মনজুর চাচা ক্ষেপে গেছেন। পাগলা জগাইয়ের মতো বিড়বিড়িয়ে মুচকি হাসি দেয়া পাগলামি নয়, বরং পাগলা জগাইয়ের মতো কখনো তিনি সামনে তেড়ে যাচ্ছেন, কখনো পেছনে। তা-ও খালি হাতে নয়। মনজুর চাচা অতি মুশকো চেহারার লোক, তাঁকে হঠাৎ দেখলে দুর্বলচিত্তের লোক পাজামা ভিজিয়ে ফেলতে পারে, আর সেই তিনি যদি একটা খেঁটে লাঠি নিয়ে পথে নামেন, শুধু তাই নয়, পথে নেমে চক্ষু দুটি করমচা-লাল করে ঘন ঘন ক্রোধান্ধ হুঙ্কার সহযোগে ডানে বামে সেই মুগুরখানা ঘোরাতে থাকেন, তাহলে মজবুতচিত্তের লোকেরাও একটু ঘাবড়ে যাবেন বৈকি।
আরো মুশকিলের ব্যাপার হচ্ছে, নাকবোঁচা ফর্সা জাপানি আদলের লোক দেখলেই মনজুর চাচার রাগের আগুনে বারূদ পড়ছে। তিনি তৎক্ষণাৎ সরজমিন লোকটার অতি নিকটবর্তী হয়ে, তার নিরীহ কলারখানা সাপটে ধরে অতি মনোযোগে সেই ভদ্রলোকের চেহারাছবি নিরীক্ষণ করছেন, সবশেষে একটি মৃদু ঘোঁৎকারের সাথে ছুঁড়ে দিচ্ছেন একটি প্রশ্ন, ‘আপনি কি বাঙালি?’
শুনতে খারাপ বা ভালো লাগলেও সত্যি, বাঙালিদের মাঝে অনেকের চেহারাই চীনা বা জাপানিদের মতো। আমাদের জনৈকা বান্ধবীর বাবা অবিকল জাপানের সম্রাট হিরোহিতোর মতো দেখতে, আর যে দাড়ি আর ঝোলা গোঁফ তার আছে, সেগুলোও চীনেম্যানদের মতো দেখতে, পুরোপুরি বাঙালি নয়। কাজেই এই উদাহরণ থেকে বলা যায়, অসংখ্য লোককেই মনজুর চাচার অবাঙালি বলে সন্দেহ হতে পারে। কিন্তু অন্যদের ফেলে শুধু জাপানিমুখোদেরই কেন এভাবে গেরেফতার করছেন তিনি, ঠিক বোঝা গেলো না। জাপানিদের মতো ভদ্র মানুষ নিশ্চয়ই অন্তত তাঁর পয়সা মেরে পালায়নি।
তবে এটা ঠিক, যখন ধৃত ব্যক্তিরা কম্পিত স্বরে নিজের বাঙালিয়ানা জাহির করেছেন কেউ কেউ শুধু মুখের কথায় কাজ হবে না ভেবে বাঙালিত্বের অকাট্য প্রমাণ হিসেবে বাজার থেকে কেনা রুগ্ন ইলিশের ছানা আর কাটারিভোগ চাল দেখিয়েছেন বাজারের থলে ফাঁক করে, কেউ উদাত্ত স্বরে রবীন্দ্রনাথের বিরলশ্র“ত কোন কবিতা আবৃত্তি করতে লেগে গেছেন খাস নোয়াখেলে ভাষায়, কেউ কাঁচুমাচু হয়ে স্বীকার করেছেন যে অনেক বছর এ দেশে বাস করে বাঙালিয়ানা ষোল আনা রপ্ত করে নিলেও এ কথা সত্যি যে তাঁর পূর্বপুরুষ ইখতিয়ারউদ্দিন মুহাম্মদের সেক্রেটারি হিসেবে এ দেশে এসেছেন সেই সুদূর তুর্কেস্তান থেকে, কেউ কোন তাৎক্ষণিক প্রমাণ দেখাতে না পেরে তার জন্যে অন্যের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করে আবিষ্কার করেছেন যে বাঙালিত্বের সবচে বড় গুণগুলোর একটিই তিনি প্রকাশ করে দিয়েছেন --- তখন মনজুর চাচা তাঁদের সসম্মানে, বেকসুর খালাস দিয়েছেন। তাঁদের কলারগুলো ডলে সমান করে দিয়েছেন, মুগুরটা তাঁদের শক্ত করে ধরতে দিয়ে নিজের হাতে সেই অভাগাদের খুলে যাওয়া শার্টের বোতাম লাগিয়ে দিয়েছেন, আর গাঢ় স্বরে বলেছেন, তুর্কী তাজিক তাতার যা খুশি হোক কিন্তু কক্ষণো নেপালি না হতে। তাঁর কবলমুক্ত ব্যক্তিবর্গ, যাঁরা তাঁরই প্রতিবেশী, প্রকাশ্যে বা গোপনে পরওয়ারদেগারের গুণকীর্তন করতে করতে বাড়ির দিকে ঝেড়ে দৌড় দিয়েছেন।
তবে একটি লোক, আরেকটু হলেই দুর্ঘটনা বাঁধিয়ে বসতো। মনজুর চাচার প্রশ্নে সে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলেছে, ‘হোয়াট?’
অমনি মনজুর চাচা তাকে মাটিতে পেড়ে ফেলেছেন। মুগুরটা উঁচিয়ে সেটাকে ঘোরাতে ঘোরাতে বলেছেন, ‘আর ইউ আ বাঙালি?’
লোকটা অবশ্যই বাঙালি, হোক না নাক বোঁচা আর ফর্সা, কিন্তু ব্যাটা মর্কট ভেবেছে মনজুর চাচা হয়তো প্রাচীন যুগের রাজাকারদের মতো বাঙালি নিধনে বেরিয়েছেন। সে সব গুবলেট করে দিয়ে বলে বসেছে, ‘নো স্যার, আই অ্যাম নট আ বাঙালি!’
অমনি মনজুর চাচা ধেই ধেই করে নাচতে নাচতে আর, ‘বাঙালি নয়, বাঙালি নয়’ বলে গাইতে গাইতে আরেকটু হলেই বসিয়ে দিতেন এক তুঘলকী ঘা, কিন্তু তিনি হঠাৎ থমকে গিয়ে বললেন, ‘আরে, আপনি নয়ের তিন নাম্বার বাড়ির চৌধুরি সাহেব না?’
চৌধুরি সাহেব থতমত খেয়ে মাটিতে শুয়ে থেকেই বলেন, ‘জ্বি।’
মনজুর চাচা অবাক হয়ে বলেন, ‘কী ব্যাপার বলুন তো? যতদূর মনে পড়ে, আপনি তো বাঙালি?’
চৌধুরি সাহেব ফাঁপরে পড়ে বলেন, ‘তাই নাকি?’
মনজুর চাচার মুখ আঁধার হয়ে আসে, তিনি হ্যাঁচকা টানে চৌধুরিকে খাড়া করিয়ে বলেন, ‘আর একটু হলেই তো দিতাম খুলিটা দু’ফাঁক করে, য়্যাঁ! ব্যাপার কী, আপনি নিজেকে বাঙালি বলে স্বীকার করলেন না কেন? সমস্যা কী?’
চৌধুরি সাহেব কৈফিয়ত দেন, ‘না, মানে আমরা সৈয়দ বংশের লোক, সেই আরব দেশ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষ এসেছিলেন এদেশে ।’
মনজুর চাচা গম্ভীর গলায় বলেন, ‘তো? আপনি কি নিজেকে আরব ভাবেন?’
