দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি বুক ঠুকে বললেন, "একেবারে ঘোড়ার মুখ থেকে খবর এনেছি স্যার! বদরু খাঁ এ মেলাতেই আছে।"
ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "এই মেলায় কমসে কম হাজার পাঁচেক লোক আছে এখন। সন্দেহের তালিকাটা একটু বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে না?" এই বলে কচমচিয়ে বাদাম খান তিনি।
কিংকু চৌ...[justify]
ঝাকানাকা বাদামের খোসা ভাঙতে ভাঙতে বললেন, "আপনি ঠিক জানেন তো? নাকি শুধুমুধু সাত টাকা খরচ করালেন আমাকে দিয়ে?"
দারোগা কিংকর্তব্যবিমূঢ় চৌধারি বুক ঠুকে বললেন, "একেবারে ঘোড়ার মুখ থেকে খবর এনেছি স্যার! বদরু খাঁ এ মেলাতেই আছে।"
ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "এই মেলায় কমসে কম হাজার পাঁচেক লোক আছে এখন। সন্দেহের তালিকাটা একটু বেশি বড় হয়ে যাচ্ছে না?" এই বলে কচমচিয়ে বাদাম খান তিনি।
কিংকু চৌধারি সলজ্জ কণ্ঠে বলেন, "সেজন্যেই তো আপনাকে নিয়ে এলাম স্যার। জনা পাঁচেক হলে তো আমিই পারতাম। পঞ্চাশ জন হলেও সমস্যা হতো না। কিন্তু পাঁচ হাজারের ভেতর থেকে একজনকে বার করা আমার পক্ষে একটু মুশকিল।"
ঝাকানাকা বলেন, "বটে? তা, পাঁচজন থাকলে আপনি কিভাবে কাজ করতেন? আপনার মোডুস অপেরান্ডি একটু শুনে দেখি?"
কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, আমার কর্মপদ্ধতি তো আপনার কাছ থেকেই শেখা! কষে প্যাঁদাতাম পাঁচটাকেই!"
ঝাকানাকা বলেন, "তারপর?"
কিংকু চৌধারি বলেন, "চারজন স্বীকার করে ফেলতো যে তারাই বদরু খাঁ, ছদ্মবেশে মেলায় এসেছে গা ঢাকা দেবার জন্যে। একজন স্বীকার করতো না। ওটাই হচ্ছে আমাদের আসল পাজি বদরু খাঁ!"
ঝাকানাকা উদ্ভাসিত মুখে বলেন, "আপনার উন্নতি হচ্ছে আমার সাথে মিশে মিশে। ব্রাভো!"
কিংকু চৌধারি লাজুক মুখে বাদাম ভাঙেন।
ঝাকানাকা বলেন, "এই সাত টাকা কিন্তু আমি বিল করবো। টিকিটের দু'টাকা আর বাদামের পাঁচ টাকা।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "নিশ্চয়ই স্যার, নিশ্চয়ই! ... কিন্তু আমার খুব কৌতূহল হচ্ছে, এতো লোকের ভেতর থেকে বদমাশ বদরুকে কিভাবে ছেঁকে বার করবেন তা জানার জন্যে!"
ঝাকানাকা বললেন, "আজ আপনিই কিছু গোয়েন্দাগিরি করুন না। আমি বরং আপনাকে সহযোগিতা করি।"
কিংকু চৌধারি খুশি হয়ে বললেন, "ঠিকাছে স্যার! ... যতটা কঠিন ভাবছিলাম, ততটা কঠিন বোধহয় নয়! যেমন ধরুন, বদরু খাঁ ছয় ফুটের ওপরে লম্বা!"
ঝাকানাকা বিরসমুখে বাদাম খেতে খেতে বললেন, "অ্যাতো অ্যাতোদিন ধরে বদরুর পেছনে ছুটে ছুটে এ-ই শিখলেন? জানেন না সে ছদ্মবেশে কত পাকা একটা বদমাশ? পাঁচফুট বা সাতফুট লম্বা কোন লোক বা মেয়েলোক সেজে থাকা তার জন্যে কোন ব্যাপারই না। চাইলে সে ল্যাম্পপোস্টের ছদ্মবেশও ধরে থাকতে পারে!"
কিংকু চৌধারি একটু মিইয়ে যান। বলেন, "স্যার লবণ খাবেন?"
ঝাকানাকা তপ্ত কণ্ঠে বলেন, "আপনার নুন খেলেও গুণ গাইতে পারবো না ...।"
কিংকু চৌধারি বলেন, "না স্যার, বলছিলাম বাদামের সাথে লবণ খাবেন কি না।"
ঝাকানাকা বলেন, "ওহ, আচ্ছা ... হুমম! আসুন তার আগে কিছু বই দেখা যাক। বইমেলায় এসে বই না দেখে বাদাম খাওয়া ঠিক না।"
কিংকু চৌধারি প্রথম স্টল গুলবুলিস্তান প্রকাশনীতে হানা দ্যান, "আপনারাই তো বকর বিন আবু কাশেমের "বিকিনি নয়, বোরখা" উপন্যাসটি প্রকাশ করেছেন এবার?"
স্টলদার ভদ্রলোক পান চিবাতে চিবাতে বলেন, "জ্বে। তবে এখন তো পাবেন না। অষ্টম মুদ্রণের কাম চলতে আছে, কাইলকে বিকালে একবার আইসেন।"
ঝাকানাকা ভুরু কুঁচকে বললেন, "আপনি অ্যাতো কিছু জানেন কিভাবে?"
