বার্লিন জনগণ ও উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (জার্মান নামটার বাংলা করলে এমনই দাঁড়ায়) সম্প্রতি এক রিপোর্টে ইউরোপের জনমিতির কিছু দিক নিয়ে তাদের গবেষণার ফল প্রকাশ করেছে। সংক্ষেপে এই রিপোর্টের বিশেষ কিছু দিক তুলে ধরছি।
১. বহির্বিশ্ব থেকে জনস্রোত না এলে ইউরোপ ছোট হয়ে আসবে।
ইউরোপিয়ানদের জন্মহার খুবই কম, আর প্রত্যাশিত আয়ু অনেক বেশি। এই দুই চরম প্রবণতার পাল্লায় পড়ে ইউরোপ ধীরে ধীরে লোক হারাচ্ছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশের মধ্যে ৮টি দেশেই জনসংখ্যা পড়তির দিকে, ২০৫০ সাল নাগাদ এমন দেশের সংখ্যা দাঁড়াবে ১৭তে। ইইউ-এর গড় জন্মহার ১.৫ এর কাছাকাছি, প্রতি বছর এটা কমছে। ধারণা করা হচ্ছে, ২০৫০ নাগাদ ইউরোপে ৫ কোটি মানুষ কমবে।
ইয়োরোপের জন্মহার দেখা যাবে ওপরের ছবিতে (জার্মান ভাষায় আরো কিছু বাড়তি তথ্য লেখা আছে, তবে লিজেন্ডটি খুবই সাধারণ, বুঝতে কারো সমস্যা হবার কথা নয়)।
২. ইয়োরোপ পাকছে।
২০৫০ সাল নাগাদ ইয়োরোপীয়দের গড় বয়স আরো দশ বছর বাড়বে। এখন প্রতি ছয়জনের একজনের বয়স ৬৫ বছরের ওপরে, ২০৫০ নাগাদ তা দাঁড়াবে প্রতি তিনজনের একজনে। উপার্জনক্ষম মানুষের সংখ্যা কমে আসবে, যাদের একই সাথে শিশু ও বৃদ্ধদের ভরণপোষণ করতে হবে। বর্তমানে কর্মক্ষম ও নির্ভরশীলের অনুপাত ২:১, ২০৫০ নাগাদ তা দাঁড়াবে ১:১ এ।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, কিভাবে উপার্জনক্ষম ও নির্ভরশীল বৃদ্ধ মানুষের সংখ্যা পরিবর্তিত হতে পারে।
৩. বিবাহবন্ধনবহির্ভূতবালকবালিকাদেরবিশ্ব
ইয়োরোপে নারীরা অর্থনৈতিকভাবে ক্রমশ স্বনির্ভর হয়ে উঠছেন। এ কারণে ভবিষ্যতে পরিবারের ধারণাটি পরিবর্তিত হবে, এবং বিবাহবন্ধন ছাড়াই শিশুরা জন্মগ্রহণ করবে এবং লালিতপালিত হবে। আইসল্যান্ডে (ইয়োরোপে মহিলাপিছু শিশুর সংখ্যা সবেচেয়ে বেশি এখানে) যেমন বর্তমানে ৬৫% শিশুই অবিবাহসম্ভূত। ধারণা করা হচ্ছে, ভবিষ্যতে এমন শিশুর সংখ্যা বহুগুণিত হবে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ইয়োরোপে কর্মজীবী মহিলাদের অনুপাত, ও মহিলাপিছু শিশুর সংখ্যা।
৪. উল্টোরথ
ইয়োরোপের যে তিনটি দেশ থেকে এককালে লক্ষ লক্ষ কর্মহীন মানুষ ভিনদেশে চলে গিয়েছিলেন কাজের খোঁজে, সেই তিনটি দেশে এখন বিপরীত চিত্র। স্পেনে এখন ১৯৯৫ থেকে ২০০৬ এর মধ্যে ভিনদেশীদের সংখ্যা বেড়েছে আটগুণ। ইতালিতে এ বৃদ্ধি তিনগুণ, আয়ারল্যান্ডে প্রায় দ্বিগুণ।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে ইয়োরোপের ভেতরে দেশত্যাগের হাল। পোল্যান্ড থেকে দু'টি বড় অংশ গেছে ব্রিটেন আর জার্মানিতে, রোমানিয়া থেকে লোকে যাচ্ছে ইতালি আর স্পেনে। ধূসর দেশগুলি দেশত্যাগীদের জন্যে খুব একটা আকর্ষণীয় নয়, বোঝাই যায়।
৫. উত্তরখন্ড তৈরি
ইয়োরোপের উত্তরখন্ড, অর্থাৎ আইসল্যান্ড আর স্ক্যান্ডিনেভিয়া ভবিষ্যতের এইসব সমস্যা মোকাবেলায় সবচে' ভালো প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের সমাজব্যবস্থা এবং সামাজিক অবস্থার কারণে এসব দেশে জন্মহার বেশি, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ অপেক্ষাকৃত ভালো, মহিলা ও বৃদ্ধরা উপার্জনক্ষম।
