"ইতিহাস নিয়ে বিব্রত হতে ভালো লাগে"

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বুধ, ০৪/০৭/২০০৭ - ৮:১৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ইতিহাস নিয়ে বিব্রত বোধ করতে অনেকেই ভালোবাসে। এতে করে ভদ্রভাবে ইতিহাসের গালে একটা চড় মেরে দেয়া যায়, অস্বীকার করা যায় ইতিহাসের বক্তব্যকে। আজকে আমার একটা লেজ থাকলে আমি হয়তো সে লেজ নিয়ে বিব্রত বোধ করতাম, পাৎলুনের নিচে ঠিকমতো ঢেকেঢুকে রাখতে চেষ্টা করতাম, জনসমক্ষে যাতে সে উত্থিত না হয় সে জন্য হুঁশিয়ার হয়ে থাকতাম। ইতিহাস নিয়ে অনেকে এমন করেন। যেন ইতিহাস মানুষের লেজের মতোই ভদ্র হাওয়ায় অপাংক্তেয় কিছু।

ইতিহাসে যদি এমন কিছু থাকে, যা নিয়ে বেশি কথাবার্তা হলে আমি বিপদে পড়বো, তাহলে ইতিহাসকে বেড়ালের বিষ্ঠার মতো মাটিচাপা দেয়ার ব্যাপারে আমার একটা আগ্রহ থাকাই স্বাভাবিক। তবে ইতিহাসকে মাটিচাপা দেয়া মুশকিল, তাকে চাপা দিতে হয় সমান্তরাল, বিকল্প ইতিহাস দিয়ে।

আশি আর নব্বইয়ের দশকের শিশু, যারা এখন অনেকখানি পেকেছেন, তাদের মধ্যে ক'জন এখন এই বিকল্প ইতিহাসের ভিড়ের অজুহাতটি ইদানীং খুব তীব্রভাবে ব্যবহার করছেন। তাদের বক্তব্যের ধারা অনেকটা এমন,

  • এক এক সরকার এসে এক এক বুলি শেখায়, কোনটা শিখবো? কোনটা সত্যি? মনে হয় সবই ধাপ্পা।

  • ইতিহাস নিয়ে যখন এত বিতর্ক, তখন আমরা ব্যাপারটার দিকে বরং না তাকাই। সামনে তাকাই বরং।

  • সামনে তাকানোর ব্যাপার নিয়ে যখন সবাই একমত হলাম, আসুন না ইতিহাস শিখি। মুদ্রার দুটো পিঠই দেখি।

  • মুদ্রার অন্য পিঠ তো অনেক দেখলেন, এ পিঠটা দেখুন না একবার। এ পিঠেও কিন্তু ভালো ভালো কথা লেখা। মন্দ নয় কিন্ত।

বিকল্প ইতিহাস দাঁড় করানোর প্রথম ধাপ, মূলধারার ইতিহাসকে বিতর্কিত করে তাকে অস্বীকার করা। তাকে বিস্মরণের পথে ঠেলে দেয়া। তারপর একটু একটু করে স্বকপোলকল্পিত ইতিহাসের ঘাগড়াকাঁচুলি উন্মোচন করা। একটি বিকল্প ইতিহাসের প্রস্তাব মার খেয়ে গেলে আরেকটি, তারপর আরেকটি। বিকল্প ইতিহাসের ভিড়ে, প্রতিদ্বন্দ্বী মিমের চাপে একসময় সত্য অবলুপ্তির দিকে চলে যেতে পারে।

ইতিহাস মুখে মোয়ার মতো তুলে দেবার জিনিস না। ইতিহাস যাচাই করে নিতে হয়। বিষফোঁড়ার মতো, এক দিক চেপে ধরলে অন্যদিকে ঠিকই মাথা তুলে দাঁড়ায় ইতিহাস। যারা বিকল্প ইতিহাসের ভিড়ে সংশয়গ্রস্ত বলে নিজেকে দাবি করেন, তাদের আস্তিনের আড়ালে কিন্তু নিজস্ব বিশ্বাসটা ঠিকই লুকানো থাকে। ইতিহাসের ঘাড়ে দোষারোপ সংশয় থেকে মুক্তির পথ হতে পারে না। যারা দ্বিধাগ্রস্ত হন, তারা যাচায়ের নিকষ চিনে নিন।


