আকাশকুসুম

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শুক্র, ২২/০৮/২০০৮ - ৩:৫২পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

সেদিন স্বপ্নে খুব মনোযোগ দিয়ে মহাত্মা গান্ধীর নামে হত্যা মামলার তদন্ত দেখছিলাম। চাপাবাজি নয় একটুও, একেবারে বর্ণে বর্ণে সত্যি। মহাত্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ খুব শক্ত, তিনি কাকে বা কাদের যেন রীতিমতো ছুরি মেরে খুন করেছেন। ছুরিটাকে তোয়ালে দিয়ে জড়িয়ে এনে সবাইকে দেখানো হচ্ছে। বাপুজি তাঁর সামান্য বস্ত্র পরে এক কোণায় কাঁচুমাচু হয়ে বসে আছেন। কে যেন খুব হাঁকডাক দিচ্ছে।

ঘুম ভেঙে গেলো সময়মতো। বেশিরভাগ স্বপ্নই মানুষ ভুলে যায় ঘুম ভাঙার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে, এটা বেশ গেঁথে গেছে মাথার ভেতরে।

তবে কিছু আকাশকুসুম জেগে জেগেই দেখি। কিছুদিন আগে জার্মান রেলসংস্থা ডয়েচে বান এর ওয়েবসাইট ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম এক শহর থেকে আরেক শহরে যাবার রেল যোগাযোগের হালত যাচাই করার জন্যে। জার্মান রেলযোগাযোগ বেশ কার্যকরী জিনিস, কিছু জিনিস বাদ দিলে বেশ উপযোগীই বলা চলে, যদিও অনেকেই রেলে চলাচলের বদলে মিটফার (পেইড লিফট বলা চলে) পছন্দ করেন, কিছুটা আর্থিক কারণে, কিছুটা চলার স্বস্তির জন্যে।

আমার আকাশকুসুম ফুটে উঠেছিলো এমন, যে একদিন বাংলাদেশেও রেলযোগাযোগ এমনি পল্লবিত হয়ে উঠবে। ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম, বা ঢাকা থেকে কুমিল্লা, কিংবা কিশোরগঞ্জ থেকে লাকসামযাত্রাও সহজ হয়ে উঠবে রেলের কল্যাণে। আর, নতুন লাইন বসুক না বসুক, টিকেট কাটার ব্যবস্থাটা সহজ হয়ে উঠবে।

তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে আমরা মুখে প্রচুর ফেনা তুললেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ খাতকে আমরা তথ্যপ্রযুক্তি দিয়ে সজ্জিত করতে পারিনি। ব্যাংকিং তার মধ্যে একটা। নিরাপত্তার খাতিরে অনলাইন লেনদেন দেশে বিকশিত হতে পারেনি। এটিএম বুথ-ব্যবস্থা যদিও তৃতীয় প্রজন্মের দেশী ব্যাংক আর বিদেশী ব্যাংকগুলির কল্যাণে সম্প্রসারিত হয়েছে, নিরাপত্তার কথা ভাবলে সেগুলি থেকেও সাবধান হতে হয়। হের চৌধুরী একবার জানালেন, তাঁর এক পরিচিত ভদ্রলোককে রাত পৌনে বারোটার দিকে ছিনতাইকারী ধরে পাকড়াও করে একটা এটিএম বুথে নিয়ে গেছে। সেখানে দিনে সর্বোচ্চ কুড়ি হাজার টাকা তোলা যায়। এগারোটা পঞ্চান্নতে একবার, আর বারোটা পাঁচে আরেকবার সেই ভদ্রলোককে মোট চল্লিশ হাজার টাকা তুলে সশস্ত্র ছিনতাইকারীর হাতে তুলে দিতে হয়েছিলো। একই ঘটনা ঘটতে পারে অনলাইন ব্যাঙ্কিঙের ক্ষেত্রেও। তবুও বলি, অনলাইন ব্যাংকিঙের সুবিধাগুলো দেশে জরুরি ভিত্তিতে চালু করা উচিত। প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে যতবার ফি জমা দিতে যেতাম, এই কথাটা মাথায় ঘুরতো। পুরো একটা দিন জলাঞ্জলি দিতে হতো ফি দিতে গিয়ে, হাজার তিনেক ছাত্রছাত্রীর জন্যে তিন বা চারজন অসহায় ব্যাংককর্মী সেখানে মুখে ফেনা তুলে কাজ করতেন, তাদের সামনে ছোট ঘরে ঘিঞ্জি লাইন ধরে আমরাও মুখে ফেনা তুলে দাঁড়িয়ে থাকতাম। এই একই সফেন দৃশ্য প্রতিদিন প্রত্যেকটা সরকারি ব্যাঙ্কে দেখা যায়, দেখা যায় কিছু বেসরকারি ব্যাঙ্কেও।