৬. ইইউ কর্মসংস্থান এঞ্জিন
অতীত বছরগুলিতে ইইউ এর নতুন সদস্য রাষ্ট্রগুলিতে এক হাঙ্গেরি বাদে সবকয়টিতেই গড়ে ৩% করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ঘটেছে, বাল্টিক প্রজাতন্ত্র আর স্লোভাকিয়াতে এই হার ৬% এর কাছাকাছি। ১৫টি মূল সদস্যরাষ্ট্রে লৌহযবনিকার পতনের পর কর্মসংস্থান বেড়েছে ১৫%, মোট ইউনিয়নে গড়ে ৭%। যাবতীয় উৎপাদন ব্যবস্থা পূর্ব ইয়োরোপে ঠেলে দেবার পরও গড়ে প্রতি দুইজনে একজনের কর্মসংস্থান ঘটেছে ইউনিয়নে।
ছবিতে দেখা যাচ্ছে, ২০০০ থেকে ২০০৫ এর মধ্যে বিভিন্ন দেশ কর্মসংস্থানের পরিবর্তনের হার। রুমানিয়াতে এই হার ঋণাত্মক, কিন্তু স্পেন , আয়ারল্যান্ড ও ফ্রান্সের কিছু অংশে বিপুলভাবে ধনাত্মক।
সূত্রঃ জিও।
মন্তব্য
তাইলে তো আদম ব্যবসার দোকান খুইলা বসতে হয় এখনই
খালি লিস্টি দেন কোনখানে কত পাঠাইতে হইব
একেবারে উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন (জন্মদান ক্ষমতা) পাবলিক আছে আমার স্টকে
মেয়ে পাঠাতে হবে আসলে। এইখানকার মেয়েগুলি দুষ্ট।
হাঁটুপানির জলদস্যু
লীলেন ভাইয়ের সাথে একমত । নতুন লোক পাঠাতে হবে । পুরানা যারা গেছে , এগুলো কাজের না ।
কামড় দিয়ে যে পয়দা করা যায় না , এটাই জানে না ।
----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।
ইয়োরোপ ও জন্মদান, উভয় বিষয়ে সম্যক অভিজ্ঞতার কারণে আমি আরিফ জেবতিককে জরুরি ভিত্তিতে ইয়োরোপে রপ্তানি করার আবেদন জানাচ্ছি ।
হাঁটুপানির জলদস্যু
আইসল্যান্ডে যামু গা ভাবতেছি ।
----------------------------
কালের ইতিহাসের পাতা
সবাইকে কি দেন বিধাতা?
আমি লিখি সত্য যা তা,
রাজার ভয়ে গীত ভনি না।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমসে এই বিষয়ে অতি দীর্ঘ এবং অতি উপাদেয় লেখা
No Babies? Declining Population in Europe
অনেক কিছুই লেখছে তবে জার্মানী সম্পর্কে যেই তথ্যটা সবচেয়ে বেশী মনে আছে, তা হইলো প্রতি বছর ওদের জনসংখ্যা লাখ খানেকের মত কমে যায়।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর
২০৫০ নাগাদ ৮০ লক্ষ কমবে। জার্মানদের কঠোর ইমিগ্রেশন নীতিও এর পেছনে ভূমিকা রাখবে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
একখান কৌতুক। রুশ বলেই জানি।
প্রেমিকা প্রেমিককে:
- তুমি বাচ্চাকাচ্চা পছন্দ করো?
প্রেমিক:
- খুব একটা নয়। তবে বাচ্চা বানানোর প্রক্রিয়াটি ভারি পছন্দ আমার।
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
পাকিস্তানিদের আমি অবিশ্বাস করি, যখন তারা গোলাপ নিয়ে আসে, তখনও। - হুমায়ুন আজাদ
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
আরিফ জেবতিক পরিক্ষীত জন্মদাতা, কিন্তু লীলেন ভাইয়ের এ ধরনে অভিক্ষতার কথা শোনা যায়নি। সাধু সাবধান।
জার্মানদের বর্তমান অভিবাষণ নীতি প্রযোজ্য থাকলে ২০৮০ সালে তাদের জন সংখ্যা অধৃকে নেমে আসবে বলে জানিয়েছে ডি সাইট সপ্তাহিক।
**********************
কাঁশ বনের বাঘ
**********************
ছায়াবাজি পুতুলরূপে বানাইয়া মানুষ
যেমনি নাচাও তেমনি নাচি, পুতুলের কী দোষ!
