গোয়েন্দা ঝাকানাকা চোখ গরম করে বললেন, "এবারও কি সেবারের মতো দুই লম্বরি কেস নিয়ে হাজির হলেন নাকি?"
পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের ডাকসাইটে দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি আধ হাত জিভ কেটে বললেন, "আর লজ্জা দেবেন না স্যার! এবার একদম পরীক্ষানিরীক্ষা করিয়ে তবে এসেছি। এই দেখুন আমাদের ফরেনসিক এক্সপার্ট কেমিক্যাল আলির রিপোর্ট।"
ঝাকানাকা একগাল মুড়িমাখা চিবাতে চিবাতে বললেন, "আপনাদের সেই বুড়ো ভাম কেমিক্যাল আলি? যে কি না পটাশ পারম্যাঙ্গানেট আর পানের পিকের মধ্যে তফাৎ করতে পারে না? তাকে দিয়ে রিপোর্ট লিখিয়ে এসেছেন আমাকে ভোলাতে? ওসব কাল্পনিক গপ্পো নিয়ে বরং সচলায়তনে লেখালেখি করতে বলুন আপনাদের ফরেনফেরত ফরেনসিক এক্সপার্টকে। আমি এসব নাটকনভেল পড়ি না! এর আগেও আপনারা কেমিক্যাল আলির রিপোর্টসহই হাজির হয়েছিলেন। কোথায় কেমিক্যাল টেস্ট করার কথা, তা না করে ব্যাটা প্যাথলজির টেস্ট রিপোর্ট গুঁজে দিয়েছিলো ফাইলে! তাতে লেখা, প্রেগন্যান্সি পজিটিভ!"
কিংকু চৌধারি আবারও জিভ কেটে বললেন, "কিন্তু স্যার, অজ্ঞান পার্টির সেই মেয়েটা তো আসলেই প্রেগন্যান্ট ছিলো!"
ঝাকানাকা কটমট করে তাকিয়ে বাঘা গলায় বললেন, "বটে? আবারও ওদের অজ্ঞান পার্টি বলে চালিয়ে দিতে চাইছেন?"
কিংকু চৌধারি লজ্জিত হেসে বললেন, "এই ইনফরমারগুলিকে নিয়ে আর পারি না স্যার। এরা সব কথা ভুলভাল করে এনে আমাদের কানে তোলে ... কী করবো বলুন, বড় কর্তারা রোজ ফোন করে ধমকায়। সেদিন নাকি নৌবাহিনীপ্রধানের তালুইকে কী একটা খাইয়ে বেহুঁশ করে তাঁর সিল্কের পায়জামা রুট করে নিয়ে গেছে! সেই পায়জামা নাকি আবার উজবেকিস্তান থেকে কেনা। এখন বলুন, এতো হাই প্রোফাইল লোকজনের লো প্রোফাইলের জিনিস যদি লুটপাট হয়, তাহলে তো আমরা একটু দৌড়ের ওপর থাকবোই, নাকি? একটু ভুলভাল তো হবেই, নাকি? এরারে হুমানুম এস্ট, নাকি?"
ঝাকানাকা গরম কন্ঠে বলেন, "ল্যাটিন কপচাবেন না শুধুমুধু! একগাদা হাফ ন্যাংটো ছেলেমেয়ে এনে হাজির করলেন একতিরিশ তারিখ মাঝরাত্তিরে। বললেন এরা অজ্ঞান পার্টির লোক। একেবারে হাত খুলে পেঁদিয়েছি সব ক'টাকে। মানস সরোবরের এক চিপায় সেই ঝালাই লামার গুম্ফায় বসে হপ্তার পর হপ্তা গুহ্য সাধনা করে শেখা আমার আড়াই প্যাঁচের গাঁট্টা। জানেন, কোরবানির গরুও সে গাঁট্টা খেলে ঘুমিয়ে পড়ে? ... সব ক'টা পটাপট বেহুঁশ হয়ে গেলো। কেবল একটা মেয়ে সেই আড়ং ধোলাই খেয়েও টনকো রইলো ...।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "ঐ মেয়েটাই স্যার, প্রেগন্যান্ট টেস্টে পজিটিভ। ইয়াবা খেয়ে জেগেছিলো, তাই আপনার মার খেয়েও বেহুঁশ হয়নি ...।"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! আর জেগে ছিলো বলেই তো জানতে পারলাম, যে তারা মোটেও অজ্ঞান পার্টি নয়, বরং পার্টি বলতে অজ্ঞান! একতিরিশ তারিখ রাতে একটু কাপড় জামা কম পরে নাচানাচি করছিলো একটা রেস্তোরাঁয়। আপনারা অকারণে বেরসিকের মতো হানা দিয়ে তাদের গেরেফতার করে হাজতে ঢুকিয়েছেন!"
কিংকু চৌধারি হাসলেন একগাল। "আর বলবেন না স্যার, এই ইনফরমারগুলো ...। আর রেইড করার পর তো দেখি স্যার ফ্লোরে, সোফায়, টয়লেটে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে আরো অনেক ছোঁড়াছুঁড়ি। কনফিউশন হওয়া তো স্বাভাবিক ...।"
ঝাকানাকা চোখ পাকিয়ে বললেন, "আর তাই সেইসব হিজল তমালের ছেলেমেয়েদের ধরে আনলেন আমার হাতে প্যাঁদানোর জন্যে? ওফ, পরদিন সকালে মন্ত্রীমিনিস্টার, বড় বড় চোর বাটপার, উকিল জেনারেলদের ফোনের পর ফোন! সবাই আবঝাপ ঝাড়ি দ্যায়, বলে দেখে নেবে। শেষমেশ ত্যক্ত হয়ে গুলিস্তানের সেই কানা ফকিরটার কাছে শেখা গালি কিছু বেছে দেবার পর ফোনের জ্বালা বন্ধ হলো!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার! এবারের কেস একদম সলিড। খেটে খাওয়া প্রোলেতারিয়েতমুখো কয়েকটা লোক। এদের আপনি প্রাণ ভরে প্যাঁদালেও কেউ ফোনটোন করবে না। বড়জোর পত্রিকায় আপনাকে গালাগালি করা হতে পারে।"
ঝাকানাকা বললেন, "বটে? হুমমম ... বলুন কেসটা কী!"
কিংকু চৌধারি এক মুঠো মুড়ি হাতে নিয়ে বলেন, "কেস অতি বিচিত্র স্যার, অতি বিচিত্র। বড়ই জটিল রহস্যের ঘোরপ্যাঁচ ...।"
ঝাকানাকা বললেন, "আপনার মুড়ি আরো খেতে চাইলে বানিয়ে দেয়া হবে, কিন্তু অযথা মুড়ির লোভে কাহিনী ফেনিয়ে তুলবেন না। কাজের কথায় আসুন।"
কিংকু চৌধারি একটু লজ্জিত হেঁ হেঁ করেন। বলেন, "হেঁ হেঁ হেঁ, আসলেই মুড়িমাখাটা খুব স্বাদু! মনে হয় পেট ভরে খাই ...। যাকগে, চট্টগ্রামে বদরু খাঁর ঘাঁটিতে রেইড করা হয়েছিলো, শুনেছিলেন বোধহয়। তো, ওখানে এক সাংঘাতিক জিনিস মিলেছে। ডলার ছাপানোর প্লেট!"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম। বদরু খাঁ আন্তর্জাতিক ডাকু। মাঝে মাঝেই তার ডলারের প্রয়োজন পড়ে। এজন্যে সে বেশি দিগদারির মধ্যে দিয়ে যেতে চায় না, নিজের ডলার নিজেই ছাপিয়ে নেয়।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "আপনি জানেন দেখছি!"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! জানি না মানে, এর আগে তো এমন একটা কেস আমিই সামাল দিলাম! সেবার বদরু জাল টাকার প্লেট নিয়ে ধরা পড়েছিলো ... [দ্রষ্টব্য ১]।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "হুমম, তাই তো! ভুলেই গিয়েছিলাম। তো, বদরু খাঁকে এবারও পাকড়াও করা যায়নি স্যার, সে চোখে ধূলো দিয়ে পালিয়েছে। এই জাল ডলারের প্লেট বাজেয়াপ্ত করে নিয়ে আসা হচ্ছিলো ঢাকায়। সাধারণ পুলিশের ওপর ভরসা নেই, তাই বিশেষ শাখার একজন চৌকস অফিসার ছদ্মবেশে নিজের শরীরে লুকিয়ে প্লেট দুটো নিয়ে ট্রেনে চড়ে ঢাকায় ফিরছিলেন।"
ঝাকানাকা বললেন, "পথে কে বা কাহারা তাঁকে অজ্ঞান করে প্লেট দু'টো নিয়ে ভেগেছে?"
কিংকু চৌধারি উজ্জ্বল মুখে বললেন, "এ-ই হলো স্যার আপনাকে কোন কিছু বলতে যাবার জ্বালা, মাঝপথেই সব আঁচ করে ফ্যালেন ...।"
ঝাকানাকা মৃদু অট্টহাসি দ্যান। বলেন, "ঠা ঠা ঠা ..।"
কিংকু চৌধারি বলেন, "আমাদের গোয়েন্দা শাখার রিপোর্ট বলছে, এ অতি উঁচু দরের অজ্ঞান পার্টির কাজ। সাধারণ অজ্ঞান পার্টি নয়, রীতিমতো ক্যাটেগরি ফোর অজ্ঞান পার্টি এই প্লেট সরিয়েছে। এরকম অজ্ঞান পার্টি আছে কেবল দুটো। দুটোই ওয়ান ম্যান পার্টি।"
ঝাকানাকা বললেন, "কারা এরা?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "একজনের আসল নাম জানা যায়নি, লাইনের লোকেরা তাকে শ্রীচৈতন্য বলে ডাকে। এ নাকি বহুদিন ধরে লোকজনকে অচৈতন্য করে লুটপাট করেই চলেছে। আজ অবধি এর টিকিটিরও হদিশ পায়নি পুলিশ।"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! আর দ্বিতীয় জন?"
কিংকু চৌধারি বলেন, "দ্বিতীয় জন মহিলা। এর নাম জানা গেছে, ইসমত জঙ্গ বেহুঁশিয়া। রীতিমতো খানদানি ঘরের ডাকাত। এরা নাকি সেই মোগল আমল থেকে লোকজনকে বেহুঁশ করে ছিনতাই করে আসছে, তাই পারিবারিক উপাধি বেহুঁশিয়া।"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! তো, কেন আপনাদের মনে হচ্ছে এটা এদেরই কারো কাজ?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "লুটের ধরন দেখে স্যার! হুঁশিয়ার খানের হাতে দামী ঘড়ি ছিলো, পকেটে দামী মোবাইল ছিলো, হাতে দামী আংটি ছিলো, চোখে দামী সানগ্লাস ছিলো, কিন্তু কিছুই খোয়া যায়নি। খোয়া গেছে শুধু প্লেট দুটো!"
ঝাকানাকা বললেন, "হুঁশিয়ার খান? আপনাদের বিশেষ শাখার অফিসারের নাম নাকি? হুঁহ ... তা এটা ক্যামন ছদ্মবেশ নিয়েছিলো সেই ব্যাটাছেলে? অ্যাতো দামী জামাকাপড় পড়ে তার ট্রেনে ওঠার দরকার কী ছিলো?