অথচ খুব সহজেই এই ঝামেলার হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যেতো বলে বিশ্বাস করি। যে কোন ধরনের বিল যদি অনলাইনে মেটানোর সুযোগ দেয়া হতো গ্রাহকদের, তাহলে যে বিপুল পরিমাণ সময় বাঁচতো মানুষের, তা অন্য কাজে লাগতো। কোন বিল দিতে যাওয়া মানেই বিশ-তিরিশ টাকা রিকশাভাড়া খরচ, দেড় থেকে তিন ঘন্টা সময় পন্ড। একে মোট গ্রাহক সংখ্যা দিয়ে গুণ করা হলে ক্ষতির মোট পরিমাণ বেরিয়ে আসে।

এ কথা সত্য যে টেলিযোগাযোগব্যবস্থা আগের চেয়ে বহুগুণে সম্প্রসারিত হয়েছে, কিন্তু তা মানুষের জীবনকে যতটুকু সহজ করে তুলতে পারতো, সেই সম্ভাবনার (পোটেনশিয়াল) কত শতাংশ বাস্তবায়িত হয়েছে? ঢাকা থেকে রেলে চট্টগ্রাম যেতে হলে আমার বন্ধু দস্তগীরকে মিরপুর থেকে কমলাপুর যেতে হচ্ছে টিকেট কেনার জন্যে। রেলের টিকেটের সাথে যোগ করতে হবে এই সময় আর যাতায়াতের খরচ। যদি রেলের টিকেট কেনার ব্যবস্থা অনলাইন হতো, তাহলে বাড়তি খরচটা দস্তু হারামজাদার বহন করতে হতো না। সে অনলাইনে টিকেট বুক করতো, উত্তরে একটা বড়সড় বারকোড পাঠানো হতো তাকে, সেটা প্রিন্ট করে নিয়ে সে যাত্রার সময় স্টেশনে হাজির হতো, বারকোড রিডার দিয়ে চেক করে টিটি তাকে স্টেশনে ঢুকতে দিতো। দস্তু যদি বাসে করে মিরপুর থেকে কমলাপুর যাওয়া-আসা করে, তাহলে তার খরচ হবে পঁচিশ টাকা আর তিনঘন্টা। দস্তু যদি ট্যাক্সি করে যায়, তাহলে তার খরচ হবে আড়াইশো টাকা আর দুইঘন্টা। ওদিকে একটা প্রিন্ট আউটের জন্যে দস্তুর খরচ পড়তো একটাকা আর এক মিনিটের মতো। আমাদের রেলের টিকেট ব্যবস্থা একটা অব্যক্ত মোটাসোটা অপরচুনিটি কস্টের বোঝা আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে, অযথাই, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করে।


মন্তব্য

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

উদ্ধৃতি
আমাদের রেলের টিকেট ব্যবস্থা একটা অব্যক্ত মোটাসোটা অপরচুনিটি কস্টের বোঝা আমাদের কাঁধে চাপিয়ে দিচ্ছে, অযথাই, বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করে।

আমাদের দেশের অনেক সরকারি কর্মকর্তা সেই ১৯৬৫-৭০ এর দিকের মেট্রিক পাস। তাদের অনেকের টেবিলেই ল্যাপটপ বা ডেস্কটপ কম্পিউটার আছে। কিন্তু ব্যবহার জানেন না বা আগ্রহী নন। তেমন কর্মকর্তারা এমন একটি ব্যাপার নিয়ে কখনো ভাবতে পারেন বলে মনে হয় না। বরং অন্যকেউ ভাবলে তেনারা বলবেন আগে মিটিঙে বসি- তারপর...

