ঈস্টার দ্বীপ ০৩

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ০৩/০১/২০০৮ - ২:৩৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ঈস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলি মোয়াই নামে পরিচিত, আর যে বিশাল মঞ্চের ওপর মূর্তিগুলি দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বলা হয় আহু। ঈস্টারে প্রায় তিনশো আহু আছে, যার বেশির ভাগই ছোটখাটো আর মূর্তিশূন্য, ১১৩টা আহুতে মূর্তি আছে, যার মধ্যে ২৫টা রীতিমতো বিশাল। ঈস্টার দ্বীপের প্রতিটি অঞ্চলেই এক থেকে পাঁচটা করে বিশাল আহু রয়েছে। প্রায় সবগুলি সমূর্তি আহুই সৈকতসংলগ্ন, প্রতিটি মূর্তির মুখ দ্বীপের দি...[justify]ঈস্টার দ্বীপের মূর্তিগুলি মোয়াই নামে পরিচিত, আর যে বিশাল মঞ্চের ওপর মূর্তিগুলি দাঁড়িয়ে আছে, তাকে বলা হয় আহু। ঈস্টারে প্রায় তিনশো আহু আছে, যার বেশির ভাগই ছোটখাটো আর মূর্তিশূন্য, ১১৩টা আহুতে মূর্তি আছে, যার মধ্যে ২৫টা রীতিমতো বিশাল। ঈস্টার দ্বীপের প্রতিটি অঞ্চলেই এক থেকে পাঁচটা করে বিশাল আহু রয়েছে। প্রায় সবগুলি সমূর্তি আহুই সৈকতসংলগ্ন, প্রতিটি মূর্তির মুখ দ্বীপের দিকে ফেরানো। কোন মূর্তিই সমুদ্রমুখী নয়প্রশ্ন ১

ঈস্টার জুড়ে নির্মিত আহু

আহু চতুষ্কোণাকৃতির মঞ্চ, যার চারপাশটা ব্যাসল্ট পাথরের চাঁই দিয়ে ঘেরা, আর মাঝে ভর্তি নুড়ি। কিছু কিছু আহুর (যেমন আহু ভিনাপু) দেয়াল দেখলে ইনকা স্থাপত্যের কথা মনে পড়তে পারে, যা দেখে থর হেয়ারডাল দক্ষিণ আমেরিকার সাথে ঈস্টারের যোগসূত্র খুঁজেছিলেন। তবে ঈস্টারের আহুর দেয়ালগুলির আস্তর কেবল পাথরের, ভরাট পাথরের টুকরো দিয়ে তৈরি নয়, যেমনটা ইনকা দেয়ালগুলি। ঈস্টারের এই এক একটা দেয়ালের আস্তরের ওজন ১০ টন (ইনকা দেয়ালে এক একটা টুকরোর ওজন আরও বেশি, যেমন সাকসাহুয়ামান দুর্গে ৩৬১ টন পর্যন্ত)। এক একটা আহু গড়ে ১৩ ফুট উচ্চতার, কোন কোন আহু ৫০০ ফুট চওড়া। আহুগুলির ওজন ৩০০ টন থেকে ৯,০০০ টন পর্যন্ত।

আহুর পেছনে রয়েছে আরও এক বিচিত্র জিনিস, দেহভস্মাগার, যেখানে হাজার হাজার মানুষের দেহের ভস্ম ও অন্যান্য অংশ সংরক্ষিত রয়েছে। মৃতদেহ সৎকারের ক্ষেত্রে গোটা পলিনেশিয়ায় ঈস্টারই একমাত্র ব্যতিক্রম, অন্যান্য সব দ্বীপে মৃতদেহ সাধারণত সমাধিস্থ করা হয়।

আহু আর মোয়াই, দুই-ই এখন ধূসর, তবে অতীতে আহুগুলি সাদা, হলুদ আর লাল রং দিয়ে সজ্জিত ছিলো। মোয়াইয়ের পাথরগুলি ছিলো হলুদ।

