হের চৌধুরীর ষ্টুডেন্টেনভোনহাইম (ছাত্রাবাস) পাঁচজনের। চৌধুরীর পড়শিরা হচ্ছে বেহালাবাদিকা স্ফেয়া, "হাসিখুশি" সেবাস্তিয়ান, গোবদা সিগিতা আর কিছুদিন আগ পর্যন্ত গোমড়ামুখী কাথারিন।
কাথারিনের গোমড়ামুখই আমাদের তদন্তব্য বিষয়।
জার্মানরা কথা কম বলে, কিন্তু স্বাভাবিক সৌজন্যের অভাব সবার মধ্যে নেই। কাথারিনের মধ্যে সৌজন্যের লেশমাত্র নেই। সে বাইরে থেকে হলে ফিরে সৌজন্যসূচক হ্যালোৎকারের ধার ধারে না, সোজা নিজের ঘরে গিয়ে গদাম করে দরজা লাগিয়ে দেয়।
প্রথম এই ঘটনার মুখোমুখি হবার পর আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। অভদ্রতার টোটকা অভদ্রতা, কাজেই আমিও চৌধুরীর বাড়িতে গেলে আর কাথারিনকে দেখলে হাই-হ্যালোর ধার ধারি না। বাকি পড়শিরা সবাই বেশ ভদ্র, তাদের সাথে গল্পসল্প চলে সবসময়। একা কাথারিনই হংসমধ্যে বকো যথা।
কয়েকদিন পর লক্ষ্য করলাম, শুধু আমাদের সাথে না, এই অসৌজন্যের শিকার বাকিরাও। কাথারিন কারো সাথেই বাক্যবিনিময়ের ধার ধারে না, বাড়িতে তার উপস্থিতি টের পাওয়া যায় শুধু তার নিজের ঘরের আর টয়লেট-বাথরুমের দরজা লাগানোর শব্দে।
সেবাস্তিয়ান একদিন কথাচ্ছলে স্পষ্ট করেই বললো, কাথারিন মহা অভদ্র। সে কথা তো বলেই না, ভোনহাইমের কাজকর্মও ঠিকমতো করে না।
একদিন হের চৌধুরীর বাড়িতে রান্না করতে করতে শুনি, বিটকেলে পোঁ পোঁ শব্দ হচ্ছে। চৌধুরী জানালেন, এর উৎস কাথারিন। সে মাঝে মাঝে ক্ল্যারিওনেট বাজায়।
ব্যাপারটা খুবই রহস্যময় ঠেকলো। যে বর্বর কাথারিন মানুষের সাথে স্বাভাবিক সৌজন্য বজায়ের তোয়াক্কা রাখে না, সে ঘরের দরজা বন্ধ করে ক্ল্যারিওনেট কেন বাজায়? কেন তার মনে এতো ফূর্তি হঠাৎ?
রহস্য সমাধানের জন্যে প্রয়োজন পর্যবেক্ষণ। তাই আমি আর চৌধুরী কাথারিনের কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করা শুরু করলাম।
আমাদের প্রথম পর্যবেক্ষণে দেখা গেলো, কাথারিন প্রচুর দুধ খায়। একটু পর পরই সে ঘর থেকে বেরিয়ে এসে ফ্রিজ খুলে দুধের প্যাকেট বার করে গ্লাসে দুধ ঢেলে গটগটিয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।
ক্লু পেয়ে রহস্য আরো ঘোরালো হয়ে উঠলো।
রহস্যকে আরো ঘোরালো করার জন্যে কাথারিন দুধের সাথে দইও খাওয়া শুরু করলো।
পর পর দু'টো ক্লু পেয়ে যখন আমরা একটু চিন্তিত, তখন দেখলাম, কাথারিন শসা, গাজর ইত্যাদি সব্জি প্রচুর পরিমাণে কেনে। কলাও কেনে অনেকগুলি একসাথে। ওর একাকী গোমড়া জীবনের সাথে সব্জিগুলো মানিয়ে যায়, কিন্তু চৌধুরী জানালেন, কাথারিন ওগুলো সালাদ বানিয়ে খায়। নিজের খাইষ্টা মনকে ধমক দিয়ে আবার পর্যবেক্ষণে মনোনিবেশ করলাম।
কয়েকদিন বাদে হের চৌধুরী জানালেন এক নিবিড় গোপন পর্যবেক্ষণের কথা। কাথারিন একটু পর পরই টয়লেটে যায়।
এতগুলো ক্লু পেয়ে আমাদের রহস্যের পরিধি অনেক বিস্তৃত হয়ে পড়েছে ততক্ষণে। তাই হঠাৎ একদিন যখন কাথারিনকে উল্লসিত মুখে টয়লেট থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে ঢুকতে দেখলাম, সেদিন অনেক কিছু দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেলো। হের চৌধুরীকে বুঝিয়ে বলতে যাবো, তখন শুনি আবার পোঁ পোঁ করে আওয়াজ হচ্ছে।
সমাধান পেয়ে গেলাম আমরা। কাথারিনের কোষ্ঠকাঠিন্য আছে।
ওর সব অভদ্রতার রহস্য মূহুর্তেই জল হয়ে গেলো। আহারে বেচারি, হাগু হয় না ভালোমতো। কদাচিৎ একদিন সুষ্ঠ নিষ্কাশন হলে সেই আনন্দে সে ক্ল্যারিওনেট বাজায়। আহা, আহা!
