বুদবুদ -২

শিশিরকণা এর ছবি
লিখেছেন শিশিরকণা (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৪/০৬/২০১৫ - ২:০২অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

মাথার ভিতরে ঘুরতে থাকা টুকরো ভাবনাগুলো, যাদের একা একটা ব্লগ হবার মত স্থায়ীত্ব হয় না।

১/
কোন মানুষই অনেক ভেবে চিন্তে কাজ করে বলে মনে হয় না। কাজ করে ফেলার পর সেইটার সমালোচনা করতে যত ভাবনা চিন্তা করা হয়, করার আগে মানুষ অত ভাবে না। আমরা নিজেরাই কি একটা কাজের আগে, কি একটা কথা বলার আগে অনেক বেশি কিছু ভাবি? তবে অন্যের থেকে এত আশা কেন? আর সমালোচনায় এত কঠোর কেন? হতে পারে এটা একটা চর্চার বিষয়, যারা অনেকদিন ধরে কথা বা কাজের আগে ভাবনা চিন্তার প্রতি যথেষ্ট সময় দিয়েছেন, তাদের এখন হয়ত সিদ্ধান্ত নিতে অতটা সময় লাগে না প্রয়োজনীয় ভাবনা সেরে নিতে, কিন্তু কতটা সুদূরপ্রসারী প্রভাব চিন্তা ভাবনা করা যথেষ্ট হবে?

২/
শরীরের অসুখ নিয়ে যতটা উৎকন্ঠিত হই, মস্তিষ্কের রোগ নিয়ে তার সিকি ভাগও পাত্তা দেই না। অথচ মস্তিষ্কও শরীরের একটি অঙ্গ মাত্র। সেখানেও আর সব অঙ্গের মতন নানান প্রাণ রসায়ন বিদ্যমান নির্দিষ্ট ছন্দে কাজ করে চলেছে। সেই ছন্দে গোলমাল লাগায় যদি মস্তিষ্কের রোগ দেখা দেয় তাকে কেন স্রেফ মনে ইচ্ছায় তাড়ানো যাবে বলে মনে করি, যে পাত্তা না দিলেই চলে যাবে। কেন সেখানে ওষুধের, চিকিৎসার দরকারকে তুচ্ছ করি?

৩/
ধর্মান্ধদের চিন্তা ভাবনা কেমন থাকে। যারা আই এস এর জালে ধরা পড়ে? যারা নাস্তিক, তারা কেউই শুরুতে নাস্তিক ছিলাম না। পারিবারিক আবহে ধর্মের শিক্ষা ছিলই কোন না কোন ভাবে। পরে পড়াশোনা করে জ্ঞানের আলোয় এসে প্রশ্ন করতে শিখে অন্ধবিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করতে শেখা। এই উত্তরণ পর্ব টুকু কিভাবে পার হয়েছিলাম, সেখানে অনুভূতিগুলো কেমন ছিল, কেমন টলোমলো দোদুল্যমান মানসিক অবস্থা থাকে, সেই সহানুভূতি কেন আমরা ভুলে যাই, যখন অন্য কাউকে আলোকিত করার চেষ্টা করি?
এখানেই সম্ভবত ধর্ম প্রচারকরা জিতে যায়। কারণ মানুষ যুক্তির চেয়ে অনুভুতির দাসত্ব সহজে মেনে নেয়, ধর্ম প্রচারকরা এই অনুভূতিকে গুরুত্ব দিয়ে সহানুভূতি দিয়ে তাদের লাইনে নিয়ে আসে। যুক্তি বিশ্লেষণ করাতে পারা একটি আরাধ্য/ অর্জিত দক্ষতা, যেটা জীবনে চর্চা না করা হলে কোন কোন মানুষের মস্তিষ্কের ঐ অংশ গঠিতই হয় না। তারা কেবল প্রতিক্রিয়ার মাধ্যমেই জীবনের মুহুর্তগুলোর মোকাবেলা করে কাটিয়ে দেয়। যাদের জীবনের মৌলিক চাহিদাগুলো মিটাতেই বেলা চলে যায়, তাদের এর বেশি কিছু করার সুযোগও আসে না। সম্ভবত এ কারনেই দরিদ্র অঞ্চলগুলোতে ধর্মান্ধদের প্রসার ও শিকার বেশি।

