সচলের জন্মদিন উপলক্ষ্যে লেখা দিতে ইচ্ছা করলো। তাই টেরি প্র্যাচেটের ডিস্কওয়ার্ল্ড এর পর্ব-২। আগের পর্বে নাম ভিন্ন ছিলো, সেটা এখন আর পছন্দ হচ্ছে না। তাই পালটে দিলাম।
প্রথম পর্ব এখানেঃ চাকতি-জগতঃ জাদুর রঙ। পর্ব ১
সৃষ্টিকর্তাদের সৃষ্ট বিশ্বজগত কারিগরিভাবে যতই নিখুঁত হোক না কেন, কল্পনাশক্তির অভাবে তা চক্রাধামের দৃশ্যপটের কাছে তা খুবই মামুলি মনে হবে।
যেমন ধরা যাক, চক্রাধামের আকাশে যে সূর্যের দেখা মেলে, সেটা আসলে একটা উপগ্রহ মাত্র। মাটি থেকে তার উচ্চতাও বেশি নয়, ডাংগুলি খেলায় জোরে মারলে পরে সেই পিচ্চি সূর্যে গিয়েও পড়তে পারে। যে সুপ্রাচীন কাছিমের পিছে চক্রাধাম বসানো, তার তুলনায় অবশ্য সবকিছুকেই পিচ্চি মনে হয়। উল্কাঘাত জর্জরিত খোলস নিয়ে মহান আ'তুইন নামের সেই কাছিম অনন্ত সময়ের পথে ধীর যাত্রা করে চলেছে। কখনো কখনো সে তার মহাদেশের সমান বিরাট মাথা বাড়িয়ে পাশ কাটিয়ে যাওয়া ধুমকেতু খপ করে ধরার চেষ্টা করে।
চক্রাধামে বসবাসকারী অধিকাংশ চোখ আর ঘিলু মহান আ'তুইন এর মাহজাগতিক বিশালত্ব অনুধাবনই করতে পারে না, তাই তাদের চোখে চক্রাধামের সবচেয়ে মোহনীয় দৃশ্য হচ্ছে বেড়প্রপাত। চক্রের পরিধির সবটুকু জুড়ে যেখানে সাগর টগবগ করতে করতে মহাশূন্যে ধাবিত হচ্ছে। অথবা তার চেয়েও মোহনীয় হচ্ছে বেড়প্রপাতের উপরে কুয়াশা ঘেরা বাতাসে ভেসে ওঠা বেড়ধনু, আটটি রঙের জগত জোড়া রঙধনু। অষ্টম রঙটি হচ্ছে অক্টারিন, অত্যন্ত শক্তিশালী জাদুর বলয়ের উপর সূর্যরশ্মি প্রতিসরিত হলে পরেই কেবল যা দেখা সম্ভব হয়।
কিংবা হতেও পারে, সবচেয়ে আকর্ষনীয় হচ্ছে চক্রের কেন্দ্র, যেখানে সবুজ বরফে ছাওয়া দশ মাইল উঁচু এক খাড়া পর্বত মেঘের উপরে মাথা তুলে রয়েছে। যার মাথায় অবস্থিত ধম্মোকম্মোসারা রাজ্যে চক্রাধামের দেবতারা বাস করেন। তাদের পায়ের নিচে বিস্তৃত জৌলুসময় এক জগত থাকা সত্তেও চক্রাধামের দেবতারা কখনোই সন্তুষ্ট নন। অসম্ভবেরও একটা সীমা থাকে, চক্রাধাম সেই সীমার প্রান্তে অবস্থান করার কারণেই কেবল তারা দেবত্বলাভ করায় তারা কিঞ্চিত বিব্রত থাকেন, বিশেষ করে যখন অন্য সকল জগতের সৃষ্টিকর্তাদের কারিগরি দক্ষতার পাশে নিজেদের শিশুসুলভ কল্পনাশক্তির তুলনা করেন। এজন্যই হয়ত সর্বজ্ঞানী হওয়ার চেষ্টার পরিবর্তে নিজেদের মাঝে ঝগড়াঝাঁটি নিয়ে চক্রদেবতারা বেশি ব্যস্ত থাকেন।
কোন এক বিশেষ দিনে,আইও, অন্ধ হলেও যে সদা সতর্ক এবং ফলশ্রুতিতে প্রধান দেবতার পদাধিকারী, গালে হাত দিয়ে বসে সামনের লাল মার্বেল পাথরের টেবিলের উপরের সাজানো খেলার ছকের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। যেখানে চক্ষুকোটর থাকার কথা, সেখানে কেবল দু টুকরো চামড়া থাকার ফলে অন্ধ আইওর এই নামকরণ। তার কার্যকরী চোখের সংখ্যা যদিও অগণিত, এবং তারা শরীর থেকে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে, যেমন সেই মূহুর্তে কয়েকটি চোখ টেবিলের উপর ভেসে বেড়াচ্ছিলো।
খেলার ছকটি আসলে চক্রাধামেরই একটি নিখঁত মানচিত্র, যার উপর চৌকো ঘর কাটা। কোন কোন ঘর নিখঁতভাবে গড়া কিছু খেলার গুটি এ মূহুর্তে দখল করে আছে। কোন সাধারণ মানুষ উঁকি দিলে হয়ত সেসব গুটির মাঝে ব্রাভদ আর উইজেল নামের দুটো চরিত্রকে চিনতে পারতো। অন্যান্য গুটিগুলোও চক্রাধামের নানান বীরপুরুষ আর মল্লযোদ্ধার আদলে তৈরি, চক্রাধামে এমন চরিত্রের অভাব নেই।