কিংকু চৌধারি উদ্ভাসিত মুখে বলেন, "কী যে বলেন স্যার, সেই ছোটবেলা থেকে বকর বিন আবু কাশেমের পাৎলা পাৎলা বই পড়ে আসছি ...।"
ঝাকানাকা সন্দিগ্ধ চোখে একবার দ্যাখেন শুধু কিংকু চৌধারিকে, কিছু বলেন না।
কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, যদি গোলাগুলি করতে হয়, তাহলে তো বিপদ। অ্যাতো অ্যাতো মানুষ মেলায় ...।"
ঝাকানাকা ক্রুর হাসেন। বলেন, "তাকে একবার শনাক্ত করতে পারলে গোলাগুলি নিয়ে আর চিন্তা নেই। পিটিয়ে তক্তা করবো ব্যাটাকে, বন্দুক পিস্তল উঁচিয়ে ধরার আগেই!"
কিংকু চৌধারি বলেন, "প্রত্যেকটা লোকের সাথে কথা বলে বাজিয়ে দেখা তো মুশকিল স্যার। বদরু খাঁকে আমরা ধরবো কিভাবে?"
ঝাকানাকা মৃদু হাসেন, নিমীলিত নয়নে বাদাম চিবান কিছুক্ষণ। তারপর বলেন, "বদরু খাঁ বেশ ভালোমতোই জানে যে তাকে এখানে খোঁজ করা হবে। কাজেই হেঁজিপেঁজি কোন বইয়ের ক্রেতা সেজে বেরোতে গেলে তার ধরা খাওয়ার সম্ভাবনা অনেক। আমার ধারণা, সে এখানে লেখক বা লেখিকা সেজে কোথাও ঘাপটি মেরে আছে।"
কিংকু চৌধারি একটু গুম মেরে গেলেন। বললেন, "স্যার, সন্দেহজনক লোকের লিস্ট তো খুব একটা ছোট হলো না। মেলায় কমসে কম শ'পাঁচেক লেখকলেখিকা আছেন এখন।"
ঝাকানাকা হাসেন। বলেন, "নয়গুণ কাজ কমিয়ে দিলাম আপনার, তারপরও ঘ্যান ঘ্যান করছেন আমার সুন্দরী সেক্রেটারি মিস মিলির মতো। ওর সঙ্গে মিশে মিশে আপনার দারোগাপনা ক্রমশ কমে যাচ্ছে, খিটখিটে মহিলাদের মতো হয়ে উঠছেন আপনি।"
কিংকু চৌধারির মুখটা একটু বিষন্ন হয়ে পড়ে।
ঝাকানাকা বলেন, "আপনি কি লেখক আর ক্রেতার মধ্যে তফাৎ করতে পারেন?"
কিংকু চৌধারি এবার একটু খুশি হন। খুশি খুশি মুখে বলেন, "তা পারি স্যার। লেখক থাকেন স্টলের ভেতরে, নিজের বইয়ে অটোগ্রাফ দিতে থাকেন। আর ক্রেতা স্টলের বাইরে দাঁড়িয়ে সেই বইয়ে অটোগ্রাফ নিতে থাকেন।"
ঝাকানাকা মৃদু হাসেন। "হুমম! কিন্তু কিছু লেখক আছেন যারা সবসময় অটোগ্রাফ দেন না। তারা বাইরে কোথাও জটলা পাকিয়ে ভাব ধরেন আর বিড়ি পান করেন।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "আমরা দুই পদের লেখককেই বাজিয়ে দেখতে পারি স্যার। সন্দেহজনক মনে হলে তাদের গালে লাল কালি দিয়ে একটা ঢ্যাঁড়া কেটে চালান করে দিতে পারি। পরে থানায় নিয়ে গিয়ে আচ্ছা করে পেঁদিয়ে ...।"
ঝাকানাকা হাসেন মুহাহাহাহা করে। বলেন, "আপনার এই আচরণ দেখলে বাকি লেখকরাই পেঁদিয়ে আপনার খাল তুলে দেবে। হুঁশিয়ার! বদরু খাঁকে চিহ্নিত করতে হবে একবারে, অনেকের থেকে তাকে পেঁদিয়ে বাছাই করার সুযোগ আপনি পাবেন না। আপনার আচরণে সন্দেহজনক কিছু থাকলে সে আবারও ঘাপটি মারবে, হয়তো মিশে যাবে বাকি সাড়ে চার হাজার ক্রেতার ভিড়ে। তখন অনুসন্ধানের কাজটা মাটি হবে। কাজেই হুঁশিয়ার!"
কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বললেন, "কিন্তু স্যার, আমাদের ছদ্মবেশও তো বেশ পাকা!"
ঝাকানাকা বললেন, "হ্যাঁ! ভুলে যাবেন না, আপনি ফকিরুন্নেসা নুন কলেজের ছাত্রীর ইউনিফর্ম গায়ে দিয়ে ছুকরি সেজে হাঁটছেন। দারোগার আচরণ আপনাকে মানায় না। আপনাকে হতে হবে চপলা তন্বী, চকিতহরিণপ্রেক্ষণা, লীলালাস্যে এদিক ওদিক বই দেখে বেড়ান।"
কিংকু চৌধারি বেজার হয়ে বললেন, "কিন্তু স্যার, আমার মতো ছয়ফুট লম্বা পালোয়ান লোকের গায়ে এই ইউনিফর্ম ঠিক মানাচ্ছে না। তন্বী সেজে থাকতে বেজায় কষ্ট হচ্ছে আমার। তাছাড়া আমার শরীর হচ্ছে স্যার যাকে বলে রোমশ। চপলা তন্বীদের কি স্যার আমার মতো গা ভর্তি লোম থাকে?"
ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "তা তো জানি না। থাকতেও পারে। আপনি আপনার কার্ডিগানের হাতা না গোটালেই হবে।"
কিংকু চৌধারি ঝাকানাকাকে আড়চোখে দেখে বললেন, "স্যার, আপনার ছদ্মবেশটাও কিন্তু ঐ যাকে বলে সন্দেহজনকই হয়েছে। আজকাল মহিলারা ঠিক এভাবে শাড়ি পরেন না।"
ঝাকানাকা বাদাম চিবাতে চিবাতে বললেন, "আপনি জানলেন কিভাবে এতকিছু?"
কিংকু চৌধারি লজ্জানম্র হাসি দেন একটা। বলেন, "মিস মিলির কাছ থেকে মাঝে মাঝে টুকটাক শিখেছি স্যার ... উনি এ ব্যাপারে বেশ নলেজ রাখেন দেখলাম ...!"
ঝাকানাকা বললেন, "রাখাই উচিত, তিনি যেহেতু শাড়িটাড়ি পরেন। ইন ফ্যাক্ট, আমার শাড়িটার কুচি ঠিক করতে পারছিলাম না, সেটা মিস মিলিই কুচিয়ে দিয়েছে।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "কিন্তু ফুলহাতা ব্লাউজ তো আজকাল প্রায় কেউই পরেন না স্যার!"
ঝাকানাকা বিরক্ত হয়ে বললেন, "আহ, শীতের দিনে একজন ভদ্রমহিলা ফুলহাতা ব্লাউজ পরতেই পারেন! অত ত্যানা প্যাঁচান ক্যানো!"
কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে বলেন, "না মানে, বলছিলাম যে, আমরা কি জিন্স আর টি-শার্ট পরে আসতে পারতাম না?"
ঝাকানাকা কটমটিয়ে তাকিয়ে থেকে বললেন, "মেয়েদের জিন্সের প্যান্ট আপনাকে ফিট করবে না, আমাকেও না। আর টি শার্ট পরলে আপনার লোমগুলির কী ব্যাখ্যা দেয়া যেতো?"
কিংকু চৌধারি বলেন, "ওহহো, তাই তো! কিন্তু স্যার, আমরা কেন মেয়ে সাজলাম?"
ঝাকানাকা বললেন, "লেখকদের একটু ইয়ে থাকে মেয়েদের ব্যাপারে। ওখানেই আসল লেখক আর নকল লেখকের ব্যাপারটা আলাদা করা যায়। খাঁটি লেখক আমাদের দেখলে একটু নখড়ামো করতে বাধ্য। কিন্তু বদরু খাঁ তা করবে না। ওখানেই ফস্কা গেরো, আর তার পরপরই বজ্রআঁটুনি!"
কিংকু চৌধারি সন্দিগ্ধ কণ্ঠে বললেন, "কিন্তু স্যার, ছয়ফুট লম্বা ঘাড়ে-গর্দানে দুইজন মহিলাকে দেখেও কি লেখকরা অমন করবেন?"
ঝাকানাকা মুচকি হেসে বললেন, "লেখকদের ব্যাপারে আপনার ধারণা দেখছি নিতান্তই নাবালকোচিত! আমার গোঁফটা না কামিয়ে আসলেও চলতো, বুঝলেন?"
কিংকু চৌধারি বিড়বিড় করে বললেন, "কী ঘেন্না, কী ঘেন্না ...!"
চলতে চলতে একটা স্টলের সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলেন ঝাকানাকা। স্টলের ভেতর এক সুদর্শন তরুণ লেখক ঘ্যাঁচঘ্যাঁচ করে বইয়ে সই করছেন।
ঝাকানাকা বললেন, "এ ছোকরাকে তো লেখক পাড়ায় আগে দেখিনি কখনো! দেখুন তো ভালো করে, বদরুর মতো মনে হয় কি না?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "না স্যার, ইনি নবীন ঔপন্যাসিক অমিত আহমেদ, এবারই প্রথম উপন্যাস বেরিয়েছে, গন্দম!"
ঝাকানাকা বললেন, "অ্যাক্ট ন্যাচারালি। যান, ওর একটা বই কিনে সই নিয়ে আসুন।"
কিংকু চৌধারি যথাসম্ভব লীলালাস্যে এগিয়ে গিয়ে একটা বই কিনে বাড়িয়ে ধরলেন অমিত আহমেদের দিকে। "অটোগ্রাফ প্লিজ!"
ছয়ফুট লম্বা "ফকিরুন্নেসা নুনের ছাত্রী"র বাজখাঁই এই অনুরোধ শুনে অমিত আহমেদ ঘাবড়ে গেলেন, কাঁপা কাঁপা হাতে বইটা নিয়ে বললেন, "কী নাম লিখবো?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "ইয়ে, লিখুন, মিলির জন্যে!"
অমিত আহমেদ সই করে দিলেন।
কিংকু চৌধারি বই নিয়ে ফিরে আসার পর ঝাকানাকা বললেন, "বটে? গন্দম নিয়ে যাচ্ছেন মিস মিলির জন্যে?"
কিংকু চৌধারি বলেন, "কী করবো স্যার, মেয়ের নাম আর মাথায় আসছিলো না!"
ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় শুধু বললেন, "হুমম!"
