রাতে ঘুম হয় না। শরীর আইঢাঁই করে। কী যেন মন চায়। কী যেন নেই। মনে আমার পাই নে লো খেই, কে যেন নেই, কী যেন নেই, কে বনবাস দিলো আমার মনের বাসন্তীকে, কেন গোলাপ ফুলের টুকটুকে রংচোখে লাগে ফিকে ...।
আলোচ্য প্যানপ্যানানিগুলিকে বিবাহোন্মুখ যুবকের বিনীত বায়নার পরোক্ষ প্রকাশ হিসেবে চালিয়ে দেয়া যেতে পারে, কিন্তু আমার বায়না ইন্টারনেটের।
প্রায় তিন হপ্তা ধরে ইন্টারনেট কানেকশন নিয়ে ভুগছি। গত এক হপ্তা ধরে ছিলো না সংযোগ। নিজের কাজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ, সচলায়তন, মেসেঞ্জারে যোগাযোগ, সব চিচিং বন্ধ। সামান্য মেইল চেক করতে গেলেও আধ ঘন্টার মামলা।
আমি একা নই, আমাদের দুই ভোনহাইম মিলিয়ে মোট ঊনপঞ্চাশ জন ভুক্তভোগী। প্রতিবেশিনীরাও আমার মতোই নেটাসক্ত, সেদিন দরজায় ঘন্টা বাজতে খুলে দেখি চারজন বিভিন্ন আকার ও আকৃতির তরুণী নানা ভঙ্গিমায় দাঁড়িয়ে। মুগ্ধ গলায় বললাম, "কী ব্যাপার, অ্যাতোগুলি সুন্দরী ছুঁড়ি এখানে কী চায়?"
প্রস্থে আমার প্রায় দ্বিগুণ এক "সুন্দরী" বাজখাঁই গলায় জানালো, "আমরা শুধু সুন্দরীই নই, আমরা অত্যন্ত করিৎকর্মাও বটে! এই কাগজে একটা সই করো দেখি!"
কাগজ হাতে নিয়ে দেখি তাতে নানা ছাঁদে নাম, অ্যাপার্টমেন্ট নাম্বার আর স্বাক্ষর। ষ্টুডেন্টেনভেয়ার্কে অভিযোগ করা হচ্ছে, কেন পয়সা দিয়েও ইন্টারনেট পাওয়া যাচ্ছে না, এই ব্যাপারে কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের গণনাকেন্দ্র কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। ষ্টেফি, আমার নতুন পড়শিনী, সে মহা খাপ্পা, তাকে নাকি মুখের ওপর ঝাড়ি মেরে জানানো হয়েছে, এই পরিস্থিতি কবে পাল্টাবে, কবে সুদিন আসবে তা কোন আদমের পক্ষে বলা সম্ভব নয়, রাতের মধ্যেও সামলে যেতে পারে, আবার মাসের পর মাসও লাগতে পারে। আমি আমার দুঃখের কাহিনী যতটা সম্ভব আর্দ্র করে বললাম, ইন্টারনেট ছাড়া রাতে আমার ঘুম হচ্ছে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। ষ্টেফি দাঁত কড়মড় করে বললো, ডু বিস্ট নিখট ডের আইনৎসিগে (তুমি একাই না)। আমি বললাম, অভিযোগ করতে গিয়েও এই কথাই শুনেছি। আমি একা না, আরো লোক পশ্চাৎনিধনের ওপর আছে।
দিন যায়, কিন্তু সময় কাটতে চায় না। একটু পর পর দেখি, নেট এলো কি না। প্রত্যহ সেই ফুল্ল শিরীষ প্রশ্ন শুধায় আমায় দেখে, এসেছে কি, এসেছে কি? কিন্তু উঁহু, লিমিটেড অর নো কানেকটিভিটি। স্যামুয়েল শালা আবার মাঝে মাঝে ঠিকই সংযোগ পায়, ওকে গিয়ে ধরলেও শুনি একই বক্তব্য, আইনগেশ্রেঙ্কটে কোনেকটিভিটেট। ষ্টেফি আর স্যামুয়েলের সাথে পরামর্শ করলাম, সত্যি সত্যিই যদি মাসের পর মাস ধরে বেইন্টারনেট