খেলাতে এখনো টিকে আছে আইও, কুমীর দেবতা অফলার, ঝিরিঝিরি বাতাসের দেবতা জেফাইরাস, ভাগ্য আর দেবী। দুর্বল খেলোয়াড়রা বাদ পড়ার পর খেলার ছকের দিকে এখন সবার পূর্ণ মনোযোগ। সুযোগ খেলার প্রথমভাগেই বাদ পড়েছে, তার বীরপুরুষ গুটি সোজা এক দঙ্গল সশস্ত্র দানবীয় বামনের মাঝে ঢুকে অক্কা পেয়েছে। তার কিছুক্ষণ বাদেই নিশুতি খেলা থেকে তার বাজি উঠিয়ে নিয়েছে নিয়তির সাথে দেখা করবার অজুহাতে। আরও কিছু গুরুত্বহীন দেব দেবীরা খেলা বাদ দিয়ে এখন মূল খেলোয়াড়দের পিঠের উপর দিয়ে উঁকিঝুকি মারছে আর ফোড়ন কাটছে। কেউ কেউ বাজি ধরছে, পরের ধাপে দেবীর খেলা থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনার উপর। দেবীর সর্বশেষ মল্লযোদ্ধা এখন আঁখ-মরপর্ক এর ধ্বংসস্তূপে এক চিমটি ছাই মাত্র, দ্বিতীয় কোন গুটিও নেই তেমন যেটা দিয়ে ভালো কোন চাল দেয়া সম্ভব।
অন্ধ আইও ছক্কার পাত্র হাতে নিলো। ছক্কার পাত্রটি একটি মাথার খুলি বিশেষ, যারা নানান ছিদ্রগুলি রক্তলাল চুনি পাথর দিয়ে বন্ধ করা হয়েছে। ভাসমান চোখ ক'টি দেবীর দিকে নিবিষ্ট করে আইও চাল দিলো। তিনটি পাঁচ।
দেবীর চোখেএকটুখানি হাসির রেশ দেখা দিলো। তার চোখগুলোই এমন, উজ্জ্বল সবুজ, মণি বিহীন, যেন ভিতর থেকে কিছু জ্বলছে। চারদিকের শুনশান নীরবতার মাঝে সে তার গুটির বাক্স হাতড়ে এক জোড়া গুটি বের করে শব্দ করে খেলার ছকের উপর নামিয়ে রাখলো। বাকি খেলোয়াড়রা , এক সাথে গলা বাড়িয়ে দিলো গুটিগুলোকে দেখতে।
"এক নাচতেক সাদুকর আর এক খেরানি" শুঁড়ের জন্য কুমীরদেবতা অফলারের কথা সবসময় জড়িয়ে যায়, "বালো বাঁলো!" একটা দাঁড়া দিয়ে স্তূপ করা সাদা মুদ্রাগুলো সে টেবিলের মাঝখানে বাজির পাল্লায় ঠেলে দিলো। দেবী মাথা ঝুঁকিয়ে ছক্কার পাত্র হাতে স্থির হয়ে দাঁড়ালো। তার স্থির হাতে ছক্কা নড়বার শব্দে দেবতার যখন অধীর তখন সে টেবিলের উপর দিয়ে গড়িয়ে দিলো ছক্কা তিনটে।
একটা ছয়, একটা তিন আর একটা পাঁচ।
কিন্তু, কিন্তু, পাঁচটা যেন নড়ছে। কোটি কোটি অণু পরমাণুর ধাক্কাধাক্কিতে একসময় ছককাটা উলটে যেতে বাধ্য হলো। আস্তে করে ঘুরে সেটা হয়ে গেলো একটা সাত।
অন্ধ আইও ছক্কাটা তুলে গুনে দেখলো এর কয়টা দিক। তারপর বিব্রতভাবে বললো, "এই! চোট্টামি করে না।"
মন্তব্য
চক্রাধাম নাকি চক্রধাম? চক্রাধাম = চক্র + আধাম অথবা চক্রা + ধাম। "আধাম" মানে কি? অথবা "চক্রা" মানে কি?
ব্যকরণ ভেবে দেখিনি। উচ্চারণের সুবিধা ভেবে আ-কার জুড়ে দিয়েছি। মতামতের জন্য ধন্যবাদ। শব্দ গঠন নিয়ে খেলছি। আপনাদের পরামর্শ অনুবাদের খোল বদলাতে সাহায্য করছে।
ভবিষ্যতে চক্রধাম লিখবো, যদি এই শব্দই স্থায়ী হয়।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
অনেক দিন ভেবেছি চাকতি জগতের পরবর্তী পর্ব কবে আসবে। অবশেষে সচলের জন্মদিন খেতে এসে ফিতে বাঁধা কয়েকটা উপহারের মধ্যে দেখলাম চক চক করছে চাকতির জগত। প্রতি পর্বের মধ্যে এতো দুস্তর ব্যবধান যদি রাখতেই হয় তবে পর্ব গুলো একটু বড় হলেই কি ভালো হতোনা।
---------------------------------------------------
মিথ্যা ধুয়ে যাক মুখে, গান হোক বৃষ্টি হোক খুব।
আপনি ভেবেছেন, আমি জমিয়ে জমিয়ে রেখে বড় করে পর্ব তৈরি করি? লিখতে বসার সময়ই হয় না। সচলের জন্মদিন দেখে এক বসায় এতটুকু নামালাম। রিভিশনও দেইনি। কেবল চোখ বুলিয়ে বানান ঠিক করে গেছি যতটুকু পারি।
এক স্ক্রীন লেখা ( ফন্ট সাইজ ঠিক রেখে) হলেই পোস্ট করে ফেলি তো।
~!~ আমি তাকদুম তাকদুম বাজাই বাংলাদেশের ঢোল ~!~
নতুন মন্তব্য করুন