ধারণা করা হয়, মোয়াইগুলি পূর্বপুরুষদের প্রতিনিধিত্ব করে। প্রত্নতাত্ত্বিক জো অ্যান ভ্যান টিলবার্গ ৮৮৭টি মোয়াই লিপিবদ্ধ করেছেন, যার অর্ধেকই আছে রানো রারাকুর 'কারখানায়'। এক একটা আহুতে ১ থেকে ১৫টা করে মোয়াই স্থাপন করা হয়েছে। আহুর ওপর স্থাপিত সব মোয়াই-ই রানো রারাকু জ্বালামুখের খনির পাথর, যাকে বলা হয় টফ, দিয়ে তৈরি, তবে দ্বীপের অন্যান্য জায়গায় মোট ৫৩টি মোয়াই পাওয়া গেছে, যেগুলো টফের পরিবর্তে অন্য পাথর (ব্যাসল্ট, লাল স্কোরিয়া, সাদা স্কোরিয়া আর ট্র্যাকাইট) দিয়ে তৈরি। সাধারণ একটা মোয়াইয়ের উচ্চতা গড়ে ৪ মিটার, আর ওজন ১০ টন। স্থাপিত মোয়াইগুলির মধ্যে সবচেয়ে উঁচুটির নাম পারো, উচ্চতা ১০ মিটার, আর ওজন ৭৫ টন। পারোর চেয়ে সামান্য বেঁটে একটি মোয়াই আছে আহু টোঙ্গারিকিতে, যার ওজন ৮৭ টন। আহু হাঙ্গা তে তেঙ্গা-তে পারোর চেয়ে ইঞ্চি কয়েক উঁচু একটি মোয়াইকে বয়ে নিয়ে যেতে পারলেও সেটিকে স্থাপনের সময় দুর্ঘটনা ঘটিয়েছিলো ঈস্টারবাসীরা, যার ফলে সেটি টাল খেয়ে পড়ে গিয়েছিলো। রানো রারাকু-তে আরো বিশাল সব অসমাপ্ত মোয়াই পড়ে আছে, যার মধ্যে সবচেয়ে উঁচুটি ২৩ মিটার উঁচু আর ২৭০ টন ওজনের।

এরিখ ফন দানিকেনের মতো ভিনগ্রহীপন্থীদের কাছে ঈস্টারের এই বিশাল মূর্তিগুলিকে অপার্থিব মনে হয়েছিলো, যে ধারণা সমর্থনের জন্য তাঁরা নানা আজগুবি তত্ত্ব খাড়া করেছিলেন। তবে পলিনেশিয়াতে এমন নির্মাণের আরো প্রাচীন নিদর্শন রয়েছে। অনেকটা আহুর মতোই মঞ্চ ছড়িয়ে আছে পলিনেশিয়ায়, যাদের বলা হয় মারায়ে। পিটকেয়ার্ন দ্বীপে, যেখান থেকে ঈস্টারের আদি বসতিদাররা যাত্রা শুরু করেছিলো বলে অনুমান করা হয়, এমন তিনটি মারায়ে রয়েছে। তবে মারায়েগুলি ব্যবহার করা হতো মন্দিরের মঞ্চ হিসেবে। মার্কেসাস আর অস্ট্রাল দ্বীপপুঞ্জে বড়সড় পাথরের মূর্তি রয়েছে, যেগুলি লাল স্কোরিয়া আর টফ দিয়ে তৈরি। তাহিতিসহ অন্যান্য দ্বীপে রয়েছে কাঠের মূর্তি। ঈস্টারের মূর্তিনির্মাণ সংস্কৃতি ভুঁইফোঁড় কিছু নয়, পলিনেশিয়ার সংস্কৃতির ধারাবাহিকতায় গড়ে ওঠা।

মূর্তিগুলি ঠিক প্রথম কবে গড়া হলো, তা জানা একটু মুশকিল, কারণ পাথরের বয়স তেজস্ক্রিয়-কার্বন দিয়ে মাপা যায় না। এ কারণে পরোক্ষ কালনির্ণয় পদ্ধতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে, যেমন আহুতে পাওয়া অঙ্গারের তেজস্ক্রিয়-কার্বন পরীক্ষা, অবসিডিয়ান-হাইড্রেশন পদ্ধতিতে কাটা অবসিডিয়ানের কালনির্ণয়, বাতিল মূর্তির নির্মাণশৈলী (বাতিলগুলিকে প্রাচীনতর ধরা হয়) আর আহুর বিভিন্ন নির্মাণ পর্যায়। তবে একটি পর্যবেক্ষণ স্পষ্ট, সেটি হচ্ছে সময়ের সাথে মোয়াইগুলির উচ্চতা বেড়েছে (তবে ওজন সবসময় বাড়েনি), আর বিশালতম আহু কয়েক দফায় নির্মাণ-পুনর্নির্মাণের ভেতর দিয়ে গেছে, সময়ের সাথে আরও বড় হয়েছে। ধরা হয়, ১০০০-১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের মধ্যে আহুগুলি নির্মাণ করা হয়েছে। এ তারিখকে সমর্থন যুগিয়েছে জে. ওয়ারেন বেক এবং তাঁর সহকর্মীদের চালানো একটি পরীক্ষায়, যেটিতে মোয়াইগুলির চোখে ব্যবহৃত প্রবালের আর আহু সাজানোর জন্য ব্যবহৃত শৈবালের কালনির্ণয় করা হয়েছে তেজস্ক্রিয়-কার্বন পদ্ধতিতে। এ পদ্ধতিতে সরাসরি নির্ণয় করা হয়েছে, আনাকেনা সৈকতে আহু নাউ নাউয়ের প্রথম নির্মাণ শুরু হয়েছে ১১০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকে, আর শেষ দফা শেষ হয়েছে ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দের কাছাকাছি সময়ে। ধারণা করা হয়, শুরুর দিকের আহুগুলিতে কোনো মোয়াই ছিলো না, পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপে দেখা মারায়ে-র মতো ছিলো সেগুলি। যেসব মোয়াইকে শুরুর দিকের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে, সেগুলি ছিলো ছোটখাটো, গোলগাল আর আরও বেশি মনুষ্যসদৃশ, টফ ছাড়াও বিভিন্ন আগ্নেয় পাথর দিয়ে সেগুলি তৈরি, আর পরবর্তীতে আহুর পুনর্নির্মাণে সেগুলিকে ব্যবহার করা হয়েছে মশলা হিসেবে।

