চৌধুরীর বাড়িতে যাবার জন্যে দুলাল কয়েকদিন ধরেই ঘ্যাঙাচ্ছিলো। চৌধুরী নাকি কী একটা নতুন রেসিপি পেয়েছেন গরুর মাংস রান্না করার। আমাদের নিমন্ত্রণ।
চৌধুরীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ মানেই পেঁয়াজ-রসুন-আদা কাটা, মশলা বাটা, খাটাখাটনির চূড়ান্ত। তবে রান্নার নিন্দা করা যাবে না। খাবারের পাশাপাশি যেসব গল্প পরিবেশিত হয়, সেগুলি গুলগল্প হলেও মুখরোচক। দুলালের আগ্রহ যে কোনটার দিকে বলা মুশকিল।
আজ হাতে কিছুটা সময় আছে বলে আমি নিমরাজি হয়েছি, তবে দুলালকে রিকশা ভাড়া দিতে হবে। দুলাল এ শর্তে রাজি, যদি চৌধুরীর বাড়িতে ঢোকার আগের গলিতে চায়ের দোকানে ওকে চা খাওয়াই।
চৌধুরীর বাড়ির আগের গলির চায়ের দোকানে আমরা দীর্ঘদিন ধরে চা খেয়ে আসছি, কখনো ব্যাটাকে চায়ের দোকানের ভেতরে বসতে দেখিনি। আজ ভেতরে ঢুকেই ঘাবড়ে গেলাম। বড় বেঞ্চের পুরোটা দখল করে বসে আছেন চৌধুরী, উল্টোদিকে দু'জন গোবেচারা চেহারার ভদ্রলোক। তিনজনের সামনেই চায়ের কাপ।
চৌধুরী যেন আমাদের দেখেও দেখলেন না। চায়ের কাপ হাতে নিয়ে স্মিত মুখে উল্টোবর্তী এক বেচারাকে বললেন, "বুঝলেন খান সাহেব, বড় বিচিত্র আমাদের এ পৃথিবী। তাই চোখ কান খোলা রাখতে হয়। উঁচিয়ে রাখতে হয় নাকটাকে। সুযোগ পেলেই জিভ দিয়ে চেটে এই পৃথিবীর স্বাদ নিতে হয়।"
খান সাহেব দেখলাম জিভ দিয়ে শুকনো ঠৌঁট ভেজাচ্ছেন। বিচক্ষণ লোক। জিভের নাগালের বাইরের পৃথিবীকে চেটে দেখতে যাওয়া একটা বিপজ্জনক কর্ম, তা তিনি ভালোই জানেন মনে হলো।
চৌধুরী এবার খানের পার্শ্ববর্তীর দিকে তাকিয়ে এক বিকট নোবেলজয়ী হাসি উপহার দিলেন। "পর্যবেক্ষণ! পর্যবেক্ষণ বড় জরুরি, বুঝলেন সৈয়দ?"
সৈয়দ গোমড়া মুখে চায়ের কাপে চুমুক দিলেন শুধু।
আমরা আলগোছে পাশের টেবিলে বসে চায়ের ফরমাশ দেই।
চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললেন, "পর্যবেক্ষণেরও নানা সহি কায়দা আছে। সঠিক পন্থা অবলম্বন করলে আজ ভূঁইয়াকে এভাবে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকতে হতো না। ঝামেলাটা ঐ ছোকরা আর ছেমরির ওপর দিয়েই যেতো।"
একটা গল্পের গন্ধ পেয়ে দুলাল দেখি নড়েচড়ে বসেছে। অ্যাকশন আর রোমান্স, দু'টোই আছে দেখা যাচ্ছে।
চৌধুরী উদাস গলায় বললেন, "শুধু হাড্ডি ভাঙলে একটা কথা ছিলো, নিজের বাড়ির ছাদে তিন তিনটা বডি এভাবে পাওয়া গেলো ... লোকে কী বলবে?"
সৈয়দ শুকনো গলায় বললেন, "পুলিশ তো সবাইকে হুমকি দিয়ে বেড়াচ্ছে!"
চৌধুরী সোৎসাহে বললেন, "তা তো বেড়াবেই! পুলিশের কাজই হচ্ছে বেড়ানো। হুমকি টুমকি দিয়েই তারা কোনমতে করে খাচ্ছে।"
খান সাহেব মিনমিন করে বললেন, "ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণে কী সমস্যা ছিলো যেন বলছিলেন?"
চৌধুরী বললেন, "বলিনি, এখন বলবো। দাঁড়ান, তার আগে আরো চা দিতে বলি। ... অ্যাই, এই দুই টেবিলে পাঁচ কাপ চা দিয়ে যা!"
দুলাল হাসিমুখে বললো, "হেঁ হেঁ হেঁ ... ভালো আছেন তো, না?"
"ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণের প্রথম সমস্যা হচ্ছে, এখানে বাড়ি বানানোর আগে সে পড়শিদের যাচাই করে দেখেনি।" চৌধুরী নতুন চায়ের কাপে সুড়ুৎ করে চুমুক দিলেন। "যার বাড়ির গায়ে গা ঘেঁষে সে বাড়ি বানিয়েছে, সেই মামুন ব্যাটা মস্তবড় বদমাশ।"
সৈয়দ আর খান, দু'জনেই দেখলাম ইতিবাচক সাড়া দিলেন এ কথায়।
"যদি মামুনের বাড়ির পাশে তিনি বাড়ি না বানাতেন, আজ এ সমস্যায় ভূঁইয়াকে পড়তে হতো না।" চৌধুরী রায় ঘোষণা করলেন।
দুলালটা ফস করে বলে বসলো, "কিন্তু ক্যান? মামুন কী করসে?"
