০১.
এ বছরটা হু হু করে কেটে গেলো, চুলের ভেতর দিয়ে দমকা বাতাসের মতো। অর্ধেকটা কেটে গেলো যাত্রার ওপর, কাজের সূত্রে কমসে কম চল্লিশ হাজার কিলোমিটার ভ্রমণ করেছি জুন মাস পর্যন্ত। বাংলাদেশের অনেক জায়গা দেখার বাকি রয়ে গিয়েছিলো, কাজের ঠ্যালায় দেখা হয়ে গেছে অনেকখানি। হেমন্ত, শীত, বসন্ত, গ্রীষ্ম, এই চার ঋতুতে ঘুরে ঘুরে দেখলাম বাংলাদেশকে। খুব, খুব ভালো লেগেছে এই সময়টুকু, যাত্রাপথের ক্লান্তি কেটে গেছে দেশদেখার মুগ্ধতায়। হয়তো জানা হতো না কখনো, ভোলার চওড়া সুন্দর হাইওয়ের দু'পাশটা এমন অরণ্যশাসিত, হয়তো কখনো দেখতাম না, কীর্তনখোলা আর সন্ধ্যা নদী কী অপূর্ব দুরন্ত, গভীর রাতে যশোর যাবার পথে রাস্তার দু'পাশে কয়েকশো বছরের পুরনো গাছগুলিকে কেমন ভুতুড়ে লাগে, কিংবা কুষ্টিয়ার প্রত্যন্ত গ্রামের ভেতরে মাইলের পর মাইল জুড়ে শুধু সরিষার ক্ষেত, মেঘলা দিনে নলকা-বনপাড়া হাইওয়েতে কোন এক আদিবাসী যুবক একাই তাড়িয়ে নিয়ে চলছে শ'য়ে শ'য়ে শূকর, কিংবা কিশোরগঞ্জে পথ হারিয়ে মাইলের পর মাইল জনশূন্য পথে দু'পাশে শুধু ক্ষেত আর বৃক্ষ পেছনে ফেলে ভাবা, এত মানুষ এই দেশে থাকে কোথায়? ঢাকার বিষাক্ত বাতাস থেকে দূরে বাংলাদেশ এতো সুন্দর বলেই হয়তো ঈদের ছুটিতে মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বেরিয়ে পড়ে শহর ছেড়ে।
বছরের বাকি অর্ধেকটা কেটেছে এই খুঁটিয়ে দেখা দেশত্যাগের প্রস্তুতি আর প্রবাসে। এক কথায় বলা যায়, দৌড়ের ওপর থাকলাম ২০০৭ এ।
এ বছরে পেলাম অল্পস্বল্প, হারালাম অনেক কিছুই (দশ কেজি ওজন সহ, কেউ বলছেন এটা আশীর্বাদ, কেউ বলছেন কসকি?)। ২০০৩ যেমন আমার জন্যে ছিলো দারুণ এক প্রাপ্তির বছর, একে একে ভরে উঠছিলো আমার পলকা সিন্দুক, ২০০৪ তেমনি আবার হারানোর বছর, সেই একই সিন্দুকে এসে একের পর এক ভর করছে শূন্যতা, অপ্রাপ্তি, ক্ষতি, বিয়োগ। আসলেই হাতে কী থাকে এক একটা বছর শেষে? যোগবিয়োগ করে আমার রুক্ষ হাতে একটা পেনসিলই রয়ে যায় শুধু।
০২.