কাথারিন হপ্তাদুয়েক আগে ভোনহাইম ছেড়ে চলে গেছে। গতকাল সপ্তাহান্তের কেনাকাটা করতে গিয়ে ওর সাথে দেখা। এক ডজন কলা, তিনটা শসা, এক প্যাকেট গাজর, চার কৌটা দই, আপেল আর বিশাল এক প্যাকেট টয়লেট পেপার নিয়ে আমাদেরই সামনে কিউতে সে দাঁড়িয়ে। দাঁড়ানোর ভঙ্গি দেখে মনে হলো, খুব জলদি বাসায় ফেরা জরুরি ওর জন্যে।
রহস্য সমাধান করা সহজ, সমস্যা সমাধান করা কঠিন। কাথারিনের প্রতি রইলো গভীর সমবেদনা।
মন্তব্য
হা হা হা।
মিয়া, আপনে পারেনও!
-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...
-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ ।
এক্ষুণি বেরিয়ে যাচ্ছি। মন্তব্য পরে লিখবো। আপাতত একটা ইমো:
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
আপনে মিয়া পাইছেন একখান ইমোটিকনের খনি
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
সহসচল হিসেবে, হিমু এবং সন্ন্যাসীর জন্য উদ্বেগ/শঙ্কা/দুশ্চিন্তা থেকে, তাদের শুধু একটা কথাই মনে করিয়ে দিতে চাই -
"চোরের সাতদিন, গৃহস্তের একদিন" (এবং সেই একদিনই হতে পারে 'শেষদিন')
অথবা
"এই দিন, দিন না, আরো দিন আছে" (সেদিন আসলে এমনও হতে পারে কারো কারো কীবোর্ড পর্য্যন্ত পৌছোনো আর সম্ভব হবে না, হুইলচেয়ার না থাকলে)
অথবা
"যে জন দিবসে, মনের হরষে ........." ( সে আশু দিবসে কেউ কেউ ক্যাথরিনের ক্ল্যারিনেটের সাথে হয়তো সঙ্গত করবে তব্লা আর মাউথ অর্গান বাজিয়ে)
মোট কথা ক্যাথরিণ কখনও বাংলা পড়তে শেখার আগেই ............
আমার জন্য উদ্বেগ/শঙ্কা/দুশ্চিন্তা-র কারণে সত্যিই প্রীত বোধ করছি। আশ্বত করতে বলি: সেই একদিন/আরও দিন/আশু দিবস থেকে নিজেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখায় সদা সচেষ্ট
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
ধুরো মিয়া! এক প্যাকেট ছোলা ভাজা হাতে নিয়া পড়তে বইসি এই লেখা!! দিলেন তো ছোলা খাওয়ার বারটা বাজিয়ে !!
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
ওর গোমড়ামুখের একটা ছবি দিতে পারলে বিষয়টা কিলিয়ার হইতো। কিন্তু সেইটাতো আর হাউস পার্টি ছাড়া সম্ভব না। আমার মনে হয় গুরুপাক খাওয়ার কথা ভাবলেই ও অজ্ঞান হইয়া যাবে।
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
ওর অনুমতি ছাড়া তো আর ওর ছবি দেয়া সম্ভব না। আর ওর কাছে ওর ছবি ব্লগে প্রকাশের অনুমতি চাইবার আগে যেনো আমার মউত ঘনায়! তাছাড়া ওর গায়ে প্রচুর গোস্ত, ঘাড়ের উপর লাফ দিয়ে পড়লে আমাকে পঙ্গুতে ভর্তি করতে হবে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
গোস্ত সমন্বয় গোড়াতে তেমন খারাপ লাগে নাই। পরে বুঝলাম সারাদিন চুলায় রাখলেও সিদ্ধ হবে না.........
