১.
কাসেল শহরে প্রচুর অগ্নিকান্ড হয়। অন্তত, অগ্নিকান্ডের রিপোর্ট আসে প্রচুর। রোজই তীব্রস্বরে সাইরেন বাজিয়ে ফয়ারভেয়ার বা দমকলবাহিনী ছুটে যায় বিভিন্ন প্রান্তে।
কাসেল শহর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় হিটলারের অন্যতম আস্তানা ছিলো, এখন যেখানে আমার বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানেই ছিলো নাৎসি বাহিনীর অস্ত্র তৈরির কারখানা। চিমনিটা এখনো রয়ে গেছে, সেটাকে সযত্নে সংরক্ষণ করা হয়েছে, তবে চিমনির ওপরে সেলুলার ফোনের বেজ স্টেশন বসানো হয়েছে। মিত্রবাহিনী কাসেল শহরটা মোটামুটি চূর্ণ করে দিয়েছিলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, তাই এর বেশির ভাগটাই আবার নতুন করে তৈরি করা হয়েছে। পুরনো শহরাংশ নর্ডষ্টাট (উত্তর শহর)-এ কিছু পুরনো ঢঙের বাড়ি টিকে আছে, যেগুলোতে আগুন লাগার সম্ভাবনা বেশি, সেখান থেকেই রিপোর্ট আসে বেশি। দমকলকেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের খুব কাছেই, তাই প্রায় প্রত্যেকদিনই তাদের সশব্দ অভিযান কানে বাজে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন ভবন, যেটাকে আমরা কাভে-দ্রাই বলি, সেখানে বড় ল্যাবরেটরিগুলো স্বাভাবিকভাবেই হয় নিচতলায় বা মাটির নিচে, সেখান থেকে মাঝে মাঝে ফায়ার অ্যালার্ম চলে যায় দমকলের কাছে, আমাদের তখন রয়েসয়ে ভবন ছেড়ে বাইরে গিয়ে জমা হতে হয়। এদের তড়িৎগতি দেখার মতো, পাঁচ মিনিটের মধ্যে ভবনের যে অংশ থেকে অ্যালার্ম এসেছে, সেখানে সুশৃঙ্খলভাবে পজিশন নেয় দমকলযোদ্ধারা। দুয়েকবার সঠিক আগুনের খবর এসেছে, বেশিরভাগ সময়ই অন্য কোন ভুলে অ্যালার্ম বেজে ওঠে, তখন বিশ্ববিদ্যালয়কে জরিমানা গুণতে হয় সাতশো ইউরো।
আমি যে পাড়ায় থাকি, তা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমলের না হলেও পুরনো, যাকে বলা হয় আল্টবাউ। সেখানে হিটিং সিস্টেমের ধরনও পুরনো, যার ফলে আগুন লাগার সম্ভাবনা আরেকটু বেশি নতুন বাড়িগুলোর থেকে। আমি ঘরে বসেও তাই সাইরেনের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাই না, হপ্তায় অন্তত তিনদিন শুনতেই হয়।
জার্মানিতে শক্তি খরচ পদ্ধতিকে আরো দক্ষ করে তোলার জন্যে এখন বাড়ি নির্মাণের সময় বেশ কিছু নতুন গাইডলাইন ধরিয়ে দেয়া হয়। বর্গমিটার পিছু বছরে শক্তি খরচ কমিয়ে প্রায় তিনভাগের এক ভাগে নিয়ে আসা সম্ভব, যদি বাড়িঘরের ইনসুলেশন নতুন গবেষণালব্ধ নকশা অনুসরণ করে। এ বিষয়ে পরে বিস্তারিত লেখার ইচ্ছে আছে।
২.
