প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৩

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ০৪/০৭/২০০৮ - ৪:৫৭পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

probashe

আমি জীবনে প্রথম অ্যালকোহল চেখে দেখেছি আট বছর বয়সে। দোষটা আমার ভাইয়ের। তারও তখন ঠিক আইনসিদ্ধ উপায়ে মাল খাবার বয়স হয়নি। সবজে একটা বোতল হাতে নিয়ে বড় ভাই চোরের মতো মুখ করে সন্ধ্যেবেলা চুপিচুপি ছাদের দিকে গেলে ছোট ভাইয়ের অনুসন্ধিৎসু মনে কিছুটা দোলা লাগা স্বাভাবিক। আমি অচিরেই বড় ভাইদের সেই বিয়ারের নিষিদ্ধ আড্ডায় হানা দিলাম। প্রাচীন ভারতের কূটনীতির তৃতীয় পদ্ধতি প্রয়োগের প্রস্তাব দিয়ে বসেছিলো উপস্থিত এক পামর। কিন্তু আমার বড় ভাইয়েরা খুব স্নেহ করেছেন আমাকে সারা জীবন, মদের বোতল হাতে দন্ডনীতি প্রয়োগের চিন্তা তাঁরা করেননি। তাছাড়া মার খেয়ে আমি তো সোজা গিয়ে আমার বাবাকে বলে দিতে পারি। সেক্ষেত্রে ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে নামতে হতে পারে সবাইকে, সিঁড়ি দিয়ে নামার সাহস কেউ করবে না। প্রাচীন ভারতীয় কূটনীতির প্রথম তরিকায় তাঁরা কিছুক্ষণ চেষ্টা করলেন। "না না ভাইয়া, যাও ঘরে যাও, আমরা পরে আসবো, এসে বাগাডুলি খেলবো", এই গোছের সামনৈতিক মিষ্টবাক্য প্রয়োগে আমার মন ভজানোর চেষ্টা করলেন তাঁরা। আমি শিশু ছিলাম, কৌতূহলী ছিলাম, তাই অসততা নয়, কৌতূহলের বশেই ঘুষ দাবি করে বসলাম, "তোমরা কী খাও? আমিও খাবো!"

বড় ভাইয়েরা মুখ চাওয়াচাওয়ি করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজেদের মধ্যে ম্লেচ্ছ ভাষায় কী যেন মত বিনিময় করে শেষে একটা গ্লাসে অল্প একটু তরল ঢেলে আমাকে দিলেন। দাননীতির সাথে আরও কিছু সামনীতির পাশাপাশি দন্ডনীতির দিকে আবছা একটা ইঙ্গিতও করলেন একজন। আমি সন্তুষ্ট হয়ে গবগব করে সেই তরলে চুমুক দিলাম।

বিচ্ছিরি, অতি বিচ্ছিরি স্বাদ ছিলো সেই বিয়ারের। এতই বিচ্ছিরি যে তার পরবর্তী পাঁচবছর আমি আর বিয়ার খাইনি। খেতে চাইওনি।

কিন্তু পাঁচবছরে কত কিছু ঘটে। গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র দিয়ে কত জল গড়ায়, কত নিরীহ ভালোমানুষ বিয়েশাদি করে মারা পড়ে, এ ওর সাথে ভেগে যায়, প্রেমিকার নতুন প্রেমিকের ছোটবোনের সাথে প্রেম হয়, আর একটা ফালতু বিয়ারের স্বাদ জিভ থেকে মুছে যেতে এমন আর কী সমস্যা? আমি তেরো বছর বয়সে আবার বিয়ারপানের সুযোগ পেয়ে সেটার সদ্ব্যবহার করলাম। এবারও ভিক্টিম আমার ভাই। তিনি মহাবিরক্ত। প্রথমে বলার চেষ্টা করলেন, "সেইদিন না দিলাম?"

আমি ইউরি গ্যাগারিনকে হার মানিয়ে নভোমন্ডল থেকে আছড়ে পড়লাম মাটিতে। "সেইদিন মানে? পাঁআঁআঁআঁচ বচ্ছর আগে একবার দিসো!"