৪/
ইন্টারনেট প্রযুক্তির সহজলভ্যতার সাথে সাথে বাংলাদেশের মানুষের মানসিকতার একতা উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্যনীয়। বাংলাদেশে ইন্টারনেট এর বিস্তার আর ফেসবুকের উত্থান সমসাময়িক বলেই হয়ত এই ইন্টারনেটের ব্যবহারটা ফেসবুক ব্যবহারের সাথেই বেশি জড়িত, অন্যান্য ব্যবহারের চেয়ে। দেশের বর্তমান অবস্থা অবলোকন করার জন্য আমার জানালা হচ্ছে ফেসবুক। এবং সেই জানালা দিয়ে তাকালে এখন বাংলাদেশের মানুষের অত্যন্ত বিষাক্ত একটি মন মানসিকতা দেখতে পাই । উদাহারণঃ একটি মেয়ের বৃষ্টির মাঝে সাইকেল চালিয়ে যাবার ছবির নিচে ফেসবুক ব্যবহার করে একদল মানুষ রূপধারী নিজেদের মনের ভাব ব্যক্ত করেছেন, যে এই মেয়েটিকে ধর্ষণ করা উচিত। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে বক্তব্য মোটামুটি এটুকুই। ছবিতে কাপড় চোপড়ে জড়িয়ে ভিজে মেয়েটিকে একটা পোটলার চেয়ে বেশি কিছু মনে হচ্ছে না, শরীরের অবয়ব পর্যন্ত অস্পষ্ট যে মেয়ে কিনা চেষ্টা করে বুঝতে হয়, তবু, এইসব নুনু_টাটানো হারামজাদাদের একেবারে 'হয়ে যাচ্ছে।'। এখন প্রশ্ন হচ্ছে বাংলাদেশের মানুষ কি সব সময়ই এমন ছিল, নাকি অনলাইনে কোন ম্যাজিকের ছোঁয়া পেয়ে সব এমন হয়ে গেছে? সহজ উত্তর হতে পারে, যে বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষ আসলে এমনই ছিল, বরং আমার দেখার গন্ডি আগে সীমাবদ্ধ ছিল বলে এমন মানুষের সংস্পর্শে আসি নি, এখন অনলাইনে সব খোলা বাউন্ডারি হওয়াতে সব ধরনের স্যাম্পলিং ডেটা দেখতে পাচ্ছি। এক হিসেবে এটা আসলে কালচার শক। কিন্তু চেনা গন্ডির মধ্য থেকে আপনার পরিচিত আত্মীয় বা বন্ধুর কথা দেখে হতাশ, রাগান্বিত হয়ে তাকে ব্লক দেন নি এমন কি হয়নি? সেটার কি ব্যখ্যা হতে পারে?

