একজন পিতা মারা যাচ্ছেন চোখের সামনে

হিমু এর ছবি
লিখেছেন হিমু (তারিখ: শনি, ১০/০১/২০০৯ - ৫:০৬পূর্বাহ্ন)
ক্যাটেগরি:

খালেদ সাহেব অক্ষয় আয়ু নিয়ে আসেননি। কিন্তু অক্ষয় সাহস নিয়ে এসেছেন পৃথিবীতে।

আমার এই পোস্টের একটু ওপরেই ঝুলছে নিঝুমের পোস্ট। আমাদের জিফরানের বাবা, খালেদ সাহেবের একটি গম্ভীর ছবি দেখতে পাচ্ছেন সবাই। তিনি অনেক কিছু ছিলেন পেশাগত জীবনে, তার বর্ণনা আছে।

একটু ভালো করে পড়ে দেখুন, তিনি আরো কী ছিলেন। কিশোর বয়সে তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের মানে চট করে আমরা অনেক সময় বুঝতে পারি না, কিশোর খালেদ মান্ধাতার আমলের কোন অস্ত্র নিয়ে সামান্য ট্রেনিং আর সেই অক্ষয় সাহস নিয়ে একটা পুরোদস্তুর সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হয়েছিলেন।

খালেদ মৃত্যুকে একা পাশ কাটাতে পেরেছিলেন ৩৭ বছর আগে। আজ পারছেন না। তাঁর সন্তানরা, যাদের জন্যে তিনি একটি দেশ এনে দিয়েছেন, তারা তাঁকে এবার সাহায্য করবে মৃত্যুকে আবারও পাশ কাটাতে। মাত্র ১৩ জন সাড়া দিয়েছেন নিঝুমের ডাকে, আমি স্বপ্ন দেখি সচলের সব সমর্থ পাঠক সাড়া দেবেন।

যোদ্ধা খালেদের দীর্ঘায়ু কামনা করি। আমার পিতার জন্যে কোন কিছু করার সুযোগ আমার জীবন থেকে ফসকে গেছে, আমার জন্যে যারা যুদ্ধ করেছেন, তাঁদের জন্যে কিছু করার সুযোগ হাত ফসকাতে দিতে চাই না। জিফরান, সাধ্য সীমিত ভাই, সাধ আরো ছিলো।


মন্তব্য

স্নিগ্ধা এর ছবি

জিফরান, সাধ্য সীমিত ভাই, সাধ আরো ছিলো।

আমারও, জিফরান। তারপরও আশা ছাড়ছি না ......

নিঝুম এর ছবি

আজকাল মাথা ঠিক থাকে না । মনে হয় পাগল হয়ে যাচ্ছি । আপনাদের কাছে মনে হবে ন্যাকামি কিংবা আঁতলামি । এখন সারাদিন মোবাইল বন্ধ করে বসে থাকি । হাজার হাজার মানুষের সাথে পরিচয়, চিনি । অথচ, আজ এই বিপদের দিনে অনেক কাছের মানুষ ভিন্ন সুরে কথা বলে । মুখটা বেঁকিয়ে ... খেঁচিয়ে বলে... " এইসব ক্যাম্পেইন -টেম্পেইন কইরা ফায়দা নাই ," । ইচ্ছে করে এসব শুনে মানুষের উপর বিশ্বাস হারাই । কিন্তু, কি করে তা সম্ভব ... জানিনা এবং বুঝে উঠতেও পারিনা । এই ধরনের মানুষের সংখ্যা নিতান্তই কম । এরা আশাহীন, এরা অন্ধকারাচ্ছান্ন ।

অনেক মানুষ এগিয়ে এসেছেন । আসছেন । আবার বিশ্বাস জন্মায় ...আবার নতুন করে জেগে উঠি । হতে পারে মাত্র তেরো জন মানুষ এগিয়ে এসেছেন । কাল সকাল বেলাতেই দেখব তেরো জন হয়ে গেছে ছাব্বিশ জন । তার পরদিন উনচল্লিশ জন... তার পরদিন বেয়াল্লিশ জন... হয়ত একদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠেই দেখব পুরো টাকা উঠে গেছে । হতে পারে আমার ভাবার ক্ষেত্রে " হয়ত" শব্দটা আছে । এমনও হতে পারে এই শব্দটি আর কখনোই থাকবে না । কে জানে সে কথা ?