কিংকু চৌধারি থতমত খেয়ে বললেন, "ইয়ে ... মানে হয়েছে কী, পুলিশের লোক তো নিশ্চয়ই এমন দামী জামাকাপড় পড়ে সেজেগুজে ট্রেনে চড়বে না ... তাই সম্ভাব্য শত্রুকে একটা ভুল ধারণা দেয়ার চেষ্টা, যে ও আসলে পুলিশ নয় ...।"
ঝাকানাকা বললেন, "তা ঐ ঘড়ি, মোবাইল, সানগ্লাস, আংটি, ওগুলি কি আপনাদের ছদ্মবেশ ডিপো থেকে রিকুইজিশন দিয়ে আনা, নাকি ওগুলি হুঁশিয়ার খানের নিজের জিনিস?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "ছদ্মবেশের আবার ডিপো! না স্যার, আমাদের নিজেদের গাঁট থেকেই ছদ্মবেশ যোগাড় করতে হয়।"
ঝাকানাকা বললেন, "তা হুঁশিয়ার খান অ্যাতো দামী জিনিসপাতি কেনার টাকা পেলো কোত্থেকে? ঘুষটুষ খায় নাকি?"
কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বলেন, "তা তো বলতে পারবো না স্যার ...।"
ঝাকানাকা বললেন, "বুঝেছি। সম্ভাব্য আসামীর তালিকায় এক নাম্বারে তাহলে হুঁশিয়ার খান নিজে। তারপর? কখন কিভাবে কোথায় আপনারা তার বেহুঁশ বডি খুঁজে পেলেন?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "ভোরবেলা স্যার কন্ট্রোল রুমে একটা ফোন আসে। এক লোক নাকি ফোন করে বলেছে, সাগরিকা ট্রেনের অমুক কামরায় ইন্সপেক্টর হুঁশিয়ার খান বেহুঁশ হয়ে পড়ে আছেন।"
ঝাকানাকা বললেন, "লোক? হুমম!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি। আপনি কি স্যার শ্রীচৈতন্যকে সন্দেহ করছেন?"
ঝাকানাকা বললেন, "আমি কি তা-ই বললাম? লোকটা কোন নাম্বার থেকে ফোন করেছিলো?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "হুঁশিয়ার খানের মোবাইল দিয়েই স্যার!"
ঝাকানাকা বললেন, "তারপর সে মোবাইল সে আবার ফেলে রেখে গেছে?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, তবে সিমটা খুলে নিয়ে গেছে।"
ঝাকানাকা বললেন, "আপনারা সে ফোনের ওপর আঙুলের ছাপ খুঁজেছেন?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "খুঁজেছি স্যার, কিন্তু তাতে হুঁশিয়ার খান ছাড়া অন্য কারো হাতের ছাপ পাওয়া যায়নি!"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! হুঁশিয়ার খানের চেয়ে বেশি হুঁশিয়ার তো দেখছি এই অজ্ঞান পার্টির লোকেরাই! এদের ধরে চাকরি দিন পুলিশে। আর হুঁশিয়ারকে ধরে আচ্ছা করে জুতিয়ে বার করে দিন পুলিশ থেকে। ব্যাটা ফুলবাবু।"
কিংকু চৌধারি খুশির হাসি হাসেন।
ঝাকানাকা বলেন, "তো, এ-ই আপনার কেস?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। ওহ, হ্যাঁ, আরো দু'জন অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলো হুঁশিয়ার খানের কামরায়!"
ঝাকানাকা একমুঠো মুড়ি মুখে পুরতে গিয়েও থেমে গেলেন। একটি ভুরু উত্তোলন করে বললেন, "বলেন কী?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। তিন তিনজন অজ্ঞান ভিক্টিম!"
ঝাকানাকা বললেন, "কারা এরা?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "বাকি দুইজন লোকের নাম এখনো জানা যাচ্ছে না স্যার। তিনজনই এখন পর্যন্ত অজ্ঞান। হাসপাতালে আছে। ডাক্তার বলেছেন আজ সন্ধ্যের দিকে জ্ঞান ফিরলেও ফিরতে পারে।"
ঝাকানাকা বললেন, "ট্রেনের ঐ কামরা সার্চ করেছেন তো? যা যা আলামত পাওয়া গেছে সব জব্দ করেছেন?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার। এই যে লিস্ট।"
ঝাকানাকা লিস্টের ওপর চোখ বুলিয়ে মুড়ি চিবাতে চিবাতে বলেন, "উত্তম! অতি উত্তম! এবার কিছু টেস্ট করতে দিই, দাঁড়ান। আজ রাতেই টেস্টগুলি সেরে ফেলুন। যদি ব্যাটাদের কাল জ্ঞান ফেরে, তাহলে আমরা এক ফাঁকে গিয়ে তিনটেকেই আচ্ছা করে জেরা করে আসবো।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার!
একগাদা দলিলপত্র ঝাকানাকার দিকে এগিয়ে দিয়ে কিংকু চৌধারি বললেন, "গতকাল সন্ধ্যের দিকে সবার হুঁশ ফিরেছে স্যার। টেস্টগুলি করা হয়ে গেছে গতকাল রাতের মধ্যেই।"
ঝাকানাকা একটা হাই তুলে বললেন, "এক এক করে সবার জেরা করি তবে। একটা মোটা দেখে রুলার দিন আমাকে। বলা যায় না, প্যাঁদাতে হতে পারে।"
কিংকু চৌধারি করুণ গলায় বললেন, "দুইদিন ধরে অজ্ঞান ছিলো স্যার। দুবলা শরীরে আপনার মার কি সইবে?"
ঝাকানাকা কিছুক্ষণ ভেবে বললেন, "তাহলে চিকন দেখে একটা রুলার নিয়ে আসুন। আর একটা ছালা। পিঠে ছালা রেখে প্যাঁদালে বোধহয় একটু কম লাগবে ধকলটা।"
কিংকু চৌধারি হাঁক পেড়ে ডাকলেন কনস্টেবলকে। "প্রথমে কাকে ডাকবো স্যার? মকবুল মনসবদার নাকি মন্টু লিওনার্দোকে?"
ঝাকানাকা বিরসমুখে বললেন, "এরা কারা?"
কিংকু চৌধারি কনস্টেবলকে রুলার আর ছালা আনতে বলে ফিরলেন ঝাকানাকার দিকে। "এরা বাকি দুই বেহুঁশ আদমি স্যার। পরিচয় জানা গেছে গতকাল।"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! সবার আগে হুঁশিয়ার খানকে ডাকুন।"
হুঁশিয়ার খান একটু পরে টলতে টলতে এসে হাজির হলো ঘরের ভেতর।
ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় বললেন, "আপনিই হুঁশিয়ার?"
হুঁশিয়ার খান ছিপছিপে গড়নের লোক, ভ্যাবাচ্যাকা ভাবের সাথে দু'তিনদিনের না কামানো দাড়ি মুখে। সে ধরা গলায় বললো, "জ্বি স্যার।"
ঝাকানাকা বললেন, "নামেই হুঁশিয়ার, কামে তো হুঁশ-না-ওয়ালা! কী হয়েছিলো বলুন দেখি। ঠিকমতো বলবেন। উল্টোপাল্টা তথ্য দিলে প্রথমে প্যাঁদাবো, পরে ফাঁসিয়ে দিয়ে জেলের ঝোল খাওয়াবো। আপনার আগে অনেক বেয়াড়া বদমায়েশ পুলিশকে আমি টাইট দিয়েছি!"
হুঁশিয়ার খান বিষন্ন মুখে বলে, "খুবই বিচিত্র কাহিনী স্যার। ট্রেনে চড়ে ফিরছিলাম। কামরায় আমার সাথে আরো তিনজন ছিলো।"
ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসে বললেন, "আরো তিনজন? দু'জন নয়? তিনজন?"
হুঁশিয়ার খান বললো, "জ্বি স্যার, তিনজন। মকবুল মনসবদার, মন্টু লিওনার্দো আর মিল্টন টেকনাফি।"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! তারপর?"
হুঁশিয়ার খান বললো, "গল্পগুজব করতে করতে যাচ্ছিলাম স্যার চারজন মিলে। হঠাৎ কামরার বাতি নিভে গেলো। এরপর কে যেন আমার নাকের ওপর একটা ভেজা কাপড় চেপে ধরলো, তাতে একটা কড়া মিষ্টি গন্ধ। তারপর স্যার আর কিছু মনে নেই।"
ঝাকানাকা সহৃদয় কণ্ঠে বললেন, "আপসোস! তা, অজ্ঞান হওয়ার আগ পর্যন্ত যা যা ঘটেছিলো সেসব মনে আছে নাকি ভুলে গেছেন?"
হুঁশিয়ার খান মনমরা হয়ে বলে, "মনে আছে স্যার। ভুলি নাই।"
ঝাকানাকা বলেন, "বেশ বেশ। তা কে কোথায় বসেছিলেন কামরার ভেতর?"
হুঁশিয়ার খান একটা প্যাডে কলম দিয়ে এঁকে দেখায়। জানালার পাশে সে আর মন্টু লিওনার্দো। তার পাশে বসেছিলো মকবুল মনসবদার, আর মন্টুর পাশে মিল্টন টেকনাফি।
ঝাকানাকা মনোযোগ দিয়ে দেখেন নকশাটা। "বটে? হুমমম! তা আপনাকে অন্ধকারের মধ্যে এ তিনজনের মধ্যে যে কোন একজনই নাকেমুখে ভেজা কাপড় গুঁজে দিয়ে অজ্ঞান করে ফেলতে পারে। নাকি?"
হুঁশিয়ার খান মাথা ঝাঁকায়।
"এদের মধ্যে কাউকে সন্দেহ হয়?" ঝাকানাকা মোলায়েম কণ্ঠে জানতে চান।
হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বলে, "তিনজনই যেন স্যার ... কেমন কেমন!"
ঝাকানাকা বললেন, "তিনজন মিলেই অজ্ঞান করেছিলো আপনাকে, তা-ই বলছেন?"
হুঁশিয়ার খান বললো, "না স্যার, মনে হয় ওটা একজনেরই কাজ ছিলো। আর এতো চট করে অজ্ঞান হয়ে গেলাম যে বেশি কিছু ঠাহর করতে পারিনি।"
ঝাকানাকা বললেন, "বাকি তিনজনের সম্পর্কে বলুন। তারা কে কী করে, দেখতে কেমন, কী করছিলো?"
হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বললো, "মন্টু লিওনার্দো হচ্ছে কবি। নিয়মিত কবিতা লেখে। গাঁজা খেলে নাকি কবিতা বেশ খেলে, বেশ খোলে মাথায়, বলছিলো সে। হ্যাংলা, মুখে মোচদাড়ি আছে, জিন্সের প্যান্ট, ফতুয়া আর লেজেহোমো শেরশাদের মতো স্কার্ফ পরা ছিলো গলায়।"
কিংকু চৌধারি নোট করেন ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে।
"আর মকবুল মনসবদার ব্যবসায়ী। আদার ব্যবসা করে বলছিলো। চট্টগ্রাম গিয়েছিলো কী একটা জাহাজের খবর নিতে। মাথায় টুপি, পাঞ্জাবি আর পায়জামা পরা ছিলো। পান খেয়ে বার বার উঠে জানালা দিয়ে পিক ফেলছিলো।"
কিংকু চৌধারি নোট করে যান।
"আর এই মিল্টন টেকনাফি লোকটা স্যার বড়ই সন্দেহজনক। কী করে জিজ্ঞেস করলে বলে না, খালি হাসে। অনেক লম্বা, একটা জ্যাকেট আর খাকি প্যান্ট পরা ছিলো। বাদাম খাচ্ছিলো সমানে। আমাদেরকেও বাদাম সেধেছিলো, আমি নিইনি। আর একটা বিশ্রী গান গুনগুন করছিলো একটু পর পর।"
ঝাকানাকা বলেন, "বিশ্রী গান? সে কীরকম?"
