১.
কী যে অসম্ভব উদ্বিগ্ন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে গেলো ক'টা হপ্তা! আক্ষরিক অর্থেই নাওয়াখাওয়া ভুলে কাজে ডুবে ছিলাম, হাওয়াখাওয়া তো দূরের কথা।
ক্যালেন্ডারে কাজের ডেডলাইন টুকতে টুকতে খেয়াল হলো, এক বিশাল ইয়েমারার সামনে আমি জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে। লিডল থেকে প্রচুর খাবারদাবার কিনে এনে ফ্রিজ বোঝাই করে বসলাম কাজে। তারপর ডুব।
এরপর দাড়ি কামানো হয় না, গোসল করা হয় না। কাজ-খাওয়া-হাগা-ঘুম-কাজ। অ্যাকদম ইয়ে যাকে বলে।
২.
ফ্ল্যাটমেট সৈয়দ মোটামুটি ভালো লোক বলেই মনে হয়েছে। প্যাঁচঘোঁচ নাই। সেদিন পিৎজা গরম করে খাচ্ছি, সে এসে উঁকি দিয়ে বললো, এগুলোর দাম কেমন?
সৈয়দ রান্না করতে জানে না, তাকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রান্নার ওপর লেকচার দিয়ে কিছু একেবারেই সাদাসিধা খাবার তৈরি দেখিয়েছি, ওগুলোই সে ঘুরেফিরে রাঁধে, তাই ফ্রোজেন পিৎজার প্রতি একটা টান জন্মানো তার পক্ষে নেহায়েত অস্বাভাবিক নয়। আমি গম্ভীর মুখে তাকে সমস্যাটার কথা জানালাম। "এটাতে পর্ক আছে।"
সৈয়দের মুখ পুরোপুরি রক্তশূন্য হয়ে গেলো। সে তুর্কি দোকান থেকেও মাংস কিনে খায় না, কাসেলের সব পাকিস্তানী নাকি জনৈক পাকিস্তানীর নেতৃত্বে ছাগল আর মুরগি জবাই করে ছুটির দিনে, সেখান থেকে সে ড্রেসড মুরগি কিনে আনে মাঝে মাঝে।
আমি তাকে পিৎজার ওপর আরো কিছু জ্ঞান দিলাম। "তুমি খুব দেখেশুনে খেও। কারণ এরা অনেকসময় পিৎজায় ষ্পেক (শুকরের চর্বি) ছিটিয়ে দেয় স্বাদের জন্যে। প্যাকেটের লেখা মন দিয়ে পড়ে দেখবে, কী আছে কী নেই। সবচেয়ে ভালো হয় কোন তুর্কি পিৎজেরিয়াতে গিয়ে তোমার সমস্যা খুলে বলে হালাল কোনকিছু খাওয়া, সব্জি বা টুনা, এমন কিছু।"
সৈয়দ বিড়বিড় করে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে গেলো। পরদিন সন্ধ্যায় সে ক্লাস থেকে ফিরে আরো এক দফা ধন্যবাদ জানালো, তাকে সাবধান করে দিয়েছি বলে। নাহলে সে হয়তো ভুল করে পিৎজা খেয়েই ফেলতো একদিন।
৩.
কাজে ডুবে ছিলাম সারারাত, ভোরে মনে হলো, একটু হেঁটে আসি পাশের পাহাড় থেকে। জানালার পর্দা সরিয়ে হতভম্ব হয়ে গেলাম, অবিশ্রান্ত তুষারপাত চলছে। সামনে রাস্তায় পার্ক করে রাখা গাড়ি কমসে কম নয়ইঞ্চি পুরু তুষারে ঢেকে গেছে। বাহিরের পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবার পর এমন স্ট্রোবোস্কোপিক ভিউ পেলে মাঝে মাঝে মন্দ লাগে না।
৪.
