নানা কারণে মন মেজাজ খারাপ থাকার কথা হলেও ততটা খারাপ নেই। প্রথমত, কমলার খোসা ছাড়িয়ে মুখে একটা কোয়া দিয়ে দেখি সেটার স্বাদ অবিকল কাঁঠালের মতো! হাসতে হাসতে বিষম খাচ্ছিলাম আরেকটু হলেই। জার্মানীতে এসে অবধি নপুংসক কমলা খাচ্ছি, আজকের কমলায় দেখলাম শয়ে শয়ে বিচি। কাঁঠাল আমার প্রিয় ফল নয়, কাঁঠাল বা কাঁঠালপাতার অনুরাগীদেরও আমি সন্দেহের চোখে দেখি, তবু কমলায় কাঁঠালের স্বাদ পেয়ে একে কোন আসমানী মোজেজা বলেই মনে হচ্ছে।
মৌখিক পরীক্ষা দিয়ে এলাম একটা। পরীক্ষক দু'জনেই বড় অমায়িক, নিচু গলায় খুব স্নেহের সাথে কথা বলেন, শেষ প্রশ্নটা বাদে বাকি সবগুলোর সন্তোষজনক উত্তর দিতে পারলাম। গতকাল থেকে এই পরীক্ষার জন্যে প্রস্তুতি নিতে বসেছি, প্রায় হাজারখানেক পৃষ্ঠা বসে বসে পড়তে হয়েছে (এর মধ্যে নয়শোর ওপর হয়তো শুধু চোখ বুলিয়ে গিয়েছি) কাল থেকে। এই কোর্স পরিচালিত হচ্ছে একটি বিশেষ প্রোগ্রামের আওতায়, সেটার ওয়েবসাইট থেকে যাবতীয় নোটস নামিয়ে নিয়ে পড়ার কথা সবার। ডাউনলোড করতে গিয়ে ঘেমে গেলাম কাল সারাটা দিন আর রাত। শেষ কয়েক কিলোবাইট আর ডাউনলোড হয় না, আটকে বসে থাকে। শেষে আজ সকালে সুমন চৌধুরীর বাড়ি গিয়ে সেখানে বসে বাকি ফাইলগুলি নামিয়ে এনে পড়তে হলো। এই যে পদে পদে অন্যায় ভালোবাসা গ্রহণ করতে হচ্ছে খিড়কি দরজা দিয়ে, এ-ই কি আমার প্রাপ্য? মনে মনে ভাগ্যের মা-কে ভালোবেসে আজকে দুপুরবেলা বড় কষ্টে প্রস্তুতি নেয়া শেষ করেছি। প্রফেসর রোরিগ আর লাঙ্গের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসার সময় শুনলাম আমার প্রেজেন্টেশেন ২,৩ পেয়েছি, শুনে মনটা একটু খারাপই হলো। তবে মৌখিক পরীক্ষা ভালো হওয়ার আনন্দে আর তেমন গা করলাম না। উপস্থাপন আর মৌখিক পরীক্ষায় আধাআধি নাম্বার, কাজেই হয়তো টেনেটুনে ১,৭ এ উঠে যাবো।
জার্মানীতে গ্রেড দেয়ার পদ্ধতি আমাদের ঠিক উল্টো। তার আগে আরো একটা উল্টো জিনিসের ফিরিস্তি দিয়ে রাখি। ইয়োরোপে কমা আর দশমিকের ব্যবহার উল্টো, অর্থাৎ আমরা পাঁচ হাজার আটশো দুই দশমিক পাঁচ তিনকে লিখি ৫,৮০২.৫৩, আর এখানে লেখা হয় ৫.৮০২,৫৩। এখানে সবচেয়ে ভালো গ্রেড হচ্ছে ১,০, তারপর ১,৩, তারপর ১,৭, তারপর ২.০, তারপর ২,৩ ... এভাবে। সাধারণত ৯৫% এর বেশি পেলে ১,০ দেয়া হয়, তবে এর বিন্যাসও একেক প্রফেসরের কাছে একেক রকম, যেমন গেলো পরীক্ষায় প্রফেসর হায়ারের কাছে ১,০ মানে ১০০%। কিছু কিছু পরীক্ষায় অনেক সময় পাশ-ফেল নিয়েই এক সঙ্কট থাকে (৬০% এর কম পেলে ফেল), সেক্ষেত্রে সেই পরীক্ষায় পূর্ববর্তী ফলাফলের পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে গ্রেড নির্ধারণ করা হয়। কোন কোর্সে গণহারে বেশিরভাগ ছাত্র ফেল করলে ছাত্ররা গিয়ে পরীক্ষানিয়ন্ত্রণ দপ্তরে নালিশ ঠুকে দেয়, তখন প্রশ্নকর্তাকে সেই পরীক্ষা নিজে বসে দিতে হয়। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে শুনেছি আইন আছে, কোন প্রফেসর নিজে যদি ৪০ মিনিটের মধ্যে নিজের করা প্রশ্ন সবক'টার সঠিক উত্তর দিতে না পারেন, তাহলে পরীক্ষা বাতিল হয়, আবার নতুন করে প্রশ্ন করতে হয়।
সোমবার থেকে একটা সিম্যুলেশন প্রোগ্রামের ওপর কোর্স চলছে, সেটা পরপর দু'দিন বাং মেরেছি। আজকে সেই কোর্সের এক পরিচালকের ঘরে গিয়েছি এক কাজে, সে আমাকে দেখে লাফিয়ে উঠলো, ব্যাপার কী, আমি থাকি কই, কোর্সে নাম লিখিয়ে করছি না কেন? তাকে আমার দুঃখের কাহিনী বিস্তারিত বর্ণনা করলাম, আশ্বাস দিলাম যে আগামীকাল থেকেই সহিসালামতে শুরু করে দেবো। সে আমাকে কয়েকটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে হাঁকিয়ে দিলো। তার সহকর্মিনীরা অবশ্য অনেক দয়ালু ও মিষ্টি, তারা বাকি কাজ শেষ করে দিয়ে পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের উষ্ণ শুভাশিস জানিয়ে বিদায় দিলো।
পরীক্ষানিয়ন্ত্রণ দপ্তরে একটা ঝামেলা পাকিয়ে এসেছি, সেটার জন্যে একটা দরখাস্ত দিতে হবে কাল। প্রফেসর শ্মিডের কাছেও দুইটা বড় বড় মৌখিক পরীক্ষা দিতে হবে, সেজন্যে গিয়ে নাম লেখাতে হবে। কিচ্ছু করা হয়নি, একের পর এক কাজ জমছে কেবল। বহুদিন পরে আবার থার্মোডাইনামিক্স পড়তে হচ্ছে, অনেক কিছু ভুলে গিয়েছিলাম, একেবারে রগে রগে গিয়ে ঘা খেতে হচ্ছে আবার।
কাসেলে ঠান্ডা এখন একটা মশকরার পর্যায়ে রূপ নিয়েছে, আবহাওয়ার পূর্বাভাস বলছে দুপুরে তাপমাত্রা একে নামবে, তার প্রস্তুতি নিয়ে ঘর ছাড়লে একটু পরেই ঘেমেচুরে শেষ হয়ে যাবার যোগাড়। আবার অবিশ্বাসী হয়ে শুধু সোয়েটার পরে বেরোলে দাঁতে দাঁত বাড়ি খায়।
মার্চ মাস থেকে শুরু হচ্ছে কলিজা কাঁপানো একেকটা পরীক্ষা, বিশেষ করে বিয়োমাসে, অর্থাৎ জৈববস্তু। হাজার খানেক চার্ট আর গ্রাফ জমে আছে ফাইলে। সেদিন দুই সহপাঠীকে পাকড়াও করে বললাম, তোমরা একটা বুদ্ধি দাও, কিভাবে এই গু-টাকে ম্যানেজ করা যায়? (জার্মান শাইসে মানে গু, তবে এর ব্যবহারকে মোটামুটি অভদ্র হিসেবে ধরা হয়, অনেকটা আমাদের কথ্য গুপ্তকেশের মতো। সেদিন আমাদের এক সহপাঠী প্রেজেন্টেশনের সময় মাঝপথে খেই হারিয়ে ফেলে বিড়বিড় করে শাইসে বলে ফেলায় প্রফেসর প্রিস ঘ্যাঁচ করে তার নাম্বার কেটে দিয়েছেন) একজন গম্ভীর হয়ে বললো, আমি এই গুয়ের ওপর থিসিস করেছি। সেই অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে পারি, আমাদের সবার কপালে দুঃখ আছে। এ আর কিছু নয়, শুধু গু!