!কাশ বনের বাঘ!
প্রিয় হিমু, এমন একটা গুরুত্বপূর্ন বিষয়ে পোস্ট দেবার জন্য ধণ্যবাদ। আরো ধণ্যবাদ ম্যাপগুলোর জন্য। এতে অনেকগুলো বিষয়ে অহেতুক ব্যাখ্যা দেয়া এড়ানো গেছে। তবে লেখাটা বড্ড ছোট মনে হয়েছে। আরো কিছু বিশ্লেষন থাকা দরকার ছিল। আর দরকার ছিল এশীয়দের জন্য কর্মসংস্থান বা অভিবাসনের মত বিষয়সহ আর কি কি বিষয়ে সুযোগ তৈরী হতে পারে তা নিয়ে কিছু কথা বলা।
একটা বিষয়, "
বিবাহবন্ধনবহির্ভূতবালকবালিকাদেরবিশ্ব" এরকম বাংলা ব্যাকরনে বিরল অথচ জার্মান ভাষায় সুলভ লম্বা শব্দ লেখা কি দীর্ঘদিন জার্মানী বাসের ফল?
=================================
তোমার সঞ্চয় দিনান্তে নিশান্তে পথে ফেলে যেতে হয়
তোমার সঞ্চয়
দিনান্তে নিশান্তে শুধু পথপ্রান্তে ফেলে যেতে হয়।
রিপোর্টে আসলে অন্য মহাদেশ থেকে আগত মানুষদের অভিবাসন বা কর্মসংস্থান নিয়ে কিছুই বলা হয়নি। গবেষণা চালানো হয়েছে ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের ভেতরে, এই যূথবদ্ধতার পরিণতি পর্যবেক্ষণ করে।
তবে ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, আমার ডিপার্টমেন্ট একবার একটা আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলো, প্রাদেশিক পারিষদ, শিল্পোদ্যোক্তা আর রাজনীতিবিদদের সাথে। আমি সেখানে একমাত্র এশীয় হিসেবে উপস্থিত ছিলাম। বিদেশীদের কর্মসংস্থানের প্রসঙ্গ ওঠামাত্র বক্তারা খুব সতর্কভাবে বক্তব্য দিলেন, কয়েকজন রীতিমতো আমার দিকেই তাকিয়ে যা বলার বললেন। তাঁদের বক্তব্য খুব পরিষ্কার, আগে ভূমিপুত্রদের সবার কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা হবে, তারপর প্রয়োজন হলে বিদেশীদের, বিশেষ করে এশীয়দের জন্যে সুযোগ দেয়া যেতে পারে। আমি কিছুটা বিব্রতই বোধ করছিলাম তাঁদের বলার ভঙ্গিতে, তবে আমার বলার কিছু ছিলো না।
যতদূর জানি, জার্মানিতে কাজের ক্ষেত্রে প্রেফারেন্সের তালিকায় এশীয়রা সবার নিচে। জার্মান মহিলা, জার্মান শারীরিক প্রতিবন্ধী, ইয়োরোপীয় ইউনিয়নের অধিবাসী, আফ্রিকান, তারপরে সবশেষে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের অধিবাসীদের কাজ দেয়া হবে।
জার্মানিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ নিয়ে সরাসরি অভিজ্ঞতা এখনও হয়নি, হলে এ সম্পর্কে হয়তো বিস্তারিত লেখার সুযোগ পাবো।
হাঁটুপানির জলদস্যু
রিপোর্টের প্রথম পয়েন্টটাই খুবই আশাজাগানিয়া! আশায় বুক বাঁধলাম
আরেকটু বিশ্লেষণ থাকলে মন্দ হতো না।
_______________________________
বিষন্নতা ছোঁয় আমায় মাঝে মাঝেই, কখনো কি ছোঁয় না তোমায়?
এই ধরনের পোস্ট দিনে একটার বেশি দিলে মাথা পুরা আউলাইয়া যাইব।
ছয় বছরেও গ্রাফ বুঝতে পারলাম না বোধহয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
---------------------------------------
আমি সব দেবতারে ছেড়ে
আমার প্রাণের কাছে চলে আসি,
বলি আমি এই হৃদয়েরে;
সে কেন জলের মতন ঘুরে ঘুরে একা কথা কয়!
নতুন মন্তব্য করুন