আম্মুর কথামতো রোদে দেয়া লেপ গুলো ছাদ থেকে নিয়ে এসে আলমারির উপরের ক্লজেটে ঢুকিয়ে রাখতে যাচ্ছিল ঈশান। এ বছর ষোল তে পা দিল ও। কিন্তু এর মধ্যেই ছোটখাট সাইজের আম্মুকে লম্বায় এক হাত ছাড়িয়ে গেছে সে। কাজেই এইরকম কাজ গুলো লম্বু বলে আম্মু সোজা তার উপরেই ন্যস্ত করেন। লেপগুলো ঠুসতে গিয়ে কিসে যেন বাধছিলো, তখনই পেলো ছোট বাক্সটা।
বাক্সটা আগেও দেখেছে সে। অনেক অনেক ছোটবেলায়। বাক্স কি ব্যাগ কিছু পেলেই খুলে ভিতরের সব কিছু বের করে ছড়িয়ে ফেলা আবার ভিতরে পোরা একটা মজার খেলা ছিল। এই বাক্সটার কথা মনে আছে কারণ এটা থাকত আম্মুর বেড সাইড টেবিলের ড্রয়ারে। ড্রয়ারের সব কিছু বের করে এই বাক্সতে হাত দিলেই আম্মু হপ করে বকা দিয়ে বাক্সটা আলমারির মাথায় তার নাগালের বাইরে ঠেলে দিত। কোন একসময় এইরকম ঠেলে দিয়ে এখন আম্মু নিজেই ভুলে গেছে এটার কথা। বের করতে চাইলে এখন তাকে ঈশানকেই ডাকতে হবে উলটো। মুচকি হাসে ঈশান। উপরের ডালায় বসানো আয়নাতে হাসির উপর রোম রোম গোফের রেখাটা চোখে পড়তে বিরক্ত লাগে তার। ঝট করে ডালাটা খুলে নিজের বদলাতে থাকা চেহারাটা সরিয়ে দেয়। ভিতরে কিছু শুকনো ফুল। এক জোড়া ছোট্ট লাল মোজা। একটা নোটবুক। একটা ভাজ করা কাগজ। কাগজটার ভাঁজ খুলার আগে গলা বাড়িয়ে দরজার বাইরে উঁকি দিয়ে নেয় ঈশান। আম্মু খাবার ঘরে টেবিলের উপরে দাঁড়িয়ে ফ্যান এর ধুলো ঝাড়ার তোড়জোর করছে, হুট করে এসে পড়ার ভয় নেই। আরে! এটা তো দেখি চিঠি। আম্মুর হাতের লেখা পালটে গেছে আগের চে, তারপরেও চেনা যাচ্ছে। আগে কলমে অনেক চাপ দিয়ে দিয়ে লেখতো।
"
আম্মু, তোমাকে আমি কেমন করে ভুলি? তুমি এখনো গুটি সুটি মেরে আমার পেটের ভেতরে ঘুমিয়ে আছ। এই ঘুমটা আর ভাঙবে না। ডাক্তার বলে দিয়েছে। তাই বলে তোমাকে বিছানা থেকে তুলে ফেলে দিব? তুমি যেতে না চাইলে তোমাকে বের করে দেয়ার মত কঠিন তো আমি হতে পারি না। তুমি তো আমাকে কোন কষ্ট দেও নাই যে, তোমার সাথে অমন খারাপ ব্যাবহার করব। অবশ্য তুমি তো আসলে চলে গেছ। তোমার শরীরটা রয়ে গেছে। যে শরীর তোমার প্রাণকে ধারণ করে রাখতো এই পৃথিবীতে সেই দেহটা ঠিকমত নাকি তৈরি হচ্ছিল না। কোথাও গোলমাল ছিল। ঐ দেহ নিয়ে এই পৃথিবীতে আসলে হয়ত তোমাকে অনেক কষ্ট করতে হতো, তাই এই দেহ ফেলে রেখেই তোমাকে চলে যেতে হলো। আমি জানি তুমি দেহ ছাড়াও থাকতে পার। তোমার বিচরণ তো আমার মনে, তোমার আব্বুর মনে। আরও কত্ত কত্ত মানুষ যে তোমাকে ভালোবাসে তাদের সবার মনে, হৃদয়ে তুমি আপাতত ঘুরে ঘুরে বেড়াও। আমরা