হুঁশিয়ার খান খানিক ভেবে বলে, "বিদঘুটে গান স্যার। সুরটা ঠিক মনে পড়ছে না, কথাগুলি এমন ... তুইইইইই ... মাল খা ... ইচ্ছেমতোওওও ... বোতলকে খুশি করে বাঁচ!"
কিংকু চৌধারি সোজা হয়ে বসেন।
ঝাকানাকা চোখ গরম করে বলেন, "বলেন কী? এমন আবার গান হয় নাকি?"
হুঁশিয়ার খান বলে, "সেজন্যেই তো বললাম স্যার, বিদঘুটে গান!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আমার কাছে গানটা চেনা চেনা লাগছে!"
ঝাকানাকা ঝট করে ফিরে তাকিয়ে বললেন, "আপনি এসব আজেবাজে গান চিনলেন কী করে?"
কিংকু চৌধারি লাজুক গলায় বললেন, "রেডিও ঝাঞ্জাইলে শুনি স্যার। এটা সম্ভবত ঝুনো-র গান, "পরমকল্যাণবরেষু" অ্যালবাম থেকে নেয়া।"
ঝাকানাকা চটে গিয়ে বললেন, "থাক থাক থাক। ... এ গান গাইছিলো মিল্টন তেঁতুলিয়া?"
হুঁশিয়ার খান বলে, "তেঁতুলিয়া নয় স্যার, টেকনাফি।"
ঝাকানাকা বললেন, "ঐ হলো! তো, আপনি কিছু বললেন না তাকে?"
হুঁশিয়ার খান বলে, "আমি কী বলবো স্যার? কিছু বলতে গেলেই বাদাম খাওয়ার জন্য পীড়াপিড়ি করে।"
ঝাকানাকা বললেন, "তো বাদাম সাধলে বাদাম খেয়ে ফেলতেন! সমস্যা কী?"
হুঁশিয়ার খান বললো, "না স্যার, ট্রেনে বাসে অপরিচিত কেউ কোন কিছু সাধলে খেতে নেই। আমার বাবা বলেছিলেন ছেলেবেলায়। বলেছিলেন, খাবারের মধ্যে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে ঘুম পাড়িয়ে বাক্সপেঁটরা হাতিয়ে নেয় লোকজন। আমার সেজ মামাকে এমনি করে একবার সিঙ্গারা খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে ওনার জামাজুতো সব খুলে নিয়ে গিয়েছিলো এক মহিলা!"
ঝাকানাকা বললেন, "আপনারা বাবা অত্যন্ত দূরদর্শী মানুষ ছিলেন, দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু বাদামের সাথে ঘুমের ওষুধ মেশানো একটু শক্ত নয় কি? বাদাম তো আর আপেল নয় যে ইনজেকশন দিয়ে ঘুমের ওষুধ ভরে দেবে! শরবতও নয় যে ঘুমের ট্যাবলেট গুলিয়ে খাওয়াবে! শক্ত খোসাঅলা একটা জিনিস! তাছাড়া বাদাম স্বাস্থ্যের জন্যেও ভালো, ক্যালসিয়াম আছে, পটাশিয়াম আছে!"
হুঁশিয়ার খান মুখ গোমড়া করে বললো, "না স্যার, সাবধানের মার নাই। আমার মেজো শালাকে একবার ছোলাভাজা খাইয়ে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটপাট করে নিয়েছিলো।"
ঝাকানাকা গম্ভীর মুখে বললেন, "আপনার পরিবারে দেখি এই অজ্ঞান হয়ে সর্বস্ব খোয়ানোর জমজমাট রেওয়াজ আছে! এই সব পারিবারিক ইতিহাস থাকার পরও আপনি কোন সাহসে এই মূল্যবান জিনিস বহন করার দায়িত্ব নিলেন, য়্যাঁ?"
হুঁশিয়ার খানের মুখটা কালো হয়ে যায়।
কিংকু চৌধারি নোট করতে করতে বললেন, "স্যার, ছোলাভাজার সাথে যদি ঘুমের ওষুধ মেশানো যায়, তাহলে বাদাম তো তার কাছে নস্য!"
ঝাকানাকা চিন্তিত হয়ে বললেন, "তাই তো দেখছি। আস্ত নারিকেল ছাড়া কিছুই নিরাপদ নয়!"
হুঁশিয়ার খান বললো, "আমি বেশ সাবধানে ছিলাম স্যার। কিন্তু ঐ যে ফট করে ঘরের বাতি নিভে গেলো, আর তারপর কে যে ব্যাটা পাজি আমার মুখের মধ্যে কাপড় চেপে ধরলো ... এর জন্যে আমি ঠিক প্রস্তুত ছিলাম না!"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! ঠিক আছে। আপনি ঐ তিন পাজিকে দেখলে এখন চিনতে পারবেন?"
হুঁশিয়ার খান হাত মুঠো পাকিয়ে দাঁত কিড়মিড় করে বলে, "পারবো না মানে? শুধু চিনবোই না, কিলিয়ে কাঁঠালও পাকাবো ব্যাটাদের! অ্যাত্তোবড় সাহস, আমার নাকে কাপড় চেপে ধরে!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "তিন পাজি? আপনি কি তিনটাকেই সন্দেহ করছেন নাকি স্যার?"
ঝাকানাকা বললেন, "তদন্তের সময় আমি সবাইকেই পাজি ধরে নিই। এই যে হুঁশিয়ার খান, এ হচ্ছে পাজি নাম্বার ওয়ান।"
হুঁশিয়ার খানের মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে যায়, সে বলে, "এ কেমন ইনসাফ হলো স্যার? অজ্ঞান হলাম আমি, আর আমার ঘাড়েই পেজোমির দোষ চাপাচ্ছেন? ভিক্টিম হওয়া কি পাপ?"
ঝাকানাকা ক্রুর হাসেন, বলেন, "দেখা যাবে কে পাজি আর কে পাজি নয়। আপাতত পাশের ঘরে গিয়ে বসুন, চা-টা খান।"
হুঁশিয়ার খান গোমড়া মুখ করে উঠে চলে যায়।
কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, বাকি দু'টোকে ডাকবো? রুলার আনাই মোটা দেখে একটা?"
ঝাকানাকা বললেন, "পুলিশ হয়ে পুলিশকে বাঁচিয়ে জনগণকে প্যাঁদানোর একটা পুলিশি বদভ্যাস কাজ করে আপনার মধ্যে! কাউকে যদি প্যাঁদাতে হয় তাহলে সে আপনার সহকর্মী হুঁশিয়ার খান! পুলিশ নামের কলঙ্ক সে!"
কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে পেন্সিল দিয়ে কান চুলকাতে থাকেন।
ঝাকানাকা বলেন, "এই মিল্টন টেকনাফি লোকটাই কেবল এখন আমাদের কব্জায় নেই। সন্দেহজনক আচরণ ব্যাটার। তুই মাল খা ইচ্ছেমতো, বোতলকে খুশি করে বাঁচ ... এটা কোন গান হলো?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "হেঁ হেঁ হেঁ, আপনি স্যার আজকালকার গান দেখছি একদমই শোনেন না! লিমা-র ""বাইদানি নাচে মাজা ঝাকাইয়া"" শুনলে আপনার প্রতিক্রিয়া কী হয় তা-ই ভাবছি!"
ঝাকানাকা রক্তচক্ষু তাগ করে বললেন, "আপনি এসব গান শোনার সময় পান?"
কিংকু চৌধারি বলেন, "গাড়িতে উঠলেই রেডিও ঝাঞ্জাইল ছেড়ে দিই স্যার! যা শোনায় সব শুনি!"
ঝাকানাকা বললেন, "যত্তোসব! আপনার দোস্ত এই ব্যাটা হুঁশিয়ার খান কি মদ খায়?
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, তা খায় মাঝে মধ্যেই। শৌখিন মানুষ তো!"
ঝাকানাকা বিমর্ষ মুখে বললেন, "মকবুল মনসবদারকে ডাকুন দেখি। হুঁশিয়ার খানের পাশে বসে ছিলো ব্যাটা, পাজি নাম্বার টু। দেখি আদার ব্যাপারী হয়ে সে কোন জাহাজের খবর নিতে চট্টগ্রাম গিয়েছিলো!"
"মকবুল মনসবদারকে ডাকো!" কিংকু চৌধারি হুঙ্কার দিয়ে সেপাইকে হুকুম ঝাড়েন। "আর মোটাসোটা একটা রুলার নিয়ে এসো!"
রুলার হাতে মকবুল মনসবদারকে পাকড়াও করে এনে স্যালুট দ্যায় সেপাই।
মকবুল মনসবদার মোটাসোটা মানুষ। চোখে এখনও ঢুলুঢুলু ভাব। পরনে পায়জামা আর পাঞ্জাবি। মুখে দাড়িগোঁপ নেই।
ঝাকানাকা মনোযোগ দিয়ে কী একটা রিপোর্ট পড়ছিলেন, মকবুল মনসবদারকে দেখে সহৃদয় কণ্ঠে বললেন, "আসুন আসুন! খুব ধকল গেছে, তাই না? বসুন বসুন!"
মকবুল মনসবদার ধপ করে একটা চেয়ারে বসে পড়েন। "রুলার দিয়ে কী করবেন স্যার? মারবেন নাকি আমাকে?"
কিংকু চৌধারি মুহাহাহা করে হাসেন। বলেন, "মুহাহাহাহা! দরকার পড়লে মারতেও পারি!"
ঝাকানাকা শাসন করলেন তাকে। "আহ চৌধারি! ওসব পড়ে হবে। মনসবদার সাহেব ভালো লোক। ধরে পিটুনি দেয়ার আগেই সব খুলে বলবেন। ... তাই না?"
মনসবদার ডুকরে উঠলেন, "এ আপনাদের কেমন বিচার? আমাকে ধরে অজ্ঞান করে সব কেড়েকুড়ে নিলো, আর আপনারা আমার হুঁশ আসতে না আসতেই ধরে প্যাঁদানোর চিন্তা করছেন?"
ঝাকানাকা বললেন, "সব কেড়েকুড়ে নিলো? কী ছিলো আপনার সাথে?"
মনসবদার চোখ মুছে বললেন, "মোবাইল, মানিব্যাগ, আতরের কৌটা! সব!"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! কিন্তু পুলিশ রিপোর্টে তো বলছে, আপনার জিনিসিপত্র কিছুই খোয়া যায়নি। আপনার ছবিওয়ালা মানিব্যাগ, আপনার ছবিওয়ালা মোবাইল, আর একটা জঘন্য গন্ধঅলা আতরের কৌটা, সব পাওয়া গেছে কামরার মেঝেতে!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "ওগুলোতে কেবল আপনারই হাতের ছাপ পাওয়া গেছে! আর কারো নয়! এখন বলুন, আপনি বেহুঁশ হলেন কিভাবে?"
