• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

গল্প লেখা

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: রবি, ২৪/০২/২০০৮ - ৬:১৩পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

কী যেন একটা লিখতে চাইছিলাম, এমনই মনে হয় ভোরে ঘুম ভেঙে উঠে। নিজের ভেতরটাকে বাইরের অন্ধকারের মতোই নিকষ মনে হয়, কী যেন পড়তে চাই নিজের মনের মধ্যেই, কোন অক্ষর মেলে না। বুকের ভেতর চেপে বসা নিরক্ষর শূন্যতা নিয়ে ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে পড়ি কম্বলের নিচের গরমটুকু সম্বল করে।

ছুটির দিন বলেই ঘড়িটাকে চড়িয়ে রেখেছিলাম বেলা দশটার দিকে। ঘড়িটা বোকাসোকা, ব্যাটারি পেয়ে খুশি, কখনো কাজে ফাঁকি দেয় না, দশটা বাজেই সে মুখ খোলে বিশ্বস্ত ঘোড়ার মতো। ওর চেয়ে উপকারী বন্ধু আমার ঘরে আর কিছু নেই, তবুও গিয়ে একটা থাবা বাড়িয়ে দিই ভালুকের মতো। চড় খেয়ে চুপ করে যায় ঘড়িটা, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোর মতোই। আমি বিছানায় বসে তাকিয়ে থাকি ওর দিকে। এখনও কি সময় হয়নি, এতো চড় খাবার পরও? আমারও কি চুপ করে যাবার সময় হয়নি?

টয়লেটে ঠান্ডা পানির ঝাপটা চোখে দিতেই মনে পড়ে, কী লিখতে চাইছিলাম। একটা গল্প। বেশ ফাঁদালো করে। রসিয়ে রসিয়ে অনেক কথা বলতে চাই ঐ গল্পটাতে।

আয়নায় তাকিয়ে দেখি একটা বেণী পাকানো ক্লান্তিকে। গল্পটা আমি চাইলেও এখন আর কাগজেকলমে লিখতে পারবো না। ওভাবে লিখি না বহুদিন ধরে। লিখতে চাইলে এখন কম্পিউটারের সামনে বসতে হবে। কম্পিউটার খুললে আর আমার গল্প লেখা হবে না।

এক টুকরো রুটির ওপরে মধু মাখাতে মাখাতে মনে হলো, গল্পটা যেভাবে লিখতে চাইছি, সেভাবে না লিখলেও চলে। মনে মনেও লেখা যায়, ইচ্ছে করলেই।

চরিত্রগুলো এক লাফে চলে আসে তখন দ্বিতীয় পাঁউরুটির টুকরোটার ওপরে। সবাই অনেক চেনা, কয়েকজনকে চিনি বলে জানতাম, কিন্তু তারা ঠিক চেনা নয়। দুয়েকজনকে চিনি না একদমই, ওরা আমার হাতের পুতুল। আমি ইচ্ছে মতো ওদের টুপির নিচে শিং আর পাৎলুনের নিচে লেজ বসিয়ে দিতে পারি, ওরা Zানতি পারবে না। আমি হাসিমুখে ওদের সরিয়ে দিয়ে পাঁউরুটির টুকরোটাকে বসিয়ে দিই প্রথম টুকরোটার ওপর।

আজকে বাতাসে পরিষ্কার বসন্তের প্রতিশ্রুতি ভেসে বেড়াচ্ছে, বিভিন্ন রং আর আকারের পাখি নেচে বেড়াচ্ছে সামনের ন্যাড়া হয়ে যাওয়া গাছটায়। সেদিকে তাকিয়ে আমি স্যান্ডউইচ চিবাতে থাকি গরুর মতো করে। মনে পড়ে, গল্পটায় আমিও একজন চরিত্র। কিভাবে লিখি?

