ফুটোস্কোপিক গল্প ০১২

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: রবি, ২১/০৯/২০০৮ - ১১:৫১অপরাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

ফুটোস্কোপিক গল্প হচ্ছে ফুটোস্কোপ দিয়ে দেখা গল্প। সামান্যই দেখা যায়।

...

ফ্রঁসোয়া দ্যু নন্ত এসে হৈহৈ করে উঠলেন, "পিয়েঘ! এ কী করছো তুমি এই সুন্দর অপরাহ্নে? একগাদা পুরনো কাগজের ধূলো ঘাঁটছো? ওদিকে বাইরে চেয়ে দ্যাখো, কী চমৎকার একটা সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে! চলো, আজ মাদাম দ্য লা শা'র ওখান থেকে ঘুরে আসি।"

ফ্যঘমা মাথা নাড়লেন। "না ফ্রঁসোয়া, আমার অনেক অঙ্ক কষা বাকি।"

দ্যু নন্ত একটু অভিমানই করলেন বুঝি। আরামকেদারায় লম্বা হয়ে বসে বললেন, "তা কী এমন অঙ্ক কষতে চাও তুমি, যার কাছে মাদাম দ্যু লা শা'র আখড়ার সুন্দরীদের মাংসের আবেদন ম্লান হয়ে যায়, মঁসিয়ু দ্য ফ্যঘমা?"

ফ্যঘমা বাড়িয়ে ধরলেন আরিথমাতিকা। বিদঘুটে সেই সমস্যা। দু'টি পূর্ণ সংখ্যার কোন একটি নির্দিষ্ট ঘাতের যোগফল শুধু তখনই আরেকটি পূর্ণসংখ্যার সেই ঘাতের সমান হবে, যখন ঘাতের সর্বোচ্চ মান ২ হবে।

দ্যু নন্ত খানিক দেখলেন সমস্যাটা, তারপর গোঁফ চোমড়ালেন।

ফ্যঘমা উঠে দাঁড়ালেন, "ক্ষমা করো, ফ্রঁসোয়া! বছর দেড়েক ধরে মাথা ঘামাচ্ছি এ সমস্যা নিয়ে। আজ রাতের মধ্যে এর একটা হেস্তনেস্ত করে ছাড়বো।"

দ্যু নন্ত মুচকি হাসলেন। বললেন, "এক কাজ করলে কেমন হয়?"

ফ্যঘমা আবার বসে পড়লেন। "কী কাজ?"

দ্যু নন্ত পায়ের ওপর পা তুলে বললেন, "বইটার মার্জিনে দেখি তুমি অনেক হিজিবিজি কেটেছো। ... এ সমস্যা যখন দেড় বছরে সমাধান হয়নি, আজ রাতের মধ্যে হবে, সে ভরসা করা বোকামো। তারচেয়ে মার্জিনে লিখে দাও, এর খুব সহজ প্রমাণ তোমার কাছে আছে, কিন্তু সেটা লিখে শেষ করার জায়গা এখানে নেই।"

ফ্যঘমার মুখ ধীরে ধীরে উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। "ফ্রঁসোয়া! তোমার মাথায় তো বেশ বেরেন আছো দোস্ত!"

দ্যু নন্ত অট্টহাসি দিয়ে বললেন, "বেরেন আছে বলেই তো আমি সুন্দর সন্ধ্যাগুলি মদ আর মেয়ে নিয়ে কাটাই, ম্যাথমেটিক্স নিয়ে নয়!"

ফ্যঘমা একটা পৈশাচিক মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, "পরে যখন এই মন্তব্য ছাপা হবে, চিন্তা করে দেখেছো, লোকজন এই প্রমাণ নিয়ে কীরকম উতলা হয়ে পড়বে?"

দ্যু নন্ত বললেন, "উতলা হয়ে পড়বে, আর নিজেরা প্রমাণ খুঁজতে গিয়ে হোগামারা খাবে। ... যাই হোক, চটপট কথাটা লিখে শেষ করো, বেজায় তেষ্টা চেপেছে।"

ফ্যঘমা বললেন, "রোসো! ল্যাটিনে লিখতে হবে। এতো সোজা নয়। ... আমি মাঘতাঁকে ডেকে বলছি তোমাকে এক পাত্র লাল মদ দিয়ে যেতে।"

এই বলে তিনি লিখতে লাগলেন, "Cuius rei demonstrationem mirabilem sane detexi. Hanc marginis exiguitas non caperet."

...