ব্যাপারটাকে এভাবে দেখছি। আমি যেভাবে চিন্তা করতে পছন্দ করি, বা যেসব বিষয় নিয়ে ভাবতে , কথা বলতে ভালবাসি আমি আমার পরিচিত আত্মীয় বন্ধুর গন্ডিতে তেমন মানুষ খুব কমই পেয়েছি , হাতে গোনা। তবে অনলাইনে ফেসবুক বা ব্লগের মাধ্যমে আগ্রহের বিষয়ে আলোচনা করতে গিয়ে অনেক সমমনা মানুষ খুঁজে পেয়েছি,যাদের সঙ্গে জীবনে মুখোমুখি পরিচয় না হলেও ফেসবুকে ফ্রেন্ড হিসেবে যুক্ত করেছি। এবং ক্রমাগত পারস্পরিক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে সেসব মানুষের সাথে যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। এইসব সঙ্গ যেমন আমার জানার গন্ডিকে বিস্তৃত ও সমৃদ্ধ করেছে, তেমনি বিভিন্ন মানসিকতার মানুষের সংগে পরিচয়ের সুযোগ করে দিয়েছে। আমার বিচারে আমি উন্নততর মননের মানুষের সাথে পরিচিত হতে পারে নিজেকে তরিত মনে করছি। কিন্তু ঠিক এটাকেই আরেকজনের দৃষ্টিভংগিতে দেখলে মনে হতে পারে, যে আমি দিন দিন নাস্তেক বল্গারের সংস্পর্শে গিয়ে উচ্ছনে যাচ্ছি। নয় কি?
অর্থাৎ মুদ্রার উলটাপিঠ চিন্তা করলে একদল ভাবতেই পারে তারা দ্বীনি ভাইদের সংস্পর্শে তারা পরকালের রাস্তা প্রশস্ত করছে। ধরে নিলাম আগে থেকেই বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের মনঃতত্ত্ব এইরকম বিকৃত ছিল, কিন্তু সামাজিক পরিমন্ডলে নির্বিবাদে সেটা প্রচার করে বেড়াতে কি পারত তারা সবাই? সামাজিক পরিমন্ডলে ভাবমূর্তি ধরে রাখার জন্য হলেও যতই বেগানা মেয়েলোককে ধর্ষণ করে ফেলার খায়েশ জাগুক, সেটা সজোরে উচ্চারণ হয়ত করত না। এখন ফেসবুকের বিস্তারের ফলে " আন্ধার ঘর চান্দের আলো' নিক এর আড়ালে হোক কি স্বনামেই প্রোফাইল খুলে হোক কিংবা যে কোন পেইজ বা গ্রুপে যেখানে বাস্তব জীবনের লোকজনের দেখা মিলবে না সেখানে গিয়ে বেশ আরাম করে চেপে রাখা বদ বায়ূ (মনোভাব) ছেড়ে দিচ্ছে। আর একবার যদি সাহস করে বলেই ফেলে একই রকম কুৎসিত মানসিকতার আরও লোকের থেকে লাইক কমেন্ট পেয়ে এই ধর্ষকামী চিন্তাভাবনার পালে হাওয়া লাগছে। তারা মনে করছে, তাহলে তো ঠিকই বলেছি, খামোকাই এতদিন এটাকে খারাপ মনে করে চেপে চুপে চলেছি, এতজনে লাইক দিলে কি আর আমার কথা ভুল হতে পারে? একদিকে মানবতাবাদী সচেতন মানুষেরা যেমন সমমনা মানুষ খুঁজে পাচ্ছেন, তেমনি এই বিকৃত চিন্তাভাবনার লোকেরাও তাদের সমমনা খুঁজে পাচ্ছে এবং পরস্পর পিঠ চুল্কানি সংস্কৃতিতে ঝাড়ে বংশে বেড়ে চলেছে।

প্রযুক্তি যতই সহলভ্য হোক, লেখাপড়া করে নিজের বুদ্ধির, চিন্তাভাবনার ধার বাড়ানোর চেয়ে নিজের তালগাছে ধরে রাখা আইডিয়ার সাথে মিলে এমন লোক খুজে পাওয়া কম কষ্টসাধ্য। পড়াশুনা করে নতুন জিনিস বুঝার চেয়ে, আমি যা বুঝি সেটার সপক্ষে আর কিছু লোক জোগাড় করতে পারলেই নিজেকেও আর পড়াশুনার কষ্ট করা লাগে না, সাথে নিজেকেও ফেসবুক পীর হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে পাব্লিসিটি কামানো যায়। আর কে না জানে, বাঙালি সব সময় সবচে কম শ্রমসাধ্য পথই বেশি পছন্দ করে।

৫/
ফেসবুকে সাম্প্রতিক একটি আলোচনার প্রেক্ষিতে করা মন্তব্য
ছেলেদের মান মর্যাদা সুপারম্যানের আন্ডারওয়্যার এর মতন। ঢেকে রাখে খুব অল্প জায়গা, কিন্তু কিছুতেই ছিড়ে ফাটে না। ভিতরে না বাইরে পরলো সেটাও ব্যাপার না।
আর মেয়েদের মান মর্যাদা বারো হাত শাড়ি প্লাস বোরকা দিয়েও রক্ষা করা যায় না।


মন্তব্য

ব্যাঙের ছাতা এর ছবি

চলুক
দারুন বুদবুদ।
পথে চলতে বা ঘরে কাজের মাঝে কতই না কথা মনে আসে, লিখে রাখা হয় না। আপনার লেখাটি পড়ে ভালো লাগল অনেক।