শেষমেশ ঈস্টারবাসীরা রানো রারাকুর টফ পাথরকেই খোদাইয়ের কাজে বেছে নিয়েছিলো, কারণ এই পাথর খোদাইয়ের জন্যে সবচেয়ে ভালো। প্রচণ্ড শক্ত ব্যাসল্টের চেয়ে অনেক সহজে খোদাই করা যায় টফ, আবার লাল স্কোরিয়ার চেয়ে তা অনেক বেশি মজবুত। সময়ের সাথে রানো রারাকুর কারখানার মোয়াইগুলি আরও বড় হয়েছে, আরও চৌকো হয়েছে, আরো বেশি শৈলী যোগ হয়েছে সেগুলোতে, আর প্রায় গণহারে নির্মিত হয়েছেঅনেকটা ওবেলিস্কের মেনহির তৈরির মতো। তবে প্রতিটি মূর্তিই দেখতে অন্যগুলির চেয়ে একটু ভিন্ন।

সময়ের সাথে মূর্তির আকারবৃদ্ধি থেকে অনুমান করা যায়, এক গোত্রের সাথে আরেক গোত্রের মোয়াই নিয়ে প্রতিযোগিতা ছিলো। পরবর্তীকালের একটি সংযোজন ছিলো পুকাও, লাল পাথরের তৈরি একটি খণ্ড, যা মূর্তিগুলির মাথায় স্থাপন করা হতো। পারো-র মাথার পুকাওটির ওজন বারো টন।

প্রশ্ন জাগতে পারে, কী করে ঈস্টারবাসীরা ১২ টন ওজনের একটা জিনিস কোন ক্রেন বা যন্ত্রপাতি ছাড়া ১০ মিটার উঁচু একটা মূর্তির মাথায় বসালো?

এ প্রশ্নের উত্তরে ভিনগ্রহীদের মারদাঙ্গা প্রযুক্তি এনে হাজির করেছিলেন ফন দানিকেন, তবে উত্তরটা আরো পানসে, মোয়াই আর পুকাও, দুটোই একসাথে উত্তোলিত।

কেন এই গোদা গোদা মূর্তিগুলি বানিয়ে তার মাথায় লাল পাথরের এই পুকাও বসানো হলো? ধারণা করা হয়, এই পুকাওগুলি সর্দারদের মাথায় লাল পালকের উষ্ণীষের প্রতিনিধিত্ব করে। পলিনেশিয়া জুড়েই লাল রঙের বড় কদর, হিস্পানিরা যখন প্রথম বিভিন্ন ক্যারিবীয় দ্বীপে পা রাখে, তখন দ্বীপবাসী তাদের জাহাজ, তলোয়ার, বন্দুক বা আয়না দেখে ততটা পাত্তা দেয়নি, যতটা দিয়েছিলো তাদের পরনে লাল কাপড় দেখে। পুকাওগুলি তৈরি হয়েছে লাল স্কোরিয়া পাথর দিয়ে; ঈস্টারে কেবল একটা জায়গাতেই তা পাওয়া যায়, পুনা পাউ নামের এক জ্বালামুখে। সেখানেও অনেক অসমাপ্ত পুকাও পড়ে আছে।

মোয়াইগুলির মাথায় পুকাও চাপানোর অন্যতম কারণ হতে পারে, ফুটাঙ্গি দেখানো। কোনো গোত্র হয়তো ৯ মিটার উঁচু মোয়াই খাড়া করেছে, তো অন্য কোনো গোত্র ১০ মিটার উঁচু একটা মোয়াই এনে তার মাথায় পুকাও চাপিয়ে বলেছে, দ্যাখ ব্যাটারা, পারলে এরচে ভালো কিছু কর!

