• Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_clear_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_electoral_list_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_results_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_votes_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).
  • Warning: call_user_func_array() expects parameter 1 to be a valid callback, function '_advpoll_writeins_access' not found or invalid function name in _menu_check_access() (line 454 of /var/www/sachalayatan/s6/includes/menu.inc).

প্রবাসে দৈবের বশে ০৪৫

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ১২/০৭/২০০৮ - ৬:৫৩অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

probashe

১. বোতল আমার হইলো না আদায়

বোতল আমি টানতে পারলাম নাআআআ ...। দশ তারিখ পরীক্ষা শেষে ভরপেট মদ খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো, কিন্তু ডিপার্টমেন্টের কাজে কামলা দিতে গিয়ে সব বরবাদ হলো। ধন্য আশা কুহকিনী।

কাজ আর কিছুই না, কয়েকটা প্রোজেক্টে কর্মরত ডক্টোরান্ডদের একটা সম্মেলন গোছের ব্যাপারস্যাপার হবে, সেখানে গ্রিলের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে চেপেছে। প্রথম কাজ হচ্ছে, বিয়ারের বেঞ্চ আর টেবিলসহ পানীয় ডেলিভারি দিয়ে যাবে এক প্রতিষ্ঠান, তাদের কাছ থেকে সব বুঝে শুনে নিয়ে স্টোররুমে গুছিয়ে রাখা। সময়মতো অ্যাপয়েন্টমেন্ট রক্ষার ব্যাপারে জার্মানরা বিখ্যাত, আর আমি কুখ্যাত। যখন টিউশনি করতাম, প্রথম দিনই ছাত্রছাত্রীদের বিএসটি আর এইচএসটির তফাৎ বুঝিয়ে বলতাম। বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড টাইম হিমু স্ট্যান্ডার্ড টাইম থেকে কিছুটা পিছিয়ে। অর্থাৎ কখনো যদি বলি যে মঙ্গলবার দিন সাতটার সময় আসবো, তাহলে আটটার আগে কখনোই আমাকে আশা করা উচিত হবে না। ২১ তারিখ বিকেল ৫টায় কোন এক বালিকার সাথে সময় নির্ধারণ করে ২২ তারিখ সন্ধ্যে ৬টায় দেখা করার উদাহরণও আছে। কিন্তু জার্মানিতে এসে আমাকে দৌড়ের ওপর থাকতে হচ্ছে, এরা অ্যাপয়েন্টমেন্টে গড়বড় একেবারেই সহ্য করতে পারে না। আমিও সময়মতো জিনিসপত্র বুঝে নিতে গিয়ে টাশকি খেলাম বেঞ্চ আর টেবলের আকৃতি দেখে। এর্গোনমিক্সে জার্মানরা বেশ এগিয়ে, টিংটিঙে এক ছোকরা আর দানবের মতো তার বস জনাব কোয়লার একটা ঠেলাগাড়ির ওপর পটাপট ছয় কেস বিয়ার আর আবঝাব কোমল পানীয় চাপিয়ে দোতলার স্টোর রুমে রেখে দিলো। সেদিনের জন্যে একটা বিশেষ চাবি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে আমাকে, ডিপার্টমেন্টের সব ঘরের দরজা সেটা দিয়ে খোলা যায়। হারিয়ে গেলে সব ঘরের দরজার তালা বদলাতে হবে, সেটার খরচ বহনের দায় আমার ঘাড়ে চাপবে, তাই একটু পরপরই পকেটে চাবির রিং চাপড়ে দেখি।

বিয়ারের বেঞ্চ আর টেবিল যে কেমন জঘন্য জিনিস, তা টের পেলাম বিকেলে সব সেট করার সময়। আমাকে সাহায্য করার মতো আর কেউ নেই, ডিপার্টমেন্ট থেকে একটা ফারষ্টুলে (রোলিং টেবল) নিয়ে সেটার ওপর চাপিয়ে এলিভেটরে করে নিচে নামালাম সব। বড়সড় জিনিস বহনের জন্যে বিশেষ একটা এলিভেটর আছে, কিন্তু সেটার চাবি আবার আমাকে দেয়া হয়নি। জার্মানরা নিজেদের আন্দাজে সবকিছু পোক্ত করে বানায়, যে টেবিল কোয়লার একাই শিস দিতে দিতে এনে ল্যাবের মেঝেতে জড়ো করে রেখেছে, সেটা ফারষ্টুলেতে চাপিয়ে নিচে ঘাসে ছাওয়া লন পর্যন্ত ঠেলে নিয়ে যেতে গিয়ে আমার নাভিশ্বাস উঠে গেলো।