জিফরানের সাথে যখন দেখা হয় , তখন খুব অস্বস্তি লাগে । কিছু করতে না পারার জন্যে অস্বস্তি । একটি ছেলের বাবা মারা যাচ্ছে । ছেলে হয়ে কিছু করতে না পারার যে কি বেদনা , কি কষ্ট, কি যন্রনা... ওই মুখটির দিকে না তাকালে কেউ কোনদিনই বুঝতে পারবে না । বোঝা সম্ভবও নয় হয়ত বা ।

ছোটবেলায় একটা কবিতার ভাব সম্প্রসারন করেছিলাম । "বিন্দু বিন্দু ধূলি কণা , বিন্দু বিন্দু জল,গড়ে তোলে মহাদেশ, সাগর অতল ।" আজ অনেকদিন পর আবার মনে পড়ে গেলো সে কথা । একদিনের একটি ডলার, একটি পাউন্ড, একটি ক্রোনার,একটি ইউরো... কতভাবেই খরচ করি । না হয় নাই করলাম একটি দিন । কত ঋণ জমা হয়ে আছে এইসব অকুতোভয় মানুষগুলোর প্রতি । না হয় আর একটি বার চেষ্টা করলাম । মহাদেশ কিংবা অতল সাগর নয়, একজন মানুষ কেই না হয় বাঁচালাম ।

একটা কথা বিশ্বাস করতে খুব ইচ্ছে করে , জনাব খালেদ বেঁচে উঠেছেন । আরো একবার মৃত্যু থেকে ফিরে এসেছেন । তিনি হয়ত তার পর , "মানুষ মরনশীল" , এই নিয়মে চলে যাবেন । কিন্তু, যাবার আগে যেন তিনি এই আনন্দ নিয়ে যেতে পারেন, যেন তিনি হা হা করে প্রকান্ড একটি হাসি দিতে পারেন...

যে হাসির মানে আমরা বুঝে নেব । যে হাসির মানে...

"আমরাই পারি "

যে হাসির মানে

" গর্বের, বিজয়ের, আনন্দের"

হিমু ভাইকে পোস্টের জন্য অনেক ধন্যবাদ । কৃতজ্ঞতা ।

--------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

---------------------------------------------------------------------------
কারও শেষ হয় নির্বাসনের জীবন । কারও হয় না । আমি কিন্তু পুষে রাখি দুঃসহ দেশহীনতা । মাঝে মাঝে শুধু কষ্টের কথা গুলো জড়ো করে কাউকে শোনাই, ভূমিকা ছাড়াই -- তসলিমা নাসরিন

সবজান্তা এর ছবি

কয়েকদিন আগে আমি আর সচল তারেক বুয়েট ক্যাফেতে বসেছিলাম, কী করা যায় তা বিস্তারিত আলোচনার জন্য। তারেককে বলেছিলাম কিছু রাস্তার কথা। দেখা যাক, কতদূর কী করা যেতে পারে।


অলমিতি বিস্তারেণ

দৃশা এর ছবি

সচলে আমরা যারা আছি তারা কি নিজেদের কন্টাক্ট ব্যবহার করে একটা কন্সার্টের আয়োজন করতে পারি না? আমাদের এখানেই মিডিয়ায় সম্পৃক্ত অনেক মানুষ আছে যারা আমাদের এ ব্যাপারে হয়তো পথ দেখাতে পারবেন। এছাড়াও আমরা যে যেখানে আছি, যেখানে অধ্যয়নরত অবস্থায় আছি সেখানে ইন্সটিউট অথরিটির সাহায্যে অর্থ সংগ্রহের উদ্যোগ নিতে পারি। নিজেদের ইন্সটিউটে মুভি ফেস্টিভেল, আনপ্লাগড কন্সার্ট সহ নানা আয়োজন করার উদ্যোগ নিতে পারি, এতে বিশাল কোন ফল হয়তো পাবো না, তবে যতখানি আসবে সেটাও আমাদের কাজেই আসবে।
---------------------------------------
দুঃখ তোমায় দিলেম ছুটি...
বুক পাঁজর আজ ফাঁকা।
দুঃখ বিদায় নিলেও সেথায়...
দুঃখের ছবি আঁকা।

