সময়ের সাথে আমি একটু একটু করে বেড়েছি, কিন্তু আমার বাবা আমার হাত ছাড়েননি। তিনি আমাকে স্কুলে নিয়ে যান হাত ধরে, দোকানে নিয়ে যান হাত ধরে, মাঝে মাঝে নিজের অফিসে নিয়ে যান হাত ধরে, বাজারে নিয়ে যান হাত ধরে, চুল কাটানোর জন্য নাপিতের কাছে নিয়ে যান, আর আমি ফুঁসতে থাকি। আমি কি একটা ছাতা? আমি কি একটা ব্যাগ? কেন আমাকে ধরে থাকতে হবে?
আমি প্রাইমারি স্কুল থেকে হাই স্কুলে উঠি, আমার বাবা ভর্তির পর আমার হাত ধরে আমাকে ক্লাসে পৌঁছে দেন, নিচু স্বরে কী সব আলাপ করেন আমার ক্লাস টীচারের সাথে, আমি গম্ভীর মুখে বসে থাকি। আমাকে ক্ষেপাতে এসে বন্ধু হয়ে যায় আমার পাশে বসা ছেলেগুলি।
আমি আরো বাড়ি, আরো বড় হয়ে উঠি, আমার বাবার কাঁধ ছাড়িয়ে যেতে থাকি, কিন্তু তিনি আমার হাত আর ছাড়েন না। বাজারে যেতে ভালো লাগে না আমার, তিনি গম্ভীর মুখে আমাকে হাত ধরে নিয়ে যান বাজারে, আমার হাত ধরে রেখেই মাছ দরদাম করেন, আমি বাজারের ব্যাগ আরেক হাতে ধরে আমার কালচে মুখ লাল করে দাঁড়িয়ে থাকি। শুক্রবারে মসজিদে তিনি নামাজ পড়তে যাবেন, আমি বারান্দায় রোদে বসে পড়ছি "উভচর মানুষ", তিনি গম্ভীর মুখে একাই চলে যান। আমি ক্রিকেট খেলে ফিরছি ঘর্মাক্ত চেহারা নিয়ে, বাড়ি ফেরার কিছু আগেই পথে তাঁর সাথে দেখা হয়, অফিস থেকে ফিরছেন। কিছু না বলে নিঃশব্দে তিনি শুধু আমার হাতটা ধরে ফেলেন। এসএসসি পরীক্ষার সময় আমার সুতীব্র টাইফয়েড, পৃথিবী এলোমেলো লাগে আমার চোখের সামনে, আমার বাবা আমাকে কোলে করে পরীক্ষার হলে নিয়ে যান, কোলে করে নিয়ে আসেন, হাত ছাড়েন না।
আমার বাবা খুব বেশিদিন আমার হাত ধরে রাখতে পারেননি। নাকি আমিই বেশিদিন তাঁকে ধরে রাখতে পারলাম না? আমাদের সবার হাত ছাড়িয়েই তিনি খুব নিঃশব্দে মারা গেলেন। মৃত্যুর সময় তিনি কারো হাত ধরেননি, আমি ছিলাম না তখন তাঁর কাছে হাত ধরার জন্য, বা ধরতে দেবো বলে বাড়িয়ে দেবার জন্য।
আমি এরপর আরো বড় হয়েছি, আমি বাজার করি, আমি চুল ছাঁটাই, আমি কলেজে-বিশ্ববিদ্যালয়ে-অফিসে যাই, আমি পাহাড়ে চড়ি, সাগরে নামি, দূরদেশের অচেনা পথে হাঁটি গভীর রাতে, কেউ আমার হাত ধরে না। আমি বড় হয়ে গেছি অনেক।
আমাদের বাবাকে আমরা সহজে স্মরণ করি না। আমি স্বপ্নেও দেখি না তাঁকে। আমি কবরস্থান অপছন্দ করি, তাঁকে কবর দিয়ে আসার পর একদিনও যাইনি সেখানে। তাঁর মৃত্যুদিবসেও তেমন কোন হেরফের ঘটে না আমার প্রাত্যহিক আচরণে। শুধু মাঝে মাঝে রাতের বেলা বাথরুমে মুখ ধুতে গিয়ে আয়নায় নিজের মধ্যে তাঁকে দেখতে পাই, বিষণ্ন, গম্ভীর চোখে তিনি আমার ভেতর থেকে আমার দিকে তাকিয়ে থাকেন। আমি সেই চোখের দিকে তাকিয়ে মাঝে মাঝে লজ্জিত হয়ে পড়ি নিজের করা কোন অতীত অপকর্মের জন্য, চোখ নামিয়ে আবার বেসিনের মধ্যে ঘড়ির কাঁটার উল্টোদিকে ঘুরে হারিয়ে যাওয়া পানির স্রোতের দিকে তাকাই। খুব ছোট আর অসহায় লাগে তখন নিজেকে, মনে হয় আমার আর কোন ছায়া নেই রোদ থেকে বাঁচবার।
মন্তব্য
"মনে হয় আমার আর কোন ছায়া নেই রোদ থেকে বাঁচবার।"
এই যে এই একটা লাইন,সব কথা বলা হয়ে গেল।
_________________________
Little by Little
the Night Turns Around...
