মার্চ মাস এলেই টিভিতে মুক্তিযোদ্ধা কিংবা শহীদ পরিবারের স্বজনদেরকে ডেকে ডেকে ১৯৭১ এর স্মৃতি বলতে বলা হয়। ঘুরে ফিরে কিছু মানুষের কাহিনীই আমরা বারে বারে শুনি। কিন্তু শুধু তারাই কেন শোনাবেন? একাত্তরে এদেশে মারা গেছে ৩০ লক্ষ মানুষ, আমাদের তো ৩০ লক্ষ গল্প থাকার কথা। অন্তত ৩০ লক্ষ সাহসিকতার গল্প। সে সময় বাঙালি ছিলো সাড়ে সাত কোটি, তত কোটি গল্প কি আমরা শুনেছি?
একাত্তরের কথা শুনলেই আমরা মনে করি ভীষণ কষ্টে ভরা এক সময়ের কথা, রক্ত হত্যা, মৃত্যু, সব মিলিয়ে এক বিভিষীকাময় সময়ের কথা। কিন্তু যে গল্পটা সে সময়ের প্রজন্ম আমাদেরকে শোনায় না সেটা হলো আমাদের অসম সাহসিকতার গল্প। অসংখ্য বীরের গল্প। একাত্তর বাঙ্গালিদের মাঝে মানুষ হিসেবে সেরা অংশটুকু বের করে এনেছিল। এমনকি রাজাকার নামের যে পিশাচগুলো তাদেরও পিশাচসত্ত্বার সবচে কদর্য অংশটুকু তখনই বের হয়ে এসেছিল। মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন সম্মুখসমরে, সাধারণ বাঙালি পরিবারগুলো তাদেরকে নানাভাবে সাহায্য করেছেন, যুদ্ধের ঝাপটা সয়েছেন। প্রতিটা পরিবারেরই রয়েছে ৭১ এর কিছু না কিছু গল্প। এই গল্প গুলো আমরা কতটা সংরক্ষণ করেছি বা আদৌ শুনেছি কি না জানি না। কিন্তু কেবল দেশের ইতিহাস হিসেবেই নয়, পারিবারিক ইতিহাস হিসেবেও এগুলো আমাদের সংগ্রহে রাখা উচিত। ১৯৭১ পেরিয়ে আসা এই মানুষগুলো যখন আর থাকবেন না তখন এই গল্পগুলো আর কোথায় পাওয়া যাবে?
আমার পরিবারের চৌদ্দ গুষ্টির বেশিরভাগই মুক্তিযোদ্ধা, এমন দাবি আমি করতে পারি না। আমি নেহাতই সাধারণ পরিবারের মানুষ, তবু আমার বাবা মা একাত্তর দেখে এসেছেন, তাদের ছোট ছোট গল্প আছে। ছোটবেলায় কোন এক লোডশেডিং এর অন্ধকারে গল্প করতে করতে আব্বা বলেছিলেন ১৯৭১ এর কিছু স্মৃতি। খুব সাধারণ গল্প কিন্তু এটাই তো আমি গর্ব করে আমার সন্তানকে বলে যেতে পারব। একাত্তরে বাবার পুরো পরিবার রাজশাহী শহরের বাড়ি ফেলে পালিয়েছিলেন গ্রামে। সরকারি চাকুরে দাদাকে প্রানের ভয়ে অফিসে হাজিরা দিতে হয় নিয়মিত, তিনি কর্মস্থলে, এর মাঝে খবর এলো পাকবাহিনী রাজশাহীর বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে, আব্বা তখন স্কুলে পড়েন। ছোট ছেলেকে আর্মি কিছু বলবে না ভেবে তাকে পাঠানো হল ক্ষয় ক্ষতি দেখে আসতে। পথে রাজশাহী বাজারের কাছে আব্বা কিছু পাক আর্মির হাতে ধরা পড়ে গেলেন, এরা তাকে হাত, চোখ বেধে মারধর করে একটা বিল্ডিং এ আটকে রাখলো। সেখানে নাকি আরও মানুষ ছিল যাদেরকে ধরে এনেছিল। কিছুক্ষণ পর পর এক দু জন করে বের করে নিয়ে যাচ্ছিলো এবং গুলির শব্দে বুঝা যাচ্ছিলো তাদের মেরে ফেলা হচ্ছে। লিকলিকে আব্বা কোনভাবে মোচড়ামুচড়ি করে বাধন খুলে ফেলেন। তারপর দেখতে পান, জানালার একটা শিক আলগা, সেটা কিভাবে যেন ম্যানেজ করে শিক গলে পালিয়ে দেন ভোঁ দৌড়। রাজাকাররা দেখতে পেয়ে পিছে ছুটে আসে, আব্বা বাজারের লোকের মাঝে মিশে যান এবং চট করে গেঞ্জির উপরে পড়ে থাকা শার্ট টা খুলে ফেলে দেন। ফলে রাজাকারের দল আর আলাদা করে চিনতে পারে না কাকে তারা খুঁজছিলো। তাদের চোখের আড়ালে এসেই এক ছুটে আবার গ্রামের বাড়িতে এসে পড়েন আব্বা।