দৃশা

লজ্জা এর ছবি

অনেকদিন আগেই পোষ্টটা দেখেছি। কী আর বলব দুঃখের কথা... করি ছোট চাকরি, বাইরে থাকতে হয়, হাতে মোটেই সেভিংস থাকে না। তারপর আবার বেতন পাই নি এখনও...

জানি একথা বলা, আর না বলা সমান কথা। এত দিন চুপ করেই ছিলাম কিন্তু অবস্থাটা দেখে আমারও খুবই খারাপ লাগছে...

এ লজ্জায় নামটি অপ্রকাশিত রাখতে চাই...

ফারুক ওয়াসিফ এর ছবি

আমার সাধ্যে প্রায় কিছুই নাই। তবু আছি, যদি কোনো কাজে লাগে...

হাঁটাপথে আমরা এসেছি তোমার কিনারে। হে সভ্যতা! আমরা সাতভাই হাঁটার নীচে চোখ ফেলে ফেলে খুঁজতে এসেছি চম্পাকে। মাতৃকাচিহ্ন কপালে নিয়ে আমরা এসেছি এই বিপাকে_পরিণামে।

রণদীপম বসু এর ছবি

কেমনে যে কী হয়..!
আমিও আমার পিতার ক্যান্সারের সাথে লড়ছি গত পাঁচটি বছর। ইতোমধ্যে বারকয়েক অপারেশানে গুটিকয় অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ছেঁটে ফেলা হয়েছে যাতে পুরো কব্জা করতে না পারে ! সাথে যুক্ত হয়েছে প্রগাঢ় বার্ধক্য। এখন বুঝি চিকিৎসারও উর্ধ্বে..! হাই-রেটেড পেইন কিলারও এখন আর ব্যথার চিৎকার থামাতে পারে না...। অসহায় অক্ষম সন্তানের বুকে সেই চিৎকারের ভাষা যে কী মর্মান্তিক তা বুঝানোর ভাষা পৃথিবীতে আজো জন্মেনি..।

জিফরানের কষ্ট আমি বুঝি। আর বুঝি বলেই কিছু করতে না পারার কষ্ট আরো বেশি কুঁরে কুঁরে খায়... ! তারপরও আশা নিয়ে বাঁচতে হয়। নৈরাশ্য মানেই তো থেমে যাওয়া ! আমরা থামতে চাইনা......চাইনা.....

-------------------------------------------
‘চিন্তারাজিকে লুকিয়ে রাখার মধ্যে কোন মাহাত্ম্য নেই।’

শেখ জলিল এর ছবি

যে কোনো প্রচেষ্টায় সাথে আছি।

যতবার তাকে পাই মৃত্যুর শীতল ঢেউ এসে থামে বুকে
আমার জীবন নিয়ে সে থাকে আনন্দ ও স্পর্শের সুখে!

সুবিনয় মুস্তফী এর ছবি

http://img152.imageshack.us/my.php?image=khaledgk0.jpg

এই ছবিটা তরুন খালেদের। যুদ্ধের আগের বছর তোলা। দেখে মনে হয় আমারই তো ছোট ভাইটার মত লাগে দেখতে।

ফেসবুকে এক বন্ধু লিখেছে - it is only because of the extraordinary courage of ordinary teenagers like Khaled that we have a free Bangladesh today.

এর থেকে সত্য আর কি হতে পারে? কতটুকু কৃতজ্ঞতা দেখালে আমরা সেই ঋণ শোধ করতে পারবো?