মন্তব্য

হাসান মোরশেদ এর ছবি

যারা দ্বিধার দোহাই দেয় তারাই বরং খুব সেয়ানা ।

-----------------------------------
'পড়ে রইলাম বিধির বামে,ভুল হলো মোর মুল সাধনে'

-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।

আরশাদ রহমান এর ছবি

আমাদের দেশের বাস্তবতাই তুলে ধরলেন। যারা নকে কোরে অতীতকে বদলানো যায় তারা ভুল করে। তারা শুধু কৌশলে সত্যটা ঢেকে রাখতে চায়।

সুমন চৌধুরী এর ছবি

তারা আসলেই সেরম সেয়ানা। তারা তখন যাচাইএর মানদন্ড লইয়া প্রশ্ন তুলবো। তারপর মারবো আসল প্যাচ..একলগে ৪-৫টা সামঞ্জস্যহীন বিষয় টান দিয়া আলাপ ''আমারে মারে!'' পয়েন্টে লইয়া যাইবো। তখন ওষুধ কি?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

ইতিহাসের ঘাড়ে দোষারোপ সংশয় থেকে মুক্তির পথ হতে পারে না।

সহমত।

আড্ডাবাজ এর ছবি

হিমু,
একদম গোড়ায় হাত দিলে। সবাই কিন্তু আগা নিয়ে লাফায়। এবার ইতিহাসবিদদের ভাত মারবে।

সৌরভ এর ছবি

সেটাই,
ইতিহাসকে মুছে দেয়ার থেকে, বিভ্রান্তি আর মিথ্যেকে তার বিপক্ষে দাড় করিয়ে দেয়া - সাম্প্রতিক সময়গুলোতে এটাই ছিল কূপমণ্ডুকদের চেষ্টা।

------ooo0------
বিবর্ণ আকাশ এবং আমি ...


আবার লিখবো হয়তো কোন দিন

আরিফ জেবতিক এর ছবি

ইতিহাসের বড়ো শিক্ষার একটি হচ্ছে যে ইতিহাসকে লুকিয়ে রাখা যায় না।

-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...

??? এর ছবি

বিকল্প ইতিহাস দাঁড় করানোর প্রথম ধাপ, মূলধারার ইতিহাসকে বিতর্কিত করে তাকে অস্বীকার করা।

হিমুর এই পোস্টে ইতিহাসসম্পর্কিত যে বয়ান, তাতে এর ব্যাকগ্রাউন্ড হিসেবে আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ হাজির আছে, এরকম স্মেল করা যায়। তাই একটা ডিসক্লেইমার আগেই দিয়ে রাখা ভাল। বাঙালির মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে, তার ইতিহাস নিয়ে, তার পক্ষ-বিপক্ষ নিয়ে যে একটা হাংকিপাংকি আছে সেখানে আমার পজিশন খুব স্পষ্ট। যারা বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পর এসে নতুন করে শত্রুমিত্র চিহ্নিত করার কী দরকার, তারা হয় অপরাধী নাহয় অপরাধীর সুবিধাভোগী। স্বাধীনতার শত্রু চিরকালই স্বাধীনতার শত্রু, এর বিকল্প হতে পারে না, যতই আমরা জ্ঞানের কচকচি করি না কেন। এসব লোকেরা যখন আইনপ্রণেতা হন, মন্ত্রী হন, লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে আসে।

এবার আসি মূল প্রসঙ্গে। "মূলধারার ইতিহাস" আর "বিকল্প ইতিহাস" বলতে হিমু যা বুঝিয়েছেন, তার আমাদের ৭১-এর প্রেক্ষাপটে বোধগম্য। কিন্তু অন্যান্য ঐতিহাসিক ইভেন্টে এই বয়ান কিছুটা বিভ্রান্তিকর। বৃহৎ অর্থে, মূলধারার ইতিহাস হচ্ছে একটা সরলীকৃত ইতিহাস যা ক্ষমতাবান কিংবা তার প্রতিনিধিরা রচনা করেন। সেখানে সমাজবদলের ইতিহাস মানেই যুদ্ধ বা দখলদারিত্বের ইতিহাস। সমাজের যেসব ছোট ছোট শর্ত অপরিহার্যভাবে তাকে একটা বদলের দিকে ঠেলে দিচ্ছিল, সেসব কখনই মূলধারার ইতিহাসে লেখা থাকেনা। সেগুলো তুলে আনে "বিকল্প" ইতিহাস। ইতিহাস জানার জন্য খুব গুরুত্বপুর্ণ হল, কার চোখে আমরা ইতিহাস দেখছি? মূলধারার ইতিহাস অধিকাংশ সময়েই শাসকের চোখে দেখা ইতিহাস।