____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

হিমু এর ছবি

তাঁরা শ'খানেক মিটিং করুন প্রয়োজন হলে। কিন্তু তারপরও জিনিসটা চালু করুন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

জুলিয়ান সিদ্দিকী এর ছবি

কিন্তু সেই মানসিকতা থাকা চাই। ফাইবার অপটিক ক্যাবল নিয়ে কী তালবাহানাই না করেছিলেন যাতে ব্যাপারটি আমাদের দেশে প্রচলিত না হয়।
____________________________________
ব্যাকুল প্রত্যাশা উর্ধমুখী; হয়তো বা কেটে যাবে মেঘ।
দূর হবে শকুনের ছাঁয়া। কাটাবে আঁধার আমাদের ঘোলা চোখ
আলোকের উদ্ভাসনে; হবে পুন: পল্লবীত বিশুষ্ক বৃক্ষের ডাল।

___________________________
লাইগ্যা থাকিস, ছাড়িস না!

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- ক্যামনে হবে বল। আমরাতো সর্বদা চিন্তা করি কোনো ফিরিঙ্গি হালার পুত এসে আমাদের কলাটা ছিলে দেবে আর আমরা তাতে টুক্কুশ করে দাঁত বসাবো!

জীবদ্দশায় বুঝি আর এইসব সুযোগ আমরা দেখে যেতে পারবো নারে। রেলের ওয়েবসাইটের পাশাপাশি হুকারস টাইপের কোনো গেজেলশাফটের ওয়েব সাইট খুললেও মন্দ হয় না।

বাংলাদেশে ই-শপিং কেমন চলে জানি না। একবার মনেহয় বেশ তোড়ের সাথেই শুরু হয়েছিলো। এই প্র্যাকটিসটা চললেও হয়তো অনলাইনে টিকেটিং এর সুযোগটা চলে আসতো কারো না কারো হাত ধরে। রেলের সিক্সটিজের এন্ট্রান্স পাশ দেওয়া কোনো কর্মকর্তার শ'দেড়েক মিটিং আর সিটিং ছাড়াই।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

অমিত আহমেদ এর ছবি

পোস্টের সাথে একমত। তবে দেশের ইন্টারনেটই ঠিক হলো না। সব চেয়ে দ্রুত সার্ভিসে জিমেইল খুলে বসে থাকতে হয় ৩০ সেকেন্ড, এরপর বলে html ভার্সনে যেতে। অনলাইনে কিছু কেনাকাটার সার্ভিস টাইমআউট কি থাকবে? ৫ মিনিট করলে দেখা যাবে কারও পেজ লোড হতে হতেই আবার লগিন করতে হচ্ছে। এরপরে আছে আইপির ব্যাপার। ব্যাঙ্কিং এ আইপি রেকগনিশনের একটি ব্যাপার থাকে। আইপির তুঘলকি পরিবর্তন হলে অ্যাকাউন্ট লক করে দেয়া। এটা ব্যাঙ্কিং, ইশপিং সাইটে থাকতেই হবে। এবার দেশে পেপ্যাল ব্যবহার করতে গিয়ে এই ফাঁদে পড়েছিলাম। কানাডার আইপি না পেয়ে আমার পুরো অ্যাকাউন্ট লক করে দিয়েছিলো। দুর্বল ইন্টারনেটের কারণে এমন হাজারো সমস্যার কথা বলা যাবে। তাই অনলাইন শপিং জনপ্রিয় করতে আগে ইন্টারনেটের উন্নতি দরকার। ইন্টারনেট ঠিক হলে বাকি সব এমনি হয়ে যাবে।