মন ছুয়ে গেল।
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
আমি কি এই জীবনে এমন করে লিখতে পারব?
color=#00CC33]
-------------------------------------------------
[/] যত বড়ো হোক ইন্দ্রধনু সে সুদূর আকাশে আঁকা,
আমি ভালোবাসি মোর ধরণীর প্রজাপতিটির পাখা॥
ভালো লাগল হিমু।
হিমু, এতদিন বহুত হাসাইছেন। আজকে এত কাঁদাইলেন ক্যান
..................................
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
............................
--তিথি
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
এইটা কী লিখলেন?
আমি কানতেছি।
আমি নিজের বাপরে একটা ফোনও করি না অনেকদিন।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
হিমু ভাই,
আপনি ভাল থাকুন।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
-----------------------------------
কিস্তিমাতের যুদ্ধ শেষে,সাদাকালো ঘুটিগুলো এক বাক্সেই ফেরত যাবে...
- তোর ও মন খারাপ?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হিমু ভাই,
আজ আপনার দ্বিতীয় ব্লগ পড়ছি... এর আগে কোন ব্লগ পড়ে চোখ ঝাপসা হয়ে উঠেছে...কখনো টপটপ করে পানি পড়েনি...আজ পড়লো...কোন ভাবেই আটকে রাখতে পারলাম না...
আরো অনেক কিছু বলতে চেয়েছিলাম...এখন বলতে পারবো না...মনিটরটা খুব ঝাপসা লাগছে...আপনার জন্য ভালোবাসা.....
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন
-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না
_____________________________
জিকোবাজি | ফটো গ্যালারি | ইমেইল
ভালো লাগল।
লিখুন।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
সিঘ.........
দৃশা
মনটাই মেরে দিলেন, হিমু ভাই। হারানো ব্যাপারটাই আনফেয়ার খুব। সিডিয়াস, মাই সিডিয়াস। মাই ডার্থ, মাই ডার্ক লর্ড, মাই লর্ড। মাই সিডিয়াস!
মনটা খারাপ হয়ে গেল।
কতদিন বাবাকে দেখি না!
__________
কি মাঝি? ডরাইলা?
__________________________________
ত্রসরেণু অরণ্যে
_____________________________
টুইটার
প্রিয় পোস্ট অ্যাড করতে গিয়ে মনে হল সামহোয়ারের মত এখানে প্রিয় পোস্ট সিলেক্ট করা যায় না। হিমুদা আপনার লিখা এত ভালো হয়। আসলেই ইস আমি যদি আপনার মত লিখতে পারতাম।
__________________________________
ত্রসরেণু অরণ্যে
_____________________________
টুইটার
এই পোষ্ট টা পড়তে খুব ইচ্ছা হচ্ছে। কিন্তু দেখতে পাচ্ছিনা।
দেড় বছরের মতো পার হয়ে গেছে। মাঝ রাতে এই পোস্টটা পড়ে আবার কাঁদলাম।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
কতোদিন বাবাকে দেখি না।
পড়লাম। 'অন্ধকারে সিগারেট' টাইপের আরেকটা লেখা।
আমি বাবা-মা'র অত ক্লোজ না। তাও বেশ দারুণ লাগলো।
পুরা মোচড় দেয়া একখান প্যারা! ভাই রে ভাই!
বাবার হাত ধরে হাঁটিনি কথনোই....আজন্মের সেই অপূর্ণ সাধ আরো বাড়িয়ে দিলো এই লেখা ! *তিথীডোর
১০ মিনিট ও হয় নি আব্বুর সাথে বিরাট চিল্লাচিল্লি করে আসছি, ফালতু ব্যাপার নিয়ে.........এখন মনে হচ্ছে না করলেও হতো।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদ্বপি গরীয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
হিমুদা, বাবাকে নিয়ে আপনার এই লেখাটা বিশাল। সবকিছু ছাপিয়ে যেন মাকে নিয়ে লেখার মত।
আমি নতুন করে আর কী বলব?
এটা নভেম্বর মাস - আমার শোকের মাস নভেম্বর।
আমার জীবনের সবথেকে বড় আশ্রয়টা, সবচেয়ে বড় ছায়াটা আমিও নভেম্বরেই হারিয়েছি।
ভাল লাগছে না কিছু।
লেখাটা পড়ার পর বলার মত কিছুই খুজে পাচ্ছি না। শুধু মনে হচ্ছে অনেকদিন বাবার গলাটা শোনা হয়নি।
আমার সবচেয়ে প্রিয় পোস্টগুলোর একটি!!
মনখারাপ হলেই বারবার পড়ি...