হয় থাকতে হয়, অন্য কারো কাছ থেকে ইন্টারনেট সংযোগ নেয়া যেতে পারে কি না। একটা রাউটার এনে সবাই মিলে লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক থেকে অ্যাকসেস করবো। ষ্টেফি জানালো, তার কোন আপত্তি নাই, কিন্তু অন্যরা রাজি হলে হয়। স্যামুয়েল কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ভ্যাজাল। কে কখন কোথায় কিভাবে চাঁদার টাকা দেবে সেটা নিয়ে গেরো লেগে যাবে।
ওদিকে কাজকামের দফারফা। সকালে মেইল খুলে দেখি সন্ধ্যাবেলা তাগাদা এসেছে রাতের মধ্যে কাজ ডেলিভারি দিতে। নয়তো ঝাড়ি, ব্যাপার কী, মেইল করে উত্তর পাওয়া যায় না কেন? ইন্টারনেটের অভাবে না খেয়ে মরার দশা পুরো। হাতের কাছে অর্থনীতি বিভাগের কম্পিউটার পুল, কিন্তু সেটা সন্ধ্যা সাতটার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল পুল একটু দূরে, সেটা রাত দশটা পর্যন্ত খোলা। কয়েকদিন সুমন চৌধুরীসহ কাসেলের অন্যান্য নেটবানদের বিরক্ত করে মারলাম। প্রকৌশল বিদ্যালয়ের পুলে লিনাক্স ব্যবহার করা হয়, সেজন্যে সেখানে যেতে বিরক্ত লাগে, তাই ওখানে ক্লাস সেরে আবার মূল ক্যাম্পাসে এসে মেইল দেখি, সচলায়তন দেখি। যন্ত্রণার চূড়ান্ত।
আরো একটা বিরক্তিকর উপলব্ধি হচ্ছে, এই নেশাকে দমন করতে না পারা। আমি বেশ কষা লোক বলেই আমার ধারণা ছিলো, বিভিন্ন সময়ে যাঁদের সংস্পর্শে এসেছি তাঁরা অনেকেই এই ধারণাকে সমর্থন করেছেন, কিন্তু এই অভাববোধ, এই হাহাকার, এই প্রতীক্ষার প্রহরগণনা, এই অনূর্ধ্ব-কুড়ি লীগের তরুণ প্রেমিকের মতো নেটসংস্পর্শের জন্যে দাপাদাপি, এ কি আমাকে আসলেই মানায়? কী ক্ষতি ঘরে নেট না থাকলে? কী সমস্যা একটু এগিয়ে গিয়ে মেইল চেক করে ঘরে ফিরতে? ভানুর মতো উত্তরে বলতে ইচ্ছা করে, পারি না গো, পারি না, প্যাট গোলায়!
সামনেই পরীক্ষা নানা কিসিমের। বেশ ভয়ে ভয়েই আছি। মনটা ভালো নাই একশো একটা কারণে। ব দিয়ে শুরু হয় এমন একটা কথা বলতে মন চায় শুধু।
মন্তব্য
নেট গিয়ে তো ভালই হইছে...নইলে এমনি এমনি কি আর চার সুন্দরী, স্টেফি তোমার খোঁজ নিত!
=============
"কথা বল আমার ভাষায়, আমার রক্তে।"
ধূমপান করি না, মদ্যপান করি (কিন্তু নেশা নেই। মাসের পর মাস দিব্যি 'নির্মদ'কাটিয়ে দিতে পারি।), গাঁজা বা অন্য কোনও মাদকদ্রব্য স্পর্শ করেও দেখিনি কখনও। ভেবেছিলাম, সেলফ-কন্ট্রোল আমার ভীষণ পোক্ত। পোক্ত না ছাই! আমি এখন পুরোপুরি কম্পু- এবং নেট নির্ভর।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
"ব" আদ্যাক্ষরের শব্দাবলী দিয়ে মাথায় এনসাইক্লোপেডিয়া বানিয়ে ফেললাম তো। মেলা মেলা শব্দ আসছে, আপনারটা কোনটা না বলে দিলে তো মাথা চুলকে শ্যাষ হয়্যা যাচ্ছি!!
