মোবিলিনির উৎপাত

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: বিষ্যুদ, ১৯/০৭/২০০৭ - ৮:১৮অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

আমি খুব মনোযোগ দিয়ে একটা কাজ করছিলাম। অফিসের কাজ আর কি।

হঠাৎ ফোন বাজলো। মানে, আমার মোবাইল ফোনটা।

মিসড কল।

আমার কাজের মনোযোগ কিছুটা নষ্ট হলো। ধরেন, ১০০ থেকে কমে ৭০?

আমি মোবাইল ফোনটা সাবধানে তুলে ডায়ালে নাম্বারটা দেখলাম। অচেনা নাম্বার।

আমি অস্ফূটে বললাম, এই সস্তার দিনে মিসড কল দেয় কোন শালার ভাই?

ঘরে কেউ নাই। ভরসা করে আবার গালি দেই, বোকাচো!

জবাবে আবার মিসড কল আসে।

কাজে ফিরতে গিয়েও ফেরা হয় না। নামাজ আমার হইলো না আদায়।

কিছুক্ষণ রোষকষায়িতলোচনে তাকিয়ে থাকি মোবাইল ফোনটার দিকে। যারা রোষকষায়িতলোচন বোঝেন না, তাঁদের জীবনের চার আনাই মিছে।

কাজে ফিরে যাই খানিক বাদে। মনোযোগের পারদ আবার চড়তে থাকে একটু একটু করে। ধরেন, ৮৫।

আবার মিসড কল আসে।

এইবার ফোনটাকে পাকড়াও করি ডি মেজরে। কল দিয়ে বলি, "হ্যালো?"

এক বিদঘুটে, ঘড়ঘড়ে নারীকণ্ঠ বলে, "হ্যাল'।"

আমার মেজাজটা বিষিয়ে যায়। বলি, "কাকে চাইছেন?"

ঐপ্রান্ত থেকে এক পাশবিক আহ্লাদী আবেগ ফুটে ওঠে, "আমি ত আপনারেই চাই!"

আমার পা থেকে মাথা পর্যন্ত জ্বলে যায় রাগে, ক্ষোভে। বলি, "দুঃখিত, আপনি রং নাম্বারে ফোন করেছেন। আমি আপনা নই। আমি অন্য কেউ।"

ফোন কেটে দিই তারপর।

কিন্তু কাজে আর মন বসানোর সুযোগ হয় না। আবার আসে মিসড কল। আবার। আবার। আবার।

আবার ফোন করি, বলি, "আপনি মিসড কল দিচ্ছেন কেন বারবার?"

এবার এক জঘন্য হেঁড়ে স্টেটমেন্ট ভেসে আসে, "আপনারে আমার খুব ভাল লাগে!"

ক্ষোভে দুঃখে ইচ্ছা করে মাটিতে মিশে যাই। কেন এই ক্ষ্যাত মাগীর কবলে পড়তে হলো আমাকে? কেন? কেন? অ্যায় দুনিয়া, কেয়া তুঝসে কাহেঁ?

বলি, "উত্তম! খুবই ভালো লাগলো জেনে। কিন্তু আমি একটা জরুরি কাজে ব্যস্ত। অনুগ্রহ করে আর মিসড কল না দিলে বাধিত হই। ধন্যবাদ।"

কিন্তু চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনী। আবার মিসড কল আসে, আবার।

আমার মোবাইল সেটখানা সুপ্রাচীন। লোকচক্ষুর সামনে সাধারণত বার করিনা। অফিসদত্ত সেট হারিয়ে ফেলেছি (এটা নিয়ে অন্য পোস্টে ফ্যানাবো), নতুন সেট কেনা হচ্ছে না কার্পণ্য ও আলস্যবশত। পুরনো সেটে কল বার করার অপশন খুঁজতে গিয়ে দেখি নানারকম ধুনফুন কথাবার্তা বলে। বিরক্ত হয়ে ফোনের কম্পন আর ঘন্টন বন্ধ করে ফোন করি বন্ধুবর বগাকে।

বগা ফোন ধরে উৎফুল্ল গলায়, "কে, ইয়ে নাকি?"