আবার একটা সুন্দর করে দেহ বানিয়ে তোমাকে ডেকে আনব। এখনকার মতো তোমার ফেলে যাওয়া এই দেহ টা কে বের করে নিয়ে আসব, তারপর তোমার এইবার বেড়াতে আসার আরও সব আয়োজনের সাথে জমিয়ে রাখব। তুমি সশরীরে আসবে বলে কত আয়োজন করেছিলাম মনে মনে, ছোট্ট লাল মোজা, রাতে ঘুমাবার জামা। তোমার ছবি, গল্প লিখে রাখার জন্য বই। তুমি আসছ সেই সংবাদ নিয়ে টেস্ট রেজাল্ট। সব বাক্সে ভরে তোমার দেহের সাথে সাজিয়ে তুলে রাখব।
তুমি চিন্তা কোর না। তুমি তো এখন আর তোমার ঐ দেহের মাঝে নাই, কাজেই যখন ওষুধ দিয়ে তোমার দেহ টা বের করে আনা হবে, তখন ব্যাথা পাবে না। অবশ্য তোমার ছোট্ট নাকটা , হাত পা গুলো নাই হয়ে যাবে। যেসব রসায়ন মিলে কোষ তৈরি করে, আবার মিশে যাবে সেই কেমিক্যালে। সেটাকেই আম্মু সংগ্রহ করে রাখবে।
তুমি যখন আবার আসবে আমাদের কাছে, একদিন বড় হলে তোমাকে দেখাব তুমি প্রথমবার কেমন চট করে চলে গিয়েছিলে আমাদের কাছ থেকে।
ঈশান বিভ্রান্ত বোধ করে। এটা কাকে লেখা চিঠি? তাকে লেখা? আবার পড়তে গিয়ে তারিখটা চোখে পড়ে। ১৮ বছর আগের তারিখ। তখন তো সে জন্মায়ইনি। আরও বিভ্রান্ত লাগে তার। লাল মোজাটা সরিয়ে নোটবুকটা তুলতেই নিচে সাদা কালো একটা ছবি পাওয়া যায়। হঠাৎই সব পরিষ্কার হয়ে যায় ঈশানের মাথার ভেতর। ছবিটা আসলে মেডিক্যাল রিপোর্টের সাথে দেয়া ছবিগুলোর মতন, অন্ধকারের মাঝে একটা ছোট্ট বাচ্চার মাথা সাদা হয়ে ফুটে উঠেছে। ছোট্ট একটা নাক বুঝা যায় আর একটা মুঠো করা হাত। চিঠিটা লেখা আসলে ঐ বাচ্চাটাকে। চট করে আরেকবার গলা বাড়িয়ে দেখে নেয় আম্মু কই। মহিলা ডাইনিং টেবিলের উপর একটা চেয়ার উঠিয়ে তার উপর উঠে ফ্যানের নাগাল করেছে। আবার পড়ে ঈশান চিঠিটা। হঠাৎ তার আম্মুর জন্য খুব মন খারাপ লাগে। তার ছোটখাট ছটফটে মা'টা যে এইরকম একটা কষ্ট বুকে লুকিয়ে রেখেছে কোনদিন টের পায়নি। একটু একটু মায়া ভাব লাগতে শুরু করেছে তখনি মহিলা হাঁক পাড়ে, " এই ঈশান, এসে একটু চেয়ারটা ধর তো বাপ।"
"আসি আম্মু", তাড়াতাড়ি চিঠি আর সব ঢুকিয়ে বাক্সটা তুলে রাখতে রাখতে ঈশানের মনে হয়, আম্মুর সেই বাচ্চাটা আবার সশরীর হয়ে এই আমি চলে এসেছি। পুনর্জন্ম ব্যাপারটা যাই হোক, তার জন্য একটা মা লাগেই।
মন্তব্য
ভাল লাগলো।
ধন্যবাদ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
“পুণর্জন্ম ব্যাপারটা যাই হোক, তার জন্য একটা মা লাগেই” -অন্য রকম একটা কথা, ভালো লাগলো
দেবদ্যুতি রায়
জন্ম ব্যাপারটার সঙ্গেই মা জড়িয়ে আছে। মা'রাও কি পুনর্জন্ম নেয়?