--------------------------------------------------
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
________________________________________
"আষাঢ় সজলঘন আঁধারে, ভাবে বসি দুরাশার ধেয়ানে--
আমি কেন তিথিডোরে বাঁধা রে, ফাগুনেরে মোর পাশে কে আনে"
গলায় কি জানি আটকে গেলো।
আব্বু মানুষটা সবসময়ই বুঝি একটু দূরে থাকার, একটু একাকী থাকার।
কেবল দেখিই চুপচাপ, তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর ক্ষমতা আমাদের দেয়া হয়নি কেনো কে জানে!
হিমু ভাই, অনিবার্য সত্য আরেকবার মনে করিয়ে দেয়াতেই হয়তো আপনার শক্তি লুকিয়ে।
সশ্রদ্ধ অভিবাদন আপনাকে।
মর্ম
এই লেখাটা কতোদিন চুপে চুপে পড়ে গেছি...কিছু বলে উঠতে পারিনি। বেশ কিছুদিন যাবৎ বাবার সাথে কোন যোগাযোগ নেই, উনি গ্রামে গিয়ে পড়ে আছেন মনের আনন্দে। তাসনীম ভাইয়ের লেখা পড়ে বাবাকে খুব মিস করতে শুরু করলাম, আর এই লেখাটা আবার পড়ে এখন রীতিমতো অস্থিরই লাগছে।
বাবারা আমাদের ছায়া দেন বনস্পতির মত, আমরা কিছুই টের পাই না…
আমার বাবার অভ্যাস ছিল রাতে আমার ছোট্ট পিঠে হাত বুলিয়ে বুলিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেয়া । আমি এখন বড় হয়ে গিয়েছি । আমার পিঠে এখনো তাঁর হাতের ছোঁয়াটুকু লেগে আছে । এখন আর কেউ আসে না রাতে ক্লান্ত পিঠে হাত রাখতে……বাবা চলে গেছেন পাঁচ বছর আগে ।
হিমু, আপনার লেখাটি নাড়া দিয়ে গেল ।
.......................................
তোমারই ইচ্ছা কর হে পূর্ণ ....
__________________________________________
জয় হোক মানবতার ।। জয় হোক জাগ্রত জনতার
বাবা বেঁচে আছেন, তবে পাশে নেই।
দূরপ্রবাসে এই মাঝরাত্তিরে আমি এখন কোথায় যাই?
________________________________
মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মতো...
পাশের রুমেই আছেন, তবুও কতো দূরে। হাত ধরা হয়তো হবে না আর। কাছের মানুষদের কাছেই বোধহয় আমি সবচেয়ে বেশী নিষ্টুর!
ভালোবাসা রইলো হিমুভাই।
-----------------------------------------------------------------------------------
...সময়ের ধাওয়া করা ফেরারীর হাত থিকা যেহেতু রক্ষা পামুনা, তাইলে চলো ধাওয়া কইরা উল্টা তারেই দৌড়ের উপরে রাখি...
**************************************************
“মসজিদ ভাঙলে আল্লার কিছু যায় আসে না, মন্দির ভাঙলে ভগবানের কিছু যায়-আসে না; যায়-আসে শুধু ধর্মান্ধদের। ওরাই মসজিদ ভাঙে, মন্দির ভাঙে।
মসজিদ তোলা আর ভাঙার নাম রাজনীতি, মন্দির ভাঙা আর তোলার নাম রাজনীতি।
এই নিয়ে যতবার পড়েছি ততবার চোখে পানি চলে আসছে
ক্যান কান্দাইলেন আবারো??
ঢাকাইয়্যা যাদুকর
কোন উপযুক্ত শব্দের নিগড়ে উপলব্ধ বোধকে প্রকাশ করা গেল না!!!!!!!!!!
_____________________
Give Her Freedom!
হিমু ভাই-এর পুরানা লেখাগুলো পড়ছি। এই লেখাটা পড়ে মন্তব্য না করে পারলাম না।
মন খারাপ ছিল।
আরো করে দিলেন।
মন খারাপ হয়ে গেল।
____________________________________
যাহারা তোমার বিষাইছে বায়ু, নিভাইছে তব আলো,
তুমি কি তাদের ক্ষমা করিয়াছ, তুমি কি বেসেছ ভালো?
...........................
বাবারা এভাবেই সরবে নীরবে আমাদের হাতধরে থাকেন ।
মন ছুঁয়ে গেল ।
জেসমিন পলাশ ।
হিমু ভাই, আপনার লেখা আমার খুব ভালো লাগে, কখনও বলিনি কোথাও, কিন্তু আজ না বলে পারলাম না, সত্যিই পারলাম না।
এখন থেকে আমিও খুব মন খারাপের কোন সময়ে বা দিনে এই লেখাটি বারবার পড়ব।
ভালো থাকবেন সবসময়।
__________________________________
----আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে---
সচলায়তনে আগ্রহ করে পড়া প্রথম লেখা ।মন খারাপ করা লেখা বলে ভালো লাগলো কিনা জানি না।লেখাটা সহজ, ভাবনাগুলো স্বচ্ছ। লেখক কে ধন্যবাদ ।
নতুন মন্তব্য করুন