ভাই ভুরু কুঁচকে কী যেন ভেবে ম্লেচ্ছ ভাষায় কী যেন বললেন গোঁ গোঁ করে। তখনও ভাষাটা তেমন ভালো জানি না। মনে হলো তিনি খুব একটা সন্তুষ্ট না। আমি পাত্তা দিলাম না, বড় দেখে একটা বৃটিশ আমলের গ্লাস নিয়ে এসে পাতলাম বোতলের নিচে। ভাই গ্লাসের আকার দেখে চোখ পাকালেন। আমি নির্বিকার। ব্ল্যাকমেইল যখন করছি, তখন এত লজ্জা করলে চলে না।

সেদিন বিয়ার খেয়ে ভালোই লেগেছিলো। সময়ের সাথে এই অভূতপূর্ব পরিবর্তন সেদিন টের পাইনি, ভেবেছিলাম, এবার হয়তো জিনিস ভালো, কিন্তু এখন মনে হয়, সেবার আমার রসনা কিছুটা পরিপক্ক হয়েছিলো।

মাল খাবার সময়গুলো কেন পাঁচ বছর পর পর ফিরে আসে, কে জানে? তারও পাঁচবছর পর আবার আমার সুযোগ আসে। এবার আর ভাইকে হুমকি দিয়ে নয়, বন্ধুদের নিয়ে গ্যালাক্সিতে হানা। গাঁটের পয়সা খরচ করে রীতিমতো কিনে বিয়ার খাওয়া।

পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে লভ্য বিয়ার, ভদকা, জিন আর হুইস্কি পান করার সুযোগ এসেছিলো। আমার ব্ল্যাকমেইলের শিকার সেই বড় ভাই একবার স্বল্পকালীন প্রবাস জীবন কাটিয়ে দেশে ফেরার সময় আমার জন্যে জনি ওয়াকারের এক অপূর্ব বোতল উপহার নিয়ে এসেছিলেন, কিন্তু অতীত নিগৃহা স্মরণ করেই কি না কে জানে, সেই উপহারের সিংহভাগ তিনিই গলাধঃকরণ করেছিলেন। তখনও আমরা গা ঢাকা দিয়ে মদ্যপান করতাম। আমাদের বাড়ির কাজের মেয়ে একবার আমার ওয়ার্ডরোব সাফ করতে গিয়ে একটি সুদৃশ্য বোতল খুঁজে পেয়ে তৎক্ষণাৎ আমার মায়ের কাছে রিপোর্ট করে, এবং তিনি সেটিকে বার করে ধুয়ে মুছে আমার পড়ার টেবিলের ওপর রেখে দেন। বাড়ি ফিরেই সেদিন তোপের মুখে পড়েছিলাম।

আমি ততদিনে বিয়ারের ভালোমন্দ বুঝতে শিখেছি। বাংলাদেশে আমার পছন্দের বিয়ার ছিলো কার্লসবার্গ। সেটা পাওয়া না গেলে ফস্টারস। একদমই পছন্দ করতাম না হাইনিক্কেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ টার্মের চূড়ান্ত পরীক্ষা দেয়ার কয়েকমাস আগে জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পক্ষ থেকে মিউনিখে কয়েক হপ্তার জন্যে একটা ভাষাশিক্ষার কোর্স করার সুযোগ হস্তগত হয়েছিলো। সেই বাহান্ন দিন আমি হাতের নাগালে বাভারিয়ার যতো রকমের বিয়ার ছিলো, সবই চেখে দেখেছি। ফ্রানৎসিস্কানার, এরডিঙ্গার, আউগুস্টিনার, পাউলানার, লোয়ভেনব্রয়, হাকার-প্শর, আর নাম মনে পড়ছে না। এদের মধ্যে আউগুস্টিনার আমার সবচেয়ে ভালো লেগেছিলো। পরে এসে দেখেছি, এগুলো খুবই ছোট ছোট স্থানীয় ভাঁটির বিয়ার, মিউনিখের আশপাশ ছাড়া নাকি পাওয়া যায় না। কাসেল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদের প্রথম মনমরা পার্টিতে বিয়াররসিকদের সাথে আলাপ করে জানতে পারলাম, বামবার্গ এর আশেপাশে নাকি দুর্ধর্ষ সব বিয়ারের ভাঁটি আছে, এবং সেসব বিয়ার কেবল বামবার্গ শহরেই পেয়, অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বামবার্গে তাই একটা ঢুঁ মারার পরিকল্পনা মনের মধ্যে ঘুরছে।

