সেদিন তো ক্লাসের মাঝে হঠাৎ মনে হলো চুলা বন্ধ করা হয়নি। কী যে একটা ফ্যাসাদ! না পারি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করতে, না পারি চুলার কথা ভুলে থাকতে। মানসচোখে দেখছি, বাড়ির সামনে দমকলের দুইটা গাড়ি, তারা পানি ছুঁড়ে আমার আধপোড়া ঘর ঠান্ডা করছে।
ঘামতে ঘামতে বাড়ি ফিরে দেখি, না, সবকিছু ঠিকাছে। তবে রোজই দৌড় দিয়ে বেরোই, পড়িমড়ি করে বাস ধরি শেষ মূহুর্তে, এখন একটা চিরকুট সেঁটে দিয়েছি দরজায়, খোদ জার্মান ভাষায়। শুধু আমি একা ভয় পেলেই চলবে না, লম্বু স্যামুয়েলকেও ভড়কে দিতে হবে। অবশ্য এই ছোকরা চুলা বেশি ব্যবহার করে না, নানারকম শুকনো খাবার খেয়ে বেঁচে থাকে। সে এক কাঁড়ি ইউরো দিয়ে প্রকান্ড এক ডেগচি কিনে এনেছে, যেটা দেখে সুমন চৌধুরী রীতিমতো খাপ্পা, ঐ ডেগচিতে নাকি কাসেলে আমাদের সবাইকে বিরিয়ানি রান্না করে খাওয়ানো যাবে। ঢাকনা খুলে দেখি ডেগচির গহীন তলদেশে কিছু ম্যাকেরোনি পড়ে আছে মৃত তারামাছের মতো।
গতকাল প্রথমবারের মতো নিজের জামাকাপড় ধুলাম। সেইসূত্রে কেলার (বেসমেন্ট) এ বাড়ির পানি সরবরাহ ব্যবস্থাটাও খুঁটিয়ে দেখলাম। আমাদের দেশে প্রায় সব বাড়িতেই পানির ট্যাংক ছাদের ওপরে। জার্মান বাড়িগুলির সেরকম ছাদ এখানে সাধারণত দেখাই যায় না (বড়সড় কন্ডোমিনিয়াম না হলে), সব টালি দেয়া, কাজেই পানির ট্যাঙ্কগুলি থাকে কেলারে। আমি যেটা ধারণা করেছি, একটা হেডার পাইপ শুধু থাকে ওপরে। কেউ যখন কোন ট্যাপ খোলে, তখন হেডার থেকে পানি ফিড হওয়া শুরু করে, আর পানির হেড কমতে শুরু করে। পিচকিনি একটা পাম্পের ডেলিভারি লাইনে দেখলাম একটা সেন্সর লাগানো, অর্থাৎ হেডার থেকে শুরু করে সেন্সর পর্যন্ত পানির হেড দিয়েই গোটা ব্যাপারটা নিয়ন্ত্রণ করা হয়। একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রেশারে নেমে আসলেই পাম্প ঘটাং করে চালু হয়ে যায়, আবার একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ প্রেশারে চলে গেলে বন্ধ হয়ে যায়। পানির ট্যাংকগুলি প্লাস্টিকের।
জার্মানীতে ফের্নভেয়ার্মে বলে একটা ব্যাপার আছ, যাকে বাংলায় বলা যেতে পারে দূরতাপ। বিভিন্ন কারখানার এগজস্টে যে তাপ আছে, সে তাপ কর্তৃপক্ষ কিনে নেয়, এবং সে তাপ কাজে লাগিয়ে পানি গরম করে সেই গরম পানি আলাদা সাপ্লাই চ্যানেলে বিক্রি করা হয়। অর্থাৎ লোকজন বাসায় বসে সরাসরি সিটি করপোরেশনের কাছ থেকে (অন্য কোন কর্তৃপক্ষও হতে পারে) গরম পানি কিনতে পারছে। তবে লোকজন আলাদা হীটারও ব্যবহার করে দেদারসে, অয়েল হীটার বা ইলেকট্রিক হীটার দিয়ে কেলারে পানি গরম করে সারা বাড়িতে সরবরাহ করা হয়। বাংলাদেশে বিভিন্ন কারখানায় দেখেছি জেনারেটরের বর্জ্যতাপ দিয়ে স্টীম তৈরি করে সেটাকে কাজে লাগাতে, বিশেষ করে টেক্সটাইল মিল আর পেপার মিলে।
কাপড় ধুতে গিয়ে মেজাজ গরম হয়ে গেলো। ওয়াশিং মেশিনটা ছোট, অর্ধেক ময়লা কাপড় আবার ফিরিয়ে নিতে হলো। সারা জার্মানী জুড়েই বোধহয় ছাত্রাবাসগুলিতে মিলে (Miele) কোম্পানীর ওয়াশিং মেশিন, কারণ আমার স্পষ্ট মনে আছে মিউনিখে কার্ল ডুইসবের্গ সেন্ট্রুমের ছাত্রাবাসের ওয়াশিং মেশিনটাও মিলে ছিলো। দেয়ালে নানারকম আইনকানুন লেখা, যেমন কাপড় ধোয়ার সময় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্ক দায়ী নহে, অমুক পদের কাপড় আড়াই কেজির বেশি দেয়া যাইবেক না, তমুক পদের কাপড় দেড় কেজির বেশি শুকানো যাইবেক না, সর্বোপরি কাপড় শুকানোর পর একটা ফিল্টার খুলে সেটাকে উত্তমরূপে পরিষ্কার করিতে হইবেক। কাপড় ধুতে গেলে দুইটা পঞ্চাশ সেন্টের কয়েন ফেলতে হয় স্লটে, কাপড় শুকানোর দরও এক (কাপড় শুকানোতে শক্তি খরচ বেশি পড়ে আসলে)।
যাই হোক, ঘন্টা দেড়েক পর শুকনো কাপড় ব্যাগে ভরে ফিল্টার খুলে দেখি সেখানে কমসেকম এক বছরের ময়লা প্যাডের মতো জমা হয়ে আছে। প্রাণ খুলে গালি দিলাম আমার পূর্ববর্তীদের, শালারা, খালি নোটিশ ইয়ে করো। অবশ্য এখন আমার ভোনহাইম (হোস্টেল) ভর্তি নানা আকৃতির তরুণী, তাই কিছু স্ত্রীবাচক গালিও ভেবেচিন্তে দিতে হলো। কিছু অশালীন প্রতিজ্ঞাও করলাম মনে মনে।
মন্তব্য
য়ূরোপের এইসব ইয়ে করা সিস্টেমের বিবরণ শুনলেই ভয় লাগে।
সর্বোনাশ! অশালীন প্রতিজ্ঞা আবার তরুণীদেরকে সাফসুতরো বিষয়ক হাতেকলমে শিক্ষাদান নয় তো?
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
অশালীন প্রতিজ্ঞা?!?!
আপনে তো দেখি চক্রবৃদ্ধি হারে খাইস্টা হইয়া যাইতেসেন।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
রয়ে সয়ে দাদা
----------------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
নারীলিপ্সু মানুষের হস্টেল ভর্তি নানা আকৃতির তরুণী!
খাইছে!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
অ্যাঁ!
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
নতুন মন্তব্য করুন