রবীন্দ্রবাবু নিচু গলায় বললেন, "আচ্ছা এই যে একেবারে বক্সে বসলুম, বিনোদ তো আমাকে চেনে। ছুঁড়িটা আমাকে দেখলে কী ভাববে বলো তো?"
ভূতোনাথ বিরক্ত হয়ে বলে, "আপনাকে নিয়ে এ-ই এক সমস্যা বাবু। ফূর্তি করতে এসে এতো সাতপাঁচ ভাবলে চলে? ক্যাবারে থ্যাটারে কেউ কাউকে চেনেনা, চিনলেও না চেনার ভান করে। আপনি খামোশ মেরে নাচ দেখবেন, লোট ছুঁড়ে মারবেন, সিটি বাজাবেন ... অত চিন্তা কিসের?"
রবীন্দ্রবাবু ছটফট করে উঠলেন, "না না ভূতো, তুমি বুঝতে পারছো না! বিনোদ আমাকে বড়ই শ্রদ্ধা করে! রীতিমতো ভক্তি যাকে বলে! তো, সে যদি দেখে আমি তার নাচ দেখতে এসেছি ...।"
ভূতোনাথ বলে, "নিন তো স্যার, পপর্কন চিবোন বসে বসে। এসব শ্রদ্ধাভক্তির কতা ভুলে যান। হাপপ্যান্ট পরা বিনোদিনী দাসী একবার স্টেজে নামলে এসব টেনসন আর থাকবে না আপনার!"
রবীন্দ্রবাবু অসহায় মুখে বসে দাঁতে ভূট্টার খই কাটতে লাগলেন।
একটু পরেই পাদপ্রদীপের আলোকে মলিন করে হাফপ্যান্টপরিহিতা বিনোদিনী দাসীর মঞ্চে আগমন ঘটে। সব দর্শক হই হই করে ওঠে।
ভূতোনাথ বলে, "কী স্যার, কেমন লাগচে?"
রবীন্দ্রবাবু ঢোঁক গিলে বলেন, "অদ্ভূত! এ যে নতুন যৌবনের দূত!"
কিন্তু বিনোদিনীর চোখ যায় সটান বক্সের দিকে। কে এই সৌম্যকান্তি পুরুষ? ও মা, এ যে রবীন্দ্রবাবু!
বিনোদিনী মাথায় ঘোমটা দিয়ে উইংসের আড়ালে চলে যেতে চেষ্টা করে, ইমপ্রেসারিও রমণীমোহন এসে তাকে পাকড়াও করে।
"কী হলো বিনোদ, নাচতে নেমে ঘোমটা দিচ্ছিস যে বড়?"
বিনোদিনী দাসী ডুকরে ওঠে, "উনি আমার অ্যাক্টো দেখতে এয়েচেন। আমি কিচুতেই ওঁর সামনে এই আধাপেন্টুলুন পরে নাচতে পারবোনি!"
রমণীমোহন পান চিবাতে চিবাতে বললো, "নেকি! পারবি না কেন? মারবে নাকি তোকে?"
বিনোদিনী বলে, "আমি ওঁকে ভক্তি করি, বড় শ্রদ্ধা করি! কী করে তাঁর সামনে নেংটো হয়ে ক্যাবারে নাচি? ছিহ!"
রমণীমোহন বলে, "আ, মরণ! পয়সা খরচ করে সে নাচ দেখতে এসেছে, নেচে দেখিয়ে দে! নাচলে তো আর তোর ভক্তিছেদ্দা নষ্ট হচ্ছে না!"
বিনোদিনী আঁচলে নাক মোছে, "আমায় মাপ করে দাও রমণীকর্তা ... এ আমি পারবোনি!"
রমণীমোহন ঘাগু লোক, এসবে ভুলবার পাত্র নয়। সে চিবিয়ে চিবিয়ে ভয় দেখায় বিনোদিনীকে। বিনোদিনীও ঘাগু মেয়েছেলে, অনেক ঘাটের জল খেয়েই আজ হাফপ্যান্টের ওপর ঘোমটা টেনেছে, সে-ও শুরু করে দেয় হাফপ্যান্টের ওপর আঁচল পেঁচিয়ে গিঁট মেরে তর্ক।
ওদিকে দর্শক তুমুল খাপ্পা। তারা বিনোদিনীর ক্যাবারে দেখতে এসেছে, কোন নাটক নয়।
রবীন্দ্রবাবু অস্থির হয়ে ভূতোনাথকে শুধালেন, "কী ব্যাপার, আবার মাথায় ঘোমটা চাপালে কেন? নাচে না কেন? য়্যাঁ?"
ভূতো বিরক্ত হয়ে বলে, "তার আমি কী জানি?"
বিনোদিনী আর রমণীমোহন মঞ্চের ওপরেই তুমুল তর্ক করতে থাকে।
অধৈর্য হয়ে এক পর্যায়ে রবীন্দ্রবাবু পকেট থেকে এক তাড়া কাগজ বার করেন। তারপর উঠে দাঁড়িয়ে মন্দ্রস্বরে বলেন, "আমি কিছু বলতে চাই।"
রমণীমোহন আর বিনোদিনী দাসী, দু'জনেই চুপ করে যায়। হলে নেমে আসে পিনপতন নিস্তব্ধতা।
রবীন্দ্র বলেন, "বিনোদিনী, মন দিয়ে শোন।"
তারপর একখানা কাগজ উঁচিয়ে ধরে ধীরে ধীরে, সুললিতকণ্ঠে আবৃত্তি করেন,
"সকল তর্ক হেলায় তুচ্ছ করে
পুচ্ছটি তোর উচ্চে তুলে নাচা!"
মন্তব্য
লা-জবাব!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
একেবারে রবীন্দ্রনাথের ইয়ে মেরে দিয়েছে!!! হা হা হা ............... (বিপ্লব)
কি মাঝি? ডরাইলা?
- এই ব্যাটা হাবশী চিমু কাউরেই ছাড়ে না।
এই যেমন আমি এক্টা ব্যাম্বোস্টিক খাইতে যাচ্ছি এখনি
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এ সব ধম্মে সইবে না কত্তা, পেটে পিলে হবে!
-----------------------------------
যা দেখি তা-ই বলি...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
রবি বুড়োটাও দেখি হিমু ওরফে ভূতোনাথের পাল্লায় পড়ে গোল্লায় যাচ্ছে!
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
সেটা কি শোভন হবে?
----------------------------------------------
আমাকে নিঃশব্দে অনুসরণ করে একটা নদী-
সাথে নিয়ে একটা পাহাড় আর একটা নিঃসঙ্গ মেঘ।
এরপর কি ঠাকুরবাবার সঙ্গে ওকাম্পো? রানু-পর্ব তো সুনীল গাঙ্গুলি সেরে ফেলেছেন।
-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!
হ
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
"গুরুশাপ ব্রহ্মশাপ!"
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
শেষে ঠাকুর নিয়ে টানাটানি! আ মলো!! ...
তবে লেকাটা জাঝা হয়েচে বটে।।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
এরকম ধ্যাষ্টামো সইবে না কিন্তু কত্তা.... ঠাকুরের কাছা ধরে টান!!!!
রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।
বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।
এই ফুটোস্কোপটা খুবই মজার হইছে হিমু ভাই, অ্যা'ম লাভিং ইট!!
নতুন মন্তব্য করুন