চৌধুরী দুলালের বালখিল্যতায় যেন করুণা বোধ করলেন, সেকেন্ড দশেক জুলজুলিয়ে দুলালের দিকে চেয়ে থেকে বললেন, "কী করেছে? মামুন কী করেছে জানতে চান? শুনুন তবে! মামুন দু'টো বিয়ে করেছে!"
আমি আর দুলাল একে অপরের মুখ দেখি। জনৈক মামুন দু'টো বিয়ে করায় কেন জনৈক ভূঁইয়াকে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে, সেই সমীকরণ আর পরের লাইনে নিয়ে যেতে পারি না আমরা, ইজ ইকুয়েল টু জিরো লিখেই বসে থাকতে হয়।
খান দেখি মাথা নাড়ছেন, "মামুন লোকটা ভালো না। বড় বখাটে। শুনেছি আগে গুন্ডা ছিলো।"
চৌধুরী বললেন, "ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণের এটাও একটা ত্রুটি। সে মোটেও খেয়াল করতে পারেনি যে সে দুই বউওয়ালা এক লোকের বাড়ির পাশে বাড়ি বানিয়ে বাস করতে যাচ্ছে।"
দুলাল চায়ের কাপ না ধরা হাতটা দিয়ে মাথা চুলকাতে লাগলো। ওর জিজ্ঞাসা আমার মনেও, মুখ ফসকে বলে ফেললাম, "সেটা ঠিক কিভাবে পর্যবেক্ষণ করা যায়?"
চৌধুরী বাঘের হাসি হাসলেন। "যখন জানতেই চাইলেন, তখন বোঝা গেলো, পর্যবেক্ষণের সেই শক্তি আপনার মধ্যেও নেই! ... আছে! উপায় আছে! তবে তার জন্যে চাই ইচ্ছা। ভূঁইয়ার মধ্যে আদপে সেই ইচ্ছা ছিলো কি না, সেটাই প্রশ্ন। আমাকে দেখুন।" বুক চিতিয়ে বসলেন তিনি। "বাড়ি ভাড়া নেবার আগে দু'পাশে দুই পড়শি দেখে নিয়েছি। এই যে খান সাহেব, নিরীহ ভালোমানুষ। এই যে সৈয়দ সাহেব, আরেক ভদ্দরলোক।"
খান আর সৈয়দ দু'জনেই লজ্জা লজ্জা ভাব করে চায়ের কাপে ফড়াৎ করে চুমুক দিলেন।
দুলাল বললো, "কিন্তু ভূঁইয়া সাহেবের হইসেটা কী?"
চৌধুরী বললেন, "গত পরশু সন্ধ্যায় ভূঁইয়ার ছাদে তিনটা বডি পাওয়া গেছে। তিনটাই ভাঙা।"
আমি জানতে চাইলাম, "ভূঁইয়া তার মধ্যে একটা বডি?"
চৌধুরী ইতিবাচক হাসি দিলেন। "বাকি দু'জনের একজন হচ্ছে মওদুদ, আরেকজন মরিয়ম।"
দুলাল চা নামিয়ে বলে, "এরা কারা?"
চৌধুরী আবারও চায়ের ফরমায়েশ দেন। "মওদুদ ভূঁইয়ার বাড়ির চিলেকোঠার ভাড়াটিয়া। পেশায় ছাত্র। আর মরিয়ম হচ্ছে ঐ ব্যাটা বদ মামুনের কোন এক স্ত্রীর খালাতো বোন। পেশায় ছাত্রী।"
কেমন যেন ঘোরালো হয়ে ওঠে ব্যাপারটা।
দুলাল বলে, "আচ্ছা! এইবার একটু একটু বুঝতে পারসি! মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে মনে হয় ...।"
চৌধুরী মিটিমিটি হেসে মাথা নাড়েন। "একটু মতপার্থক্য দেখা দিয়েছিলো। ঠিক ধরেছেন। কিভাবে বুঝলেন?"
দুলাল থতমত খেয়ে বলে, "মতপার্থক্য? কীসের মতপার্থক্য?"
চৌধুরী একটি ভুরু ওপরে তোলেন দ্য ফল গাই-তে দেখা লী মেজরস এর ভঙ্গিতে। "অহ! আন্দাজে ঢিল মেরেছিলেন।"
দুলাল মরিয়া হয়ে বলে, "মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে প্রেম ছিলো না?"
খান সাহেবও দুলালের প্রশ্নকে সমর্থন যোগান। "সে কী চৌধুরী সাহেব, মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে প্রেম ছিলো না?"
চৌধুরী মাথা নাড়েন। "উঁহু।"
সৈয়দ বলেন, "কিন্তু পুলিশের নাকি সেরকমই ধারণা?"
চৌধুরী বলেন, "পুলিশের পর্যবেক্ষণক্ষমতা খুবই কাঁচাস্তরের। অবশ্য তারা ঘটনার পর এসে হাজির হয়, আর কতটুকুই বা আশা করা যায় পুলিশের কাছ থেকে? তবে পুলিশকেও হার মানিয়েছে আমাদের ভূঁইয়া, বাড়ি বানানোর আগে খেয়াল করেনি যে পড়শি বদমায়েশ মামুনটার একটা ডাঁসা শালি আছে!"
দুলাল সোৎসাহে বলে, "শালি? ডাঁসা?"
চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বলেন, "বাড়ি বানানোর আগে ভূঁইয়া এ-ও খেয়াল করেননি যে মামুন ব্যাটার বাড়িটা ছ'তালা, আর তাঁর বাড়ি হবে মোটে তিনতালা। এই তিনটি তালার তফাৎ যে কত মর্মান্তিক হতে পারে, তা আঁচ করা ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণ শক্তিতে কুলোয়নি।"
আমি চুপচাপ চা খাই। দুলালটা উসখুস করে, বলে, "মরিয়ম কীসে পড়ে?"
চৌধুরী বললেন, "ভূঁইয়া আরও খেয়াল করেনি, যে মামুন বদমায়েশটার দু'টো বউ থাকার পরও সে মাঝে মাঝেই বাইরে রাত কাটায়।"
সৈয়দ খুক খুক করে কাশলেন।
চৌধুরী পরোয়া করলেন না। "সামান্য পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা থাকলে এরকম একটা লোকের বাড়ির পাশে মানুষ কখনো বাড়ি বানায়?"
খান সাহেব কী যেন বলেন বিড়বিড় করে।
চৌধুরী বললেন, "ভূঁইয়া না হয় পরের বাড়ির লোকজনের পরোয়া না-ই করলো, কিন্তু তার নিজের যে একটা দামড়া ছেলে আছে, আক্কাস, তার কথা তো অন্তত মাথায় রাখা উচিত ছিলো, নাকি?"
দুলাল একটু বিভ্রান্ত হয়ে যায়। "আক্কাসের কী হইসে?"
চৌধুরী চায়ের কাপে বিলম্বিত লয়ে চুমুক দ্যান। "আক্কাসের কিছুই হয়নি। আপাতত একটু মন খারাপ।"
দুলাল মাথা নাড়ে। "হ, বাপ পঙ্গুতে ভর্তি, পোলার মন তো একটু খারাপ হইবোই ...।"
চৌধুরী হাসেন ঠা ঠা করে। "উঁহুহুহু! আক্কাস ভূঁইয়া বংশের কলঙ্ক। বাপ পঙ্গুতে ভর্তি হয়েছে বলে ওর মন মোটেও খারাপ নয়, দরকার পড়লে সে-ই বাপকে পেঁদিয়ে পঙ্গুতে পাঠাতে পারে! যে হারে লাই দিয়ে তাকে মাথায় তোলা হয়েছে!"
আমি বলি, "আক্কাসের মন তাহলে খারাপ কেন?"
চৌধুরী বলেন, "মরিয়মের জন্যে, আবার কেন!"
এবার যেন কিছুটা স্পষ্ট হয় ছবিটা।
দুলালের মন বোধহয় খারাপ হয়েছে আক্কাসের সাথে মরিয়মের একটা কিছু আছে বলে, সে গোমড়া মুখে বলে, "বদমাইশ পোলা!"
চৌধুরী গরম গলায় বলেন, "তিনতালা বাড়ির তৃতীয় তলার এক পাশে ইয়া বড় এক ঘর নিয়ে আক্কাস থাকে। ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণ শক্তি বলে কিছু থাকলে কিছুতেই ঐ ঘরে আক্কাসকে থাকতে দিতেন না তিনি।"
দুলাল আবারও হাত ঢোকায় গল্পে। "ক্যান? ঐ ঘরে কী হইসে?"
চৌধুরী বলেন, "ঐ ঘরের বরাবর ঘরটা কার, আন্দাজ করুন দেখি?"
সৈয়দ উত্তেজনায় ঝুঁকে পড়েন। "মরিয়মের?"
চৌধুরী প্রসন্ন হাসেন। "ব্রাভো! এই তো চাই ব্রাদার! এরকম চোখা চোখ থাকতে হবে। দেখুন, এই দুই ইয়াংমেনকে এই তরুণ বয়সেই কেমন ভূঁইয়ামো পেয়ে বসেছে! ওদের জন্য বড় মায়া হয় আমার! একটা অযথা জেনারেশন ...।"
রাগে চাঁদি জ্বলতে থাকে, কিছু বলি না।
চৌধুরী আড়চোখে আমাদের পর্যবেক্ষণ করে আবার গল্পে ফিরে যান। "শুধু মরিয়মের ঘর হলে সমস্যা ছিলো না। মরিয়মের ঘরের জানালা আবার আক্কাসের ঘরের বারান্দার দিকে ফেরানো।"
দুলাল শিউরে ওঠে। "উই মা!"
খান সাহেব গোঁ গোঁ করে ওঠেন। "উচ্ছন্নে গেলো, সমাজটা উচ্ছন্নে গেলো!"
চৌধুরী হাসেন। "ওদিকে ভূঁইয়ার ভাড়াটিয়া পর্যবেক্ষণ করার ক্ষমতাও খারাপ। এতো লোক থাকতে বেছে বেছে পালোয়ান এক ছোকরাকে চিলেকোঠা ভাড়া দিয়েছেন। মওদুদ কলেজে থাকতে ভারোত্তলন করতো। শটপুটেও প্রাইজ পেয়েছে। রোজ সকালে উঠে সে ল্যাঙোট পড়ে ডনবৈঠক করে ছাদে। সারা গায়ে কিলবিল করছে মাসল। ভূঁইয়া সাহেবের বাড়িতে একবার চোর ঢুকেছিলো, মওদুদ চিবিয়ে তার একটা কান ছিঁড়ে নিয়েছে শুনেছি।"
দুলাল আঁতকে ওঠে।
চৌধুরী চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলেন, "ভূঁইয়া যদি খেয়াল করতেন, যে পাশের বাড়ির চারতালায় নচ্ছাড় মামুনের ছোট বউয়ের মহল, তাহলে কি ওরকম একটা মাসলম্যানকে চিলেকোঠা ভাড়া দিতেন? কক্ষণো না!"