ওয়েবসাইট | ব্লগস্পট | ফেসবুক | ইমেইল

প্রকৃতিপ্রেমিক এর ছবি

আমার মনে হয় অনলাইনে টিকিট কেনার আগে আপনার ইউনিভার্সিটি (এবং অন্যগুলো) তাদের ছাত্রছাত্রীদের একটা ড্যাটাবেস বাস্তবায়নই করুকনা! এই সামান্য জিনিসটা করতেও দেখা যাবে একশটা কমিটি করা লাগবে তারপরে যাদের কাছ থেকে অনুমোদন নিতে হবে দেখা যাবে তারাই গন্ডমূর্খ। এইসব পরিস্থিতিতে কোন ভাল কাজই শেষমেষ আলোর মুখ দেখেনা।

যেটা বলতে চাইছি তা হলো দেশে এসব করার মত লোকের তো অভাব নাই। লাগে খালি সদিচ্ছা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক থেকে শুরু করে ভিক্ষুকদের কমিটি পর্যন্ত আওয়ামী-বিএনপির দলালদলি আর পা চাটাচাটি নিয়েই আমরা সবাই ব্যস্ত। এসব চিন্তা করার সময় আছে কি?

তথ্য: ভিক্ষুকদের কমিটিতে দলীয় প্রভাব জানতে সাপ্তাহিক২০০০ দেখুন।

মুশফিকা মুমু এর ছবি

হুমমম, তবে কেনাকাটার জন্য ক্রেডিট কার্ডের ব্যবস্থা থাকায় খুবি সুবিধা হয়েছে, হাতে বেশি টাকা নিয়ে ঘুরতে হয়নি।
------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

------------------------------
পুষ্পবনে পুষ্প নাহি আছে অন্তরে ‍‍

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

বুঝতারলাম। হিমু বুড়া হইতাছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

ধুসর গোধূলি এর ছবি

- এস এম মাহবুব মুর্শেদ | শুক্র, ২০০৮-০৮-২২ ০৫:২৫ - এই দিনক্ষণে বলেছেন
বুঝতারলাম। হিমু বুড়া হইতাছে।

___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক

তারেক এর ছবি

ঐ ব্যাংকের লোকজন মাশা'আল্লহ।
অনলাইন টিকেট থাকলে আসলেই খুব ভালো হয়। ট্রেনের এখন যাত্রী প্রচুর, কয়েকদিন আগে না করলে টিকেট পাওয়াই মুশকিল। ঢাকা-চিটাগাং নন এসি বাস ভাড়া বোধহয় ৩০০ করে এখন। ট্রেন এ জাস্ট অর্ধেক। সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ভাড়া তো এখনো সেই ১৬৫ টাকা।
_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

_________________________________
ভরসা থাকুক টেলিগ্রাফের তারে বসা ফিঙের ল্যাজে

অতন্দ্র প্রহরী এর ছবি

বুড়া-হাবড়াগুলো যতদিন সব প্রতিষ্ঠানের শীর্ষে থাকবে, ততোদিন এদের কাছ থেকে আধুনিক যুগোপযোগী কিছু আশা করা বৃথা। সেভাবে চিন্তা করার মত ক্ষমতা বা মানসিকতা এদের নেই। সবকিছু দেখে-শুনে খুব হতাশ লাগে, আর মনে হয় না আদৌ আমরা কখনো উন্নত বিশ্বের সুযোগ-সুবিধা (যেগুলো খুউব দরকারী এবং আমাদের সীমিত সামর্থের মধ্যেই বাস্তবায়ন করা খুবই সম্ভব) এই দেশে ভোগ করতে পারব!
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?