চৌধুরি সাহেব বেকায়দায় পড়ে আমতা আমতা করেন, ‘ঠিক তা না এ কথা সত্য যে অনেকদিন ধরে আমরা এদেশে আছি, প্রায় ছয়সাতশো বছর তো হবেই, কিন্তু রক্তের টান বলে একটা কথা ।’
মনজুর চাচা বিরক্ত হন। ‘দুই নৌকায় পা দিলে তো চলবে না। জলদি বলুন। আপনি বাঙালি না আরব?’
চৌধুরি সাহেব ভয়ে ভয়ে মনজুর চাচার খেঁটে লাঠিটার দিকে তাকান। ‘কোনটা হলে আপনি আমাকে না মেরে ছেড়ে দেবেন?’
মনজুর চাচা বিরক্ততর হন। ‘যান তো ভাই, বাড়ি যান! আপনার জন্যে কম করে হলেও এক ডজন থ্যাবড়ামুখোকে মিস করলাম। ফুটেন!’ মুগুরটা বিপজ্জনক ভঙ্গিতে আন্দোলিত করেন তিনি, চৌধুরি সাহেব আরবী ঘোড়ার মতোই চিঁহি ডাক ছেড়ে বাড়ির দিকে ছোটেন নক্ষত্রবেগে। মনজুর চাচা আবারো সলাঠ টহলে পাড়া কাঁপাতে থাকেন। আমার মতো দুয়েকজন কাফ্রিকার্তিক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে, ভাগ্যিস নাকটা বোঁচা হলেও গায়ের রঙটা ওপরওয়ালা আবলুশের সাথে মিলিয়ে দিয়েছিলেন, বেশ উদার হাতেই, নইলে আজকে কপালে দুঃখই ছিলো!
দুপুর নাগাদ মনজুর চাচা শান্ত হন, তাঁর স্ত্রী, অর্থাৎ আমাদের মঞ্জু চাচী তাঁকে একরকম ধরে বেঁধে শান্ত করে, ঘরের ভেতরে নিয়ে যান। খেঁটে লাঠিটা চাচী বাজেয়াপ্ত করার একটা বাজে চেষ্টা চালিয়েছিলেন, কিন্তু সেটাকে মনজুর চাচা কাছছাড়া করেননি। বরং পাড়া কাঁপিয়ে বলেছেন, ‘কখন যে সেই হোঁৎকাটাকে সামনে পাই, বলা তো যায় না! ওকে পাওয়া মাত্র আমি ঠেঙিয়ে লাট করবো!’
আমরা খুবই ভাবনায় পড়ে যাই। আর ওদিকে যারা সকালে মনজুর চাচার হাতে পরীক্ষিৎ হয়ে এসেছিলেন, তারা বিকেলে একেকজন যুধিষ্ঠির সেজে বসেন।
‘নিশ্চয়ই মদ খেয়েছে। আমি বলছি ভাই, যখন আমার কলারটা চেপে ধরে নাকমুখ শুঁকছিলো, তখনই টের পেয়েছি, ভকভকিয়ে ভদকার ভয়াবহ গন্ধ বেরোচ্ছিলো!’ কলিমুদ্দির চায়ের দোকানে বসে চায়ের কাপে অভ্রভেদী চুমুক দিয়ে বেশ অনুপ্রাস খেলিয়ে বলেন জনৈক জাপানিমুখো।
‘আমি অবশ্য গন্ধ পাইনি, কয়েকদিন ধরে সর্দির জন্যে নাকটা জাম হয়ে আছে কি না, কিন্তু লোকটা যেমন চোখ লাল করে তাকিয়েছিলো, তাতেই বুঝেছি, সারাটা রাত গাঁজায় দম দিয়ে ভোরবেলা বেরিয়েছে গাঁজার ধোঁয়া মাথা থেকে খ্যাদাতে!’ বললেন আরেক চাপানরত জাপানিবদন।
সেই নয়ের তিনের চৌধুরি খেপে ওঠেন। সিঙ্গারায় এক নৃশংস সিংহদংশন করে গর্জে ওঠেন তিনি আহত খ্যাঁকশেয়ালের মতো খ্যাক করে, ‘আমাকে আবার ইংরেজিতে ঝাড়ি মারে, আর ইউ আ বাঙালি? জবাব দেবার সুযোগ পেলাম কই, তার আগেই মুশকো রাশকেলটা আমাকে পটকান দিয়ে মাটিতে ফেলে দিলো, তারপর এই মারে তো সেই মারে। তারপর আবার আমাকে টেনে দাঁড় করিয়ে সে কি জেরা, বাঙালি না পাঠান কীভাবে যেন টের পেয়েছে যে আমার পূর্বপুরুষ সেই খাস বাগদাদ থেকে এদেশে এসেছিলেন, আমার বংশ তুলে সে কি গালাগালি আমি তো রাগে অপমানে আরেকটু হলেই ওর হাত থেকে লাঠিটা কেড়ে নিয়ে দিচ্ছিলাম মাথায় বসিয়ে, এককালে লাঠিখেলা শিখেছি রীতিমতো আখড়ায় গিয়ে, জানেন তো কিন্তু লোকটার অবস্থা দেখে মায়া হলো, বুঝলাম, এ ঠিক প্রকৃতিস্থ নয়। তাছাড়া এতদিনের প্রতিবেশী। তাই আজকে কিছু না বলেই ছেড়ে দিয়ে এসেছি। কিন্তু আপনাদের জানিয়ে রাখছি, এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটলে, একটা হেস্তনেস্ত করে বসলে যেন আমাকে দোষ দেবেন না আর এমন অবস্থা হবে না-ই বা কেন, বলুন? যা একখানা দজ্জাল বউ!’
সফেদ দাড়িওয়ালা এক ভোঁতানাসা ভুক্তভোগী গোঁফ চুমড়ে নিয়ে বলেন, ‘আরে বউ এখানে কোন ফ্যাক্টর নয়! লোকটার স্বভাবই খারাপ। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেজন্যেই খেদিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এভাবে কি চলতে দেয়া যায়, নাকি এভাবে চলতে দেয়া যায়েজ? এমন একটা জালিম রাস্তায় লাঠি হাতে মহড়া নিতে থাকলে পাড়ার মুরুব্বি হিসেবে আমাদের মান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়? আর দুদিন পর তো ছেলেপিলে জড়ো করে ঘরের ভেতরে ঢুকে লাঠিবাজি করবে। তাছাড়া এতো বাঙালি বাঙালি করছে বাঙালির মধ্যে কী এমন মধু পেয়েছে সে? বাঙালি তো এক বেঈমান জাত, দোস্তের বুকে চাকু মেরে দুশমনের কোলে ঘুঘুসই খেলে!’
আমরা নির্বিকার চিত্তে চায়ে অলস চুমুক মারি, আর বয়স্কদের কথা শুনি। এনারাও দেখছি রাজা-উজির কম মারেন না। নাক বোঁচা আর রঙ ফর্সা হলে কি হবে, খাঁটি বাঙালি একেবারে!
ধোলাইখাওয়া ব্যক্তিবর্গ মনজুর চাচার মতো একটা পাড়াতুতো মাস্তানকে শায়েস্তা করার জন্যে আরো অনেক পরিকল্পনা পেশ করেন, কিন্তু একে অপরের বুদ্ধির নিন্দা করতে থাকায় শেষ পর্যন্ত তাঁদের প্রচেষ্টা বানচাল হয়ে যায়। দেখা যায় একজন আরেকজনের দিকে তেড়ে গিয়ে বলছেন, ‘দমকলে খবর দিতে বললাম, শুনলেন না আর দুদিন পর যখন রাস্তাঘাটে ধরে কামড়ে দেবে আপনাকে, এই জালার মতো ভুঁড়ির মধ্যে চৌদ্দটা জলাতঙ্কের ইনজেকশন দিতে হবে, তখন টের পাবেন, কত ধানে কত চাল, ভোঁদড় কোথাকার!’