এটা খুবই সাধারণ একটা গল্প ১৯৭১ এর । এরকম লক্ষ লক্ষ মানুষকে রাজাকার পাক বাহিনী ধরে নিয়ে গেছে। কিন্তু যখন শুনি আমার আব্বাকে রাজাকার ধরে নিয়ে যাচ্ছে, আমার বুক কেঁপে উঠে। যখন শুনি একটু বাদে মেরে ফেলবে,আমার গলার কাছে কি যেন আটকে যায়। যখন আব্বা পালাতে পারেন, তখন পাহাড় সরে যায়। শার্ট পালটে ফেলে রাজাকারদের ধোকা দেয়ার কথা শুনে হেসে ফেলি আর তার উপস্থিত বুদ্ধি আর সাহসের কথা ভেবে গর্ব হয়।
এই গল্পটা অনেক আগে মুখে মুখে শোনা, অনেক খুটিনাটি আব্বাকে জিজ্ঞেস করা হয়নি। সেগুলো জিজ্ঞেস করে আমি এই ঘটনা গুলি লিখে রাখব। যেমন কবে রাজাকাররা বাড়ি পোড়ালো, কবে, কোথায় রাজাকাররা আব্বাকে ধরে নিয়ে গেলো। ক্যাম্পটা কোথায় ছিল। যাদের মেরেছিল বা ঐ সব রাজাকার কারও নাম জানেন কি না? এসব তথ্য গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু স্রেফ আপনার পরিবারের আনন্দ বেদনা সাহসের কাহিনী আপনার বংশধরকে জানাবার জন্যও কি লিখে রাখা জরুরি নয়?
ইতিহাস একা কেউ লিখে না। ইতিহাস নকশী কাথার মত। অনেক গুলো ছোট ছোট ফোঁড় দিয়ে পুরো কাহিনীটা তৈরি হয়। আমাদের ইতিহাসের ছোট ছোট ফোঁড় গুলো আমাদেরই সংগ্রহ করে রাখতে হবে কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়ার আগেই। আমার বাবার যেমন গল্প আছে, আমার মায়েরও আছে, আমার দাদী, ফুপু, শ্বশুর-শাশুড়ী, এমনকি বাসার ঠিকা বুয়া তারও একটা গল্প আছে। এই গল্প গুলো সাজালে কি চমৎকার একটা ছবি যে আমরা পাব ভেবেই আমার ভালো লাগে। অনেক অনেক দিন এইসব গল্প কেউ শুনতে চায়নি। পুরানো ইতিহাসের কথায় বিরক্ত অধৈর্য্য হয়েছে মানুষ। এতদিন ধরে যে ব্যাথা , যে কথা তারা তুচ্ছ ভেবে বুকের ভিতরে চেপে চুপচাপ আগলে রেখেছেন সেগুলো এখন আমরা আদর করে নিজেদের সংগ্রহে তুলে রাখতে হবে, নাইলে পরের প্রজন্মকে কে এসব গল্প বলবে।
গল্প শুনতে আমার খুব ভালো লাগে, আর সত্যি ঘটনা হলে তো কথাই নেই। ১৯৭১ এর চে চমৎকার ঘটনাবহুল সময় কি এই জাতির জীবনে আর এসেছে? সেই সময়ের এইরকম সব গল্প শুনবার লোভ থেকেই একটা ছোট উদ্যোগ নিয়েছি। খুবই সাদামাটাভাবে শুরু করেছি গল্প শুনবার আর সবাইকে শুনাবার একটি সাইট। www.storiesof71.com নামের এই সাইটে একটা ফর্ম আছে, সেখানে আপনার বা পরিচিত কারও ১৯৭১ এর স্মৃতি থেকে যে কোন কাহিনী সেখানে লিখে জমা দিতে পারেন। সাথে কিছু টুকিটাকি তথ্য সংগ্রহ করে রাখছি, সত্যতা যাচাই এবং গল্পগুলো সাইটে গুছিয়ে রাখার সুবিধার্থে । লেখার পাশাপাশি অডিও বা ভিডিও আপলোড করে তার লিঙ্ক ও দিতে পারেন। সাইটটি সমৃদ্ধ করতে সবার অংশগ্রহণ কামনা করছি।
আসুন একাত্তরের গল্প বলি, গল্প শুনি।
মন্তব্য
আপনার বাবার ঘটনা পড়তে পড়তে শরীরের রোম দাঁড়িয়ে গেল!