দেশে ফিরে আমি অত্যন্ত নিষ্ঠার সাথে বিয়ার পানে ক্ষান্তি দিই। বাভারিয়ার সেইসব বিয়ারের সাথে ফস্টার্সের কোন তুলনাই হয় না। পানের জন্যে আমি আরো গুরুতর জিনিস বেছে নিই।

এর পরবর্তী চার বছরের পেশাজীবী জীবনে আমি গাঁটের পয়সা খরচ করে, লোকজনকে হুমকি দিয়ে, ভালোবাসা ও স্নেহজনিত উপহার এবং সবশেষে ঘুষ হিসেবে নিয়মিত ভদকার বোতল বগলস্থ করেছি। বোতলে মনোনিবেশ করার সময় আমার চোখের সামনে ভেসে উঠেছিলো আমার সেই বড় ভাইয়ের মুখ। উঁহু, ঠিক স্মৃতিতে নয়, তিনি আমার ঘরে টোকা দিয়ে ঢুকে বাতাস শুঁকে বলেছিলেন, "হোয়াটস আপ?"

পৃথিবী গোল, এ কথা শুনেছি, বইয়ে পড়েছি, টিভিতে দেখেছি, কিন্তু উপলব্ধি করতে পারি সেইদিন। হোয়াট গোউজ অ্যারাউন্ড, কামজ অ্যারাউন্ড। আমার সেই বড় ভাই, যাকে মোটে কয়েকবার ব্ল্যাকমেইল করে সবমিলিয়ে হয়তো আধ লিটার বিয়ার খেয়েছিলাম, তিনি রাহুর মূর্তি ধরে আমার সাধের ভদকার বোতল গ্রাস করতে এসেছেন! এ হতে দেয়া যায় না। আমি বোতলের কিছু ভদকা সারেন্ডার করে সারারাত চিন্তা করে শেষে ভোরে আমার মায়ের কাছে গিয়ে ভদ্রভাবে ঘরে বসে মদ্যপানের অনুমতি চাই। তিনি ছাত্রাবস্থায় আমাকে বমাল গ্রেফতারের কথা স্মরণ করেই হয়তো কিছুক্ষণ চিন্তা করে অনুমতি দেন, শর্ত একটিই, খেলে একা খেতে হবে, আর কাউকে সাথে নিয়ে নয়। আমি আমার দুর্বৃত্ত বড় ভাইয়ের কবল থেকে বোতলটিকে উদ্ধার করে তখনকার মতো ফ্রিজে রেখে দিলাম। পরবর্তীতে সেভাবেই রাখতাম।

আমি দীর্ঘদিন বাড়িতে বসে একা একা মদ খেয়েছি। আমার বন্ধুদের সাথে খেয়েছি অন্যত্র বসে, কারণ সবান্ধব পানের অনুমতি বাসায় ছিলো না। মদ খাবার পর যে দুটো সাধারণ অবস্থা হয়, হ্যাপি আর হাই, বাংলা করা যেতে পারে তুষ্ট আর দুষ্ট, তার মধ্যে হ্যাপিতেই ছিলাম বেশিরভাগ সময়। বমি বা শোরগোল করে উৎপাত বাড়াইনি কখনো। সাধারণত ফূর্তি ফূর্তি ভাব একটু বেড়ে গেলে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাইতাম অনেক, কখনো কখনো ফোনে একে ওকে গান শুনিয়ে জ্বালাতন করতাম। মাল খেয়ে একবারই বেসামাল হুল্লোড় করেছিলাম মীরপুরে আমাদের এক বন্ধুর বাড়ির ছাদে, যতটা না মদের ঘোরে, তারচেয়ে বেশি আড্ডার আনন্দে।