সেই ভদ্রলোকও দাঁত খিঁচিয়ে জবাব দেন, ‘দমকল ডেকে এনে বরং নিজের মাথাটায় পানি ঢালানোর ব্যবস্থা করুন! তখন থেকে বলছি, দমকল নয়, ওটা সিটি কর্পোরেশনের কুত্তামারা ডিপার্টমেন্টের কাজ, কথাটা কানেই নিচ্ছেন না, উজবুক কাঁহিকা!’
চৌধুরি ভারি খ্যাপা, তিনি দুজনকেই থামিয়ে দেন। ‘নিনকমপুপের মতো কথা বলবেন না!’ খানিকটা ইংরেজির চোলাই মিশিয়ে গর্জে ওঠেন তিনি। ‘সিটি কর্পোরেশনের মতো ভদ্র একটা প্রতিষ্ঠান ঐ গুন্ডাটাকে শায়েস্তা করতে পারবে? তখন থেকে যে কথাটা বলতে চাইছি, আপনাদের দুজনের যন্ত্রণায় বলতেই পারছি না এখুনি থানায় ফোন করে ব্যাটাকে লকাপে ঢুকিয়ে লপসি খাওয়ানোর বন্দোবস্ত করতে হবে। থানার সেকেন্ড অফিসার আমার পরিচিত, কিছু টাকা পয়সা গছিয়ে দিলে অ্যায়সা কোঁৎকা লাগাবে যে ...।’
দাড়িওয়ালা ভদ্রলোক খেঁকিয়ে ওঠেন। ‘ভারি তো বুদ্ধি আপনার, বুদ্ধির ঢেঁকি একেবারে! পুলিশ দিয়ে কোন উপদ্রবের সমাধান হয়েছে আজ পর্যন্ত? ওর কাছ থেকে আরো বেশি টাকা খেয়ে পুলিশ উল্টে আপনাকে অবৈধ বোগদাদী নাগরিক হিসেবে ধরে নিয়ে যাবে না, তার কী গ্যারান্টি? বোংলা ভাইকে মোবাইলে একটা ফোন দিচ্ছি, তার জাগুয়ান জুলুমবাজ জনতার ক্যাডাররা এসে সাইজ করবে ইস কামিনেকো!’ রাগের চোটে পবিত্র উর্দু বেরিয়ে আসে তাঁর মুখ থেকে, আর চোখ থেকে খানিকটা জল, কারণ মনজুর চাচা এঁকে দু’ঘা সত্যি সত্যি লাগিয়েছেন।
যেহেতু সবাই বাঙালি, কাজেই মনজুর চাচা সম্পর্কে সিদ্ধান্তের সৎকার না করেই একে অপরকে “চুর”, “বৈতল”, “জামাতি রাজাকার” ইত্যাদি অশালীন সম্বোধনে ভূষিত করে চারজন চারদিকে বেরিয়ে পড়েন।
আর আমরা, নিরীহ জনতা তাকাই পিন্টুর মেজমামার অপরাধী চেহারার দিকে।
‘হ্যাঁ, আমিই এর জন্যে দায়ী।’ কবুল করেন তিনি নতমস্তকে, জর্জ ওয়াশিংটন যেমন একটা চেরি গাছ না আপেল গাছ কেটে তাঁর বাবার কাছে সত্য কথাটা স্বীকার করেছিলেন।
‘ছি মামা, আপনি অ্যামন!’ øেহের গলায় বলি আমরা।
মামা মাথা আরো নিচু করেন।
‘এ পাপের প্রায়শ্চিত্তও তবে আপনাকেই করতে হবে।’ যাত্রার বিবেকের চেয়েও নির্মম গলায় বলে শিবলি। আমি আর রেজা সায় দিই।
মামা করুণ চোখে আমাদের বেদিল ভাবভঙ্গি দেখেন। তারপর জুম্মনকে জোরালো গলায় পুরির জন্যে তাড়া লাগান।
সমস্যার মূলে মামা অবশ্যই নেই। কে যায় মনজুর চাচার সমস্যার মূলাধার হতে, হাজার মুলা দেখালেও কোন গাধার দায় পড়েনি অমন গাধামো করতে। সমস্যা বাঁধিয়েছিলেন মনজুর চাচার তেতলার ভাড়াটে, দ্বীন দরবার সাহেব।
দ্বীন দরবার কেমন নাম, এ নিয়ে আমরা প্রশ্ন তুলি। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের শিক্ষিত কানে নামটা ভারি অখদ্দে শোনায়। মামা জানান, আলবাৎ নামটা অখদ্দে, এর না আছে কোন অর্থ, না আছে কোন ঝঙ্কার ... আর নামের যে বাহক, সেই নামবর্দার লোকটিও ভারি বদখদ, চালচলনে সে তার নামের চেয়ে কিছু কম অখদ্দে নয়। ব্যাটা বয়সে বুড়ো, বুড়িকে নিয়ে মনজুর চাচার তেতলাটা বেশ নির্বিঘ্নেই বছর আটেক ধরে ভাড়ার বিনিময়ে ভোগদখল করে এসেছে সে। খানিকটা ভাড়াটেসুলভ বিঘ্ন ঘটাতে পারতো সে এই আট বছরে, তিন মাস পর পর বাড়িঘর চুনকাম করিয়ে দেবার বায়না করতে পারতো, ঘরের দেয়ালগুলো পেরেক মেরে ঝাঁঝরা চালুনি বানিয়ে রাখতে পারতো, পান খেয়ে খেয়ে পিচকিরি ফেলে ঘরটাতে ভৌতিক আল্পনা দিতে পারতো, নিদেনপক্ষে ঘরের মেঝেটাকে একেবারেই হতচ্ছেদ্যা করে খচ্চরের খোঁয়াড় বানিয়ে রাখতে পারতো এসব মনোরম উপভোগ্য ভাড়াটেসুলভ কীর্তিগুলো অনায়াসেই করতে পারতো দুজনে মিলে। কিন্তু তেএঁটে বুড়োবুড়ি সেই তেতলাটাকে বাড়ির মালিকের চেয়েও বেশি যত্নে, একেবারে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে ঝকঝকে তকতকে করে রেখেছিলো। তাই দেখে দেখে মনজুর চাচা আর মঞ্জু চাচীর একটা বিরাট ভুল ধারণা হয়েছে যে, ভাড়াটে হতে হলে বুঝি অমন উদ্ভটই হতে হয়।
শেষটায়, এত পরিশ্রম আর পরিছন্নতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে বুড়ো বয়সে এসে দরবার সাহেবের শখ হয়েছে, বউকে সুদ্ধু সে পাড়ি দেবে তার ছেলের কাছে, সেই সুদূর কানাডার মঁহ্রেয়ালে।