কিছুদূর এগোতেই একটা ফাঁকা জায়গা, সেখানে অনেকগুলি টিভি ক্যামেরা জটলা করছে, মাঝে ছোটখাটো মোটাসোটা এক গুঁফো ভদ্রলোক, মাইক হাতে অমায়িকমুখে বলছেন, "এখন যাঁর সাথে কথা বলবো, তিনি লেখেন সচলায়তন নামের এক অলীক স্থানে, যেখানে অনেক প্রতিশ্রুতিশীল লেখকদের সমাগম ঘটে প্রতিনিয়ত ... কথা বলছি আরিফ জেবতিকের সাথে।"
স্বাস্থ্যবান ভুঁড়িওয়ালা এক যুবক সহাস্যে কথা বলতে থাকেন গুঁফো ভদ্রলোকের সাথে।
কিংকু চৌধারি ফিসফিস করে বলেন, "ব্যাটার গোঁফটা দেখেছেন? উচ্চতা কমিয়ে এনেছে ফুটখানেক, কিন্তু গোঁফটা ছাঁটতে ভুলে গেছে তাড়াহুড়োয়!"
ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "উনি লুৎফর রহমান রিটন! আপনি দেখছি লেখকপাড়ায় খুব একটা যাতায়াত করেন না! আমার তো বরং সাথের ঐ বিটকেলটাকে সন্দেহ হচ্ছে!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "কে, আরিফ জেবতিক? না স্যার, উনিও নামকরা ঔপন্যাসিক! এ বছর বেরিয়েছে "তাকে ডেকেছিলো ধূলিমাখা চাঁদ!" সচলায়তনে নিয়মিত লেখেন।"
ঝাকানাকা বললেন, "হুমমম! ঐ বিটকেল ওয়েবসাইটটায়? শালারা কতদিন ধরে আমাকে লটকে রেখেছে, অ্যাক্টিভেট করার নামগন্ধ নেই! সেদিন একটা ছড়া লিখলাম, সেটা প্রথম পাতায় প্রকাশ করলোই না!"
কিংকর্তব্যবিমূঢ় বললেন, "স্যার, চলেন আমরা মেয়ে সেজে সচলায়তনে ঢুকি! মেয়ে দেখলে ব্যাটাদের চিত্ত চুলবুল করতে পারে, তখন আমাদের অ্যাকাউন্ট সচল হয়ে যাবে!"
ঝাকানাকা বিমর্ষ গলায় বললেন, "আরে মেয়ে সেজেই তো চেষ্টা করেছিলাম, লাভ হয়নি!"
কিংকু চৌধারি মনমরা হয়ে চুপ করে গেলেন।
আমলকি প্রকাশনীতে ঢুকে কিছুক্ষণ ছড়ার বই আর হরতুকি প্রকাশনালয়ে ঢুকে কিছুক্ষণ ছবির বই ঘেঁটেঘুঁটে আবার মেলার পথে নামলেন দু'জন।
ঝাকানাকা বললেন, "কবিদের আড্ডায় একটু যেতে হবে। ওখানে ঘাপটি মেরে থাকা সহজ। একটু টালটক্কর কথাবার্তা বলে কবি সেজে বসে পড়া যায়।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "স্যার, শুনেছি কবিদের গায়ে বোঁটকা গন্ধ হয়। বদরু খাঁ কি ছদ্মবেশের সাথে ছদ্মগন্ধও ধারণ করতে পারে?"
ঝাকানাকা বললেন, "গন্ধ কোন ব্যাপার নয়। সুগন্ধী স্প্রে যখন পাওয়া যায়, দুর্গন্ধী স্প্রেও পাওয়া যাবে। নাক নয়, চোখ আর কানকে কাজে লাগান।"
কবিদের জটলার কাছে যেতেই তাদের মধ্যে একটা চিত্তচাঞ্চল্য ঘটে। জনৈক ফ্রেঞ্চকাট আর লুঙ্গির ওপর টিশার্ট পরা কবি অস্ফূটে বলে ওঠেন, "নারী!"
একটা কলরব ওঠে, "নারী, নারী!"
ঝাকানাকা থমকে দাঁড়ান। "বেশি কাছে যাওয়া যাবে না, এগুলো মনে হচ্ছে সত্যিকারের কবি। দেখুন তো ঠাহর করে, চেনা যায় কি না?"
কিংকু চৌধারি বললেন, "তা যায় স্যার। এরা সব বৃদ্ধ শাইসু আর তার চ্যালাচামুন্ডা!"
ঝাকানাকা বলেন, "হুমম! অন্য কবিদের জটলা চেক করে দেখতে হবে।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "চলুন স্যার ওখানটায় যাই।"
এরপর ঘন্টাখানেক ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন কবিদের আড্ডা পর্যবেক্ষণ করতে করতে দুই গোয়েন্দা ক্লান্ত হয়ে পড়লেন। এক জটলায় মাহমুদ খাদি সবাইকে চা-ডালপুরি খাইয়ে উদাত্ত কণ্ঠে আবৃত্তি করছেন শৈশবের স্বরচিত কবিতা, অন্য কোণায় কবি রাসেল ডটডটডট মৃদু কণ্ঠে কবি বৃদ্ধ শাইসুর কবিতার চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করছেন, আরেক জটলায় মহিলা কবি ধনুপমা ভৈরবী ফিতা কেটে উদ্বোধন করছেন কবিতার বই "পিয়াল তরুর কোলে", আরেক কোণায় কবি হলুদ ঘোগ হাসিমুখে সবুজ ঘুড়া আর নীল ডাগদারের গল্প শোনাচ্ছেন এক ছিপছিপে বিশালবক্ষা তরুণীকে, তো আরেক প্রান্তে পুরনো দিনের বাঘা বাঘা কবিরা স্মৃতিচারণ করছেন পুরনো বইমেলার কথা। আর চতুর্দিকে বনবন পনপন করে ঘুরছে টেলিভিশন ক্যামেরা আর রেডিওর মাইক্রোফোন।
হঠাৎ এক বিদঘুটে চেহারারা লোক এসে ঝাকানাকার পথরোধ করে দাঁড়ালো। "চ্যানেল হাটিকুমরুল থেকে আমি শাহনেওয়াজ মন্টু, বইমেলা থেকে সরাসরি রিপোর্ট করছি। এক্সকিউজ মি আপা, আপনি কী কিনলেন?"