কাসেলে এসে আমার মদ্যপানের সম্ভাবনা বেড়েছে, কিন্তু সুযোগ বাড়েনি। এখানে কোন লুকোছাপার ব্যাপার নেই, পয়সা দিয়ে বোতল কিনে খাও যত খুশি। কিন্তু সপ্তাহভর নানা ভ্যাজালে থাকি বলে সেভাবে মন খুলে টানা যায় না। কাসেলবাসী বাঙালিদের মধ্যে আমি আর হের চৌধুরীই মদ্যপ, বাকিরা কেউই স্পর্শ করেন না। অতএব মাঝে মাঝে চৌধুরীর সাথে বসেই মদ খাওয়া হয়। এ ব্যাপারে তিনি যথেষ্ঠ উৎসাহী, প্রায়ই এক বসায় এক বোতল ভদকা খাওয়ার উপকারিতা নিয়ে লম্বাচওড়া বক্তৃতা দেন। বহু কষ্টে ভদকা থেকে তাকে ওয়াইনের দিকে ঠেলে নিয়ে যেতে হয়। বরফ পড়তে দেখলেই তিনি ভদকা আবহাওয়ার কথা বলেন, বৃষ্টি বৃষ্টি ভাব দেখলেই হুইস্কির প্রস্তাব করেন। গেত্রেঙ্কেমার্কট (পানীয়ের দোকান) এ গেলে আমরা দুইজনই দীর্ঘসময় ধরে বোতলের শেলফের সামনে দাঁড়িয়ে খুঁটিয়ে দেখি। প্রায়ই দেখা যায়, কোন একটা কাজ "পরে করা যাবে" এমন হিসেব করে দুই বোতল ওয়াইন কিনে বসে পড়ছি, কিংবা গোটা ছয়েক বিয়ার।

আজ "দুনিয়ার মালখোর এক হও" পোস্টে জাহিদ হোসেনের এক কৌতূহলী মন্তব্যের সূত্র ধরে এই স্মৃতিচারণ আর দিনপঞ্জি লিখলাম। মদ আমাকে খাওয়া শুরু করেনি এখনো, আমিই মদকে খাই। ভালো লাগে। মদ খেলে আমার মনে আনন্দময় স্মৃতিগুলোই ভেসে ওঠে, ঠিক যেভাবে প্রায়ই রাতে ঘুম ভেঙে যায় দুঃস্বপ্ন দেখে। মালের ঘোরে আমার সব কিছু খুব সুখপ্রদ মনে হয়। অনেক হাসি তখন। ভুলে যাই, যে দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম।


মন্তব্য

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ডুসেলডর্ফে আল্ট পাওয়া যায়, এবং সেটাও ওখানেই কেবল পেয়। ট্রাই করা হয় নাই। বীমিশের মতো নাকি একটু কড়া আর মহাতিতা। সুযোগ হৈলে ল যাই ডুসেলডর্ফ!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অনিকেত এর ছবি

মদ খাওয়া নিয়ে এই রকম চমৎকার স্মৃতিচারন এর আগে কোথাও পড়েছি কি না মনে করতে পারছি না।

বরাবর 'তুষ্ট' রওয়ার অনুরোধ করা গেল।

জাহিদ হোসেন এর ছবি

আমার প্রশ্ন থেকে কেমন সুন্দর একটা লেখা বেরিয়ে গেল। আমার পয়লা বার মদ্যপানের বিষয়টা নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম অন্যপাড়ায় অনেক আগে। উত্সাহীরা এখানেগিয়ে পড়ে আসতে পারেন।
আপনার লেখাটি ভাল লেগেছে খুবই। বোম ভোলানাথ!

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

_____________________________
যতদূর গেলে পলায়ন হয়, ততদূর কেউ আর পারেনা যেতে।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍পোস্ট-পাঠে প্রিয় পানীয়ের স্বাদ পেলাম যেন!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

সুমন চৌধুরী এর ছবি

স্বদেশের বারে সবমিলিয়ে বারদুয়েক গেছি। তবে সেটা পেটে প্রথম মাল পড়ার বহুকাল পর। প্রথম মালেখড়ি কবে? ক্রলিং করতে করতে ১৯৯৭ এর আগে আর যেতে পারিনি। সোলসের কনসার্ট ছিল ২১তম ব্যাচের সমাপণী উপলক্ষে। কনসার্ট শুরু হবো হবো পরিস্থিতিতে দেখি বন্ধু সালাম মুক্তমঞ্চের রেলিঙে দাঁড়িয়ে ইংরেজীতে বক্তৃতা দিচ্ছে। আমাদের সকলের উপর ভিষন রাগ। আমরা সময় মতো উপস্থিত না হওয়ায় প্রায় বোতল খানেক কেরু এ্যান্ড কোং তাঁর পেটে গেছে। বরিশালের সোহাগ ধমক দিয়ে বলে, এই সালমা, চিল্লাও কা আয়? সালাম পাবনার টানে সুর করে বলে, আমি তো টাআআআল! তাকে বহু কষ্টে নামানো হলো। আমাদের গ্রুপের মেয়েরা ধমকধামক দিয়ে ওকে বসালো ঠিক আমার পাশে। গানটান শুরু হয়ে যাবার পর সালাম কানে কানে বলে, এগুলা কিছু না, অভিনয়! আমার গলা শুকিয়ে গিয়েছিল। কার ব্যাগ মনে নেই আমাদেরই কারো হবে, দেখি তার কোনা দিয়ে একটা মিনারেল ওয়াটারের বোতল উঁকি দিচ্ছে। বের করে ঢক ঢক করে বেশ খানিক পেটে ঢালার পরে মনে হলো এ আর যাই হোক এইচটুও না। পেট খালি ছিল। সেই সাথে নৃত্য। মাথা অনিয়মিত উপগ্রহের মতো সেন্ট্রাল মাঠ-মুক্তমঞ্চ আর টিএসসির পেছনের জঙ্গল(এখন আর নেই) জুড়ে চক্কর দিচ্ছিল। তার মধ্যে আবার আমার দায়িত্ব সালামকে সামলানো। একটু পর পর সে কানে কানে মনে করিয়ে দেয় এসব আসলে কিছু না। অভিনয়...অভিনয়। সব মিলিয়ে প্রথম পানের অভিজ্ঞতাতেই টালত্ব প্রাপ্তি।