গল্প আবারও গুলিয়ে যায়।
চৌধুরী বকে যান। "মামুন তার কোন বউকেই ঠিকমতো সময় দেয় না। সে হয় বাড়ির বাইরে রাত কাটায়, নয়তো দারোয়ান মকবুলের বউ সখিনাকে দিয়ে গায়ে তেল মালিশ করায়।"
খান সাহেব মুখ কুঁচকে বলেন, "ছি ছি ছি, ঘেন্না!"
চৌধুরী কাপটা নামিয়ে রাখেন টেবিলের ওপর ঠক করে। "কিন্তু মামুনের দুই বউ, বড় বউ জুবাইদা আর ছোট বউ জুলেখা, দু'জনেই তো মানুষ, নাকি? তাদেরও তো মন বলে একটা বস্তু আছে, নাকি?"
দুলাল ঘন ঘন মাথা নাড়ে, "ঠিক, ঠিক!"
চৌধুরী বলেন, "ভূঁইয়ার পর্যবেক্ষণশক্তি এতো কম বলেই এইরকম সব ঘটনা ঘটতে পারলো।"
দুলাল বলে, "কীরকম সব ঘটনা?"
চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, "এই পাড়ায় প্রায়ই সন্ধ্যাবেলা কারেন্ট চলে যায়। ঘন্টা দুইয়ের জন্য।"
আমি গলা খাঁকারি দিই।
চৌধুরী উদাস হয়ে বলেন, "যখন কারেন্ট থাকে না, টিভি দেখা যায় না, মনটা উদাস লাগে, তখন তো একটা কিছু করা দরকার, নাকি?"
সৈয়দ সাহেবও দেখি কাশছেন।
চৌধুরী বলেন, "মওদুদ অ্যাথলেট মানুষ, তাই সে মাঝে মাঝে পাশের বাড়ির পাইপ বেয়ে ছাদে উঠে পড়ে। সেখান থেকে চারতলায় জুলেখার কাছে যায়।"
দুলাল গাধাটা বলে, "ক্যান?"
চৌধুরী বিষদৃষ্টিতে দুলালকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করেন, তারপর বলেন, "হয়তো সুডোকু খেলে!"
দুলাল থতমত খেয়ে চায়ের কাপে চুমুক দেয়।
চৌধুরী বলতে থাকেন, "মরিয়মের জীবনটাও আক্কাসের মতোই নিঃসঙ্গ, তাই সে-ও মাঝে মাঝে কারেন্ট চলে গেলে ছাদে হাঁটতে যায়। তারপর মুড থাকলে পাইপ বেয়ে আক্কাসের বারান্দায় এসে নামে।"
দুলাল মুষড়ে পড়ে একেবারে। "মরিয়মও সুডোকু খেলে?"
চৌধুরী কাঁধ ঝাঁকান। "খেলতেই পারে। সুডোকু খুব ইন্টারেস্টিং খেলা। বিশেষ করে কারেন্ট চলে গেলে!"
আমি ঘটনা আঁচ করতে পারি কিছুটা।
"এতদিন ধরে মওদুদ আর মরিয়মের মধ্যে কোন ট্র্যাফিক জ্যাম হয়নি। দু'জনেই পাইপ খালি পেয়েছে আসা যাওয়ার পথে। গত পরশু দিন একটু সমস্যা হয়েছিলো। মওদুদ পাঁচতালা বরাবর উঠে পড়েছে, ওদিকে মরিয়ম মোটে ছয়তালার ছাদ থেকে নেমে পাঁচতালা বরবার পৌঁছেছে।"
খান সাহেব মাথা নাড়েন। "ছি ছি ছি, ঘেন্না!"
চৌধুরী সাহেব ভুরু কোঁচকান। "মওদুদ চোরের কান কামড়ে ছিঁড়ে ফেললেও এমনিতে খুব ভদ্রলোক, বিশেষ করে মেয়েদের সে খুব তমিজের সাথে দেখে। আর মরিয়ম পাইপ বেয়ে ওঠানামা করলেও বাস্তবে খুব ভদ্র মেয়ে।"
দুলাল বললো, "তো?"
চৌধুরী বললেন, "মওদুদ ফিসফিসিয়ে বললো, "লেডিজ ফার্স্ট!"
সৈয়দ হাঁ করে শুনতে থাকেন।
চৌধুরী বেঞ্চে হেলান দিয়ে টেবিলের ওপর কনুই রাখেন। "লেডিজ ফার্স্ট বললেই তো আর হয় না। মরিয়ম কিভাবে মওদুদের মতো একটা দুইমনী লাশকে ডিঙিয়ে নিচে নামবে? সে বলে, "মওদুদ ভাই, আমি কার্নিশে নামছি, আপনি আগে যান।"
দুলাল বলে, "কন কী?"
চৌধুরী বলেন, "মওদুদ রাজি হয় না, সে বলে, না, আমি কার্নিশে নামি, তুমি আগে যাও।"
আমি বিরসমুখে বলি, "পেহলে আপ সিচুয়েশন!"
চৌধুরী উদ্ভাসিতমুখে বলেন, "এগজ্যাক্টলি! কেহ কারে নাহি জিনে সমানে সমান। মরিয়ম মওদুদকে রাস্তা ছেড়ে দেবেই, আর মওদুদও প্রাণ থাকতে মরিয়মকে পরে যেতে দেবে না।"
দুলাল বলে, "তারপর?"
চৌধুরী হঠাৎ নিচুকণ্ঠে বললেন, "গল্পে আরো দু'টো ক্যারেক্টারের নাম বলেছি। বলুন তো এরা কারা?"