গ্যাস দিয়ে গ্রিল হবে, সেজন্যে বিশেষ একটা গ্রিল আর প্রোপেনের একটা ট্যাঙ্ক ল্যাবমাস্টার হের নয়মান আমাকে বুঝিয়ে দিয়ে গেছেন বিকেলেই। জিনিসটা বেশ কাজের। কয়লা দিয়ে গ্রিল করার দুটো ঝামেলা, এক হচ্ছে কয়লায় আগুন ধরানোটা একটা ছোটখাটো ভ্যাজাল, দুই হচ্ছে বাতাসে কয়লার গুঁড়ো চারদিকে ছিটকে একটা পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারে। সে তুলনায় গ্যাস গ্রিল অনেক পরিচ্ছন্ন। গ্রিলের সাথে একটা প্রেশার রেগুলেটর লাগানো আছে, বিপদের আশঙ্কাও তেমন নেই। হের নয়মান আমাদের ল্যাবে প্রাকটিকুম করান, তাই সব কিছুই গুছানো ধাপ অনুযায়ী বোঝানোর অভ্যাস হয়ে গেছে তার। পরিষ্কার করে কী করা যাবে আর কী করা যাবে না তা বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন। সেইসাথে নানা ফতোয়া। "আপনি গ্রিলমাস্টার, আপনি যেভাবে ভালো মনে করবেন সেভাবে করবেন। লোকের কথায় কান দেবেন না। দেখবেন সবাই নিচে এসে একেক রকম কায়দার কথা বলবে, মাথা ধরিয়ে ফেলবে। পাত্তা দেবেন না। নিজের কাছে যা ভালো মনে হয় করবেন। কিন্তু আপনি কিভাবে বুঝবেন কোনটা ভালো আর কোনটা মন্দ? আমি আপনাকে বলে দিচ্ছি! প্রথমত ...।"

বাস্তবে তেমনটাই হলো। পরে যখন গ্রিল সেট করছি, এক ডক্টোরান্ড দৌড়াতে দৌড়াতে এসে হাজির। পোস্টার লাগানো হয়নি, এদিকে তার প্রেজেন্টেশন শুরু হয়ে গেছে। আমি তাকে উদ্ধার করতে পারি কি না। দীর্ঘশ্বাস ফেলে পোস্টার সাঁটানো শুরু করলাম গ্রিল ফেলে। ডিপার্টমেন্টের হেড এসে আমাকে এক ফাঁকে বলে গেছেন, তাড়াহুড়োর কিছু নেই, আরো ঘন্টাখানেক সময় লাগবে প্রেজেন্টেশন শেষ হতে, আমি যেন নেক কাজ করি দিলে মনে। পোস্টার লাগিয়ে এসে গ্রিলে আগুন দিয়ে দেখি লোকজন বিয়ারের কেস হাতে বেরিয়ে আসছে লনে।

গ্রিল শুরু হবার পর দেখা গেলো, মিছিমিছিই টেবিল পাতা হয়েছে। প্রফেসরেরা একটা টেবিল দখল করে বিয়ারের বোতল নিয়ে নিবিষ্ট মনে গুজগুজ করছেন, ডক্টোরান্ডরা সবাই হাভাতের মতো গ্রিলের চারপাশে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে। নিরামিষাশীরা সব্জির শাসলিক গ্রিল করা নিয়ে আলোচনা শুরু করেছে। কয়েকজন ছোঁচার মতো এসে বারবার সসেজ উল্টেপাল্টে দেখছে, হলো কি না। আমি হের নয়মানের অমৃতবাক্য স্মরণ করে দেখলাম, কথা সত্যি। বড়দের কথায় এ জন্যেই কান দিতে হয়। তবে যারা মাতবরি করতে এসেছে, তাদের হতাশ না করে আমি খুশিমনে বিয়ারের বোতল খুলে একপাশে দাঁড়িয়ে আড্ডা মারতে লাগলাম। যার যেমন খুশি করে খাক, আমার কী?