অমন গোছানো শুচিবাতিকঅলা ভাড়াটে চলে যাচ্ছে শুনে মঞ্জু চাচী তো হত্যা দিয়ে পড়লেন। অনেক ভয় দেখালেন, বললেন, আজকাল প্লেনগুলোর কোন মাবাবা নেই, হরদম তারা আকাশে ফেটে যায়, নয়তো গোঁৎ খেয়ে সমুদ্রে পড়ে, অথবা হাইজ্যাকাররা সব যাত্রীকে অতিথি পাখির মতো গুলি করে মারে। আর দৈবক্রমে নিরাপদে পৌঁছতে পারলেও, কানাডা যাওয়ার মতো কোন দেশ হলো? সেখানে ভয়ঙ্কর শীত পড়ে, সেখানে লোকে গরম থাকার জন্যে ফ্রিজের ভেতরে সেঁধিয়ে বসে থাকে। কানাডার লোকগুলিও ভারি অলপ্পেয়ে ও বদতমিজ, যতোসব তামিল গুন্ডা আর পাঞ্জাবী পকেটমার ঘুরঘুর করছে সেখানে, সাদা চামড়ার লোক ছাড়া আর কাউকে তারা খাতির করে না, আর বুড়োবুড়ি গোছের কাউকে পেলেই জোর করে ফরমাশ খাটিয়ে নেয়। ভয়ে কাজ হচ্ছে না দেখে লোভ দেখালেন, বললেন ভাড়া কিছুটা কমিয়ে দেবেন আগামী মাস থেকে। কিন্তু বুড়ো ওসবে পাত্তাই দেয় না। সে চোখ টিপে বলে, কিসের শীত, বুড়ি তো যাচ্ছেই সাথে, হে হে হে ... আর কত বদতমিজ লোক দেখলেন জীবনে, তাঁর ছেলেটাই তো মঁহ্রেয়ালের সবচে বড় বদতমিজ, উপমহাদেশের সবাই তাকে সমঝে সেলাম দিয়ে চলে, তামিল-তেলেগু-পাঞ্জাবী সকলে ... আর সারা বছর তো তিনি মন্ট্রেয়লে থাকবেন না, বেশি শীত পড়তে দেখলেই চলে যাবেন সেই লাস ভেগাস, সেখানে বুড়োবুড়ি রাতভর জোর হুল্লোড় করবেন, রুলেত জ্যাকপট ব্ল্যাকজ্যাক খেলবেন, স্ট্র দিয়ে হুইস্কি আর শুকনা মার্টিনি খাবেন, আর এই জোশে বুড়ি হেদিয়ে পড়লে বুড়োর জন্যে ভেগাসের স্বল্পবসনা স্বর্ণকেশী সুন্দরীরা তো আছেই, হে হে হে বুড়োবুড়ি গলাগলি করে হাসে।
মঞ্জু চাচী তো তাজ্জব হয়ে যান। দ্বীন দরবার সাহেবের যে লাস ভেগাসে গিয়ে ফূর্তি মারার মতো পয়সা আছে, তা তিনি জানতেন, খুব একটা দীনহীন বুড়ো নয়, কিন্তু সে যে এতবড় দ্বীনহীন মোনাফেক লম্পটের আঁটি, তা তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। এ তো দেখা যাচ্ছে পাড়ার বখাগুলোর চেয়েও ঝুনামাল। এর কাছে যে দেন দরবার করে আর কোন লাভ হবে না, বুঝতে পেরে তিনি দ্বীন দরবার সাহেবের আশা ছেড়ে দিয়ে নতুন ভাড়াটে খোঁজার সংকল্প নিয়ে দোতলায় নেমে আসেন।
খুব শিগগীরই মিস্টার অ্যান্ড মিসেস দরবার ঢলঢলে জিনস আর কুর্তা এঁটে বাক্সপ্যাঁটরা গুছিয়ে চলে যান মন্ট্রেয়ল। মনজুর চাচা অকূল পাথারে পড়েন, ভাড়ার টাকা তাঁর সংসারে খাটে বলে। খুব শিগগীরই তাঁর নতুন ভাড়াটে খুঁজে বের করতে হবে। কিন্তু বাড়ির দোরে, আর গলির মোড়ে টুলেট ঝুলিয়েই তিনি গোটা গন্ডগোলের কাছা ধরে টানতে থাকেন। খাল কেটে যেন কুমীর নিয়ে আসেন।
“কিন্তু” একটা থেকেই যায়, সেটা একটা জন্তু। মনজুর চাচার পোষা কুকুর, খাবলু।
খাবলুকে যে খুব বেশিদিন ধরে লালন করছেন তিনি, তা নয়, কারণ তাহলে এ পাড়ায় লোকসংখ্যা আরো ডজনখানেক কম থাকতো। দিনাজপুর না লালমনিরহাট, কোথায় যেন বেড়াতে গিয়ে খাবলুকে নগদ পয়সা খরচ করে কিনে আনেন মনজুর চাচা। তখন সে একেবারেই বাচ্চা ছিলো, পকেটে ঢুকিয়ে রাখা যেতো। কিন্তু ঢাকায় এসে মনজুর চাচার নিয়মিত ও মঞ্জু চাচীর কদাচিৎ সেবায় খাবলু একেবারে স্বমূর্তি ধরে বেড়ে উঠলো। দেখা গেলো, খাবলু ভুটিয়া কুকুর আর বাঘা শেয়ালের সঙ্কর একটা জীব। খান্দানের ইজ্জৎ রক্ষা ও শানবৃদ্ধির মহৎ উদ্দেশ্যে চোখ ফোটার এক মাসের মাথায় পাড়ার বিটলে ফেরিওয়ালাটা, যে কি না সাতসক্কালে “চাই বেগুউউউন” বলে হাঁক পেড়ে আমাদের মতো ধাড়ি ছেলেছোকরাদের কচিঘুম ভাঙায়, তাকেই বেশ উল্লেখযোগ্যভাবে খাবলে দিলো। নিতম্বের সিংহভাগ সেই শার্দুলকুত্তার সিংহদংশনে গচ্ছিত রেখে সেই ব্যাটা ঘুমান্তক সবেগুন সেই যে প্রস্থান করলো, আজো সে ফিরে আসেনি। পাড়ার বেগুনভক্তরা বেগুণীদেরই ভক্ত, খাবলুর মতো চমৎকার একটা তেজোলা কুকুরের তারিফ করতে তারা রাজি নয়, তারা সেই কাপুরুষটারই ভক্ত --- গুণের কদর কে করে এই বেগুনপোড়া দেশে --- তারা রীতিমতো মনজুর চাচার বাড়ি বয়ে গিয়ে তাঁদের কী এক অন্তর্গত বিরক্তি ঝেড়ে এলেন, ‘কী কুকুর পালছেন ভাই, লোকজনকে কামড়ে দেয়, দিলেন তো বেগুনভাজা দিয়ে আমার পরোটা খাওয়াটা ডকে তুলে? ... এখন আমাকে বাজারের বাসি শুকনা পোকায় কাটা ঝাঁঝরা বেগুন দিয়ে এই সকালের নাস্তা সারতে হয়!’