আমি বলি, "বোগ্লু, ইয়ে বলছি। আচ্ছা, আমি অমুক ফোন কোম্পানিতে অভিযোগ করবো ভাবছি। নাম্বার আছে তোর কাছে?"

বগা একটু বিরতি নেয়। বলে, "কী অভিযোগ?"

আমি কাঁচা ভাষায় বলি, "আর বলিস না, এক আবাল ফোন করে বিরক্ত করছে। এদিকে এক বস্তা কাজ।"

বগা বলে, "ছেলে না মেয়ে?"

আমি বলি, "মেয়ে বললে মেয়েদের অপমান হয়। যা ঘড়ঘড়ে গলা!"

বগা উৎফুল্লতর হয়ে ওঠে, বলে, "আরে এ নিয়ে অভিযোগের কী আছে? একটা মেয়ে ফোন করে জ্বালাচ্ছে, এ তো এক পরম সাফল্য!"

আমি আরো কাঁচা ভাষায় চলে যাই,বলি, "তোর সাফল্যের জননীকে আমি রমণ করি। নাম্বার দে ভগ্নিধর্ষক।"

বগা পিছিয়ে যায়, বলে, "আমি তো এসব নাম্বার জানি না। আমার কাছে মেয়েরা ফোন করলে আমি মহানন্দে কথা বলি।"

আমি ভাবি, বগার নাম্বার এ মাগীকে গছিয়ে দিলে কেমন হয়?

বগা কাজের অজুহাত দেখিয়ে ঘ্যানঘ্যান করতে থাকে। আমি বিদায় নিই।

ওদিকে বহু বহু মিসড কলে ফোন পূর্ণ। বাধ্য হয়ে ফোন ধামাচাপা দিয়ে হাগনকোঠিতে চলে যাই।

ফিরে এসে হাতের কাজ গুছিয়ে ধামার নিচ থেকে ফোন বার করি। সেই ঘড়ঘড়ে লালিমা পাল গঙ্গারামের মতোই অধ্যবসায়িনী, ঊনিশটি বার মিসড কল দিয়েছে এর মধ্যে।

ফোন পকেটস্থ করে বেরিয়ে পড়ি অফিস ছেড়ে। পাকড়াও করি এক লুপ্তপ্রায় সহৃদয় সিয়েনজিয়েরোকে, যে আমাকে বিনা বাক্যব্যয়ে বাড়ি পৌঁছে দিতে রাজি হয়ে যায়।

বাড়ি ফেরার পথে ফোন করতে গিয়ে ফোন বার করে দেখি, নিঃশব্দে কল এসেই চলছে। এবার পাকড়াও করে কিছু কর্কশ গালমন্দ করি বেটিকে। বলি, আপনার খেয়েদেয়ে কাজ না থাকলে ঘর ধোয়ামোছা করেনগা।

অপরপ্রান্ত থেকে লালসাজর্জরিত হুমকি ভেসে আসে, "আমি তো আপনারেই ধোয়ামোছা কইরা দিতে চাই!"

কথাটা ভালো লাগে আমার কাছে, কিন্তু কথার উৎপত্তিস্থলে আক্রমণ শাণিত করি। মিনিট দুয়েক প্রমিত ভাষায় বকাবকি করার পর আবার ফোন পকেটস্থ করি।

সিয়েনজিয়েরো ক্ষেপে যায়। বলে, ভাই, এই মবাইলই দ্যাশটারে খাইল। দিন নাই রাত নাই খালি ধুনফুন।

আমি কী আর বলবো।

বাড়ি ফিরে মোবাইল বার করে দেখি কল এসেই চলছে, এসেই চলছে। এবার কলধারিণী তার ঘড়ঘড়ে গলায় কিছুটা আবেগ সঞ্চারিত করে। বলে, আমার কথাটা তো একটু শুনবেন?

আমি বলি, জ্বি বলেন?

সে আবারও পৈশাচিক হাসে। বলে, আপনারে আমার খুবোই ভাল লাগে।

আমি বলি, আপনাকে আমার ভালো লাগছে না। আপনি লোক খারাপ। বেহায়া আওরাত। ধুয়েমুছে দিতে চান ভালো কথা, কিন্তু তার আগে লব্জ ঠিক করেন। আবার যদি ফোন করেন তাহলে কিন্তু ...।

মাগী হেসে ওঠে শ্মশানের হাঁকিনীর মতো। বলে, কী করবেন? এক সিম বন্ধ হইয়া গেলে আরেক সিম দিয়া গুতামু!