খান সাহেব সাগ্রহে বলেন, "আমি বলি, আমি বলি!"
চৌধুরী বলেন, "ওহ প্লিজ, গো অ্যাহেড!"
খান সাহেব ভুরু কুঁচকে জিভ কামড়ে কিছুক্ষণ ভাবেন। তারপর বলেন, "দারোয়ান মকবুল, আর তার বউ সখিনা।"
চৌধুরী মৃদু, রহস্যময় হাসেন। তারপর বলেন, "আংশিক সঠিক। আপনাকে পাঁচ নাম্বার দেয়া হলো। কিন্তু ফটকা মামুনের বড় বউ জুবাইদার কথা ভুলে যাবেন না!"
দুলাল চমকে ওঠে। "ক্যান, উনি আবার কী করসে?"
চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেলেন। "পাড়ায় কারেন্ট গেলে কি আর জুবাইদার ঘর রওশন থাকে? তার ঘরেও তো তখন অন্ধকার।"
দুলাল এবার সটান দাঁড়িয়ে যায়। "উনিও সুডোকু খ্যালে?" ভাঙা গলায় শুধায় সে।
চৌধুরী ফরাসী কায়দায় কাঁধ ঝাঁকান। "খেলতেই পারে। খেলাটা খুব জনপ্রিয়, জানেন না বোধহয়?"
আমি গম্ভীর হয়ে বলি, "উনি কার সাথে খেলেন? মকবুল?"
চৌধুরী স্মিত হাসেন। "আপনার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা আছে। ছাইচাপা আগুনের মতো। আরো চর্চা করতে হবে আর কি! ঠিক ধরেছেন। মকবুল লোকটা দারোয়ান হলে কী হবে, বেশ হ্যান্ডসাম। তাই সে মাঝে মাঝেই কারেন্ট চলে গেলে তিনতালায় যায় আর কি।"
দুলাল বলে, "কিন্তু মরিয়ম আর মওদুদের কী হইলো?"
চৌধুরী গলা খাটো করে বলেন, "মকবুল হ্যান্ডসাম হতে পারে, কিন্তু চোরছ্যাঁচড়ের সাথে কী যেন একটা কানেকশন আছে, বুঝলেন? কী করবে বেচারা, দারোয়ান তো! চোরের সাথে খাতির না হয়েও উপায় নাই। দুষ্ট লোকে বলে," গলা আরো নামিয়ে আনেন তিনি, "মওদুদ যে চোরটার কান চিবিয়ে ছিঁড়ে নিয়েছিলো, সে নাকি মকবুলের খালাতো ভাই হয়!"
দুলাল স্তম্ভিত হয়ে যায়, আমি কাপে চুমুক দিই।
সৈয়দ খানিক ভেবে বলেন, "চোরে দারোয়ানে মাসতুতো ভাই!"
চৌধুরী হাসেন। "হা হা হা, বেশ বলেছেন। ... তো, আমাদের মকবুল আমাদের মওদুদের ওপর বেশ অনেকদিন ধরেই ক্ষ্যাপা। আর চোরদের সাথে মিশে মিশে তার মনটাও একটু পুলিশ পুলিশ ... সেদিন সেই ঘুটঘুটে সন্ধ্যায় তিনতালায় ডিউটি না দিয়ে মকবুল ছাদে উঠে এসেছিলো মওদুদকে পাকড়াও করার জন্যে। হাতে একটা গাঁটালো লাঠি।"
সৈয়দ সাহেব বলেন, "বলেন কী?"
চৌধুরী বিষণ্ণ মুখে বলেন, "আর আমাদের ভূঁইয়া সাহেব, কী আর বলবো, লোকটা পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা তো নাই-ই, পর্যবেক্ষণ জ্ঞানটাও নাই। আশেপাশে নানা কথা চালাচালি হয়, তো তিনি গত পরশুদিন ওরকমই কিছু একটা শুনে হয়তো একেবারে সরজমিন পর্যবেক্ষণ করতে ছাদে গিয়ে হাজির।"
আমার কাছে এবার বাকিটা স্পষ্ট হয়ে যায়।
চৌধুরী বলেন, "ওদিকে পাঁচতলা বরাবর মওদুদ আর মরিয়ম ভদ্রতার পরাকাষ্ঠা দেখাতে ব্যস্ত, মকবুল হতচ্ছাড়াটা এসেই বসিয়েছে এক ঘা। আর নিচ থেকে ভূঁইয়া সাহেবও হেঁকে উঠেছেন, "বলি হচ্ছেটা কী, অ্যাঁ?"
সৈয়দ সাহেব বললেন, "হুঁ, আমিও শুনেছি এই হাঁক।"
চৌধুরী বললেন, "সামান্য লাঠির ঘায়ে মূর্ছা যাবার পাত্র নয় মওদুদ। বরং লাঠিই ওর গায়ে লেগে ভেঙে যাবার সম্ভাবনা চৌদ্দ আনা। কিন্তু ভূঁইয়া সাহেবের হাঁক শুনে বেচারার মধ্যবিত্ত আত্মা একেবারে টলে গেলো, বুঝলেন? ওদিকে মরিয়মের গায়েও লাঠির বাড়ি পড়েছে, পাইপ থেকে তার হাত ফসকে গেছে। দু'জনে মিলে জড়াজড়ি করে একেবারে নিচে ভূঁইয়া সাহেবের ওপর গিয়ে পড়েছে।"
দুলাল শিউরে ওঠে, "বলেন কী?"