ঝাকানাকা গম্ভীর হয়ে বললেন, "আমি আমার বাচ্চার জন্য একটা ছড়ার বই খুঁজছি, কিন্তু পাচ্ছি না। এই বইমেলায় শুধু দুষ্টু দুষ্টু বড়দের কবিতার বই বেরিয়েছে, ছোট্টমণিদের জন্যে কিছু বেরোয়নি, জানেন?"
শাহনেওয়াজ মন্টু বললেন, "একজন দর্শক আমাদের জানিয়েছেন এই বইমেলায় ছোট্টমণিদের জন্য কিচ্ছু বেরোয়নি! ... এবার কথা বলছি আপনার সাথে ... আপনার হাতে ওটি কার বই?"
কিংকু চৌধারি মিহি গলায় বলেন, "অমিত আহমেদের গন্দম!"
শাহনেওয়াজ মন্টু বললেন, "আমরা দেখতে পাচ্ছি তরুণীদের মধ্যে গন্দম ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বেড়েই চলছে, নিশ্চয়ই ডাল মে কুছ কালা হায়! চ্যানেল হাটিকুমরুল থেকে শাহনেওয়াজ মন্টু, বইমেলা, ঢাকা!" এই বলে সে মাইক বন্ধ করে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে যায় আরেকদিকে, পেছনে ক্যামেরা হাতে তাড়া করে একজন।
ঝাকানাকা বললেন, "খুব সাবধান! আরো এক চক্কর মারতে হবে।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "চলুন স্যার!"
কিছুদূর এগিয়ে যেতেই ঝাকানাকা থমকে গেলেন। "দেখুন!"
কিংকু চৌধারি বললেন, "কে স্যার? ... ওহ, উনি? লেখক মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী।"
ঝাকানাকা বললেন, "সাপ্তাহিক কচুবনের সাহিত্য পাতার মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী?"
কিংকু চৌধারি স্মিত মুখে বললেন, "স্যার, কচুবন বহুদিন হলো দৈনিক হয়ে গেছে। আগে সাপ্তাহিক ছিলো স্যার। ঐ যে, ঠ্যালার পর ঠ্যালা বের হতো আগে ... মজার মজার চুটকি থাকতো, হেঁ হেঁ হেঁ ...।"
ঝাকানাকা গম্ভীর গলায় বললেন, "কিন্তু মেঘদুধের সাথে ওটা কে?"
মেঘদুধ মুর্শিদাবাদীর পাশে এক মাঝারি উচ্চতার কুর্তাপরা ভদ্রলোককে দেখা যায়, তাঁর হাতে আবার একটি কলম।
কিংকু চৌধারি বললেন, "হবে স্যার, কোন হোমড়াচোমড়া কবিসাহিত্যিক!"
ঝাকানাকা বললেন, "খেয়াল করে দেখুন, মেঘদুধ ওনার জুতোর ফিতা বেঁধে দিচ্ছে।"
কিংকু চৌধারি বললেন, "তা দিতে পারে স্যার। বড় কবিসাহিত্যিকদের ফাইফরমাশ খাটা মেঘদুধ সাহেবের একটা হবি বলতে পারেন। লেখক হতে গেলে এগুলো একটু আধটু নাকি করতে হয়, উনি বলেন।"
ঝাকানাকা বললেন, "করুক গিয়ে। কিন্তু অত হোমড়াচোমড়াই যদি হবে, তাহলে সঙ্গের লোকটাকে আমরা চিনি না কেন? অচেনা লোকের ফরমায়েশ কি মেঘদুধ খাটে?"
কিংকু চৌধারি চমকে উঠে বললেন, "তাই তো!"
ঝাকানাকা এক মূহুর্ত দেরি করেন না। চোখের পলকে শাড়ি হাঁটুর ওপর তুলে তীব্রবেগে ঝাঁপিয়ে পড়েন সেই কুর্তাপরা ভদ্রলোকের ওপর।
আর শুরু হয় এক অশৈলী কান্ড! মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী এক পাশে সরে গিয়ে বক্তৃতা দেয়া শুরু করে, "দেখুন গুন্ডাদের কান্ড! তারা আক্রমণ করেছে বাংলার অন্যতম জনপ্রিয় লেখক মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ওপর! এরা সন্ত্রাসী, জাতির শত্রু। এদের চিনে রাখুন।"
ওদিকে মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ছদ্মবেশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে ঝাড়া সাড়ে ছয়ফুট লম্বা এক মুশকো দৈত্য, যার শরীরে টগবগ করছে পেশী। এক হুঙ্কার ছেড়ে সে বলে, "তবে রে!"
ঝাকানাকাও শাড়িপেটিকোটব্লাউজ ছুঁড়ে ফেলে হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "তবে রে!"