আমি এবার বিরক্ত হয়ে বলি, ড়্যাবের কাছে নাম্বার দিয়ে দিবো কিন্তু।

এবার কাজ হয়। ঘড়ঘড়ে গলা আঁতকে ওঠে, বলে, ছি, আপনি ভীতু পুরুষ!

আমি সানন্দে সায় দিই। বলি, হ্যাঁ, ক্ষ্যাতদের সাথে ধোয়ামোছা মারপিট করার সাহস আমার নাই। আলবিদা!

অনেকক্ষণ হলো আর কোন মিসড কল হচ্ছে না। হে ড়্যাব, তুমি মহান।


মন্তব্য

অমিত এর ছবি

ফি হপ্তা এরম ৭টা নামালেই চলব।হায় মিসকল ! কতদিন দেখিনা তোমায়।
_______ ____________________
suspended animation...

তারেক এর ছবি

হে ড়্যাব, তুমি মহান। দেঁতো হাসি

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

হিমু এর ছবি

ভাইরে, ঐ বিখাউজ ভয়েসের সাথে কোন সুস্থ আদমের রসারসি করা সম্ভব না।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অপালা এর ছবি

এই শব্দের ভাঙচুড় করা টা ই বেশহি আকর্ষনীয় করে তোমার লিখা।

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

আসল কাহিনী হলো সেই পরিবার পরিকল্পনার রাবারী যন্ত্র গাড়িতে রেখে আসা। হিমু বুঝতে পেরেছে এইটা আসলে একটা টেস্ট। কারো শালীর দিদিই যে টেস্ট নিয়েছে এটা বুঝতে পেরে সে ভালোমানুষীর অভিনয় করে গেছে।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

হিমু এর ছবি

ঐ বেটির দুলাভাইয়ের জন্য আমার আন্তরিক সমবেদনা রইল। বেচারা। আসল সুদ দুইটাই পইচা গন্ধ বাইর হইছে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

দেখো, আসল আরো এঁড়েকন্ঠী নাকি।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

ফারুক হাসান এর ছবি

অছ্যুৎ বলাইয়ের সঙ্গ একমত।

-----------------------
এই বেশ ভাল আছি

নজমুল আলবাব এর ছবি

মন খালি মন্দিরা খোজে তাইনা হিমু মিয়া? তবে রচনা আরামদায়ক হইছে বরাবরের মত।

নিঘাত তিথি এর ছবি

আহ! সত্যিই এরকম যন্ত্রণায় পড়তে হয়েছে? জেনেও শান্তি। মোবাইলের যন্ত্রণা খালি একলা মেয়েদেরই পোহাতে হয় না তাহলে, এখানেও সম-অধিকার! গড়াগড়ি দিয়া হাসি

--তিথি

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

মাশীদ এর ছবি

আমি সবসময়ই বিশ্বাস করে এসেছি এই দুনিয়ায় সবার জন্যই কেউ না কেউ আছে। মানে পারফেক্ট ম্যাচ আর কি! তোকে নিয়ে এতদিন দুশ্চিন্তায় ছিলাম। তোর মত বিখাউজ কারো জন্য আদৌ কেউ জন্মেছে কিনা! যাক, এইবার একটু ভাল লাগছে। এই ছেড়িই তোর পারফেক্ট ম্যাচ। ড়্যাবের ভয় দেখিয়ে একে খেদিয়ে দেয়া ঠিক হয়নি। আমি নিশ্চিত, এ আবার আসবে তোর জীবনে, মিসড্ কলের ডালি সাজিয়ে। প্রমিত গালি দিয়ে আর কূল পাবি না তখন!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

হিমু এর ছবি

মাশীদের এই বদদোয়ামূলক মন্তব্য মডারেট করার জন্য আকূল আবেদন জানাই স্যারদের কাছে! এই অফমান গিলা বাচা পাফতলে দ্যাখেন!