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সিম্পলি চমৎকার! ট্যুইস্ট দেবার অপচেষ্টা নেই, বর্ণনা দিয়ে ভারি করার ফাঁকিবাজি নেই, ভাষার কারিকুরি দিয়ে মাথা ঘোরানোর চেষ্টা নেই - এমন ছোট গল্পই মজার।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ধন্যবাদ পান্ডব দা। আমি আসলে গল্প লিখতে পারি না। আশে পাশে দেখা এক ঝলক দৃশ্যকে কল্পনাতে ডাল পালা লাগিয়ে শুরু শেষ দিতে ভালো লাগে। আপনার মন্তব্যে উত্সাহিত হয়ে অমন আরো দুটো গল্প মাথার মধ্যে গজিয়ে গেল। নামবে কি না জানি না। হয়ত একদিন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
সুন্দর গল্প।
দেবদ্যুতি
পুরাপুরি গল্প না। ঈশানের মা ধুলা ঝাড়তে ব্যস্ত ঐ অংশ টুকু গল্প
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বড় মায়া লাগলো পড়তে গিয়ে...
পাঁচ তারা।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ধন্যবাদ তিথী। চিঠিটা অনেক আগে লেখা, চিঠি উদ্ধারের গল্প কাল বুনলাম।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
হ্যাঁ, ঐ চিঠি লেখার সময়ের গল্পটা পড়ে চোখে পানি এসে গিয়েছিলো, মনে আছে।
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
ঐ গল্পটা সবার জন্য না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভাল।
ধন্যবাদ। কে গো আপনি অতিথি লেখক। একটা পরিচয় তো দেবেন!
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভাল লাগলো।
পুনর্জন্ম বিষয়ে আমার একটা লেখায় আপনার মন্তব্য,
| লিখেছেন শিশিরকণা (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৮/১০/২০১২ - ১২:৩০পূর্বাহ্ন)
পুনর্জন্মের ধারণাটা আমার কাছে খুব অসাড় মনে হয় না। এই জন্মে যে আপনি হেটে চলে বেড়াচ্ছেন, আপনার দেহ, মস্তিষ্ক একটা নির্দিষ্ট ছকে বাধা অণু পরমাণুর সমষ্টি বৈ তো নয়। আরও গভীরে তরঙ্গ কণার সম্পর্ক ধরলে বলতে হয়,
আপনি কিছু শক্তির সমষ্টি রূপ মাত্র। যখন মরে পচে গেলে যাবেন, সেই অণু পরমাণু, ইলেক্ট্রন নানাভাবে পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাবে, হয়ত অন্য কোন প্রাণের শরীরে গিয়ে সমবেত হবে, সেটাই কি আপনার পুনর্জন্ম নয়? হতে পারে সেটা গাছ,
মাছ, পাখি, বাতাস বা চুরাশি লক্ষ জন্মের কোন এক জন্মে মানুষের আকারে?
ফেসবুকের অনেক আব্জাব শেয়ারের মাঝে কোথাও একটা এই টাইপ বাণী দেখেছিলাম, " When someone dies, it doesn't mean he's gone, he's just less organized".
পরজন্মে আমি গাছ হতে চাই, প্রজাপতি, মৌমাছি, মেঘ, নদী, মাছ, বালু সব হতে চাই, কিন্তু আর মানুষ হতে চাই না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
জবাব
বাপরে। এই জিনিস কেমনে খুঁজে বের করলেন? সচলের সার্চ দিয়ে আমি কিছুই পাই না, খালি এরর দেখায়।
আর খুঁজে বের করাই না, মনেও রেখেছেন। তারিখটা দেখলাম, ঐ সময় ব্যক্তিগত কিছু অভিজ্ঞতার কারণে এই ব্যাপারটা নিয়ে খুব ভেবেছিলাম। এই গল্পের চিঠিটাও তখনই লেখা। আগে পিছে কথা দিয়ে ফ্রেম করে গল্প হিসেবে পাতে দিলাম কেবল।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বদ্দা, এই কবিতাটা আপনার জন্যঃ
কোন কোন নদী আছে
এক জীবন দুঃখ নিয়ে তবুও গায় আনন্দের গান,
কোন কোন বৃক্ষ আছে
ভেতরটা শুকিয়ে গেলেও ফুলে ফুলে ভরিয়ে দেয়
প্রতিটা বসন্ত।
আহা, আমি কবে এই সব -
নদীদের, গাছেদের মত হবো,
কবে আমার সমস্ত বেদনাকে পরাবো -
আনন্দের কাঁকন।
আর জন্মে মানুষ না হয়ে যেন গাছ হই, নদী হই।
আহা, মানুষ যেন না হই আর,
আর যেন মানুষ না হই।
(লিঙ্ক)
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
পান্ডবদা আপনার লিংকে গিয়ে উনার প্রায় সবগুলো কবিতা পড়েছি আর মুগ্ধ হয়েছি। ধন্যবাদ এমন অসাধারণ এক কবির সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার জন্যে। উনার কাব্যগ্রন্থের নাম কি? প্রকাশনী সহ কোথায় পেতে পারি?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
এখানে কিছু বলা আছে।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
উনার কাব্যগ্রন্থ কষ্টে কষ্টে কষ্টিপাথর টা কি পাওয়া যাবে?
