয়ে কান ধরা অবস্থায়)শেষ করতে হয়েছিল। এখনো ভাবলে হাঁটু টনটন করে...
হলিক্রসের সিস্টার রা বারান্দা দিয়ে টহল দিত, ক্লাসে কেউ পড়ার বইএর ফাঁকে লুকিয়ে গল্পের বই পড়ছে কি না? আমার দুই দুইটা বই বাজেয়াপ্ত হয়েছে এইভাবে ধরা খেয়ে। কিন্তু যতগুলা পড়েছি তার তুলনায় কিছুই না। পাশের সীটে বসা বান্ধবীর সঙ্গে ক্লাসের বই শেয়ার করছি, দুই ডেস্কের মাঝে বই ঝুলছে, ভিতরে গল্পের বই। আমরা এত ঘন ঘন কেন পাতা উল্টাই সেটা যদি টিচার বুঝত। আবার সামনের সীটে বসা বান্ধবীর বই এর মাঝে লুকানো গল্পএর বই, এক পাতা পড়া হলে পিছন থেকে গুতা দিতাম, পাতা উল্টানোর জন্য। ক্লাসের মাঝে একজন সীটে বসে কেন লাফ দিয়ে উঠত বারে বারে, সেটাও টিচারের কাছে রহস্য ছিল।
আহা! সুখের দিন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপনারা কেউ বুরোতিনোর গল্প পড়েছেন? এই বইটা ছোট থেকেই আমার প্রিয় বই। বহুদিন ছিলো বাসায় এর পর কে যেন নিজের মনে করে নিয়ে যায়। পরে একদিন বইমেলায় বইটা আরেকবার পাই... এখনও আছে
বই পড়ার জন্য আমার প্রিয় আসন হলো আধা শোয়া হয়ে, পিঠের উপরে বা কাঁধের নিচে সাপোর্ট দিয়ে পড়া। বড় মিস করি সেই সব দিন গুলি
না তো! কোন দেশি? কিসের গল্প?
এখন তো পড়ার একমাত্র আসন হল ল্যাপ্টপের সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে বেধে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এটা অনেকটা পিনোকিওর রাশান ভার্সান
আমার দুর্বল স্মৃতিশক্তি যেন বলছে স্কুলের লাইব্রেরি থেকে নিয়ে পড়েছিলাম, নাম মনে ছিলো না, ছোটবেলায় পড়া পিনোকিওই বেশি ভালো লেগেছিলো, তাই এটা সেভাবে মনে দাগ কাটেনি। ডিটেইলস মনে করতে পারছি না এখন, তবে বইটা আকারে বড় ছিলো, আর অনেক রঙিলা ছবি ছিল সম্ভবত?
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
হ্যা আর খুব সুন্দরী নায়িকা ছিলো
আপু আপনি খুব খ্রাপ। এইসব পুরান কথা মনে করাইয়া দিতে হয়! (মিচকা শয়তানি হাসি হবে)। লেখা ভালু পাইলাম।
বই পড়ার আসন মোটামুটি সবই বর্ণনায় আর উপ্রে মন্তব্যে কাভার হইসে। (মিচকা হাসি)
বড় বেলার আগেই বড়দের বই পড়া শুরু হইছিল শরত, আশুতোষ আর ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায় দিয়া। আমার নানু বাড়ির লোকেরা অপবাদ দিয়া থাকে এই কইয়া যে ঐ বাড়ির এক আলমারি বোঝাই এইসব বই নাকি আমি হাপিস করছি।
দেবদাস যেদিন ছিপ দিয়া পার্বতীর কপালে দাগ বানাইয়া দিল, সেইদিন অনেক কাঁদছিলাম মনে পড়ে। এইটা সিক্সের কথা। তখন শরত বাবুর উপন্যাসের এই অংশটাই সবথেকে মারাত্মক জ্ঞান হইছিল, কি আশ্চর্য!
অসময়ে ‘শবনম’ পইড়া সৈয়দ মুজতবা আলির উপ্রে বিরক্ত হইছিলাম। বিরক্তিটা এখনো ক্যান জানি আছে!!
একটা বই ধরে শেষ না করা পর্যন্ত নিস্তার ছিল না। মনে পড়ে, মোটমাট টানা ২৩ ঘণ্টায় 'কড়ি দিয়ে কিনলাম' এর দুই খণ্ড সাবাড় দিসিলাম।
আরেকটা কথা। সচিত্র সন্ধানী পত্রিকার এক বিশাল সংগ্রহ ছিল বাসায়। প্রতি মাসে এইগুলা একবার কইরা রিভাইজ পড়ত। ঐ ধরণের পত্রিকা তো আর দেখি না এখন!