এই যে তলঃ উক্তিটি সবুজ বাঘের একটি শক্তিশালী বাঘের গল্ফ-এর দ্বিতীয় খন্ড থেকে উদ্ধৃত।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মাশীদ এর ছবি

এসব আবেদনের পিছে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। বরং এই বালিকাকেই যত্ন করে কামড়ানোর প্রস্তুতি নে এখন থেকে। ইউর পারফেক্ট ম্যাচ ইজ ফাইনালি হিয়ার!


ভাল আছি, ভাল থেকো।


ভাল আছি, ভাল থেকো।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

ঠিক ধরেছিস মাশীদ। দেঁতো হাসি

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

সুমন চৌধুরী এর ছবি

এইটা এক্টা কাম কর্লা?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

কনফুসিয়াস এর ছবি

লেখায় বিপ্লব।
মন্তব্যে ডাবল বিপ্লব!
-যা দেখি তা-ই বলি...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

উৎস এর ছবি

কোন লোক গলা ভাড়িয়ে এমন করে থাকতে পারে।

রেজওয়ান এর ছবি

আপনি সত্যিই বেরসিক। নাহলে অন্য কারো ভয়ে এমন করসেন। আসলে ভদ্রমহিলার একটু গ্যাজাইতে শখ হইসিল মনে হয়।
××××××××××××××××××××××××××××××××××××
পৃথিবী কথা বলছে আপনি কি শুনছেন?

অতিথি এর ছবি

লেখা পড়ে বেশ কয়েকটা নতুন শব্দ শিখলাম। লেখা দিয়েই যায় চেনা! আরো চলুক।

দ্রোহী এর ছবি

লেখা বরাবরের মতোই মচমচে।

বেচারীর জন্য কষ্ট হচ্ছে! আহারে, বেচারীর কন্ঠটা মধুর হলে হিমু কি এভাবে না করতে পারতো? বাস্তবে দেখা যাবে বেচারীর চেহারা মাশাল্লাহ ঐশ্বরিয়া!! হিমু জানলোনা, সে কি হারালো।


কি মাঝি? ডরাইলা?

হিমু এর ছবি

না, উৎস ভাইয়ের সাজেশন মেনে নিতে পারছি না। দ্রোহীর সাজেশনও মেনে নিতে ইচ্ছা করছে না, কোন ঐশ্বরিয়া ঐরকম ঘড়ঘড়ে স্বরে কথা বললে কানে ধরে বার করে দেয়া হবে। এটা একটা ষড়যন্ত্র ... আমার ধারণা সিআইএ, কেজিবি, মোসাদ আর মাশীদ আছে এই ষড়যন্ত্রের পেছনে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শোহেইল মতাহির চৌধুরী এর ছবি

কালো হিমু, হলুদ ড়্যাব।

-----------------------------------------------
সচল থাকুন ---- সচল রাখুন

-----------------------------------------------
মানুষ যদি উভলিঙ্গ প্রাণী হতো, তবে তার কবিতা লেখবার দরকার হতো না

সুমন চৌধুরী এর ছবি

আইজকা ফোন করে নাই?
.......................................
ঋণম্ কৃত্বাহ ঘৃতম্ পীবেৎ যাবৎ জীবেৎ সুখম্ জীবেৎ

ঝরাপাতা এর ছবি

কন্ঠ যদি না হয় প্রেম জাগানিয়া,
কেমন করে পস্তাবে হিমু ভাইয়া?

আচ্ছা এবার কিন্নরকন্ঠীদের নিয়ে কিছু গল্প তো বলা যায়, নকি সেগুলো টপ সিক্রেট?


রোদ্দুরেই শুধু জন্মাবে বিদ্রোহ, যুক্তিতে নির্মিত হবে সমকাল।


বিকিয়ে যাওয়া মানুষ তুমি, আসল মানুষ চিনে নাও
আসল মানুষ ধরবে সে হাত, যদি হাত বাড়িয়ে দাও।

দ্রোহী এর ছবি

কি অবস্থা? মিসকল আসে আর?

সি.আই.এ, কেজিবি, মোসাদ ও মাশীদ? হা হা হা হা জটিল!!


কি মাঝি? ডরাইলা?

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।