এরকম কত শত গল্প দিয়েই আমাদের 'স্বাধীনতা' শব্দটা পেয়েছি আমরা।
আপনার storiesof71 এর উদ্যোগটা খুব ভালো লাগলো।
এখন আমরা আরও বেশি করে জানতে পারব সেইসব দিনগুলোর কথা।
পরিচ্ছন্ন লেআউটও খুব ভালো লাগলো।
আশা রাখছি একসময় এটা ৭১ এর গল্পের বড় একটা খনি হয়ে উঠবে।
শুভেচ্ছা
তুমি তো আজকাল দেখি ব্যাপক বড় বড় কমেন্ট করতেসো হেহ হেহ
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
আগে কঠিন কঠিন ক্যাপচা ভেঙে মন্তব্য করতে হত। হাচল হওয়ার পর ওটা আর করা লাগে না- এটা একটা প্রেরণা।
সত্যিটা হল, মানসিক চাপ বাড়ছে। তার সাথে সমানুপাতিক হারে বাড়ছে ঐ চাপটাকে এড়িয়ে থাকার প্রবণতা।
এজন্য প্রতি আধঘন্টা পরপর সচলে ঢুকে বসে থাকছি। যখন কিছু টাইপ করতে থাকি, তখন ক্ষণিকের জন্যে হলেও ঐ মানসিক চাপটা অনুভব করি না। এটাকে নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছি।
শুভেচ্ছা
আপনার বাবা মা দাদা দাদী নান নানী খালা মাম চাচা ফুফা সবার থেকে গল্প শুনে শুনে এখানে জমা দেন। আমি তো ঠিক করেছি, এখন থেকে বয়স্ক কারও সঙ্গে দেখা হইলেই জিজ্ঞেস করব, একাত্তরে আপনার স্মরণীয় ঘটনা একটা বলেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
শুধু জিজ্ঞেস করলেই হবে না, আমাদেরও শোনাতে হবে!
.............................
তুমি কষে ধর হাল
আমি তুলে বাঁধি পাল
-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে
শুধু বুড়া আঙ্গুল না , গল্প শুনতে চাই। এর পরের বার বাপ মা শ্বশুর শাশুড়ী মুরুব্বি যার সাথেই কথা বলবা, জিজ্ঞেস করবা, তারপর এইখানে টুক করে লিখে জমা দিয়ে দিবা।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
চমৎকার
..................................................................
#Banshibir.
কিন্তু আপ্নের পরিবারের একাত্তরের গল্প বলেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
দারুণ।
ব্লগবাড়ি । ফেসবুক
অসাধারন উদ্যোগ । আপনার বাবার জন্য শ্রদ্ধা রইল।
ইসরাত
উদ্যোগ সফল হবে যত বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করবে। খুব বেশি কিছু লাগবে না। সাদামাটা ভাবে বলা গল্পই সই।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গল্প আনো হে বালিকা, কত্ত গল্প যে শোনার বাকি আছে আমাদের।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভালো উদ্যোগ। আমার দু'পয়সা যোগ করার চেষ্টা করব।
_____________________________________________________________________
বরং দ্বিমত হও, আস্থা রাখো দ্বিতীয় বিদ্যায়।
আপনার গল্প পড়বার অপেক্ষায় থাকলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অসাধারণ উদ্যোগ। সাইটটা দেখে ভালো লাগলো। গল্প জমা দেবার ফর্ম নীড়পাতায় না রেখে আলাদা ট্যাব করলে মনে হয় দেখতে আরও ভালো লাগবে।
- সুচিন্তিত ভুল
মতামতের জন্য ধন্যবাদ। আপাতত ফর্মের লিঙ্কে ক্লিক করলে আলাদা ট্যাবে খোলার ব্যবস্থা রেখেছি। নীড়পাতায় রাখার কারণ তখন তখন কিছু ইনপুট দিতে আগ্রহী করার জন্য। আমি ওয়েব ডিজাইনে খুব একটা পারদর্শী না, আস্তে আস্তে গুছাবার চেষ্টা করছি। কিন্তু মার্চ মাসের ঢেউটা ধরার জন্য যে অবস্থায় ছিল সেভাবেই প্রকাশ করলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অসাধারণ উদ্যোগ।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
অনেক ধন্যবাদ। আপনার পরিবারের গল্প দিয়ে এই প্রচেষ্টাকে সমৃদ্ধ করবেন আশা রাখছি।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আমার কিছু গল্প আছে।
------------------------------------------------------------------------------------------------------------
“We sit in the mud, my friend, and reach for the stars.”