এনকিদু এর ছবি

হাঁ, উপর তলায় নতুন রক্ত চাই ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

কনফুসিয়াস এর ছবি

একেবারে রেলের দিকে না তাকিয়ে, অন্তত স্বল্প পরিসরে শুরু হলেওতো হয়। বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শুরু করতে পারে। ঢাবি, জাবি, শাবি বা বুয়েট। তারা ছাত্রদের ফিস, হলভাড়া, বেতন সব কিছু অনলাইনে বা আর কোন সহজ উপায়ে পরিশোধের ব্যবস্থা করে দেখাক যে এই সিস্টেম কার্যকর প্রমাণিত, তাহলে অন্যান্য ক্ষেত্রেও এগুলো ইমপ্লিমেন্ট করা যাবে।
মাঝে একবার শুনেছিলাম, মেট্রো এলাকাগুলোয় ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে কি কি বিল যেন শোধ করা যাচ্ছে, বিদ্যুত, গ্যাস আরও কি কি যেন। তার আপডেট কি?

-----------------------------------
... করি বাংলায় চিৎকার ...

-----------------------------------
বই,আর্ট, নানা কিছু এবং বইদ্বীপ

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

"মাঝে একবার শুনেছিলাম, মেট্রো এলাকাগুলোয় ফ্লেক্সিলোডের মাধ্যমে কি কি বিল যেন শোধ করা যাচ্ছে, বিদ্যুত, গ্যাস আরও কি কি যেন। তার আপডেট কি?"

সর্বনাশ!! লেখাটা পড়তে পড়তে প্রায় একটা পুরা বিজনেস আইডিয়া দাঁড় করায় ফেলছিলাম, কিভাবে ফ্লেক্সিলোড ইনফ্রা আর এসএমএসের সংমিশ্রণে একটা ফাটাটফাটি মোবাইল বিলিং সিস্টেম বানানো যায় .... মন খারাপ
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

সবজান্তা এর ছবি

মজার এক অভিজ্ঞতার কথা বলি, এক বড় ভাই এর থেকে শোনা। সেই বড়ভাইয়ের দুলাভাই বিটিটিবিতে চাকরি করেন ( অধুনা বিটিসিএল ) । তো দুলাভাই, তার অফিসের কিছু কলিগ আর একজন বড়কর্তা মিলে মোবাইল কোম্পানীর সাথে মিটিং করতে গিয়েছেন সিলেটে খুব সম্ভবত।

একদিন মিটিং শেষে জুনিয়াররা সবাই শহরের বাইরে বের হয়েছেন, যেখানে নেটওয়ার্ক নেই মোবাইলের। আসার পর সেই বড় কর্তা হম্বিতম্বি করছেন, তোমরা কই থাকো, খুঁজলে পাওয়া যায় না, হেন তেন। জুনিয়াররা যখন করুণ মুখে জানালেন তারা এস এম এস করেছিলেন শহর থেকে বের হওয়া আগে, তখন বড়কর্তা রাগত স্বরে জানতে চাইলেন, এস এম এস আবার কি ?

এই হচ্ছে অবস্থা। বিটিটিবি র একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, যিনি গিয়েছেন মোবাইল কোম্পানীর সাথে এক বৈঠকে - তিনি কি না জানেন না এস এম এস কি জিনিশ !

এরাই তো দেশের টেকনোলজি চালায়, তাই না ?


অলমিতি বিস্তারেণ

জ্বিনের বাদশা এর ছবি

আমার মনে হয়না সরকারী সংস্থার দিকে তাকিয়ে থাকলে কোনদিন কিছু হবে ,,,, বেসরকারী খাতেই এগুতে হবে ,,,, আমাদের দেশে মোবাইল ফোন প্রযুক্তিকে একদম ভালোভাবে দাঁড় করিয়েছে বেসরকারী খাতই ,,,, ঢাকা শহরের দোকানে দোকানে যে প্রিপেইডকার্ডের সহজলভ্যতা/ ফ্লেক্সিলোডের কনভেনিয়েন্স -- এটা সরকারী উদ্যোগে কোনদিন আশা করা যেতোনা ,,, আমরা সরকারকে যতই গালমন্দ করি কিছুই হবেনা ,,,, সরকারী সংস্থার ঐ যোগ্যতাই নেই ,,,