এর আগের হপ্তায় কাসেলের কয়েকটা গ্রিলকেন্দ্রের একটা, বুগা হ্রদের পাশে একটা ছোটখাটো গ্রিল করেছিলাম আমরা, কয়লা দিয়ে, তাই তাৎক্ষণিক তুলনায় বলতে পারি, গ্যাসের গ্রিল আসলেই কয়লার চেয়ে ভালো হয়। নয়মানের ভাষ্যমতে ইলেকট্রিক গ্রিল সবচেয়ে ভালো, কিন্তু সেটা তো আর সব জায়গায় ব্যবহারের সুযোগ নেই।

আসর ফুরিয়ে যাবার পর আশেপাশে যাকে পেলাম পাকড়াও করলাম জিনিসপত্র গোছানোর জন্য। আমাদের হেডও এসে হাত লাগালেন (এ ব্যাপারটা সম্ভবত আমাদের দেশে কখনোই হবে না), ব্যাটার গায়ে যে প্রায় আসুরিক শক্তি আছে, সেটাও দেখলাম। যেখানে আমরা দু'জন মিলে একটা টেবিল ভাঁজ করে নিয়ে যাচ্ছি কষ্টেসৃষ্টে, তিনি একাই সেরকম দুটো বগলে করে ফোনে কথা বলতে বলতে যাচ্ছেন।

গ্রিলের ফাঁকে ফাঁকে বিয়ার খাওয়া হলেও বাসায় ফিরে আর মাল খাওয়ার ইচ্ছা ছিলো না। গোসল করে দিলাম ঘুম। যদিও চাবি ফিরিয়ে দিয়ে এসেছি সেক্রেটারিয়েটে, কিন্তু ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখলাম, ডিপার্টমেন্টের সব দরজা হাঁ করে খোলা, আর আমার ইমিডিয়েট বস এসে গোমড়া মুখে গান গাইছে, ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে?

২. আর ইউ সাজেস্টিং দ্যাট কোকোনাটস মাইগ্রেট?

মন্টি পাইথনের দু'টো সিনেমা খুঁজে পেলাম, দেখলাম পরীক্ষায় প্রস্তুতির ফাঁকে ফাঁকে। মন্টি পাইথন প্রায় চল্লিশ বছর আগের এক ব্রিটিশ কমেডি গ্রুপ, যাকে বলে স্কেচ শো, অর্থাৎ বিভিন্ন পরিস্থিতি নিয়ে কয়েক মিনিটের কমেডি, সেই ধারার অন্যতম জনপ্রিয় শো ছিলো তাদের। পাঁচটা পূর্ণদৈর্ঘ্য সিনেমাও হয়েছে মন্টি পাইথনের ভাঁড়ামোর ভাঁড়ার থেকে, লাইফ অব ব্রায়ান আর হোলি গ্রেইল দেখলাম, বাকি তিনটা এখনো দেখিনি।

মন্টি পাইথন গ্রুপের ছয়জনের মধ্যে গ্রাহাম চ্যাপম্যান বাদে সবাই মোটামুটি নাম কামিয়েছেন শো-বিজনেসে,
চ্যাপম্যান মারা গেছেন ১৯৮৯ সালে। জন ক্লিজ মোটামুটি প্রবাদপ্রতিম কমেডিয়ান, এককালে বিটিভিতেও দেখাতো তাঁর অন্যতম টিভি সিরিয়াল ফল্টি টাওয়ারস। সে সময় আমি নিতান্ত নাদান ছিলাম, পরবর্তীতেও ফল্টি টাওয়ারস দুয়েকটা পর্ব দেখে খুব একটা ভালো লাগেনি। এরিক আইডল, মাইকেল প্যালিন বা টেরি জোনস ক্লিজের তুলনায় সিনেমা লাইনে তেমন আর এগোতে পারেননি, তবে টেরি জিলিয়াম পরিচালনায় বেশ দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।