শরীর থেকে বেরিয়ে একবার তাকাই নিজের দিকে। একটা লোক, হাফপ্যান্ট পরা, লাল একটা গেঞ্জি পরা, সে মন দিয়ে চোখ বুঁজে মধুর স্যান্ডউইচ খাচ্ছে। গল্পের লোকটা মোটেও এমন ছিলো না। হতাশ হয়ে ফিরে আসি শরীরে আবার। গল্পের আমিটা অন্যরকম, অনেক অন্যরকম।

চায়ের পানি চড়িয়ে টেবিলের ওপর জমে থাকা পিৎজার বাক্সগুলোকে একপাশে ঠেলে সরিয়ে বসি আলগোছে। রান্না করতে বড় আলসেমি লাগে মাঝে মাঝে, তখন পিৎজাই বিপদে বড় বন্ধু। দেয়ালে হেলান দিয়ে ভাবি, গল্পের আমিটার কথা কি আমার আসলেই মনে আছে?

অন্যদিন পানি গরম করার কেটলিটা সময়মতো পানি ফোটার আগেই ফটাস করে বন্ধ হয়ে যায়, সস্তার তিন অবস্থা যাকে বলে। আজ দেখলাম সে-ও আড়চোখে আমার দিকে তাকিয়ে মন দিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। খুব ভালো লাগে এই সহযোগিতাটুকু, স্নেহ নিয়ে তাকাই ওর দিকে। সে গ্যাস নেয় একটু, ফোঁস করে সাদা জলকণা বেরিয়ে আসে খানিকটা।

নাকি ফোন করবো ঢাকায়? ফোন করে জিজ্ঞেস করি আমার স্মৃতিমান বন্ধুদের, গল্পের আমিটা আসলে কেমন ছিলো? আমি তো ভুলে গেছি, ওদের নিশ্চয়ই মনে আছে? নাকি ওদেরও এই মনে রাখার জায়গাটুকুতে টান পড়েছে?

কিভাবে জানতে চাওয়া যায়? কেটলি এবার ভোঁসভোঁস করে ধোঁয়া ছাড়ে, আমি কথা গোছানোর চেষ্টা করি। বলতে চাই জ্যারেড ডায়মন্ডের হরাইজন অ্যামনেশিয়ার কথা।

"দিগন্ত বিস্মৃতি বুঝিস? বুঝিস না? বোঝাই, শোন। ধর তুই তোর বাড়ির ছাদে উঠে রোজ হাঁটিস, গত দশ বছর ধরে। এই দশ বছর ধরে তোর সামনের দিগন্ত তো অনেক পাল্টেছে, নাকি?"

কোন জবাব শুনতে পাই না।

"পাল্টেছে। দশ বছর আগে কেমন ছিলো, তোর মনে আছে? কিংবা আট বছর আগে কোন এক দিনে? কিংবা, পাঁচ বছর আগে? শুয়োরের বাচ্চা, এক বছর আগে কেমন ছিলো বলতে পারবি?"

আমি ক্ষেপে উঠি, ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায় কেটলিটা, শব্দ হয়, খট করে।

জবাব না পেয়ে আমার রাগটাও কেটলির মতোই পড়ে যায়। একটু গরম পানি ঢালি বিয়ার খাওয়ার মগটায়। ওতে আর বিয়ার খাই না, চা বানাই। বিয়ারের জন্য পেল্লায় দু'টো গ্লাস আছে।

কেউ শুনতে চায় না দিগন্ত-বিস্মৃতির কথা। সবাই চায় নিজের দিগন্তুটুকু মুখস্থ করে বসে থাকতে। সবাই দাবি করে, প্রত্যেকটা দিনের দিগন্তই সে চেনে জানে। আঁকতে পারলে এখনই এঁকে দেখাতো।

তবুও তর্ক করি। বলি, অত সহজ না। ভুলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি তাই ভুলে গেছি। আমার তোকে মনে আছে। নিজেকে ঠিক ঠাহর করতে পারছি না। কেমন, গল্পের আমিটা কেমন?