পাঠক, পড়া শেষ করে এখানে চলে যান -
http://www.facebook.com/group.php?gid=110744530692

বা এখানে -
http://www.saveafreedomfighter.org/

যে যেভাবে পারেন, এই ছেলেটার পাশে এসে দাঁড়ান। ও আমাদের একটা দেশ উপহার দিয়েছিল।
-------------------------
হাজার বছর ব্লগর ব্লগর

সংসারে এক সন্ন্যাসী এর ছবি

এই সময়গুলোতে ধনবান নই বলে আক্ষেপ হয়।
অতি সীমিত সামর্থ্য দিয়ে যতোটুকু পারবো, করবো।

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
একলা পথে চলা আমার করবো রমণীয়...

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
টাকা দিয়ে যা কেনা যায় না, তার পেছনেই সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় করতে হয় কেনু, কেনু, কেনু? চিন্তিত

স্নিগ্ধা এর ছবি

সুবিনয় - জিফরান বোধহয় এখন কাজে, তাই এখানেই বলছি আপনাকে। অন্যান্যরাও এ ব্যাপারে কোন সাহায্য করতে পারলে খুব ভালো হয়। আমি ওই ওষুধটা (Bexarotene) যে কোম্পানি বানায় সেটাতে কথা বলেছি পরশুদিন। বাংলাদেশ থেকে (আমেরিকাতে এফ ডি এ'র সমতূল্য) স্বাস্থ্য বিষয়ক কোন মন্ত্রণালয় থেকে একটা ক্লিয়ারেন্স লাগবে এই মর্মে যে - এই ওষুধটা বাংলাদেশে পাওয়া যায় না, এবং জিফরানের বাবার এই ওষুধটাই লাগবে, অতএব শুধুমাত্র ওনার জন্যে (ওনার নামসহ, কারণ এটা ব্যক্তিগতভাবে পাঠানো হবে, বাংলাদেশে বিক্রির জন্য না) বাংলাদেশ সরকার ওষুধটা ওই কোম্পানিকে পাঠাতে অনুমতি দিচ্ছে।

সাথে যে ডাক্তার ওনার চিকিৎসা করছেন, তার লেখা একটা চিঠি - ওষুধের ডোজ, কতদিনের জন্য ওষুধটা লাগবে ইত্যাদি "at no cost" পাঠাতে অনুরোধ করে।

যে ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি, তাঁর মতে compassionate program এর ভিত্তিতে তারা এটা করতে পারবে। আসলেই কদ্দূর কি হবে জানি না, কিন্তু আমার মনে হয় চেষ্টা করলে এই অসম্ভব দামী ওষুধটার অন্তঃত কিছুদিনের সাপ্লাইও যদি বিনা খরচে পাওয়া যায়, খারাপ তো না?

ওরা এয়ার মেইল করবে ডাক্তারের কাছে, কাজেই আমাদের এয়ারপোর্টে কাস্টমস ক্লিয়ারেন্সের ব্যাপারটাও আছে।

কোন সচল যদি স্বা্স্থ্য বিষয়ক কোন অধিদপ্তর, কাস্টমস ইত্যাদির ব্যাপারে কোনরকম সাহায্য করতে পারেন, প্লিজ এগিয়ে আসুন।

জিফরান খালেদ এর ছবি

এই ব্যাপারে আজকে কালকের মধ্যে জানবো বলে আশা রাখি। আর কেউ যদি কিছু জানেন তাহলেও জানান। এফডিএ হলো আমেরিকার ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিস্ট্রেশান। কোনো ড্রাগ মনিটরিং থেকে শুরু করে এপ্রুভাল - এই সবকিছুর দায়িত্বে এই সরকারী ইউনিট। বাংলাদেশে এর সমতুল্য কি বা কে? কেউ যদি জেনে থাকুন, জানান দয়া করে। ধন্যবাদ।

নতুন মন্তব্য করুন

এই ঘরটির বিষয়বস্তু গোপন রাখা হবে এবং জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।