মকবুল মনসবদার বললেন, "সব বলবো স্যার! কিন্তু আমার জিনিসপত্র আমাকে ফেরত দেয়া হবে তো? নাকি রেখে দিবেন জোর করে, নজরানা হিসাবে?"
ঝাকানাকা বললেন, "পাবেন, সব ফেরত পাবেন। আগে তদন্ত শেষ হোক। বলুন, কী হয়েছিলো?"
মনসবদার বললেন, "কামরায় আমরা চারজন ছিলাম স্যার। আমি, হুঁশিয়ার খান নামে এক ছোকরা মডেল, মন্টু লিওনার্দো নামের এক হিপি, আর মিল্টন টেকনাফি নামের এক বদমায়েশ! গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম চারজনে মিলে ...।"
"মডেল?" ঝাকানাকা বাধা দেন। "হুঁশিয়ার খান মডেল?"
"তা-ই তো বললো স্যার। সে নাকি মডেলিং করে। জামার, জুতার, জাঙ্গিয়ার। যদিও দেখতে বান্দরের মতো।"
"বটে?" ঝাকানাকা ভ্রুকুটি করেন। "তারপর?"
"হঠাৎ ঘরের আলো স্যার ফট করে নিভে গেলো। একটা কেমন হুটোপুটির আওয়াজ পেলাম। আমি বললাম, "হায় হায়, চলন্ত ট্রেনেও লোডশেডিং হচ্ছে!" মিল্টন টেকনাফি বললো, "দিনকাল খুবই খারাপ!" মন্টু লিওনার্দো বললো, "কতই রঙ্গ দেখি দুনিয়ায়, ও ভাইরে ও ভাই ...!" হুঁশিয়ার খান কিছুই বললো না। তার পরপরই ফট করে আবার আলো জ্বলে উঠলো। তখন দেখি, সে সীটের ওপর হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। বেচারাকে আর জাগালাম না। আমরা তিনজন মিলে গল্প করতে করতে যাচ্ছি। মন্টু লিওনার্দো কী কী সব আবোলতাবোল বকছে, মনে হয় গাঁজা খেয়ে উঠেছিলো ট্রেনে ... আর মিল্টন বদমায়েশটা আজেবাজে সব গান গাইছিলো ... এর মধ্যে আবার ফট করে ঘরের আলো নিবে গেলো। কে যেন আমার মুখে একটা ভেজা কাপড় চেপে ধরলো, তাতে কেমন একটা মিষ্টি গন্ধ! তারপর স্যার আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম, জ্ঞান ফিরে দেখি হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছি!"
কিংকু চৌধারি নোট করতে করতে বললেন, "সত্যি তো? মিথ্যা কথা বললে কিন্তু রুলার দিয়ে অ্যায়সা প্যাঁদান প্যাঁদানো হবে যে ...।"
ঝাকানাকা চোখ বুঁজে সব শুনছিলেন, তিনি হঠাৎ জিজ্ঞেস করলেন, "এই যে আপনি দু'দিন অজ্ঞান হয়ে পড়ে রইলেন, আপনার আত্মীয়স্বজন আপনার খোঁজ করলো না কেন?"
মনসবদার করুণ কণ্ঠে বললেন, "আত্মীয়স্বজন তো স্যার গাঁওগেরামে থাকে। তারা কি আর পদে পদে আমার খোঁজ নেয়? আমি ব্যবসার কাজে সারা দেশ ঘুরি ... কখন কোথায় থাকি তারা তো খবর রাখে না! আর খোঁজ যদি কেউ নেয় তো নেবে তারা, যাদের সাথে আমি ব্যবসা করি। আমার মোবাইল ফোনটাও তো আপনারা কোথায় ঝেড়ে দিয়েছেন! কে আমাকে এই কয়দিন ফোন করে পাত্তা পায়নি, সে খোঁজ যে নেবো, তার উপায়ও তো কিছু রাখেন নি!"
ঝাকানাকা বললেন, "পাবেন পাবেন, সব খোঁজ পাবেন। ... এবার বলুন, কী গান গাইছিলো মিল্টন?"
মকবুল মনসবদার ভুরু কুঁচকে খানিক ভেবে বললেন, "বিশ্রী একটা গান স্যার! কোন আগামাথা নাই। গলাটাও বেসুরা! গানের কথাগুলি হচ্ছে এমন ... তুই ভাত খা, ইচ্ছেমতোওওওও ... পাতিলকে খুশি করে বাঁচ!"
ঝাকানাকা সোজা হয়ে বসলেন চেয়ারে। "ঠিক শুনেছেন তো?"
মকবুল মনসবদার মাথা নাড়লেন। "হ্যাঁ ... এরকমই ছিলো গানের কথাগুলি।"
ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে কিংকু চৌধারিকে বললেন, "নোট করে নিন বরং। বেশ জটিল পরিস্থিতি। ... তা মকবুল সাহেব, আপনারা কাকে সন্দেহ হয়? কে আপনার মুখে কাপড় চেপে ধরলো?"
মকবুল মনসবদার গম্ভীর হয়ে বললেন, "আমার তো স্যার ঐ মিল্টন ব্যাটার ওপরই সন্দেহ হয়। লোকটা স্যার সুবিধার না। একটু পর পর শুধু বাদাম খেতে সাধছিলো আমাদের। আর শালা বাদাম খেতেও পারে ভাতের মতো! একটার পর একটা বাদাম ভেঙে খেয়েই চলেছে!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "হুমম! মেঝেতে প্রচুর বাদামের খোসা পাওয়া গেছে বটে!"
ঝাকানাকা বললেন, "ওগুলোর ওপর আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করার জন্যে একটা নোট পাঠিয়েছিলাম কেমিক্যাল আলিকে। ব্যাটা তো এখনও কোন রিপোর্ট দিলো না।"
মকবুল মনসবদার বললেন, "স্যার, আমার জিনিসগুলি দিয়ে দ্যান, আমি বাড়ি যাই। পেট ভরে ভাত খেতে হবে, শরীরটা বড় দুর্বল হয়ে পড়েছে!"
ঝাকানাকা বললেন, "নিশ্চয়ই যাবেন! পেট ভরে খাওয়ার বন্দোবস্তও হবে। তবে আগে তদন্ত শেষ করি আজকের মতো, তারপর দেখা যাবে। এখন বলুন, মিল্টন আর মন্টুকে দেখলে চিনতে পারবেন?"
মকবুল মনসবদার বললেন, "পারবো স্যার! বিশেষ করে মিল্টন হতচ্ছাড়াটাকে তো পারবোই! শুধুশুধু আমার তিনটা দিন বরবাদ করলো ব্যাটা বদমায়েশ!"
ঝাকানাকা তীর্যক হেসে বললেন, "আপনি এতো নিশ্চিত হচ্ছেন কিভাবে যে মিল্টন টেকনাফিই আপনাকে অজ্ঞান করেছে? কাজটা তো মন্টু লিওনার্দোরও হতে পারে! এমনকি, হুঁশিয়ার খান নামের সেই মডেল ব্যাটারও হতে পারে! তাই না?"
মকবুল মনসবদার চমকে উঠে বললেন, "তাই তো! কিন্তু মন্টুকে দেখে ঠিক ওরকম মনে হয়নি স্যার! আর হুঁশিয়ার খান তো চিৎপাত হয়ে ঘুমাচ্ছিলো। বরং মিল্টন টেকনাফিই কেমন যেন আড়ে আড়ে বারবার তাকাচ্ছিলো স্যার, কেমন একটা মতলববাজ হাসি ছিলো ব্যাটার চোয়ালে! ... আপনারা যা-ই বলুন স্যার, আমার ধারণা মিল্টনই আমাকে অজ্ঞান করে আমার জিনিসপত্র কেড়েকুড়ে নিয়েছে!"
ঝাকানাকা বললেন, "আপনার জিনিসপত্র তো সব রেলের কামরার মেঝেতেই পাওয়া গেছে। মিল্টন আপনাকে লুট করলে সে সব ফেলে গেলো কেন?"
মকবুল মনসবদার মুষড়ে পড়লেন। "তা তো জানি না স্যার! শালার ব্যাটা কেন আমাকে শুধু শুধু এই বিপদে ফেললো, কে জানে?"
কিংকু চৌধারি ক্রুর হেসে বললেন, "আর কোন কিছু ছিলো না কি আপনার সাথে? বেআইনী কোন বস্তু? যেটা খোয়া গেছে কিন্তু স্বীকার করছেন না? য়্যাঁ? দেখছেন তো এই রুলারখানা?"
মকবুল মনসবদার খেপে উঠলেন, "এ কেমন ব্যাভার স্যার? আমি অসুস্থ একটা লোক, পদে পদে আমাকে রুলার দেখাচ্ছেন? আমি সাংবাদিকদের কাছে বিচার দেবো যে আপনারা আমাকে কীরকম নির্যাতন করার হুমকি দিয়েছেন!"
কিংকু চৌধারি হাসেন, বলেন, "মুহাহাহাহাহা!"
ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বলে, "থামুন, হাসবেন না পুলিশের মতো। ... মকবুল সাহেব, সত্যি কথা বলুন! আর কী ছিলো আপনার সাথে? টাকাপয়সা? সোনাদানা? হীরাজহরত? হেরোইন? কোকেন? একে৪৭?"
মকবুল মনসবদার হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। "আদার ব্যবসা করি স্যার গত পনেরো বছর ধরে! মকবুল ট্রেডার্স, খোঁজ নিয়ে দেখেন হয়রানবাজারে! মাঝে মাঝে আদার দাম সুযোগ বুঝে কেজি পিছু পাঁচদশটাকা বাড়াই, কিন্তু চোরাচালানি করি না! আপনারা আমাকে বাগে পেয়ে এইভাবে বেইজ্জতি করছেন! এইভাবে আমাকে উল্টাপাল্টা কেসে ফাঁসিয়ে পয়সা খেতে চাচ্ছেন! রুলার দিয়ে প্যাঁদাচ্ছেন! আমি অ্যামনেস্টির কাছে যাবো! আমি জাতিসংঘের কাছে যাবো!"
ঝাকানাকা বললেন, "আহহাহাহা, কাঁদে না, কাঁদে না। শরীরের এই অবস্থা নিয়ে এতো দৌড়ঝাঁপ আপনার পোষাবে না। তা বেশ তো, আমরা না হয় খোঁজ করে দেখবো হয়রানবাজারে। আপনার গদির ঠিকানা দিয়ে যান আমাদের। এই যে ... কাগজ আর কলম।"
মকবুল মনসবদার হাতের উল্টো পিঠে চোখ মুছে ফোঁৎ ফোঁৎ করে নাক টানতে টানতে কাগজে নিজের গদির ঠিকানা লিখে দেন।
কিংকু চৌধারি বললেন, "ওসব অ্যামনেস্টি-জাতিসংঘ দেখিয়ে কূল পাবেন না! যদি সন্দেহজনক কিছু পাওয়া যায় তো ঠেঙিয়ে আপনার বিষ ঝেড়ে দেয়া হবে! চট্টগ্রামে গিয়েছিলেন কেন?"
মকবুল মনসবদার বলেন, "ব্যবসার কাজে স্যার। আদা আমদানি করতে হবে অচিরেই, তাই একটু পোর্টে কাজ ছিলো।"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম, জাহাজের খোঁজখবর করছিলেন, তাই তো? বেশ বেশ! তা মকবুল সাহেব, আপনি এখন তাহলে ঐ ঘরটায় গিয়ে বসুন, চা-নাস্তা খান।"
মকবুল মনসবদার গোঁ গোঁ করে বললেন, "খিদা লেগে গেছে স্যার। ভাতের ব্যবস্থা নাই?"