মন্টি পাইথনের টিভি স্কেচগুলোও যে সবকয়টাই খুব জুতের, এমনটা নয়। ইউটিউব থেকে দু'টো স্কেচ যোগ করছি।

তবে সিনেমাগুলিতে কিছু জায়গায় হাসতে হাসতে পেট ফেটে যাবার যোগাড়। লাইফ অব ব্রায়ান যেমন। যীশুর পাশের আস্তাবলে জন্মায় ব্রায়ান, তিন জ্ঞানী ব্যক্তি প্রথমে ভুল করে তার মায়ের কাছেই সোনা, ধূপ আর পবিত্র মলম গছিয়ে দিয়ে চলে যায়, পরে আবার নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে এসে কেড়েকুড়ে নিয়ে গিয়ে যীশুর আলোকিত আস্তাবলের সামনে হাঁটু গেড়ে বসে। সেই ব্রায়ানকেই আবার লোকে পরে পাকেচক্রে মেসিয়াহ হিসেবে মানতে শুরু করে। ব্রায়ান আবার জড়িয়ে পড়ে রোমানবিরোধী গোপন নিষিদ্ধ রাজনৈতিক আন্দোলনে। শহরের দেয়ালে রাতের আঁধারে চিকা মারা শুরু করে, Romanus eunt domus! টহলরত ডেসিউরিয়ান এসে আচমকা তার কান পাকড়ে ধরে, "এটা কী লিখেছিস, অ্যাঁ? মানে কী এর?" কানমলা খেয়ে ব্রায়ান ডুকরে ওঠে, "রোমানরা বাড়ি যাও!" ডেসিউরিয়ান আরো ভালো করে কান ডলতে ডলতে বলে, "বটে? লেখাপড়া তো কিছুই করিসনি মন দিয়ে! রোমানের বহুবচন কী হবে?" ব্রায়ান কাতরে ওঠে, "রোমানি! রোমানি!" ডেসিউরিয়ান বলে, "তার নিচে ওটা কী লিখেছিস? এউন্ত! এউন্ত! শব্দান্ত কর দেখি, "ইর" ক্রিয়ার শব্দান্ত কর!" ব্রায়ান কাঁদতে কাঁদতে শব্দান্ত করে। "এউন্ত মানে কী দাঁড়ায় তাহলে? তারা যায়! এখন বল, রোমানেরা বাড়ি যাও, এটা কি সাধারণ ক্রিয়া নাকি আদেশ ক্রিয়া?" ব্রায়ান বলে, "আদেশ! আদেশ ক্রিয়া!" ডেসিউরিয়ান বলে, "বেশ, এবার তাহলে ঠিক করে বল!" ব্রায়ান বলে, "ইৎ! ইৎ!" ডেসিউরিয়ান বলে, "বটে? কয়টা রোমানকে বাড়ি যেতে বলছিস? একটাকে না সবক'টাকে? বচন কী হবে?" ব্রায়ান এবার ফুঁপিয়ে ওঠে, "ইতে! ইতে!" ডেসিউরিয়ান বলে, "শেষমেষ ওটা কী লিখেছিস? বাড়ি যাও! এখানে বাড়ি কোন কারক? অ্যাঁ? কোন কারক কোন বিভক্তি? Domus নয়, এখানে হবে Domum! ল্যাটিন তো কিচ্ছু শিখিসনি দেখছি! এবার যা, শহরের দেয়ালে পাঁচশোবার শুদ্ধ করে লেখ, Romane ite domum!"

ওদিকে হোলি গ্রেইলে রাজা আর্থার একটা স্বল্প বাজেট অভিযান চালায় পবিত্রপাত্র উদ্ধার করার জন্যে। আর্থারের ঘোড়া নেই, তার ভ্যালেট যাবতীয় মালপত্র বহন করে, আর দুটো নারিকেলের আধখোসা একটা আরেকটার সাথে বাড়ি মেরে ঘোড়ার খুরের খটখট আওয়াজ তোলে। এক দুর্গের সামনে এসে আর্থার হাঁক ছাড়ে, "কে তোমার লর্ড? তাকে বলো, সে রাজা আর্থারের এই অভিযানে যোগ দিতে রাজি কি না!"