আবারো বলি, ৭১-এর ইতিহাসকে বিকৃত করার জন্য কতিপয় রাজাকার এবং নব্য রাজাকার যেভাবে প্রয়াস চালাচ্ছেন, তাকে বিকল্প ইতিহাস বলতে আমি রাজি নই। এইগুলা স্রেফ বুজরুকি। তবে দেখেন, গত পাঁচটা বছর এই কার্যক্রম কিন্তু মূলধারার রাজনীতির প্রমোশন বিস্তর পেয়েছে। সরকারের সক্রিয় পৃষ্ঠপোষণে সেইই হয়ে দাঁড়াচ্ছিল মূলধারার ইতিহাস!

শুরুতে যে উদ্ধৃতি আছে, আমি এটাকে তাই ইতিবাচক প্রক্রিয়া বিবেচনা করি, যদি তা করা হয় পর্যাপ্ত তথ্য ও যুক্তির সন্নিবেশে।

হিমু এর ছবি

সর্বাংশে সহমত। এই মন্তব্য আমার পোস্টের বক্তব্যকে আরো সংহত করেছে। ধন্যবাদ সুমন রহমান।

বিকল্প ইতিহাস শব্দযুগলের চয়নে আরো সতর্ক হওয়া উচিত ছিলো আমার। সঠিক শব্দযুগল হতে পারতো, "আরোপিত ইতিহাস"। এমন তথ্য যা যাচাই করার উপায় থাকে না, যার রেফারেন্স তার মতোই বিতর্কিত আরেকটি তথ্য, অনায়াসে স্থান করে নিতে চায় "মূলধারার" ইতিহাসে। এ কথা সত্যি, মূলধারার ইতিহাস মানেই বিজয়ীর ভাষ্য, তার বেছে নেয়া তথ্য, তার অনুমোদিত বিবরণ, বেশিরভাগ সময়ে অস্ত্রের বলে মহিমান্বিত সবচেয়ে শক্তিশালী "বিকল্প ইতিহাস"। কিন্তু সাম্প্রতিক ইতিহাসে (ধরে নিই গত একশো বছর) প্রকৃত তথ্যের অবদমন কঠিন একটি কাজ বলেই বিবেচনা করা যেতে পারে, প্রকৃত তথ্য যদি "মূলধারা"য় না থাকে, তাহলে সে "বিকল্প" হিসেবেই মাটি ফুঁড়ে মহীরূহ হয়ে দাঁড়াবে।

আরোপিত ইতিহাসের সমস্যা অন্য কোথাও। আরোপিত ইতিহাস কোথায় খুঁজে পাবে সমর্থন? আরোপিত ইতিহাস শিকড় খোঁজে মানুষের সংস্কার আর বিশ্বাসে। চক্ষুকর্ণের বিবাদভঞ্জন করার মতো জীবনরস তার মেলে না। তাই এই ইতিহাসকে মানুষের মনে গুঁজে দিতে হয়, ফুঁড়ে দিতে হয়, আর তার জন্যই প্রয়োজন হয় "মূলধারা"র ইতিহাসের কণ্ঠরোধ করতে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

ভাস্কর এর ছবি

সহমত @ সুমন ভাই


বরফখচিত দেশ ক্যান এতোদূরে থাকো!


স্বপ্নের মতোন মিলেছি সংশয়ে...সংশয় কাটলেই যেনো মৃত্যু আলিঙ্গন...

হযবরল এর ছবি

পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক বলেই বলি, এই প্রশ্নটা আমার মাথায় হামেশাই পাক খায়। আদৌ কি ইতিহাস বিকৃত করা সম্ভব 'ইন দ্যা লং রান'। কিংবা পৃথিবীর কোথাও কি সম্ভব হয়েছে? বদরুদ্দীন উমর সুন্দর একটা কথা বলেছিলেন,

ইতিহাস একটি বিজ্ঞান। গর্দভ দিয়ে ইতিহাস রচনা হয়না, সেটা গর্দভরাগিনীই হয়।

প্রশ্ন হচ্ছে এই নানা লয়ের গর্দভরাগিনীর পাল্লায় পড়ে, ইতিহাস বিস্মৃতির অতলে যাওয়া সম্ভব, কিন্তু পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়া কি সম্ভব ?