শুরু হয় এক ভীষণ হুটোপুটি। বইমেলার মাটি কেঁপে কেঁপে ওঠে তার তান্ডবে।
মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী ক্যামেরা দিয়ে ছবি তোলে।
কিন্তু বেশিক্ষণ লড়াই চলে না। ঝাকানাকা বদরু খাঁ-র পেটে এক ভীষণ কনুইয়ের গুঁতো বসিয়ে দ্যান কর্সিকার মাফিয়াদের কাছে শেখা কায়দায়, আর বদরু খাঁ ঝাকানাকার ঘাড়ে কষায় এক ভীষণ কায়দার রদ্দা, যা কি না একমাত্র হনলুলুর এক গোপন মারকুটে সম্প্রদায়ই শুধু মারতে জানে। আর তার পরপরই সে উল্কার মতো ছুটে হারিয়ে যায় বইমেলার বাইরের আঁধারে।
ঝাকানাকা টলতে টলতে উঠে দাঁড়ান। "শালা, ফস্কে গেলো ...!"
মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী চেঁচাতে থাকে, "দেখুন, গুন্ডাদের কান্ড দেখুন। এরা হামলা করে মুখতারুজ্জামান জুলিয়াসের ওপর, দেখুন!"
কিংকু চৌধারি গিয়ে কড়া গলায় ধমক দ্যান, "ইস্টুপিট, মুখতারুজ্জামান জুলিয়াস এগারো বছর আগে মারা গেছেন!"
মেঘদুধ মুর্শিদাবাদী চমকে ওঠে। "কিন্তু উনি যে বললেন ঐটা সাংবাদিকদের ষড়যন্ত্র ছিলো, উনি মরেন নাই!"
ঝাকানাকা দাঁত কিড়মিড় করে বলেন, "মূর্খ!"
কিংকু চৌধারি বলেন, "স্যার, ব্যথা পেয়েছেন?"
ঝাকানাকা বলেন, "আহ্লাদ পরে হবে, চলুন সরে পড়ি, ঐ দেখুন ক্যামেরা হাতে দৌড়ে আসছে সব! আন্ডারওয়্যার পরে সাক্ষাৎকার দেয়ার বড়ো হ্যাপা!"
(সমাপ্ত)
.
.
.
গোয়েন্দা ঝাকানাকা! | Promote Your Page Too
মন্তব্য
কোপারে হিমু.............কোপা। পুরা ঝাকানাকা গল্প।
কি মাঝি? ডরাইলা?
বইমেলা বিষয়ক শ্রেষ্ঠ রচনা ।
ওরে সর্বনাশ!!!
হিমু ভাই অন রোল
(তা ঝাকানাকার অসমাপ্ত গুলোর কি হবে শুনি?)
রেস্টৃকটেড কমেন্ট : গল্পের শেষ যে অংশ মডুরা বাদ দিয়েছে :
আহহা ... ঝাকানাকার শেষ লাইনটা বাদ পড়ে গেলো ..
"এখন তুমি এনিয়ে একটা প্রেস রিলিজ বের করে কচুবন, বাশবাগানসহ সব জাতীয় দৈনিকে পাঠিয়ে দাও । "
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
ভাইগ্য ভালো হিমু দেশ থিকা বায়রায় জার্মানি পাড়ি দিছে ।
নীড়পাতা.কম ব্লগকুঠি
নাম্বার দিয়ে গেলাম। মন্তব্য নি:প্রয়োজন।
- হাহাহা....
হিমুর ঝাকানাকার কাহিনী আর বেগতিক ভাইয়ের সমাপনী- দুইটাতেই জাঝা
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
সচলায়তনের সব মডুরাম কি মোটকা নিকি? আমিতো জানতাম একটু গোলগাল (বেগতিক ভাই কইছে....আমি কিন্তু কিছু কই নাই)।
কি মাঝি? ডরাইলা?
আমিও কিছু কই নাই , হিমুর ঝাকানাকা সাহেব বলছেন ।
বস্ বিচার করেন। ধূসর আমার পিছে লাগছে। ওরে একটা বিয়া দিয়া দেন। শুনেছি "কনে দেখা ও কলা বেচা" বিষয়ে আপনার সুখ্যাতি আছে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
- হ, অখন চামে চিকনে ধুসরের কান্ধে সিলটী-হিজাবী-দজ্জাল ললনা গছানোর তীব্র চেষ্টা!
এহেন আকাঙ্খার তীব্র নিন্দা জানাই!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ললনারা দজ্জাল ই হয়ে থাকে। এ বিষয়ে নতুন করে কিছু বলে ঝামেলা পাকানোর কোন ইচ্ছা নাই। তবে সিলটী-হিজাবী হইলে সমস্যা কি?
কি মাঝি? ডরাইলা?
- আমার কোনু সমস্যা নাই, তয় আপনের প্রায়শ্চিত্যিতে তো বিরাট সমস্যা হইয়া যাইবো!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ফাটাইসে
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
বদ্দা, চামে পাইয়া আপ্নেরে মোটকা কইছে বেগতিক কাকু।
কি মাঝি? ডরাইলা?
- কাকু না মিয়া, দাদু!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছি ছি ! কি কথা - কাকুকে দাদু বলছে !!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
কনফুর ভুড়ি আছে নাকি জানিনা। বাকিদের আছে। :D
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
মনেহয়, আছে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ছি ছি, কি বেদাতী কাজ কারবার। প্রকাশ্য দিবালোকে আমার ভুড়ি নিয়া টানাটানি।
*
গল্পে বিপ্লব। তবে রাসেল ডটডট বৃদ্ধ শাইখুর কবিতা নিয়া যেই সমালোচনা করছে, সেইটার চুম্বকাংশ দিলে ভাল হইতো।
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
তুমুল গল্প হচ্ছে, কিন্তু বরাবরের মতোন চুইয়ে চুইয়ে, কুইক ছাড়েন পুরাটা!