চায়ের কাপে ঘুরতে থাকে গল্পের চরিত্রগুলো আবার। ওদের তো মনে আছে স্পষ্ট। যাদের চিনি না তাদেরও আন্দাজে আবছামতো আঁকতে পারবো। আমি, আমি কেমন? গল্পের আমিটা কেমন?

উত্তর খুঁজে না পেয়ে অস্থির লাগে, গিলে ফেলি চা-টুকু ফড়াৎ করে। কেটলিটার দিকে তাকাই একবার, ও কিছু বলে না, চুপ করে থাকে বুদ্ধিমানের মতো।

নাস্তা খেয়ে বসি কম্পিউটার খুলে। গল্পটা লিখতে পারলে বেশ হতো। গল্প লেখার জায়গা তো একটা আছে। গল্প শোনার মানুষও আছে কয়েকজন। এখন শুধু বলতে হবে গুছিয়ে। এ তো আর সত্যি নয়, গল্প।

তা-ও ঠ্যাটামো করতে ছাড়ে না চরিত্রগুলো। একজন এমএসএন মেসেঞ্জারের উইন্ডো হয়ে আসে। চোখ টিপে বলে, "কতদূর?"

বিরক্ত লাগে। অস্ফূটে বলি, "হবে, হবে। একদিন ঠিক লিখবো। লিখে ফেলবো সব কিছু। সব চুৎমারানিদের আমি চিনি। শুধু একটু সময় লাগবে।"

উইন্ডোটা হাসে। বলে, "বটে?"

ইচ্ছা করে ধরে একটা থাবড়া মারি। মারি না অবশ্য। লগ ইন করি ইন্টারনেটে। গল্প লেখার আগে মেইল চেক করা জরুরি।

সুসংবাদ ... দুঃসংবাদ ... দুঃসংবাদ ... আমার কিছু যায় আসে না ... আররে কস কী? ... সুসংবাদ ...

কেমন ছিলাম গল্পের আমিটা? মেইল করবো নাকি একটা? জবাব কি পাবো? সব শালা শুয়োরের বাচ্চা যদি সুশীল সেজে চুপ করে থাকে? যদি বলে, আমাদেরও হরাইজন অ্যামনেশিয়া আছে, তুই ফোট?

নাকি সামনাসামনি ধরবো কাউকে? গিয়ে দরজায় ঘন্টা বাজাই, দরজা খোলা মাত্র, কোন সময় না দিয়েই অ্যাকশন, বলো, গল্পের আমিটা আসলে কেমন?

অসহযোগ, অসহযোগ। গান্ধী স্ট্র্যাটেজি। সবাই গান্ধী হয়ে আমার গল্পটাকে চুদে দিতে চায়। বিরক্ত লাগে খুব। একটা মাত্র চরিত্রকে নিয়ে এতো ঝামেলা। বাকিরা তো তৈরিই আছে। এই বালের আমিটাকে একটা চিমটা দিয়ে ধরে দূর করে দিলে কেমন হয়?

গল্পটা কি আদৌ গল্পের আমির ওপর ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কি না, টেবিলের নিচে উঁকি দিয়ে দেখার চেষ্টা করি। বোঝা যায় না, বড্ড ঝাপসা, আর টেবিলের নিচে অনেক ধূলোবালি। একটা টান দিয়ে সরিয়ে দিই অচেনা লোকটাকে, কী এমন সমস্যা? বাকিদের দিয়েও গল্পটা হয়, অনেকখানিই। শুধু কী যেন হয় না, ধরতে পারি না।

কম্পিউটার চলতে থাকে, আমি উঠে গিয়ে জানালা খুলে দিই। বাকিদের দিয়েও হয়। বাকিদের দিয়েই হয়। গল্পের আমিটা গল্পের জন্যে জরুরি নয়। কিন্তু কিছু কথা খুব লিখতে ইচ্ছে করছে আমার, সেগুলো লেখা হবে না ওকে বাদ দিলে। গল্পটা কম্পিউটারেই লিখি, আর মনে মনে, ঐ কথাগুলো লেখা বড় প্রয়োজন।


মন্তব্য

নিঘাত তিথি এর ছবি

চরিত্রগুলো এক লাফে চলে আসে তখন দ্বিতীয় পাঁউরুটির টুকরোটার ওপরে।

মনে পড়ে, গল্পটায় আমিও একজন চরিত্র। কিভাবে লিখি?