তবে এখন আর ক্যান জানি বই পড়ায় এক্কেরে উৎসাহ নাই-- মুনে কয় বিয়াফক জ্ঞানী হইয়া গেসি নিজেই-- তাই আর কারো লেখা পড়বার মুঞ্চায় না। (আসলে বনফুলের পাঠকের মরণ হইসে-- এইহানে কান্দনের ইমু হইব)
---------------------
Children are made readers on the laps of their parents.”
- Emilie Buchwald
Outside of a dog, a book is a man's best friend. Inside of a dog, it's too dark to read.”
- Groucho Marx
------------------------
পথেই আমার পথ হারিয়ে
চালচুলোহীন ছন্নছাড়া ঘুরছি ভীষণ--
'শবনম' প্রাপ্তবয়স্কদের বই ছুড বয়সে পড়তে গেলে ওভারডোজ হয়ে পেট নেমে যাওয়ারই কথা।
সচিত্র সন্ধানী দেখি নাই। আমাদের বাসায় রাখত বিচিত্রা আর রহস্য পত্রিকা। রহস্য পত্রিকায় দারুন সব ছোটগল্পের অনুবাদ ছাপত।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দারুণ একটা বিষয় নিয়ে লিখেছেন।
আমার প্রিয় জায়গা ছিল নিজের ঘর। দরোজা থাকবে বন্ধ। কেন যেন দরোজা বন্ধ না করে আমি পড়তে পারতাম না। প্রথমে সোফায় বসে পড়া শুরু হবে। তারপর বিছানায় আধশোয়া, তারপর চেয়ার। তারপর হেটে হেটে। তারপর মা খেতে ডাকবে। টেবিলে খেতে বসে পাশে বইটা রাখতাম। এই ছিল ম্যারাথন বই পড়া। তাই এইটা তো একদম মিলে গেল।
আজকাল বই পড়ার সময়গুলো কোথায় উড়ে গেল। সাত দিনেও একটা বই শেষ করতে পারি না।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
মুরুব্বি দেখে ফেললে মাইর দিবে এই ভয়ে অবচেতন মনে আটকে গেছে নাকি?
আমি সব বই পরেছি অনেক তাড়াহুড়া করে " আর দু'পাতা ঊল্টে লক্ষী মেয়ের মত পড়তে বসব" এই করে করে। বেশির'ভাগ হুমায়ূন আহমেদের বই, তাই বলার কিছু নেই।
লাইব্রেরী থেকে একটা বই ইস্যু করেছিলাম ১ মাসের জন্য, তারপর আবার ৩ সপ্তাহের জন্য রিনিউ, ৩৫০ পৃষ্ঠার বই, ৩ দিন বাকি আছে, এখন পর্যন্ত ভূমিকা ধরে মাত্র ১০০ পৃষ্ঠা শেষ করেছি। (
যাযাপু'র মত বলি, " ছোটবেলায় ফ্রী টাইম চেয়ে দোয়া করতে হত"। যে পড়তে চায় তার কখনো বই এর অভাব হয় না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
কন কী! আমার তো প্রতিদিন কমসে কম ১০-২০ পাতা পড়া হয়! পড়া বইয়ের কোন নির্দিষ্ট ধরন নাই। তবে সারাজীবন দেখলাম দরকারি বইয়ের চাইতে বেদরকারি বই পড়তে বেশি ভালু লাগে।
আমার ভয়াবহ মোশন সিকনেস আছে তাই বাসে-ট্রাকে-ট্রেনে-প্লেনে বসে পড়তে পারি না। না হলে পড়ে ফাটিয়ে দিতাম।
আমাদের ছিল তিন হাত উচ্চতার এক আলমারি। তার মাথার ওপর রাজ্যের কাঁথা-বালিশ।
আমার প্রিয় পঠন-ভূমি ছিল ওই আলমারির মাথা।
এইটা আমারও সবচে ফেভারিট জায়গা। আপ্সুস, এখন আর আলমারির মাথার উপর জায়গা হয় না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এই লেখাটা কেমনে যেন চোখের আড়ালে ছিলো।
যাজ্ঞা- ইন শর্ট, বারান্দায় রাখা সাইকেলের চাক্কার কোণে পড়তাম। আজকাল উপুড়াসনে পড়ি।
পড়াটাই আসল কথা।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমি বই পড়তে অনেক পছন্দ করি। তবে আমারও একই অবস্থা, ব্লগ পড়ে ধৈর্য কমে গেছে। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, তোমার বই পড়ার প্রতিটি পয়েন্টের সাথে আমার বড় মেয়ের মিলে গেল, শুধু লেপ -তোষকের ভেতর ছাড়া! সে এখন একজন ডাক্তার, তবুও খাবার টেবিলে বই থাকে, বাথরুমে যাবার সময় ও বই হাতে বই থাকে।
অনেক শুভ কামনা রইলো।
জোছনা
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
নতুন মন্তব্য করুন