ঈশ্বরাসিদ্ধে:

আজমীর এর ছবি

আপনার লেখাটি পড়ে চট করে একটি কথাই মনে পড়ল। "পাঠকের মৃত্যু হইয়াছে।" আট বছরের সেই সুবোধ বালক, যার নাকি বিয়ার জঘন্য লেগেছিল, তার আজ আর মদ্যপানে খারাপ লাগেনা। তাই একথাটি না বলে পারলাম না।

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

আজমীর
Smile costs nothing but gives much, so keep smiling.
Kids are always cute.

দ্রোহী এর ছবি

হাইনিকেন আসলেই জঘন্য!

হায় জীবন ! "কেরু"কে খুব মনে পড়ে।


কি মাঝি? ডরাইলা?

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

দ্রোহীদা... আপনেরে তো বউভীতু বইলাই জানি... আমিও সেইরম... বউ ছাড়া আর কাউরে ডরাই না জীবনে...
এই মূহুর্তে আমার পাশে আমার বউ বসা... সে এই মূহুর্তে আমারে আদেশ করলো এই বেডারে কওতো এই ছবিটা পাল্টাইতে...
আমি বস বউয়ের আদেশ শীরোধার্য করলাম... আপনেরে কোনও সিদ্ধান্ত নিতে কই নাই কিন্তু...
ভালো থাইকেন... বউরে ডরাইয়েন...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

ধুসর গোধূলি এর ছবি
অমিত আহমেদ এর ছবি

মজা পেলাম।
হাইনিকেন আমার বিশেষ প্রিয়।


ওয়েবসাইট | ফেসবুক | ইমেইল

আলমগীর এর ছবি

অস্ট্রেলিয়া আইসা কিছু চাইখা যান।

হিমু এর ছবি

ইচ্ছা আছে। আপনাকেও পাল্টা দাওয়াত দিই। জার্মানি এসে কিছু চেখে যান হাসি)।


হাঁটুপানির জলদস্যু

শেখ জলিল এর ছবি

মদ আমাকে খাওয়া শুরু করেনি এখনো, আমিই মদকে খাই। ভালো লাগে। মদ খেলে আমার মনে আনন্দময় স্মৃতিগুলোই ভেসে ওঠে, ঠিক যেভাবে প্রায়ই রাতে ঘুম ভেঙে যায় দুঃস্বপ্ন দেখে। মালের ঘোরে আমার সব কিছু খুব সুখপ্রদ মনে হয়। অনেক হাসি তখন। ভুলে যাই, যে দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম।
...আত্মপ্রত্যয়ের প্রশংসা করি।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

অয়ন এর ছবি

প্রথম খাওয়া বিয়ার ছিল পচা নারিকেলের মতো স্বাদযুক্ত হাইনিকেন।

শীর্ণকায়া বৃদ্ধ থেকে প্রবাসে দৈবের বশে আবার পূর্ণকায়া যুবকে পরিণত হয়েছে দেখছি হাসি

হিমু এর ছবি

স্বাভাবিক। যতোই দিন যাচ্ছে জোয়ান হচ্ছি। ভাবছি মহাব্লগ লেখা শুরু করবো, যেটা লোড করতে গিয়ে কম্পিউটার ড়্যামে অন্ধকার দেখবে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মুহম্মদ জুবায়ের এর ছবি