কিংকু চৌধারি দাঁত কিড়মিড় করে বললেন, "আপাতত চা খান। ভাতের ব্যবস্থা পরে হবে!"
মনসবদার চলে যাবার পর কিংকু চৌধারি ঝাকানাকার দিকে ফিরে বললেন, "স্যার, যতদূর মনে হচ্ছে এই মিল্টন টেকনাফিই শ্রীচৈতন্য। এক এক করে তিনটাকেই অজ্ঞান করে প্লেট লুট করে পালিয়েছে!"
ঝাকানাকা বললেন, "জনাব চৌধারি, আপনাকে আরো সূক্ষ্মভাবে চিন্তা করতে হবে। ফট করে এর ওর ঘাড়ে দোষ চাপিয়ে দিলে চলবে না। কিছু প্রশ্নের উত্তর আপনাকে খুঁজতে হবে।"
চৌধারি মনক্ষুণ্ন হয়ে বললেন, "কী প্রশ্ন স্যার?"
ঝাকানাকা চেয়ারে নড়েচড়ে বসে বললেন, "প্রথম প্রশ্ন, প্লেট লুট করাই যদি মিল্টনের উদ্দেশ্য হবে, তাহলে কামরার বাকি দু'জনকে সে অজ্ঞান করলো কেন?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "সে কী কথা স্যার! তিন তিনজনকে বাগে পেয়েছে, যা কিছু পেয়েছে লুট করে নিয়েছে!"
ঝাকানাকা বললেন, "উঁহুহু! অত সহজ নয়। ব্যাপারটা মোটেও কাকতালীয় নয়। হুঁশিয়ার খানের কাছে যে ডলারের প্লেটদু'টো আছে, এটা মিল্টন নিশ্চয়ই জানতো। হুঁশিয়ার খানকে অজ্ঞান করে চুপচাপ বসে থাকলেই পারতো সে। কেন আবার মকবুল মনসবদারকে অজ্ঞান করতে গেলো? মন্টু লিওনার্দোকেই বা কেন অজ্ঞান করতে গেলো?"
কিংকু চৌধারি বললো, "স্যার, আপনি কি বলতে চাইছেন, মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দোর কাছেও ডলারের প্লেট ছিলো?"
ঝাকানাকা বললেন, "থাকতেও পারে, অসম্ভব কিছু নয়!"
কিংকু চৌধারি দাঁতে দাঁত পিষে বললেন, "বটে! দাঁড়ান স্যার, ঐ ব্যাটা মকবুলকে যদি আমি পিটিয়ে লম্বা না করছি তো আমার নাম কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারিই নয়!"
ঝাকানাকা বললেন, "আবার না-ও থাকতে পারে। হয়তো মকবুল মনসবদার কিছু দেখে ফেলেছিলো। বা সন্দেহ করেছিলো। তাই তাকে সময়মতো অজ্ঞান করে চুপ করিয়ে রাখা।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "দেখলে আমাদের বললো না কেন স্যার?"
ঝাকানাকা বললেন, "সেটাই তো প্রশ্ন! মিল্টনের হাতে হাতকড়া পরানোর আগে মকবুল আর মন্টুকে ভালোমতো জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে হবে, ঘটনাটা কী!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "মন্টু লিওনার্দোকে তলব করবো স্যার?"
ঝাকানাকা বললেন, "করুন। তার আগে বলুন, এই মকবুল ব্যাটা কি খুব পেটুক নাকি?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "ভয়ানক ভাতখোর লোক স্যার। হাসপাতালের খাবার তার পছন্দ হয় না। এক প্লেট খেয়ে আরো দুই প্লেটের ফরমায়েশ দ্যায়!"
ঝাকানাকা বললেন, "মন্টু আর মকবুলকে আলাদা ওয়ার্ডে রেখেছিলেন না?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "জ্বি স্যার, আপনার কথামতো আলাদা জায়গায় রেখেছি তিনজনকেই। হুঁশিয়ার, মকবুল, মন্টু ... কেউ জানে না যে তারা তিনজনই এখন একই ছাদের নিচে আছে।"
ঝাকানাকা বললেন, "গুড গুড! ডাকুন মন্টুকে।"
মন্টু লিওনার্দো টিঙটিঙে রোগা। পরনে ঢোলা কুর্তা আর জিন্স। মুখভর্তি দাড়িগোফঁ। চোখদু'টো লাল। ভাবভঙ্গি কবিসুলভ।
"আপনিই মন্টু লিওনার্দো?"
"জ্বি স্যার। আমিই কবি মন্টু লিওনার্দো।" ভাঙা গলায় বলে মন্টু।
"বেশ বেশ। তা কেমন বোধ করছেন এখন?" মধুর গলায় বলেন ঝাকানাকা।
"ভালো না স্যার। এইখানকার গাঁজা ভালো না।" মন্টু বিষণ্ন মুখে বলে।
"এইখানকার গাঁজা মানে?" কিংকু চৌধারি গর্জে ওঠেন।
"হাসপাতালের গাঁজা স্যার। ভালো না।" মন্টু অনুযোগ করে।
"হাসপাতালের গাঁজা মানে?" ঝাকানাকা ভুরু কোঁচকান।
"এখানে স্যার চাইলে গাঁজা যোগাড় করে দ্যায় দালারেরা। আমার আবার গাঁজা পান না করলে একটু সমস্যা হয় স্যার।"
"বলেন কী!" কিংকু চৌধারি হাঁক পাড়েন। "রুলারটা নিয়ায় কেউ!"
মন্টু লিওনার্দো বলে, "রুলার লাগবে না স্যার। আমি পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি লম্বা। এই সেদিন মাপিয়েছি। তবে ওজনটা নিয়ে একটু সন্দেহ আছে স্যার! নিউমার্কেটে মাপালে দেখায় বাহান্ন কেজি, কিন্তু সংসদে মাপালে দেখায় তেপ্পান্ন। একটু কনফিউশনে আছি স্যার এটা নিয়ে। ওজন মাপার মেশিন থাকলে আনতে বলুন, মেপে দেখি আসলে কত ...।"
ঝাকানাকা মধুর গলায় বলেন, "যাহা বাহান্ন তাহা তেপ্পান্ন। এটা নিয়ে টেনশন করবেন না একদম।"
কিংকু চৌধারি হুঙ্কার দ্যান, "রুলার দিয়ে তোমাকে মাপা হবে না, ব্যাটা বদমায়েশ, পিটিয়ে পাঁচ ফুট আট ইঞ্চি করে দেয়া হবে! হাসপাতালে এসে গাঁজা খাওয়া হচ্ছে?"
মন্টু লিওনার্দো কাঁচুমাচু মুখে বললো, "গাঁজা খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ভালো স্যার। মনটাও ভালো থাকে। ... তবে গাঁজা খাওয়ার পর দুধ খেতে হয় স্যার, এখানে দুধটাও খারাপ। গাঁজার অবস্থা তা-ও তো চলে, দুধের অবস্থা ভয়ঙ্কর খারাপ!"
কিংকু চৌধারি বলেন, "চোপরাও! স্যার যা বলেন তার উত্তর দাও!"
ঝাকানাকা বলেন, "আপনি কী ধরনের কবি?"
মন্টু নড়েচড়ে বসে, "খুবই উন্নতমানের কবি স্যার! বাদশাবাগের ইয়াজুজ মার্কেটে যে কোন লিটুল ম্যাগাজিনে আমার কবিতা পাবেন। আমাকে ছাড়া বাংলা কবিতার জগৎ স্যার, অচল!"
ঝাকানাকা বলেন, "আপনার নিজের বই বেরোয়নি?"
মন্টু লিওনার্দো বলে, "বেরোয়নি আবার? চারখানা বেরিয়েছে স্যার! আমার ঝোলাটা সাথে থাকলে দেখাতে পারতাম, কিন্তু হুঁশ ফিরে আসার পর থেকে আমার ঝোলাটা আর পাচ্ছি না। ঝোলাটা পেলে স্যার হাসপাতালের এই নিম্নমানের গাঁজা আর বাজে দুধ খেতে হতো না!"
ঝাকানাকা বললেন, "ট্রেনের কামরায় আপনার ঝোলা পাওয়া গেছে। ওতে অবশ্য কয়েকটা চটিবই ছিলো। গাঁজা আর এক বোতল দুধও পাওয়া গেছে তাতে।"
মন্টুর মুক উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে, "আহ! বাঁচালেন স্যার। ওগুলো কি আমি ফেরত পাবো না?"
ঝাকানাকা বললেন, "পেতেও পারেন। আগে তদন্ত শেষ হোক।"
মন্টু বললো, "ওকে স্যার, তাহলেই হবে।"
ঝাকানাকা বললেন, "চট্টগ্রাম গিয়েছিলেন কেন?"
মন্টু বলে, "সাতকানিয়া কবিতা পরিষদের আমন্ত্রণে স্যার। কবিতা পাঠের আসর বসেছিলো।"
ঝাকানাকা বললেন, "বলেন কী? তা কোন কবিতা পাঠ করলেন সেখানে?"
মন্টু লিওনার্দো সগর্বে বলে, "স্বরচিত কবিতা স্যার। নাম ""আমার জাঙ্গিয়া ও আশ্চর্য ডাইনোসরগুলি!"" শুনবেন?"
কিংকু চৌধারি তেড়ে আসেন, "খবরদার!"
ঝাকানাকা তাকে নিবৃত্ত করেন। "আহ, থামুন তো! ... না, কবিতা শুনবো না। তারচেয়ে বলুন, সেদিন কী ঘটেছিলো ট্রেনে? আর কে কে ছিলো আপনার সাথে?"
মন্টু লিওনার্দো চিন্তিত হয়ে পড়ে। "ছিলো স্যার কয়েকজন। ... একজনের নাম স্যার ... উমম, হুঁশিয়ার। সে আবার মডেলিং করে। বিশ্রী চেহারা, কীভাবে এই চেহারা নিয়ে মডেল হলো কে জানে? আর একজন ছিলো, তার নাম মকবুল পোদ্দার ...।"
"পোদ্দার?" জানতে চান ঝাকানাকা।
"উমম, এমনই কিছু স্যার। পোদ্দার বা ফৌজদার, একটা কিছু হবে, খেয়াল নাই। ... আর একটা লোক, খুব বিশ্রী বাজে একটা লোক স্যার ... মিল্টন বেনাপোলি ... ছিলো আমার পাশে।"
"বেনাপোলি?" ক্ষেপে ওঠেন কিংকু চৌধারি? "বেনাপোলি না টেকনাফি?"
মন্টুর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। "ঠিক স্যার, বেনাপোলি নয়, টেকনাফি? চেনেন নাকি ব্যাটাকে?"
ঝাকানাকা বলেন, "এখনও চিনি না, তবে অচিরেই চিনতে পারবো। ... তা ওকে বিশ্রী বাজে বলছেন কেন?"
মন্টু ক্ষেপে ওঠে, "বলবো না? ওর দেয়া বাদাম খেয়েই তো স্যার ঘুমিয়ে পড়লাম। এমন মরণ ঘুম, বাপরে!"