অভিযোগকারীদের অনেকেই অবশ্য অক্ষত ফিরতে পারেননি। খাবলু প্রথম দিনের প্রয়াসেই তার নাম অর্জন করে নিয়েছে, সেই নামের সার্থকতা প্রতিটি পলে, প্রতিটি পদে, প্রতিটি পশ্চাদ্দেশে সে প্রমাণ করার জন্যে একেবারে আক্ষরিক অর্থেই উন্মুখ, উদ্দন্তও বলতে পারেন, সর্বদাই সে কারো না কারো পেছনে দন্তাক্ষর ফুটিয়ে দেবার জন্যে দাঁত খিঁচিয়ে আছেই, অনেকেই বাড়ি ফিরলো বাজারের ঝাঁঝরা বেগুনের মতোই পেছন নিয়ে। আর কী দাঁত, বাপস, দাঁত সে পেয়েছে তার বাঘা শেয়াল ধারা থেকে, ল্যাজটাও, সেই ঝুপ্পুস পুচ্ছখানা নেড়ে সে যখন তেড়ে আসে, হোক না শিশু কুকুর, চলতি ভাষায় বাচ্চা কুত্তা বা কুত্তার বাচ্চা, কারো আর বেগুনের হয়ে ওকালতি করার জেদ থাকে না, সবাই ঝেড়ে লৌড় লাগায়।
প্রভুদের বাদে ঐ যা একটু পোষ মেনেছিলো খাবলু, দ্বীন দরবার সাহেব আর তাঁর বুড়ির কাছে। ভারি স্নেহ করতেন তাঁরা খাবলুকে, কেকবিস্কুট আর কিমা খাওয়াতেন প্রায়ই, আর খাবলুর মাথা চুলকে দিতেন। খাবলু এতে গলে গিয়ে হাউ হাউ করে ডাকতো। আর ডাকের কথা যখন এলো, তখন বলি, খাবলু ডাকটাও পেয়েছে ঐ বাঘা শেয়ালের। সত্যি বলতে কি, এক আকার আর খিদে ছাড়া ভুটিয়া কুকুরটার কাছ থেকে বিশেষ কিছু পায়নি সে, এমনকি লোম পর্যন্ত না। কিন্তু শেয়ালের প্রায় সবকিছুই সে ঠিকঠিক সাথে করে নিয়ে এসেছে। রাতবিরেতে হুক্কা হুয়া বলে শ্রৈগালিক গজলে টান দেয় সে, পাড়াপড়শির আত্মা কেঁপে ওঠে সে ডাক শুনে। এক দিক দিয়ে অবশ্য ভালোই ব্যাপারটা, চুরিছ্যাঁচড়ামি কমেছে পাড়ায়। এখন গেরস্থও চোরের মতো কাঁটা হয়ে থাকে, ভয়ে।
পাড়ার সাধারণ কুকুর, গোয়েন্দা গুল মোহাম্মদের স্নেহধন্য নেড়ি ডগির সাথে আবার খাবলুর দারুণ ভাব। মনজুর চাচা যখন মাঝে মাঝে স্টিলের তার প্যাঁচানো চামড়ার লাগাম পরিয়ে খাবলুকে রাস্তায় হাঁটানোর জন্যে বের করেন, ডগি সবসময় তার সঙ্গ নেয়। যেহেতু ডগি খাবলুর চেয়ে বয়সে বড়, মুরুব্বিস্থানীয় কুকুর, তার কাছ থেকে খাবলু অনেক কিছু শেখে। কাকে কাকে তাড়া করে উপর্যুপরি কামড়ে চালুনি বানিয়ে দিতে হবে, কাকে শুধু পিলে চমকানো ধমক দিয়ে ঠান্ডা ও আর্দ্রপাজামা করে দিতে হবে, আবার কাকে দেখলে আহ্লাদে গলে গিয়ে হুম হুম শব্দ করতে হবে, এসব সম্ভবত ডগিই শিখিয়েছে খাবলুকে। তাই গুল মোহাম্মদের বাড়িওয়ালা ও ডগির অন্যতম নিপীড়ক শাহেদ সাহেবকে একদিন মুক্তকচ্ছ করে তাঁর পশ্চাদ্দেশের খানিকটা ভার খাবলু লাঘব করে দিয়েছিলো, এক চাকলা মাংস খাবলে দিয়েছিলো একেবারে। কিন্তু গোয়েন্দাশ্রেষ্ঠ গুল মোহাম্মদকে একাধারে বিস্মিত ও পুলকিত করে তুলেছে খাবলু, তাঁর পায়ে নিজের বাঘা মাথা ঘষে, যদিও তিনি এই আনন্দে ঠকঠকিয়ে কাঁপছিলেন।
খাবলুর এই বাঘা ইমেজ সম্পর্কে পাড়ার পানের দোকানদাররাও বেশ ওয়াকিবহাল ছিলো, কোন উটকো লোককে সেই টুলেট সাইনবোর্ডটা পড়তে দেখলেই তারা হেসে উঠতো। ‘আরে করেন কি ছার ঐ বাড়িতে থাকতে গেলে তো কমরে বনেট বাইন্ধ্যা থাকন লাগবো, যেই একখান কুত্তা আছে, খিদা লাগলে মাইনষের হাতপাও চাবায়া খায়া ফালায়!’
অতএব কেউ আর খোঁজ করতে আসে না। এদিকে ভাড়াটিয়ার অভাবে মনজুর চাচার নানান খরচে টান পড়তে থাকে, তিনি শুধু মনে মনে ছন্দোবদ্ধ গালাগাল গর্জান, শালা দ্বীন দরবার জুয়াড়ি জাহেল ব্যাটা, কানাডা যাওয়ার আর সময় পেলি না, বুড়ো এ বয়সে তোর রস গেঁজে ওঠে, গেঁটেবাত হয়ে মর, ব্যাটা বুড়ো ভাম!
পাড়ার দোকানদারদের অসতর্কতার সুযোগ নিয়ে দুয়েকজন মরিয়া ভাড়াটিয়া একেবারে দোর পর্যন্ত উজিয়ে আসে বটে, কিন্তু তাদের সন্দেহজনক হাবভাব দেখে খাবলু তার শেকল ছুটিয়ে তেড়ে আসে। এ কয়মাসে তার চেহারার বেশ খোলতাই হয়েছে, আজগুবি এক জানোয়ারের রূপ হয়েছে তার, না শেয়াল না কুকুর, তার আওয়াজ শুনে আর অপার্থিব চেহারা দেখেই ভাড়াটেদের হৃৎপিন্ড গলার কাছে অ্যাটেনশন হয়ে থাকে, তাদের মধ্যে দুর্ভাগা কয়েকজনের কোমলে খাবলু কঠোর চিহ্ন এঁকে দেয়।
শেষ পর্যন্ত বিফল মনোরথে মঞ্জু চাচী এত্তেলা দিয়ে পাঠান পিন্টুর মেজমামাকেই।
কিন্তু চাচীর কাছে ভাড়াটে যুগিয়ে দেয়ার পবিত্র প্রতিজ্ঞা ও বিনিময়ে একটা লেদার জ্যাকেট উৎকোচ হিসেবে গ্রহণে সম্মতি জানিয়ে মামা যখন সেই কুকুরেপাওয়া বাড়ি থেকে বেরোচ্ছেন, তখনই খাবলুর দুষ্ট প্রবৃত্তি মাথা চাঁড়া দিয়ে ওঠে, সে কোত্থেকে নিঃশব্দে ছুটে এসে একটি পরীক্ষামূলক মৃদু দংশন করে মামার প্রশস্ত কোন স্থানে।
মামা কিছু বলেন না, কেবল দুঃখিত চিত্তে ছুটতে ছুটতে পেছন ফিরে বেঁধে রাখা খাবলুকে এক ঝলক দেখেন, অস্ফূট স্বরে আপসোস করেন কুকুরটার জন্যে, তারপর গিয়ে ওঠেন তাঁর বন্ধু ও পাড়ার ব্যর্থ চিকিৎসক জামান ভাইয়ের গ্যারেজে। সেখানেই জামান ভাইয়ের আস্তানা, কয়েকটি ইঞ্জেকশন নিয়ে ব্যান্ডেজবদ্ধ অঞ্চলকে সামলে মামা নিজের বাড়িতে দু’টি দিন বিশ্রাম করেন। বিশ্রামের ফাঁকেই তিনি লোক মারফত ডগিকে গেরেফতার করে তাঁর গরীবখানায় কয়েকদিনের জন্যে আমানত হিসেবে গ্রহণ করেন।
এরপর যা ঘটে, তা ভারি অপ্রত্যাশিত। একজন হৃষ্টপুষ্ট, হাসিখুশি, থ্যাবড়ানাক, গোলমুখ, ফর্সা ভদ্রলোক একটি ঝোলা কাঁধে মনজুর চাচার বাড়িতে হাজির হন। মঞ্জু চাচী ভারি হার্দিক আপ্যায়ন করেন তাঁকে, কারণ মামা চাচীকে ফোন করে জানিয়েছেন, তাঁর বিশিষ্ট বন্ধু জঙ বাহাদুর থাপা, নেপালি ইঞ্জিনিয়ার, আসবেন বাড়ি ভাড়া করতে, খাবলুকে যাতে ব্যান্ডেজ দিয়ে পাকিয়ে বেঁধে ফারাওদের মতো বাক্সে পুরে রাখা হয়।
নেপালি মঞ্জু চাচী বিস্তর দেখেছেন, কিন্তু অত ফর্সা আর বোঁচা নেপালি কখনো দেখেননি। কিন্তু তাঁর ভদ্রতা দেখে মুগ্ধ হয়ে যান তিনি। ভাঙা ভাঙা ইংরেজি আর বাংলায় নিজের পরিচয় দেন ভদ্রলোক, ‘আমার নাম জঙ আমি তেনান্ত হতে আগলোহি, হোয়া মাস্ত আই সাইন?’ অর্থাৎ এখুনি সইসাবুদ দিয়ে বাড়িতে উঠে যেতে চান তিনি।
মনজুর চাচা কিন্তু পরিষ্কার ইংরেজিতে আর মাঝে মাঝে অপরিষ্কার বাংলায় খাবলু সম্পর্কে অবহিত করেন এই নৈপালকে। ‘আই হ্যাভ আ ডগ, আ ড়্যাদার লার্জ ওয়ান, অ্যান্ড ইট হ্যাজ আ প্যাশন টু বাইট অফ বিগ চাঙ্কস অব ফ্লেশ ফ্রম স্ট্রেঞ্জারস, এসপেশিয়ালি ফ্রম দেয়ার রাম্প, অত্যন্ত তেজি কুত্তা! ইট হ্যাজ ভূটানিজ অ্যানসেস্ট্রি, আই বিলিভ!’