তবে মোস্ট ক্লোজোস্ট ক্যান্ডিডেট মনে হচ্ছে দিল্লীর লাড্ডু (!!??##)
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
?
না না তার নাম বলবো না, নাম বলবো না ...!
হাঁটুপানির জলদস্যু
- আমার মনে আসে 'চ' আদ্যোক্ষারের কথাটি!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সেইরম।
'ব' দিয়ে?অ ঐটা???
আমি মনে হয় বুঝতে পারছি....
..........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
যাক , ইউরোপেও নেট নিয়ে ভুগতে হয় এটা জেনে একটু একটু আরাম পাচ্ছি ।
লাখ ইউরো দামের কথা বলেছেন। আপনাকে উত্তম বিপ্লব!
হাঁটুপানির জলদস্যু
নেট না থাকাটা আসলেই অকল্পনীয় রকমের ঝামেলার। কাসেল ইউনির কিছু কিছু সেক্টরে কিছু আবাল দন্ডমুন্ডের কর্তা। ইন্টারনেট একেবারেই না দিলে প্রাইভেট কানেকশন নেয়া যায় ইজিলি। ৩০ টাকার (ইউরোর) কানেকশনে পুরা বিলডিং কাভার করতে পারার কথা।
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
এই বুদ্ধি তো দিলাম পাবলিককে। গরীবের কথা যেহেতু বাসি হলে ফলে, আমার কথাটা পঁচে গন্ধ বার না হওয়া পর্যন্ত মনে হয় কাজে দিবে না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
যাই হোক, ভালো লাগছে আবারো আপনার লেখা দেখে ।
আপনাকে...উপস...আই মিন, আপনার লেখা মিস করছিলাম|
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
দুর্দান্ত অভিমত! পছন্দ হয়েছে। নেটাসক্তি নিয়ে আমারো নতুন কিছু বলার নাই। আর সব জায়গায় যত বড় বাঘই থাকি না কেন, নেটবিনা পুরা বিড়াল।
তাইতো তো বলি এত বড় সচলের দাপাদাপি হঠাত বন্ধ কেন? সরিরে ভাই আসলেই আমরা সবাই মনে হয় নেট মেনিয়াক, আমার তিন দিন পিচি নষ্ট থাকাতে আগে জ্বর, পাতলা হাগু থেকে শুরু করে নানা রকম রোগের উপসর্গ দেখা দিছিলো, পরে পিচি ঠিক তো সব ঠিক হয়ে গেল!...দুনিয়া বড় বৈচিত্রময় ভ্রাতা!
নতুন উপদ্রব।
মেইলে কোন অ্যাটাচমেন্ট পাঠাতে পারি না, সচলায়তনে পোস্ট করতে পারি না। হখশুলরেশেনৎসেন্ট্রুমের লোকজনকে হাতের কাছে পেলে জুতিয়ে খাল তুলে ফেলবো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি সৌভাগ্যবানদের একজন যার দেশে থাকতেই নিরবিচ্ছিন্ন, নিখরচার হাইস্পিড নেটের অভিজ্ঞতা, মানে নেট-হিন কম্পু-অভিজ্ঞতা একেবারেই নেই, বিদেশে বলাইবাহুল্য। তাবত জ্ঞান আটকে আছে ফায়ারফক্সে। সেইজন্য বলে মাঝে মাঝে-আমার বুদ্ধি হাঁটুতে। আপনার কষ্ট বুঝতে পারছি আপনার শেষের কয়টা লাইন পড়ে। কামনা করি শেষ হবে এই দিন, ততদিন না হয় প্রতিবেশিনীদের সাথে শেয়ার...
নতুন মন্তব্য করুন