রান্নাবান্না করতে ভালো লাগে না বেশিরভাগ সময়ই। সসেজ-রুটি, ফ্রিকাডেলে-রুটি কিংবা পিৎজার ওপর দিয়ে চালিয়ে দিই, নিতান্ত দেশি খাবার খেতে ইচ্ছা করলে হের চৌধুরীর সাথে কোয়ালিশনে রান্না করি। উদাহরণ দেয়া যেতে পারে, গরুর মাংস। আমার বাসায় ডিপ ফ্রিজ নেই বলে গরুর মাংস একবারে কিনে হপ্তা ধরে সংরক্ষণ করতে পারি না, তাই চৌধুরীর বাড়িই ভরসা। পুরনো ঢাকার জনৈক মামার সাগরেদি করে হের চৌধুরী গরুর মাংসে বিশেষ ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছেন, তাই তাঁকে কিছু কাটাকুটি করে এগিয়ে দিলে তিনি দয়াপরবশ হয়ে সেই বেলার খাবারটা তাঁর ওখানেই সেরে যেতে বলেন।
তবে যখন চৌধুরী ব্যস্ত থাকেন, কিংবা আমারই ব্যস্ততার কারণে বাড়ি ছেড়ে বেরোনো সমস্যা হয়ে যায়, তখন নিজেকেই রেঁধে খেতে হয়। আমি কোন রান্নার বই সাথে নিয়ে আসিনি, বিপদে পড়ে দেশে ফোন করেও রেসিপি জেনে নিইনা, অনলাইনেও রান্নার কোন বাতেনি কৌশল খুঁজি না। আমি আবিষ্কারের চেষ্টায় থাকি। বেশিরভাগ সময়ই অখাদ্য হয় সেগুলি, তবে ফাঁকতালে কিছু কিছু জিনিস জিভে বেশ ইতিবাচক হিট করে। উদাহরণ দিই,
৩.
নানা গ্যাঞ্জামের পর একটু ঝিমানোর ফুরসত পেয়ে সেদিন দেখলাম ফ্র্যাকচার। দুর্দান্ত লেগেছে। অ্যান্থনি হপকিন্স সেই সাইলেন্স অব দ্য ল্যাম্বস এর ছোঁয়াচ কাটিয়ে উঠছেন না কিছুতেই। ঘাগু বদমায়েশ চরিত্রে তাঁর সমকক্ষ অভিনেতা আছেনও কম। বহু আগে দেখেছিলাম রোড টু ওয়েলভিল, রীতিমতো অশ্লীল কমেডি, সেটা খুঁজলাম নেটে, কিন্তু পেলাম না।
মন্তব্য
ভালোই আরামে আছেন, খানাপিনা আর মুভি দেখা চলতেছে সমানে!
গরররররররর! তার আগে যে কতদিন ভুখানাঙ্গা কাটাইলাম সেইটার কী হবে!
গরীবের পেটেমনে কিছু খোরাক ঢুকলেও লোকে খোঁটা দেয়! খেলুম না কিন্তু!
হাঁটুপানির জলদস্যু
সাক্ষ্য দিচ্ছি - হের হিমু উদ্ভাবিত পালং-খিচুড়ি অতীব উপাদেয়। একাধিকবার পরীক্ষিত।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মৌমাছির জীবন কি মধুর?
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
হেঁ হেঁ হেঁ, পাঝালুস্তা!
হাঁটুপানির জলদস্যু
বুঝতে পারছি, টমি মিয়ার রেসিপির মতো অচিরেই আমরা আরেকটি পাচ্ছি-
নামটা সম্ভবতঃ বাংলা রেসিপি, মেড ইন জার্মান !
ভালো ভালো, অতীব সুসংবাদ।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
হুমম, আমি ভাবছি হিমু মিয়ার রেসিপি জড়ো করে বই লিখবো, "খাইলে খা না খাইলে ফোট!" আমার এমফ্যাসিস থাকবে বাসি খাবার রিসাইকেল করে নতুন খাবার রান্নার ওপরে। কেমন হবে?
হাঁটুপানির জলদস্যু
আহারে ! এইটাই তো বাঙালির জন্য উৎকৃষ্ট খাবারের বই , আরে কী বলি, রেসিপি হবে !