মন্তব্য
কমলার স্বাদ কাঁঠালের মত ! মুখা থাকলে একটা খারাপ কথা বলতে পার্তো
কি মাঝি? ডরাইলা?
বাংলাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে এই নিয়ম জারী করার জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারকে অনুরোধ জানাই।
রায়হান আবীর
আপনে উদ্দোগ নেন। আমি আছি আপ্নার পেছন পেছন
___________________________
"LOVE ME... IF YOU CAN"
কমলার বিচি ফালায় কামনে এইটা এখনো বুঝতারলাম না।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
কমলার (!!) বিচি নাকি ডিম?
কি মাঝি? ডরাইলা?
না খাসি কমলা।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
আসেন আমরা ভালো কথা বলি, তা না হলে মডু হিমু বকবে ।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ভূতোদা, হীরা কতো নিলে শুনি?
হাঁটুপানির জলদস্যু
সময় কি আছে যে গুনি?
কি মাঝি? ডরাইলা?
- হে পাপিষ্ঠরা!!!
তোমাদের আলাপে কি প্রাধাণ্য পায়নি যোনী?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কেনো যে অশ্লীল কথা (!!??) শুনি!!!
*******দিনমজুর**********
ভালো................
আহারে....
বেচারা
নয়শো পাতা........
রশ্ময় আঙ্কেলের পুস্তক হৈলে অবশ্য একটুও টায়ার্ড লাগ্তোনা
___________________________
"LOVE ME... IF YOU CAN"
মিষ্টি? কি রকম মিষ্টি? কমলার মতো না কাঁঠালের মতো?
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
প্রিয় বিপ্লব রহমান,
চোখে দেখে মিষ্টি মনে হয়েছিলো, চেখে দেখার সুযোগ এখনো হয়নি। সুযোগ ঘটলে আপনাকে টেলিগ্রাম করে জানাবো স্বাদের রকমফের। তার আগ পর্যন্ত মেওয়া ফলিয়ে যান।
ইতি
আপনার গুণমুগ্ধ
হাঁটুপানির জলদস্যু
বায়োমাস নিয়ে কি করতে চাচ্ছেন? কখন?
দাদাগো, বায়োমাস নিয়া চক্ষে আন্ধার দেখতে আছি! জিনিসটা আমার একেবারেই পছন্দ না, বিশেষ করে রসায়ন আমার দুই চোখের বিষ। বাধ্যতামূলক কোর্স বলে কোনমতে টেনেটুনে পাশ করার জন্যে পড়ছি। এ জিনিসটা নিয়ে জার্মানী দারুণ কাজ করছে, নতুন রিয়্যাকটর ডিজাইন নিয়ে বেশ কিছু প্রজেক্ট চলছে ইতিমধ্যে। আমার আগ্রহ মূলত সৌরতাপ আর বায়ুশক্তি নিয়ে।
বাংলাদেশে বায়োম্যাসের বেশ ভালো সম্ভাবনা আছে, কিন্তু জমিতে নিউট্রিয়েন্ট ব্যালান্সের ব্যাপারটা নিয়ে আগে কাজ করতে হবে। জার্মানীতে যেমন নিউট্রিয়েন্ট ব্যালান্স নিয়ে কঠোর সব নীতিমালা আছে, সেগুলো কৃষকদের অনুসরণ করতে হয়।
হাঁটুপানির জলদস্যু
কেম্নে কি?
নতুন মন্তব্য করুন