অবশেষে, দীর্ঘদিন প্রতীক্ষা, সংযম, মিতব্যয়, সঞ্চয় আর টিপস সংগ্রহের পর কিনলাম আমার ডিজিটাল ক্যামেরা। সবচেয়ে সস্তা, ক্যানন ইওএস ১০০০ডি। কেবল গেহয়জে কিনেছি, আগের ইএফ লেন্স ব্যবহার করছি এর সাথে। সিগমা ২৮-৭০, ৩.৫-৫.৬ সেটা। আমার পুরনো ম্যানুয়াল ১০০০এফএনটা যত্ন করে প্যাক করে রেখে দিলাম বাক্সের ভেতরে। সেটাও এমনি দীর্ঘ প্রতীক্ষা আর সংযমের পর কেনা, জার্মানী থেকেই, ২০০৩ সালে। পুরনো জিনিসগুলোর ওপর যে কী অবর্ণণীয় মায়া পড়ে যায় মাঝে মাঝে! ২০০৫ এ একবার বান্দরবানে থানচি থেকে রুমা পর্যন্ত এক অদ্ভুত নৌযাত্রার সুযোগ হয়েছিলো সাঙ্গুনদী বেয়ে, সেখানে ক্যামেরাটার শাটার অয়েল লিক করে একটা কান্ড ঘটেছিলো, খুব মন খারাপ ছিলো অনেকদিন, কারণ ক্যামেরা ঠিক করার টাকা হাতে আসতে সময় লেগেছে। বহু ছবি ডেভেলপ করে রেখে দিয়েছি, প্রিন্ট করার পয়সা ছিলো না হাতে। এইসব ছোট ছোট না পারার, না ঘটার, না হবার স্মৃতিকে সেই ক্যামেরার সাথেই বাক্সে গুঁজে রাখি। ডিজিটাল ক্যামেরা এসেছে হাতে, এইবার ফাটিয়ে ফেলবো ছবি তুলে। আইতাছি খাড়া!
৫.
গেলো হপ্তায় কাজের শ্বাসরুদ্ধকর চাপ মাথায় নিয়েই বেরিয়ে পড়েছিলাম অতিষ্ঠ হয়ে, একটু বাতাসের খোঁজে। আমি আর হের চৌধুরীই কাফেলায়, বলাই মহাব্যস্ত, ধূসর গোধূলি কী এক মাফিয়াচক্রের কারবারে ফেঁসে (মনে হয় কাকে লাইড়তে গিয়ে কোন ডনের শালিকে লাইড়ে বসেছিলো ব্যাটা) বাডেনভুয়র্টেমবুর্গের এর এক শহরে আত্মগোপন করেছে। আমাদের গন্তব্য উল্ম, সেখান থেকে মুয়নশেন। দুই শহরে আমাদের জন্যে অপেক্ষায় ছিলেন তিন সচল, হাসিব-তীরন্দাজ-পুতুল। সে গল্প থাকবে পরের পর্বে, যদি আয়ু থাকে ততদিন পর্যন্ত। আমার নতুন ক্যামেরা দিয়ে তোলা ছবি অন্যত্র আপলোড করেছি কিছু, সংশ্লিষ্ট পর্বে সচলদের জন্যেও তুলে দেবো।
৬.
ছোট্ট ঘটনা, তবু না বললে খচখচ করবে মনের মধ্যে। মুয়নশেন থেকে রাতে ফেরার পর সৈয়দ একটা বস্তা হাতে হাজির। সেটাতে অচেনা এক ধরনের বাদাম বোঝাই। সে জানালো, তার বাবাকে সে জানিয়েছে আমার বিভিন্ন সময়ে করা উপকারের কথা, তাই তার বাবা আমার জন্যে আলাদা করে পাঠিয়েছে কোয়েট্টা থেকে।
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ভাবলাম, মুখের ওপর না করে দিই। কিন্তু বয়স্ক একজন মানুষ তার ছেলেকে সাহায্য করে, এমন একটা লোকের জন্যে আলাদা করে বাদাম প্যাক করে পাঠাচ্ছে দূর দেশে, এই ছবিটা মাথায় আসার পর চুপ করে গেলাম।
মন্তব্য
নতুন ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখার অপেক্ষায় রইলাম ।
অনেকদিন পর!!!!!!!!! "আমি" ও "প্রবাসে দৈবের বশে"।
কী ব্লগার? ডরাইলা?
আপনার ফটুক পাল্টানোর সময় হয়ে আসছে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
বুক খোলা রাখলে শীতের দিনে ঠান্ডা লাগপে।
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
কস কী মমিন!!!!!!!!