আমার সবকিছুতেই দেরি হয়ে যায়। জীবনে প্রথম সিগারেটে টান দিলাম, তখন বিশ্ববিদ্যালেয়ের দ্বিতীয় বর্ষে পড়ি। আমার অনেক বন্ধুর ততোদিনে তর্জনী ও মধ্যমার ডগায় হলদেটে দাগ পড়ে গেছে, ঠোঁট কালচে বর্ণ।

তরল গলাধঃকরণ ঘটলো আরো দু'বছর পরে। শুরুটা অতি জঘন্য ছিলো, সূর্যসেন হলে আমার ডিপার্টমেন্টের বন্ধু বাহারের পৌরোহিত্যে মৃতসঞ্জীবনী দিয়ে। তখন আট টাকায় এক বোতল পাওয়া যেতো, এর চেয়ে বেশি খরচ করার সামর্থ্য কোথায়? স্পষ্ট মনে আছে, সেটা ছিলো শবেবরাতের রাত। সাল ১৯৭৬।

এরপরে বুড়িগঙ্গায় অনেক জল গড়ালো কি না খবর নিইনি, তবে প্রচুর তরল অমৃত আমার গলা দিয়ে নামে। ভালোমন্দ ম্যালা কেচ্ছাকাহিনী আছে, লিখতে গেলে মহাভারত। তবে হিমুর এই লেখাটা পড়ে মনে হচ্ছে, লিখে ফেললে মন্দ হয় না!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

-----------------------------------------------
ছি ছি এত্তা জঞ্জাল!

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

এই বিষয়ে আমার বলতে গেলে এক মন্তব্যে তো হবে না... এক পোস্টেও হবে না... একটা সিরিজ লাগবে... হাসান মোরশেদ-এর পানপর্ব নামে সিরিজটার নাম চুরি কইরা চালু করুম কি না ভাবতেছি। তবে এই বিষয়ে আমার অনেক অনেক মজাদার স্মৃতি আছে... বউ বলে তোমার তো কোনও কাহিনীই মদ ছাড়া শুরুও হয় না শেষও হয় না... তো ঠিকাছে... আজকাই পয়লা কিস্তি দিয়া দিতাম... কিন্তু যেহেতু প্রথম পাতায় এই মূহুর্তে আমার আরো একটা পোস্ট আছে বিধায় দিলাম না... কালকে থেকে শুরু করার হুমকি দিলাম। লেখা না দিলেও অন্তত পরের বছর খেলাপী তো হইতে পারুম...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

পরিবর্তনশীল এর ছবি

আহারে!
---------------------------------
ছেঁড়া স্যান্ডেল

তানবীরা এর ছবি

প্রেমিকার নতুন প্রেমিকের ছোটবোনের সাথে প্রেম হয়,

এটা বোধ হয় টাল অবস্তহায় লেখা ------------

তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে

*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়

রায়হান আবীর এর ছবি

কেরুকে খুব মনে পড়ে। হাসি

---------------------------------
জানিনা জানবোনা... কোন স্কেলে গাইছে কোকিল
গুনিনা আমি গুনিনা...কার গালে কটা আছে তিল

ফেরারী ফেরদৌস এর ছবি

মদ খেলে আমার মনে আনন্দময় স্মৃতিগুলোই ভেসে ওঠে

হুমম... উপকারিতা জেনে রাখলাম। সময় এলে কাজে লাগবে।

গোপাল ভাঁড় এর ছবি

অরূপ লিখেছেন:
পাড় মাতাল হয়ে গাড়ি চালাতে পারি এখন, ১৬ শট রেমি মার্টিন খেয়ে প্রাইম নাম্বার সিরিজ বলতে পারি...

আহা! যে মাতাল হতে পারেনা কতো দুর্ভাগ্যই না সে বহন করে!!

রেমি মার্টিন না মিয়া, হেমে মাহতা বলেন।

--------------------------------------------
বানান ভুল হইতেই পারে........