একটা উদাহরণ দিই ,,, ২০০৬ এর অগাস্টে দেশে যখন গেলাম তখন দোকানে দোকানে জিপি'র লালসবুজ লোগোটা দেখতাম ,,, অক্টোবরের দিকে মনে হয় লোগো বদলে নীলরঙেরটা করলো ,,,ডিসেম্বরে দেশে গিয়ে আমি অবাক ,,, পুরো ঢাকা শহরে একটা দোকানও পেলামনা, যাদের সাইনবোর্ডে জিপির পুরোনো লোগোটা আছে ,,,, সবখানে বদলে গেছে ,,, এরকম এফিশিয়েন্সি দেখে আসলেই ভালো লাগছে
========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

========================
যার ঘড়ি সে তৈয়ার করে,ঘড়ির ভিতর লুকাইছে

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

মূল সমস্যা অ্যাটিটুডে। বুয়েটের হলে ইন্টারনেট দিতে উন্নত বিশ্ব ফেরত টেকনোলজিতে ডক্টরধারীরাও যে টালবাহানা করেছেন/করছেন, তা ভাবলেই সরকারী অফিসের ননকম্পু কর্মকর্তার চিন্তার সীমাবদ্ধতাকে বড় কিছু মনে হয় না।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

সবজান্তা এর ছবি

বিশ্ববিদ্যালয়ের এরকম প্রযুক্তিভীতি নিয়ে একটা লেখা শুরু করেছিলাম। এক পাতা লেখার পর শীতনিদ্রায় পাঠিয়ে দিয়েছি।

হিমু ভাই এর লেখা পড়ার পর ওইটা লেখার ইচ্ছা আবার পোষণ করছি।


অলমিতি বিস্তারেণ

অছ্যুৎ বলাই এর ছবি

বিস্তারিত লেখেন। আমাদের সময়ে হলে ইন্টারনেট ছিলো না। পোলাপাইন প্রত্যক হলে ইন্ট্রানেটের মাধ্যমে নিজেদের কম্পিউটারগুলো কানেক্ট করছিলো, হলের সৌন্দর্য রক্ষার জন্য সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়।

---------
চাবি থাকনই শেষ কথা নয়; তালার হদিস রাখতে হইবো

কিংকর্তব্যবিমূঢ় এর ছবি

সব ভার্সিটির মাথারা ক্যান জানি একইভাবে চিন্তা করে ... আমাদের আইইউটিতে আমরা পকেটের পয়সা দিয়া তার কিনে পুরা দুই হলের মাঝে নেটওয়ার্ক বানাইছিলাম ... তিন মাসের বন্ধের সময় পুলাপান যখন বাসায় কর্তৃপক্ষ সমস্ত তার সুন্দরভাবে কেটে বাজেয়াপ্ত করছে, সেই একই অজুহাত, "হলের সৌন্দর্যহানি" ...

এখনো পর্যন্ত কোন হলে নেট কানেকশন দেয়া হয় নাই ... পুলাপান সামাজিক ছবি দেখবে তাই ...

আমরা যখন যাই তখন ছাত্রদের জন্য ফ্রী ইন্টারনেট ব্যবহারের সীমা ছিল দুই ঘন্টা, দিনে না, মাসে ... এর বেশি নাকি ছাত্রদের দরকার নাই ... আমরা তিন বছর ধরে হাত পায়ে ধরে আসার আগে সেটা বাড়ায়ে আসছিলাম ...

কর্তৃপক্ষ মানেই বলদ রেগে টং

................................................................................
objects in the rear view mirror may appear closer than they are ...

এনকিদু এর ছবি

আই উই টি'র অবস্থা ভাল বলে জানতাম । দুঃখ জনক । পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মাথার দিকের লোকেরাই তো মনে হয় আউ ইউ টি তে গিয়েছিলেন, একই লোক একই গল্প ।


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...