ঈশ্বরাসিদ্ধে:
অজ্ঞাতবাস
ঠিকমতো হাগু হয়না তাতেই প্রচুর গোস্ত শরীরে! আর তোর ইসব গুলের এ্যাড দেইখা যদি "হয়..."ইতো তাইলে কী অবস্থা হইতো একটাবার ভাইবা দেখছস?
তবে একডজন কলা, শশা,গাজর ইত্যাদির সংশ্লিষ্ট তোর চিন্তা আর আমার থিংকিং লাইন কেনো জানি মনে হয় একই রেখায় ধাবমান রে!!
কিরা কসম কেটে যে চা খাইতে গেলেন সেইটার কি হবে??? সেইটার একটা ব্যবস্থা না করলে আপনার অবস্থাও ক্যাথরিণ এর মত হবে বললাম! (এইটা একটা অভিশাপ)
....................................................................................
অতঃপর ফুটে যাবার ঠিক আগে হীরক খন্ডটা বুঝলো, সে আসলে ছিল একটা মামুলি বুদবুদ!
ইচ্ছার আগুনে জ্বলছি...
হা হা হা হা...
সন্ন্যাসীদার ইমোটিকন দ্রষ্টব্য... সন্ন্যাসীদা এইগুলা পান কই?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
হিমু ভাইয়ার দেখি শার্লক হোমসের ভূতে ধরছিল !!!
আপনারা আর বিষয় পাইলেন না, শেষ পর্যন্ত কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীকে নিয়ে নাচানাচি, হাঃ হাঃ হাঃ।তবে হইছে খুব মজার। এখনো হাসতেছি।
কোষ্ঠকাঠিন্য যখন হিমুরে নিশ্চয়ই অলঅয়েজ কাথারিনের এই উপদ্রব সহ্য করতে হইছে
বেচারা !
চরম লাগছে। কিন্তু হ্যারা এই ইমোটিকনগুলা ক্যাম্নে দেয়?
---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল
এই খানে...
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
হিমু ভাই, ক্যাথরিনকে কোন মশলাদার দেশী খাবার খাইয়ে দিলে কেমন হয় ? এই যেমন ধরেন চটপটি । আমার চেনা এক জাপানি বন্ধু চটপটি খেয়ে মারাত্নক পেট খারাপ করে ফেলেছিল । সেই ধকল সামলে উঠতে উঠতে ওজন কমে গেল ৫ কেজি, তাও তিন দিনে ।
অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...
চটপটিরও দরকার নাই।
আমার মনে হয় ক্যাথরিনকে পঁচা পুকুরের দুই চামচ পানি খাইয়ে দিলেই, এনশাল্লাহ...
আর সেইটাতে যদি ধুগো দুইটা ফু ফা দেয়, তাহলে তো কথাই নাই।
...........................
সংশোধনহীন স্বপ্ন দেখার স্বপ্ন দেখি একদিন
...........................
একটি নিমেষ ধরতে চেয়ে আমার এমন কাঙালপনা
কাথারিনের কথা হিমু ভাইএর অন্য একটা লেখাতে আগেই পড়েছিলাম।
আর শেষের আগের লাইন্টা কিন্তু বানী চিরন্তনী হইতারে।
অলমিতি বিস্তারেণ
অলমিতি বিস্তারেণ
মারাত্মক সমস্যা তো বেচারির
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে
তাই তো বলি, রেভেতে শসার দাম বাড়ে ক্যান!
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো
রহস্য সন্ধানী হিমুর পোস্টের শানেনুযুল:
গোয়েন্দাগিরী করতে হইলে সবখানেই চোখ রাখতে হয়।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।
___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!
হা হা হা! আমি ভেবে ছিলাম হয়ত প্রেগনেন্ট তাই
-------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে
মজা পাইলাম খুব।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
দুদিন পর পর পড়ার মতো আরেকটা পোস্ট পেলাম। খাইষ্টাপোস্টগুলো কেন যে আমার এতো ভালো লাগে ।
মজাক পাইলাম।
হাহাহাহা
ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল
আহারে মাইয়াটা।
তার আগামী জেবনের জন্য...
------------------------
ভুল সময়ের মর্মাহত বাউল
নতুন মন্তব্য করুন