শিশিরকণা এর ছবি

এগুলো ধরে রাখতে পেরেছি। হারিয়ে যাওয়া গুলো তো হারিয়েই গেছে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

ফেবুর আরেকটা ক্রাইসিস আছে। আমাদের প্রতিবাদগুলোও পণ্যে রূপান্তরিত হচ্ছে। যে ঘটনার কথা বললেন, তাতে এতোটাই হতভম্ব হয়েছি যে বলার কিছু পাইনি। এমনিতে এই বিষয়গুলো গা সওয়া হয়ে গেছে, কিন্তু যত দিন যাচ্ছে ততই চরিত্রগুলো স্পষ্ট হচ্ছে। সত্যই বলেছেন- কালচার শক।

লেখা ভালো লাগলো।

স্বয়ম

শিশিরকণা এর ছবি

সবকিছুতেই লাইক বাণিজ্য। অথচ ২০১০ এর আগে লাইক অপশনটা ছিল না পর্যন্ত। সবাই যার যার দল ভারি করতে ব্যস্ত। খুব দ্রুত একটা পরিষ্কার বিভাজন আর উচু দেয়াল তৈরি হয়ে যাচ্ছে।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

আমার ২ নম্বর লেখার বিষয় টা ভাল লাগল। খুব ই ঠিক কথা।

-----------------------------------------
ইচ্ছে মত লিখি।
http://icchemotolikhi.blogspot.in/

শিশিরকণা এর ছবি

নিজে ভুক্তভোগী। বিষন্নতার রোগ নিয়ে অনেকদিন ভুগছি। নিজেও অনেকদিন গুরুত্ব দেইনি। নিজে গুরুত্ব দেবার পর যখন চিকিৎসা নিচ্ছি তখন আশেপাশের মানুষদের মনোভাব দেখলাম। মনের অসুখ যেন "ঢং" ছাড়া আর কিছু না।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

বিষণ্নতা যে একটা অসুখ, এটা লোকে জানে না যেমন, মানতে চায় না তার চেয়ে বেশি। আমারও বিষণ্নতার রোগ, খুব ভুগি, খুব ভোগাই কাছের মানুষদের মন খারাপ

দেবদ্যুতি

সাইদ এর ছবি

আপনার বুদবুদ চলতে থাকুক চলুক
আশা করি এই বুদবুদ একদিন বায়বীয় থেকে কঠিনে (ব্লগ) পরিণত হবে।

ভাল থাকবেন

শিশিরকণা এর ছবি

বুদবুদ এর সাথে পাঠকের চিন্তা ভাবনার বুদবুদ যুক্ত হয়ে আরেকটু ঘন হবে এই ইচ্ছা থেকেই আধ খাচড়া লেখা পোস্টানো।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

চলুক । বুদবুদগুলোর আকারই কেবল ছোট-আর সবকিছু অনেক বড়, গভীর। ভালো লাগলো।

দেবদ্যুতি

শিশিরকণা এর ছবি

এটা আসলে এক রকম ফাঁকিবাজি বলতে পারেন। সার কথাটুকু মনে এসেছে, তাকে ফেনিয়ে লম্বা ব্লগ বানানোর মত সময় বা ধৈর্য্য হচ্ছে না। পাঠক মিথস্ক্রিয়ার মাধ্যমে আলাপে আলাপে আরও সমৃদ্ধ হবে এই আশায় পোস্ট করে দেয়া।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সুলতানা সাদিয়া এর ছবি

মনের টুকরো কথাগুলো এভাবে সামনে আনলে নিজেকে হালকা লাগে। চলুক। পাশে আছি।

-----------------------------------
অন্ধ, আমি বৃষ্টি এলাম আলোয়
পথ হারালাম দূর্বাদলের পথে
পেরিয়ে এলাম স্মরণ-অতীত সেতু