‘দগ?’ খুশিতে ঝলমলিয়ে ওঠেন জঙ বাহাদুর থাপা। ‘বুতানিজ দগ? লার্জ দগ?’
‘ইয়েস।’ অস্বস্তি ভরে মকবুল হন মনজুর চাচা।
‘অ্যান্দ ইত ইজ ওয়েল ফেদ ... উইথ হিউম্যান রাম্প?’
চাচা আরো অস্বস্তিতে পড়েন, ‘ওয়েল, ইট ইজ নট ইনটেনশন্যালি ফেড দ্যাট ওয়ে, ইউ নো ...।’
কিন্তু খুশিতে উপচে পড়েন জঙ। ‘আই লাইক দগ। ইন ফ্যাক্ত আই লাভ দগ!’
চাচা হাঁপ ছেড়ে বাঁচেন। লোকটা নেপালি হলেও বাঙালিদের চেয়ে ভালো, যেচে পড়ে যারা খাবলুর কাছে পাছা খুইয়ে ফিরে গিয়ে তার বদনাম করে বেড়াচ্ছে, তাদের চেয়ে অনেক ভালো।
জঙ বাহাদুর সেইদিনই মালসামানা নিয়ে চলে আসেন তেতলায়। মালসামানা তার খুবই সামান্য, একটা মোটে স্যুটকেস। তিনি নাকি হ্যামক পেতে ঘুমোন, তাই বিছানা নিয়ে সমস্যা নেই। কেবল কিছু হাঁড়িকুড়ি তিনি চেয়ে নিলেন চাচীর কাছ থেকে, কয়েকদিন পর সেগুলো ফেরত দেয়ার প্রতিজ্ঞা করে।
আর জঙ বাহাদুর যে অত্যন্ত অতিথিবৎসল লোক, তার প্রমাণ মেলে দুদিন পর। একেবারে নেপালি কেতায় নেমন্তন্ন করেন তিনি বাড়িওয়ালাকে, তাঁর গরীব ঘরে রাতের খাবার খেতে। ডাইনিং রুমে মাদুর বিছিয়ে নিজের দেশের রান্না পরিবেশন করেন তিনি, মাংসের রোস্ট, মাংসের কাবাব, মাংসের রেজালা আর ঘরে বানানো চাপাটি।
দাওয়াত খেয়ে ঘরে ফিরে দাঁত খোঁচাতে খোঁচাতে তৃপ্ত মনজুর চাচা মঞ্জু চাচীকে বলছিলেন, ‘ব্যাটা বেশ ভালো লোক দেখছি। আর বেড়ে রাঁধে! যদিও সব মাংসের পদ, কোন সবজি নাই নেপালিরা যে অ্যাতো মাংস খায়, জানতাম না।’
মঞ্জু চাচী বললেন, ‘ঐ যে ওয়াক না ইয়াক --- কীসব হাতির মতো বড় বড় গরু পালে ওরা, দেখোনি টিভিতে? ওগুলোই খায় হরদম!’
মনজুর চাচা বলেন, ‘এখন এই ব্যাটা সেই বুড়ো দ্বীন দরবারের মতো ভাগা না মারলেই হয়।’
মঞ্জু চাচী বলেন, ‘দ্যাখো, তোমার এই আহ্লাদের খাবলুর জন্যেই অনেক ভালো ভাড়াটে চলে গেছে কেউ কেউ তো উল্টে মামলা করার ভয় দেখিয়েছে, বেআইনীভাবে বাড়িতে নেকড়ে পোষার জন্যে! ওকে এত আহ্লাদ দিয়ে রাখলে কবে যে মানুষ খুন করে বসবে তার ঠিক নেই।’
মনজুর চাচা হাসেন। ‘করুক খুন। যাদের ও খাবলে দিয়েছে, তারা খাবলিত হবারই যোগ্য। যাকগে, খাবলুকে আমি ছাড়ছি না, ওকে আমি পেলে পুষে বাঘ বানাবো। দাঁড়াও, ওকে ছেড়ে দিয়ে এসে শুয়ে পড়ি।’
কিন্তু নিচে নেমে মনজুর চাচা খাবলুর ঘরে শুধু চামড়ার লাগামটাই পড়ে থাকতে দেখলেন। সেই সাথে গেট খোলা। খাবলু উধাও।
মনজুর চাচা খাবলুর জন্যে নয়, রাস্তায় হাঁটতে বের হওয়া নিরীহ জনগণের জন্যে উদ্বিগ্ন হয়ে উঠলেন। একবার বেরিয়ে দেখলেন আশপাশটায়, কান পেতে শুনলেন কোন অভাগার আর্তনাদ শুনতে পাওয়া যায় কি না। কিন্তু সব কিছুই বেশ স্বাভাবিকভাবে চলছে, খাবলুর আগ্রাসী অস্তিত্বের কোন পাত্তা নেই।
সাত পাঁচ ভেবে মনজুর চাচা গেট বন্ধ করে দিয়ে ঘুমুতে চলে যান। খাবলু ঠিক ফিরে আসবে। সাথে করে জনা চারেকের পশ্চাদ্দেশ না নিয়ে ফিরলেই হয়।
পরদিন সকালেই জঙ বাহাদুর থাপার মোবাইলে ফোন আসে। ফোনের বার্তা শুনে সাংঘাতিক ঘাবড়ে যায় সে, কয়েকবার বলে, ‘বাত, বাত --- ইউ তোল্দ মি দ্যাত ---।’ কিন্তু ওপ্রান্তের সংবাদ শুনে বিমূঢ় হয়ে বসে থাকে জঙ। তারপর ফোন বন্ধ করে বসে থাকে ঝাড়া দুমিনিট। তারপর হঠাৎ লাফিয়ে উঠে স্যুটকেস গোছাতে থাকে। স্যুটকেস গোছানো হয়ে গেলে সে একটা চিঠি লেখে, সেটাকে রান্নাঘরে হাঁড়িচাপা দিয়ে তার পাশে ঘরের চাবিটা রেখে সাবধানে দরজা খুলে বের হয়। চুপিচুপি একটা রিক্সা ডেকে এনে তাতে স্যুটকেসসহ চড়ে বসে সে, আর রিকশাওয়ালাকে তাড়া দেয়, ‘জোলে, পিলিজ, আলো জোলে ।’
‘কে করেছিলো সেই ফোন?’ শুধাই আমি।
‘কী বলেছিলো ফোনে?’ শিবলি টগবগিয়ে ওঠে।
‘খাবলু গেলো কোথায়?’ রেজা কাতর স্বরে জানতে চায়।
মামা একটু বিষণ্ন হাসি হাসেন, মোহাম্মদী বেগের হাতে কোপ খাওয়ার আগে সিরাজুদ্দৌলা যেমন হেসেছিলেন বলে আমাদের ধারণা।
‘তার আগে বাকিটা শোন!’