কী ব্লগার? ডরাইলা?
- এইটা কী ঝুলাইলো মমিন? ইয়ে ফটুক নাই!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কীয়ে ফটুক?
কী ব্লগার? ডরাইলা?
- এই ধরেন ইট্টু ইয়ে আরকি!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
হেহে, বছরের বাকি সময় কি তাইলে বাদাম খাইয়া কাটপো? ধূসর গোধুলির শেষ কোন খবর পাওয়া গেছে? কারে লাড়চিলো?
আবার লিখবো হয়তো কোন দিন
- মমিন রে, তুই এগুলা কী কইলি?
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
আরেক ফটুওয়ালার আগমন
লেখা ভালো লাগছে
................................................................................................
খাদে নামতে আজ ভয় করে, নেই যে কেউ আর হাতটাকে ধরা ...
জানালা দিয়া বরফ দেখার একটা ছবি দেন না!
- ব্যাটারে ভালো করে ধরেন। এখন বরফ পড়তেছে। আমার ক্যামেরা থাকলে আমিই দিতাম। নতুন ডিজিটাল ক্যামেরা থাকার পরেও যারা বরফ পড়ার লাইভ ফটুক দেয় না, তাগো বেকটিরে মাইনাস!
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কিসু তুলসি, তেমন ভালো আসেনাই। বেছে বেছে কয়েকটা দিবোনে। রিসাইজ করার টাইম পাচ্ছি না বস, চার হাতপায়ে কাম করতে হচ্ছে।
হাঁটুপানির জলদস্যু
ছবি ও আড্ডার গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
নতুন ক্যামেরায় তোলা ছবি দেখতে চাই। হাত-পা খুলে কয়দিন ছবি তোলেন খালি। লেখা, বরাবরের মতোই, খুব ভাল লাগল।
A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?
তুষারের ছবি পাইলে মন্দ হইতোনা ভাইয়া !
নতুন সব ফাটাফাটি ছবি দেখার অপেক্ষায় থাকলাম।
আর বাদাম কি তিন বেলাই খাইতেছেন ? নাইলে তো শেষ হবেনা !
--------------------------------------------------------
ক্যামেরার গল্প হুইনা লাভ কী রে মমিন । ক্যামেরায় একটুস ইয়ে ছবি টবি ...
ধুর...এমন টাইমে ক্যামেরা কিনলেন যে চারিদিকে খালি বরফ....কয়েকদিন আগে কিনলেই তো হতো ....সামারে পার্কে টার্কে ঘুরে ঘুরে ....।
ঠিকাছে বস, আপ্নার জন্য, শুধু আপ্নার জন্যই ট্রাইপড নিয়া বাইর হমু। সামারে তো নিজেই ট্রাইপড হইয়া ঘুরি।
হাঁটুপানির জলদস্যু
=))
উইনটারে কই থাকে?
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
যাক, এলেন তাহলে। আপনাকে মিস করছিলাম। ছবি টবি দেন, দেখি আপনাদের কেমন অবস্থা।
এইখানে দ্যাখেন বস।
হাঁটুপানির জলদস্যু
নয় ইঞ্চি তুষার! কস্কি মমিন!
====
চিত্ত থাকুক সমুন্নত, উচ্চ থাকুক শির
বরাবরের মতোই দূর্দান্ত!
অন্তর্জালে এমন সুপাঠ্য দিনলিপি আর পড়িনি, তা-ও ৫৪ পর্ব পর্যন্ত; মনে হয় প্রতিটা পর্ব আলাদা আলাদা। সৈয়দের কথা শুনে ভালো লাগলো। হয়তো বেলুচ বলেই একটু ভিন্ন।
ভালো থাকেন। নিরাপদে থাকেন।
১।
হিমু ভাই মনে হয় একটু আতেঁল হইয়া গেছেন?