আমি এখন রৌদ্র-ভবিষ্যতে

শিশিরকণা এর ছবি

আবার কিছু জমুক। পড়ার জন্য ধন্যবাদ

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

মেঘলা মানুষ এর ছবি

১। আমরা অন্যের সমালোচনায় কঠোর কারণ ঐটা আমাদেরকে ক্ষণিকের জন্য হলেও 'সুপেরিয়র' হয়ে গেলাম, অন্যের সমালোচনা করতে পারছি -এই অনুভূতিটা এনে দেয়। পাশের বাসার শফিক গাড়ি কিনেছে (রংটা অত সুন্দর না, সাদা কমন একটা রং)। করিম অনেক কষ্টে একটা ব্যবসা শুরু করেছে (নিশ্চয়ই দু'নম্বুরি কিছু করবে)। পরে জানলাম করিমের ব্যবসাটা সৎপথেই এগুচ্ছে (আরেহ! এই জামানায় সৎ থেকে ব্যবসা করতে গেলে তো লালবাতি জ্বলবে, করিমের একটা গবেট)। পাশের বাসার ১০ বছরের বাচ্চাটা ছবি এঁকে পুরষ্কার পেয়েছে (আমার চাচাত ভাইয়ের ছেলে ক্যালিফোর্নিয়ার একটা স্কুলে ছবি এঁকে প্রাইজ পেয়েছে, সেই ছবি স্কুলের দেয়ালে টাঙানো আছে)। জব্বার সাহেব ছেলের বিয়েতে অনেক খরচ করেছেন (পুরোটাই ঘুষের টাকা, এইসব দুর্ণীতিবাজদের জন্যই দেশের ডট ডট ডট)। জব্বার সাহেব ছেলের বিয়েতে কম খরচ করেছে (লোকটা আচ্ছা কৃপণ, খাবারের মেনু একদম সাদামাটা ছিল)
-ঠিক বাংলাটা মাথায় আসছে না। এককথায়: "মানুষ অন্যকে Judge করতে পছন্দ করে"।

২। কারণটা স‌হজ। আমি জ্বরে হাসপাতালে থাকলে কোন সমস্যা নেই, তবে দু'বার সাইকিয়াট্রিস্ট দেখালে পাড়ার লোকে আমাকে পাগল বা ছিটগ্রস্থ ট্যাগ বসিয়ে দেবে। এযুগে ট্যাগান্বিত হতে খুব ভয় সবারই।

৩। কী জানি! ঠিক পরিষ্কার ধারণা নাই। তবে, এটুকু বলতে পারি মানুষের চিন্তার উপরে তার পরিপার্শ্বের অনেক বেশি প্রভাব আছে।

৪। আগে ছিল কি ছিলনা, আগে অপ্রকাশ্য থাকত, এখন প্রকাশ হচ্ছে -এরকম কোন বাইনারি ডিসিশান নেয়া কঠিন। সমাজের পরিবর্তন আসে। অনেক কিছুই যুগের হাওয়া। আগে পরিবার, বন্ধু আর পরিবেশ যে শিক্ষা দিত -এখন কি সেই একই শিক্ষা দিচ্ছে! এখন 'লেখাপড়া করে যে গাড়িঘোড়া চড়ে সে', 'গুরুজনকে মান্য করিবে' পড়ার সময় নেই।

ফেসবুকের এসব গা-জ্বলা কমেন্টের বাম্পার ফলনের কারণ হিসেবে আমার একটা হাইপোথিসিস আছে।
আগে মনের ভেতর কিছু থাকলে সেটা সমমনাদের সাথে আলাপ করার বা বাহাবা পাবার উপায় ছিল না।

এখন, "এসবই কেয়ামতের আলামত" মার্কা একটা কমেন্ট করে দেখুন। লাইকের বন্যায় ভাসতে ভাসতে, 'আমি কি হনুরে, আমি কি ইবনে সিনা হয়ে গেলুম নাকি‌ ' জাতীয় আত্মতৃপ্তি আসা খুবই স্বাভাবিক। নামাজ পড়ার চাইতে ফেসবুকে লাইক আর সুবহানাল্লাহ টাইপ করা স‌হজ মনে করে বাঙালি। সুনিতা উইলিয়ামস চাঁদে গিয়ে আজান শুনে মুসলমান হয়েছে শুনে আনন্দে আটখানা হয়, লাইক দেয় কিন্তু সত্যটা ঘেঁটে দেখতে উৎসাহ পায় না।