??? এর ছবি

ধন্যবাদ হিমু। আপনার পোস্টের বক্তব্যে আমারো মতৈক্য আছে তাই এই নোটস। "আরোপিত ইতিহাস" বেটার শব্দ।

একথা ঠিক যে, আরোপিত ইতিহাস আশ্রয় খোঁজে মানুষের সংস্কার আর বিশ্বাসে।

মজার একটা জিনিস মনে হল আপনার পোস্টে মন্তব্য করতে করতে। একসময় ইতিহাসবেত্তাদের সমস্যা ছিল তথ্যের ঘাটতি, অপর্যাপ্ততা। তখন ইতিহাস রচয়িতার কাজ ছিল অপ্রতুল তথ্যগুলোর ফাঁকফোকর যুক্তিনির্ভর কল্পনা দিয়ে ভরানো। আর সাম্প্রতিক ইতিহাসের সমস্যা অন্য। এত তথ্যের ভার! সেখান থেকে সঠিক তথ্য বের করা এবং তথ্যকে ঠিকমত ইন্টারপ্রেট করা সমসাময়িক ইতিহাসের সমস্যা।

সবকিছুর পরেও ইতিহাস তো একটা ইন্টারপ্রিটেশনই। দুষ্ট লোকেরা নিজেদের পাছার ক্ষত ঢাকার জন্য এইটাকে এক্সিট পয়েন্ট হিসাবে ব্যবহার করে।

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

কথাবার্তা আরো চলুক, কান পেতে রাখছি।

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

এম. এম. আর. জালাল এর ছবি

bhishon bhalo laagchhe. sob bhalo bhalo kotha.
MMR Jalal.
“Pheeray Dekhun Ekattor. Ghuray Darak Bangladesh."


এম. এম. আর. জালাল
"ফিরে দেখুন একাত্তর ঘুরে দাঁড়াক বাংলাদেশ।"

হিমু এর ছবি

CTRL + ALT + U চাপ দিলেই বাংলা লেখার একটা উপায় হয়ে যেতে পারে। স্বাগতম জালাল ভাই! যোগ দিন থ্রটল খুলে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

হিমু এর ছবি

চৌকি পেতে বসে হাত পেতে লিখলে কেমন হয় হাসি?


হাঁটুপানির জলদস্যু

উৎস এর ছবি

লেখা আর মন্তব্যগুলো আরো চলুক। আমার ধারনা যারা বলে যে তারা সংশয়গ্রস্ত তারা সবসময়ই একটা বিকল্প কাহিনী লুকিয়ে রাখে। সংশয়ের সুযোগে বিকল্পটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। মিথ্যা বারবার বললে সত্যের মতো শোনায়, হয়তো এ ধারনটা কাজ করে তাদের মধ্যে।

আরশাদ রহমান এর ছবি

সুমন রহমানের মন্তব্য গুলো ভালো লেগেছে।

হযবরল, [পোস্টের সাথে প্রাসঙ্গিক বলেই বলি, এই প্রশ্নটা আমার মাথায় হামেশাই পাক খায়। আদৌ কি ইতিহাস বিকৃত করা সম্ভব 'ইন দ্যা লং রান'। কিংবা পৃথিবীর কোথাও কি সম্ভব হয়েছে?]
কোন দেশে ইতিহাস বিকৃত করা সম্ভব হয়েছে কিনা জানিনা তবে কি যেন একা প্রবাদ আছেনা যে একটা মিথ্যাকে সত্য বলতে বলতে এক সময় সত্য বলেই ধরে নেয় লোকে। সুতরাং বেশি মিথ্যা ইতিহাস চলতে দেয়া ঠিকনা মনে করি।

আরশাদ রহমান এর ছবি

জালাল ভাই আপনার আওয়াজ শুনে ভালো লাগলো।

??? এর ছবি

হিমুর পোস্টে কথা আরো বলতে ইচ্ছা করছে। নিজেও পোস্ট দিতে পারতাম, কিন্তু রেডিমেড আছে তাই সেই কৌশিশ করলাম না। আমার মনে হয় ইতিহাস নিয়ে সংশয়ী থাকা ভাল, অবশ্য সেই সংশয়ের পিছনে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি থাকলে অন্য বিবেচনা। বদরুদ্দীন উমর যখন বলেন, ইতিহাস একটি বিজ্ঞান, তখন তিনি আসলে ইতিহাসের একটা ফ্রেমওয়ার্কের কথাই বলেন বলে আমি মনে করি। এ ধরনের ইতিহাসবোধ থেকে মার্ক্সের ঐতিহাসিক বস্তুবাদের বিকাশ। তবে, চর্চা অর্থে, ইতিহাসকে বিজ্ঞান বলা খুব সমস্যার।