অলীক জানালা _________
শিশিরকণা, অনেক ভাল লাগলো ভাই। আসলে একটা সাহসী লেখা লিখেছেন। ইতিহাস শুধু গুটিকতক মানুষই জন্ম দেননি আপনার বাবা বা এমন অনেক পরিবার আছেন যারাও সামিল ছিলেন এই ইতিহাসের সাথে। খুব ছোট করে বলবো। ৭১ সালে আমি জন্ম নেইনি। তার অনেক পরে জন্মেছি। আম্মার তখন দুই ছেলে আর এক মেয়ে। জানের ভয়ে পালাচ্ছেন। কুষ্টিয়াতে পাকি বাহিনী চলে এসেছে। বাসার মুরগী আর হাঁস গুলোকে ছেড়ে দিয়ে গরুর গলার বাধণ খুলে দিলেন। বেচারী যেন না খেয়ে না মরে। মাঠ ভেঙ্গে দুই কোলে দুই বাচ্চা নিয়ে আর আরেকজন কে হাটিয়ে পালাচ্ছেন। পেছন থেকে গরুর ত্রাহি চিৎকারে থামলেন। আম্মার প্রিয় গাভিটি লেজ উঁচু করে আম্মার পেছন পেছন চলে এসেছে। এই কথা যতবার শুনি ততবারই চোখে পানি চলে আসে। ইতিহাসের প্রধাণ আসলে যারা বীর সেনানী তারাই।তারপরেও এগুলোও আসা উচিৎ।
Shah Waez (শাহ্ ওয়ায়েজ।)
Facebook
..............................................................................................
ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে, মহুয়ার বনে মাতাল হাওয়া খেলে।
এক মুঠো রোদ আকাশ ভরা তারা, ভিজে মাটিতে জলের নকশা করা,
মনকে শুধু পাগল করে ফেলে।
এইরকম ছোট ছোট গল্প শুনতে কত আপন লাগে। আপনার গল্পটা সাইটে দিয়ে দেন । তারপরেও নিশ্চয়ই অনেক কাহিনী আছে, পালিয়ে কোথায় আশ্রয় নিলেন, সেখানে কিভাবে দিন কাটলো, যুদ্ধ শেষে কিভাবে ফিরে এলেন, এসে বাড়ি ঘরের কি অবস্থা দেখলেন? সেই গাভীটারই বা কি হলো?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অসাধারণ একটা উদ্যোগের জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ
এসব গল্প লিখতে/পড়তে/শুনতে কলিজায় বাড়তি জোর থাকতে হয় যেন!
আপনার বাবা-মায়ের প্রতি অনেক শ্রদ্ধা, ভালোবাসা।
***
মায়ের গল্পে গুটিকয়েক টাইপো থেকে গেছে। সময় করে একটু শুধরে নিন প্লিজ!