৫। কোথায় যেন পড়েছিলাম, 'সতী নারী' শব্দটার কোন পুরুষবাচক শব্দ নেই। একজন দুর্নীতিবাজ পুরুষ অসৎ হওয়া সত্বেও সুপুরুষ হতে পারেন।

শুভেচ্ছা হাসি

কিছু টাইপো ছিল, ঠিক করে দেন।

শিশিরকণা এর ছবি

টাইপো ঠিক করে দিলাম। পোস্টানোর আগে না করার কারণ স্রেফ আলস্য। না করে যদি পার পাওয়া যায়- সে বৃথা আশা।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

শিশিরকণা এর ছবি

১। আপনি যে ধরনের জাজ করার কথা বলছেন, সেটা আসলে আলোচ্য বিষয় ধরি নাই যখন এই পয়েন্টটা লিখেছি। তবে আপনি যেদিক থেকে দেখছেন সেটাও একটা আলাদা বিষয় হতে পারে।
আমি খানিকটা সেলফ-রিফ্লেকশান করছিলাম, যে অমুকে একটা কথা বলেছে, খুবই বলদ টাইপের কথা, তার জন্য আমি তাকে খুব ধুয়ে দিলাম, যে এইরকম নিকৃষ্ট চিন্তা ভাবনা করার জন্য। হয়ত সে এত ভেবে চিনতে কথাটা বলে নাই, তবে বেখেয়ালে তার আসল রূপ/ চিন্তা টা বের হয়ে গেছে। সচেতন থাকলে হয়ত বলতো না। কিন্তু আমি অনেক সময় ধরেই নিচ্ছি যে সে খুব সিরিয়াসলি ভেবে চিন্তেই উদ্দেশ্য নিয়ে ঐ কথাটা বলেছে। নিজেকে ঐ ব্যক্তির জায়াগায় যদি বসাই, আমি কয়টা কথা অনেক ভেবে বলছি? আমি এখন কথার পিঠে কথা বলতে গিয়ে মজা করে হালকা ছলে কিছু যদি বলে ফেলি, সেটা যে পরে আমার বিরুদ্ধে ব্যবহৃত করা সম্ভব কি না, বা আমাকে অন্যভাবে উপস্থাপিত করতে ব্যবহার করা সম্ভব কি না, এত কিছু আগ পাশ ভেবে কি বলি? কেউ যদি আমার একটা কথার সূত্র ধরে আমাকে বিশ্লেষণ করতে বসে, তাহলে কি আমার বেখেয়ালে বলা অনেক কথাতেই ধরা খেয়ে যেতে পারি কি না? আমি তো অন্যর কাছ থেকে সহানুভূতি বা আন্ডারস্ট্যান্ডিং আশা করছি। তবে অন্যকে কেন বুঝার চেষ্টা করছি না?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রতিটি পয়েন্টের সাথে সহমত পোষণ করছি। খুব ভালো লাগে যখন দেখি, নিজের চিন্তাভাবনা গুলো অন্যের লেখায় প্রকাশ পায়। যেন নিজের ছবি অন্যের চেহারায় দেখতে পেলাম! পাশে আছি, থাকব।

জোছনা

শিশিরকণা এর ছবি

ধন্যবাদ

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

আয়নামতি এর ছবি

জাজমেন্টাল কমবেশি আমরা সবাই। চট করে কনক্লুশনে পৌঁছাবার কেমন একটা তাড়া দেখতে পাই
অনেকের মধ্যে।যা আমি ভাবিইনি সেরকমটাই ভেবে নেয়া দেখে বোকা বোকা লাগে কেমন। হিসেব কষে বুদ্ধি করে কথা বলতে পারিনা, মনে যা আসে পটাং করে বলে ফেলি। এই স্বভাবটা পালটে ফেলতে চাই, কেম্নে সম্ভব জানিনা।