___________________________
বুড়োরা সবাই সমস্বরে বললো, "নবজন্ম", আমি চাইলাম "একটা রিওয়াইন্ড বাটন"
ভাগ্য ভাল যে এই গল্প পুরাটা ছাড়ছে হিমু। অজ্ঞান পার্টি রহস্যের আর সমাধান হইলো না বোধহয়। হিমুর কত গল্পই অসমাপ্ত থেকে গেল।
কি মাঝি? ডরাইলা?
গল্প এবারো পুরা হয়নাই। জোর করে সমাপ্ত লিখছে।
পুরা বিপ্লব।
অনেক কতা, যা আমরা কৈতারিনা, সেইগুলানও কৈয়া দিসে।
হাসতে হাসতে উষ্টা খাই।
আমি ও আমার স্বপ্নেরা লুকোচুরি খেলি
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
ঝাকানাকা!!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
পুরাই ঝাকানাকা
তথ্যগত ভুল আছে গল্পে যেগুলোর দিকে লেখকের দৃষ্টি আকর্ষন করা যাচ্ছে :
" কিংকু চৌধারি একটু গুম মেরে গেলেন। বললেন, "স্যার, সন্দেহজনক লোকের লিস্ট তো খুব একটা ছোট হলো না। মেলায় কমসে কম শ'পাঁচেক লেখকলেখিকা আছেন এখন।"
....এই কথাটি তথ্যগতভাবে ভুল ।
পাচঁহাজার মানুষের মাঝে মাত্র পাচঁশজন লেখক আছেন বলে হিমু দেশের আপামর লেখক সমাজকে অপমান করেছেন ।
আসল তথ্য নিম্নরূপ : ৫ হাজারের মাঝে :
১. চারহাজার লেখক : ( এই লেখকদের মাঝে ধাড়ি লেখক থেকে ন্যাংটি লেখক পর্যণ্ত গুনতে হবে । বইমেলায় স্টলের সামনের নামগুলো কর্কশিটদিয়ে লিখে দিতেন এক দোকানদার ভদ্রলোক , এবার তিনিও বই লিখেছেন । প্রকাশনীর মালিক আর কর্মচারীরা তো লিখেইছেন ।)
২. পাচঁশ বন্ধুবান্ধব : এরা লেখকের বন্ধুবান্ধব , লেখক চা-সিঙারার লোভ দেখিয়ে এদেরকে এনে থাকেন । কাহাতক আর একা একা দাড়িয়ে থাকা যায় , বন্ধুবান্ধব থাকলে বেশ আড্ডা মারা যায় ।
বাকী পাচশঁ'র মাঝে রেব , পুলিশ , বাংলা একাডেমীর কর্মকর্তা, টিভি চ্যানেল আর সাংবাদিক আছে সাড়ে তিনশ ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজনাল আড্ডাবাজ আছেন আরো একশ ।
তাহলে বাকী থাকে মাত্র পঞ্চাশ ।
সেখান থেকে ঝাকানাকা আর কিংকুকে বাদ দিলে , মেলায় মাত্র ৪৮ জন পাঠক ।
কমেন্টে বিপ্লব
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ
অজ্ঞাতবাস
পঞ্চাশের নিচে নামলে তো আর রহস্য থাকে না। তখন ঝাকানাকার প্যাঁদানোপদ্ধতি কার্যকর করা যায়।
বইমেলায় পাঠকদের আলাদা ব্যাজ দেয়া উচিত। এঁদের রীতিমতো ভিআইপি ট্রিটমেন্ট পাওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। অন্তত এক কাপ চা আর দুইটা বেলা বিস্কুট।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমি একটা প্রস্তাব করেছিলাম বটে । দুই তিনজন প্রকাশককে বলেছিলাম , যেহেতু পাঠকের চাইতে লেখক প্রকাশক বেশি , তাই আসুন , পাঠকদেরকে স্টলে ঢুকিয়ে দেই , আর আমরা বাইরে হাটাহাটি করি ।
কেউ রাজি হয় নি ।
সবাই দেখি সব রকম মন্তব্য করে ফেলেছে! কি আর করা? (বিপ্লব) দিয়ে গেলাম।
আমাদের চিন্তাই আমাদের আগামী: গৌতম বুদ্ধ
একটা ঘাড় ভাঙা ঘোড়া, উঠে দাঁড়ালো
একটা পাখ ভাঙা পাখি, উড়াল দিলো...
হিমু এবং আরিফ জেবতিক, আপনাদের হবে.........
এমন যাদের বিশ্লেষণী ক্ষমতা, এক্স রে'র মতো অন্তর্ভেদী দৃষ্টি তাদের উন্নতি হবেই হবে কেউ ঠেকাতে পারবে না !!
তবে দাদা হিমু, ইয়ে মানে, ফকিরুন্নেসা স্কুলের তন্বী তরুণিদের নিয়ে কটাক্ষ করায় প্রাক্তন পড়ুয়া হিসেবে মনে একটু দুঃখ পেলাম আর কি যারা জানে তারা জানে ঝাকানাকারও সাধ্য নেই এদের ছদ্মবেশ নেয়, আমরা এতোই 'অদ্বিতীয়ম" হুহহহহ............
আশ্চর্য, ফকিরুন্নেসা স্কুল তবে সত্যিই রয়েছে!