চৌধুরী মাথা নাড়েন। "মওদুদের ওজন কমসে কম পঁচাশি কেজি হবে। মরিয়মকে যা দেখেছি এপাশ ওপাশ থেকে, তার ওজনও কেজি পঞ্চাশেক হবে। একশো পঁয়তিরিশ কেজি ওজনের দুইজন সুডোকু খেলোয়াড় কুড়িফুট ওপর থেকে গায়ের ওপর পড়লে আমি আপনি টেঁসে যাবো, কিন্তু ভূঁইয়া ঘুষখোর সরকারী লোক, এন্তার গোস্ত গায়ে, তাই কয়েকটা হাড্ডি ভেঙেছে শুধু। আর এমন একটা শক অ্যাবজরবার ছিলো বলেই মওদুদ আর মরিয়মও জানে বেঁচে গেছে, চোটটা কয়েকটা হাড্ডির ওপর দিয়ে গেছে শুধু।"
আমার আর সহ্য হয় না, কাপটা নামিয়ে রেখে বলি, "আপনি এসব জানলেন কিভাবে?"
চৌধুরী গম্ভীর হয়ে বলেন, "পর্যবেক্ষণ!"
আমি বলি, "সেটাই কিভাবে করলেন, জানতে চাই!"
চৌধুরী বললেন, "কারেন্ট চলে গেলে বারান্দায় বসে আশপাশটা পর্যবেক্ষণ করি আর কি! রীতিমতো সিনেমা।"
দুলাল মুখ কুঁচকে বলে, "কিন্তু আপনের বাড়ি তো রাস্তার উল্টাদিকে! দৃশ্য না হয় দেখলেন, কথাবার্তা শুনলেন কেমনে?"
চৌধুরী কঠোর মুখে বলেন, "মামুনের বাড়ির পাঁচতলায় কে থাকে জানেন?"
দুলাল ভড়কে গিয়ে বলে, "না। কে থাকে?"
চৌধুরী বলেন, "মামুন নিজে। কারেন্ট চলে গেলে সে কী করে জানেন?"
দুলাল ভয়ে ভয়ে বলে, "সুডোকু?"
চৌধুরী বলেন, "সে সখিনাকে ডেকে এনে পিঠে তেলমালিশ করায়। মওদুদ আর মরিয়মের আলাপসালাপ হচ্ছিলো তার একেবারে জানালার পাশেই। সবকিছুই সে শুনতে পেয়েছে।"
দুলাল হাঁ করে তাকিয়ে থাকে। আমি বলি, "মামুন আপনাকে এসব কথা জানিয়েছে?"
চৌধুরী বললেন, "হুমম! কত্তবড় বদ লোকটা, ভাবতে পারেন? তবে পর্যবেক্ষণ শক্তি আছে ভালোই। যেভাবে খুঁটিনাটিসহ বললো, আমি শুনে একটু বিস্মিতই হয়েছি। শুধু বাইনোক্যুলার হাতে আমাকে দেখতে পায়নি বলে কিছু গোঁজামিল দেবার চেষ্টা করছিলো আর কি ...।"
আমি বললাম, "আপনি বাইনোক্যুলার দিয়ে এসব পর্যবেক্ষণ করেন নাকি?"
চৌধুরী হুড়োহুড়ি করে উঠে পড়লেন। "চলুন চলুন, অনেক পেঁয়াজ কাটতে হবে আজকে, বুরবকশাহী বিরিয়ানি রান্না হবে ...।"
.
.
এ গল্পটি ২০১০ এ প্রকাশিত গল্প সংকলন ম্যাগনাম ওপাস ও কয়েকটি গল্প"-তে অন্তর্ভুক্ত |
মন্তব্য
হ, আর আইছেন ।
কতোবার যে এইরুম চা খাইতে গেলেন , কোনদিনই তো ফিরলেন না আর ।
শেষ হওয়ার পরে রেটিং।
কবুল।
হাঁটুপানির জলদস্যু
মিয়া চাপা মারেন ক্যান?
চৌধুরীর বাড়িতে ঢোকার আগের গলিতে ওটা চায়ের দোকান কোথায়? আমিতো জানতাম ওটা ব্রায়ের দোকান!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
- এইযে আইসাই কোমলমতি বালকদেরকে ভ্রষ্ট করার পাঁয়তারা। বলি, ভাবী কি বাপের বাড়ি গেছে? চেলাকাঠের ডর নাই মনে?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হুঁ, ওখানে ব্রায়ের কাপে চা দিতো। এ কাপ তিনটাকা, বি কাপ পাঁচ টাকা, ডাবল ডি কাপ এগারো টাকা।
হাঁটুপানির জলদস্যু
তাহলে হয়ে যাক ডাবল ডি কাপ!!!!!!!!!!!!!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
বস একাই চাখাইবেন ?
আবার কয়!!!!!!!!!!
ও আমি কোরবানীর গোশ একাই খাবো
ভাগ দিবো না রে।
কাউকে ভাগ দিবো না রে....
গোশত একাই খাবো রে।
আমি কোরবানীর গোশ একাই খাবো
ভাগ দিবো না রে।
আচ্ছা, আপনাকেও সাথে নিলাম। সহযোদ্ধা বলে কথা!!!!
কি মাঝি? ডরাইলা?
নাহ আর পারা গেল না। আমার মতো কোমলমতিও পারলো না।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
- এই মন্তব্য পইড়া আমি উল্টাইয়া পইড়া গেলাম আর চেয়ার আমার উপরে!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
ছোটবেলা থিকা এখন পর্যন্ত যত ইংরেজী বর্ণমালার বই পড়লাম, কোথাও তো একটার বেশি ২ টা ডি দেখলাম না। বলি দাদা, আপনার কোন অথরের বই পড়েন ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
তোমার তো দেখি "দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া" কেস। আইসা পড়ো এইদিকে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ডাকলেন যখন আসবোতো নিশ্চয়ই, কিন্তু ভিসার আবেদন পত্রে কারণ কি লেখবো ?