বারি-বাড়ি, লন্ডভন্ড-লণ্ডভণ্ড, কিছুদুর-কিছুদূর, কখনওবা-কখনোবা
___________________
ঘুমের মাঝে স্বপ্ন দেখি না,
স্বপ্নরাই সব জাগিয়ে রাখে।
আছ নাকি সাথে? আর কিছু না হোক তোমার আব্বা আম্মার একাত্তরের স্মৃতি গুলা শেয়ার কোর।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভাল উদ্যোগ। তবে সাইটে রিভার্সে টেক্সট রাখাটা আরেকবার ভেবে দেখতে পারেন।
বুঝি নাই স্যাম দা। কালোর মধ্যে সাদা টেক্সট এর কথা বলছেন? এই সাইট এখনো নির্মানাধীন, ক্রম পরিবর্তনশীল। এরকম গঠনমূলক সমালোচনার পাশাপাশি কিছু সাহায্যের হাতও দরকার। আমি সাইটের কারিগরি দিকে নেহাত কাঁচা।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
চমৎকার উদ্যোগ; আশা করি ধীরে ধীরে '৭১ এর গল্পের খনি হয়ে উঠবে এই সাইটটি; আমিও তক্কে তক্কে থাকবো, গল্পের সন্ধান পেলে যোগ করব।
কুণ্ঠিত পান্থ
চমৎকার উদ্যোগ
চেষ্টা করবো কিছু যোগ করতে।
কড়িকাঠুরে
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
খুবই চমৎকার উদ্যোগ আপু। আমি দুইদিন আগেই আমার আম্মার গল্পটা জমা দিয়েছি।
আব্বার গল্পের বিস্তারিত ভালোভাবে জেনে নিয়ে যত দ্রুত সম্ভব জমা দিয়ে দিব।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
আপনার গল্পটা প্রকাশিত হয়েছে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
উদ্যোগটা ভালো লাগলো।
তখন আমি খুবই ছোট, আর সবার মতো আমারও ছোট সময়ের বেশীরভাগ ঘটে যাওয়া ঘটনা গুলো মনে নেই। তার পরেও একটা ঘটনার কথা কখনো ভুলতে পারিনা, আমার দাদু ছিলেন মুক্তিযোদ্ধা। বোকা আর সাধা-সিধে এই লোকটা আমাদের ছোটদের মাঝে বরাবরই অজনপ্রিয় ছিলো। আমরা যখন রাতের আধারে বাড়ীর উঠোনে গোল হয়ে বসে ঘুম ঘুম চোখে দাদীর মুখে শুনতাম পাশের বাড়ির শিমুল গাছের চুড়োয় বসে থাকা পেত্নী টার নানারকম রোমহর্ষক কীর্তিকলাপ এর বর্ননা তখন দাদু উঠোনের অন্ধকার কোনে বসে তাকিয়ে থাকতেন। রাতের তারা জলা আকাশের দিকে তাকিয়ে হয়তো ভাবতেন তার দেখা সত্যিকারের কোন ভয়াল রাক্ষসের কথা। বরা-বরিই চুপচাপ এই লোকটা একলাফে আমার কাছে আমার সমস্ত গর্বের মূল হয়ে উঠলো এক ঈদের সময়।সেদিন আমি ঘুম থেকে থেকে উঠে দাদুর হাত ধরে যথারীতি পাশের স্কুল মাঠে চলে গেলাম, ঈদের মাঠে। চারদিকে ওইদিন আলাদা একটা সাজ সাজ রব ছিলো কারন আমাদের ছোট্ট গ্রামের ঈদে সেবার এসেছিলেন আমাদের সহ আশে-পাশের সব এলাকার সবচেয়ে প্রতাপশালী এবং এলাকার একমাত্র নিজ নামে স্কুল, মাদ্রাসা সহ বেশীরভাগ স্থাপনার অর্থ দান কারী জনৈক ভদ্রলোক। ঈদের নামাজের লোকারন্যের মাঝে আমি আর দাদা এককোনায় গুটিশুটি মেরে বসে পড়লাম। নামাজ শেষ করার পর আমরা যখন বের হয়ে যাচ্ছিলাম তখন এলাকার ঈমাম সাহেব এর গলা