তবে কলেজবালিকার ছদ্মবেশটা কিংকু চৌধারির ছিলো, ঝাকানাকার নয়।
গোয়েন্দা ঝিকিমিকি কেমন আছেন?
হাঁটুপানির জলদস্যু
হায়রে ফকিরুন্নেসা স্কুল। মুখতার স্যার তো পারলে প্রতিদিনই আমাদের কলেজটাকে ওদের পাশে বসিয়ে দিত। আর আপনি বলছেন
অসম্ভব ভাল লেগেছে লেখাটি। খুবই ইন্টেলিজেন্ট লেখা।
এত বুদ্ধি নিয়ে আপনি ঘুমান কিভাবে?
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।
অসংখ্য ধন্যবাদ! আমার লেখা কারো ভালো লেগেছে জানলে আমারও খুব ভালো লাগে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
তোর জন্য আকাশ থেকে পেজা
এক টুকরো মেঘ এনেছি ভেজা
বৃষ্টি করে এক্ষুনি দে তুই
বৃষ্টি দিয়ে ছাদ বানিয়ে শুই
দারুন লাগল।
ইয়ে আপনার ঝাকানাকা আর কিংকু চৌধারী কি শেষ পর্যন্ত বদরুখাঁ কে ধরতে পারবে? অসমাপ্ত কেসের সমাপ্তি চাই । অজ্ঞান পার্টির রহস্য কি সমাধান হবে না?
এ নিয়ে ধারাবাহিক লেখা পড়তে চাই এবং আগামী বই মেলায় বই আকারে দেখতে চাই।
অজ্ঞান পার্টিটাতে হাত দিতে হবে, দেখি ... আগামী বইমেলা কিছু প্রকাশিত আর কিছু অপ্রকাশিত ঝাকানাকা নিয়ে কিছু একটা হোলেও হোতে পারে, জনৈক প্রকাশককে ইয়াবা খাইয়ে রাজি করাবো ভাবছি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ইয়াবার চেয়ে আরওpowerful কিছু থাকলে সেটা দিয়ে দরকার হলে প্রকাশককে কাবু করেন।
তবে মনে হয় একবার গোয়েন্দা ঝাকানাকা সিরিজ ধরিয়ে দিতে পারলে সেটা সবচেয়ে বেশী কার্যকর হবে।
তাড়াতাড়ি আরও লেখা চাই।
মাস্টার্পিছ!
পোস্টটা ঠ্যালা দিলাম শিমুল!
@হিমুভাই ঠ্যালা কাজে দিছে!!
আমি এইটা কেম্নে মিস করছিলাম!!!
সেই রকম হইছে।
বোহেমিয়ান
এটি দিয়ে চমৎকার একখন্ডের একটা থ্রিলার নাটক হতে পারে........বদরু খাঁ কে তার রদ্দার সম্মানে পাঁচতারা হাঁকানো হলো।
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-
সেই সুদুরের সীমানাটা যদি উল্টে দেখা যেত!
-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.--.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.-.
সকল লোকের মাঝে বসে, আমার নিজের মুদ্রাদোষে
আমি একা হতেছি আলাদা? আমার চোখেই শুধু ধাঁধা?
শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত হাসি এক সেকেন্ডের জন্যেও মুছতে পারিনি।
আপনার হিউমার তো উপচে উপচে পড়ে দেখি!!
লেখায় একটা ডিসক্লেইমার যোগ করে দিলে আরো হতো "এই লেখার সাথে কোনও বাস্তব চরিত্রের মিল পাওয়া গেলে সেটা একান্তই কাকতালীয় ধরে নিতে হবে..."
==========================================
পরদেশী বঁধু, ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।
যদি গো নিশিথ জেগে ঘুমাইয়া থাকি,
ঘুম ভাঙায়ো চুমি আঁখি।।
দারুন...
লেখকদের সম্পর্কে গোয়েন্দা ঝাকানাকার উপলব্ধি খুবই পরিস্কার
ঝাকানাকা বললেন, "লেখকদের একটু ইয়ে থাকে মেয়েদের ব্যাপারে। ওখানেই আসল লেখক আর নকল লেখকের ব্যাপারটা আলাদা করা যায়। খাঁটি লেখক আমাদের দেখলে একটু নখড়ামো করতে বাধ্য। কিন্তু বদরু খাঁ তা করবে না। ওখানেই ফস্কা গেরো, আর তার পরপরই বজ্রআঁটুনি!"
+++++++++++++++++++++++++++++++++++++
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?
________________________________________
অন্ধকার শেষ হ'লে যেই স্তর জেগে ওঠে আলোর আবেগে...
অ-সা-ধা-র-ণ!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
জিরাম গপ্পো, সিরাম ভাবগতিক ভাইয়ের কমেন্টু, ফাডায়া লাইছেন ২জনেই, লেখায় নাহয় ৫ তারা দাগাইলাম, ভাবগতিক ভাইয়ের কি হইবো? আহারে, খুব ভয়ে আছিলাম, বদরু বেটা না আবার ধরা খাইয়া লাল দালানে হান্দায়া পড়ে, তাইলে তো পরের পর্বের নিগা গিয়াঞ্জাম, যদিও পরের পর্ব পড়ছি, তারপরেও মনে আছিল না। আমার কপাল বিশেষ ভালু বলতেই হবে কারণ পুরা পর্ব একবারে পড়তাম পারছি।
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
=================================
বাংলাদেশই আমার ভূ-স্বর্গ, জননী জন্মভূমিশ্চ স্বর্গাদপি গরিয়সী
(২৩৩২)
নতুন মন্তব্য করুন