ঠিকই বলেছেন মনের ব্যাপারটা আমরা পাত্তা দিতে চাইনা। বিষন্ন কোনো বন্ধু যদি বলে তার কেমন বিষন্ন লাগে, কিছুই ভালো লাগে না। তখন তাকে সুখে থাকলে ভূতে কিলাই। বিলাস করতেছো ইত্যাদি বলে আরো কোণঠাসা করে দেই। একবারও ভাবি না মন খারাপের বিষয়টা কতোটা ভয়াবহ হয়ে উঠতে পারে। সহ্য করতে না পেরে পাশের রুমে থাকা বন্ধুটি যখন আত্মহত্যা করে। তখন কেমন নির্লিপ্তভাবে বলে ফেলি, স্টুপিড! খাইয়া আর কাজ পাইলি না!! মাঝে মাঝে ভাবি কর্মবীর হতে গিয়ে মানুষ না শেষমেশ রোবট হয়ে যায়।

ধর্মান্ধদের চিন্তা ভাবনা নিয়ে সেরকম ধারণা নাই। তবে শান্তির একটা জীবন কাটানোর ইচ্ছা থেকেই না একে অন্যের চিন্তা-ভাবনার প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার বিষয়টার জন্ম নেয়। শান্তির মা মারা গেলে তো সেটি হবার না। যেকারণে আস্তিক নাস্তিক নিজের নিজের বৃত্তে থেকে লাকুম দ্বিনুকুমে বিশ্বাসী হতে পারছে না এখন।

সাইকেল বিষয়ক ইস্যুটা জানা নাই। ফেসবুকে আমি মোটামুটি বেকুবের পিথিমি দর্শনের পর্যায়ে আছি। নিত্য নতুন কতোসব বেপার সেপার দেখছি রে ভাই! লাইকের বিষয়টাও কেমন অদ্ভূত। একজন হয়ত জানাচ্ছেন আজ তাঁর প্রিয়জন পৃথিবী ছেড়ে চলে গেলেন। এই পোস্ট বা স্ট্যাটাসে লাইক কিভাবে দেয়া সম্ভব!!! লাইকের অপশনটা বন্ধ হয়ে গেলে অনেকেরই ফেসবুক মুখীতায় ভাটা পড়বে বলে মনে হয়।

একটা মজার জিনিস শেয়ার করবার লোভ সামলাতে পারছিনা। গতকাল্য ইহা আবিস্কার করিলাম।
প্রথমে এটা পড়েন:

হাড়ি পাতিল কলস, সব মেয়েরা অলস
থালা বাসন বাটি, সব ছেলেরা খাঁটি
আম জাম কমলা, সব মেয়েরা ঝামেলা
লাল নীল কালো, সব ছেলেরা ভালো
ছেলেরা ফুলের মধু, মেয়েরা অজাতের কদু
ছেলেরা কঁচি ডাব, মেয়েরা বিষাক্ত সাপ
ছেলেরা সরল সোজা, মেয়েরা দেশের বোঝা

কী বুঝলেন? আমাদের ভাবনার বাইরেও আরেকটা পৃথিবী আছে সেখানকার শিশুরা এসব শিখে হাতে পায়ে বড় হচ্ছে।
এবং আশঙ্কার কথা হচ্ছে এদের সংখ্যাটা নেহায়েত কম না কিন্তু! হায় সুকুমার রায়, তোমার হিংসুটেদের গান ঠিক কোন জাতীয় ছড়া সেটা বাঙ্গালির একটা বড় অংশ জানতেই পারলে না! লেকচার থামাই। এবার ভিডুটা দেখেন-
https://www.facebook.com/mdjulfikar.ali/videos/vr.937977816221210/983265825025742/?type=2&theater

সুপুরুষের অর্থ ভিন্ন হবে না? 'সাবধানে থাকিও নারী পর্দার আড়ালে' বলা কিছু সংখ্যক(নাকি অধিকাংশ?) পুরুষ আসলে নিজের ঈমানী জোশের ক্ষেত্রে এতোটাই নড়বড়ে থাকে যে এরকমটা বলে থাকে। এটা আসলে নিজেদের সাবধান করতেই বলা। পাছে তার হুশ খোয়া যায় তাই এত্তসব বাহানা ভংচং। তাদের বাইরে বা ভেতরে পরা নিয়ে তো আমাদের সেভাবে মাথা ব্যথা নাই। তাইলে!!?? মেলা বকবক করলাম যাইগা হাসি