-------------------------------------------
আমার কোন অতীত নেই, আমার কোন ভবিষ্যত নেই, আমি জন্ম হতেই বর্তমান।
আমি অতীত হবো মৃত্যুতে, আমি ভবিষ্যত হবো আমার রক্তকোষের দ্বি-বিভাজনে।
পাবার কোন উপায় আমি দেখছি না।
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
ভাল হইসে হিমি!
মিয়া! কত কষ্ট করে একটা নিক জোগাড় করে তার আড়ালে লিখি আর তুমি মিয়া খালি বাপের দেয়া নাম ধরে টান দ্যাও। শ্শ্শ্!!
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আড়াল হল কই? প্রোফাইল লিংক কথা বলে তো!
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
প্রোফাইল লিঙ্ক কি বলে আসলে? আমি তো সচলগ ছাড়া কিছু দেখি না।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
http://www.sachalayatan.com/himika64/53746
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
এই সাক্ষী ছোঁড়াটা বড় ফচকে হয়েছে ইদানিং!
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
আঁই কি কইচ্চি? রাইগেন না রিফাতাপ্পু।
বইমেলায় আহেন, বই কিন্যা দিমুনে।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
শুরুটা দেখে রাতে আর পড়িনি, ইচ্ছা ছিল সকালে পড়ে মন ভাল করে বাসা থেকে বের হব। স্পয়লার এলার্ট দিয়া উচিত ছিল আপনার!
গল্পটা চমৎকার হয়েছে। ছিমছাম, ছোট, আবার অনেক কটা কথা, সেগুলোতে আবার চিন্তা বোনা।
কেবল একটা খটকা- আমাদের দেশে ষোল বছরের ছেলের মা ন্যাওটা হওয়া বা লুকিয়ে গোপন চিঠি পড়ে ফেলা যতটা স্বাভাবিক, মিসক্যারেজ নিয়ে মায়ের কষ্টটা বোঝা বা অনুধাবন করাটা অত স্বাভাবিক কী?
~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...
ঈশানের ব্যক্তিত্ব কেমন আমি কি করে জানব? হতেও তো পারে ভাবুক একটা ছেলে।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
@মর্ম: এটা হতে পারে এবং এটা অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। আমার সাথে বন্ধুর মত ব্যবহার করেছেন আমার মা। আমাদের পরিবারের মধ্যে আমি আমার মায়ের সাথে রান্নাঘরে গল্প করে করে অনেক সময় কাটিয়েছি। (সাথে সাথে শিখে ফেলা রান্নাগুলো প্রবাসে কাজে দিয়েছে)। পত্রিকার খবর নিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা আলাপ করেছি। আমার ছোট বোনের চাইতেও আমি আমার মায়ের কাছে বেশি সময় (এবং প্রশ্রয়) পেয়েছি। আর আমার চিন্তাধারা গঠনেও মায়ের অনেক ভূমিকা আছে। আমার মনে হয় আমার মায়ের চিন্তাধার, আনন্দ, কষ্ট, হতাশা আমি খুব বেশি ভালো ভাবে বুঝতে পারি।
(কি বোর্ড ভিজিয়ে ফেলার আগেই থামি)
পুরো বিষয়টা ইশান যদি না বুঝেও থাকে, তারপরও এটা যে মায়ের একটা তীব্র কষ্ট, আর পরবর্তী সন্তান হিসেবে সে নিজে যে একটা স্বান্তনা -সেটা বোঝার কথা।
শুভেচ্ছা
চমৎকার লাগলো। নিটোল, সুন্দর, ভোরের আলোয় টলটল করা একবিন্দু শিশিরের মতন গল্প।
-----------------------------------------------
কোনো এক নক্ষত্রের চোখের বিস্ময়
তাহার মানুষ-চোখে ছবি দেখে
একা জেগে রয় -
কী সুন্দর করে মন্তব্য করেন আপনি, মনে হয় এক লাইনে একটা গল্প লিখে ফেললেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