মন্তব্য

মূলত পাঠক এর ছবি

এমন চমৎকার গল্পের উত্তরে কোনো মন্তব্য নেই দেখে যৎপরোনাস্তি বিস্মিত হলাম।

ফুটোস্কোপিক গল্পের কনসেপ্টটা অণুগল্পের চেয়ে অনেক বেশি অভিনব, আগেরগুলো খুঁজে খুঁজে পড়তে হবে ।

হিমু এর ছবি

এটি আসলে ফারুক হাসানের এই পোস্টের মন্তব্যে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে লেখা হয়েছিলো বলে প্রথম পাতায় আর প্রকাশ করিনি।

ফুটোস্কোপিক ক্যাটেগরিতে ক্লিক করলে বাকিগুলো পেয়ে যাবেন।


হাঁটুপানির জলদস্যু

মূলত পাঠক এর ছবি

সব কটাই পড়লাম, তারপরেও মনে হল এটাই সবচেয়ে ভালো। ধন্যবাদ আপনাকে।

এটা ভালো লাগার একটা কারণ বোধহয় এই যে আমার ঐতিহাসিক চরিত্রদের নিয়ে ফিকশনালাইজেশন (যাকে ঐতিহাসিক উপন্যাস বলা যায়) খুব প্রিয়, যেমন শরদিন্দু বা নারায়ণ সান্যালের কিছু উপন্যাস। সুনীলের "সেই সময়" নিয়ে কিছু অসুবিধা আছে, এ প্রসঙ্গে নারায়ণ সান্যালেরই একটি প্রবন্ধ আছে, পেলে পড়তে পারেন (একটু অফ-দ্য-ট্র্াক হল মন্তব্যটা)।

যাক, ফুটোস্কোপ লিখে যান।

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍‍"বেরেন আছে বলেই তো আমি সুন্দর সন্ধ্যাগুলি মদ আর মেয়ে নিয়ে কাটাই, ম্যাথমেটিক্স নিয়ে নয়!"

গড়াগড়ি দিয়া হাসি

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
শেষ বিচারের আসরে উকিল নিয়োগের ব্যবস্থা না থাকলে ক্যাম্নে কী!

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

মূলত পাঠক এর ছবি

প্রশ্ন: আমার মন্তব্যে যেখানেই "য়"-এ এ-কার ("ে") দিচ্ছি সেগুলো লেখার সময় ঠিক থাকলেও প্রকাশিত হওয়ার পর আগে "য়" পরে "ে" আসছে কেন, কেউ আলোকপাত করতে পারেন কি? ধরুন ক-এ এ-কার দিলে আগে ক টাইপ করে তারপর "ে" টাইপ করি, "য়"র ক্ষেত্রে কি আগে "ে" টাইপ করে পরে "য়" টাইপ করবো?

এটা কোনো দরকারি তথ্য নয় হয়তো, তবু জানাই, আমি ম্যাক ব্যবহার করি ও আমার "লেখার আকার" লেখা টেক্সট বক্সে লেখা রয়েছে "মুক্তি"।

এস এম মাহবুব মুর্শেদ এর ছবি

শুধু য় এর ক্ষেত্রে হচ্ছে? নাকি র এর ক্ষেত্রেও হচ্ছে?

দুটা ইস্যু আছে।

১। রেন্ডারিং ইস্যু: পুরোনো ইউনিকোড রেন্ডারিং ইঞ্জিন এ-কার, ও-কার ঠিকমতো রেন্ডার করতে পারে না। তাই দেখার সময় আপনি যদি ে+ক লিখেন, সেটা টেকস্ট বক্সে ঠিক দেখাবে কিন্তু প্রকাশ করার পর ভেঙ্গে যাবে। এতে য়, র কিংবা যেকোন অক্ষর একই ভাবে ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এটা আপনার কেইস না।

২। নুকতা ইস্যু: ইদানীং কিছু ব্রাউজার (যেমন ক্রোম), কিংবা সফটওয়্যার (সম্ভবত অভ্রও) য় এবং র কে য+নুকতা এবং ব+নুকতা হিসেবে রিপ্রেজেন্ট করে। কিন্তু আপনি লেখার সময় সেটা আস্ত থাকে। প্রকাশের পর য আর নুকতা দিয়ে সেটা পরিবর্তিত হয়ে যায়। তাই য়+ে লিখলে আপনি প্রকাশের পর দেখবেন য+নুকতা+ে। আমার ধারনা আপনার ক্ষেত্রে এটিই ঘটছে।

====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির

মূলত পাঠক এর ছবি

র-এ কিন্তু কিছু সমস্যা নেই, স্রেফ য়-তেই যত গোলমাল। এবার থেকে আগে "ে" লিখে তারপর "য়" লিখব। আপাতত এই সমাধান।

ধন্যবাদ আপনাকে।

ভাঙ্গা মানুষ এর ছবি

ফুটোস্কোপের ধারনা আমার কাছে একেবারেই নতুন; তবে আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে। হিমু ভাইয়ের লেখার মুন্সিয়ানাও এর একটা কারন। বাকী ফুটোস্কোপিক লেখাগুলোও পড়তে হবে.. ধন্যবাদ

জি.এম.তানিম এর ছবি

আজকে পুরনো লেখাগুলো রিভিশন দিচ্ছি...
গণিত ইতিহাসের এই অংশটা তো জানাই ছিল না... খাইছে
চ্রম্ভালো!
-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

-----------------------------------------------------------------
কাচের জগে, বালতি-মগে, চায়ের কাপে ছাই,
অন্ধকারে ভূতের কোরাস, “মুন্ডু কেটে খাই” ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।