শিশিরকণা এর ছবি

জাজমেন্টাল হওয়া বা যেকোন কিছুকে সোজা এক বালতিতে ফেলে দেয়ার ব্যাপারতা সম্ভবত মানুষের খুবই মজ্জাগত একটা ব্যাপার। বিপদ অনুধাবন করে সতর্ক থাকার জন্য মানুষ সবকিছুকে তার চেনা গন্ডির মধ্যে কিছুতে শ্রেণিভুক্ত করে। যেমন অমুকে যুক্তির কথা বলছে, এতে আমার ঈমান টলোমলো হয়ে যাচ্ছে, বেহেশত লাভ বিপদে পড়ে যাচ্ছে, কাজেই সোজা তাকে নাস্তিকের বালতিতে ফেলে দাও। বা এর উল্টোটা , অমুকে ধর্ম বিশ্লেষণ করে কথা বলছে, তার উদ্দেশ্য সমন্ধে আমি সন্দিহান, নিজের কল্লা বাচাইতে তাকে সোজা ছাগু বালতিতে ফেলে দাও। সূক্ষ্ণ পার্থক্যগুলোকে সম্মান করার মত অবস্থা হয়ত এখন আর নেই। সব কিছু খুব বেশি রকম সাদা আর কালো, এর মাঝে অন্য রঙের মিলেমিশে খেলা দেখার মত অবস্থা যেন আর নেই।

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

চলুক

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

শিশিরকণা এর ছবি

এত বক বক করলাম আর খালি একখান বুড়া আঙুল?

~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~

নীড় সন্ধানী এর ছবি

আমাদের একটা জনগোষ্ঠী ইন্টারনেট নির্ভর। খুব প্রবলভাবেই ইন্টারনেট প্রভাবিত(আপনি ঠিক ধরেছেন, ইন্টারনেটের মানে ফেসবুকেই সীমাবদ্ধ অনেক মানুষের কাছে)। সেই প্রভাব মাথায় অনেক বেশী। ফেসবুকীয় সংস্কৃতির অধিকাংশ ফেসবুকারকে মনে হয়েছে নিজস্ব মগজের কোন অস্তিত্ব নেই অথবা ফেসবুকের জন্য আলাদা মগজ তৈরী। নিজের কোন মত প্রকাশের চেয়ে শুধু লাইক বাটন চিপেই বিশিষ্ট ফেসবুকার। হাসি

এরকম ব্লগরব্লগর ভালো লাগে। পড়তে এবং লিখতে। চলুক

‍‌-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?

মরুদ্যান এর ছবি

তোমার এই কথাটা পছন্দ হইসেঃ

ছেলেদের মান মর্যাদা সুপারম্যানের আন্ডারওয়্যার এর মতন। ঢেকে রাখে খুব অল্প জায়গা, কিন্তু কিছুতেই ছিড়ে ফাটে না। ভিতরে না বাইরে পরলো সেটাও ব্যাপার না।
আর মেয়েদের মান মর্যাদা বারো হাত শাড়ি প্লাস বোরকা দিয়েও রক্ষা করা যায় না।

-----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে

সাক্ষী সত্যানন্দ এর ছবি

পপকর্ন লইয়া গ্যালারীতে বইলাম

____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?

তিথীডোর এর ছবি

অথচ মস্তিষ্কও শরীরের একটি অঙ্গ মাত্র। সেখানেও আর সব অঙ্গের মতন নানান প্রাণ রসায়ন বিদ্যমান নির্দিষ্ট ছন্দে কাজ করে চলেছে। সেই ছন্দে গোলমাল লাগায় যদি মস্তিষ্কের রোগ দেখা দেয় তাকে কেন স্রেফ মনে ইচ্ছায় তাড়ানো যাবে বলে মনে করি, যে পাত্তা না দিলেই চলে যাবে। কেন সেখানে ওষুধের, চিকিৎসার দরকারকে তুচ্ছ করি?

বিষণ্নতা নিয়ে বড়সড় একটা লেখা পাবো ভেবেছিলাম। কী দিয়ে ঠ্যালা দিলে লিখবেন? হাসি

________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।