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
শেষ করুন, তারপর পড়বো
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
শুরুই তো হইল না, শেষ হইবো কই থাইকা !
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
- যেইভাবে শুরু করছিলি গরুর মাংসের কথা, আমি তো ভাবছিলাম জার্মানবাসী চৌধুরীই কি না!
পরে অবশ্য খান, ভুঁইয়া, সৈয়দ (পরে হয়তো চৌকীদার, তালুকদার, ভূমিদার সবই আসবে) দের দেখে বুঝলাম ঘটনা অন্য।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হুম! জার্মানবাসী চৌধূরীর বাড়ির সামনেই ওই দোকান।
কি মাঝি? ডরাইলা?
হ ঘটনা অন্য
আরেকটা গল্প আঁতুড় ঘরেই মারা পড়লো।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
হিমুর গল্পরা সর্বদাই হিমুকে অভিশাপ দ্যায়।
কি মাঝি? ডরাইলা?
- পরকালে একেকটা গল্প বিরাট লাউয়ের মতো হইয়া আসবো আর কইবো এইবার আমারে খা!
নাইলে গল্পরা সব মিইল্যা হিমুরে গাছ আর মাটির মাঝখানে লটকাইয়া থুইবো!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
এটার শেষ দেখেই ছাড়বো ইনশাআল্লাহ। আমিন।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
হুম, অনেকদিন পর গল্পের আভাস পাচ্ছি।
গোয়েন্দা ঝাকানাকা, কিং চৌধুরী কি আছেন এখানে?
শুরুতেই শেষ করে দিলেন ে কন?
দেখা যাক...
.
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
মজা/হাসির আভাস পাচ্ছি ... তারপর তারপর??
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
এই গল্প আর শেষ হইছে...
শেষ খবরঃ এই মাত্র হিমু ঘুমাতে গেলেন।
কি মাঝি? ডরাইলা?
ঘুম থেকে উঠে এসে লিখতে বলেন ! ঘুম ? ফাইজালামি পাইছেন ?
---------------------------------------------------------
নীল সার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি !
অথচ সমুদ্রে-ই ছিলাম আমি
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
ধুসর গোধূলী ফোন দিয়া কন ঘুম বাদ দিয়া গল্প ল্যাখতে।
কি মাঝি? ডরাইলা?
না পারলে, আমরে দেন আমিই না হয় ফোন করি
---------------------------------------------------------
নীল সার্ট নেই বলে কেউ আমাকে নাবিক বলেনি !
অথচ সমুদ্রে-ই ছিলাম আমি
---------------------------------------------------------
তুমি এসো অন্যদিন,অন্য লোক লিখবে সব
আমি তো সংসারবদ্ধ, আমি তো জীবিকাবদ্ধ শব !
চা খাইতে এতো দেরী !!!!!!!!! ফকিরাপুলের পানির ট্যাংকিতে চা পাতা ফালাইছেন নাকি ?
আরিফ ভাই আমারো তাই মনে হয়...!!
সে এক বিরাট কাহিনী। পরিবার বলল, ঘরে চা পাতা নাই...
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
তো কী হলো আমাদের শ্রীমঙ্গল কী চা পাতা কম আছে না কি?
জর্মন দেশের গুন্টার গ্রাস সাহেব নাকি সেদেশে ডজনখানেক রিকশা নিয়ে গিয়েছিলেন বঙ্গদেশের ঢাকা থেকে। চায়ের দোকান তো যে কেউ দিতেই পারে। কাহিনী আসলে কোথাকার এখনো ক্লিয়ার না। অপেক্ষায় রইলাম চা-বিরতি সমাপ্তির।
চা বিরতি আর কতক্ষন? !!!!
গেলেন কই?
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
চৌধুরীর বাড়ীর গুলির পাশে আমিও বছরখানেক ছিলাম। ঠিক, সেইখানে দুই বউ নিয়া থাকা নিরাপদ না।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
হিমু ভাই বোধহয় ঘুমের বড়ি খাইছে। কেউ একজন অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন তো ! পুলিশও ডাইকেন।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
এখন তো দেখি আর ডাবল ডিতে নাই বিষয়টা... থ্রি ডি কাপ হয়া যাইতেছে...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
- ট্রান্সপারেন্ট ও?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হা হা হা হা... (অট্টহাসি)
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
বস এইটা একটা কাজ করসেন? এইভাবে ঝুলায় দিয়া গেলেন আমাদের? (
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
চা খাওয়া এখনো শেষ হয় নাই।
এই শেষের মরণ হইছে
হিমু ভাইজান , চা খাওয়া লাগবে না ।
রিডার ইল , কাম শার্প ।
ও ভাই ....কই গেলেন ?
আসছি, আসছি ... এই আরেকটু!
হাঁটুপানির জলদস্যু
শেষ করা হলো শেষমেশ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
পড়লাম!
কি মাঝি? ডরাইলা?