মুজিব মেহদী এর ছবি

সুরা (চৌদ্দ গোষ্ঠীসহ)-র কোনো অপকারিতা আমি কখনো মানি না, মানতে চাই না। আমি মরে গেলে তারপর এর হাজারটা অপকারিতা প্রতিষ্ঠিত হোক, বেঁচে থাকতে এর চেয়ে উপকারী কোনো পানীয়ের কোথাও কোনো অস্তিত্ব নেই।
মালেখড়ি (সুমন চৌধুরীর থেকে ধার করে) কবে কোথায় কখনো বলা যায় কি না দেখব।

হিমু সাহেব এত বড়ো বড়ো লেখা লিখলে অন্যদেরটা পড়ব কখন?
................................................................
আমার সমস্ত কৃতকর্মের জন্য দায়ী আমি বটে
তবে সহযোগিতায় ছিল মেঘ : আলতাফ হোসেন

... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ... ...
কচুরিপানার নিচে জেগে থাকে ক্রন্দনশীলা সব নদী

সবজান্তা এর ছবি

গুরুরা সবাই দেখি বলে গিয়েছেন। চুপ থাকাই সমীচিন। শুধু এটুকুই বলি,

শুরু এস এস সি র পর, তার পর অনিয়মিত বিরতিতে উচ্চমাধ্যমিক শ্রেনীতে, অতঃপর বিশ্ববিদ্যালয়ে কিঞ্চিত অধিক ফ্রিকোয়েন্সিতে পান। তবে হিমু ভাই এর একটা মন্তব্যে আমি একমত, আমি পান করতে আগ্রহী আনন্দের জন্য। মাত্রার অতিরিক্ত গলাধঃকরণ করে বমি করা কিংবা ষাঁড়ের মত চেচিয়ে পাড়া মাথায় করা আমার ঘোরতর আপত্তি।

পান করুন আনন্দে, আনন্দের জন্য। ইহাই আমার দর্শন।


অলমিতি বিস্তারেণ

স্বপ্নাহত এর ছবি

ক্লাস নাইনের কথা মনে পড়ে গেল হাসি

---------------------------

থাকে শুধু অন্ধকার,মুখোমুখি বসিবার...

---------------------------------

বাঁইচ্যা আছি

তীরন্দাজ এর ছবি

বাভারিয়ানর বিয়ারের কোন তুলনা নেই, স্পেন গিয়েও টের পেলাম।
**********************************
কৌনিক দুরত্ব মাপে পৌরাণিক ঘোড়া!

**********************************
যাহা বলিব, সত্য বলিব

রানা মেহের এর ছবি

ঢাকায় আমার একদল বদবন্ধু ছিল।
তাদের মাথা গিজগিজ করতো পৃথিবীর যাবতীয় বদমায়েশি বুদ্ধিতে।

ইন্টারের পর একবার গেছি ঢাকায়
তারা ধরে বসলো আজ বিয়ার খেতে হবে।
ভালোমানুষ টাইপ একটু না না করলাম।
(আসলে ছিলাম মহা খুশী )

মুখের কাছে নিতেই গন্ধে বমি আসার যোগাড়।
মনে হচ্ছে নারকেল বা এটাইপ কোন ফলকে
বিশেষ যত্নে পচানো হয়েছে।

নাক ধরে শ্বাস বন্ধ করে কোনভাবে একটু গলধকরন করেই
আমি ইন্নালিল্লাহ। এতো বিকট বিভতস স্বাদ।

সেই তিক্ত অভিগ্গতার জন্যই বোধহয়
আর কখনো আ্যালকোহল ট্রাই করা হয়নি।

তবে পাব জায়গাটা খুব পছন্দ আমার।
একসাথে অনেকগুলো লোক নিশ্চিত আড্ডা দিচ্ছে।
তাছাড়া পাবের খাবারের কোন তুলনা হয়না।

আমার দোস্ত গৌরী বিশেষ একটা ককটেল খায়।
ডবল ভদকা উইথ ডবল ব্যাকার্ডি উইথ কোক এন্ড লটস অফ আইস।

জিনিসটা একদিন চেখে দেখার সাধ আছে।
খেয়ে তার মতো টলতে টলতে
আয় তব সহচরী গাওয়ার স্বপ্ন আছে

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

-----------------------------------
আমার মাঝে এক মানবীর ধবল বসবাস
আমার সাথেই সেই মানবীর তুমুল সহবাস

অমিত এর ছবি

বেলজিয়ামের একখান বিয়ার এইখানে পাওয়া যায়। নাম ভুইলা গেলাম। দামই ১/২ পাইন্ত ৩ ডলারের মতন।সে এক স্বর্গসুধা।
_________________________________
দুনিয়াজুড়া পচুর গিয়ানজাম

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।