শরীর থেকে বেরিয়ে একবার তাকাই নিজের দিকে। একটা লোক, হাফপ্যান্ট পরা, লাল একটা গেঞ্জি পরা, সে মন দিয়ে চোখ বুঁজে মধুর স্যান্ডউইচ খাচ্ছে। গল্পের লোকটা মোটেও এমন ছিলো না। হতাশ হয়ে ফিরে আসি শরীরে আবার। গল্পের আমিটা অন্যরকম, অনেক অন্যরকম।

গল্পের আমিটার কথা কি আমার আসলেই মনে আছে?

ফোন করে জিজ্ঞেস করি আমার স্মৃতিমান বন্ধুদের, গল্পের আমিটা আসলে কেমন ছিলো? আমি তো ভুলে গেছি, ওদের নিশ্চয়ই মনে আছে? নাকি ওদেরও এই মনে রাখার জায়গাটুকুতে টান পড়েছে?

বাকিদের দিয়েও গল্পটা হয়, অনেকখানিই। শুধু কী যেন হয় না, ধরতে পারি না।

প্রায় পুরোটাই কোট করে ফেলতে গিয়ে ছেড়ে দিলাম...ইউনিক লেখা। চমৎকার।

(ইউনিকের বাংলা কি?)
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

অনন্য?

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- খুব সাধারণ একটা লেখাও অনেক আবেদন বহন করে... তোর হাতে!
তোর কি মন খারাপ হৈছে?
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>

হিমু এর ছবি

না রে মিঠু, আমাগো থার্মোমিটারও নাই, বার্নলও নাই।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

বাহ্, আইডিয়াটা দারুন!
- শামীম হক।

আনোয়ার সাদাত শিমুল এর ছবি

(Y)

কনফুসিয়াস এর ছবি

হিমু ভাইয়ের এই গল্প পড়ে বড় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
এইরকম অস্থিরতা বুকে মাথায় নিয়ে বেশ কদিন ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছি, লেখার খাতা হারিয়ে গেছে অনেক আগেই। কম্পুর বোতামই ভরসা, কিন্তু ঐ ব্যাটারা কেন যে আপনা থেকেই আমার ভাবনাগুলো লিখে ফেলে না! মাথাভরা গল্প, তার চরিত্ররা বুকপকেটে চুপ করে বসে থাকে। রাতের বেলা আলো নিভে গেলে আমি একেকটাকে পকেট থেকে বের করে করে নিয়ে কথা বলি, কথা বলি, কথাই বলি শুধু, কিন্তু সেসব নিয়ে এই গল্পটার মতন একটা গল্প শেষমেষ লেখা হয়ে ওঠে না।
আমি তাই, দীর্ঘশ্বাস ফেলি।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সুলতানা পারভীন শিমুল এর ছবি

মনের অস্থির আর অগোছালো ভাবনাগুলোও এত গুছিয়ে লিখেছেন!
খুব ভাল লাগলো।

...........................

সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন

...........................

একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা

পরিবর্তনশীল এর ছবি

দারুণ লিখলেন...
---------------------------------
চোখের পাতায় হাত রেখে ওরা আমাকে স্বপ্ন দেখার যন্ত্রণা দেয়।

অনুভূতিশূন্য কেউ একজন এর ছবি

আমি গল্প লিখতে পারিনা। তাই গল্পলেখিয়েদের ঈর্ষা করি।

ইশতিয়াক রউফ এর ছবি

খুবই পছন্দ হয়েছে।

মর্ম এর ছবি

সুন্দর সুন্দর!

ইশ! কত লেখা যে পড়া বাকি!?

~~~~~~~~~~~~~~~~
আমার লেখা কইবে কথা যখন আমি থাকবোনা...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।