ভাই তারাতারি করেন। কাস্টমার হিসেবে আমি প্রথম হাত তুইলা রাখলাম।
-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’
আমার এমফ্যাসিস থাকবে বাসি খাবার রিসাইকেল করে নতুন খাবার রান্নার ওপরে।
আমি এই ব্যাপারে মোটামুটি স্পেসালিষ্ট বলতে পারো। মাংসরে কিভাবে টেনে এক উইক নিতে হয়, ডিম দিয়ে, লাউ দিয়ে আমার থেকে ভালো কেউ জানবে না। তুমি আইডিয়ার দরকার থাকলে আমারে খোজ কইরো।
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
ঠিকাছে, বইটা মিল্লাঝিল্লা লেখা যাবে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
- আল্লায় তোর ভালো করুক।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আমি সেদিন হলে গিয়ে এক্স-ফাইলস দেখলাম। দারুণ!
= = = = = = = = = = =
ঊষার দুয়ারে হানি আঘাত
আমরা আনিব রাঙা প্রভাত
আমরা ঘুচাব তিমির রাত
বাধার বিন্ধ্যাচল।
- "মামি" আইতাছে দেখলাম। এইটা যে কোন মামি সেইটাই বুঝতার্তাছিনা। আসুক, আংরেজী ভাষায় লাগোনের আগ পর্যন্ত দাঁতে ঠোঁট চাইপা ওয়েইট করা ছাড়া গতি নাই।
এক্স ফাইলসের কথাও শুনতাছি।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
৩ নম্বর মামিকেও দেখে এলাম। আগের মামিগুলোর মত ভাল লাগেনি।
কী ব্লগার? ডরাইলা?
এক্স-ফাইলস বেশি ভাল লাগে নাই। প্লটটা আরো জমজমাট হইতে পারতো। টিভি এপিসোড হিসাবে ঠিকাছে। কিন্তু এই প্লট সিনেমায় মানায়নি। তবে স্কাল-ই আর মলদ্বারের জন্য কেমন মায়া মায়া লাগতেছিল আমার!
কী ব্লগার? ডরাইলা?
বানান ঠিক কইরা।
দমবন্ধ জীবন ------- ভাবতেও ভয় ভয় লাগছে -------
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
.....................................................................................
সময়ের কাছে এসে সাক্ষ্য দিয়ে চ'লে যেতে হয়
কী কাজ করেছি আর কী কথা ভেবেছি..........
যারা আমার মতো রান্তে বারতে পারে না তাদের জন্য এই পোস্ট খুবই উপকারি। আস্তা একটা রান্নার বই।:)
এম্মা, এতো দেখি রীতি মত রেসিপি!
আহারে প্রবাসে বঙ্গদেশের সব ছেলেই কিছু না কিছু রান্ধে-বাড়ে, নতুন কিছু তৈরি করে, খালি আমার জামাইটাই কিসসু পারে না । খালি বড় বড় ডায়ালগ, "তুই যখন ছিলি না আমি তখন যেই অসাধারণ চিকেন রানতাম...!" হায়রে রূপকথা...
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ
রূপকথা কেন হবে? কনফু সত্য কথাই বলেছে।
বউ আসার আগে আমিও চমৎকার মুরগী ও মাছ রান্না করতে পারতাম। অবশ্য শুরুটা অনেক হৃদয়বিদারক ছিল,
জীবনের প্রথম খিচুড়ি রান্নার পর দেখলাম -- হাঁড়ির তলার অংশের খিচুড়ি পুড়ে কয়লা হয়ে গেছে, মাঝের অংশটুকু খেতে চমৎকার হয়েছে আর উপরের অংশটুকু কাঁচাই রয়ে গেছে।
কী ব্লগার? ডরাইলা?
তারপর কী করলেন? মাঝেরটা খেলেন নিজে, ওপরেরটা রাখলেন পরদিন কোন বন্ধুর জন্যে, আর তলারটা দিয়ে এলেন সুপারভাইজারুদ্দিনকে?
হাঁটুপানির জলদস্যু
দেখি এই রেসিপি ফলো কইরা বউরে একদিন চমকায়িত করা যায় কিনা।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
-------------------------------
আকালের স্রোতে ভেসে চলি নিশাচর।
পালং শাকের কুচির ব্যাপারটা পোস্ট দেয়ার আগে জাপানিজরা শিখলো কেম্নে? এখানে খিচুড়ি বা সাদা ভাতে ছড়িয়ে দেয়ার জন্য অনেক রকম গুঁড়াগাড়ি পাওয়া যায়।
নতুন মন্তব্য করুন