মনজুর চাচা মুখ লাল করে জঙ বাহাদুর থাপার চিঠিটা পড়েন।
‘ডিয়ার ম্যাডাম, অ্যান্ড স্যার,আই হ্যাভ কমিটেড সামথিং সো হরিবল দ্যাট ইট উইল এনরেজ ইউ বিয়ন্ড এনি লিমিট আই ক্যান ইম্যাজিন। বাট প্লিজ ডু ফরগিভ মি, সিন্স ইট ওয়াজ টেরিবলি মিসআন্ডারস্টুড।
আই থ্যাঙ্ক ইউ ফর ইওর হসপিটালিটি।
--- জঙ।’
‘এর মানে কী?’ হেঁকে ওঠেন চাচী। ‘বাড়িতে উঠতে না উঠতেই একটা লোককে পাড়াছাড়া করলো তোমার খাবলু। ওকে বিদায় করো।’
‘কী জ্বালা!’ চটে ওঠেন মনজুর চাচা। ‘খাবলু এলো কোত্থেকে এর মাঝে? --- আর খাবলু তো গতরাতে সেই যে বেরিয়েছে, আর ফেরেনি।’
‘না ফিরলে এই জঙ বাহাদুর পালালো কেন?’ কৈফিয়ত চান মঞ্জু চাচী।
‘সেটা আমি কিভাবে বলবো?’ চাচা ক্ষেপে ওঠেন। ‘হয়তো ওর জরুরি কাজ পড়ে গেছে। আবার লিখেছে টেরিবলি মিসআন্ডারস্টুড!’
‘কিন্তু তিনদিন পর বিনা নোটিশে বাড়ি ছাড়া কি এতোই টেরিবল?’ জানতে চান চাচী।
‘কি জানি! ওর নেপালি বুদ্ধিতে যা এঁটেছে তাই লিখেছে। এখন চটপট ঘরটা গোছাও।’ চাচা গজগজ করতে থাকেন।
কিন্তু ঘর গোছাতে গিয়েই দুজনে যা আবিষ্কার করেন, সে এক ভয়াবহ, নৃশংস, টেরিবলি মিসআন্ডারস্টুড আবিষ্কার।
‘দেখেছো, লোকটা ওর জ্যাকেট ফেলে চলে গেছে! কি ভুলো মন এই নেপালিগুলোর!’ ঝাঁঝিয়ে ওঠেন মঞ্জু চাচী, জ্যাকেটটা বাম হাতে তুলে ধরেন তিনি। ‘কী বিশ্রী গন্ধ, একেবারে পঁচা ---।’ কথা শেষ হওয়ার আগেই ফিট হয়ে পড়ে যান তিনি। আর মনজুর চাচা এক বিঘৎ হাঁ করে মাটিতে বসে পড়েন।
কারণ আর কিছুই না, যে জিনিসটা জ্যাকেট মনে করে তুলে ধরেছিলেন চাচী, সেটা একটা তুলতুলে চামড়া, সেটা থেকে ঝুলছে একটা জবরদস্ত লেজ, যেমনটা হয়ে থাকে ভুটানি কুকুরের সাথে বাঘা শেয়ালের মিশেল ঘটালে! আর চামড়াটা অবশ্যই কাঁচা।
জ্ঞান ফেরার পর চাচী প্রলাপ বকতে থাকেন, ‘ঐ ব্যাটা খাবলুকে কেটে কষিয়ে রান্না করে খেয়েছে, আমাদেরও খাইয়েছে! তারপরে ভেগেছে! ধরো ব্যাটাকে, পালাতে দিও না! খুনী! পিশাচ! --- আর ইয়াক থু, কুকুরের মাংস হারাম!’
আর ওদিকে মনজুর চাচা শুধু বলেন, ‘খাবলু! খাবলু রে!’
তার পরই তিনি ছুটে গিয়ে রান্নাঘর থেকে খেঁটে লাঠিটা যোগাড় করে রাস্তায় ঝাঁপিয়ে পড়েন। শালা নেপালি যেমন কুকুর খেয়েছে, তেমন মুগুরও তাকে খেতে হবে!
‘কিন্তু আপনি কিভাবে দায়ী?’ আমি কোনমতে বলি।
মামা করুণ চোখে চেয়ে থেকে মাথা নাড়েন। ‘ইশ, কী অপচয়! এত তেজি একটা কুকুর! কিন্তু দেশের ও দশের ভালোর জন্যেই আমাকে এমনটা করতে হলো!’
শিবলি বলে, ‘কিন্তু আপনি এটা কী করলেন?’
মামা বললেন, ‘খাবলুকে সিটি কর্পোরেশনের কুত্তামারা ডিভিশনের লোক এসে বেঁধে নিয়ে গিয়ে ইঞ্জেকশন দিয়ে মেরে ফেললে সেটা হতো একটা বিরাট অপচয়। তাই আমি ঠিক করলাম, সব কূল রক্ষা করতে হবে। ওকে না সরালে এ পাড়ায় যে কোন মূহুর্তে জলাতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারতো। কিন্তু মনজুর চাচাকে ডিঙিয়ে,’ মনজুর চাচা মামারও চাচা হন, ‘ঐ সোহাগা কুকুরকে সরানো সম্ভব ছিলো না। আমি দেখলাম, কুকুরটা বেশ মোটা তাজা, ভুটিয়া কুকুর তো। জঙ আমার অনেক দিনের পরিচিত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার, কুকুরের মাংস ভারি পছন্দ করে, তাই ওকেই ভাড়াটে হিসেবে পাঠিয়ে দিলাম। সে নতুন বাসায় যেতে খুব একটা গা করেনি, কিন্তু যেই বললাম বাড়িওয়ালা ওর জন্যে একটা ভুটিয়া কুকুর যোগাড় করে রেখেছে, অমনি তার নোলায় জল এসে গেলো, সে সুড়সুড় করে গিয়ে হাজির। তারপর কর্মোদ্ধার হবার পরদিন সকালে জানালাম, মারাত্মক বিপদ তার সামনে, যে কুকুরটা সে নিজে খেয়েছে এবং বাড়িওয়ালাকেও নেমন্তন্ন করে খাইয়েছে, সেটা সেই ভোজের কুকুর নয়, বরং বাড়িওয়ালার পোষা কুকুর। কাজেই জান বাঁচাতে চাইলে সে যেন ভাগে। --- জঙ বুদ্ধিমান লোক, চুপটি করে বেরিয়ে এসেছে জান আর স্যুটকেস হাতে। ইন ফ্যাক্ট, জঙ খুবই ভালো মানুষ, কিন্তু কুকুর দেখলে আর ওর মাথার ঠিক থাকে না।’
রেজা চোখ মিটমিট করে, ‘এ জন্যেই তাহলে ডগিকে রাস্তা থেকে তুলে নিজের বাড়িতে নিয়ে রেখেছেন? আপনার বন্ধু জঙের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যে?’