অনেক দূরে যাব
যেখানে আকাশ লাল, মাটিটা ধূসর নীল ...

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

অনেক উপায়ই খোলা আছে আমাদের সামনে কিন্তু কাজটা করার কেউ নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় ফিস পরিশোধের ইন্ট্রানেট নির্ভর কোনও সিস্টেম বানানো আমাদের মেধাবী ছাত্রদের জন্য তেমন কোনও ব্যাপার-ই না। মেধাবীদের করা প্রজেক্টগুলো যদি বিশ্ববিদ্যালয়ের শোকেসে বন্দী হয়ে থাকে তাহলে তাদের মেধার কি মূল্য দাড়ালো ? ওরা এতো কষ্ট করে মাথা খাটিয়ে এসব করার কি মানে হল ? এগুলো তো আমাদের কর্তাব্যক্তিদের মাথায় ঢোকা উচিত। কবে যে শুভবুদ্ধির উদয় হবে জানা নাই। অনলাইন শপিং অথবা বিল পেইং সিস্টেম বাংলাদেশে চালু করার আগে আমাদের মুমূর্ষ ইন্টারনেট ব্যবস্থার ব্যাপক উন্নতিসাধন আবশ্যক। আমার জানামতে বাংলাদেশে এখনো ডি,এস,এল ইন্টারনেট এখনো দেওয়া সম্ভব হয়নাই। এই ব্যর্থতাতো সবচেয়ে বেশী আমাদের টেলিফোন ব্যবস্থার যাদের তথাকথিত ডিজিটাল লাইন থাকা সত্বেও এই ব্যবস্থার কিছুই চালু করতে পারেনি এই পর্যন্ত। ইন্টারনেট ব্যবস্থার সহজীকরণ না ঘটলে এসব অনলাইন ব্যাঙ্কিং অথবা বিল পে চালু করা যাবেনা। পরিশেষে সবজান্তার উদাহরণটি টানতে চাই, আমাদের দেশে এসব প্রতিষ্ঠানের মাথা হয়ে বসে আছেন যারা তাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নাই কিভাবে কি কাজ করে !!! এসব পদে উপযুক্ত ব্যক্তিদের নিয়োগদান জরূরী।

--------------------------------------------------------

হিমু এর ছবি

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় আর কোন একটি ব্যাঙ্কের মধ্যে আসলে চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়া প্রয়োজন, যে বিশ্ববিদ্যালয় ব্যাঙ্কের বিশ্ববিদ্যালয় শাখাটির অনলাইন ব্যাঙ্কিঙের প্রযুক্তিগত কাঠামো তৈরি করে দেবে। ছোট স্কেলে একটা কিছু করে দেখানোর সুযোগ তো বিশ্ববিদ্যালয়গুলির আছে। প্রি-পেইড মিটারের মতো চমৎকার একটি জিনিস প্রায় সম্পূর্ণ তৈরি করা হয়েছে প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে, ছাত্র-শিক্ষক-ইন্ডাস্ট্রি-কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে। অনলাইন বিলিংও করা সম্ভব। সদিচ্ছা আর উদ্যোগের অভাবে হয়তো হচ্ছে না।

আমি মনে করি গোটা কাজটা একটা বড় প্রকল্পের আওতায় এনে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্র্যাড ছাত্রদের মধ্যে ভাগ করে দেয়া যেতে পারে। প্রকল্পের সমন্বয়ক থাকবেন ইউনিভার্সিটি আর ব্যাঙ্কের পক্ষ থেকে দু'জন। তিন বা চার সেমেস্টারের মধ্যে ব্যাপারটি নিখুঁতভাবে দাঁড় করানো সম্ভব।