২।
ইদানিং একটু খরা যাইতাছে...অনেকদিন কোন বালিকার কথা নাই...ব্যাপার্না
৩।
পুরাতন জিনিসের প্রতি মায়া আমারও খুব বেশি। এইখানে এসে নতুন ল্যাপটপ কেনার পর অনেকে পরামর্শ দিল পুরাতনটা বিক্রি করে দিতে...কিন্তু ক্যান জানি ইচ্ছে হয় না...এই ল্যাপটপের সাথে অনেক মধুর সময় কাটাইছি। এই ল্যাপটপটাও অনেক ঝামেলা আর সংযমের পর কেনা ছিল। ক্যামেরার ক্ষেত্রেও তাই...। বিক্রি করে দেয়ার চেয়ে যত্নে ফেলে রাখাই ভালো...ফেসবুকে আপনার নতুন ক্যামেরার ছবি দেখছি...কয়েকটা ভয়ংকর দূর্দান্ত...তবে ধীরে ধীরে ক্যামনে কী সব বুঝে ফেললে লাল বীচির ছবিগুলাও দূর্দান্ত আসবে
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
খুঁজে যাই শেকড়ের সন্ধান...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
ব্যাক্তিগত ব্লগ | আমার ছবিঘর
সর্বনাশ !!!!!!!!!! কিয়ের ইঙ্গিত দিলেন.................... ফোনে কেউ হুমকিধামকি দিতেছে নাকি খোঁজ ন্যান।
কী ব্লগার? ডরাইলা?
- আমি এইখানে কিছু গোপন কথা যোগ করতে পারতাম, কিন্তু করবো না। কারণ গতকালকে মোঢিমু'র সাথে আমি সকল কূটনৈতিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছি। সকল দূতাবাস গুটিয়ে নেয়া হইছে। ওর লগে সকল প্রকারের পান-তামুক বন্ধ। এখন বদ্দার বাড়িতে দখল নিয়ে মোঢিমু'র বাড়িতে বোম্বা ফেলাবো।
___________
চাপা মারা চলিবে
কিন্তু চাপায় মারা বিপজ্জনক
ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর কর্মকাণ্ড । বিএসএফ ক্রনিক্যালস ব্লগ
কাজ-খাওয়া-হাগা-ঘুম-কাজ।
বহুদিন পর একটা কথা মনে পড়ে গেলো। আগে আম্মি কাজের মেয়েদের বকতো, শুধু খাওন আর হাগন, শুধু খাওন আর হাগন ঃ-}
তানবীরা
---------------------------------------------------------
চাই না কিছুই কিন্তু পেলে ভালো লাগে
*******************************************
পদে পদে ভুলভ্রান্তি অথচ জীবন তারচেয়ে বড় ঢের ঢের বড়
কী দারুণ বর্ণনা! চোখের সামনে ছবি ভেসে ওঠে একদম
লেখা বিষয়ে কী আর বুইলবো!
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু?
বরাবরের মতই... দারুন!!
_______________
::সহজ উবুন্টু শিক্ষা::
বাদামের কথা শুনলেই খালি ক্যান জানি পার্কের কথা মনে হয়... তবে আপনার পর্কের কথা শুইনা এখন এই মাঝ রাইতে খায়েশ হইতেছে...
লেখা যথারীতি দূর্দান্ত... কাজের ব্যস্ততায় ব্লগে কম ঢুকছি... এখন দেখি বিরাট বিপদ... যেটাই বলতে চাই সেইটাই দেখি সন্ন্যাসীদা আগে বইলা দিছে... কাহিনী কি?
খাড়ান... আমার ব্লগের ডাইনেও ফ্লিকার মারতেছি... অনেক ছবি তুলছি... কিন্তু আপ্লোডানোর টাইম পাইতেছি না...
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?
না... এখানে বলতে হবে যে মহাজ্ঞানী মহাজন যে পথে করে গমন... সেই পথ প্রাতস্মরনীয়
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
______________________________________
পথই আমার পথের আড়াল
এইটাও মাথায় আসসিলো, কিন্তু যেটা লিখসি আগের কমেন্টে, সেইটাই বেশি অ্যাপ্রোপ্রিয়েট মনে হইসে
তবে আপনি যেটা বললেন- কথাটা আমার ক্ষেত্রে খাটে, মানে আপনাদের পথে আমি যাইতে চাই
A question that sometimes drives me hazy: am I or are the others crazy?
নতুন মন্তব্য করুন