- মকবুল, মওদূদ, মরিয়ম- এই তিন ম'য়ের প্যাচে পাঠকরে ফেলেইতো কোন ফাকে গল্প শেষ করে দিলি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হৈছে তোফা , তবে হাপায় গেছি।
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
লাল গানে নীল সুর, হাসি হাসি গন্ধ
সুডোকু আমার বহুত পেয়ারের খেলা...তবে ভাইজানের লেখা পইড়া যা বুঝলাম, এর পর থেইকা খেলার আগে আর্মার পইরা খেলতে হবে
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।
বাইরে বাই !! অনেক প্যাচ ঘোচ!! তয় আমিও সুডোকু খেলতে চাই। আমার ব্যাগেও সব সময় একটা সুডোকুর বই থাকে!!
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
আমার নামও তো (শাহরিয়ার) মামুন!
আমি কিন্তু গুন্ডা বা বখাটে না, কখনো ছিলামও না! দুইটা তো দূরে থাকুক, বিয়েও করিনি এখনো!
মজা করলাম। গল্পটা খুবই মজা লাগল।
দারুণ
জাঝা
-------------------------------------------------------------
সোনার স্বপ্নের সাধ পৃথিবীতে কবে আর ঝরে !
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
ভালৈ এনডিং দিলেন, এর পরও কি আপনার ২ বৌয়ের সখ?
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
অসাধারণ আপনার বর্ণনাভঙ্গি। খুবই উচ্ছ্বস বোধ করছি লেখাটি পড়ে। ভালো থাকুন।
---------------------------------------------
বুদ্ধিমানেরা তর্ক করে, প্রতিভাবানেরা এগিয়ে যায়!
--------------------------------------------------------------------------------------------
বললুম, 'আমার মনের সব কপাট খোলা ভোজরাজজী। আমি হাঁচি-টিকটিকি-ভূত-প্রেত-দত্যি-দানো-বেদবেদান্ত-আইনস্টাইন-ফাইনস্টাইন সব মানি!'
পর্যবেক্ষণের পর্যবেক্ষণজনিত পর্যবেক্ষণ হইল, চৌধুরী সাহেবের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা কয় হর্স পাওয়ারের এবং এই বিদ্যা তিনি কীভাবে প্রাপ্ত হইলেন?
বিশেষ আর কি, গল্পটা পড়ব না গল্পের চমতকার শৈলীর শিরা-উপশিরা খুঁজব। মুগ্ধতা তো দুদিকেই। ডাবল প্লাস।
হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।
নাটকের মত করে চরিত্রের নাম এবং কে কোন বাসায় কত তলায় থাকে তা গল্পের শুরুতে পরিচিতির মধ্যে দেয়ার দাবী জানাই।
শুনেছি সুডোকু খেলা বেশ জনপ্রিয়। কখনো খেলি নাই। শুরু করব কিনা চিন্তা করছি
-----------------------------------------------------
We cannot change the cards we are dealt, just how we play the hand.
---------------------------------------------------------------------------
একা একা লাগে
এই জায়গাটা পড়তে গিয়া মারা যাইতাসিলাম , সিনটা ভাইসা উঠতাসিল চোখের সামনে
হায়রে সুডোকু
-----------------------------------------
রাজামশাই বলে উঠলেন, 'পক্ষীরাজ যদি হবে, তা হলে ন্যাজ নেই কেন?'
-----------------------------------------------
'..দ্রিমুই য্রখ্রন ত্রখ্রন স্রবট্রাত্রেই দ্রিমু!'
কটঠিন!!
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
চা খেয়ে এসে পড়ব ।
কমেন্ট পাবেন আগামী সপ্তাহে ।
প্রশ্ন হলো, লেখক কোন চৌধুরীর গল্প বলেন?
-------------------------------------
বালক জেনেছে কতোটা পথ গেলে ফেরার পথ নেই,
-ছিলো না কোন কালে;
-------------------------------------
জীবনযাপনে আজ যতো ক্লান্তি থাক,
বেঁচে থাকা শ্লাঘনীয় তবু ।।
ভাবছি পরের গল্পে চৌধুরীর নামের গোড়ায় এইচ. এম. বসিয়ে দেবো !
হাঁটুপানির জলদস্যু
হুসেইন মোহাম্মদ ?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
গল্প পড়তে পড়তে চা খাওয়ার কথা ভুলে গেলাম। দারুন... অসাধারণ। বর্ণনা ভঙ্গি আর লেখা... অসাধারণ। প্রতিটা বাক্য পরের বাক্যে ঘাড় ধরে নিয়ে যায় পড়াতে।
এইবার বুঝলাম... সবুরে মেওয়া ফলে...
কিন্তু আমারও প্রশ্ন... কোন চৌধুরী?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
নজরুল ইসলাম চৌধুরী, আবার কে ?
হাঁটুপানির জলদস্যু
এহ্... আমি চৌধুরী না... বংশানুক্রমে সৈয়দ
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
দ্রোহী, ধূসর, তানিম, সুজন্দা, স্পর্শ, প্রহরী, অনিন্দিতা, কীর্তিনাশা, মুমু, মৃদুলদা, ফারুক ওয়াসিফ, রেনেট, খেকশিয়াল, তারেক, আরিফ জেবতিক, হাসান মোরশেদ, নজু ভাইসহ গল্পের প্রথমাংশের পাঠক ও তাড়াদায়কদের জানাই এক বোন্দা ভালোবাসাসহ ধন্যবাদ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আপনাকেও ধন্যবাদ চায়ের কাপ ফেলে রেখে গল্পটা শেষ করার জন্য।
অনেকদিন ধরেই ঝাকানাকার গল্প পড়ি না।
কি মাঝি? ডরাইলা?
৫ দিলুম
অসাধারণ!
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
চলুন চলুন, অনেক পেঁয়াজ কাটতে হবে আজকে, বুরবকশাহী বিরিয়ানি রান্না হবে ..
নতুন মন্তব্য করুন