ঝাকানাকা বলেন, "ইন্টারেস্টিং! তা কী কী ঘটেছিলো একদম প্রথম থেকে বলুন।"
মন্টু চোখ মিটমিট করে। "একদম প্রথম থেকে? ... ইয়ে, আমরা স্যার গল্প করতে করতে যাচ্ছিলাম। হুঁশিয়ার লোকটা স্যার, একটা গর্দভ। খালি মডেলিঙের গল্প করছিলো। কোথায় কোন হোসিয়ারীর মডেলিং করেছিলো, আন্ডারওয়্যার পরে নাকি তিনতলা থেকে লাফ দিতে হয়েছিলো, এইসব বাজে গল্প করছিলো। আমি স্যার গাঁজা খেয়ে একবার দিগম্বর হয়ে পানির পাইপ বেয়ে চারতলায় উঠেছিলাম, একবার ভাবলাম ওকে সেটা বলি, কিন্তু খামাকা লজ্জা দিয়ে কী লাভ ব্যাটাকে? ... আর মকবুল পোদ্দার, নাকি তালুকদার, যা-ই হোক ... সেই মকবুল ব্যাটা স্যার সমানে পান খাচ্ছিলো, আর একটু পর পর এসে জানালার কাঁচ তুলে পিক ফেলছিলো থু থু করে। ... আর মিল্টন হারামজাদাটা স্যার, কী বলবো, সমানে বাদাম খেয়ে যাচ্ছিলো ... আর গুনগুন করে খালি মজার মজার সব গান গাইছিলো ... গান শুনে মনে হয়েছিলো লোকটা খারাপ না, কিন্তু ও যে একটা বদের হাড্ডি, সেটা তো স্যার ঠেকে শিখলাম!"
"মজার গান?" কিংকু চৌধারি ভুরু কুঁচকান। "কী মজার গান?"
"উমমম ... দাঁড়ান স্যার, মনে করে নিই। এক ছিলিম গাঁজা টানলে স্যার সবই মনে পড়তো ... এখন মাথাটা এমন টিপটিপ করছে ... গানটা ছিলো স্যার এমন ...," এই বলে সে গেয়ে শোনায়, "তুউউউই, দুধ খা ... ইচ্ছে মতোওওওওও ... নিপলকে খুশি করে বাঁচ!"
কিংকু চৌধারি মুঠো পাকিয়ে সটান উঠে পড়েন চেয়ার থেকে। "এটা মজার গান হলো?" হুঙ্কার দেন তিনি।
ঝাকানাকা বিড়বিড় করে বলে, "ইন্টারেস্টিং! খুবই ইন্টারেস্টিং! ... চৌধারি, নোট করুন।"
কিংকু চৌধারি বসে পড়ে গজগজ করতে থাকেন, "যত্তোসব বাজে গান!"
ঝাকানাকা বললেন, "আপনার রেডিও ঝাঞ্জাইলে ঝুনো সাহেব এসব গানই গায় নাকি, ঐ পরমকল্যাণবরেষু অ্যালবাম থেকে?"
কিংকু চৌধারি বলেন, "মোটেও সেটা দুধ খাবার গান নয় স্যার! আর ... আর ... কীসের নিপলের কথা হচ্ছে এখানে?"
ঝাকানাকা বললেন, "ফিডারের নিপল, নয়তো কীসের? নিপল তো ফিডারেরই হয়!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, আমার ধারণা এই গানটা বড়দের। ইট'স ড়্যাদার ফিশি স্যার! এই গল্পে স্যার এই গানের স্থান হতে পারে না!"
ঝাকানাকা বললেন, "গল্পটার রেটিং দেখেছেন? ১৮ বছর বয়স তদুর্ধ্ব!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "এ কেমন কথা স্যার?"
ঝাকানাকা বললেন, "বাদ দিন! ... তা লিওনার্দো সাহেব, তারপর কী হলো?"
মন্টু লিওনার্দো হাই তুলে বলে, "হঠাৎ স্যার বাতি চলে গেলো ঠুস করে। হুঁশিয়ার গাধাটা বকবক করছিলো, সে হঠাৎ চুপ করে গেলো। মকবুল পোদ্দার ... নাকি চাকলাদার ... সে ফ্যাঁচফ্যাঁচ করতে লাগলো মিল্টন টেকনাফির সাথে। এই দু'জন স্যার খুব জ্বালিয়েছে আমাকে, একজন খালি পান খাচ্ছে, আরেকজন বাদাম ... যা-ই হোক। একটু পর বাতি ফিরে আসার পর দেখি হুঁশিয়ার মডেলকুমার বেশ আয়েশ করে ঘুমাচ্ছে। মকবুল আর মিল্টন তারপর শুরু করলো কী এক বাংলা সিনেমা নিয়ে আলাপ। কিছুক্ষণ পর আবার বাতি চলে গেলো, মিল্টন টেকনাফি বললো, এরপর নাকি সে ট্রেনে হারিকেন নিয়ে উঠবে। একটু পর যখন আবার বাতি ফিরে এলো, তখন দেখি মকবুল সাহেবও হুঁশিয়ারের কাঁধে মাথা রেখে হেভি ঘুম দিয়েছে স্যার। ... আমি হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম, যাক, এবার অন্তত শান্তিমতো ঘুমানো যাবে। কিন্তু এই মিল্টন, এই বদমায়েশটা স্যার গল্প জুড়ে দিলো। বাদামের গল্প। বাদামে নাকি স্যার ক্যালসিয়াম আছে, পটাশিয়াম আছে। আমি উল্টে ওকে গাঁজার গুণাগুণ নিয়ে কিছু তথ্য দিলাম স্যার। বললাম, গাঁজা কত ভালো। মিল্টন তখন স্যার এক ছিলিম টেনে দেখতে চাইলো। তো, দিলাম সাজিয়ে এক ছিলিম। কল্কি নেয়ার সময় সে বলে কী, আমার বাদামগুলো একটু ধরুন দেখি। তো একটা বাদাম কী মনে করে ভেঙে মুখে দিতেই স্যার এমন ঘুম পেলো ... তারপর আর কিছু মনে নেই!"
ঝাকানাকা বললেন, "তা, মেঝেতে কিছু পড়ে থাকতে দেখেছিলেন কি?"
মন্টু কিছুক্ষণ ভেবে বললো, "বাদামের খোসা স্যার, আর কিছুর কথা তো মনে পড়ছে না!"
ঝাকানাকা মিষ্টি করে হাসলেন। বললেন, "বেশ বেশ। তা জনাব লিওনার্দো ... আপনি তাহলে সেপাইয়ের সাথে ফিরে যান, যে ঘরে ছিলেন এতক্ষণ। আপনাকে একটু পর আবার ডাকবো, কেমন?"
মন্টু লিওনার্দো মাথা ঝাঁকিয়ে উঠে পড়ে।
কিংকু চৌধারি গোঁ গোঁ করে ওঠেন। "মন্টু ব্যাটা স্যার একটা লম্পট! হেড নার্স ওর নামে কমপ্লেইন করেছে স্যার। সে নাকি জ্ঞান ফিরে পাবার পর কয়েকজন নার্সকে বিরক্ত করেছে নানাভাবে!"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমম! আপনি দেখছি এখনও গানটা নিয়ে বিরক্ত!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "রুলার দিয়ে এক দফা ডলা দিয়ে দিলে ভালো হয় স্যার!"
ঝাকানাকা বললেন, "বাদ দিন। কবি মানুষ। ... এককাপ চা দিতে বলুন। রহস্য মনে হচ্ছে মোটামুটি সমাধান করা গেছে। এখন শুধু কেমিক্যাল আলির ফাইন্যাল রিপোর্টের অপেক্ষা।"
কিংকু চৌধারি বলেন, "বলছেন কী স্যার?"
ঝাকানাকা বলেন, "হুমমম!"
পরদিন সকাল। হাসপাতাল নয়, থানায় উপস্থিত হুঁশিয়ার খান, মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দো। কিংকু চৌধারি একটা মজবুত বেত হাতে একপাশে দাঁড়িয়ে।
ঝাকানাকা বললেন, "আপনাদের তিনজনই আজ এখানে উপস্থিত। রহস্য মোটামুটি সমাধান হয়েছে। আপনাদের আর কিছু বলার আছে?"
হুঁশিয়ার খান রক্তচক্ষু নিয়ে তাকায় মকবুল মনসবদার আর মন্টু লিওনার্দোর দিকে। মকবুল পান চিবাচ্ছে একটা। মন্টু লিওনার্দো ঘাড় চুলকায় ঘ্যাঁসঘ্যাঁস করে।
ঝাকানাকা বলেন, "গুড। জনাব মন্টু লিওনার্দো, মিল্টন টেকনাফিই অজ্ঞান করেছিলো আপনাকে, বাদাম খাইয়ে। মেঝেতে পড়ে থাকা কয়েকটা আস্তবাদামের মধ্যে সাংঘাতিক এক ঘুমের ওষুধের রিপোর্ট এসেছে আজ সকালে।"
মন্টু লিওনার্দো বললো, "স্যার, এতে আর রহস্যের কী আছে? আমিই তো আপনাকে বললাম, মিল্টন শালা আমাকে বাদাম খাইয়ে অজ্ঞান করে ফেলে রেখে গেছে!"
ঝাকানাকা বললেন, "কথার মাঝখানে কথা বলবেন না। ... বাদামের খোসায় মিল্টন টেকনাফির হাতের ছাপ পাওয়া গেছে। পুরনোর রেকর্ড থেকে মিলিয়ে দেখা গেছে, সে আর কেউ নয়, বদমায়েশ পাজি হতচ্ছাড়া বদরু খাঁ!"
মকবুল মনসবদার বলে, "লোকটার হাবভাব দেখেই স্যার আমার সন্দেহ হয়েছিলো, এই লোক ভদ্রলোক হতে পারে না!"
ঝাকানাকা বলেন, "কিন্তু রহস্য হচ্ছে, কেন মিল্টন টেকনাফি, ওরফে বদরু খাঁ আপনাকে অজ্ঞান করলো, জনাব লিওনার্দো? আপনার ঝোলা, মোবাইল, মানিব্যাগ, সবই তো কামরার মেঝেতে পাওয়া গেছে! এমনকি টাকাপয়সাও অক্ষত অবস্থায় আছে, কেউ মেরে দেয়নি! আপনি কি বলতে পারেন?"
মন্টু লিওনার্দো আমতা আমতা করে বলে, "আমি কিভাবে বলবো স্যার? হয়তো তাড়াহুড়ো করে ভেগেছে!"
ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "বটে? তা জনাব লিওনার্দো, আপনার স্কার্ফখানা কোথায়?"
মন্টু লিওনার্দোর মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সে বলে, "স্কার্ফ? কোন স্কার্ফ?"
ঝাকানাকা বলেন, "আপনার গলায় জড়ানো স্কার্ফ। যেটির কথা হুঁশিয়ার খান আর মকবুল মনসবদার, দু'জনেই আমাকে জানিয়েছে। রেলের কামরায় কোন স্কার্ফ পাওয়া যায়নি। আপনার গলায়ও কোন স্কার্ফ দেখতে পাইনি হাসপাতালে। স্কার্ফটা কোথায় গেলো?"
মন্টু বলে, "স্কার্ফটা মনে হয় এই মিল্টন খাঁ মেরে দিয়েছে স্যার ... বান্দরবান থেকে কেনা আমার শখের স্কার্ফ ...!"
ঝাকানাকা হাসেন। "ঠা ঠা ঠা ঠা ঠা! বটে? আপনার মোবাইল, আপনার মানিব্যাগ, এসব ফেলে সে নিয়ে গেলো আপনার স্কার্ফ? এটা কি বিশ্বাসযোগ্য কথা?"