ভেসে আসলো মাইকে, আগত উক্ত ভদ্রলোক আমাদের উদ্দেশ্য বক্তব্য রাখবেন। সবার ঘুরে দাড়ানোর কারনে অগত্যা আমদেরকেও থেমে দাড়াতে হলো। বক্তব্য এ উক্ত ভদ্রলোক তার নানা রকম উন্নয়ন মুলক কাজের ফিরিস্তি তুলে ধরার পর বললেন- এখন থেকে আপনারা আমাকে আপনাদের সাথেই পাবেন আমাকে,আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি দেশের বাইরে থেকে আমি স্থায়ী ভাবেই আপ্নাদের মাঝে চলে আসব,এলাকার বাকী উন্নয়ন এর জন্য আমি এবার চেয়ারম্যান হবার ইচ্ছা রাখি এবং আশা রাখি আপনারা নির্দিদ্ধায় আমাকে নিবার্চন করবেন। চারদিকে হাততালির মাঝে হঠাৎ একটা গমগমে স্বর ভেসে আসলো, আমার দাদুর। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে দেখি বরাবরই চুপচাপ থাকা লোক টার চেহারায় আজকে কেমন যেন কাঠিন্য চলে আসছে। চারদিকে হঠাৎ এত্ত চুপ হয়ে গেল যে আমি স্পষ্ট শুনতে পেলাম পাশের লোকটা বড় বড় শ্বাসের শব্দ। দাদু বললেন,- আর কেউ জানুন বা না জানুক আমি জানি যুদ্ধের সময় কি হইছিলো এই এলাকায়। আমার চোখের সামনেই ঘটছিলো ধোপা বাড়ির সমস্ত ঘটনা গুলো। তুমি আর তোমার বাপে তখন বাজারে শান্তি রক্ষা কমিটির দ্বায়িত্বে ছিলা। এই এলাকায় মিলিটারিগোরে পথ দেখাইছিলো তোমার বাপে। আমারেও খুজছিলা তোমরা ধরাইয়া দিবার জন্য। কিচ্ছু ভুলি নাই। দেশের বাইরে থাকও এতোদিন কিচ্ছু বলি নাই কাউরে, এই এলাকার সবাই এ জানে তোমাগো সম্পর্কে। সবাই ভুইলা গেলেও আমি ভুলি নাই। এই আমি তোমারে এইখানে সাবধান কইরা দিতাসি, চেয়ারম্যান হইতে যাইও না আর দেশে থাকারও চিন্তা ভাবনা থাকলে বাদ দিয়া ফালাও। আমার কথা শুন বা না শুন কিন্তুক আমি কে এইটা মাথায় রাইখো।
সেদিন বুজতে পারি নাই এই ছোটখাট লোকটার ভেতর একটা বাঘের অস্তিত্ব ছিল। এখনও যখন বাড়িতে যাওয়া হয় লোকজন এসে দেখা করে, নানা কিছু জানতে চায়।সবার শেষ উপদেশ একটাই থাকে আমার প্রতি -কক্ষনো ভুলে যাইও না তোমার দাদা কে ছিলেন।
আমার দাদা মুক্তিযোদ্ধা লতিফুর ভুইয়া মারা গেছেন প্রায় ৫ বছর আগে। মাঝে মাঝে যখন ছোট ছোট বাচ্চাদের দেখি পার্কে বসে থাকে তাদের দাদা দের সাথে তখন কেমন জানি একটা ছেলে মানুষি অহংকার হয়, আমার এমন কারো নাতি যার দাদার জন্যই আজকের দেশটার নাম আজ বাংলাদেশ,পতাকা টার রং লাল আর সবুজ।
সজল //ইরন
অনেক ধন্যবাদ গল্পের জন্য। অবিলম্বে সাইটে প্রকাশ করা হবে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
লিঙ্কটা ফেভারিটসে রাখলাম। যতগুলো পারি গল্প যোগাড় করার চেষ্টা করবো। একটা প্রশ্ন - একাত্তরের চিঠি নামে একটা বই আছে, পিডিএফ ভার্সন ফ্রি পাওয়া যায়। যদিও ওটা একটা কর্পোরেট হাউসের উদ্যোগ, ওটার একটা কপি কি ওখানে রাখা যায়? আইন গত কোন সমস্যা না থাকলে?