মামা মাথা দোলান। ‘হ্যাঁ রে। ডগিকে খেয়ে ফেললে সেটা বিরাট এক ট্র্যাজেডি হয়ে যেতো।’
শিবলি কী যেন ভাবছিলো অনেকক্ষণ ধরে চোখ কুঁচকে, এবার সে চোখ গোলগোল করে বললো, ‘কিন্তু নেপালিরা কি কুকুর খায়?’
মামা বললেন, ‘না।’
রেজা বললো, ‘তবে?’
মামা বললেন, ‘ওটা একটা ভাঁওতা। জঙ মোটেও নেপালি নয়, আর তার নামও জঙ বাহাদুর থাপা নয়, ওর আসল নাম কিম উল জঙ, খাস দক্ষিণ কোরিয়ার লোক। ইপিজেডের সব কুকুর খেয়ে সাবাড় করেছে ব্যাটা ও কোরিয়ান জানলে মনজুর চাচা ওকে বাড়িতেই ঢুকতে দিতেন না। কোরিয়ানরা যে খুব শখ করে কুকুর খায়, এটা তো সবাই জানে!’
খবর ১. মঞ্জু চাচীর ভাড়াটে জুটেছে, মঞ্চ থেকে খাবলুর করুণ ও বীভৎস প্রস্থানের পর, জনৈক খাঁটি ক্ষয়াটে চেহারার বাঙালি, যে মনজুর চাচার সশ্রস্ত্র সাক্ষাৎকারের মুখে হলফ করে বলেছে, কুকুর খাওয়ার বা খাওয়ানোর অভ্যেস, ইচ্ছা বা ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তার নেই।
খবর ২. পিন্টুর মেজমামা আর সেই লেদার জ্যাকেটটা চাইবার সাহস করেননি। তাঁর ধারণা, খাবলুর চামড়াটাই তাঁর মাথায় মুড়ে দেয়া হতে পারে।
খবর ৩. মনজুর চাচা আবার নীলফামারি না ঠাকুরগাঁও, কোথায় যেন বেড়াতে গেছেন, ভালো জাতের ভুটিয়া কুকুর আর ভালুকের শংকর কুকুরছানা খুঁজতে। সেরকম একটা ছানা খুঁজে পেলে সেটাকে কী কী সব মারদাঙ্গা ট্রেনিং দিয়ে সাথে নিয়ে নেপালে রওনা হবেন তিনি, এমনই কানাঘুষা শোনা যাচ্ছে ওয়াকিবহাল মহলে।
মন্তব্য
পাঠকদের কাছে একটি বিনীত অনুরোধ। গত কয়েকদিন ধরে যার সাথে আলাপ হচ্ছে, সে-ই দেখি রহস্যগল্পের প্রতি রীতিমতো বিমুখ। আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে রহস্যগল্পের পোকা, তাই রহস্যগল্প অপছন্দ করে এমন লোকজন দেখলে ব্যাপারটা আমার কাছে রহস্যজনক বলে মনে হয়। আপনার যদি একটু কষ্ট করে এব্যাপারে আপনাদের অবস্থান স্পষ্ট করে একটা দাগ রেখে যান, খুবই ভালো হয়। আর কারা কারা রহস্যগল্প সম্পর্কে বিরাগ পোষণ করেন, জানতে বেশ কৌতূহল হচ্ছে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আপনাকে আগেও বলেছি, যাবতীয় রহস্যকাহিনীর (গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি) প্রতি আমি আজীবন রীতিমতো বিমুখ ও উদাসীন। কারণ একটাই: পড়ে মজা পাই না। টানে না। জুইত পাই না। বালা পাই না (সিলেটী ভাষায়)।
এখন আপনি সরাসরি বলুন, ব্যাপারটা আপনার কাছে কেন রহস্যময় মনে হয়? আমার পছন্দ বলে দুনিয়ার সবার তা পছন্দ হতে হবে - এটা কি বেশ বাড়াবড়ি ধরনের প্রত্যাশা নয়?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
- দুনিয়াডা পঁইচা গেছে, বরবাদ হইয়া গেছে, নষ্ট হইয়া গেছে, উত্তর বঙ্গীয় ভাষায় মঙ্গায় ধরছে!
হালায় ভালো জিনিষের কদর উইঠা গেছে। খালি খাইষ্টা খাইষ্টা মালের চাহিদা আর যোগান। কেয়ামতের আর বেশি দেরী নাই।
দে পানা দে, ইয়া ইলাহী দে পা'না!
_________________________________
<সযতনে বেখেয়াল>
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কথা সঠিক নয়। রহস্যকাহিনীর ভক্তের সংখ্যা অগণ্য। আর তাই আমি অপছন্দ করলেও কারুর কিছু যায় আসার কথা নয়।
একখান প্রশ্ন: রহস্যকাহিনী আর খাইষ্টা মাল ছাড়া আর কোনও অপশন কি নেই এই পৃথিবীতে?
আরও একখান প্রশ্ন: পানা বস্তুটা কী, ভাই?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বলেছি ব্যাপারটা রহস্যময় মনে হয় আমার কাছে। দুনিয়ার সবার পছন্দ হোক, এ প্রত্যাশা তো কোথাও ব্যক্ত করেছি বলে দেখতে পাচ্ছি না, বাড়াবাড়ি বা কমাকমি তো দূরের কথা।
আমি আপনাকে আমার বক্তব্য পুনর্পাঠের জন্যে জোরালো আহ্বান জানাচ্ছি ;)।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ধুর ! যেই গল্পে রহস্য নাই আমি সেইটা পড়িনা।
____________________________
লাল গানে নীল সুর হাসি হাসি গন্ধ......
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
দারুণ। পড়তে গিয়ে বার বার শিবরাম চক্রবর্তীর কথা মনে হচ্ছিল।
এবার গোয়েন্দা গল্পগুলো ধারাবাহিকভাবে পড়তে চাই।
আরেকটা মনজুর চাচা স্পেশাল, আগে পড়ছিলাম।
রহস্যগল্প পঠনে 'হ্যাঁ' ভোট দিলাম ।
"রয়েসয়ে"–র মাল আর কত ছাড়বেন? বলি আমরা কি আর ব্লগস্পটে যাই না?
মিল্টন টেকনাফির গল্পটার কি হবে? কিছু না হলে কইলাম খাইছি...........................
কি মাঝি? ডরাইলা?
টেকনাফির গল্প কিঞ্চিৎ এগিয়েছে কিন্তু!
হাঁটুপানির জলদস্যু
আমার তো বেশ লাগলো- আরো আসুক না মঞ্জুর চাচার গপ্পো...
---------------------------------------------------------------------------
- আমি ভালোবাসি মেঘ। যে মেঘেরা উড়ে যায় এই ওখানে- ওই সেখানে।সত্যি, কী বিস্ময়কর ওই মেঘদল !!!
নতুন মন্তব্য করুন