টেস্ট মানে তো পরীক্ষাই। বাংলাদেশ শুধু ফেল করে।
অফিসে বসে আছি। কামলার অবস্থা সুবিধার না, নানাদিক থেকে চাপে আছি। ভিজে চুপসে অফিসে এসেছি, জিন্স প্যান্ট ভিজলে কেমন লাগে বুঝতেই পারছেন। তার মধ্যে লেগে আছে খিদা। সিঙ্গারা আনতে পাঠিয়েছি এক ছোকরাকে। পেছনের কিউবিকল থেকে এক সহকর্মী হেঁকে বললেন, "খেলছে নাকি এখনো? নাকি আবার লাঞ্চ করতে চলে গেলো অল আউট হয়ে?"
কাজ করছিলাম টানা, ভাবলাম একটু রিলিফ দরকার। ঢুকলাম ক্রিকইনফো ডট কমে। লাইভ স্কোরকার্ড হাঁটকে দম বন্ধ করে বসে আছি।
স্কোর দেখে আমার তনুমন চাঙা হয়ে উঠলো। আশরাফুল হাফ সেঞ্চুরি করেছে, মুশফিকুর রহিমও ধারেকাছেই। হেঁকে বললাম সবাইকে, "খালি বাজে কথা বলেন কেন? আশরাফুল প্যাঁদাচ্ছে সমানে। ফিফটি করে ফেলেছে!"
সহকর্মী এবার কিছু বলেন না, সামনের কিউবিকল থেকে আরেক ইউনিটের ম্যানেজার বলে ওঠেন, "বলো কী? আরে সাব্বাশ।"
কাজে ঢুকে পড়ি আবার। সিঙ্গারা খাই গপাগপ। এক্সেল ফাইল তুফানের গতিতে বাড়তে থাকে সাইজে।
লাঞ্চের আগে বেয়ারা আসে চা নিয়ে। আমি ভুরু কুঁচকাই, চা খাবো ভাবছিলাম মনে মনে, ব্যাটা কেমনে পারিলো জানিতে? চায়ের কাপটা রেখে সে মৃদুস্বরে বলে, স্যার রান কতো এখন?
আমি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে আবার ক্রিকইনফো খুলি। "এতক্ষণ কী আর খেলা চলবে? মনে হয় অলআউট হয়ে গেছে ...।" মনে মনে নিজেকেই কষে গালি দেই। অলআউট এতো সোজা?
এবার স্কোর দেখে আনন্দে হুলুলুলু করে উঠি একেবারে। টিকে আছে দু'জনেই। প্যাঁদাচ্ছেও পালা করে। কী খেয়েছে আজকে আশরাফুল? কী খেয়েছে রহিম? কী খায়নি মুরালিথরন?
কাজ করি। লাঞ্চ করি। আবার ফিরে আসি কাজে। ফোন আসে সমানে। একে ধমকাই, ওর কাছে মিনমিন করি। ঘন্টাখানেক পর আবার খুলি ক্রিকইনফো। আশরাফুল সেঞ্চুরি করে ফেলেছে, মুশফিকুর রহিম আটাত্তর! হট্টগোল করি, ম্যানেজারকে গিয়ে সুসংবাদটা জানাই। সে বলে, আরে বাসি খবর দিতে আসো কেন! বেয়ারাকে ডেকে চোখ পাকাই, আশরাফুল সেঞ্চুরি করেছে, সেলিব্রেট করতে হবে। চা খাবো। সে নাচতে নাচতে চলে যায়, অন্যদিনের মতো মুখ না ফুলিয়ে। ফোন আসে, যে ফোন করে তাকেই শুনিয়ে দেই খবরটা।
আশরাফুল, রহিম ... আপনারা হয়তো জানেন না আমাদের উৎকণ্ঠার কথা। আপনারা যখন ব্যাট হাতে নামেন, আমরা সব কাজের ফাঁকেই আপনাদের দিকে চোখ রাখি। আপনারা যখন চার মারেন, ছয় মারেন, সমস্ত বাংলাদেশে গাছ থেকে পাখি উড়ে যায় মানুষের হর্ষধ্বনিতে। আপনার সেঞ্চুরি করেন, ঘর্মাক্ত কপাল মোছেন, আমরা ঠা ঠা করে হাসি, বলি, বাঘের বাচ্চা। আপনারা যখন সবাই মিলে তেষট্টিটা রানও করতে পারেন না, আমরা দুঃখে মাথা নিচু করে ফেলি, একে ওকে বিনা কারণে ধমকাই বিনা কারণে, তারপর বলি, আচ্ছা আগামী ম্যাচে ফাটাবে, ব্যাপার না।
আশরাফুল, আপনাদের ব্যাট বাংলাদেশের পনেরো কোটি মানুষ ধরে থাকে।
মন্তব্য
হিমু ভাই আমারো আপনার মত অবস্থা। বাংলাদেশ খুব খারাপ খেলছে। মন খারাপ হয়ে গেছে ওদের খেলা দেখে। ৬৩ রানে অল আউট কি লজ্জা কি লজ্জা
__________________________________
ত্রসরেণু অরণ্যে
_____________________________
টুইটার
দুদিনে আগের বাসী খবর দিচ্ছিস কেন ?
শ্রীলংকার সাথে খেলতে গেলে বাংলাদেশের যে কি হয়!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
মন্দিরা অ্যাবসেন্ট কেনো?
কাজ সেরে রাতে ফিরলাম। ভাবলাম গোসল, খাওয়া করে খেলা ছারবো। টু লেট!
-------------------
প্রবাসী,ছাত্র,দুস্থ,দেশপাগল
-------------------
হিমু ভাই,
আপনার লেখা বিভিন্ন জায়গায় পড়ি...আপনি সাধারণত বড়মনিদের জন্য লেখেন...পড়লে প্রচন্ড হাসি আসে...
কিন্তু আজকের লেখাটি পড়ে কিছুক্ষন চুপ মেরে ছিলাম...খুব ভালো লেগেছে...খুব ভালো...খুব...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
তখন আর এখন!
নতুন মন্তব্য করুন