ওপর থেকে দুর্গের রক্ষী বলে, "বটে? কেমন রাজা আপনি? আপনার তো কোন ঘোড়াই নেই, দুটো নারিকেলের খোল নিয়ে একটা আরেকটার সাথে বাড়ি দিচ্ছেন! আপনি নারিকেল পেলেন কোথায়?"

আর্থার বলে, "নারিকেল কোথায় পেলাম মানে?"

রক্ষী বলে, "নারিকেল তো এদিকটায় জন্মায় না। এটা তো ক্রান্তীয় এলাকার ফল। কোত্থেকে পেলেন?"

আর্থার বলে, "আমাদের সোয়ালোরা শীতে দক্ষিণে উড়াল দেয়! কই, সেটা নিয়ে তো কোন প্রশ্ন ওঠে না!"

রক্ষী এবার বলে, "আর ইউ সাজেস্টিং দ্যাট কোকোনাটস মাইগ্রেট?!"

৩. ব্যারন মুনশাউজেনের অভিযানগুলি

ফ্যান্টাসি আমার বেশ প্রিয়। যদিও লর্ড অব দ্য রিংস, হ্যারি পটার কিংবা ক্রনিকলস অব নার্নিয়ার ধাঁচের ফ্যান্টাসি না, আমার ভালো লাগে বাস্তবের হাতে হাত ধরে চলা অলীক বাস্তবতা, যে ফ্যান্টাসির সাথে মানুষের একেবারে খটখটে জীবনের বাস্তবতাও মিশে থাকে নিবিড়ভাবে। এ কারণে "দন হুয়ান দি মার্কো" আর "হীরক রাজার দেশে" আমার বেশ প্রিয় সিনেমা। তেমনি আরেকটা সিনেমা দেখে খুব ভালো লাগলো, টেরি জিলিয়ামের পরিচালনায় অ্যাডভেঞ্চারস অব ব্যারন মুনশাউজেন।

ব্যারন মুনশাউজেন এক বীরপুরুষ, তার সঙ্গীরাও একেকজন নানা বিষয়ে কৃতী। বের্টোল্ড যেমন গুলির চেয়েও আগে ছুটতে পারে, যে কারণে সে দরকার না পড়লে পা থেকে শেকল দিয়ে বাঁধা লোহার গোলা খোলে না। আলব্রেখট অন্যতম শক্তিশালী লোক, ভারি ভারি জিনিস সে অক্লেশে কাঁধে তুলে নেয়। পৃথিবীর এক মাথা থেকে আরেক মাথা পর্যন্ত নিখুঁত লক্ষ্যভেদ করে অ্যাডোলফাস, আর গুস্তাফাস তার বড় বড় কান দিয়ে শুনতে পায় নিযুত যোজন দূরের শব্দ। এমনই এক ব্যারনের কাহিনী রঙ্গমঞ্চে মঞ্চস্থ করছে শহরের থিয়েটার দল। ওদিকে বাইরে চলছ তুর্কিবাহিনীর সাথে যুদ্ধ। ছোট্ট স্যালি তার বাবার থিয়েটার দলের ছোট্ট কান্ডারী, সে শহরে ঘুরে ঘুরে যেখানেই পোস্টারে "সল্ট অ্যান্ড সন" লেখা দেখে, সেখানেই "সন" কেটে "ডটার" লিখে দিয়ে আসে। ব্যারন মুনশাউজেনের গল্পে স্যালির দারুণ আগ্রহ। একদিন রঙ্গমঞ্চে স্যালির বাবা ব্যারন সেজে যখন নানা কাহিনী শোনাচ্ছে শহরের লোকজনকে, তখনই হঠাৎ মঞ্চে আবির্ভাব সত্যিকারের ব্যারন মুনশাউজেনের! মঞ্চ তছনছ করে দিয়ে ক্রুদ্ধ ব্যারন গর্জাতে থাকে, "বন্ধ করো এই প্রহসন! গল্প শুনতে চাইলে আমার কাছ থেকে শোনো!"