____________________________
যদিও পিডিএফ পাওয়া যায়, ওটা সম্ভবত কপিরাইট আইন লঙ্ঘন করে। তাই সাইটে রাখতে চাই না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অসাধারণ উদ্যোগ।
খুব ভালো উদ্যোগ। আশা করি অনেক গল্প আসবে।
--------------------------------------------------------
এক লহমা / আস্ত জীবন, / এক আঁচলে / ঢাকল ভুবন।
এক ফোঁটা জল / উথাল-পাতাল, / একটি চুমায় / অনন্ত কাল।।
এক লহমার... টুকিটাকি
সাধুবাদ জানাই এই উদ্যোগকে।
এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার।
।ব্যক্তিগত ওয়েবসাইট।
কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ অভ্র।
মুক্তিযুদ্ধের কথ্য-ইতিহাস সংগ্রহের ফরম একেবারেই সাদামাটা হওয়া দরকার। জাষ্ট ঘটনার বর্ণনা থাকবে। স্মৃতি থেকে যতটুকু বলা সম্ভব বলবে। কারণ অনেক অনেক বছর পার হয়ে গেছে।
ফরমে কোন * Required ফিল্ডের প্রয়োজনই নেই বলে মনে করি। ফরমের এই জমকালো অবস্থা দেখলে অনেকেই বলতে চাইবে না।
যেমন ধরুন- চট্টগ্রাম অঞ্চলের কথা। শরণার্থী দল দেশ ছেড়ে যাচ্ছে। দলে খুব সুন্দরী এক কিশোরী ছিল। হায়েনাদের দৃষ্টি থেকে তার রূপ-যৌবন আড়াল করার জন্য মেয়েটিকে ছাই, কালি ঝুলি মাখিয়ে নেয়া হয়েছিল- কোলে একটা বাচ্চা দিয়ে রাখা হয়েছিল। তারপরও রাজাকারদের হাত থেকে তাঁর সম্ভ্রম রক্ষা করা যায়নি।
-আমার হাতে আর কোন তথ্য নেই। কিন্তু মাত্র আড়াই লাইনে এক কিশোরীর যে অব্যক্ত বেদনা লুকিয়ে আছে, আপনার ফরমে তা ধারণ করা সম্ভব?
ফীডব্যাকের জন্য অনেক ধন্যবাদ। required field গুলা রেখেছি গল্প থেকে তথ্য আলাদা করার সুবিধার্থে, এই তথ্য পরে অন্যভাবেও কাজে আসতে পারে।
আপনার গল্পটি আড়াই লাইনের হলেও এর মধ্যে কিন্তু প্রয়োজনীয় ফিল্ডগুলো পূরণ করার মত তথ্য আছে। এটাই আসলে উদ্দেশ্য, আমরা খুব তুচ্ছ মনে করে এই গল্প আর তুলে ধরি না, কিন্তু এটারও অনেক মূল্য আছে। এরকম গল্প টেনে বের করাই উদ্দেশ্য।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এই উদ্যোগটি প্রকাশ করার পর জানতে পারলাম, বিভিন্ন সময়ে অনেকেই এইরকম উদ্যোগ নিয়েছেন, যেগুলো পরে থমকে গেছে। আশা করছি আরও সকল উদ্যমী মানুষদের সঙ্গে মিলে সবগুলি উদ্যোগ একত্র করে এই গল্প সংগ্রহের প্রকল্প আরও বড় করে আরও বেশি উদ্যম নিয়ে এগিয়ে যাওয়া যাবে। খুবই আনন্দিত ব্যক্তিগত উদ্যোগের গন্ডি ছাড়িয়ে একে আরও বড় পর্যায়ে নেয়ার সম্ভাবনায়।
আপনাদের কারও আরও এরকম গল্পএর সংগ্রহ থাকলে জানালে বাধিত হব।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
চমৎকার উদ্যোগ।
এই ধরণের অসাধারণ একটি উদ্যোগ নেবার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।
স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রের অষ্টম খন্ডে একাত্তরে আমজনতার কষ্টের অনেকগুলো সত্যিকার কাহিনী লিপিবদ্ধ আছে।
এছাড়া, যুদ্ধের মাঠে মুক্তিযোদ্ধাদের কাহিনী নিয়ে প্রচুর লেখা আছে।
কিন্তু এই লেখাগুলোর ভাষা বেশ কাঠখোট্টা।
আপনারা একটি কাজ করতে পারেন; এই সত্যিকারের কাহিনীগুলোকে গল্পের মত করে সুন্দর, প্রাঞ্জল, সহজ ও আকর্ষণীয় করে লিখে ফেলতে পারেন।
এতে সুবিধে হলো, গল্প তো হলোই, সাথে সত্যিকার ঘটনা বর্ণনা করা হয়ে যাবে।
ওয়েবসাইটের হোস্টিং নিয়ে একটি পরামর্শ ছিল।
দেখলাম সাইটটি গুগুল হোস্টিংয়ে হোস্ট করা।
যদি ফ্রিতে হোস্টিং করতে চান; তাহলে, সবচেয়ে বেস্ট অপশন হলো ব্লগার.কম-এ হোস্ট করা।
শুভ কামনা রইল।
আপনাদের প্রচেষ্টা সফল হোক।
সাব্বির হোসাইন
\জয় বাঙলা, জয় বঙ্গবন্ধু/
নতুন মন্তব্য করুন