মন্টু বলে, "তাহলে মনে হয় স্যার পরে এটা কোনভাবে খোয়া গেছে!"
ঝাকানাকা বলেন, "খোয়া যায়নি জনাব লিওনার্দো। ওটা আপনি নিজেই জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ হাপিস করার জন্য। কারণ ঐ স্কার্ফে ক্লোরোফর্ম ঢেলেই আপনি জনাব মকবুলের নাকে মুখে ঠেসে ধরে অজ্ঞান করেছিলেন!"
মকবুল মনসবদার চমকে উঠে মন্টু লিওনার্দোর দিকে ফেরেন! "বটে?" গর্জে ওঠেন তিনি। "মিল্টন নয়, এই ব্যাটা লিওনার্দোই আমাকে বেহুঁশ করে চারটা দিন নষ্ট করলো? আমার ব্যবসা ...!"
ঝাকানাকা গর্জে ওঠেন। "চোপ! কোন কথা নয়! ... আপনি বলুন, জনাব মনসবদার, আপনার টুপিটা কোথায়?"
মকবুল মনসবদারের মুখ ফ্যাকাসে হয়ে যায়, তিনি বলেন, "টুপি? আমার আবার কীসের টুপি?"
ঝাকানাকা ভুরু নাচিয়ে হাসেন। "যে টুপির কথা হুঁশিয়ার খান আমাকে জানিয়েছে! আপনার মাথায় টুপি ছিলো! কিন্তু রেলের কামরায় সেটা মেলেনি, হাসপাতালেও আপনার মাথায় টুপি দেখেনি কেউ! টুপিটা কোথায় মকবুল?"
মকবুল মনসবদার হাউমাউ করে ওঠেন, "জানি না স্যার, এই মন্টু সেটা কোথায় গাপ করেছে, আমি কিভাবে বলবো?"
ঝাকানাকা বললেন, "মন্টু সেটা গাপ করেনি। টুপিটা আপনি নিজেই জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছিলেন, প্রমাণ গায়েব করার জন্য! কারণ ওতেই ক্লোরোফর্ম ঢেলে হুঁশিয়ার খানের মুখে ঠেসে ধরেছিলেন আপনি!"
মকবুল মনসবদার চেয়ারে এলিয়ে পড়েন একদম, আর হুঁশিয়ার খান লাফিয়ে ওঠে, "ব্যাটা উল্লুক, আজ যদি তোকে পেঁদিয়ে ...!"
"চোপরাও!" গর্জে ওঠেন ঝাকানাকা। "কথা শেষ হয়নি আমার। ... মকবুল মনসবদার, আপনার দাড়ি কই?"
মকবুল মনসবদার ফ্যাকাসে মুখে বললেন, "কীসের দাড়ি?"
ঝাকানাকা বললেন, "অজ্ঞান হয়ে দু'দিন পড়েছিলেন হাসপাতালে। হুঁশিয়ার খানের মুখে দাড়ি গজিয়েছে একগাদা, আর মন্টুর মুখে তো দাড়ি আছেই। আপনার মুখে দাড়ি নেই কেন?"
মকবুল মনসবদার আমতা আমতা করে বললেন, "হাতের পাঁচ আঙুল কি সমান স্যার? সবার মুখে কি আর দাড়ি গজায় এতো জলদি?"
ঝাকানাকা ক্রুর হেসে বললেন, "তা ঠিক। সবার মুখে এতো জলদি দাড়ি গজায় না। মেয়েদের মুখে তো আরও গজায় না!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "মেয়ে? কী বলছেন স্যার? মকবুল মনসবদার মেয়ে?"
ঝাকানাকা বললেন, "শুধু মেয়েই নয়, রীতিমতো প্রেগন্যান্ট মহিলা! কেমিক্যাল আলির টেস্টে এবারও প্রেগন্যান্সি পজিটিভ এসেছে!"
কিংকু চৌধারি আর মন্টু লিওনার্দো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে মকবুল মনসবদারের দিকে, আর হুঁশিয়ার খান মুঠো পাকায়, "বেটি উল্লুক, পেঁদিয়ে তোর ছাল যদি না ছাড়াই ...!"
ঝাকানাকা বললেন, "খবরদার হুঁশিয়ার, গর্ভবতী মহিলার গায়ে হাত তুললে তোমার হাত ভেঙে দেয়া হবে! আর মকবুল মনসবদার ... নাকি ইসমৎ জঙ্গ বেহুঁশিয়াই বলবো? তোমার মোবাইলে যেসব খাইষ্টা খাইষ্টা এসএমএস এসে জমা হয়েছে গত তিনদিনে, সেগুলোই তোমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে! গতরাতে তোমার মোবাইল ঘাঁটতে গিয়ে দেখি বাহান্নটা এসএমএস জমা হয়েছে! মোট একুশ জন এসএমএস পাঠিয়েছে, তার মধ্যে বারোজন নিশ্চিত যে বাচ্চাটা আসলে তার! তুমি শুধু অজ্ঞান পার্টির চাঁই-ই নও, বেশ দুষ্টু মহিলাও বটে!"
মকবুল মনসবদার দু'হাতে মুখ ঢাকে, মন্টু লিওনার্দো মনোযোগ দিয়ে তাকে এপাশ ওপাশ থেকে দেখে।
"আর মন্টু লিওনার্দো, ওরফে শ্রীচৈতন্য!" হাঁক দেন ঝাকানাকা। "তুমিও ধরা পড়েছো একেবারে হাতে নাতে। গাঁজার কল্কিতে আর দুধের বোতল তোমার হাতের ছাপ মিলে গেছে আগের নমুনার সাথে!"
কিংকু চৌধারি দাঁত কিড়মিড় করলেন, "বটে?"
ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ! হুঁশিয়ার খানের কাছে যে ডলারের প্লেট আছে, এ খবর জানাজানি হয়ে যায় কোনভাবে। ইসমৎ জঙ্গ বেহুঁশিয়া আর শ্রীচৈতন্য, দু'জনেই ছদ্মবেশে অনুসরণ করে তাকে। রেলের কামরায় সেদিন আলো চলে যায়নি, সীটের হাতলে একটা সুইচ থাকে, সেটা টিপে বন্ধ করে দেয়া যায়। কথাবার্তার এক ফাঁকে আলো নিবিয়ে টুপিতে ক্লোরোফর্ম ঢেলে হুঁশিয়ার খানকে বেহুঁশ করে ইসমৎ। তারপর তার পকেট থেকে প্লেটদু'টো বার করে নিয়ে নিজের পকেটে পোরে। তারপর ক্লোরোফর্মের বোতল আর টুপিটা জানালা দিয়ে বাইরে ফেলে দেয়। কিন্তু ইসমৎ জানে না যে মন্টু লিওনার্দো ওরফে শ্রীচৈতন্যও একই মতলবে ছিলো, ক্লোরোফর্মের গন্ধে পেয়ে সে ঠিকই আঁচ করে ফেলে কী হচ্ছে। আলো ফিরে আসার পর সে দেখে হুঁশিয়ার খান বেহুঁশ। মন্টুর পাশে বসা মিল্টন ওরফে বদরু, সে যে এ কাজ করেনি, তা মন্টু টের পায়। কাজেই একটু পর সে নিজে আলো নিবিয়ে স্কার্ফে ক্লোরোফর্ম ঢেলে চেপে ধরে মকবুল ওরফে ইসমৎ জঙ্গের নাকে। তারপর প্লেট দু'টো হাতড়ে বার করে নিয়ে নিজের পকেটে পোরে, ক্লোরোফর্মের বোতল আর স্কার্ফটা ছুঁড়ে ফেলে দেয় জানালার বাইরে। কিন্তু শ্রীচৈতন্য জানে না যা খোদ বদরু খাঁ তার ডলারের প্লেট উদ্ধার করার জন্য মিল্টন টেকনাফি সেজে এসে বসে আছে। আর বাদামও সন্দেহ করেনি মন্টু, কারণ বাদামগুলো বদরু খাঁ নিজেই চিবিয়ে খাচ্ছে একের পর এক। তাই নিশ্চিন্ত মনে একটা হাত সাফাই করা বাদাম মুখ দিতেই শ্রীচৈতন্য একেবারে অচৈতন্য হয়ে পড়ে! বদরু খাঁ প্লেট দু'টো নিজের পকেটে পোরে, তারপর একে একে বাকিদের পকেট সার্চ করে, ওরকম দামী কিছু না পেয়ে জিনিসগুলো হাঁটকে মাটকে মেঝেতে ফেলে যায়। যাবার সময় শুধু মশকরা করার জন্য হুঁশিয়ার খানের মোবাইলের সিম কার্ড খুলে নিয়ে যায়!"
কিংকু চৌধারি বলেন, "কিন্তু ... তাহলে বাকি জিনিসগুলিতে বদরু খাঁ-র হাতের ছাপ পাওয়া গেলো না কেন স্যার?"
ঝাকানাকা বললেন, "ওগুলো ধরার আগে সে নিশ্চয়ই দস্তানা এঁটে নিয়েছিলো! শুধু সন্দেহ জাগাতে চায়নি বলে একমাত্র বাদামের খোসাতেই তার হাতের ছাপ আছে।"
কিংকু চৌধারি বিগলিত হয়ে বলেন, "স্যার, আপনি বদরুকে সন্দেহ করলেন কখন?"
ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বললেন, "শুরু থেকেই! তার ডলারের প্লেট পুলিশের কাছ থেকে ওভাবে লুট করা তো তাকেই মানায়, নাকি? এই ইসমৎ জঙ্গ আর শ্রীচৈতন্য হচ্ছে পরিস্থিতির শিকার মাত্র! বদরু খাঁর কাছে তো এরা সেদিনের শিশু!"
হুঁশিয়ার খান একটা কিছু বলতে যাবে, ঝাকানাকা তাকে সোজা দরজা দেখিয়ে দেন। "যাও, বেরোও! ব্যাটা অপদার্থ, কাজের সময় ঢুঁঢুঁ, এখন আবার কথা বলে!"
হুঁশিয়ার খান মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। সেপাই এসে মকবুল আর মন্টুকে লকাপে পোরে।
কিংকু চৌধারি বিষণ্ন গলায় বলেন, "কিন্তু ডলারের প্লেট দু'টো তো স্যার আর ফেরত পাওয়া যাবে না!"
ঝাকানাকা হাসিমুখে নিচু গলায় বললেন, "ওগুলো ফেরত না পেলেও সমস্যা নেই। ওগুলো আসল নকল প্লেট নয়!"
কিংকু চৌধারি চমকে ওঠেন, "এ কী বলছেন স্যার? ওগুলো নকল নকল প্লেট? আসল নকল প্লেট তবে কোথায়?"
ঝাকানাকা বললেন, "আসল নকল প্লেট তৎক্ষণাৎ নষ্ট করে ফেলা হয়েছে। বদরু খাঁকে ফাঁদে ফেলার জন্যে এক জোড়া নকল প্লেট পাঠানো হয়েছিলো হুঁশিয়ার খানের কাছে, সুপার সাহেবকে এই পরার্শ আমিই দিয়েছিলাম। বদরুর কাছে এখন যে প্লেট আছে, তাতে বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিনের বদলে ইদি আমীনের ছবি আছে!"