তারপর শুরু হয় ব্যারনের আশ্চর্য গল্পযাত্রা। সিনেমা মঞ্চ টপকে চলতে থাকে সিনেমার পথে। এরই ফাঁকে আবার তুর্কি বাহিনী শহর আক্রমণ করে, গোলাবৃষ্টি হতে থাকে, মৃত্যুদূত এসে বৃদ্ধ ব্যারনের আত্মার ওপর হামলা করে, ছোট্ট স্যালি ছুটে গিয়ে হটিয়ে দেয় তাকে। ব্যারন হঠাৎ হাল ছেড়ে দেন, শান্তিতে মরতে চান তিনি, এই যুক্তির যুগ তাঁর আর ভালো লাগে না। যেখানে সব কিছুর জন্যেই একটা করে নিয়ম থাকে, রুলস অব হাইড্রলিকস, রুলস অব সোশ্যাল ডাইন্যামিক্স, যেখানে আর তিন পা অলা সাইক্লপসদের জায়গা হয় না, সেই সময়ে কেন তিনি বেঁচে থাকবেন? কেউ শুনতে চায় না তাঁর গল্প, কেউ বিশ্বাসে করে না। ছোট্ট স্যালি গুটিসুটি মেরে বসে তাঁর পাশে, সে শুনতে চায় সব গল্প, সে সব বিশ্বাস করে। এরই মধ্যে আবার শুরু হয় গোলাবৃষ্টি। এবার স্যালি ছুটতে ছুটতে বের হয়, শহরের প্রাচীরের ওপর রাখা কামানের ওপর বসে সে ঢিল ছুঁড়ে মারে তুর্কি বাহিনীর ওপর। "দূর হও তোমরা, আমাকে গল্প শুনতে দাও!" আমাকে যদি গত শতাব্দীর সেরা কিছু সিনেমার দৃশ্য বাছাই করতে বলা হতো, এ দৃশ্যমালা আমি ওপরের দিকে রাখতাম। ছোট্ট একটি শিশু এক টুকরো পাথর নিয়ে আক্রমণ করছে একটি সেনাবাহিনীকে, তার ফ্যান্টাসির জগতকে সে আক্রান্ত হতে দেবে না, তার সবটুকু সাধ্যমতো সে রক্ষা করে চলছে বাস্তবতার বিপরীতের কল্পজগতকে, এর মতো অপূর্ব দৃশ্য আর খুব বেশি আছে কি?

সিনেমা এর পর অনেকদূর গড়ায়। ব্যারনের ভূমিকায় জন নেভিল আর স্যালির ভূমিকায় সারা পলি দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন। সিনেমাটা দীর্ঘ, কিন্তু অভিনয় আর দৃশ্যায়নের গুণে দর্শক এই দৈর্ঘ্যের কথা ভুলতে বাধ্য।

সিনেমাটা দেখে একটাই কাঁটা খচখচ করছে মনের মধ্যে, একটা ফ্যান্টাসিনির্ভর বড়গল্প লেখার চেষ্টা করছি গত দেড়বছর ধরে, প্লটটা মনের মধ্যে সাজানো আছে সবটুকুই, শুধু লিখতে বসা হচ্ছে না। মাঝে মাঝে মনে হয় পর্যাপ্ত পরিমাণ মদ্যপান করে এক বসায় লিখে ফেলি, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর হয় না। এই গল্প নিয়ে গল্প লেখা হয়ে যায়, দিনপঞ্জিতে গল্পের চেহারা আঁকা হয়ে যায় শৈশবের গাছ-নদী-ফুল-পাখির মতো, কিন্তু গল্পটা নিজে রয়ে যায় নাগালের বাইরে।


মন্তব্য

কনফুসিয়াস এর ছবি

ইলেকট্রিক গ্রিল আসলেই দুর্দান্ত। খুব দ্রুত হয়ে যায়।
গ্রেট ওশেন রোডে পাগলামী করে শেষ যেদিন ঘুরতে গেছিলাম, সেদিন ছিল প্যাচপ্যাচে বৃষ্টি। ঐ বৃষ্টি মাথায় নিয়েই হাত-ট্রে-কাগজ এই সবের ছাতা বানিয়ে সমুদ্রের পাড়ে একটা নির্জন জায়গায় আমরা চটপট গ্রিল সেরে ফেলেছিলাম।
এই রকম জলজ গ্রিল আগে পরে আর কখনো খাইনি।

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

সৈয়দ নজরুল ইসলাম দেলগীর এর ছবি

২১ তারিখ বিকেল ৫টায় কোন এক বালিকার সাথে সময় নির্ধারণ করে ২২ তারিখ সন্ধ্যে ৬টায় দেখা করার উদাহরণও আছে।

(অবাককান্ড) (হোহোহো)

সেই বালিকার প্রতিক্রিয়া কি ছিলো?