কিন্তু সারা পলিনেশিয়াতেই তো কমবেশি প্ল্যাটফর্ম আর মূর্তি তৈরির চল ছিলো, কেবল ঈস্টার দ্বীপেই এরকম আখাম্বা ইশটাইলে মূর্তি বানানোর হুজুগ উঠেছিলো কেন? কোন দুঃখে তারা এমন খরুচে, কঠিন, জটিল কাজে হাত দিয়েছিলো?

জ্যারেড ডায়মণ্ড এ প্রশ্নের উত্তরে চারটি সম্ভাব্য যুগপৎ কারণ নির্দেশ করেছেন।

  • খোদাইয়ের জন্য টফ পাথরের উপযোগিতা। অন্যান্য পাথরের চেয়ে এ পাথর খোদাইয়ের কাজে এতই সরেস, কোনো খোদারু হাতের নাগালে এ পাথর পেলেই খোদাইয়ের কাজে লেগে যাবে।

  • পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপগুলির বাসিন্দারা কয়েকদিন সাগরে কাটালেই অন্য কোনো দ্বীপে গিয়ে হাজির হতে পারে, তাই তারা তাদের সময় আর শক্তি ব্যয় করেছে সেসব প্রতিবেশী দ্বীপে বাণিজ্য, হানাদারি, অভিযান, বসতিস্থাপন কিংবা দ্বীপান্তরে। পক্ষান্তরে, ঈস্টারের বাসিন্দারা এসব করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলো, কারণ বাইরের দুনিয়া থেকে ঈস্টার একেবারেই বিচ্ছিন্ন ছিলো। পলিনেশিয়ার কোন দ্বীপের সর্দার যখন ফুটাঙ্গি দেখানোর জন্য তার পড়শীর ওপর হামলা করে, সেখানে ঈস্টার দ্বীপের সর্দার তেমন কিছু করতে না পেরে আরো বড় একটা মূর্তি খাড়া করে।

  • পলিনেশিয়ার অন্যান্য দ্বীপ ঈস্টারের মতো সমতল বা মৃদুবন্ধুর নয়, রীতিমতো গভীর খাদ আর খাড়া পাহাড় দিয়ে ভাগ করা। যে কারণে বিভিন্ন দ্বীপে প্রায়শই সামাজিক ঐক্য গড়ে ওঠেনি, একেক উপত্যকা একেক গোত্রের অধীনে বিচ্ছিন্ন হয়ে থেকেছে, সম্পদের বণ্টনও তাই ছিলো অনেকখানি বিষম। তুলনামূলকভাবে ঈস্টারে একটি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছিলো এর সমতল ভূপ্রকৃতির সুবাদে, যার ফলে সব অঞ্চলের গোত্রগুলিই রানো রারাকুর টসটসে টফ পাথরের নাগাল পেয়েছে মূর্তি খোদাইয়ের জন্য। সম্পদের ওপর অবাধ (?) অধিকারের কারণেই হয়তো মূর্তি নির্মাণ ব্যাপারটি প্রতিযোগিতায় রূপ নিতে পেরেছেমন্তব্য ১। রাজনৈতিক কোন্দল থাকলে কেবল টোঙ্গারিকি অঞ্চল, যেখানে রানো রারাকু অবস্থিত, হয়তো মূর্তি বানানোর ওপর একচেটিয়া আধিপত্য বিস্তার করতো, কিংবা অন্য অঞ্চল হয়তো "পাড়ায় আহিস খালি" গোছের হুমকি দিয়ে তাদের ওপর দিয়ে মূর্তি পরিবহনে বাধা দিতো।

  • শেষ কারণটা হচ্ছে, মূর্তি গড়ে পোষাতো, ব্যাপারটা আদপেই সম্ভব ছিলো, কারণ মূর্তি বানানোর কাজে নিয়োজিত লোকদের উঁচু ভূমির পাথুরে বাগানের ফসল দিয়ে খাওয়ানো যেতো।

কিন্তু বড় প্রশ্ন হচ্ছে, ঈস্টারের আদিবাসীরা কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়া কী করে মূর্তিগুলি খাড়া করলো?

ছবিসূত্র।

প্রশ্ন ১ কেন?