আলাপটা থেমে গেল কেন? কোথায় হিমু? হাসি

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

আমার বসত সাউথে। বর্ণবাদ আর দাসত্বের খনিতে। এখানে একটা বই দেখেছিলাম (পড়ে সাড়া হয়নি) এক সময়। সত্যিকার বিকল্প ইতিহাস নিয়ে। গৃহযুদ্ধে দক্ষিণ জিতে গেলে কী হত, তা নিয়ে। আমার মতে, ইতিহাসকে বিকৃতির হাত থেকে বাঁচানো ও পরাজিত পক্ষের দৃষ্টিভঙ্গির স্বীকৃতির (সমর্থন নয়) জন্য এমন কিছু খুব কার্যকর।

-------------------
প্রবাসী,ছাত্র,দুস্থ,দেশপাগল
-------------------

??? এর ছবি

রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যাকাণ্ডের ইতিহাস নিয়ে লেখা "Bury my Heart at the Wounded Knee" বইটার কথাই ধরুন না। আমেরিকার মেইনস্ট্রিম ইতিহাসে তো এই ম্যাসাকারের ইন্টারপ্রিটেশন ছিল অন্য।

হিমু এর ছবি

আসলে একশো বছর পিছিয়ে গেলেই সংশয়ী হবার সুযোগ, সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কারণ তথ্যের অপ্রতুলতা, কখনো কখনো অসঙ্গতি। বিজয়ীর হাতে নিশ্চিহ্ন হতে হতেও কোথাও না কোথাও ছাইয়ের নিচে জ্বলতে থাকা তপ্ত তথ্য মূহুর্তে "মূলধারার" জতুগৃহে আগুন ধরিয়ে দিতে পারে।

সাম্প্রতিক ইতিহাস নিয়ে আমার বক্তব্য ঘুরপাক খাচ্ছে। যাকে আরোপিত ইতিহাস দিয়ে কণ্ঠরোধের চেষ্টা চলছে। মিমের দখলদারি শিরোনামে আমি দু'টি পোস্ট দিয়েছিলাম, পরাজিত শক্তি কিভাবে বিজয়ীকে একটু একটু করে ঠগী ডুমুরের মতো ঘিরে ফেলে শ্বাসরোধ করে নিজে বেড়ে উঠতে ইচ্ছুক, তা নিয়ে।

আজ প্রথম আলোতে রশীদ হায়দারের একটা লেখা পড়ে আমার দুঃখবোধ আবারও বল ফিরে পেয়েছে। বাংলাদেশে অসংখ্য জায়গায় শহীদের নামে নামকৃত রাস্তাকে পুনর্নামকৃত করা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ধর্মীয় কোন প্রতীককে বেছে নেয়া হয়েছে শহীদের নামটি ঢাকার জন্য, যাতে করে কেউ আপত্তি তুললে ধর্মাতুর হুঙ্কার তুলে সে আপত্তির মোকাবেলা করা যায়। খোদ ক্যান্টনমেন্টে শহীদ বদিউজ্জামান সড়কের নাম পরিবর্তিত হয়েছে, দারুসসালাম শব্দটির আড়ালে ঢেকে গেছে শহীদ এরশাদউল্লাহর নাম। নামের সাথে মুছে যাচ্ছে "মূলধারা"র ইতিহাস, একটি অদৃশ্য কালি এসে জায়গা করে দিচ্ছে আরোপিত ইতিহাসের।

আমার পোস্টে কিছু শব্দ অনুচ্চারিত ছিলো, কিছু প্রকাশ অভাবিত ছিলো, মন্তব্যের ধারায় আশা করি আমার বক্তব্য স্পষ্টতর হবে। পোস্টের সাথে আমার মন্তব্যগুলি মনে মনে যোগ করে নিলে পাঠক ধন্যবাদার্হ হবেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সিরাত এর ছবি

হুম!

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।