আমাদের আরেকটা সমস্যা হচ্ছে বিদ্যুৎ। অনলাইনে বিল দিতে গিয়ে মাঝপথে বিদ্যুৎ চলে যাবে হাজারো বার। ইন্টারনেট অবকাঠামো শহরে এখনও ব্যাপক জোড়াতালি দিয়ে চলছে। ইন্টারনেট সেবা যদি সুলভ ও সুষম হয়, ঢাকা শহরে জীবনযাত্রার মান রাতারাতি পাল্টে দেয়া সম্ভব।

এ প্রসঙ্গে আরো মনে পড়লো, লোডশেডিঙের নোটিশ প্রসঙ্গে। যেহেতু লোডশেডিং একটা তিক্ত বাস্তবতা, আমি মনে করি বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষের উচিত লোডশেডিং শিডিউল তৈরি করে (কন্টিনজেন্সিসহ) একদিন আগে পত্রিকা আর টেলিভিশনে তা প্রচার করা। এতে লজ্জার কিছু নেই, বরং জনগণ উপকৃত হবেন। ভাত দিতে না পারিস, কিল মারা থেকে বিরত থাক।


হাঁটুপানির জলদস্যু

সবজান্তা এর ছবি

ভাত দিতে না পারিস, কিল মারা থেকে বিরত থাক।

মন্তব্যে (বিপ্লব)


অলমিতি বিস্তারেণ

ভূঁতের বাচ্চা এর ছবি

হিমু ভাইয়ার মন্তব্যটা জোস হইছে !
কিন্তু সবকিছু যে এখনো আকাশকুসুম পর্যায়েই আছে,
আশা করছি যে কর্তাব্যক্তিরা দয়া করে ব্লগটি পড়ে কিছু কিছু হলেও বাস্তব করবেন। আমাদের আকাশকুসুম অবস্থা থেকে উদ্ধার করবেন।

--------------------------------------------------------

এলোমেলো ভাবনা এর ছবি

শিরোনাম টা আসলেই দারুন আকাশকুসুম

লেখাটা আর মন্তব্য পড়ে একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল...
অনেকদিন আগে মনে হয় এক যোগাযোগ মন্ত্রী বলেছিলেন

এক বছরের মধ্যে দেশ। ম্যাগনেটিক ট্রেন চালু হবে। ৬ মিনিটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম যাওয়া যাবে।

মন্ত্রীর কোন ধারনাই নাই ম্যাগনেটিক ট্রেন চালুর জন্য যে ধরনের অবকাঠামো দরকার তা বাংলাদেশের জন্য আকাশ কুসুম ই বটে।


হাত বাড়িয়ে ছুঁই না তোকে, মন বাড়িয়ে ছুঁই,

দুইকে আমি এক করি না এক কে করি দুই৷

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

চির-আশাবাদী আমি হতাশাব্যঞ্জক একটি কথা না বলেই পারছি না: ‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍নতুন প্রজন্মের কর্মকর্তাদের পদোন্নতির (মতান্তরে "পোঁদোন্নতি") পর বর্তমানরা প্রতিস্থাপিত হলে যদি কোনও অগ্রগতি হয়!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

নিঘাত তিথি এর ছবি

আহারে, ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিভিন্ন বিল পরিশোধের ব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং যদি চালু হতো দেশে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে গাদা গাদা কাগজপত্র কবে কম্পিউটারের ডাটাবেজে ঢুকবে? তবে অমিত আহমেদের মত বলতে হচ্ছে, দেশে ইন্টারনেটের অবস্থাই তো বারোটা, এই স্পিডে অনেক কিছুই যথাযথভাবে করা সম্ভব না। তবুও, অন্তত তিন ঘন্টার যাত্রা+লাইনে দাঁড়ানো+বাড়তি যানবাহন খরচের চেয়ে এই ধীরগতির ইন্টারনেটও অনেক বেশি সুবিধাজনক হবে নিশ্চয়ই। এইসব আকাশকুসুম চিন্তাগুলো সত্যি করার উদ্যোগটা কার থেকে বাস্তবায়িত হতে পারে আসলে?
----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

----------------------------------------------------
আমার এই পথ চাওয়াতেই আনন্দ

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।