মন্তব্য ১ পূজার সময় পশ্চিমবাংলার টিভি চ্যানেলে উপভোগ করার মতো একটা জিনিস হচ্ছে দশভূজার হরেক রকমের মূর্তি। পাড়ায় পাড়ায় পূজার প্যাণ্ডেল, কোন পাড়ায় কত বেশি জৌলুসময় মূর্তি গড়ে তোলা যায় তার একটা বাহারি প্রতিযোগিতা। সুপুরির দুর্গা, ঝিনুকের দুর্গা, পুঁতির দুর্গা, ইত্যাদি হরেক রকম দুর্গার রীতিমতো প্রদর্শনী হয় তখন। পশ্চিমবাংলার মূর্তির কারিগরেরা যেখানে প্রতিযোগিতায় একজন আরেকজনকে টেক্কা দেবার জন্যে (আসলেই এমন প্রতিযোগিতা হয় নিশ্চয়ই) আশ্রয় নিয়েছেন শৈলীবোধের, দর্শনেন্দ্রিয়কে মোহিত করার জন্যে তারা ব্যবহার করেন বিভিন্ন উপকরণ, কাহিনি, ভঙ্গি। কিন্তু ঈস্টারদ্বীপের মূর্তির কারিগরদের ওপর হয়তো সর্দারদের নন্দনবোধই চাপিয়ে দেয়া হয়েছিলো। "পাশের ওদেরটার চেয়ে বড় বানাবি" গোছের হুকুমই হয়তো চাপিয়ে দেয়া হয়ে থাকতে পারে বেচারাদের ওপর। ফলে, প্রতিযোগিতাটি মানদণ্ড হিসেবে বেছে নিয়েছে আকারকে।


মন্তব্য

তানভীর এর ছবি

চলুক।

========
"পুনরায় রৌদ্রহীন রৌদ্রে আমি, পথহীন পথে"

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

মজা লেগেছে। আহুর ছবিতে দেখা যাচ্ছে দ্বীপের পরিধি ঘিরে সব আহু গুলো ছড়িয়ে আছে। অথচ তুমি বললে যে দ্বীপের কেন্দ্রে আছে সেগুলো। কন্ট্রাডিকটরী লাগল।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

হিমু এর ছবি

ভালো করে খেয়াল করে দ্যাখো, আহু দ্বীপের পরিধি আর কেন্দ্র, সব জায়গাতেই আছে। তবে আহুর ওপর চাপানো মোয়াই আছে কেবল সৈকতে। এছাড়া অনেক অসমাপ্ত অর্ধসমাপ্ত আর সমাপ্ত মোয়াই পথেঘাটে ছড়িয়ে আছে রানো রারাকুর আশেপাশে। পরের পর্বে আরো ম্যাপ দেবো।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

উরু প্রদর্শন করেই কাপড়টা আবার নামিয়ে দিলেন রেগে টং
এই সিরিজ শেষ হলে একবারে পড়বো!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

আলম এর ছবি

আমার একটি প্রশ্ন ছিল। যখন এই মুর্তিগুলো বানানো হয় তখন পাথর কাটার মত তো এত আধুনিক যন্ত্র ছিল না। তাহলে পাহাড় থেকে পাথরের চাই কেটে আবার এত মৃসন মুর্তি বানালো তারা কোন যন্ত্র দিয়ে? সেই যন্ত্রের একটা না একটা নমুনা তো ঈস্টারে থাকার কথা। কিন্তু এমন কোনো যন্ত্র তো পাওয়া গেল না। তাহলে পাথর তারা কাটল কি দিয়ে?

হিমু এর ছবি

পাথর কাটার জন্য আসলে আধুনিক যন্ত্র লাগে না। শুধু যে পাথর কাটবেন, তারচেয়ে শক্ত কোনো পাথর লাগে। Tuff কাটার জন্যে উপযোগী আরো আগ্নেয় শিলা ঈস্টার দ্বীপে ছিলো, সেগুলো দিয়ে তৈরি করা টুল কোয়্যারিগুলোতে পাওয়া গেছে। পাথরকে কায়দামতো knapping করলে প্রায় সব রকম বেসিক টুল তৈরি করা সম্ভব, এমনকি দাড়ি কামানোর রেজর পর্যন্ত।

কালো কাক এর ছবি

দারুণ তো ! এই সিরিজটা চোখেই পড়েনি আগে ! বিশাল মিস হয়ে যাচ্ছিল। থ্যাঙ্কস হাসি

ডাক্তারের দিনকাল এর ছবি

ইস্টার দ্বীপ নিয়ে আমার অনেক আগ্রহ ছিলো। আপনার এই পোস্টগুলো আমার সেই কৌতুহল মিটাচ্ছে। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া।
খুব ভালো থাকুন, আপনি।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।