লেখা হিসাবে যতটা না চমৎকার তার চেয়েও বড় এবং গভীর অনুভবের ব্যাপার এটাই যে এই কষ্ট, এই অনুভব, এই পৃথিবীতে নিজের বাবুটিকে দেখতে না পারার যন্ত্রণা শুধুমাত্র সেই " মা'ই " অনুভব করতে পারবেন। সেটা আমি নিজে মা হয়েও কোনোদিন হয়তো বুঝব না কাউকে হারাতে হয়নি বলে।
শুভকামনা শিশিরকণা।
অপর্ণা মিতু
না পাওয়া জিনিস হারানোর বেদনা কাউকে বুঝানো বেশ কষ্টের। আর যারা পেয়ে তারপরে হারান, তাদের কষ্ট ভাবতেঅ পারি না। হয়ত না আসা শিশুর নিষ্পাপতাই বেশি কষ্ট দেয়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
আপনার গল্পটা আমার মন খারাপ করে দিল
কেন যেন এরকম কোন গল্প পড়লে আমার এই ভাস্কর্যটার কথা মনে পড়ে।
সচলে আরেকটা সিরিজ চলছে একই বিষয় নিয়ে।
আমি জানি না এত কষ্ট কি করে বাবা-মা সহ্য করেন।
শুভেচ্ছা
আমার একটা লেখায় এই ছবিটা দিয়েছিলেন আপনি। কত যে কেঁদেছি আমি।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
আমি সব সময় মায়ের দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টা দেখেছি। সন্তানের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখিনি। আমার ঈশানের অনুভূতি সত্যিই অদ্ভুত লেগেছে। ঈশানকে আমার সন্তানের মতোই স্পর্শ করতে ইচ্ছে করেছে। এটাই বোধহয় লেখকের সার্থকতা বা প্রাপ্তি। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল। ঈশানরা মায়ের স্নেহে ভাল থাকুক, মায়েরাও তাকে ছুঁয়ে ভুলে থাকুক অজাত সন্তানের জন্য হাহাকার।
-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু
আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে
ধন্যবাদ সুলাতানা সাদিয়া। আপনার সিরিজটা পড়ছি। সেটাও এই গল্প লেখার প্রনোদণা বলতে পারেন।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
এটা আরেকটা প্রিয় ছবি।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
ভাল লেগেছে
_________________
ঝাউবনে লুকোনো যায় না
ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
বুকের ভেতর কেমন যেন চিনচিন্ করে উঠলো গল্পটা পড়তে পড়তে!
চমৎকার লিখেছো।
ধন্যবাদ সুমিমা আপু। এবারের দেশে গিয়ে বাড়তি পাওনা আপনার সাথে পরিচয় হওয়া।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
বিষন্ন সুন্দর চমৎকার কটা গল্প! শিশিরকণার হাত থেকে আরো গল্প আশা করছি।
"আম্মুর কথামতো রোদে দেয়া লেপ গুলো ছাদ থেকে নিয়ে এসে আলমারির উপরের ক্লজেটে ঢুকিয়ে রাখতে যাচ্ছিল ঈশান।"
লক্ষী ছেলে তো।
গল্প ভালো লেগেছে, কিন্তু একটা খটকা লাগলো।
নিজের বাচ্চাকে কি কেউ আদর করে 'minion' বলবে?
'ডেস্পিকেবল মি'র আগে কিন্তু 'মিনিয়ন' জিনিসটা বেশ খারাপ অর্থেই ব্যবহার হতো।
-সো।
মনটা মেদুর করে দিলেন, বিষণ্ণ সুন্দর একটা গল্প!
------------------------------------------
'আমি এখন উদয় এবং অস্তের মাঝামাঝি এক দিগন্তে।
হাতে রুপোলী ডট পেন
বুকে লেবুপাতার বাগান।' (পূর্ণেন্দু পত্রী)
আবার পড়লাম এখন। বিষণ্ন, সুন্দর, মন কেন করা একটা গল্প ঈশানের মা’র। ’পুনর্জন্ম ব্যাপারটা যাই হোক, তার জন্য একটা মা লাগেই’-- তবে সেই পুনর্জন্ম পর্যন্ত বেঁচে থাকা মানে বারবার মরে যাওয়া।।
...............................................................
“আকাশে তো আমি রাখি নাই মোর উড়িবার ইতিহাস”
নতুন মন্তব্য করুন