কিংকু চৌধারি হেসে ওঠেন, "মুহাহাহাহাহাহা! দারুণ হয়েছে স্যার! বদরু সময়মতো আচ্ছা ধরা খাবে! ... এখন আপনি যদি আপত্তি না করেন স্যার, আমি ঔ মন্টু লিওনার্দো ওরফে শ্রীচৈতন্যের পাছায় কয়েক ঘা বেত লাগাতে চাই। বহুত ভুগিয়েছে দু'জনে! মহিলাকে তো আর পেটানো যাবে না, মন্টুকেই একটু রগড়ে দিই!"
ঝাকানাকা উদাস গলায় বলেন, "দিন, আমার কী?"
কিংকু চৌধারি হাঁক পাড়েন, "অ্যাই কে আছিস, ঐ টিঙটিঙেটাকে নিয়ায় দেখি! ওর দুধ খাওয়ার ব্যামো সারিয়ে দিচ্ছি!"
ঝাকানাকা চেয়ারে হেলান দিয়ে গুনগুনিয়ে গান ধরেন চায়ের কাপ হাতে।
"তুউউউউই মার খা ... ইচ্ছেমতোওওও
পুলিশকে খুশি করে বাঁচ!
ঝাকানাকা তখন অন্য কোথাও চায়ের কাপেএএএএ
নিজের সাম্রাজ্য নিজে গড়ুউউউক ...!"
দ্রষ্টব্য ১ এ নিয়েও গল্প আসবে সামনে। রয়েসয়ে।
.
.
.
গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too
(সমাপ্ত)
[/justify]
মন্তব্য
হা..হা...হা..।
দেখা যাক,রহস্য গল্প না রস গল্প হচ্ছে ।
তবে ১ম পর্বে ই বাজিমাত।
এককথায় দারুণ।
বরাবরের মতই ঝাকানাকা
মাইচ্চে রে............কেমিক্যাল আলী দেখি আবার মন্তব্য দেয়!!!
ও হিমু বাবা, বাকিটা কখন আইবো?
কি মাঝি? ডরাইলা?
সেই রকম হইছে, খুবি ভাল্লাগ্লো।
- গোপস
"তারা মোটেও অজ্ঞান পার্টি নয়, বরং পার্টি বলতে অজ্ঞান"--bohudin pore back korlen!
ভালো হচ্ছে। চালিয়ে যান। বেশী দেরি কইরেননা দয়া করে।
রায়হান আবীর
হিমু ভাইয়ের চরিত্র!!
সিরিজ এখানেই শেষ
তুমুল হচ্ছে, বেশী দেরী করাইয়েন না হিমু।
পরেরটা ছাড়েন।
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
- নেক্সট চাই নেক্সট!!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
তাড়াতাড়ি বস্, তাড়াতাড়ি...
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
পরের পর্ব জলদি প্লিজ।।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
কাহিনী এই পোস্টই এগুবে। আরো কিছুদূর দিলাম। দেখি পারলে শেষ করে দেবো আজই।
রহস্যগল্পের পাঠকপাঠিকা দেখলে ইচ্ছা করে বুকে জাবড়ে ধরে কোলাকুলি করি ...। আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
যাবতীয় রহস্যগল্প-উপন্যাসের প্রতি আমার এক ধরনের উদাসীনতা আছে। ফলে আপনার সাথে কোলাকুলি করার ঝক্কি এড়ানোর সম্ভাবনা আমার উজ্জ্বল
তবে আপনার সব লেখাই পড়ি সোত্সাহে।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনার তো গোলাবারুদ সব ভাঁড়ারে পড়ে আছে। কিছু গোলন্দাজি করুন না!
হাঁটুপানির জলদস্যু
কই এলো না তো?
চুপচাপ পড়েছি। আজ ৫ দিয়ে গেলাম।
---------
অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা। (সুইস প্রবাদ)
------------
...অনেক সময় নীরবতা
বলে দেয় অনেক কথা...
সেরম রে ভাই... সেরম!
আপনার কিন্তু "আসবে" বলে না আসার রেকর্ড আছে।
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
আসন বিন্যাসের পর আর কোন খবরই নাই। নাহ্.....হিমুটা আর মানুষ হইলো না !
কি মাঝি? ডরাইলা?
হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা হা ...............................
আমিও একটা গান শুনছিলাম ট্রেনের কামরায়। গানের কথাগুলো অনেকটা এইরকম —
" হিমু গল্প লেখ ইচ্ছেমতো, পাঠককে খুশী করে বাঁচ।"
কি মাঝি? ডরাইলা?
অবশেষে শেষ হলো। আবার শুরু থেকে পড়তে অনুরোধ করি সকলকে। ধন্যবাদ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
জটিল! এমন রসে ভরা রহস্য কাহিনী সত্যি এক নতুন আইডিয়া। ঝাকানাকার এই সিরিজটা যেন আরো লম্বা হয় এবং বই আকারে বের হয়।
প্রিয় উদাস, ঝাকানাকার আরো কিছু গল্প সচলায়তনে আছে, একটু পেছনের দিকে। আগ্রহ থাকলে পড়ে দেখতে পারেন। সিরিজ আশা রাখি সামনে বাড়বে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
- যা শেষ করলাম।
কিন্তু লেখাটা আবার সব রেকর্ড শুদ্ধা সামনে আসলো কেমনে?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
বেসম্ভব রকম ভাল হয়েছে!
যাউক , শেষ পর্যন্ত শেষ হইলো ।
আসুন আমরা সবাই মিলে এই খুশীতে গান ধরি :
"তুউউউউই মার খা ... ইচ্ছেমতোওওও
পুলিশকে খুশি করে বাঁচ!
ঝাকানাকা তখন অন্য কোথাও চায়ের কাপেএএএএ
নিজের সাম্রাজ্য নিজে গড়ুউউউক ...!"
ব্যাপার কী? অনলাইন ছেড়ে অফলাইনে কেন? লাইনে আসেন। কোনদিন দেখবেন গোয়েন্দা ঝাকানাকা ও আরিফ জেবতিক অফলাইন রহস্য নেমে গেছে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
অসাধারণের উপরে।
হাসতে হাসতে লুটোপুটি।
অতন্দ্র প্রহরী
আফসোস, ঝাকানাকা'র স্রষ্টা জনপ্রিয়তা প্রত্যাশী নন। তাই অখাদ্য কিছু 'কাক্কু সিরিজ' বাজার মাত করে।
এ বিষয়ে আমি ঠিক করেছি হিমু ভাইকে ক্রমাগত গুতিয়ে যাবো। শুধু তাঁর একার প্রত্যাশা দিয়ে তো হবে না, আমাদেরও কিছু প্রত্যাশা আছে। আমার মতে গত ১০/১৫ বছরের ইতিহাসে হিমু ভাইয়ের রম্য বাংলাদেশের বেস্ট। বেস্ট এ কারণে যে উনার রম্যে রস আর উইটিনেস দু'টোই আছে। সাম্প্রতিক কালের রম্যে রস থাকলে উইটিনেস থাকে না, উইটিনেস থাকলে রস থাকে না।
ক্যান মিছামিছি লজ্জা দেয়ার চেষ্টা করো ভাই? জানোই তো আমার লজ্জাশরম কম!
হাঁটুপানির জলদস্যু
দেখেন হিমু ভাই, অত কথা বুঝি না। বান মাছের মত শরীর মোচড়ানো এই বেলা বাদ দেন। একটা এসপার-ওসপার করে তবে কথা চালাচালি। ঠিক করে বলেন, ঝাকানাকা পুস্তাকারে পাবো না পাবো না?
জনৈক পথচারী বই বিক্রেতা শিশুর সাথে জোর দর কষাকষি চলছে। আমি হিসাব করে দেখলাম যে আমার বই ট্রাফিক জ্যাম ছাড়া অন্য কোথাও বিক্রি হবে না। আর পিচ্চি হিসাব করে বলছে যে ওর যা শিডিউল তাতে ২০১৪র আগে আমাকে সময় দিতে পারবে না। কাজেই একটু তিষ্টাতে হবে আর কি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বুঝছি।
২০০৯ টার্গেট।
হবে।
বলেন শুকুর আলহামদুলিল্লাহ।
এ বড় পিছলা মাছ। একা পারবেন না। আমিও আছি। ছাই-চাপা দিয়ে ধরতে হবে।
ইদানিং তো রম্যলেখক দেখাই যায়না ,,, বাঙালীর রম্যবোধ কম নাকি বাংলা ভাষা কৌতুকবান্ধব না, বলা কঠিন ,,,, তবে হিমুকে নিয়ে আশা দেখছি ,,, রম্যলেখকদের শূণ্যতা খুব ভালোভাবেই পূরণ হবে ,,, আমার হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে ,,, অনেকদিন এমন হাসিনাই, তাও অফিসের কিউবিকলে বইসা হাসছি
শুধু এ্যামনেস্টি/জাতিসংঘের প্রসঙ্গটা একটু বেমানান মনে হয়েছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে
পুরোটা পড়ার লোভ সামলাইতে না পাইরা আপিসের কামে ফাঁকি দিয়া পইড়া শেষ করছি
খুবই ভালো হইছে লেখাটা, হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরে গেছে
আমি ৫ এর মধ্যে ৬ দিলাম
কল্পনা আক্তার
...........................................................
সব মানুষ নিজের জন্য বাঁচেনা
এক কথায় দুর্দান্ত। রহস্যগল্প আর রস গল্পের দারুণ সমন্বয়! পড়ে মন ভাল হয়ে যায়।
আরও ঘন ঘন এই সিরিজের লেখা পড়তে চাই।
ধন্যবাদ।
বরাবরের মত বেশি জোস !
- খেকশিয়াল
পাঠকপাঠিকাদের অসংখ্য ধন্যবাদ। লেখা সার্থক হলো আপনাদের ভালো লাগার কথা জেনে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
পাঁচের বেশি রেটিং দেয়া যায় না, এইটাই যা দুঃখ! জটিলস হইছে।
গল্প তো অনেকগুলা হয়ে গেলো, সব একসাথে করে নেক্সট বইমেলায়..., কি বলেন?
*
গানটা কিন্তু বুনো-র না, অর্ণবের।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
বুনো এলো কোত্থেকে ?
দেখি, ২০১৪র একুশে বইমেলাতে কিছু করা যায় কি না।
হাঁটুপানির জলদস্যু
থুক্কু, ঠিক করে লিখি-
গানটা ঝুনো-র না, তান্ডব-এর।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
ওরে পুরা ঝাকানাকা!
দুর্দান্ত!
তোর কেলোমুখে ফুলচন্দন পড়ুক।
তোর জন্য অনেক অনেক শুভ কামনা।
তুউউউউউই কামড়া...ইচ্ছেমতো...বালিকাদের খুশি করে বাঁচ!
ভাল আছি, ভাল থেকো।
ভাল আছি, ভাল থেকো।
"স্যার, আমার ধারণা এই গানটা বড়দের। ইট'স ড়্যাদার ফিশি স্যার! এই গল্পে স্যার এই গানের স্থান হতে পারে না!"
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
মুহাহাহাহাহা!...
(বিপ্লব) টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি।।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
জটিল হয়েছে।
তেরে বিন ঝাঁকা-নাকা .........
আমাদের খুশি করে বাচ.........
আমাগি ইরাদ ছিদ্র-কী এর আম্মাজান নাতো?
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
(৬৬৯৬)
এর মানে কী ?
নতুন মন্তব্য করুন