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍বোতল আমার হইলো না আদায়
বোতল আমি টানতে পারলাম নাআআআ ...

=))

আমার ইমিডিয়েট বস এসে গোমড়া মুখে গান গাইছে, ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে?

:))

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? :-?

অয়ন এর ছবি

আপনার পছন্দ দেখে অনুমান করছি টেরি জিলিয়ামের ব্রাজিলও আপনার ভালো লাগবে।

হিমু এর ছবি

ব্রাজিলের নাম শুনেছি অনেক, তবে সিনেমাটার একটা রিভিউ পড়ে সেটাকে আপাতত অলস সময়ের জন্যে রেখে দিয়েছি। পরীক্ষার ফাঁকে আমি সাধারণত কমেডি দেখি, স্ট্রেস কাটানোর জন্যে।


হাঁটুপানির জলদস্যু

অতিথি লেখক এর ছবি

প্রথমটা পড়ে টানতে শুরু করেছিলাম। আজকে রুমমেট একটা জম্পেস খিচুরি আর গরু ভুনা করেছিলো। কাজে কাজেই একটা অবশ্য কর্তব্য হিসেবে টানটানির শুরু। প্রথম স্পেল শেষ করে এসে ৩ নং টা পড়ে সব উড়ে গেলো। এখোন আরো ২ বোতল নিয়ে এসেছি, দেখি কতটুকু থাকে। হিমু ইউ আর গ্রেট!!!!!!

সন্নাসী

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

জনতা, বিভ্রান্ত হইবেন না। ইহা আমি নহি।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? :-?

হিমু এর ছবি

এক ব্লগ মে দো সনইয়াসি!


হাঁটুপানির জলদস্যু

স্নিগ্ধা এর ছবি

কিন্তু ঘুমের মধ্যে দুঃস্বপ্ন দেখলাম, ডিপার্টমেন্টের সব দরজা হাঁ করে খোলা, আর আমার ইমিডিয়েট বস এসে গোমড়া মুখে গান গাইছে, ভেঙে মোর ঘরের চাবি নিয়ে যাবি কে আমারে?

হিমু, দুঃস্বপ্নও যে এভাবে মিলিয়ে মিলিয়ে দেখতে পারে সে যে একদিন দীপক চোপড়ার চাইতেও বড় স্পিরিচুয়াল গুরু তে পরিণত হবে, তা নিয়ে আমার একফোঁটাও সন্দেহ নেই!!

আহা, কবে যে আসিবে সেই দিন ......

দ্রোহী এর ছবি

এটা গোপনে এসে পড়ে গেছিলাম। মন্তব্য করা হয়ে উঠেনি সময়মত।

হিমু লিখেছেন:
ওদিকে হোলি গ্রেইলে রাজা আর্থার একটা স্বল্প বাজেট অভিযান চালায় পবিত্রপাত্র উদ্ধার করার জন্যে। আর্থারের ঘোড়া নেই, তার ভ্যালেট যাবতীয় মালপত্র বহন করে, আর দুটো নারিকেলের আধখোসা একটা আরেকটার সাথে বাড়ি মেরে ঘোড়ার খুরের খটখট আওয়াজ তোলে। এক দুর্গের সামনে এসে আর্থার হাঁক ছাড়ে, "কে তোমার লর্ড? তাকে বলো, সে রাজা আর্থারের এই অভিযানে যোগ দিতে রাজি কি না!"

নাইটের সাথে যুদ্ধটা মজার না?


কি ব্লগার? ডরাইলা?

জিফরান খালেদ এর ছবি

ঐ বড় গল্পটা লিখেন... আমি অপেক্ষায় থাকলাম...

আর, ঐ দৃশ্যটা আসলেই অসাধারণ... স্যালির কথা বলছি...

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।