বড়দিন উপলক্ষে বেশ বড়সড় ছুটি পেয়েছি, কিন্তু অবসন্ন লাগছে খুব। পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছি, নয়তো সিনেমা দেখছি, কাজের কাজ এগোচ্ছে না। অনেক খেটেখুটে সিস্টেমটেখনিকের একটা সিমুলেশন দাঁড় করিয়েছি এক্সেলে, এ নিয়ে একটা মৃদু সন্তোষ কাজ করছে যদিও, কিন্তু জমে থাকা পড়ার স্তুপ দেখে ভয়ই লাগছে।
ভাইনাখটেন [বড়দিন] উপলক্ষে কাসেলবাসী দোকান উজাড় করে কেনাকাটা করেছে, বাজার থেকে হাওয়া হয়ে গেছে অনেক কিছু। উদাহরণ, ডিম। শুধু তা-ই না, তার আগেই জিনিসপত্রের দাম লাফিয়ে বেড়ে গেছে অনেক জায়গায়। চালের দাম প্রায় পঞ্চাশ শতাংশ বেড়েছে রেভে-তে, আলদিতে ডিমের দাম বেড়েছে পঁচিশ শতাংশ, ইত্যাদি ইত্যাদি। দাম বাড়ানোর ব্যাপারে এখানকার লোকজন সম্ভবত বাংলাদেশ থেকে কনসালট্যান্ট ধরে এনেছে, কোন রকম কারণ ছাড়াই হঠাৎ একদিন সকালে আপনাকে দেড়গুণ বেশি দামে কেনাকাটা করতে হবে। সাপ্লাই-ডিমান্ডের টানাহ্যাঁচড়ার কারণে নয়, এই বর্ধিতমূল্যই পোক্ত হয়ে যাবে আগামী বছরের জন্য।
কাল সিলভেস্টার, বছর শেষের দিন, গত দু'দিন ধরেই দেখছি তুর্কি ছোকরার দল সমানে এলোপাথাড়ি বাজিপটকা ফোটাচ্ছে। বছর শেষের দিন কাসেলের আয়োজন কেমন সে সম্পর্কে ধারণা নেই, ঘুরে ফিরে দেখবো। তাপমাত্রা হিমাঙ্কের নিচে নেমে এসেছে বেশ কিছুদিন ধরেই, তা নিয়ে আমার আপত্তিও নেই, কিন্তু মেঘলা আকাশটা দেখলে ধরে একটা থাপ্পড় মারতে ইচ্ছা করে।
২০০৭ এর একটা গল্পই ২০০৮ এ গিয়ে বিশদ লেখার ইচ্ছে আছে, তাই আর লিখলাম না এখন।
মন্তব্য
হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় হিমু শিরোনামে একটা শীতকালীন সিরিজের জন্যে খুব দেরি হয়ে যায়নি বোধহয়!
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
জার্মানীতে এবারের মুদ্রাস্ফীতির হার ২.২, স্মরনকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। বছরের প্রথম থেকে ভ্যাটের বৃদ্ধি (১৬% থেকে ১৯%) কিছুটা দায়ী এর জন্যে।
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?
ভ্যাটের সাথে ইনকাম ট্যাক্সও বাড়ছে
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
২০০৮ এর আগাম শুভেচ্ছা তোকে।
কাসেলের দিনগুলি শুভ হোক।
ভাল থাকিস।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
tax দিচ্ছি ৪৩%। ভ্যাট ১৬ থেকে ১৯%, জিনিসপত্রের দাম তরতরিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। বউ নিয়ে আসতে এখন জার্মান ভাষার ফেকড়া। তাই খাওয়া-দাওয়া বাদ, বিয়ে করাই বাদ। দেখেই সুখ।
১৮ বছরের উর্দ্ধে...
ভাইজান
আমি কি কিছু miss করলাম?
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
১৮ বছরের নিচে কাউকে সাধারণত আমার পোস্ট পড়তে উৎসাহিত করা হয় না। যৌনতা বা সংঘাতময় শব্দের ব্যবহার এর একটি কারণ, যা লেখায় না থাকলেও পরে মন্তব্যে অনেক সময় যুক্ত হয়ে যায়। দ্বিতীয় কারণটি নিয়ে আমাকে ভাবতে হবে।
তবে আপনি যদি মনে করেন যে আপনার পোষাচ্ছে না, তাহলে আমি অদূর ভবিষ্যতে মারদাঙ্গা একটি পোস্ট দেয়ার অপচেষ্টা করতে পারি। তবে সেটা আপনার নামে উৎসর্গীকৃত হয়ে যেতে পারে, অতএব হুঁশিয়ার।
হাঁটুপানির জলদস্যু
খাইছে !
আমি কিন্তু ডরাইছি...
সাচমুচ....
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
পায়ের তলায় সরষে?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
... তলায় সরষে, পায়ের গোড়ার দিকেই আর কি ... ...
হাঁটুপানির জলদস্যু
অর্থনীতির কি দুরবস্থা ! হিমু ভাই, শান্তিতে থাকতে চাইলে বাংলাদেশে এসে পড়েন।
------------------------------------------------
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
মিনিকেট চালের কেজি ৪৫ টাকা! শান্তি কই?
বুঝতে হবে অয়ন। সবজান্তা কিন্তু বণিক, মানে বেওসাদারদের পক্ষের লোক!
হাঁটুপানির জলদস্যু
নতুন মন্তব্য করুন